১৫ জুন, মঙ্গলবার ১৯৭১
সকালে উঠেই ডাঃ এ. কে. খানকে আবার ফোন বুক করলাম। খুকুর পৌঁছানোর খবরটা দেওয়া দরকার। খুকুকে বললাম, তুমি ওপরে থাক। জামীর সঙ্গে গল্প কর। ফোন এলে আমার বেডরুমে ধোরো। আমি নিচে একটু সংসারের কাজ করি।
এগারোটার সময় বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং লেখক। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় একদিন বাংলা একাডেমীতে স্বাধীন বাংলার রূপরেখা বলে একটা দুঃসাহসী প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। আগেও চিনতাম কিন্তু ঐ প্রবন্ধ পাঠের পর থেকেই যোগাযোগটা বেড়েছে।
চা-নাশতা দিয়ে জিগ্যেস করলাম, হাসান হাফিজুর রহমানের কোনো খবর জানেন?
বোরহান চমকে বললেন, না। কেন, কিছু শুনেছেন?
না, না, ভয় পাবার কোন কারণ নেই। ওঁর কোনো খবর জানি না কি-না-তাই—
আমিও জানি না। লুকিয়ে আছেন কোথাও। হয়তো কোনো গ্রামে।
ওর খবর পেলে আমাকে জানাবেন।
জানাবো। বোরহান খুব কম কথা বলেন। দুটো কাজের ভার দিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক মনসুর মুসার স্ত্রী শামসুন্নাহার মুসা মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের মহিলা শাখায় কাজ করেন। বলাকা বিল্ডিংয়ে ব্যাঙ্ক। ওঁর কাছে গিয়ে কিছু কথা বলতে হবে। আর বাংলা একাডেমীর ডিরেক্টর কবীর চৌধুরীকে একটা চিঠি দিতে হবে।
ঠিক আছে। কালকে যাব।
রাজশাহীর লাইন পেলাম দেড়টায়। খুকু তার আব্বা, মার সঙ্গে কথা বলল। আমিওদুচারটে কথা বললাম। এ. কে. খান জিগ্যেস করলেন, আপনারা সবাই ভালো তো? শরীফ? রুমী-জামী? শরীফের আব্বা?
হ্যাঁ, সবাই ভালো।
জবাব দেবার সময় বুকে ব্যথা লাগল। রুমী ভালো আছে কি? জানি না তো।