1 of 3

১৫. দুদুটো প্রেমে পড়ে গেল হেমাঙ্গ

১৫

এক সপ্তাহে পর পর দু-দুটো প্রেমে পড়ে গেল হেমাঙ্গ। একেই বলে ইন কুইক সাকসেশন। কুইক সাকসেশন কথাটার সঠিক বাংলা কী হবে? উপর্যুপরি? হ্যাঁ তাই। উপর্যুপরি দু-দুটো লাভ অ্যাফেয়ার। এবং কন্যাহরণের মতোই, অবৈধ প্রেমিকার মতোই খুব গোপনে গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে এল সে। কিন্তু ঘরে তুলল না ফটিকের ভয়ে। একটু গাঢ় রাত্তিরে দু দিনই সে তার দুটি প্রেমিকাকে গাড়ি থেকে কোলে করে বয়ে আনল ঘরে। একটি সৌরচুল্লি এবং অন্যটি ইলেকট্রনিক ওয়াটার ফিল্টার। চুরি করে নয়, লোক ঠকিয়ে নয়, নগদ দামে কেনা। তবু এইসব জিনিস ঘরে আনার সময় এবং পরে কয়েকটি দিন কেন যে এক অদ্ভুত পাপবোধে কষ্ট পায় সে তা কে জানে!

ফটিকের চোখকে অবশ্য ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা পণ্ডশ্রম। কারণ ফটিক সকালে ঘর ঝাঁটপাট দিতে আসে। ঘরের জিনিসপত্র তার সবই দেখা এবং গোনা। নতুন কিছু দেখলেই সে ঝাঁটা ফেলে খেল্‌ দেখতে বসে যায়, ই কি নতুন কিনলেন দাদাবাবু? তা দ্রব্যটা কি? একটু চালিয়ে ভেলকি দেখিয়ে দিন তো।

ফটিক ছাড়া আর দেখবেটাই বা কে? সুতরাং সৌরচুল্লি আর ওয়াটার ফিল্টার চালু করে দেখাল হেমাঙ্গ।

ফটিক মুগ্ধ। বাক্যহারা। অনেকক্ষণ বাদে বলল, এ বাড়ির বউদিমণির খুব সুবিধে হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আর বাকি থাকছে না কিছু। সব কলকব্জাই সেরে দেবে। পাউডার লিপস্টিক মেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন শুধু।

বউদিমণিটা আবার কে রে?

আপনার যিনি বউ হবেন তার কথাই বলছি।

কেউ হবেন না। কস্মিনকালেও না।

ফটিক খুব রহস্যের হাসি হাসে। ভাবখানা যেন, ঠাট্টা ইয়ার্কি হচ্ছে! তারপর জিজ্ঞেস করে, তা কত দাম পড়ল দাদাবাবু?

হেমাঙ্গ মাথাটাথা চুলকোয়। সঠিক দাম থেকে অর্ধেক কমিয়ে বলে। তাতেও ফটিকের চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে যায় বিস্ময়ে, অবিশ্বাসে। বলে, দেশের বাড়িতে এ টাকায় যে একখানা ঘর উঠে যায়!

হেমাঙ্গ সেটা জানে। আর জানে বলেই আর একদফা পাপবোধ এসে ভালুকের মতো চেপে ধরে তাকে।

এই পাপবোধ থেকে বেরোনোর একটা রন্ধ্র খুঁজছিল অনেকদিন ধরে। সুযোগটা পেল রবিবার। পিন্টুর জন্মদিন।

চারুশীলা যখনই যা করে তা বেহেড বাড়াবাড়ি রকমের। বরের টাকা আছে, যথেষ্টর চেয়েও বেশী আছে। ঠিক কথা। কিন্তু টাকা যে এরকম পাগলের মতো ওড়ানো যায়, তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। পুঁচকে একটা সাত বছরের ছেলের জন্মদিন মাত্র, বিয়ে-শাদিও নয়। তবু সারা বাড়িতে আলোকসজ্জা, স্টিরিওতে সানাই। নামী ক্যাটারার ডাকা হয়েছে। ছোটো করে ককটেল পার্টি দেওয়া হচ্ছে। হলঘরে বেলুন, রঙিন কাগজের শিকলি, ফুল আর মালা, নানা বর্ণের আলোয় ছয়লাপ। একটা ক্ষুদে স্টেজের ওপর চলছে কুইজ কন্টেস্ট, অন্তাক্ষরী, ম্যাজিক শো, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি। অন্তত পঞ্চাশ জন বাচ্চা আর শ’ দেড়েক মেয়ে-পুরুষ এসেছে নেমন্তন্নে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারল, ক্যাটারার একশ দশ টাকা করে প্লেট নিচ্ছে।

উত্তেজিত হেমাঙ্গ চারুশীলাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। ধরা মুশকিল। সবচেয়ে মুশকিল মেয়েদের দঙ্গলে ঢুকে ওকে টেনে আনা। মহিলাদের সমাবেশের ধারেকাছে কখনও যায় না হেমাঙ্গ। সুতরাং সে তক্কে তক্কে রইল। একটা ফুটফুটে অচেনা যুবতী মেয়ে তার হাতে একটা ঠাণ্ডা নরম পানীয় ধরিয়ে দিয়ে গেছে কখন। হেমাঙ্গ সেটাতে একবারের বেশী চুমুক দিতে পারেনি অন্যমনস্কতায়।

চারুশীলার বাড়িটা বিশাল। আর্কিটেক্ট স্বামী মনের সুখে বানিয়েছে। অজস্র খাঁজ-খোঁজ, গুপ্ত জায়গা, আচমকা দু ধাপ সিঁড়ি বা একটি ডিপ্রেসন। এ সব কেন কে জানে! তবে ডাইনিং হলের মাঝখান দিয়ে একটা নারকোল গাছের কাণ্ড সিলিং ভেদ করে ওপরে উঠে গেছে। প্ল্যানে বাড়ির মধ্যেই পড়েছিল গাছটা। সুব্রত—অথাৎ চারুশীলার বর সেটা কাটেনি। ছাদে উঠলে একদম হাতের নাগালে নারকোল ফলে থাকে। হাত দিয়েই পাড়া যায়।

নানা জায়গায় চেয়ার পাতা। বসবার জন্য একটা আড়াল খুঁজছিল হেমাঙ্গ। হলঘরটায় বড্ড হল্লা। পাশের ঘরে ককটেল, সেখানেও শান্তি নেই। আর প্রায় সর্বত্রই মেয়েদের জটলা। হেমাঙ্গ হলঘরের লাগোয়া বারান্দাটা ফাঁকা পেয়ে গেল। একটু অন্ধকার মস্ত বারান্দায় সার দিয়ে মোল্ডেড চেয়ার পাতা।

বসতে গিয়ে একটু চমকাল হেমাঙ্গ। না, ফাঁকা নয়। একদম কোণের দিকে দুজন মানুষ খুব কাছাকাছি বসা। নিচু গলায় গুনগুন করে কথা কইছে।

হেমাঙ্গ সামান্য অস্বস্তি বোধ করল। কেউ প্রেমট্রেম করছে নাকি? তাহলে মূর্তিমান রসভঙ্গের মতো তার এখানে থাকার দরকার কী? উঠতেই যাচ্ছিল, হঠাৎ মনে হল, একজন বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে একজন কিশোরী মাত্র। প্রেম কি? নাও হতে পারে।

হঠাৎ কিশোরীটিই আধো অন্ধকার থেকে হেমাঙ্গকে চমকে দিয়ে ইংরিজিতে বলে উঠল, উই আর টকিং অ্যাবাউট পলিউশনস।

কথাটা বুঝল না হেমাঙ্গ। তবু বলল, দ্যাটস ফাইন, ক্যারি অন।

কিন্তু জুটিটা ভেঙে গেল। বোধ হয় হেমাঙ্গর জন্যই ভাঙল। মেয়েটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে পুরুষটিকে বলল, অলরাইট, সি ইউ এগেন।

তারপর দৌড়পায়ে চলে গেল হলঘরে।

মেয়েটাকে চিনল না, কিন্তু দু তিনবার তাকাতেই পুরুষটিকে চিনতে পারল হেমাঙ্গ। তার মতোই ভীরু-ভীরু, গ্যাঞ্জাম-ভীতু, দার্শনিক টাইপের লোকটি কৃষ্ণজীবন, রিয়ার স্বামী। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে এ লোকটি বিশেষ রকমের বিখ্যাত। স্বয়ং সরকার ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এর পরামর্শ নেয়।

আরে, কী খবর? বলে চেয়ার বদল করে লোকটার একটু কাছাকাছি বসল হেমাঙ্গ।

লোকটা কম কথা বলে, মোটেই ভাল আড্ডাবাজ নয়, গেঁয়ো টাইপের এবং মুখচোরা। কিন্তু কৃষ্ণজীবন ওই কিশোরীটির সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলছিল এতক্ষণ? পলিউশন, গ্লোব ওয়ার্মিং, ওজোন হোল, ডিফরেস্টেশন, সমুদ্রের জলস্তরে স্ফী্‌তি? কিশোরী বয়স কি অত জ্ঞান ধারণ করার বয়স? বিশেষ করে যখন লাগোয়া হলঘরে চলছে ম্যাজিক শো, অন্তাক্ষরী, কুইজ কন্টেস্ট এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত!

হেমাঙ্গ আলাপ জমানোর জন্য ততটা নয়, একটা চাপা উদ্বেগ নিরসনের জন্যই হঠাৎ প্রশ্ন করল, হ্যাঁ ভাল কথা, আপনাদের সেই প্রাইভেট টিউটর চয়ন কেমন আছে বলুন তো!

কৃষ্ণজীবন যেন কিছুক্ষণ আকাশ হাতড়ে বেড়াল। তরপর বলল, চয়ন! সে কে?

আপনার মেয়ে মোহিনীকে প্রাইভেট পড়ায় যে ছেলেটি! একটু এপিলেপটিক!

ওঃ, চয়ন! বলে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে কৃষ্ণজীবন অসহায় ভাবে মাথা নেড়ে বলে, জানি না তো! তার সঙ্গে আমার তো দেখাই হয় না। কী হয়েছে তার?

হেমাঙ্গ হেসে বলল, তাহলে না জানাই ভাল। তবে আমার বন্ধু কণাদ চৌধুরী তার চিকিৎসা করছিল।

হবে। আমাকে কেউ কিছু বলে না।

আর আপনার স্ত্রীর মাইগ্রেন?

কৃষ্ণজীবন ফের অসহায়ভাবে মাথা নাড়ল, জানি না। তবে ভালই আছে বোধ হয়। ওই তো আছে ভিতরে, জিজ্ঞেস করুন না!

দরকার নেই। পরে জেনে নেবো। আপনি বোধ হয় ডোমেস্টিক ফ্রন্টের কোনও খবরই রাখেন না।

সংকুচিত হয়ে কৃষ্ণজীবন বলে, রিয়া আমাকে কিছু বলে না যে।

দেন ইউ আর এ হ্যাপী ম্যান। শুনতে পাই বউদের ঘ্যানঘ্যানানিতে নাকি স্বামীরা জেরবার হয়ে যায়।

কৃষ্ণজীবন একটু হাসল। লোকটা হ্যান্ডসাম, হাসলে খুবই ভাল দেখায়। মেদহীন, রুক্ষ, ছিপছিপে চেহারায় বয়সের কোনও ছাপই পড়েনি। রিয়ার পাশে একে হয়তো বয়সে কিছু কমই মনে হবে।

হেমাঙ্গ একটু হিংসের গলায় বলে, আপনি কিন্তু বেশ ফিট, তাই না?

কৃষ্ণজীবন এই কমপ্লিমেন্টও নিতে পারল না। অস্বস্তি বোধ করে বলল, আমি কষ্টে মানুষ।

হেমাঙ্গ হেসে ফেলল, কী কথার কী জবাব! এ লোকের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা বৃথা। প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার জন্যই সে বলল, একটু ককটেল চলবে? ব্যবস্থা আছে কিন্তু!

কৃষ্ণজীবন এ কথায় শঙ্কিত হয়ে বলল, না না, ওসব নয়। আমি খাই না।

হেমাঙ্গ একটা শ্বাস ছেড়ে উদাস গলায় বলে, এইরকম ম্যাসিভ স্কেলে জন্মদিন করার কোনও মানে হয়, বলুন! ক্যাটারার, ককটেল, ডেকোরেশন! এটা কি অপব্যয় নয়?

একথাটা কৃষ্ণজীবনের যেন পছন্দ হল। সে সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ, খুবই অপব্যয়। ভীষণ অপব্যয়। আমার বা আমার ভাইবোনদের কখনও জন্মদিন-টিন হত না। জন্মের তারিখও জানা ছিল না। স্কুলের খাতায় আন্দাজে জন্মের তারিখ লেখানো হয়েছিল, মনে আছে।

আচ্ছা, আপনার বাড়ি শুনেছি উত্তর চব্বিশ পরগনায়। কোন গ্রাম বলুন তো! আমার ওদিকে একটু যাতায়াত আছে।

বিষ্টুপুর। শীতলাতলা বিষ্টুপুর। স্টেশন থেকে দু মাইল দূর। আগে হেঁটে যাতায়াত করতে হত। আজকাল বাসরাস্তা হয়েছে। ছোটো গ্রাম।

নামটা চেনা। ওদিকে গেলে খোঁজ নেবো।

নেবেন। একটেরে জায়গা।

কিছু মনে করবেন না, আপনি তো প্রায় একটা ইন্টারন্যাশনাল ফিগার, তবু এখনও বেশ সহজ সরল আছেন। গাঁয়ের লোক বলেই কি?

কৃষ্ণজীবনের একথাটাও পছন্দ হল। আবার একবার হাসল। তারপর মৃদু স্বগতোক্তির মতো বলল, সহজ সরল আর থাকতে দিচ্ছে কই? বুদ্ধিমান মানুষেরা, বিদ্বান মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে। ফলে গ্রাম বড় ফাঁকা আর অন্ধকার হয়ে যায়। আজেবাজে লোকেরা সেখানে রাজত্ব করে। ভুল শিক্ষা, ভুল রাজনীতি, ভুল ধর্ম, ভুল নৈতিকতা নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের গ্রামগুলোকে। গাঁয়ে গেলে লক্ষ করবেন, সব সেকেন্ড গ্রেড থার্ড গ্রেড লোক সেখানে ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছে।

এত কথা কৃষ্ণজীবনের মুখে একসঙ্গে শুনে হেমাঙ্গ অবাক হল। ওই কিশোরী মেয়েটিও কি এ সবই শুনছিল? পলিউশনের কথা বলছিল না!

হেমাঙ্গ বলল, জানি। গ্রামে এখন খুব পলিটিকস। আপনি বোধ হয় বিষ্টুপুর ছেড়ে এসে খুব হ্যাপী নন!

একটুও না। কিন্তু হায়ার এডুকেশন, বেটার জব অপরচুনিটি, হায়ার স্ট্যাটাস টেনে আনে মানুষকে। মুশকিল কী জানেন? একবার চলে এলে আর কখনও ফিরে গিয়ে নিজের গ্রামে নিজেকে ট্র্যানসপ্ল্যান্ট করতে পারবেন না। গাঁয়ের লোকই থাকতে দেবে না আপনাকে। তবু আমি চেষ্টা করব।

হেমাঙ্গ অবাক হয়ে বলে, কী চেষ্টা করবেন?

ফিরে যেতে। আমি যদি যাই, তাহলে একদম চাষী হয়ে যাবো। নিজের হাতে লাঙ্গল চালাবো, ঘর ছাইব, মিশে যাবো।

হেমাঙ্গ হাসল, পারবেন না। আপনিই সবচেয়ে ভাল জানেন যে, আপনি পারবেন না। আমি মাঝে মাঝে গ্রামে যাই বলেই জানি, আপনার অ্যাসেসমেন্ট হান্ড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট।

কৃষ্ণজীবন কি একটু বিষণ্ণ হল? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিষাদ মাখানো গলায় বলল, কিন্তু গ্রামে না ফিরলেও, আমাদের সবাইকেই একদিন গ্রাম্য জীবনে ফিরে যেতেই হবে। এই সব বড় বড় শহর তৈরি করাই ছিল মানুষের মস্ত ভুল। এক জায়গায় এত মানুষকে জড়ো করলে বাতাস বিষিয়ে যায়, জমে ওঠে গাদ, দূষণ। প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন আর বাক্সবন্দী হয়ে যায় মানুষ। ভবিষ্যতে একদিন মানুষ নিজেদের ভুল শুধরে নিতে শহর ভাঙবেই। ভাঙ্গবে কলকারখানা, কমিয়ে দেবে রাসায়নিকের ব্যবহার, বহু ভোগ্যপণ্যকে বাতিল করে দেবে।

আপনি জনসংখ্যার দিকটাও তো ভাববেন!

কৃষ্ণজীবন একটু হাসল ফের। উদাস গলায় বলল, আগামী কয়েক দশকে প্রকৃতির নিয়মেই লাখো লাখো মানুষ মরবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ ভোগ, যুদ্ধ বা খুন—এ সবই হল জনসংখ্যার সিলিং। একমাত্র এইভাবেই কত মানুষ মরবে তা কি জানেন?

খবরের কাগজে পড়েছি বটে। নাম্বারটা অ্যালার্মিং।

আবহমণ্ডলে ওজোন হোল সৃষ্টি হওয়ায় ক্যানসার মহামারীতে দাঁড়িয়ে যাবে। ন্যাচারাল রিসোর্স আর জনসংখ্যার মধ্যে রেশিও রক্ষা করতে পার্জিং হবেই। আমি চোখ বুজলে দেখতে পাই পৃথিবী জুড়ে মৃতদেহের গাদি লেগে আছে। সৎকারের লোক নেই।

হেমাঙ্গ বারান্দার ঝুঁঝকো অন্ধকারে লোকটার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়েছিল। সে যতদূর জানে, লোকটা পাগল নয়, বায়ুগ্রস্ত নয়। লোকটা একজন বিশেষজ্ঞ। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরিসংখ্যানের জোরে কথা বলছে। তবু সে স্বগতোক্তির মতো বলল, অতটাই কি হবে! বিজ্ঞানীরা যখন উঠে পড়ে লেগেছে তখন একটা কিছু সমাধান তো হবেই। তাই না?

বিজ্ঞানীরা মুষ্টিমেয়। পৃথিবীর যে সংকট আসছে সে সম্পর্কে অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষেরই ধারণা ভাসা ভাসা। আর অশিক্ষিতরা তো সম্পূর্ণ নির্বিকার। কয়েকদিন আগেই একজন সেন্ট্রাল মিনিস্টার আমাকে ডেকে বলেছেন, আমি যে কলকারখানা কমাতে বলছি তাতে নাকি উৎপাদন ও উন্নয়ন মার খাবে। তাকে আমি বোঝাতে পারিনি, আগে অস্তিত্বকে রক্ষা করা দরকার, নইলে উন্নয়ন আর উৎপাদন কার কাজে লাগবে? আমি পৃথিবীর লোককে বোঝানোর চেষ্টা করছি, সবগুলো রাষ্ট্রের উচিত অন্যসব ইস্যুকে উপেক্ষা করে পৃথিবীর পরিবেশ ও আবহমণ্ডলকে রক্ষা করার জন্য সব রিসোর্সেস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। কিন্তু কে শুনছে বলুন! রাজনীতিকরা তাঁদের কূটকচালিতে বন্দী হয়ে আছেন, আমলারা ব্যস্ত প্রশাসনিক কাজে। সাধারণ মানুষ অন্নবন্ত্রের বাইরে কিছুই ভাবতে চায় না। এই পৃথিবীর জন্য, মাটির জন্য, গাছের জন্য, প্রকৃতির জন্য তাদের যেন কিছুই করার নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে এই উদাসীনতা। নেগলিজেন্স। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে আমি কী করতাম জানেন! কেউ গাছ কাটলে তার ফাঁসির ব্যবস্থা করতাম। সন্তান সংখ্যা যার বেশী হবে তাকে জেল-এ পাঠানোর ব্যবস্থা করতাম। জল বা বায়ু দূষিত হয় এমন কলকারখানার মালিকদের দেউলিয়া করে ছেড়ে দিতাম।

হেমাঙ্গ সামান্য সপ্রসংশ গলায় বলে, আপনাকে দেখে বোঝা যায় না বটে, কিন্তু ইউ আর এ টাফ ম্যান।

কৃষ্ণজীবন একটুও হাসল না। মাথা নেড়ে বলল, না। আমি বড় অসহায় আর দুর্বল। আমি কিছু করতে পারছি না। এ বিটন ওল্ড ম্যান।

ওল্ড কোথায়! আপনি তো দারুণ ইয়ং লুকিং।

বাইরেটা। ভিতরে ভিতরে আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি দুশ্চিন্তায়, টেনশনে।

অবস্থাটা কি ততটাই খারাপ?

আপনি যতদূর ভাবতে পারছেন তার চেয়েও বোধ হয় বেশী। আমাদের আর একদম সময় নেই।

তাহলে বৈজ্ঞানিকরা এতদিন কী করল মশাই?

তাদের দিয়ে যা করানো হয়েছে তারা তাই করেছে। তারাও রাজনীতি আর প্রশাসনের শিকার। তাদের মস্তিষ্ক আছে, চরিত্র নেই। তাই তারা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট, মারণাস্ত্র, দূষিত কেমিক্যালস তৈরি করে যাচ্ছে। তাদের লাগানো হচ্ছে কসমেটিক জিনিসপত্র তৈরির কাজে। লাগানো হচ্ছে লোককে চমকে দেওয়ার জন্য নানা ম্যাজিক আইটেম বানানোর কাজে। লোককে বোঝানো হচ্ছে, এটা বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরের বিকল্প। বিজ্ঞান দুনিয়ার সব রহস্য ভেদ করতে চলেছে। কিন্তু যারা বিজ্ঞান জানে তারা এ কথা শুনে লজ্জায় জিব কাটে। বিজ্ঞান কোথায় পড়ে আছে তা কি জানেন? লোকে আকাশে রকেট পাঠানো দেখে, স্যাটেলাইটে টিভি দেখে ভাবছে, বিজ্ঞান বুঝি কেল্লা মেরে দিল। কিন্তু আসল কথা কি তাই! বিজ্ঞানের ঘরে পচা ইঁদুরও কি নেই? মহাকাশের কথা বাদ দিয়ে শুধু এই সোলার সিস্টেমের কথাই ধরুন। এরই এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যেতে কত সময় লাগছে বলুন তো একটা রকেট বা প্রজেক্টাইলের? কত ফুয়েল খরচ হচ্ছে! কত কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে! দুনিয়ার মানুষকে উপোস, অশিক্ষা আর রোগেভোগে রেখে এই গবেষণা কী দিচ্ছে আমাদের? প্রায় কিছুই নয়। আমাদের নিকটতম নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে চার লাইট ইয়ার দূরে। যদি মানুষ কখনও আলোর গতি অর্জন করতে পারে তাহলেও সেখানে মহাকাশযান পাঠাতে লাগবে চার বছর। যদি না মাঝপথে অ্যাস্টোরয়েডরা সেই মহাকাশযান ধ্বংস করে দেয়। আলোর গতি অর্জন করাও আইনস্টাইনের মতে প্রায় অসম্ভব। সেই ফুয়েল আমাদের নেই এবং ওই গতি কোনও ম্যাটারের পক্ষে অর্জন করা অসম্ভব, বস্তুগত রূপান্তর ছাড়া। আলোর গতি পেলে ম্যাটার হয়ে যাবে এনার্জি, আমি কি একটু বেশী টেকনিক্যাল হয়ে পড়ছি?

আমি বুঝতে পারছি। আজকাল সবাই এসব বোঝে।

কৃষ্ণজীবন হতাশ গলায় বলে, বুঝছে কই? বৈজ্ঞানিকরা আমাদের খেলনা দিয়ে, চুষিকাঠি দিয়ে, রূপকথার গল্প বলে ভুলিয়ে রাখছে। কিন্তু আমরা পচা ইঁদুরের গন্ধ পেতে শুরু করেছি। আমি হিউস্টনে এক বক্তৃতায় বলেছিলাম, আমেরিকা যদি তার একটা বা দুটো রকেট উৎক্ষেপণ বন্ধ রেখে টাকাটা ইথিওপিয়ার মরু-প্রকৃতিকে বশে আনতে ব্যয় করে তাহলে পৃথিবীর অনেক বেশী উপকার হবে। আমেরিকানরা তুমুল হাততালি দিল, বাহবা দিল, কিন্তু প্রস্তাবটা কার্যকর করল না।

আপনি কি মহাকাশ গবেষণা বন্ধ করার পক্ষে?

না, আমি ততটা গাধা নই। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, মহাকাশ গবেষণার বকলমে কিছু মানুষ বড়লোক হয়ে যাচ্ছে এবং চলছে ওয়াইল্ড গুজ চেজ। আমি বাড়াবাড়ির বিপক্ষে। আমেরিকা যখন চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল তখন সেটা কত বড় হাই রিস্ক ভেনচার ছিল তা কি জানেন? তখনও ফুল-প্রুফ টেকনোলজি ছিল না, শুধু বাহবা পাওয়ার জন্য ওই সাঙ্ঘাতিক ঝুঁকি নিয়েছিল। এইসব ইউজলেস কাজ তো বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য নয়। তার উদ্দেশ্য মানুষের মঙ্গল। কিন্তু সে কথাটা মানুষ বুঝছে কই! বিজ্ঞান-পাগল মানুষ বিজ্ঞানকে মাথায় তুলেছে, ঈশ্বরের বিকল্প করে তুলছে, অথচ বাস্তববুদ্ধি থাকলে মানুষের বোঝা উচিত ছিল, বিজ্ঞানের ভূমিকা হল মানুষের ভৃত্যের। যার চাকর হওয়ার কথা তাকে মনিব করে তোলা কি উচিত?

আপনি নিজে বৈজ্ঞানিক, তবে বিজ্ঞানের ওপর ক্ষেপে আছেন কেন?

বিজ্ঞানের ওপর ক্ষেপব কেন! আমার রাগ আহাম্মক মানুষের ওপর। অস্ত্র গবেষণায় কত কোটি কোটি ডলার খরচ হয় তা কি জানেন? এক একটা যুদ্ধে কত কোটি ডলার খরচ বলুন তো! এক একটা ক্ষেপণাস্ত্রের দাম কত, একটা পুওর ম্যান্‌স্‌ অ্যাটম বোমার? প্রতি মিনিটে কত মিলিয়ন ডলার ছারখার হয়ে যায়? মাটির নিচে তেল ফুরিয়ে আসছে, তবু কিছু আহাম্মক শত্রুতা করে জ্বালিয়ে দেয় তেলের খনি। কত তেল পুড়ে গেল! কত ক্ষতি হল মানুষের! কতখানি বিষিয়ে গেল পৃথিবীর বায়ু আর জল! কী হবে আপনার এই বৈজ্ঞানিক সভ্যতা দিয়ে, যা বর্বর, অদূরদর্শী, আত্মঘাতী?

লোকটা এত গুছিয়ে কথা বলতে পারে, এটা একদমই জানা ছিল না হেমাঙ্গর। বরং সে শুনেছে, লোকটা গ্রাম্য, মুখচোরা, একটু ক্ষ্যাপাটে এবং আনমনা, হয়তো তাই। হয়তো শুধু নিজের গবেষণা ও উপলব্ধির ক্ষেত্রেই লোকটা সহজ ও বাক্‌পটু। সে একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বলে, ইউ আর পারহ্যাপস রাইট।

আই অ্যাম রাইট। আমি ফিকশ্যনাল সায়েন্সে বিশ্বাস করি না, ডেস্ট্রাকটিভ সায়েন্সে বিশ্বাস করি না, ওয়েলফেয়ার সায়েন্সে বিশ্বাস করি। সভ্যতায় অনেক কদম এগিয়ে গিয়েও যখন মানুষকে বর্বর, আহাম্মক, নির্বোধ আর উদাসীন দেখি তখন মনে হয়, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি-নির্ভর সভ্যতার কোনও দাম নেই। আমাদের কোনও সৎ শিক্ষাই এই সভ্যতা দিচ্ছে না। চাকা সুতরাং উল্টোদিকে ঘোরাতেই হবে।

বারান্দার ঝাঁঝালো বাতিটা হঠাৎ জ্বলে উঠতেই চমকে গেল হেমাঙ্গ।

এই অলম্বুস! বলেই জিব কাটল চারুশীলা, আরে, আপনিও এখানে! বলে কৃষ্ণজীবনের দিকে চেয়ে হেসে ফেলল।

হেমাঙ্গ গম্ভীর হয়ে বলে, যা তো। এখন কাজের কথা হচ্ছে।

সে কি! খাবি না? ডিনার শুরু হচ্ছে যে!

আরও পরে খাবো।

চারুশীলা কৃষ্ণজীবনের দিকে চেয়ে বলে, প্লীজ, আপনি আসুন। রিয়া খুঁজছে আপনাকে। আপনার নাকি আজ রাত বারোটায় প্লেন ধরতে হবে।

আজ্ঞে হ্যাঁ। বলে কৃষ্ণজীবন উঠে দাঁড়ায়। ভারী আপ্যায়িত ভঙ্গি।

হেমাঙ্গ বলে, কোথায় যাচ্ছেন রাত বারোটার প্লেনে?

লন্ডন। এমনভাবে বলল, যেন লিলুয়া-টিলুয়া কোথাও যাচ্ছে।

একা বারান্দায় আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে হেমাঙ্গ। পৃথিবীর আসন্ন বিপদ নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তা নেই তার। কৃষ্ণজীবন যতই বলুক, সে জানে পৃথিবীর ভাল করার কথা যারা ভাবছে, তারা ঠিকই ভাল করবে। ঘুরেফিরে তার কেবলই একটা প্রশ্ন আসছে মনে, ওই কিশোরী মেয়েটি এইসব গুরুতর কথাই কি চুপ করে শুনছিল কৃষ্ণজীবনের কাছ ঘেঁষে বসে? কে মেয়েটা?

চারুশীলা আবার এল, কী হচ্ছে বল তো? খাবি না নাকি?

নাও খেতে পারি। প্রতিবাদ হিসেবে।

তার মানে!

এই গরিব দেশে এত খরচ করে কেউ ছেলের জন্মদিন করে? এই অপচয়ের মানে হয় কোনও?

ওঃ, তাহলে এই হল ব্যাপার! আর তুই যে আজেবাজে জিনিস কিনে রোজ টাকা উড়িয়ে দিচ্ছিস!

তোর মাথায় ঘিলু বলে পদার্থটা নেই বলেই বলছিস। জিনিস কিনলে টাকার অপচয় হয় না, টাকাটা জিনিসে কনভার্টেড হয় এবং ঘরে থাকে।

ওটা তো আই-ওয়াশ। জিনিসগুলো বেচলে ফের পুরো টাকাটা কখনও ফেরত পাবি?

ফেরত পাওয়ার প্রশ্নই নেই। জিনিসগুলো আমাকে সারভিস দিচ্ছে।

ছাই দিচ্ছে। আয় বলছি খেতে।

এই গরিব দেশে একশ দশ টাকা প্লেট মূর্খের মতো অপচয়। বহু খাবার নষ্ট হবে। আই প্রটেস্ট।

মারব থাপ্পড়, কিপ্পুস কোথাকার। নইলে পিন্টুকে লেলিয়ে দেবো। তখন সুড়সুড় করে যাবি।

তুই পিন্টুটাকে নষ্ট করছিস।

বেশ করছি। আর একটা কথা বলে রাখি, আমার সামনে গরিব কথাটা উচ্চারণ করবি না কখনও। গরিব কথাটাই আমি সহ্য করতে পারি না। গরিবদের দুচোখে দেখতেও পারি না।

হেমাঙ্গ অবাক হয়ে বলে, বলতে পারলি কথাটা! জিবে আটকাল না? তুই সত্যি খারাপ হয়ে গেছিস।

তোর চেয়ে খারাপ নই। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। নীলা বণ্ডেল রোডে ফিরবে। ওর গাড়ি নেই। ওকে নামিয়ে দিয়ে যাবি।

আমার খিদে পাচ্ছে না।

খপ করে তার চুলের মুঠি চেপে ধরল চারুশীলা, খাবি কিনা?

উঃ। যাচ্ছি যাচ্ছি!

খাওয়ার ঘরেই কিশোরীটির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। প্লেটে সামান্য একটু মাছের কারি নিয়ে একটু খাওয়ার ভান করছে। এটা খিদের বয়স, কিন্তু এই প্রজন্মের হাই ব্রাও মেয়েরা তেমন খেতে-টেতে চায় না। অন্তত পাবলিকলি নয়।

ভিড়ে মেয়েটার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল হেমাঙ্গ, তুমি কে বলো তো?

মেয়েটা মুখ তুলে তাকে দেখে হাসল, আমি অনু। নন্দনা আমার বন্ধু। আপনি?

আমি! আমি নন্দনার মামা। হেমাঙ্গ! তুমি ওটা কী খাচ্ছো?

মাছ। কিন্তু বিচ্ছিরি খেতে হয়েছে।

তবে খাচ্ছো কেন? অনেক আইটেম আছে, নিয়ে খাও না।

আসলে আমার অ্যাপেটাইট নেই। মাই ড্যাড ইজ সিক। নট ফিলিং হাংরি।

বাবার কী হয়েছে?

হয়েছিল। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। তবে হি ইজ পুলিং থ্রু। ইনটেনসিভ কেয়ার থেকে পরশু কেবিনে ট্রান্সফার করা হয়েছে।

তাহলে তো ভাল খবর।

ভালই। তবু কেন যেন বাবার অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে খেতে পারি না।

কৃষ্ণজীবনবাবুকে তুমি চেনো?

মেয়েটা টপ করে তার দিকে একবার তাকাল। তারপর স্মার্ট হেসে বলল, উই আর ফ্রেন্ডস।

ফ্রেন্ডস!

ভেরি গুড ফ্রেন্ডস।

হেমাঙ্গ মেয়েটার পাকামিতে একটু হাসল। একটু চিমটি কেটে বলল, পারহ্যাপস নট এ বয় ফ্রেন্ড?

অ্যান্ড হোয়াই নট? বলে হিহি করে হাসল মেয়েটা।

মাই গড!

আপনি একটু ওল্ড ফ্যাশনড্‌, তাই না?

কি জানি! হবে হয়তো।

আসলে ওঁর মেয়ে মোহিনী আমার খুব বন্ধু।

তাই বলো।

উনিও বন্ধু।

হেমাঙ্গ একটা মুর্গির ঠ্যাং সন্তর্পণে কামড়ে বলল, হি ইজ ইন লাভ উইথ দিস আর্থ। জানো?

সবাই জানে। হি ইজ এ গুড গাই। জেম অফ এ গাই।

বোধ হয় তুমি ঠিকই বলছো। আফটার অল হি ইজ ট্রাইং টু ডু সামথিং ফর ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড দিস প্ল্যানেট।

দ্যাটস হোয়াই আই অ্যাম ইন লাভ উইথ হিম।

এরা যে কী ভাষায় কথা বলে তা ঠিক পায় না হেমাঙ্গ। সে একটু অস্বস্তি বোধ করে চুপ করে রইল।

অনু তার মাছসুদ্ধ প্লেটটা একজন চলন্ত বেয়ারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ডু ইউ নো সামথিং অ্যাবাউট ইওরসেলফ?

কী বলো তো!

ইউ আর এ হ্যান্ডসাম ম্যান!

বলে হিহি করে হাসল অনু। তারপর বলল, যাই।

হেমাঙ্গর হাত থেকে মুর্গির ঠ্যাংটা পড়েই যাচ্ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *