১৫. এশার নামাজের পর

এশার নামাজের পর চৌধুরী সাহেব বাড়ি ফিরবার সময় লক্ষ করলেন জহুর হনহন করে বাজারের দিকে যাচ্ছে। চৌধুরী সাহেব গলা খাকারি দিলেন। জহুর তাঁর দিকে তাকাল, কিন্তু থামল না। যেমন যাচ্ছিল, তেমনি যেতে লাগল। তিনি ডাকলেন, এই

যে, জহুর না?

জহুর দাঁড়াল।

তোমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে একটা জরুরী কথা ছিল।

বলব তাঁকে।

জহুর আর দাঁড়াল না। চৌধুরী সাহেব হটতে শুরু করলেন। জহুরের ভাবভঙ্গি তাঁর মোটও ভালো লাগছে না। এই সব ভালো লক্ষণ নয়। তিনি জহুর কী করছে না-করছে, সে সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর নিয়েছেন। কিছুই করছে না। ঘরেই বসে সময় কাটাচ্ছে। কোনো মতলব পাকাচ্ছে নিশ্চয়ই। তাঁর নিজের কোনো ঝামেলায় জড়াতে এখন আর ইচ্ছা করছে না। বয়স হয়ে গেছে। শান্তিতে সময় কাটাতে ইচ্ছা হয়।

চৌধুরী সাহেব বাড়ির কাছে এসে দেখেন সাইফুল ইসলাম গেটের কাছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

স্লামালাইকুম চৌধুরী সাব।

ওলায়কুম সালাম। কি ব্যাপার?

আপারে একটা কথা বলতে এসেছি, চৌধুরী সাব।

বল।

শুনছেন বোধ হয় এসপি সাব আসতেছেন তদন্তে।

হ্যাঁ, জানি।

এসপি সাবের সাথে একটা কথা বলতে চাই চৌধুরী সাব।

বলতে চাইলে বল। আমাকে বলছ কেন?

জ্বি?

আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?

সাইফুল ইসলাম হাত কচলাতে লাগল।

কী বিষয়ে কথা বলতে চাও?

এ্যাঁই ইয়ে—আপনার গান-বাজনা নিয়ে। এসপি সাবে গান বাজনার খুব সমঝদার।

তোমার কথাবার্তা বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা কি?

সাইফুল ইসলাম আমতা-আমতা করতে লাগল। চৌধুরী সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, ভেতরের কথাটা কি বল তো।

সাইফুল ইসলাম রুমাল দিয়ে ঘাড় মুছতে মুছতে বলল, থানাওয়ালারা লোকটারে খুন করছে চৌধুরী সাব।

বলছে কে তোমাকে? সাইফুল ইসলাম জবাব দিল না।

জহুর বলছে নিশ্চয়ই। শোনো সাইফুল ইসলাম, তুমি বিদেশী মানুষ, কিছু জান-টান না। জহুরের স্বভাব-চরিত্ৰ তুমি জান না। সে যে খুন করেছিল সেইটা জান?

জ্বি, শুনছি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কমাণ্ডার আছিল, অনেক কাজকারবার করছে, বুঝলে? ডেঞ্জারাস লোক। যে যেটা বলে, সেটাই বিশ্বাস করতে হয় না। চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। চিন্তা-ভাবনা করবার জন্যে আল্লাহ একটা মাথা দিয়েছে। বুঝলে?

চৌধুরী সাহেব হাঁপাতে লাগলেন। হঠাৎ করেই মেজাজ খারাপ হয়ে যেতে শুরু করেছে। সাইফুল ইসলাম বলল, জহুর ভাই আমাকে কিছু বলেন নাই।

চৌধুরী সাহেব চোখ লাল করে তাকালেন।

বিষয়টা আমার নিজের মনে আসল।

নিজের মনে আসল?

জ্বি।

কী করতে চাও তুমি?

সাইফুল ইসলাম রুমাল দিয়ে ঘনঘন নাক মুছতে লাগল।

কী করতে চাও তুমি?

কিছু করতে চাই না চৌধুরী সাব।

তাহলে খামোকা বকবক করছ কি জন্যে?

সাইফুল ইসলাম খকখক করে কাশতে লাগল।

যাও আমার সামনে থেকে।

সাইফুল ইসলাম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।

চৌধুরী সাহেবের ধৈর্যচ্যুতি হল। তিনি প্রচণ্ড একটা চিৎকার করলেন, যাও, ভাগ।

সাইফুল ইসলাম তাড়াতাড়ি পা ফেলতে গিয়ে বড় রকমের একটা হোঁচট খেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *