১৫. এই যে লম্বা লম্বা গাছগুলি

এই যে লম্বা লম্বা গাছগুলি এখানে অনেক দেখি, এর নাম আমি জানি পালমিরা পাম, বাংলায় কী বলে? তাল গাছ? তাল গাছ। ঠিক আছে, আর এই যে ছোট ঘোট বেতের স্টুল? মোড়া? আর এই যে ফসল রাখার স্টোরেজ টাওয়ার? ধানের গোলা?

এমহা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সব কিছু বুঝতে ও জানতে চায়। সঙ্গে থাকে সন্তোষ মজুমদার অথবা কালীমোহন ঘোষ। আতাবুদ্দি নামে এক বর্ধিষ্ণু চাষির বাড়ির উঠোনে সে একটা মোড়ায় বসে। আতাবুদ্দি বেশ বর্ধিষ্ণু চাষি, তার তিনটে ধানের গোলা। একটু দূরে বসে তার স্ত্রী এক টুকরো বাঁশ ছুলে ছুলে একটা ধামা বানাচ্ছে। কী নিপুণ ভাবে ছুরি চালিয়ে বাঁশ দুলছে সে। এক পাশে একটা খড়ের ঘরের মধ্যে টেকি পাড় দিয়ে ধান ভানা হচ্ছে। এলমহা মন দিয়ে দেখে সেই প্রক্রিয়াটি।

আতাবুদ্দির জমিতে বর্ষার সময় প্রথম ফসল ভাল হয়, দ্বিতীয়বার জলের সমস্যা, পোকার আক্রমণের সমস্যা। তার হাল-লাঙল এখনও মান্ধাতার আমলের। সাহেব দেখে সে বিস্মিত বা অভিভূত হয়নি, কারণ সে এবং এখানকার গ্রামের মানুষ পিয়ার্সন সাহেবকে দেখেছে। অতি ধীর, স্থির, বিনীত পিয়ার্সনকে সবাই ভক্তি করে।

গ্রামের মানুষদের মধ্যে কতরকম জাতিভেদ ও শ্রেণীভেদ, তাও এল্‌মহার্স্ট বুঝতে পারে। আছে ব্রাহ্মণ, যারা এককালে অন্যদের চেয়ে নিজেদের অনেক উচ্চ শ্রেণীর প্রাণী মনে করত, তারা আজ অনেক নীচে নেমে এসেছে, বেশ করুণ অবস্থা। ভুবনডাঙায় আগে নাকি একশো পরিবার চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়রা ছিল, এখন তাদের সংখ্যা মাত্র তিরিশটি পরিবার। মহিলারা অধিকাংশ বিধবা। মুসলমানরা তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে, তাদের মহিলারা পর্দানশিন। এছাড়া আছে সাঁওতাল গোষ্ঠী, ডোম, মুচি। দারিদ্র ও অস্পৃশ্যতা। সব গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা বৃত্ত, অথচ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

একদিন এক মুচিদের গ্রামে গিয়ে দেখলেন, কিছু লোক দৌড়ে পালাচ্ছে। কারণ কী? কাবুলিরা আসছে, গরিব গ্রামবাসীরা তাদের কাছে ঋণী, ঋণ শোধ করতে পারবে না, কাবুলিরা তাদের মারধোর করবে, ঘরে ঢুকে ঘটিবাটি যা পায় তা কেড়ে নেবে। কাবুলিদেরও দেখা গেল দুরে। তিনজন দীর্ঘকায় পুরুষ, ঢোলা পাতলুন ও লম্বা কুর্তা পরা, মাথায় মস্ত বড় পাগড়ি, হাতে প্রকাণ্ড লাঠি। এদের দেখে রোগা রোগা বাঙালিদের ভয় পাবারই কথা।

কাবুলিরা একজন সাহেবকে দেখে থমকে গেছে। কালীমোহন তাদের ডেকে আনলেন, এক মুচি বাড়ির প্রাঙ্গণে মোড়ায় বসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে লাগল। কাবুলিরা সেলাম জানিয়ে মাটিতে বসল উবু হয়ে। ফিরে এল পলাতক গ্রামবাসীরা। মেয়েদের মুখে যসি, তারা ধরে নিয়েছে সাহেব তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেবে।

মুচিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করল বেশ সরলভাবে। তারা ঘর থেকে এনে দেখাল কিছু শস্তা ধরনের কিন্তু চকচকে, রঙিন জামাকাপড়। আগের বছর কাবুলিরা এসে বলেছে, যে-কেউ এগুলি কিনতে পারে, পয়সা দিতে হবে না তক্ষুনি, পরের বছর দিলেই হবে। মুচিদের কারুরই পয়সা নেই। কিন্তু পয়সা না দিয়েও যদি এমন লোভনীয় জিনিস পাওয়া যায়, তা হলে লোভ সামলানো যায় কী করে? পরের বছরের কথা পরের বছর দেখা যাবে, তার মধ্যে কিছুই হয় না। কাবুলিরা ফিরে আসে, যে জিনিসের দাম তারা চার টাকা বলেছিল, এখন সুদ সমেত তার জন্য বারো টাকা চায়। সে মূল্য দিতে না পারলে মার তো খেতেই হবে।

কাবুলিদেরও নিজস্ব যুক্তি আছে। সুদূর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে তারা আসে ব্যবসা করতে। তারা অর্থ বিনিয়োেগ করে, পরিশ্রম করে। তার বিনিময়ে মুনাফা চাইবে না? জিনিসের দাম তারা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়, কারণ এই সব গ্রামের কিছু লোক এমনই ধড়িবাজ যে তারা দূর থেকে কাবুলিদের দেখলেই বনে-জঙ্গলে লুকোয়, তাদের ঘরে যেসব জিনিস থাকে তার কানাকড়িও মূল্য নেই। সুতরাং একটা গ্রামে যাদের হাতের কাছে পায়, তাদের কাছ থেকেই পুরোপুরি বিনিয়োগ ও মুনাফা তুলে নিতে হয়।

এল্‌মহার্স্ট বোঝে, এখানে সালিসি করেও পুরোপুরি সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তার নেই। কাবুলিরা আজ ফিরে গেলেও আবার আসবে। কালীমোহনের দিকে ফিরে সে বলে, আসলে এসব গ্রামে স্কুল খোলা দরকার। এই মুচিরা চামড়ার কাজ জানে। আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে ট্যানিং শেখালে তারা চামড়ার দ্রব্য বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। তাতেই এদের অবস্থা ফিরবে।

আবার অন্য কোনও গ্রামে চাষিদের দেওয়া মুড়ি ও শশা খেতে খেতে আলু চাষে পোকা লাগা ও তার প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করে এল্‌মহার্স্ট। সব কিছুর জন্যই শিক্ষা দরকার, চিরাচরিত প্রথা থেকে সরে এসে যে যুগোপযোগী হতে হবে, এটাই বোঝানো দরকার সব জায়গায়।

গ্রামের মানুষদের, এমনকী অনেক শিক্ষিত ভদ্ৰশ্রেণীর মানুষদেরও স্বাস্থ্যনীতি জ্ঞানের চরম অভাব দেখেই সে বেশি বিস্মিত হয়। প্রায় সকলেই সারা বছর কিছু না কিছু রোগে ভোগে। পায়খানা বলে কোনও জিনিসই নেই। গ্রামের মানুষ, ছাত্ররা, অধ্যাপকরাও সকালবেলা এক লোটা জল নিয়ে মাঠের মধ্যে গিয়ে বসে। অনেকে আড়ালও খোঁজে না। তাদের পুরীষের ওপর যে-সব মাছি বসে, সেই সব মাছিই উড়ে আসে রান্নাঘরে। পেটের পীড়া হবে না?

সেইজন্য সুরুলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এল্‌মহার্স্ট প্রথমেই জোর দিয়েছেন পূরীষ পরিষ্কার প্রকল্পে। ট্রেঞ্চ খুঁড়ে সেখানে পূরীষ ফেলে চাপা দিতে হবে, এবং সে কাজ করতে হবে ছাত্রদের নিজেদেরই। তা নিয়ে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, উচ্চ শ্রেণীর ছাত্ররা, ব্রাহ্মণেরা পূরীষ ছোঁবে? এমহার্স্ট একাই সে কাজ শুরু করল। একজন খাঁটি ইংরেজ কি ব্রাহ্মণের চেয়ে কিছু কম? কয়েকদিন পর একজন ব্রাহ্মণ ছাত্র হাত লাগাতেই অন্যরা মেনে নিয়েছে।

গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মত বিনিময় তবু সহজ, শিক্ষিত ভদ্ৰশ্রেণীর মধ্যে একটা অবিশ্বাসের দূরত্ব থেকেই যায়। সে একজন ইংরেজ হয়েও গ্রামে এসে কেন খেটে মরছে, তা অনেকে বুঝতে পারছে না। অ্যান্ড্রুজ আর পিয়ার্সন সম্পর্কে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই, এরা দু’জনেই ব্রিটিশ সরকার বিরোধী, এঁরা পুলিশের কাছে নির্যাতিত হয়েছেন, এঁরা ইংরেজ হয়েও ভারতীয় স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে।

এল্‌মহার্স্ট রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত দিতে চায় না। সে বলে, আমি চাষা, চাষের কাজ নিয়েই থাকতে চাই। যদিও সে সব খবরাখবর রাখে, তার দৃঢ় ধারণা, অচিরকালের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার ধাপে ধাপে ভারতে স্বায়ত্তশাসন ও পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সে রকম আলোচনাই চলছে। বড় জোর পাঁচ-দশ বছর লাগবে। এটাই ইতিহাসের গতি। এর মধ্যে ভারতীয় জনগণ যদি আন্দোলনের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করতে চায়, সেটাও স্বাভাবিক।

কিন্তু গান্ধীজি যে এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন, তা কবির মতন, এল্‌মহার্স্টও মনে করে অবাস্তব। গান্ধীজি বলেছেন, এই অসহযোগ আন্দোলন হবে অহিংস। কিন্তু বছর প্রায় শেষ হতে চলেছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন দিকে দেখা যাচ্ছে হিংসার স্ফুরণ।

স্বাধীনতা পাবার আগে ভারতবাসীকে শিক্ষায় ও আধুনিক প্রযুক্তিতেও অগ্রসর হতে হবে। কবির এই ভাবনার সঙ্গেও এল্‌মহার্স্ট একমত। কবিকে সে কাছাকাছি থেকে যত দেখছে, ততই তার শ্রদ্ধা বাড়ছে। কবি শুধু ভাব-জগতে থাকেন না, তিনি দেশের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গেও নিজেকে জড়িতে রাখতে চান। অন্যদের দেখাদেখি সে এখন কবির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে এবং সম্বোধন করে গুরুদেব বলে।

ডরোথিকে সে চিঠি লেখে নিয়মিত, সব কিছু জানায়। এই প্রণাম ও গুরুদেব সম্বোধনের ব্যাপারে ডরোথি রীতিমতন ক্ষুব্ধ। ভারতীয়দের এই পদস্পর্শ করে প্রণামের রীতিটির মর্ম পাশ্চাত্যের মানুষদের পক্ষে বোঝা সত্যিই কঠিন। ক্রিশ্চানরা যীশুর মূর্তির পা ছোঁয়, কোনও জীবিত মানুষের পা ছোঁয়ার কথা ভাবতেই পারে না। বাংলার এই কবিটি নিজেকে কি অবতার মনে করেন? গুরুদেব শব্দটির অর্থ বুঝেও বিভ্রান্তি ঘোচে না। কীসের গুরুদেব? ইনি কি কবি, না ধর্মপ্রচারক?

কিছুদিন পরই অবশ্য ডরেথির চিঠির সুর বদলে গেল। এল্‌মহার্স্ট তো নির্বোধ সংস্কারগ্রস্ত নয়, সে জেনেশুনে যা করছে, নিশ্চিত তার যুক্তি আছে।

সুরুলের ছাত্রদের নিয়ে হঠাৎ একটা গণ্ডগোল শুরু হল।

শান্তিনিকেতন থেকে যে ক’জন ছাত্র সুরুলে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছে, তাদের মধ্যে একজনের নাম সত্যেন বসু। সে ঠিক শান্তিনিকেতনের ছাত্র নয়, তাকে ঢুকিয়েছেন অ্যান্ড্রুজ। সে আসলে একজন রাজনৈতিক কর্মী। ছেলেটি এমনিতে বেশ গুণসম্পন্ন, কিন্তু সে মনে করে, গান্ধীজির আদর্শে আপাতত এইসব শিক্ষাটিক্ষা বন্ধ রেখে অসহযোগ আন্দোলন জোরদার করাই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সরকারের সঙ্গে কোনওরকম সহযোগিতা বা আদান প্রদানের বিরোধী গান্ধীজি। কিন্তু এল্‌মহার্স্ট সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য নিতে অরাজি নয়। সুরুলের ভাঙাচোরা রাস্তা সারিয়ে দেবার জন্য জেলা বোের্ডকে অনুরোধ করা হবে না কেন? সাধারণ মানুষ যে সব কর ও খাজনা দেয়, তার থেকেই তো এসব কাজ হয়।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ বেশ ভালভাবেই চলছে, আর সত্যেন তলে তলে করে যাচ্ছে রাজনৈতিক প্রচার। ছাত্রদের মধ্যে সৃষ্টি করতে চায় অসন্তোষ। এখন সবরকম শিক্ষা ব্যবস্থা ভণ্ডুল করে দিতে পারলেই রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার হবে।

ঠাকুমার আদেশে সুবীর যখন সন্ধের পর সুরুল ছেড়ে শান্তিনিকেতন যাওয়া শুরু করল, তখন সত্যেন আরও কয়েকটি ছাত্রকে উস্কানি দিতে লাগল, তোরাও মশার কামড় খেয়ে এখানে রাত্তিরে থাকবি কেন, শান্তিনিকেতনে গিয়ে ঘুমোবি।

ছাত্রদের কয়েকবার সাবধান করে দেবার পর এমহার্স্ট বুঝলেন, জ্ঞানদানন্দিনী চান, তাঁর নাতিকে এখান থেকে বিতাড়িত করা হোক। তা হলে তিনি সুবীরকে নিয়ে কলকাতায় চলে যেতে পারবেন। তিনি জোর করে ফেরৎ নিয়ে গেছেন, তা আর কেউ বলতে পারবে না। ঠিক আছে, তবে তাই হোক।

এখন থেকেই কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারলে পরে আর ছাত্রদের বাগ মানানো যাবে না।

এক সকালে এল্‌মহার্স্ট সুবীর এবং আর একটি ছাত্রকে বলল, তোমাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, কাল সকালের ট্রেনে তোমাদের তুলে দেওয়া হবে। এখানে আর তোমাদের স্থান হবে না।

বিকেলে সমস্ত ছাত্র এবং শিক্ষককর্মীদের ডেকে এল্‌মহার্স্ট সব ব্যাপার বুঝিয়ে দিয়ে বললো, এখানে শৃঙ্খলাভঙ্গ সহ্য করা হবে না। তাই ছাত্র দুটিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে সত্যেন লাফিয়ে উঠে বলল, তা হলে আমিও আর এখানে থাকতে চাই না। আমিও চলে যাব।

আরও দুটি ছাত্র হাত তুলে বলল, আমরাও চলে যেতে চাই।

অবিচল মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে এল্‌মহার্স্ট জিজ্ঞেস করল, আর কেউ? হাত ভোলো।

আর কেউ হাত তুলল না দেখে এমহার্স্ট বলল, সকাল সাতটায় গাড়ি তৈরি থাকবে। তোমাদের স্টেশনে পৌঁছে দেবে।

সত্যেন উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, আপনি ভেবেছেন কী। আপনি যা বলবেন, তাই-ই হবে? আমরা ইংরেজের হুকুম সহ্য করব? কাল স্ট্রাইক হবে এখানে। স্ট্রাইক, স্ট্রাইক, আমি সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি।

এল্‌মহার্স্ট আর কোনও মন্তব্য করল না।

কিন্তু পরদিন সকালে স্ট্রাইকে যোগ দিল না কেউ।

আল নামে ড্রাইভারটি ট্রাক নিয়ে প্রস্তুত ঠিক সাতটার সময়। এল্‌মহার্স্ট এবং কালীমোহনও পোশাক পরে প্রস্তুত।

সুরুলের প্রতিষ্ঠানটির নাম এর মধ্যে দেওয়া হয়েছে শ্রীনিকেতন, সেখানকার দশজন ছাত্রের মধ্যে চারজনকে ভোলা হল ট্রাকে। সত্যেনকেও।

সত্যেন ঠিক করে রেখেছিল, গাড়িটা যখন শান্তিনিকেতনের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন সে লাফিয়ে নেমে পড়ে চেঁচিয়ে লোক জড়ো করবে। সেখানে ছাত্র-অধ্যাপকদের মধ্যে অনেকেই অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থক। সবাই মিলে পথ অবরোধ করা যেতে পারে।

কিন্তু গাড়িটা শান্তিনিকেতনের দিকে না গিয়ে অন্য একটা গর্তবহুল পথ দিয়ে পৌঁছোলো বোলপুর স্টেশনে। সত্যেনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল না। স্টেশনেও নেমে সে চ্যাঁচামেচি করতে লাগল, তারা কিছুতেই উঠবে না ট্রেনে।

তাদের চিৎকারে কর্ণপাত না করে এল্‌মহার্স্ট সুবীরকে বলল, তোমার বাবাকে টেলিগ্রাম করে দেওয়া হয়েছে, তিনি হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষা করবেন, তুমি উঠে পড়ো।

সকালবেলা স্টেশনে অনেক লোক জড়ো হয়েছে, তারা মজা দেখছে ভিড় করে।

সত্যেন মেঠো বক্তৃতার ঢঙে তাদের উদ্দেশে বলতে লাগল, ভাই সব, আপনারা এগিয়ে আসুন। গান্ধীজির মহান আদর্শে আমরা সবাই এক হয়ে স্বরাজ অর্জন করতে চলেছি। সাহেবদের কোনও হুকুম আমরা মানব না। এই সাহেবটি জোর করে আমাদের…

জনতা নির্বাক। গান্ধীজির ডাক তাদের অনেকেরই এখনও মর্মে পৌঁছয়নি। এই সাহেবটিকে তারা প্রায়ই দেখে, কোনওদিন কারুর ওপর অত্যাচার করেছে বলে শোনা যায়নি। রবি ঠাকুরের আশ্রমে মাঝে মাঝেই অন্য সাহেবরা আসে, তারা কেউ পুলিশ সাহেবদের মতন নয়।

সত্যেন চায় যে-কোনও উপায়ে সুবীরকে এখানেই রাখতে।

এল্‌মহার্স্ট শক্ত করে ধরে আছে সুবীরের হাত। সত্যেনের উস্কানিতেও কেউ তাকে কেড়ে নেবার জন্য এগিয়ে এল না। সুবীর অবশ্য দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।

ট্রেনের কামরায় সুবীরকে তুলে দিল এল্‌মহার্স্ট। ট্রেন ছাড়ার মুহুর্ত পর্যন্ত দরজার কাছে পাহারা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে ও কালীমোহন। সত্যেনের চ্যাঁচামেচি ও অভিযোগের কোনও উত্তর দেওয়া হল না।

এল্‌মহার্স্ট শান্তভাবে সিগারেট টানতে লাগল, যেন সে সত্যেনের কোনও কথাই শুনতে পাচ্ছে না।

তারপরই সে গাড়ি নিয়ে শান্তিনিকেতনে এসে কবিকে জানাল সব বৃত্তান্ত। শ্রীনিকেতনের অধিনায়ক হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত তার নিজের। কবি তাকে সে অধিকার দিয়েছেন।

কবি আর সেই মুহুর্তে নিছক কবি রইলেন না, হয়ে উঠলেন শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা। নিজের রক্ত জল করা পরিশ্রমে এবং নিজের উপার্জন ও সংগৃহীত অর্থ নিঃশেষ করে তিল তিল করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তিনি কিছুতেই এতে আঘাত লাগতে দেবেন না।

উত্তেজিত হয়ে তিনি তক্ষুনি ডেকে পাঠালেন অ্যান্ড্রুজকে।

তাঁকে কঠোরভাবে বললেন, এসব তোমারই অবিবেচনার কুফল। তুমিই সত্যেনকে প্রশ্রয় দিয়েছ। ওরা বোলপুর থেকে হেঁটে আসছে এদিকে। আমি কিছুতেই ওদের শান্তিনিকেতনে আর আসতে দিতে চাই না। এখানে এলেই হাঙ্গামা বাধবে। ওদের মাঝপথে আটকাও, যেমন করে হোক পরের ট্রেনে কলকাতায় ফেরত পাঠাও। ওদের অভিভাবকদের জানিয়ে দাও, কেন আমরা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

এল্‌মহার্স্টের সঙ্গে চোখাচোখি হল অ্যাভুজের। এল্‌মহার্স্টের ঠোঁটে মৃদু মৃদু হাসি।

এই ঘটনার পর শ্রীনিকেতনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো, কাজ চলতে লাগল সুষ্ঠুভাবে।

অ্যান্ড্রুজের সঙ্গে ঠিক বনিবনা না হলেও পিয়ার্সনের সঙ্গে এলমহাশেঁর বেশ সৌহার্দ্য। পিয়ার্সন একটা গরু পুষেছেন, এল্‌মহার্স্ট গল্প করতে এলে তাকে টাটকা, খাঁটি দুধ খেতে দেন। সিলভ্যাঁ লেভি নামে এক ফরাসি পণ্ডিত সস্ত্রীক এসে রয়েছেন এখানে, তাঁদের কুটিরে হানা দিলে পাওয়া যায় মাদাম লেভির তৈরি করা ছোট-হাজরি। নানারকম সসেজ ও চিজ আছে তাঁর সংগ্রহে। এল্‌মহার্স্ট সবরকম দেশি খাবারই চেখে দেখে, মাঝে মাঝে ইওরোপিয় আহার্যের স্বাদ নিতেও ইচ্ছে হয়। শান্তিনিকেতনের সব বাড়িতেই তার জন্য অবারিত দ্বার।

এল্‌মহার্স্টের ধূমপানের নেশা আছে। তবে এখানে আর সিগারেট বা সিগার নয়। সে হুঁকো, গড়গড়া টানতেও শিখে ফেলেছে। তাকে গড়গড়ায় দীক্ষা দিয়েছেন দীপুবাবু। গড়গড়া টানাও শিখতে হয়, প্রথম প্রথম মুখে জল চলে আসে, এর জন্যে বিশেষ দম লাগে।

এল্‌মহার্স্টের একটা ব্যাপারে আশ্চর্য লাগে। ঠাকুর পরিবারের প্রায় সকলেরই নানারকম নেশা আছে, একমাত্র কবিই শুধু সুরা পান করেন না। ধূমপান করেন না, এমনকী পানও খান না।

হুঁকো-গড়গড়া ব্যবহারকে আর্টের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন জোড়াসাঁকোর অন্য তিন ঠাকুর।

এল্‌মহার্স্টকে কাজের জন্য মাঝে মাঝেই কলকাতায় যেতে হয়। কবির নির্দেশ আছে, তিনি থাকুন বা না থাকুন, এল্‌মহার্স্ট তাঁর জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই উঠবে। চিৎপুর থেকে গলি দিয়ে এসে সামনের প্রাঙ্গণে পা দিয়েই একবার পাশের বাড়িটির বারান্দার দিকে চোখ চলে যায়, তাকে দেখলেই কেউ না কেউ সেই বারান্দা থেকে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

দক্ষিণদিকের এই প্রশস্ত বারান্দাটি বড় অপূর্ব, যেমন সুরুচিসম্মতভাবে সজ্জিত, তেমনই আনন্দময় পরিবেশ। গগনেন্দ্র, অবনীন্দ্র ও সমরেন্দ্র এই তিন ভাই সেখানে বসে ছবি আঁকেন। অন্যদের সঙ্গে গল্প ও রঙ্গরসিকতা করেন। এমন একইরকম প্রসন্নমনা ও পরিহাসপ্রিয় তিন ভ্রাতাকে এল্‌মহার্স্ট আর কোথাও দেখেনি।

এঁরা শান্তিনিকেতনে বিশেষ যান না, এমন অলস মেজাজ যে বাড়ি থেকেই কখনও বেরোন না বলে মনে হয়। কিন্তু এল্‌মহার্স্টকে দেখলেই খোঁজখবর নেন। প্রবল প্রতাপান্বিতা জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে এল্‌মহার্স্টের সঙ্ঘর্ষের খবরও এঁদের কানে এসেছে। শুনতে চান তার বিস্তারিত বিবরণ। সত্যেন ঠাকুরের নাতিকে শান্তিনিকেতন থেকে তাড়িয়ে ছাড়ল, এ সাহেবটির তো জেদ কম নয়।

বারান্দার এক পাশে নানান আকারের ও প্রকারের মূল্যবান সব হুঁকো ও গড়গড়া সাজানো থাকে। এমহারে হাতে একটি নল ধরিয়ে দেওয়া হল। এ বাড়ির তামাক নিশ্চিত বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করানো, এমন সুগন্ধ আর কোথাও পাওয়া যায় না।

গল্পের মাঝখানে হঠাৎ মাথাটা ঝুকিয়ে এনে গোপন কথা বলার ভঙ্গিতে ফিসফিস করে গগনেন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, হাঁগো সাহেব, রবিকাকার কী হয়েছে বলে তো?

এল্‌মহার্স্ট প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারে না।

অবনীন্দ্র মুচকি হেসে বললেন, হঠাৎ যেন রবিকাকার নবযৌবন এসেছে। অনেকদিন কবিতাই লিখছিলেন না। এখন একেবারে প্রেমের কবিতার বান ডেকেছে। এর পেছনে প্রেরণাদাত্রীটি কে?

সমরেন্দ্র বললেন, প্রেরণা ছাড়া প্রেমের কবিতা কি আর আসে?

এবার এল্‌মহার্স্ট বুঝেও না বোঝার ভান করে।

গগনেন্দ্র বললেন, বলো না, বলো না, তুমি নিশ্চয়ই জানো। তার নামের প্রথম অক্ষরটা কী?

এল্‌মহার্স্ট হাসি হাসি মুখ করে থাকে, তবু কিছু বলে না।

গগনেন্দ্র বললেন, অবন, তুমি যেন সেদিন কী কবিতার লাইনগুলো বলছিলে!

অবনীন্দ্র বলতে লাগলেন, মনে আছে সে কি সব কাজ সখী, ভুলায়েছ বারেবারে। বন্ধ দুয়ার খুলেছ আমার কঙ্কন ঝঙ্কারে। ইশারা তোমার বাতাসে বাতাসে ভেসে, ঘুরে ঘুরে যেত মোর বাতায়নে এসে, কখনও আমের নবমুকুলের বেশে, কভু নব মেঘ ভারে। চকিতে চকিতে চল চাহনিতে ভুলায়েছ বারেবারে।

গগনেন্দ্র আর সমরেন্দ্র একসঙ্গে বললেন, অপূর্ব, অপূর্ব!

অবনীন্দ্র বললেন, এমন শব্দ ঝংকার, একবার দু’বার পড়লেই কণ্ঠস্থ হয়ে যায়। রবিকাকা অনেকদিন এমন ভাল কবিতা লেখেননি। এল্‌মহার্স্ট, তোমার সঙ্গে সে মেয়েটির বেশ ভাব হয়েছে, তাও আমরা জানি।

গগনেন্দ্র বললেন, দেখো সাহেব, তুমি যেন সেই ব্রাহ্মণ কন্যাটিকে হরণ করে নিয়ে যেও না। তা হলে বাংলা সাহিত্যের বড় ক্ষতি হবে। আমরা চাই রবিকাকা আরও ভাল কবিতা লিখুন।

এবার এমহার্স্ট সশব্দে হেসে উঠল।

রাণুর সঙ্গে কবির নাম জড়িয়ে কিছু কিছু ফিসফিসানি শান্তিনিকেতনেও এহাস্টের কানে এসেছে। কিন্তু তাকে ঠিক স্ক্যান্ডাল মঙ্গারিং বলা চলে না। যেন সকৌতুক প্রশ্রয়ের ভাব আছে। সবচেয়ে বেশি প্রশ্রয় কবির পুত্র ও পুত্রবধূর। রাণু যখন কবির ঘরে গিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করে, তখন রথী ও প্রতিমা পারতপক্ষে অন্যদের সেখানে যেতে দেয় না। বাঙালিদের এমনই সাহিত্য প্রীতি, কবি যে নতুন উৎসাহে আবার কবিতা লিখছেন, সেটাই বড় কথা, এর মধ্যে নৈতিকতার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ইংল্যান্ড হলে এতদিনে সংবাদপত্রে রসালো গল্প বেরিয়ে যেত।

প্রাচ্য ও পশ্চিমদেশীয় মানুষদের চিন্তাধারার কোথায় কোথায় তফাত, তা এল্‌মহার্স্ট এখন কিছুটা কিছুটা বুঝতে পারে।

কবি তাকে এক এক সময় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কথাও শুনিয়েছেন।

কৈশোর-যৌবনে এক বউদির সঙ্গে কবির বিশেষ ভাব ছিল। জ্যোতিদাদার স্ত্রী কাদম্বরী দেবী ছিলেন কবিরই প্রায় সমবয়সী। জ্যোতিদাদা নানান কাজে খুব ব্যস্ত থাকতেন, বাড়িতে অনুপস্থিত থাকতেন প্রায়ই, তখন কবি ও সেই বউদিদি একসঙ্গে সময় কাটাতেন, গল্প করতেন, গান গাইতেন। সেই রমণী কবির অনেক রচনার প্রেরণাদাত্রী। আবার কখনও কখনও সন্ধের সময় কোনও বাগানবাড়িতে দাদা-বউদির সঙ্গে তরুণ কবিটি মেতে উঠতেন সাহিত্যচর্চা ও গানবাজনায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর বড় বড় বনেদি যৌথ পরিবারে এরকম সম্পর্ক অস্বাভাবিক ছিল না। ইওরোপেও এমন হত।।

কবির বিয়ের পর কিছুদিনের মধ্যেই সেই তরুণী বউদিটি আত্মহত্যা করেন। কেন তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, তা অবশ্য কবি কখনও খুলে বলেননি এল্‌মহার্স্টকে। কবির স্ত্রীও বাঁচেননি বেশিদিন। তারপর অনেকগুলি বছর ধরে কবি লেখাপড়া ও কাজের মধ্যে ড়ুবে রয়েছেন। নারীসঙ্গ বঞ্চিত জীবন কি কোনও কবির পক্ষে, শিল্পীর পক্ষে, কোনও সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক? অনেকেই বলছে, মাঝখানে যেন এই কবির কাব্যরসের ধারাটি প্রায় শুকিয়ে আসছিল, এতদিন পর রাণু নামের এই মেয়েটির সংস্পর্শে এসে তাঁর রচনায় নতুন জোয়ার এসেছে। এ মেয়েটির রূপ ও সারল্য অতুলনীয়। পড়াশুনোও করে, সাহিত্যরুচি আছে, এর সঙ্গে কথা বলেও আনন্দ পাওয়া যায়।

রাণু এমহাষ্টকেও বেশ পছন্দ করে। সে এল্‌মহার্স্টের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বললে, কিংবা কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে কবি অমনি রাণুকে ডেকে পাঠান। কবির ঈর্ষা হয় নাকি? এ কথা ভেবেই কৌতুক বোধ হয় এল্‌মহার্স্টের। অবশ্য ঈর্ষা জিনিসটা ভালোবাসারই আশে পাশে ঘুরঘুর করে।

কবির বয়েস ষাট পেরিয়েছে, কিন্তু শরীর বেশ মজবুত। মাথাভর্তি চুল, চলাফেরা যুবকের মতন। কণ্ঠস্বরে আছে দৃঢ়তা। কবি নিজেই একদিন বলছিলেন, এ দেশে অনেকে মনে করে, মেয়েরা সন্তানবতী হলেই প্রৌঢ়া আর পুরুষরা চল্লিশেই বুড়ো। অল্প বয়েসে সবাই বাবাখুড়োদের বুড়োদের দলে ফেলে দেয়, কিন্তু নিজে স্বাটে পৌঁছেও দেখছি, বার্ধক্যের ছোঁয়া তো লাগেনি এখনও। মনেও না, শরীরেও না।

শরীরের যৌবন থাকাটা কল্পনাশক্তির পক্ষে জরুরি। ষাটের পরেও অনেক বছর মানুষের যৌন ক্ষমতা থাকতে পারে। এ দেশে অবশ্য যৌন শব্দটি অনুচ্চাৰ্য। ইওরোপে ভালোবাসার সম্পর্ক হলে শারীরিক সম্পর্ক অবধারিত, বয়েসের তফাত থাকলেও এ দেশে বাল্যকাল থেকেই শেখানো হয় সংযম। সংযমে অনেকে গৌরব বোধ করে। ইওরোপে সন্ন্যাসীরা ছাড়া গৃহী মানুষেরা সংযমে বিশ্বাস করে না। এদেশে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক হতে পারে। অবশ্য ইওরোপেও একসময় এরকম ছিল, এবাদুরদের গানে কি তার পরিচয় নেই? ব্ৰিস্তানের সঙ্গে ইসলডের কি শারীরিক মিলন হয়েছিল কখনও? প্রাচ্যে যেন সেই ধারাটাই এখনও রয়ে গেছে। এলমহার্টকে অনেকে বলেছে, গুরুদেবের কবিতায়, গানে শরীরের কথা নেই, ভাবের মিলনই প্রধান।

এইসব ভাবতে ভাবতে পাশের বাড়িতে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে গিয়ে এল্‌মহার্স্ট দেখল, ওপর থেকে একটা রঙের ঝড় তুলে তরতরিয়ে নেমে আসছে রাণু।

রাণু এখন এখানে? সেইজন্যেই ওদিকের বারান্দায় এত কৌতূহল। রাণু এল্‌মহার্স্টকে বলল, তুমি ওপরে যাও, আমি একটু পরে আসছি।

এল্‌মহার্স্ট জিজ্ঞেস করল, তুমি পুজোর ছুটিতে আসোনি। এই গ্রীষ্মের ছুটিতে শান্তিনিকেতনে আসছ তো?

রাণু বলল, না, আমরা তো কালই যাচ্ছি শিলং পাহাড়ে। তোমার সঙ্গে আবার অনেকদিন দেখা হবে না।

এলমহার্ট বলল, তুমি দেখা করতে চাও না?

রাণু বলল, বারে, আমি কি একসঙ্গে দু’জায়গায় থাকতে পারি নাকি?

এল্‌মহার্স্ট দুষ্টুমির সুরে বলল, বুঝেছি, আমার সঙ্গে যাতে তোমার দেখা না হয়, সেইজন্যই কবি তোমাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

রাণু বলল, আহা কী বুদ্ধি। তুমি ছাই বুঝেছ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *