তারপর থেকে কখনো-সখনো গিয়েছি শিশিরকুমারের কাছে। অভিনয়ের কথা কি বলব, সহজ আলাপে বা সাধারণ বিষয়েও এমন বাচন আর কোথাও শুনিনি। যত বড় তিনি অভিনয়ে তত বড় তিনি বলনে-কথনে। তা খৃস্টধর্মের ইতিহাসই হোক বা শেকসপিয়রের নাটকই হোক বা রবীন্দ্রনাথের গীতিকাব্যই হোক। কিংবা হোক তা কোন অন্তরঙ্গ বিষয়, প্রথমা স্ত্রীর ভালবাসা। তার সেই সব কথা মনে হত যেন বিকিরিত বহ্নিকণা, কখনো বা মৃগমদবিন্দু। অভিনয় দেখে হয়তো ক্লান্তি আসে, কিন্তু মনে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাত জেগে কাটিয়ে দিতে পারি তার কথা শুনে। তাতে কি শুধু পাণ্ডিত্যের দীপ্তি? তা হলে তো ঘুম পেত, যেমন উকিলের অতিকৃত বক্তৃতা শুনে হাকিমের ঘুম আসে। না, তা নয়। তাতে অনুভবের গভীরতা, কবিমানসের মাধুর্য আর সেই সঙ্গে বাচনকলার সুষমা। তা ছাড়া কি মেধা, কি দীপ্তি, কি দূরবিস্তৃত স্মরণশক্তি! মুহূর্তেই বোঝ যায় বিরাট এক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে এসেছি—বৃহৎ এক বনস্পতির প্রচ্ছায়ে।
শিশিরকুমার যে কত বড় অভিনেতা, কত বড় অসাধ্যসাধক, আমার জানা-মত ছোটখাট একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটা আরো অনেক পরের কথা, যে বছর শিশিরবাবু তার দলবল নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছেন। আমেরিকা থেকে একটি বিদুষী মহিলা এসেছেন ভারতবর্ষে, দৈবক্রমে তার সৌহার্দ লাভ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তার খুব ইচ্ছ, বাংলাদেশ থেকে যে অভিনেতা আমেরিকা যাবার সাহস করেছেন তার সঙ্গে তিনি আলাপ করবেন। শিশিরকুমার তখন নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে তেতলার ফ্ল্যাটে থাকেন। তাঁর কাছে গিয়ে প্রস্তাব পেশ করলাম। তিনি আনন্দিত মনে নিমন্ত্রণ করলেন সেই বিদেশিনীকে। দিন-ক্ষণ ঠিক করে দিলেন।
নির্ধারিত দিনে বিদেশিনী মহিলাকে সঙ্গে করে উঠে গেলাম তেতলায়। সম্পূর্ণ নিঃসংশয় ছিলাম না, তাই তাকে বললাম, তুমি এই বারান্দায় একটু দাঁড়াও, আমি ভিতরে খোঁজ নিই।
ভিতরের খোঁজ নিতে গিয়ে হকচকিয়ে গেলাম। দেখি ঘরের মেঝের উপর ফরাস পাতা—আর তার উপরে এমন সব লোকজন জমায়েত হয়েছেন যাদের অন্তত দিনে-দুপুরে দেখা যাবে বলে আশা করা যায় না। হামোনিয়ম, ঘুঙুর, আরে এটা-ওটা জিনিস এখানেওখানে পড়ে আছে। বোধ হয় কোনো নাটকের কোনো জরুরী দৃশ্যের মহড়া চলছিল। কিন্তু তাতে আমার মাথাব্যথা কি? শিশিরবাবু কোথায়? এই কোথা নিয়ে এসেছি বিদেশিনীকে? আবার আরেকজন মিস মেয়ো না হয়!
জিগগেস করলাম, শিশিরবাবু কোথায়?
খবর যা পেলাম তা মোটেই আশাবর্ধক নয়। শিশিরবাবু অসুস্থ, পাশের ঘরে নিদ্রাগত।
কঙ্কাবতী ছিলেন সেখানে। তাঁকে বললাম আমার বিপদের কথা। তিনি বললেন, বসুন, আমি দেখছি। তুলে দিচ্ছি তাঁকে।
সমস্ত ফরাসটাই তুলে দিলেন একটানে। ঘুঙুর, হার্মোনিয়ম, এটা-সেটা, সাঙ্গ আর উপাঙ্গের দল সব পিটটান দিলে। কোন জাদুকরের হাত পড়ল—চকিতে শ্রীমন্ত হয়ে উঠল ঘর-দোর। কোত্থেকে খানকয়েক চেয়ারও এসে হাজির হল।ক্সচ বিদেশিনীকে এনে বসালাম।
তবু ভয়, আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ যে অভিনেতা তার স্পর্শ পেতে না তার ভুল হয়।
গায়ে একটা ড্রেসিং-গাউন চাপিয়ে প্রবেশ করলেন শিশিরকুমার। প্রতিভাদীপ্ত সৌম্য মুখে অনিদ্রার ক্লেশক্লান্তিও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। মিগ্ধ সৌজন্যে অভিবাদন করলেন সেই বিদেশিনীকে।
তারপর সুরু করলেন কথা। যেমন তার জ্যোতি তেমনি তার অজস্রতা। আমেরিকার সাহিত্যের খুঁটিনাটি—তার জীবন ও জীবনাদর্শ। আর থেকে-থেকে ভাব-সহায়ক কবিতার আবৃত্তি। সর্বোপরি এক সৃজনপিপাসু শিল্পীমনের দুর্বার। বিদেশিনী মহিলা অভিভূত হয়ে রইলেন।
চলে আসবার পর জিগগেস করলাম মহিলাকে কেমন দেখলে?
চমৎকার। মহৎ প্রতিভাবান—নিঃসন্দেহ।
ভাবি, এত মহৎ যাঁর প্রতিভা তিনি সাহিত্যের জন্যে কি করলেন? অনেক অভিনেতা তৈরি করেছেন বটে, কিন্তু একজন নাট্যকার তৈরি করতে পারলেন না কেন?
শিশিরকুমারের সান্নিধ্যে আবার একবার আসি ঢাকার দল এসে কল্লোলে মিশলে পরে। আগে এখন ঢাকার দল তো আসুক।
তার আগে দুজন আসে ফরিদপুর থেকে। এক জসীম উদ্দীন, আর হুমায়ুন কবির।
একেবারে সাদামাটা আত্মভোলা ছেলে এই জসীম উদ্দীন। চুলে চিরুনি নেই, জামায় বোতাম নেই, বেশবাসে বিন্যাস নেই। হয়তো বা অভাবের চেয়েও ঔদাসীন্যই বেশি। সরলশ্যামলের প্রতিমূর্তি যে গ্রাম তারই পরিবেশ তার ব্যক্তিত্বে, তার উপস্থিতিতে। কবিতায় জসীমউদ্দীনই প্রথম গ্রামের দিকে সঙ্কেত, তার চাষাভুষো, তার খেতখামার, তার নদী-নালার দিকে। তার অসাধারণ সাধারণতার দিকে। যে দুঃখ সর্বহারার হয়েও সর্বময়। যে দৃশ্য অপজাত হয়েও উঁচু জাতের। কোনো কারুকলার কৃত্রিমতা নেই, নেই কোনো প্রসাধনের পারিপাট্য। একেবারে সোজাসুজি মর্মস্পর্শ করবার আকুলতা। কোনো ইজমের ছাঁচে ঢালাই করা নয় বলে তার কবিতা হয়ত জনতোষিণী নয়, কিন্তু মনোতোষিণী।
এমনি একটি কবিতা পেঁয়ো মাঠের সজল-শীতল বাতাসে উড়ে আসে কল্লোলে।
তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জড়ায়ে ধরি
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিনমান ভরি;
গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে।
ফানী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে পেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠপানে চাহি।
হাম্বারবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাঁদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদত তোমার মা
চোখের জলের গোরস্থানেতে ব্যথিয়ে সকল গাঁ—
কবিতাটির নাম কবর। বাংলা কবিতার নতুন দিগদর্শন। কল্লোলের পৃষ্ঠা থেকে সেই কবিতা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার বাংলা পাঠ-সংগ্রহে উদ্ধত হল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে অনভিজাত কল্লোলের নামটা বেমালুম চেপে গেলেন।
হুমায়ুন কবির কখনো-সখনো আসত কল্লোলে, কিন্তু কায়েমী হয়ে স্থান পাকাতে পারেনি। নম্র, মুখচোরা—কি সমস্ত মুখ নিয়ত-হাসিতে সমুজ্জল। তমোঘ্ন বুদ্ধির তীক্ষ্ণতায় দুই চক্ষু দূরান্বেষী। কথার অন্তে এত হাসে না যত তার আদিতে হাসে; তার মানে, তার প্রথম সংস্পর্শটুকু প্রতি মুহূর্তেই আনন্দময়। কবিরের তখন নবীন নীরদের বর্ষা, কবিতায় প্রেমের বিচিত্রবর্ণ কলাপ বিস্তার করছে। কিন্তু মাধ্যন্দিন গাম্ভীর্ষে সেই নবানুরাগের মাধুর্য কই? বয়সের ক্ষেত্রে প্রবীণ্য আসুক, কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে যেন পরিপূর্ণতা না আসে।
কল্লোলে এই দুইটি বিচ্ছিন্ন ধারা ছিল। এক দিকে রুক্ষ-শুষ্ক শহরে কৃত্রিমতা, অন্যদিকে অনাঢ্য গ্রাম্য জীবনের সারল্য। বস্তি বা ধাওড়া, কুঁড়েঘর বা কারখানা, ধানখেত বা ড্রয়িংরুম। সমস্ত দিক থেকে একটা নাড়া দেওয়ার উদ্যোগ। যতটা শক্তি-সাধ্য, শুধু ভবিষ্যতের ফটকের দিকে ঠেলে এগিয়ে দেওয়া। আর তা শুধু সাহিত্যে নয়, ছবিতে। তাই একদিন যামিনী রায়ের ডাক পড়ল কল্লোলে। তেরোশ বত্রিশের আশ্বিনে তার এক ছবি ছাপা হল—এক গ্রাম্য মা তার অনাবৃত বুকের কাছে তার শিশুসন্তানকে দুই নিবিড় হাতে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
অপূর্ব সেই দাঁড়াবার ভঙ্গিটি। বহির্দৃষ্টিতে মার মুখটি শ্রীহীন কিন্তু একটি স্থিরলক্ষ্য স্নেহের চারুতায় অনির্বচনীয়। গ্রীবা, পিঠ ও স্তনাংশরেখার বঙ্কিমায় সেই স্নেহ দ্রবীভূত। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দীন, হয়তো অশোভন, কিন্তু দুইটি কর্মকঠিন করতলের পর্যাপ্তিতে প্রকাণ্ড একটা প্রাপ্তি, আশ্চর্য একটা ঐশ্বর্য যেন সংক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সেই তো তার শক্তি, সেই তো তার সৌন্দর্য—নিজের মাঝে এই অভাবনীয়ের আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের বিষয় তার শিশু, তার বুকের অনাবরণ। যে শিশুর এক হাত তার আনন্দিত মুখের দিকে উৎক্ষিপ্ততার জন্মের আলোকিত আকাশপটের দিকে।
যামিনী রায় বন্ধু ছিলেন কল্লোলের। পরবর্তী যুগে তিনি যে লোকলক্ষ্মীর রূপ দিয়েছেন তারই অঙ্কুরাভাস যেন ছিল এই আশ্বিনের ছবিতে।
সে-সব দিনে যেতাম আমরা যামিনী রায়ের বাড়িতে, বাগবাজারে। অজ্ঞাত গলিতে অখ্যাত চিত্রকর-আমাদেরও তখন তাই অবাধ নিমন্ত্রণ। আত্মার আত্মায় যোগ ছিল কল্লোলের সঙ্গে। শুধু অকিঞ্চনতার দিক থেকে নয়, বিদ্রোহিতার দিক থেকে। ভাঁড়ের মধ্যে রং আর বাঁশের চোঙার মধ্যে তুলি আর পোড়ো বাড়িতে স্টুডিয়ো–মামিনী রায়কে মনে হতো রূপকথার সেই নায়ক যে অসম্ভবকে সত্যভূত করতে পারে। হাজার বছরের অন্ধকার ঘর আলো করে দিতে পারে এক মুহূর্তে।
সোনা গালাবার সময় বুঝি খুব উঠে-পড়ে লাগতে হয়। এক হাতে হাপর, এক হাতে পাখা-মুখে চোঙ–যতক্ষণ না সোনা গলে। গলার পর যেই গড়ানে ঢালা, অমনি নিশ্চিন্ত। অমনি স্বর্ণস্বপ্নময়।
পূর্বতনদের মধ্যে থেকে হঠাৎ সুরেন গাঙ্গুলি মশাই এসে কল্লোলে জুটলেন। চিরকাল প্রবাসে থাকেন, তাই শিল্পমানসে মেকি-মিশাল ছিল না। যেখানে প্রাণ দেখেছেন, সৃষ্টির উন্মাদনা দেখেছেন, চলে এসেছেন। অগ্রবর্তীদের মধ্য থেকে আরো কেউ-কেউ এসেছিলেন কল্লোলে–কিন্তু ততটা যেন মিশ খাওয়াতে পারেননি। সুরেনবাবু এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে ছিলেন না, সমভাবে অনুপ্রেরিত হলেন। কল্লোলের জন্যে উপন্যাস তো লিখলেনই, লিখলেন শরৎচন্দ্রের ধারাবাহিক জীবনী। সুরেনবাবু শরৎচন্দ্রের শুধু আত্মীয় নন, আবাল্য সঙ্গী-সাথী—প্রায় ইয়াববক্সি বলা যেতে পারে। খুব একটা অন্তরঙ্গ ঘরোয়া কাহিনী, কিন্তু সাহিত্যরসে বিভাসিত।
শরৎচন্দ্রের জীবনী ছাপা হবে, কিন্তু তাঁর হালের ফটো কই? কি করে জোগাড় করা যায়? না, কি চেয়ে-চিন্তে কোথা থেকে একটা পুরোনো বয়সের ছবি এনেই চালিয়ে দেওয়া হবে? চেহারাটা যদি তরুণ-তরুণ দেখায়, বলা যাবে পাঠককে, কি করব মশাই, লেখকেই বয়স বাড়ে, ছবি অপরিবর্তনীয়!
গম্ভীর মুখে ভূপতি বললে, ভাবনা নেই, আমি আছি।
ভূপতি চৌধুরী কল্লোলের আদিভূত সভ্য, এবং অন্তকালীন। একাধারে গল্পলেখক, ইঞ্জিনিয়র, আবার আমাদের সকলকায় ফোটোগ্রাফার। প্রফুল্ল মনের সদালাপী বন্ধু। শত উল্লাস-উত্তালতার মধ্যেও ভদ্র মার্জিত রুচির অন্তঃশীল মাধুর্যটি যে আহত হতে দেয় না। সমস্ত বিষয়ের উপরেই দৃষ্টিভঙ্গি তার বৈজ্ঞানিক, তাই তার লেখায় ও ব্যবহারে সমান পরিচ্ছন্নতা। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক ভঙ্গির অন্তরালে একটি চিরজাগ্রত কবি ভাবাকুল হয়ে রয়েছে। কঠোরের গভীরে স্বাদু সৌন্দর্যের অবতারণা।
তেরোশ একত্রিশ সালের সেই নবীনব্রতী যুবকের চিঠির কটি টুকরো এখানে তুলে দিচ্ছি :
মানব সভ্যতাযন্ত্রের ধ্বকধ্বক ধ্বনির পীড়নে কান বধির হবার উপক্রম হয়েছে। ফানেসের লালচক্ষু, পিস্টনের প্রলয়দোলা, গভর্নরের ঘূর্নি, ফ্লাই-হুইলের টলে-পড়া, স্যাফটের আকুলিবিকুলি—প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। খুব সকালে বাড়ি থেকে উঠে সোজা সাইক্লে করে কলেজে গিয়ে কলেজ-প্রাইম-মুভার্স ল্যাবরেটরিতে ওয়ারলেস রেডিও সেট তৈরি করাচ্ছি—আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসছি।
সত্যি বলছি ভাই, যখন শান্তভাবে চুপ করে শুয়ে থাকি, হয়ত আকাশের ঘন নীলিমার দিকে নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে চেয়ে কত কি ভেবে যাই, একটা শান্তি আর তৃপ্তি আর পূর্ণতা প্রাণের মধ্যে অনুভব করিমানুষের কর্মজীবনের কোলাহল তখন ভাবতেও ভাল লাগে না। কিন্তু সেই কোলাহলের মাঝে মানুষ যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন সে তার কাজের আনন্দে কি মই না হয়ে ওঠে। এ মত্ততার ক্ষিপ্রতা আর ক্ষিপ্ততার মধ্যে প্রকাণ্ড একটা বেগ আছে, সে-বেগে মেঘে-মেঘে সংঘর্ষ হয়, বিদ্যুৎ ফেটে পড়ে। তারপর আবার অন্ধকারের করালী লীলা প্রকট হয়ে ওঠে। বুঝতে পারি না কি ভালো লাগে—এই উন্মত্ত দুৰ্দাম বেগ না শান্তির আত্মসমাধি? কলের বাঁশির তীব্র দৃঢ় আহ্বান, না, মনোবাশরীর রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বেজে-ওঠা ব্যাকুল ক্রন্দন? লোকারণ্য, না নির্জনতা? বিদ্রোহ না স্বীকৃতি?
সব দেখি আর কি মনে হয় জান? বণিক সভ্যতার বা আড়ম্বর আর সমারোহের ট্রাজেডি যতই চোখের সামনে প্রকট হয়ে উঠুক না, মাটির ভাঁড়ে ওঠপরশ দিয়ে মাতাল হবার প্রবৃত্তি হয় না। সোনার পেয়ালা চাই। সোনার রঙেই মানুষ পাগল হয়ে ওঠে, মদের নেশায় নয়। মদ খেয়ে মানুষ কতটুকু মাতাল হতে পারে? তাকে মাতাল করতে হলে ঐ মদকে সোনার পেয়ালায় ঢেলে রূপার স্বপনের ছোঁয়াচ দিতে হবে।…
তোমার চিঠির প্রত্যেকটা অক্ষর, তার এক-একটি টান আমার মনকে টেনে রেখেছে। আকাশ ভরে মেঘ করেছে আজ। কী কালো জমাট আঁধার-যেন ভীষণ শত্রুর প্রতীক্ষায় রুদ্ধশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল হয়ে। এরই মধ্যে তোমার একটা কথার উত্তর খুঁজে পেয়েছি। কবিত্ব সে খালি ফুলের অম্লান হাসিটুকু দেখে, ঈদের অফুরন্ত সুধাস্রোতে ভেসে বা নদীর চিরন্তনী কলধ্বনি শুনেই উবুদ্ধ হয়ে ওঠেনা। রণক্ষেত্রের রক্তস্রোতের ধারায় মৃতদেহের তাপীকৃত পাহাড়ের মাঝে প্ৰেতভৈরবের অট্টহাসির ভীমরোলে, ভল্লখশল্যশূলের উদ্যত অগ্রে, অমানিশার গাঢ় অন্ধকারেও সে বিকশিত হয়। যিনি অন্নপূর্ণা তিনিই আবার ভীমা ভীমবোলা নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা।..
অচিন, খুব একটা পুরানো কথা আমার মনে পড়ছে। সাথী হচ্ছে মানুষেরই মুকুরের মত। তাদেরই মধ্যে নিজের খানিকটা দেখা যায়। তাই যখন তোমাকে প্রেমেনকে শৈলজাকে গোকুলবাবু D. R, নৃপেন পবিত্রকে দেখি তখনই মনে খানিকটা হর্য জেগে ওঠে। নিজেকে খানিকটা-খানিকটা দেখার আনন্দ তখন অসীম হয়ে ওঠে। স্থা, সবায়ের খবর দেব। D. K. পাবলিশিং নিয়ে খুব উঠে-পড়ে লেগেছেন। G. C. আসেন, সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যান। শৈলজা মাঝে-মাঝে আসেন, বিদ্যুতের মত ঝিলিক দিয়ে একটা সেই বাঁকা চোখের চাউনি ছুঁড়ে চলে যান, কথা বড় কন না। পবিত্র ঠিক তেমনি ভাবে আসে যায় হাসে বকে, আপনার খেয়ালে চলে। ওকে দেখলে মনে হয় যেন স্বতস্ফূর্ত প্রাণধার। আর নৃপেন? ঠিক আগেরই মতো ধূমকেতুর আসা-যাওয়ার ছন্দে চলে…
পুরুলিয়ায় ক্যাম্প করতে এসেছি কলেজ থেকে। তোমার লেখার তালিকা দেখে আমার হিংসে হচ্ছে। আমি তো লেখা ছেড়ে দিয়েছি বল্লেই হয়—তবে আজকাল আর একটা জিনিস ধরেছি সেটা হচ্ছে বিশ্রাম করা। চুপ করে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে থাকি। দূরে অনেকখানি নীচুতে ধানের ক্ষেতের সবুজ শীষের দোলায়মান বর্ণবিভ্রাট ভারি চমৎকার লাগে কখনও। অনেক দুরে ঠিক স্বপ্নের ছায়ার মতো একটা পাহাড়ের সারির নীল রেখা সারা দিনরাত জেগে আছে চোখের উপর।
এখানে একটি মেয়ের ছবি তুললাম সেদিন। ভারি সুন্দর মেয়েটি, কিন্তু তার সেই চপল ভঙ্গিটিকে ধরতে পারিনি। সেটুকু কোথায় পালিয়ে গেছে। যন্ত্র তার ক্ষমতায় সব আয়ত্ত করেছে বটে, কিন্তু সে প্রাণের ছায়া ধরতে পারে না–
এক রোদে-পোড়া দুপুরে বাজে-শিবপুর যাওয়া হল শরৎচন্দ্রের ছবি তুলতে। ক্যামেরাধারী ভূপতি। মারুন-ধরুন তাড়ান-খেদান, ছবি একটা তাঁর তুলে আনতে হবেই। কিন্তু যদি গা-ঢাকা দিয়ে একেবারে লুকিয়ে থাকেন চুপচাপ? যদি বলেন, বাড়িতে নেই!
খুব হৈ-হল্লা করলে শেষ পর্যন্ত কি না বেরিয়ে পারবেন?
অন্তত বকা-ঝকা করতে তো বেরুবেন একবার। অতএব খুব কড়া করে কড়া নাড়ো। কড়া যখন রয়েছে নাড়বার জন্যেই রয়েছে, যতক্ষণ না হাতে কড়া পড়ে। ভেলির চীৎকারে বিহ্বল হলে চলবে না।
দরজা খুলে দেখা দিলেন শরৎচন্দ্র। দুপুরের রোদের মত ঝাঁজালো নয়, শরচ্চন্দ্রের মতই স্নেহশীল। শুভ্রোজ্জল সৌজন্যে আহ্বান করলেন সবাইকে। কিন্তু প্রাথমিক আলাপের পর আসল উদ্দেশ্য কি টের পেয়ে পিছিয়ে গেলেন। বললেন, খোলটার ছবি তুলে কি হবে?
কিছুই যে হবে না শুধু একটা ছবি হবে এই তাঁকে বহু যুক্তি-তর্ক প্রয়োগ করে বোঝানো হল। তিনি রাজি হলেন। আর রাজিই যদি হলেন তবে তার একটা লিখনত ভঙ্গি চাই। তবে নিয়ে এস নিচু লেখবার টেবিল, গড়গড়া, মোটা ফাউন্টেন-পেন আর ডাব-মার্কা লেখবার প্যাড। পাশে বইয়ের সারি, পিছনে পৃথিবীর মানচিত্র। যা তাঁর সাধারণ পরিমণ্ডল। ডান হাতে কলম ও বাঁ হাতে সটকা নিয়ে শরৎচন্দ্র নত চোখে লেখবার ভঙ্গি করলেন। ভূপতির হাতে ক্যামেরা ক্লিক করে উঠল।
আজ সেই ছবিটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। শরৎচন্দ্রের খুব বেশি ছবি আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু কল্লোলের পৃষ্ঠায় এটি যা আছে, তার তুলনা নেই। পরবর্তী যুগের কজন প্রতিষ্ঠা প্রতিপত্তিহীন নতুন লেখকের সঙ্গে তিনি যে তার আত্মার নিবিড়নৈকট্য অনুভব করেছিলেন তারই স্বীকৃতি এ ছবিতে সুস্পষ্ট হয়ে আছে। কমনীয় মুখে কি সে কি করুণা! এ একজন দেশদিকপতির ছবি নয়, এ একজন ঘরোয়া আত্মীয়-অন্তরঙ্গের ছবি! নিজের হাতে ছবিতে দস্তখৎ করে সজ্ঞানে যোগস্থাপন করে দিলেন। বললেন, কিন্তু জেনো, সবাই আমরা সেই রবীন্দ্রনাথের। গঙ্গারই ঢেউ হয়, ঢেউয়ের কখনো গঙ্গা হয় না।
এমনি ধরনের কথা তিনি আরো বলেছেন। তারই একটা বিবরণ তেরোশ তেত্রিশের জ্যৈষ্ঠের কল্লোলে ছাপা আছে :
হাওড়া কি অন্য কোথায় ঠিক মনে নেই, একটা ছোট-মতন সাহিত্য সম্মিলনে আমাকে একজন বললেন, আপনি যা লেখেন তা বুঝতে আমাদের কোনো কষ্ট হয় না, আর বেশ ভালোও লাগে। কিন্তু রবিবাবুর লেখা মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারি না—কি যে তিনি লেখেন তা তিনিই জানেন। ভদ্রলোকটি ভেবেছিলেন তার এই কথা শুনে নিজেকে অহংকৃত মনে করে আমি খুব খুশি হব। আমি উত্তর দিলুম, রবিবাবুর লেখা তোমাদের তো বোঝবার কথা নয়। তিনি তো তোমাদের জন্যে লেখেন না। আমার মত যারা গ্রন্থকার তাদের জন্যে রবিবাবু লেখেন, তোমাদের মত যারা পাঠক তাদের জন্যে আমি লিখি।
এ বিবরণটি সংগ্রহ করে আনেন সত্যেন্দ্রপ্রসাদ বসু। সংগ্রহ করে আনেন শরৎচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ সংস্পর্শ থেকে। কানপুরে প্রবাসী বাঙালিদের সাহিত্য-সম্মিলনে তাকে সভাপতি করে ধরে নিয়ে যাবার জন্যে গিয়েছিল সত্যেন। শরৎচন্দ্র তখন আর শিবপুরে নন, চলে গেছেন রূপনারানের ধারে, কিন্তু তা হলেও অপরিচিত অভ্যাগতকে সংবর্ধনা করতে এতটুকু তার অন্যথা নেই।
কিন্তু সত্যেনের কথাটাই বলি। এতবড় মহার্ঘ প্রাণ আর কটা দেখেছি আশে-পাশে? সত্যেন সাহিত্যিক নয়, জানালিস্ট, কিন্তু সাহিত্যরসবুদ্ধিতে তীক্ষ্ণ-তৎপর। প্রত্যহের জীবনের সঙ্গে শুধু খবরের কাগজের সম্বন্ধ—তেমন জীবনে সে বিশ্বাসী নয়। মানুষের সম্বন্ধে সমস্ত খবর শেষ হয়ে যাবার পরেও যে একটা অলিখিত খবর থাকে তাই সে জিজ্ঞাসু। যতই কেননা খবর শুনুক, আসল সংবাদটি জানবার জন্যে সে অলক্ষিতে একেবারে অন্তরের মধ্যে এসে বাসা নেয়। আর অন্তরে প্রবেশ করবার পক্ষে কোন মুহূর্তটি নিভৃত-প্রশস্ত তা খুঁজে নিতে তার দেরি হয় না।
প্রেমরসোচ্ছলিত প্রতপ্ত প্রাণ। সুগঠিত স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ চেহারা–চারুদর্শন প্রাণখোলা প্রবল হাসিতে নিজেকে প্রসারিত করে দিত চারপাশে। কল্লোলের দল যখন হোলির হল্লায় রাস্তায় বেরুত তখন সত্যেনকে না হলে যেন ভরা-ভরতি হত না। কল্লোলের প্রতি এই তার অনুরাগের রং সে তার চারপাশের কাগজেও বিকীর্ণ করেছে। বালিতে-চিনিতে মিশেল সব লেখা। খরদূষণ সমালোচকের দল বালি বেছেছে, আর সত্যেনের মত যারা সত্যসন্ধ সমালোচক—তারা রচনা কবেছে চিনির নৈবেদ্য। সে সব দিনে কল্লোলদলের পক্ষে প্রচারণের কোনো পত্রিকাপুস্তিকা ছিলনা, তদবির করে সভায় সভাপতিত্ব নিয়ে নিজের পেটোয়াদের বা নিজের পাবলিশিং হাউসের বিজ্ঞাপন দেবার দুর্নীতি তখনো আসেনি বাংলা সাহিত্যে। সম্বল শুধু আত্মবল আর সত্যেনের সুভাষিতাবলী। কলকাতার সমস্ত দৈনিক-সাপ্তাহিক তার আয়ত্তের মধ্যে, দিকে-দিকে সে লিখে পাঠাল আধুনিকতার মঙ্গলাচরণ। দেখা গেল দায়িত্ববোধযুক্ত এমন সব পত্র-পত্রিকাও আছে যারা কয়েলের দলকে অনুমোন করে, অভিনন্দন জানায়। সেই বালির বাঁধ কবে নস্যাৎ হয়ে গেল, কিন্তু চিনির স্বাদটুকু আজও গেল না।
চক্ষের পলকে চলে গেল সত্যেন। বিখ্যাত সংবাদপরিবেশক প্রতিষ্ঠানে উঠে এসেছিল উচ্চ পদে। কিন্তু সমস্ত উচ্চের চেয়েও যে উচ্চ, একদা তারই ডাক এসে পৌঁছুল। আপিস থেকে ভ্রান্ত হয়ে ফিরে এসে স্ত্রীকে বললে, খেতে দাও, খিদে পেয়েছে।
বলে পোশাক ছাড়তে গেল সে শোবার ঘরে। স্ত্রী ত্বরিত হাতে খাবার তৈরি করতে লাগল। খাবার তৈরি করে স্ত্রী দ্রুত পায়ে চলে এল রান্নাঘর থেকে। শোবার ঘরে ঢুকে দেখে সত্যেন পুরোপুরি পোশাক তখনো ছাড়েনি। গায়ের কোটটা শুধু খুলেছে, আর গলার টাইটা আধ-খোলা। এত শ্রান্ত হয়েছে যে আধ-শোয়া ভঙ্গিতে শরীর এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়।
ও কি, শুয়ে পড়লে কেন? তোমার খাবার তৈরি। ওঠো।
কে কাকে ডাকে। বেশত্যাগ করবার আগেই বাসত্যাগ করেছে সত্যেন।
আবার নতুন করে আঘাত বাজে যখন ভাবি সেই সৌমাৎ সৌম্য হাস্যদীপ্ত মুখ আর দেখব না। কিন্তু কাকেই বা বলে দেখা কাকেই বা বলে দেখতে-না পাওয়ায় মাটি থেকে পুতুল তৈরি হয় আবার তা ভাঙলে মাটি হয়ে যায়। তেমনি যেখান থেকে সব আসছে আবার সেখানেই সব লীন হচ্ছে। লীন হচ্ছে সব দেখা আর না-দেখা, পাওয়া আর না-পাওয়া।
সত্যেনের মতই আরেকটি প্রিয়দর্শন ছেলে—বয়সে অবিশ্যি কম ও কায়ায়ও কিঞ্চিৎ কৃশতর—একদিন চলে এল কল্লোলের কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটের দোকানে। তার আগে তার একটি কবিতা বেরিয়েছিল হয়তো কল্লোলে—নিকষ কালো আকাশ তলে, হয়তো বা সেই পরিচয়ে। এল বটে কিন্তু কেমন যেন একা-একা বোধ করতে লাগল। তার সঙ্গী তার বন্ধুকে যেন কোথায় সে ছেড়ে এসেছে, তাই অসুস্থ হতে পারছে না। চোখে ভয় বটে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি, সেভয়ে বিস্ময় মেশানো। আর যেটি বিস্ময় সেটি সর্বকালের কবিতার বিস্ময়। যেটি বা রহস্য সেটি সর্বকালের রুচির-রম্যতার রহস্য।
সত্যেনের সঙ্গে অজিতকুমার দত্তের নাম করছি, তারা একসময় একই বাসার বাসিদে ছিল। আর অজিতের নাম করতে গিয়ে বুদ্ধদেবের নাম আনছি এই কারণে তারা একে-অন্যের পরিপূরক ছিল, আর তাদের লেখা একই সঙ্গে একই সংখ্যায় বেরিয়েছিল কল্লোলে।
বুদ্ধদেবকে দেখি প্রথম কল্লোল-আপিসে। ছোটখাট মানুষটি, খুব সিগারেট খায় আর মুক্ত মনে হাসে। হাসে সংসারের বাইরে দাঁড়িয়ে, কোনো ছলাকলা কোনো বিধি-বাধা নেই। তাই এক নিশ্বাসেই মিশে যেতে পারল কল্লোলের সঙ্গে—এক কালস্রোতে। চোখে মুখে তার যে একটি সলজ্জতার ভাব সেটি তার অন্তরের পবিত্রতার ছায়া, অকপট স্ফটিকস্বচ্ছতা। বড় ভাল লাগল বুদ্ধদেবকে। তার অনতিবর্ধ শরীরে কোথায় যেন একটা বজ্রকঠোর দাঢ় লেখা রয়েছে, অনমনীয় প্রতিজ্ঞ, অপ্রমেয় অধ্যবসায়। যখন শুনলাম ভবানীপুরেই উঠেছে, একসঙ্গে এক বাসএ ফিরব, তখনই মনে-মনে অন্তরঙ্গ হয়ে গেলাম।
বললাম, গল্প লেখা আছে আপনার কাছে?
এর আগে বত্রিশের ফাল্গুনের কল্লোলে সুকুমার রায়ের উপরে সে একটা প্রবন্ধ লিখেছে। বাংলাদেশে সেটাই হয়তো প্রথম প্রবন্ধ যেটাতে সুকুমার রায়কে সত্যিকার মূল্য দেবার সৎচেষ্টা হয়েছে। আবোলতাবোলের মধ্যে শ্লেষ যে কতটা গভীর ও দূরগত তারই মৌলিক বিশ্লেষণে সমস্তটা প্রবন্ধ উজ্জ্বল। প্রবন্ধের গদ্য যার এত সাবলীল তার গল্পও নিশ্চয়ই বিস্ময়কর।
আছে। একটু যেন কুণ্ঠিত কণ্ঠস্বর।
দিন না কল্লোলে।
তবুও যেন প্রথমটা বিস্ফারিত হল না বুদ্ধদেব। বাংলাসাহিত্যে তখন একটা কথা নতুন চালু হতে শুরু করেছে। সেই কথাটারই সে উল্লেখ করলে : গল্পটা হয়তো মর্বিড।
হোক গে মর্বিড। কোনটা রুগ্ন কোনটা স্বাস্থ্যসূচক কোন বিশারদ তা নির্ণয় করবে। আপনি দিন। নীতিধ্বজদের কথা ভাববেন না।
উৎসাহের আভা এল বুদ্ধদেবের মুখে।
বললাম, নাম কি গল্পের?
নামটি সুন্দর।
কি?
রজনী হল উতলা।