1 of 2

১৫. চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ

চুক্তিনামা বিনষ্টকরণ

ইবন ইসহাক বলেন, বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিবের লোকেরা সেই স্থানেই অবস্থান করছিল যেখানে অবস্থানের কথা কুরায়শের লোকেরা লিখিত চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছিল। তারপর কুরায়শ বংশেরই কতক লোক ঐ চুক্তিনামা ভঙ্গ করতে উদ্যোগী হন। এই লক্ষ্য

ইবন আমির ইবন লুওয়াই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হিশাম ছিলেন নাযিলা ইবন হিশাম ইবন আবদ মানাফ-এর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে। বনু হাশিম গোত্রের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেও তিনি অন্যতম প্রভাবশালী লোক ছিলেন। আমার নিকট বর্ণনা পৌঁছেছে যে, বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় হাশিম উট

বোঝাই করে খাদ্য নিয়ে তাদের নিকট আসতেন। গিরিসঙ্কটের মুখে এসে তিনি উটের লাগাম খুলে নিয়ে উদ্টটির দু’পাশে আঘাত করতেন যার ফলে উটটি সোজা গিরিসঙ্কটের মধ্যে ঢুকে অন্তরীণ লোকদের নিকট চলে যেত। হাশিম মাঝে মাঝে উট বোঝাই করে গম ও নিয়ে আসতেন এবং একই ভাবে উটটি ভেতরে পাঠিয়ে দিতেন।

একদিন তিনি যুহায়র ইবন আবু উমাইয়া ইবন মুগীরা ইবন আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন মািখযুম এর নিকট এসে উপস্থিত হন। যুহায়রের মা ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের কন্যা আতিকা। হিশাম বললেন, হে যুহায়র! তুমি কি এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে যে, তুমি পেট পুরে খােচ্ছ, জামা-কাপড় পরিধান করছ এবং বিয়ে-শাদী করছ আর অন্যদিকে তোমার মাতুল গোত্রের লোকেরা কোন প্রকারের বেচা-কেনা ও বিয়ে-শাদী দিতে বা করতে পারছে না? আমি তো আল্লাহর কসম করে বলতে পারি, তোমার মাতুল গোত্রের স্থলে যদি আবুল হাকাম ইবন হিশামের মাতুল গোত্র হত এবং এরা তোমাকে যে অমানবিক অবরোধে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়েছে তুমি যদি তাদেরকে তাদের মাতুল গোত্রের বিরুদ্ধে এ প্রকারের আহবান জানাতে তবে তারা কখনো তোমার আহবানে সাড়া দিত না। যুহায়র বললেন, আফসোস হে হিশাম! আমি এখন কী করতে পারি? আমি তো একা। আল্লাহর কসম, আমি যদি একজন সহযোগীও পেতাম, তবে ওই চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যে উদ্যোগী হতাম। হিশাম বললেন, একজন সহযোগী তো তুমি পেয়েই গেছো। যুহায়র বললেন, কে সে ব্যক্তি? হিশাম বললেন, আমি। যুহায়র বললেন, আমাদের সাথী হিসেবে তৃতীয় একজনের খোজ কর। তৃতীয় ব্যক্তির খোজে হিশাম হাযির হলেন মুতঙ্গম ইবন আব্দীর নিকট। তিনি বললেন, হে মুতঙ্গম! কুরায়শদের প্রতি আপনার সমর্থনের কারণে আপনার চোখের সামনে বনু আবদ মানাফ গোত্রের দুটো শাখা ধ্বংস হয়ে যাবে আর চেয়ে চেয়ে তা দেখলে তাতে কি আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন? কুরায়শ সম্প্রদায়কে যদি আপনি ওই সুযোগ দেন, তবে গোত্ৰ দুটোকে ধ্বংস করে দিতে তারা আপনার চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাবে। মুতঙ্গম বললেন, হায় আমি কীই-বা করতে পারি? আমি তো একা। হিশাম বললেন, আপনার সহযোগীরূপে আপনি দ্বিতীয়জন পেয়ে গেছেন। তিনি বললেন, ওই ব্যক্তিটি কে? হিশাম বললেন, আমি। মুতঙ্গম বললেন, তবে তৃতীয় একজনের খোজ কর। হিশাম বললেন, তৃতীয়জনের ব্যবস্থাও আমি করে রেখেছি। মুতঙ্গম বললেন, ঐ তৃতীয় ব্যক্তিটি কে? হিশাম বললেন, যুহায়র ইবন আবু উমাইয়া। মুতঙ্গম বললেন, তাহলে চতুর্থ একজন খুঁজে নাও। এবার হিশাম, উপস্থিত হলেন আবুল বুখতারী ইবন হিশামের নিকট। মুতঙ্গমকে যা বলেছিলেন তাকেও তিনি তা বললেন। সে বলল, তুমি অন্য কাউকে কি পাবে, যে এ ব্যাপারে সাহায্য করবে? হিশাম বললেন, হাঁ পাব। আবুল বুখতারী বলল, কে সে? হিশাম বললেন, যুহায়র ইবন আবী উমাইয়া, মুতঙ্গম ইবন আদী এবং আমি আছি আপনার সাথে। সে বলল, তবে পঞ্চম ব্যক্তির খোজ কর। পঞ্চম ব্যক্তির খোজে হিশাম গেলেন ইবন আসওয়াদ ইবন মুত্তালিব ইবন আসাদের নিকট। সে অবরুদ্ধ লোকদের সাথে তাঁর আত্মীয়তা এবং তাদের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা তিনি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে বলল, আপনি আমাকে যে কাজের প্রতি আহবান করছেন ওই কাজে সহযোগিতা করার জন্যে অন্য কেউ আছে কি? হিশাম বললেন, হ্যা আছে এবং তিনি উপরোক্ত ব্যক্তিদের নাম বললেন। এরপর তারা সকলে মক্কার

উচ্চভূমি হাতম আলহাজ্বন নামক স্থানে রাতের বেলা সমবেত হওয়ার জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন। যথা সময়ে তারা সকলে সেখানে সমবেত হলেন। সবাই একমত হয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন যে, ওই চুক্তিনামা বিনষ্ট করার জন্যে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

যুহায়র বললেন, আমি সর্বাগ্রে কথা বলব। সকাল বেলা তারা তাদের মজলিসে উপস্থিত হন। যুহায়র ইবন আবু উমাইয়া উপস্থিত হন বিশেষ একটি পোশাক পরিধান করে। তিনি সাতবার বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করেন, তারপর লোক-সমক্ষে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, হে মক্কার অধিবাসিগণ! আমরা কি এভাবে আহাৰ্য গ্রহণ ও জাম-কাপড় পরিধান করতে থাকবো, আর বনু হাশিম গোত্র ধ্বংস হয়ে যাবে? তারা কোন কিছু ক্ৰয়-বিক্রয় করতে পারছে না। আল্লাহর কসম, এই আত্মীয়তা ছেদনকারী, জুলুমমূলক চুক্তিনামা ছিডে না ফেলা পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না। মসজিদের একপাশে বসে থাকা আবু জাহল বলে উঠল, আল্লাহর কসম, তুমি সেটি ছিড়তে পারবে না। এবার যাম’আ ইবন আসওয়াদ বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম, তুমি তো জঘন্য মিথ্যাবাদী তুমি যখন এ চুক্তিনামা তৈরী করেছিলে তখন আমরা তাতে রায়ী ছিলাম না। আবুল বুখতারী বললেন, যাম’আ ঠিকই বলেছে, ওই চুক্তিনামায় যা লেখা রয়েছে আমরা তাতে সম্মত নই-আমরা তা সমৰ্থন করি না। মুতসীম ইবন আব্দী বললেন, আপনারা দু’জনে সত্য বলেছেন, আপনাদের কথার বিপরীত কথা যে বলে, সে মিথ্যাবাদী। ওই চুক্তিপত্র ও তাতে উল্লিখিত বিষয়ের ব্যাপারে আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের সম্পর্কহীনতা প্ৰকাশ করছি। হিশাম ইবন আমরও অনুরূপ বক্তব্য রাখলেন। আবু জাহল বলল, এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। নিশ্চয়ই রাতের বেলা অন্যত্র এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় আবু তালিব মসজিদের এক প্রান্তে বসা ছিলেন। চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলার জন্যে মুতসীম ইবন। আদী এগিয়ে গেলেন। তিনি চুক্তিপত্রটি এমতাবস্থায় পেলেন যে,–1]। এL.L. —হে আল্লাহ আপনার নামে শুরু করছি) অংশ ছাড়া অন্য সব লেখা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। চুক্তিনামার লেখক ছিল মানসূর ইবন ইকরিম। কথিত আছে যে, পরবর্তীকালে তার হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল।

ইবন হিশাম বলেন, কতক জ্ঞানী-গুণী লোক উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) আবৃ তালিবকে বলেছিলেন, চাচা! কুরায়শদের চুক্তিপত্রের প্রতি আল্লাহ তা’আলা উইপোকা লাগিয়ে দিয়েছেন। তাতে আল্লাহর নামগুলো অবশিষ্ট ছিল। আর জুলুম-অন্যায়, আত্মীয়তা ছেদনকারী, ও মিথ্যা বিবরণগুলো সব খেয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছে। আবু তালিব বললেন, তোমার প্রতিপালক কি তোমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হ্যা। আবু তালিব বললেন, আল্লাহর কসম, আপাতত কেউ যেন তোমার নিকট না আসে। আবু তালিব কুরায়শদের নিকট ছুটে গিয়ে বললেন, “হে কুরায়শ বংশীয়রা! আমার ভাতিজা আমাকে এরূপ সংবাদ দিয়েছে। তোমরা তোমাদের চুক্তিনামা এখানে নিয়ে এসো দেখি! আমার ভাতিজা যা বলেছে চুক্তিনামার অবস্থা যদি তাই হয়, তবে আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের এ অপকর্ম থেকে তোমরা বিরত থাকবে এবং ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াবে। আর যদি তার কথা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, তবে আমার ভাতিজাকে আমি তোমাদের হাতে তুলে দিব।” উপস্থিত সকলে বলল, ঠিক আছে,

S8–

আপনার প্রস্তাবে আমরা সবাই রাষী। এরপর এ বিষয়ে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তারপর তারা চুক্তিনামাটি এনে দেখল যে, সেটির অবস্থা ঠিক তাই যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন। কুরায়শরা তাতে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে কুরায়শদের উপরোল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলেন।

ইবন ইসহাক বলেন, ওই চুক্তিনামা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এবং তাতে বর্ণিত বিষয়াদি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর আবু তালিব একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। চুক্তিনামা বিনষ্ট করে দেয়ার জন্যে যাঁরা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। কবিতায় তিনি তাদের প্রশংসা করেন। الاً هل آنی بخرینا صانع رابینا–علی نایهها و اللّهٔ بالئاسر آر و ذওহে, আমাদের সমুদ্র অভিযাত্রী আবিসিনিয়ায় অবস্থানকারী ভাইগণ দূর দেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও তাদের প্রতি আমাদের প্রতিপালকের দয়া অবতীর্ণ হয়েছে কি? বস্তৃত মহান আল্লাহ মানব জাতিকে বহু অবকাশ দান করেন।

فيخبرهم أن الصحيفة مزقت – وأن كل مالم يرضة اللَّة مفسدমহান আল্লাহ তাদেরকে অবগত করিয়েছেন যে, চুক্তিনামা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং আল্লাহ যা পসন্দ করেন না তা বিনষ্ট হয়ই।

تراوحها الفلك وسحر مجمع – ولم يلف سحرا أخر الذهر يصعد – সেটিতে একাধারে মিথ্যা ও জাদু সন্নিবেশিত হয়েছে। জাদু ও ইন্দ্ৰজাল শেষ পর্যন্ত উচ্চগামী থাকে না।

تداعى لها من ليس فيها بقرقر–فطائرها فى رأسها يتردّدًসেটির জন্যে এমন লোকেরা পরস্পরকে আহবান করেছে যারা সুশ্ৰী নয়। ফলে সেটির দুৰ্ভাগ্য তার মাথার উপরই চক্কর দিচ্ছে।

وكانت كفاء وقعة بآثيمةليقطع منها ساعد ومقد

এই চুক্তিপত্রের জন্যই হয়েছিল পাপের গর্ভে। এটির উদ্দেশ্য ছিল পরস্পর সহযােগিতাকারী ও আনুগত্য প্রদর্শনকারী গোত্রীয় ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করা।

মক্কাবাসিগণ যেন সফর করে অন্যত্র পালিয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টের আশংকায় তাদের বুক যেন সদা থারথার করে কাঁপছে।

ويترك حراث يقلّب أمره – أيتهم فيها عند ذلك وينجذ– এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এ জন্যে যে, যেন মক্কায় রেখে যাওয়া হয় একজন কৃষককে যে

ওখানকার কাজকর্ম পরিচালনা করবে। সে হবে তখন সেখানে পলায়নকারীদের পক্ষ থেকে নিদর্শন ও চিহ্ন। সে-ই সব কাজ করবে।

وتصعد بين الأخشبين كتيبة – لها حدج سهم وقوس ومر هذ– পলায়নরত লোকগুলো যেন দলবদ্ধভাবে দু’টি টিলার মধ্যখানে আরোহণ করে। তীরের আক্রমণ, ধনুক নিক্ষেপ এবং অগ্নিদাহন যেন তাদেরকে তাড়া করে ফেরে।

কোন অনিষ্টকারী ব্যক্তি যদি মক্কায় সম্মানিত ও মর্যাদাবান হতে চায়তো তবে এটা সকলেরই জানা উচিত যে, মক্কাভূমি আমরা প্রাচীনকাল থেকেই মর্যাদাবান ও সম্মানিত বংশ।

نشأنا بها والناس فيها قلائلفلم نتفكك نزداد خيرا ونحمد

আমরা মক্কায় লালিত-পালিত হচ্ছি। সেই কাল থেকে যখন সেখানে মানব বসতি ছিল

নিতান্ত কম। এরপর আমরা অনবরত কল্যাণ অর্জনকারী ও প্রশংসা লাভকারী হয়ে জীবন যাপন করে আসছি।

و ئط 娜 يترك الناس فضلأمة – اذا جعلت آیدی ال نفيذ ين ترعدّ

আমরা লোকজনকে খাদ্য দান করতে থাকি যতক্ষণ না দানশীলতার সম্মান অন্যদের থেকে

খসে পড়ে একমাত্র আমাদের জন্যে হয়ে যায়। আমরা তখনও দান করি যখন (দরিদ্র হয়ে। যাওয়ার আশংকায়) নামী-দামী দানশীলদের হাত কাঁপতে শুরু করে।

جزى اللّة رهطا بالحجون تجمعُوا – على ملاء. يهدى رحزم ويرشدওই মানবগোষ্ঠীকে আল্লাহ তা’আলা পুরস্কার দান করুন যারা হুজুন এলাকায় একত্রিত হয়েছিল একটি সুমহান লক্ষ্য নিয়ে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পথ নির্দেশ করুন।

فعُودًا لذى حطم الحجون كأنهم – مقاولة بل هم أعزّ وأمجدতাঁরা আলোচনায় বসেছিলেন ‘হাতম আল-হুজুন’ নামক স্থানে। তারা যেন এক একজন নেতা। বস্তৃত তারা সর্বাধিক সম্মানিত ও মর্যাদাবান।

اعان علیها گل صفر کائه–اذا ما مشی فی رفرف الذریع آخرد–ওই চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলতে সহযোগিতা করেছিল প্ৰত্যেক যুদ্ধবাজ তীরন্দাজ ব্যক্তি, যে আত্মরক্ষার্থে এমন মযবৃত লৌহবর্ম পরিধান করে যে, চলাফেলার সময় বর্মের ভারে যেন সে নুয়ে যায়।

جری علی جل الخطوب کانهٔ–شهاب بیکفی قاب سریتو قدকঠিন সমস্যা এবং বিপদ উত্তরণে তাদের প্রত্যেকে পারদশী ও সাহসী। মশালিধারীর দুহাতে একেক জন যেন দেদীপ্যমান অগ্নিমশাল।

من الاگر میان من لؤی بن غالب اذا سیم خستفا وجههٔ یتر بد

তিনি (রাসূলুল্লাহ) লুওয়াই ইবন গালিব গোত্রের সন্ত্রান্ত লোকদের অন্যতম অপমান ও লাঞ্ছনার মুখোমুখি হলে তার চেহারা মলিন হয়ে যায়।

طويل التجاد خارج نصف ساقم – على وجهم يسقى الغمام ويستعدতিনি দীর্ঘাঙ্গী মানুষ। পায়ের গোছার অর্ধেক পোশাকের বাইরে থাকে। তার চেহারার ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা ও সৌভাগ্য কামনা করা হয়ে থাকে।

عظیھِمْ الرماد سرد و این سيد – یيحض على مقری ا لضمینوفویيحشر–তিনি মহান দানশীল পুরুষ। তিনি নেতা এবং নেতার পুত্র। অতিথি আপ্যায়নে তিনি অপরকে উৎসাহিত করেন এবং নিজেও অতিথি আপ্যায়নে নিয়োজিত থাকেন।

ويبنى لأبناء العشيرة صالحا – اذا نحن طفنا فى البلاد و يمهد – আমরা যখন দেশে-বিদেশে ভ্রমণরত থাকি, তখন স্বগোত্রীয়দের পবিবার-পরিজনের প্রতি সদাচরণ করেন এবং তাদের জন্য সুব্যবস্থা করে দেন।

ألظ بهذا الصلح كل مبراً – عظيم اللواء أمره ثم يحمّد–সম্পাদিত চুক্তিনামা বিনষ্টকরণে এই চুক্তি প্রত্যাখানকারী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছিলেন আপোসহীন। এ কাজে তারা প্ৰশংসা লাভ করেছেন।

فضوا ما قضوا فى ليلهم ثم أصبحوا – على مهلا وسائر الناسر رقذ– তাদের যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তারা রাতেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর ভোর বেলা তারা ধীরে ধীরে যথাস্থানে উপস্থিত হন। অথচ লোকজন তখনও নিদ্রামগ্ন।

هم رجعوا سهل بن بيضاء راضيًا – وسر أبو بكر بما ومحمدতারা সাহল ইবন বায়যার নিকট ফিরে গেলেন। তাদের কর্মকাণ্ডে সে সন্তুষ্ট ছিল। একাজে আবু বকর এবং মুহাম্মদও আনন্দিত হন।

مثنی شرلت الاقوام فی حل آمارنا–و گنا قدیما قبلها نتودانযখনই আমাদের কোন সমস্যা সমাধানে লোকজন এগিয়ে এসেছেন তখনই প্ৰমাণিত হয়েছে যে, প্রাচীনকাল থেকে আমরা সবার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষা করে এসেছি।

وكنا قديما لا تُقرأ ظلامة – وتُدرك ما شئنا ولأن تشددً

প্রাচীনকাল থেকেই আমরা কখনো অন্যায়-অবিচার সমর্থন করিনি। আমরা যা ইচ্ছা করি তা অর্জন করি। কিন্তু জোর-জবরদস্তি করি না।

হে কুসাই গোত্ৰ! নিজেদেরকে রক্ষা করার কোন চিন্তা-ভাবনা কি তোমাদের আছে? ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলার কোন প্ৰস্তুতি কি তোমাদের রয়েছে?

فانی واياكم كما قال قائل – لديك البيات لوتكلّمت أسودًবস্তৃত আমার আর তোমাদের অবস্থা এখন সে ব্যক্তির ন্যায়, যে ব্যক্তি বলেছিল, হে আসওয়াদ পাহাড়। নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীকে শনাক্ত করার সুযোগ তোমারই আছে যদি তুমি কথা বলতে পার।

(সুহায়লী বলেন, আসওয়াদ একটি পাহাড়ের নাম। সেখানে এক ব্যক্তি খুন হয়েছিল। কিন্তু তার ঘাতকের খোজ পাওয়া যায়নি। তখন নিহত ব্যক্তির লোকজন বলেছিল যে, হে আসওয়াদ! তুমি যদি কথা বলতে পারতে, তবে তুমিই প্রকাশকরে দিতে কে প্রকৃত খুনী।)

এরপর ইবন ইসহাক হযরত হাসসান (রা)-এর কবিতাটি উল্লেখ করেছেন। ওই পাপে পূর্ণ অত্যাচারী চুক্তিনামা বিনষ্টকরণে ভূমিকা রাখার জন্যে তিনি ঐ কবিতায় মুতসীম ইবন আব্দী এবং হিশাম ইবন আমরের প্রশংসা করেছেন।

উমাবী অবশ্য এ প্রসংগে আরো অনেক কবিতার উল্লেখ করেছেন। আমরা শুধু ইবন ইসহাকের কবিতাই উল্লেখ করলাম। ওয়াকিদী বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবন সালিহ এবং আবদুর রহমান ইবন আবদুল আষীযকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বনু হাশিম গোত্ৰ গিরিসঙ্কট থেকে বের হয়ে এসেছিল কোন সময়ে? জবাবে তারা বলেন, নবুওয়াতের দশম বছরে। অর্থাৎ হিজরতের তিন বছর পূর্বে। আমি বলি, গিরিসঙ্কট থেকে তাদের বেরিয়ে আসার বছরেই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচা আবু তালিব এবং সহধর্মিণী হযরত খাদীজা বিনত খুওয়ায়ালিদ (রা) ইনতিকাল করেন। এ বিষয়ে আলোচনা অবিলম্বে আসবে ইনশাআল্লাহ।

পরিচ্ছেদ

চুক্তিনামা বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করার পর ইবন ইসহাক আরও বহু ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনাগুলোতে বিবৃত হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি কুরায়শদের শক্রতা এবং হজ্জ, উমরা ও অন্যান্য কাজে মক্কায় আগমনকারী লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টার বর্ণনা। সেগুলোতে আরো রয়েছে এমন সব মু’জিয়ার বর্ণনা, যা তাঁর নিকট আগত হিদায়াত ও দিক-নির্দেশনার সত্যতা প্রমাণ করে এবং তার প্রতি মুশরিকদের আরোপিত সত্যদ্রোহী, সীমালংঘনকারী, প্রতারক, উন্মাদ, জাদুকর, গণক, মিথ্যাবাদী ইত্যাকার অপবাদের অসারতা ও ভিত্তিহীনতা প্ৰমাণ করে। আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়েই থাকে।

এ প্রসংগে ইবন ইসহাক মুরসালরূপে তুফোয়ল ইবন আমার দাওসীর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তুফায়াল দাওসী দাওস গোত্রের একজন সর্বজন মান্য ও সন্ত্রান্ত নেতা ছিলেন। এক সময় তিনি মক্কায় আগমন করেন। মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ তাঁর নিকট একত্রিত হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে তারা তাকে সতর্ক করে দেয়। তার নিকট যেতে এবং তার কথা শুনতে তারা তাকে

বারণ করে।

তুফায়াল বলেন, তারা অনবরত আমাকে এ ব্যাপারে বুঝিয়েছিল। ফলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি কোন কথা শুনব না এবং তাঁর সাথে কোন আলাপও করব না। এমনকি তাঁর কোন কথা আমার কানের মধ্যে প্রবেশ করার আশংকায় কানের মধ্যে তুলা ঢুকিয়ে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করি। তাঁর কোন বক্তব্য শোনার ইচ্ছা আমার ছিল না। তুফায়াল বলেন, পরের দিন আমি মসজিদে প্রবেশ করি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) কা’বা গৃহের নিকট দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। আমি তার কাছাকাছি এক স্থানে দাঁড়ালাম। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিছু পাঠ আমাকে না শুনিয়ে থাকতে দিলেন না। আমি তাঁর মুখ নিঃসৃত কিছু সুন্দর বাণী শুনলাম। তখন আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম, আমার মায়ের দুর্ভোগ, আমি একজন সুবিবেচক ও বুদ্ধিমান কবি মানুষ। কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ তাতো আমার নিকট গোপন থাকে না। তাহলে ওই ব্যক্তি যা বলছেন, তা শুনতে আমার বাধা কোথায়? তিনি যা বলেন, তা যদি ভাল হয়। আমি তা গ্ৰহণ করব। আর মন্দ হলে তা বর্জন করব। এরপর আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন গৃহে প্রবেশ করলেন, তখন আমিও তাঁর গৃহে প্রবেশ করলাম। আমি বললাম, হে মুহাম্মদ (সা)। আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাকে এরূপ এরূপ বলেছে। ওরা যা বলেছে, তার সবই তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জানালেন। তারা অনবরত আমাকে আপনার বিষয়ে ভয় দেখিয়েছে। ফলে আপনার কথা যেন শুনতে না পাই সেজন্যে আমি তুলা দিয়ে আমার কান বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আমাকে আপনার কথা না শুনে থাকতে দিলেন না। আমি আপনার সুন্দর বাণী শুনেছি। এখন আপনার লক্ষ্য ও কর্ম আমার নিকট বর্ণনা করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইসলামের দাওয়াত আমার নিকট পেশ করলেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করে আমাকে শুনালেন।

আল্লাহর কসম, এর চাইতে সুন্দর ও মধুর বাণী আমি ইতোপূর্বে কখনও শুনিনি। এর চাইতে অধিক ভারসাম্যপূর্ণ কোন বিষয়ের কথাও আমার শ্রুতিগোচর হয়নি।

তুফায়াল (রা) বলেন, তখনই আমি ইসলাম গ্রহণ করি এবং সত্য সাক্ষ্য প্ৰদান করি। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সর্বজন মান্য ব্যক্তি বটে। আমি এখন তাদের নিকট ফিরে যাব এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান জানাবো। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন। তিনি যেন এমন একটি নিদর্শন আমাকে দান করেন, যা ওদের প্রতি আমার দাওয়াতের সহায়ক হবে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ

اللَّهُمُ اجْعَل له أية হে আল্লাহ ওর জন্যে একটি নিদর্শনের ব্যবস্থা করে দিন! তুফায়াল (রা) বলেন, এরপর আমার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে আমি যাত্ৰা করি। ছানিয়া পাহাড়ে আরোহণ করার পর আমি যখন গোত্রীয় লোকদের প্রায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, তখন আমার দু’চোখের মাঝখানে প্ৰদীপের ন্যায় জ্যোতি ফুটে উঠল। আমি বললাম, হে আল্লাহ! এ জ্যোতি আমার মুখমণ্ডল ব্যতীত অন্য কোন স্থানে সৃষ্টি করে দিন। কারণ, আমি আশংকা করছি যে, আমার মুখমণ্ডলে জ্যোতি দেখে লোকজন বলবে, ধর্ম ত্যাগের ফলে আমার মুখমণ্ডল বিকৃত করা হয়েছে। তখন ওই জ্যোতি স্থানান্তরিত হয়ে আমার ছড়ির মাথায় জ্বলে উঠল। আমার গোত্রের

লোকজন আমার ছড়ির মাথায় ঝুলন্ত ঝাড়বাতির ন্যায় ওই আলো দেখতে পাচ্ছিল। আমি ছানিয়া পাহাড় থেকে ধীরে ধীরে তাদের দিকে অবতরণ করছিলাম। অবশেষে আমি তাদের নিকট গিয়ে পৌঁছি।

বাড়ী পৌঁছার পর আমার পিতা আমার নিকট আসলেন। তিনি ছিলেন বয়ােবৃদ্ধ সম্মানিত ব্যক্তি। আমি বললাম, “বাবা! আপনি আমার নিকট থেকে দূরে থাকুন। আমার সাথে আপনার এবং আপনার সাথে আমার এখন কোন সম্পর্ক নেই।” তিনি বললেন, “বৎস! তা কেন?” আমি বললাম, “তা এ জন্যে যে, আমি ইসলাম গ্ৰহণ করেছি এবং মুহাম্মাদ (সা)-এর ধর্ম মেনে নিয়েছি। তিনি বললেন, হে বৎস! তোমার ধর্মই আমার ধর্ম। তাহলে আপনি গোসল করে এবং জামা-কাপড় পাক-সাফ করে আমার নিকট আসুন। আমি যা শিখেছি আপনাকে তা শিখাব। আমার পিতা গেলেন, গোসল করলেন এবং জামা-কাপড় পাক-সাফ করে আমার নিকট ফিরে এলেন। আমি তাঁর নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলাম। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর আমার স্ত্রী এল আমার নিকট। আমি বললাম, তুমি আমার নিকট থেকে দূরে থােক। তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সে বলল, আমার মাতা-পিতার কসম, তা কেন? আমি বললাম ইসলাম আমার আর তোমার মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং আমি মুহাম্মাদ (সা)-এর ধর্ম মেনে নিয়েছি। আমার স্ত্রী বলল, আপনার ধর্মই আমার ধর্ম। আমি বললাম, তাহলে তুমি যুশশিরা ঝর্ণায় যাও এবং গোসল করে পাক-সাফ হয়ে এসো। যুশশিরা ছিল দাওস গোত্রের একটি মূর্তি। সেটির চারিদিকে বঁধে বেঁধে তারা পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সে বলল, যুশশিরা মূর্তি আমাদের বাচ্চাদের কোন ক্ষতি করবে। আপনি কি তেমন কোন আশংকা করছেন? আমি বললাম, না। আমি তার দায়-দায়িত্ব গ্ৰহণ করলাম। আমার স্ত্রী চলে গেল এবং গোসল করে আমার নিকট ফিরে এল। আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলাম। সে ইসলাম গ্ৰহণ করল।

এরপর আমি দাওস, সম্প্রদায়কে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালাম। তারা আমার দাওয়াতে সাড়া দিতে বিলম্ব করল। তারপর আমি মক্কায় এলাম রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস সম্প্রদায়ের ব্যভিচার প্রবণতার আমাদের দাওয়াত ফলপ্রসূ হচ্ছে না। আপনি ওদের বিরুদ্ধে বদ দুআ করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন : L., এ৯) 161 (হে আল্লাহ্ দাওস সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করুন!)। তিনি আমাকে বললেন, তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যাও এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দাও আর ওদের প্রতি নাম আচরণ করবে। এরপর থেকে আমি অবিরাম দাওস অঞ্চলে অবস্থান করে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকি। অবশেষে রাসূলুল্লাহ্ (সা) হিজরত করে মদীনায় এলেন। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ্ (সা) খায়বার অভিযানে বের হলে আমি আমার স্বগোত্রীয় দাওস সম্প্রদায়ের ইসলাম গ্ৰহণকারী ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের লোকজন নিয়ে মদীনায় উপস্থিত হই। সেখান থেকে যাত্রা করে আমরা খায়বার গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে মিলিত হই। অন্যান্য মুজাহিদের সাথে তিনি আমাদেরকেও খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের অংশ দান করেন। এরপর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথেই ছিলাম।

মক্কা বিজয়ের পর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে আপনি আমর ইবন হামামাহ গোত্রের যুল কাফফায়ন মূর্তিটি ভস্মীভূত করে দিয়ে আসার জন্য প্রেরণ করুন।

ইবন ইসহাক বলেন, এরপর তুফোয়ল বের হলেন ওই মূর্তি পোড়ানাের জন্যে। তিনি মূর্তিতে আগুন ধারাচ্ছিলেন আর বলছিলেন :

ياذا الكفين لست من عبادكما – ميلادُنا أقدم من ميلاً دكا– انى حشوت

النار فی فؤاد کاহে যুল-কাফফায়ন! আমি তোমার উপাসক নই। আমাদের জন্ম তোমার জন্মের পূর্বে হয়েছে। আমি তোমার অভ্যন্তরে আগুন পুরে দিচ্ছি।

ইবন ইসহাক বলেন, তারপর তুফায়াল মদীনায় ফিরে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে অবস্থান করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইনতিকাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। আরবের কতক লোক যখন ধর্মত্যাগী হয়ে যায়, তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে অন্যান্য মুসলমানের সাথে তুফোয়ল বেরিয়ে পড়েন এবং একের পর এক তুলায়হার ও নজদ অঞ্চলের বিদ্ৰোহসমূহ দমন করেন। তারপর মুসলিম সৈনিকদের সাথে ইয়ামামা অভিমুখে যাত্রা করেন। তাঁর পুত্র আমর ইবন তুফায়াল তার সাথে ছিলেন। ইয়ামামা যাওয়ার পথে তিনি এক তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন দেখেন। সাখীদেরকে তিনি বলেন, আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি আপনারা আমাকে তার ব্যাখ্যা বলে দিন। আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার মাথা মুণ্ডন করে দেয়া হয়েছে এবং আমার মুখ থেকে একটি পাখি উড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। একজন মহিলা আমার সাথে সাক্ষাত করে আমাকে তার যৌনাঙ্গের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আমি দেখছিলাম যে, আমার পুত্র আমাকে হন্তদন্ত হয়ে খুঁজছে। তারপর তাকে আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সকলে বলল, উত্তম স্বপ্ন। তিনি বললেন, অবশ্য আমি নিজে তার ব্যাখ্যা করে নিয়েছি। তারা বললেন, কী সে ব্যাখ্যা? তিনি বললেন, আমার মাথা মুণ্ডন হল আমার মাথা মাটিতে নেতিয়ে পড়া। মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া পাখি হল আমার প্রাণ। যে মহিলা আমাকে তার যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে ফেলেছে। তা হল ভূমি। আমার জন্যে কবর খনন করা হবে এবং আমি তার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাব। আমার পুত্র কর্তৃক আমাকে খোঁজ করা এবং পরে তার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ব্যাখ্যা হল আমি যে পথে অগ্রসর হয়েছি এবং যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি সেও সে পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা

করবে।

এরপর তুফায়াল (রা) ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁর পুত্র মারাত্মকভাবে আহত হন। অবশ্য পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপর হযরত উমর (রা)-এর শাসনামলে ইয়ারমুকের যুদ্ধে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। আলোচ্য বর্ণনাটি ইবন ইসহাক মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এর সমর্থনে সহীহ হাদীছ রয়েছে। ইমাম আহমদ (র) বলেন, ওয়াকী… আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তুফায়াল (রা) ও তার সাথীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, দাওস সম্প্রদায় আল্লাহ তা’আলার অবাধ্য হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন :

اللَّهُمُ اهد دوسا وأتت بهم. হে আল্লাহ! দাওস সম্প্রদায়কে হিদায়াত করুন এবং তাদেরকে এখানে উপস্থিত করে দিন। হাদীছটি ইমাম বুখারী (র) আবু নুআয়ম সূত্রে সুফিয়ান ছাওরী (র) থেকে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, ইয়াখীদ….. আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, তাফোয়ল ইবন আমার এবং তার সাথীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস সম্প্রদায় নাফরমানী করেছে এবং ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আপনি ওদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করুন! আবু হুরায়রা (রা) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) দু’হাত তুললেন। আমি বললাম, এবার দাওস সম্প্রদায়ের ধ্বংস নিশ্চিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আল্লাহু! দাওস সম্প্রদায়কে হিদায়াত করুন এবং ওদেরকে এখানে নিয়ে আসুন। এটি একটি উত্তম সনদ। অন্যান্য হাদীছবেত্তারা এটি উল্লেখ করেননি।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, সুলায়মান ইবন হারব… জাবির (র) থেকে বর্ণনা করেন, তুফোয়ল ইবন আমার দাওসী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! একটি সুরক্ষিত দুর্গটি আপনি দখল করবেন? এই দুর্গটি জাহিলী যুগে দাওস গোত্রের অধিকারে ছিল। আল্লাহ তা’আলা আনসারদের জন্যে এটি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। এজন্যে রাসূলুল্লাহ (সা) তখনকার মত এটি দখলে নিতে অস্বীকার করলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন তুফোয়ল ইবন আমর (রা)-ও মদীনায় হিজরত করেন। তার গোত্রের একজন লোক তার সাথে ছিল। মদীনার আবহাওয়া তাদের প্রতিকূলে ছিল। ফলে সাখী লোকটি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে সে একটি তীক্ষুধার কাঁচি নেয় এবং হাতের আঙ্গুলের গিটগুলো কেটে ফেলে। ফলে দু’হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। রক্ত আর বন্ধ হয়নি, সে মারা যায়। একদিন তুফায়াল ইবন আমরা তাকে উত্তম অবস্থায় স্বপ্নে দেখেন। কিন্তু তার হাত দুটো ছিল কাপড়ে ঢাকা। তুয়ায়ল বললেন, তোমার প্রতিপালক তোমার সাথে কী আচরণ করলেন? লোকটি বলল, হিজরত করে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট আসার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তা’আলা। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়াল (রা) বললেন, তোমার দু’হাত ঢাকা কেন? সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, তুমি তোমার নিজের যে অঙ্গহানি করেছ তা আর ফিরিয়ে দেয়া হবে না। তুফায়াল (রা)। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানালেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন :

اللَّهُم وليد يُه فاغفر–হে আল্লাহ! তার হাত দুটিকেও ক্ষমা করে দিন! ইমাম মুসলিম এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন আবু বকর ইবন আবু শায়াবা এবং ইসহাক ইবন

ইবরাহীম থেকে। তারা দু’জনে বর্ণনা করেছেন সুলায়মান ইবন হারব থেকে। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এই হাদীছ এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উল্লিখিত জুনদুব (রা)-এর হাদীছের মধ্যে

দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসন করা যাবে কি ভাবে? কারণ, জুনদুবের (রা:) হাদীছে আছে, তিনি বলেছেন। যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন

তোমাদের পূববতী উম্মতের একজন লোক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। যন্ত্রণায় সে অস্থির হয়ে উঠে। তখন সে একটি ছুরি নিয়ে হাত কেটে ফেলে। এরপর তার রক্ত বন্ধ হয়নি। তাতে সে মারা যায়। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আগেই নিজে নিজের প্রাণ সংহার করেছে। সুতরাং আমি তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।

বিভিন্নভাবে উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়। প্রথমত, পূর্ববর্তী উম্মতের লোকটি হয়ত মুশরিক ছিল আর আলোচ্য লোকটি ছিল ঈমানদার। শিরাকই ছিল ওই লোকটির জাহান্নামে প্রবেশের হেতু। তবু উম্মতের সতর্কতা ও শিক্ষার জন্যে তাঁর আত্মহত্যাকে জাহান্নামে প্রবেশের কারণ রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত পূর্ববতী উম্মতভুক্ত লোকটি আত্মহত্যা হারাম ও নিষিদ্ধ জানা সত্ত্বেও সে পথে জীবনহানি ঘটিয়েছে। আর এ উম্মতের লোকটি নও-মুসলিম হওয়ার কারণে জানত না যে, আত্মহত্যা হারাম।

তৃতীয়ত পূর্ববতী লোকটি আত্মহত্যার ন্যায় হারাম কাজকে হালাল ও বৈধ জ্ঞানে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে করেছে আর এ উম্মতের লোকটি সেটিকে হালাল জ্ঞানে করেনি। বরং ভুলক্রমে তা

করেছে।

চতুর্থত ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল হাত কর্তনের মাধ্যমে প্রাণহানি ঘটানো। আর আঙ্গুল কর্তনের মাধ্যমে প্ৰাণহানি ঘটানো এই ব্যক্তির লক্ষ্য ছিল না। বরং এতে তার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল।

পঞ্চমত পূর্ববতী উম্মতভুক্ত লোকটির নেক আমল কম ছিল। যার ফলে তার নেক আমল আত্মহত্যার মহাপাপকে অতিক্রম করতে পারেনি। ফালে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। আর এই উন্মতের লোকটির নেক আমল বেশী ছিল। যার ফলে তার নেক আমল তার আঙ্গুল কর্তনের পাপকে অতিক্রম করতে পেরেছে। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেনি।

বরং নবী করীম (সা)-এর নিকট হিজরত করে যাওয়ার কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তবে তার হাতের ক্রটি অবশিষ্ট থেকে যায় এবং অন্য অঙ্গসমূহ সুন্দর হয়ে উঠে। সে তার ওই ক্ৰটি ঢেকে রেখেছিল। স্বপ্নে তার হাত ঢাকা দেখে তুফায়াল (রা) তাকে বললেন তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, “তুমি নিজে নিজের যে ক্ষতি সাধন করেছ তা আর পূরণ করা হবে না। তুফায়াল (রা) যখন এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বর্ণনা করলেন, তখন তিনি এ বলে দুআ করলেন :

اللَّهُمْ وليديه فاغفرহে আল্লাহ! তার হাত দু’খানাকেও ক্ষমা করে দিন। অর্থাৎ হাতে যে ত্রুটি আছে তা সারিয়ে দিন। বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কিরামের অভিমত যে, তুফোয়ল ইবন আমরের (রা) সাথীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দুআ আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয়ই কবুল করেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *