সীতা রায় দুই ভ্রূ এক করে মেয়ের দিকে তাকালেন। তারপর কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। জয়িতা সুদীপকে জিজ্ঞাসা করল, কি খবর?
সুদীপ মাথা নাড়ল, ঠিক আছে। যে ঘরে আমি ছিলাম সেখানে যেতে পারি?
নিশ্চয়ই। উনি হলেন সীতা রায়। আমার সম্মানিত গর্ভধারিণী। এখন
মেজাজ গরম আছে। ট্রিটমেন্টের জন্যে কিছু মনে করিস না। একটু মনের-কষ্টে মেজাজ গরম আছে। ট্রিটমেন্টের জন্যে কিছু মনে কিরস না। একটু মনের কষ্টে আছেন। জয়িতা কোমরে হাত রেখে বলল। এখন ওর পরনে হলদে পাঞ্জাবি আর সাদা প্যান্ট। সুদীপ কথা বাড়াল না। জয়িতা ওকে অনুসরণ করে ঘরে এল। এসে বলল, তোর জিনিসপত্র ওই আলমারিটার মধ্যে রেখেছি।
সুদীপ চোখের কোণে আলমারিটা দেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল খাটে।
জয়িতা টেবিলের ওপর উঠে বসে চেয়ারে পা রাখল, টায়ার্ড?
নট অ্যাট অল। জাস্ট একটু শুয়ে নেওয়া।
ঘুমোচ্ছিস? না চোখ বন্ধ করে ভাবছি। এইরকম হল কথাটা।
খাবি কিছু?
এখন থাক। সুদীপ কনুইতে ভর দিল, অবনী তালুকদার টাকা দিয়েছেন। চাপ দিলেও আরও ম্যানেজ করতে পারতাম। কিন্তু প্রবৃত্তি হল না। আনন্দকে খবরটা জানানো দরকার।
জয়িতার মুখটা উজ্জ্বল হল, গুড। টাকাগুলো কোথায়?
সুদীপ মাথার পাশে রাখা প্যাকেটটা দেখাল।
জয়িতা একটু অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল, তুই ওইভাবে হাতে ঝুলিয়ে টাকা এনেছিস? যদি পথে কিছু হয়ে যেত?
সুদীপ বলল, হয়নি দ্যাটস অল। আমার জন্মদাতাই ছিনতাই করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। এখন নিশ্চয়ই খুব আফসোস হচ্ছে ভদ্রলোকের। গয়নার ব্যাপার তোর গর্ভধারিণী জানতে পেরেছেন?
এখনও না। বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফিরেছেন। দার্জিলিং-এর ঘোর এখনও কাটেনি। বোধহয় প্লেন লেট ছিল। সীতা-রামের সাক্ষাৎ হয়নি অযোধ্যায়। জয়িতা চোখ বন্ধ করল, আমরা একটা প্যারাডাইস পোড়ালাম কিন্তু এখন ঘরে ঘরে প্যারাডাইসের নায়ক-নায়িকারা একই অভিনয় করে যাচ্ছে। তাদের তো জ্ঞানচক্ষু খোলাতে পারব না।
দরজার বাইরে পায়ের শব্দ এসে থামল, তোমার ফোন।
সীতা রায় ঘোষণা করে ফিরে গেলেন। চট করে নেমে পড়ল জয়িতা। তারপর কোন কথা না বলে প্রায় দৌড় লাগাল। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করল সুদীপ। সত্যি এখন ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে নিজেকে। কিন্তু সীতা রায়কে দেখার পর থেকে খাবারের কথাটা বলতে সঙ্কোচ লাগছে। জয়িতা যাই বলুক না কেন, এই বাড়িতে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে। এখন যে-কোন হোটেলে থাকার সামর্থ্য আছে তার। শুধুমাত্র পুলিস যাতে সন্দেহ না করে সেই ভয়ে এইভাবে থাকা।
চুকে গেল আজ সব সম্পর্ক। বলতে গেলে পৃথিবীতে সে এখন একা। সত্যিকারের মাতৃপিতৃহীন সে কবে হয়েছিল? নিজের মনেই সে হেসে ফেলল। জীবনের শেষদিকে মা অসুস্থ ছিলেন, একেবারেই শয্যাশায়ী কিন্তু যখন তিনি সুস্থ তখন তো বাবার কোন কাজের প্রতিবাদ করেননি। বাংলাদেশের মায়েরা চিরকালই স্বামীদের মার্শাল ল মুখ বুজে মেনে নিয়ে থাকে। তাদের সময় থেকে হয়তো অবস্থাটা পালটাবে। আবার এই বাড়িতে সীতা রায় তো রামানন্দ রায়ের চেয়ে কোন অংশে কম যান না। স্বাধীন মহিলা হিসেবে তিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দার্জিলিং ঘুরে আসতে পারেন বুক ফুলিয়ে। রামানন্দ রায়ের সঙ্গে তার পাল্লা নিশ্চয়ই সমান সমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও জয়িতা মনে করে সে একলা। তার কোন যোগাযোগ নেই মা-বাবার সঙ্গে। ওই শ্রেণীর স্বাধীনতাভোগী মহিলারা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোনভাবে নিজেদের দায়বদ্ধ বলে মনে করেন না। মিসেস অবনী তালুকদার এবং মিসেস রামানন্দ রায় সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ হয়েও কোথায় এক হয়ে গিয়েছেন। এবং তখনই লোকটার মুখ মনে পড়ল। প্যারাডাইসের ককটেল রুমের লোকটা। কোনদিন সে চিন্তা করেনি কোন মানুষকে গুলি করে মারতে পারবে। প্রথমবার গুলিটা ছোঁড়ার সময় হাত কেঁপেছিল। দ্বিতীয়বার সরাসরি। একটি হত্যাকাণ্ড করে ফেলল সে, অথচ নিজেকে খুনী বলে মনে হচ্ছে না তার। ওই গাঘিনঘিনে অশ্লীল ব্যাপারটা না ঘটালে হয়তো তার মন অত শক্ত হয়ে খুন করতে পারত না। আইনের চোখে সে খুনী। কিন্তু এই আইনকে কে কেয়ার করে! যে দেশের আইন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচার সাহায্য করে না, যে দেশের আইন শুধু অর্থবানদের পাহারাদার, সে দেশে এইরকম লক্ষটা খুন করতে সে সবসময় রাজী। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বোকামি করলে চলবে না। ঠিক এই কারণেই হোটেল নয়, আজ রাত্রে এই বাড়িতেই থাকতে হবে মেনে নিয়ে।
জয়িতা ফিরে এল। ওর মুখ উজ্জ্বল। এসে বলল, আনন্দ ফোন করেছিল। ওর মা এসেছিলেন। এখনও গ্রামের বাড়িতে কেউ খোঁজখবর নিতে যায়নি।
সুদীপ চোখ বন্ধ করেই বলল, গেলেও লাভ হত না। অন্ধকারে কেউ দ্যাখেনি ভাল করে। তুই যে একটি মেয়ে এটাও কারও মাথায় ঢুকবে না। আনন্দটা লাকি।
কেন? জয়িতা প্রশ্ন করল।
না হলে এরকম মা পায়! ভদ্রমহিলা বিধবা। আনন্দ একমাত্র ছেলে। অথচ বাধা দেবার বদলে নিজে এসে সাহায্য করছেন। বিশ্বাস কর, আমার একটা কথা খুব মনে হয়। এদেশের মেয়েরা যদি চায় তাহলে বিপ্লব অনিবার্য। এই সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের অবসান মেয়েরাই ঘটাতে পারে যদি প্রতিটি ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি হয়ে যায়। সুদীপ খানিকটা উত্তেজিত হয়ে উঠে বসল।
জয়িতা হঠাৎ উঁচু গলায় হেসে ফেলল। এবং তার হাসি থামছিল না।
সুদীপের মুখটা প্রথমে অবাক পরে গম্ভীর হয়ে গেল, হাসছিস কেন?
কোনরকমে নিজেকে সামলে জয়িতা বলল, তোর মাইরি হেভি ফান্ডা। অবিকল মুজিবের মত কথা বলছিস।
মুজিব? এবার সত্যি সত্যি বিস্মিত সুদীপ।
মুজিবর রহমান। তোমরা সবাই ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।
ইয়ার্কি মারার লিমিট আছে জয়িতা। আর তাছাড়া মুজিব হলেন একটা ইন্সপিরেশন। একটা জাতকে যিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যদি তখনই শহীদ হয়ে যেতেন তাহলে বাংলাদেশে তিনি চিরকাল আগুনের পাখি হিসেবে শ্রদ্ধা পেতেন।
কি হলে কি হত ভেবে লাভ নেই। এই মানুষটাকেই শেষ পর্যন্ত জনসাধারণের বিরক্তি কুড়োতে হয়েছিল তার অতিরিক্ত স্নেহান্ধতার জন্যে। সেটাই ঘটনা। কোন জিনিস অধিকার করা যতটা শক্ত, তার চেয়ে বহুগুণ কঠিন সেটাকে ঠিকমত লালন করা। জয়িতা সিরিয়াস হল।
এইসময় শ্রীহরিদাকে দরজায় দেখা গেল। থপথপে পায়ে জয়িতার কাছে এসে একটুকরো কাগজ এগিয়ে দিল। জয়িতা সেটা পড়ে শ্রীহরিদাকে ইশারা করল, ঠিক আছে। শ্রীহরিদা যেমন এসেছিল তেমনি চলে গেলে জয়িতা ঘোষণা করল, শ্রীযুক্ত রামানন্দ রায় তোক জানাচ্ছেন যে তুই ওঁর ঘরে গেলে তিনি খুশী হবেন।
সুদীপ নীরবে চোখ তুলে জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার?
জয়িতা কাঁধ নাচাল। তারপর বলল, হয়তো তোকে আমার কথা জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু এবাড়ি থেকে চলে যেতে বলবে না। দাঁড়া। আনন্দ জিজ্ঞাসা করছিল তুই টাকা পেয়েছিস কিনা। আমি বলেছি। পেয়েছিস। ও মিনিট চল্লিশের মধ্যে আসবে। ট্যাকসিতেই থাকবে। আমাকে বলেছে তোর কাছ থেকে অন্তত পনেরো হাজার টাকা নিয়ে ওকে পৌঁছে দিতে। যারা মাল দেবে তারা আজ রাত্রেই টাকা চায়। আগামীকাল সকালে ও এখানে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করবে।
সুদীপ বলল, দরকার নেই। আমি ওর সঙ্গে দেখা করছি এখন। আগামীকাল সকালে আমি এই বাড়িতে থাকব তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তোর বাবার নোটটা খুব গোলমেলে। উনি নিজেই এসে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন এই ঘরে। সুদীপ হঠাৎ হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে টাকা বের করল।
জয়িতা বলল, না, বোকামি করিস না সুদীপ। তুই এত রাত্রে গিয়ে ট্যাকসির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে ফিরে এলে দারোয়ানরা সন্দেহ করবে। ওরা তোকে চেনে না। দিনেরবেলায় এক কথা কিন্তু রাত্রে যাই ঘটুক লোকে তা অন্যচোখে দ্যাখে। আমাকে সবাই চেনে, আমার কোন অসুবিধে হবে না।
সুদীপ বলল, আনন্দকে বলবি আমি ঠাকুরপুকুরের বাড়িতে চলে যেতে চাই।
জয়িতা মাথা নাড়ল, বলব।
সুদীপ একবার ওর দিকে তাকাল। তারপর গুনে গুনে পনেরো হাজার টাকা আলাদা করে এগিয়ে দিল, এগুলো একটা খামে ভরে ওকে দিস। আর বলিস যাচাই করে নিতে।
জয়িতা কিছু বলল না। আনন্দ অত্যন্ত সতর্ক ছেলে। সুদীপ যে মানসিকতা নিয়ে কথাটা বলল সে-ব্যাপারে আনন্দ অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। সে ঘড়ি দেখল। চল্লিশ মিনিট বলেছে বটে তবে পাঁচ দশ মিনিট আগেও আসতে পারে। যদিও এত রাত্রে পনেরো হাজার টাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো শোভনীয় হবে না। কিন্তু ডিনারের পরে নিচের বাঁধানো ঘেরা চাতালে অনেকেই পায়চারি করে। সেখানে হাঁটতে হাঁটতে গেটের দিকে নজর রাখা যাবে। জয়িতা টাকাগুলো নিয়ে বলল, চল, তোকে রামানন্দবাবুর ঘরটা চিনিয়ে দিচ্ছি। যাবিই যখন তখন দেরি করে কি লাভ!
সুদীপ বলল, আমি আগে বাথরুমে যাব। এইটুকু ফ্ল্যাটে ঘর চিনতে অসুবিধে হবে না। তুই বরং নিচে যা, আনন্দ এসে পড়তে পারে।
জিনসের প্যান্টের ওপর নোংরা গেঞ্জিটা রাখা যাচ্ছিল না। বাথরুম থেকে পরিষ্কার হয়ে বাটিকের পাঞ্জাবি চাপিয়ে চুল আঁচড়ে একটু ভদ্র হয়ে নিল সুদীপ। সিগারেটের প্যাকেটটা রাখতে গিয়েও আবার পকেটে ভরে নিল। আজকাল একনাগাড়ে অনেকক্ষণ সিগারেট ছাড়া জেগে থাকতে পারে না। খাক কিংবা না খাক পকেটে সিগারেট আছে এটাই স্বস্তিদায়ক মনে হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে ফ্ল্যাটটাকে খুব নির্জন বলে মনে হল তার। ছোট্ট ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্যটা দেখল। কোণে একটা রঙিন টিভি চলছে। কিন্তু তাকে শব্দহীন করে রাখা হয়েছে। টিভির সামনে উবু হয়ে বসে মগ্ন হয়ে দেখছে শ্রীহরিদা। লোকটা যেহেতু কানে শুনতে পায় না তাই শব্দের কোন প্রয়োজন নেই। বোবা ছবিগুলোকে অন্যরকম মনে হল সুদীপের। এর একটা আলাদা মজা আছে। যে দেখছে সে ইচ্ছেমতন সংলাপ বসিয়ে নিতে পারে পাত্রপাত্রীর মুখে। ওপাশে দুটো ঘর। তার দুটো দরজাই বন্ধ। মনে হয় ওর একটিতে রামানন্দ রায় আছেন। দুবার পিঠে চাপ দেওয়ার পর শ্রীহরিদার সম্বিত ফিরল। সুদীপ ইশারায় জিজ্ঞাসা করল, কোন ঘরটায় তাকে যেতে হবে? তৎক্ষণাৎ হাত বাড়িয়ে সঠিক দরজাটা দেখিয়ে দিল শ্রীহরিদা। তারপর আবার টিভিতে সেঁদিয়ে গেল। সুদীপ নির্দিষ্ট দরজায় টোকা মারতে ভেতর থেকে গলা ভেসে এল, ইয়েস, কাম ইন!
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে একটা ছিমছাম ঘর দেখতে পেল সুদীপ। রামানন্দ রায় আরাম করে বসে আছেন। তার পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি। সামনে একটি পাশপোর্ট হুইস্কির বোতল, জলের জাগ এবং আধাভরতি গ্লাস। বোঝাই যাচ্ছে অনেকক্ষণ পান করছেন ভদ্রলোক। এক পলকেই সুদীপ বুঝল ভদ্রলোক চুলে রঙ বোলান এবং তার চোখের তলায় ব্যাগ তৈরি হয়েছে। সুদীপকে তিনি লক্ষ্য করছিলেন। এবার বললেন, এসো। তোমার কথা আমি জয়ের কাছে শুনেছি। ওখানে বসো। টেবিলের উলটোদিকে চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন তিনি। সুদীপ বুঝল ভদ্রলোক মদ খাচ্ছেন বটে কিন্তু এখনও নেশা হয়নি। কিংবা কোন কোন মানুষ নাকি আট-দশ পেগ খেয়েও স্বাভাবিক আচরণ করেন, ইনি হয়তো সেই শ্ৰেণীর। সুদীপ চুপচাপ চেয়ারটায় বসল।
রামানন্দ গ্লাস তুলে নিঃশব্দে চুমুক দিয়ে বললেন, হোয়াটস দ্য ট্রাবল?
কি ব্যাপার? সুদীপ শক্ত হল।
ওঃ, আমি তোমাকে এইমাত্র বললাম জয় তোমার কথা বলেছে।
তাহলে তো জেনেই গেছেন। ইনফ্যাক্ট এই মুহূর্তে আমার কোন প্রব্লেম নেই এটা ছাড়া।
হোয়াটস দ্যাট?
আপনাদের ফ্ল্যাটে থাকা। আপনারা পছন্দ না করলে সেটাই স্বাভাবিক হবে।
কেউ তোমাকে কিছু বলেছে? রামানন্দ রায়ের চোখ ছোট হয়ে এল।
না। কিন্তু আমার অস্বস্তি আছে। এত রাত্রে কোথাও যেতে অসুবিধে হবে। আমি ঠিক করেছি কাল সকালে চলে যাব। আপনি আমাকে কিছু বলবেন বলে ডেকেছেন?
ইয়েস। আমি জানতে চাই, হোয়াট ইউ পিপল আর ড়ুইং?
মানে?
জয় একটা রাত বাড়িতে ছিল না। তারপরে তুমি এখানে হঠাৎ এলে। আই নো মাই ডটার। কেউ যদি বলে সে ফুর্তি করার জন্যে বাইরে রাত কাটিয়েছিল আমি বিশ্বাস করব না। আমি মনে করি সে মনে করেছে যুক্তিযুক্ত তাই তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে দিয়েছে। কিন্তু আমার জানা উচিত কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কোথায় গিয়েছিল?
আপনার মেয়ের ওপর যখন এতটা আস্থা রাখেন তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করছেন না কেন?
জিজ্ঞাসা করেছি, সে উত্তর দেয়নি। দোষটা তার নয়, আমার। আমি কোনদিন তার কথা খেয়াল করিনি। আমার সঙ্গে চিরকাল ওর একটা কমুনিকেশন গ্যাপ রয়ে গেল। আমি ওকে বুঝতে পারি কিন্তু
রামানন্দ রায় আর এক চুমুক দিলেন, কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?
সুদীপ মানুষটিকে দেখল। লোকটা কতখানি জালি বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে। সে হাসল। এবং অম্লানবদনে বলল, আপনি মিছিমিছি চিন্তা করছেন। আমরা সবাই ক্লাসিক্যাল মিউজিকে গিয়েছিলাম।
ক্লাসিক্যাল মিউজিকে? রামানন্দ রায় হাঁ করে গেলেন।
হ্যাঁ, আমরা সব বন্ধুবান্ধবরা একসঙ্গে গিয়েছিলাম। আপনাদের বাড়িতে পাইনি বলে জয়িতা বলতে পারেনি। আপনি কখনও হোলনাইট ক্লাসিকাল মিউজিক শুনেছেন?
মাথা নাড়লেন দ্রুত রামানন্দ, না, না। আমি ওসব বুঝি না। হঠাৎ তোমরা ওই অনুষ্ঠানে গেলে?
আমিও ঠিক বুঝি না তাই যেতে চাইনি। কিন্তু আনন্দ বলল, না গেলে ভাল লাগার অভ্যেসটা শুরু হবে না তাই গেলাম। আপনিও একবার গিয়ে দেখুন।
রামানন্দ বাকি মদটুকু শেষ করলেন, এই কথাটা আমাকে বললে কি অসুবিধে হত? এই মেয়েটাকে কিছুতেই বুঝতে পারি না। তোমার বাড়িতে কি গণ্ডগোল হয়েছে?
মানে?
জয় বলছিল তোমার স্টেপমাদার নাকি বাড়ি থেকে চলে যেতে বলায় তুমি বেরিয়ে এসেছ!
কোনমতে হাসি চাপল সুদীপ। সে চট করে সেই কুদর্শনা দাসীটিকে স্টেপমাদারের তকমা পরাবার চেষ্টা করল। এতে হাসিটা বিস্তৃত হল, আমার কথা ছেড়ে দিন। আমি–আমি একটা সিগারেট খেতে পারি? যদি কিছু মনে না করেন!
ও সিওর। রামানন্দ একটি বিদেশী সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলেন, ছেলেমেয়েদের সিগারেট খাওয়ার সঙ্কোচ করার কি আছে? আমি শুধু জয়কে বলি সস্তা দিশি কিছু খেও না। খেতে হলে বিদেশী সিগারেট, ফিলটারটা ভাল থাকে।
সুদীপ নিজের প্যাকেটটা বেব করল না। বাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট টু হার ম্যাজেস্টি দ্য কুইন সিগারেটটা ধরাল সে। এই মানুষটির আয় কত? এই সিগারেট দিনে দুপ্যাকেট, আধবোতল স্কচ হুইস্কি, বড় হোটেলে লাঞ্চ, ক্লাবে ডিনার, দুটো গাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট সুচারুভাবে চালাতে গেলে মাসে কত ব্যয় হয়? চাকরি করে এসব চালানোর খরচ পাওয়া যায়? ওর এক সরকারি অফিসাবের সঙ্গে আলাপ আছে। ভদ্রলোক মাইনে পান সাতাশ শো। এক মেয়ে লরেটোতে পড়ে। ভদ্রলোক থাকেন তিনশো টাকার ফ্ল্যাটে। কিন্তু বাড়িতে কালার টিভি-ভি সি আর আছে। এটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু পয়তাল্লিশ হাজারে অ্যামবাসাডর কিনেছেন ভদ্রলোক। গাড়ির পেছনে ড্রাইভার সমেত মাসে খরচ অন্তত দুহাজার। উনি চালান কি করে? আশেপাশের মানুষ, তার সহকর্মীরা কি নির্বোধ? কিন্তু চোখ বুজে থাকা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে প্রত্যেকের। এখন একটু সুযোগ পেলেই মানুষ দু-নম্বরী কারবার করে। এবং সেটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মুশকিল হল এইসব মানুষের সামনে আয়না ধরলে তারাই আগে ছি ছি করে উঠবে। যে কারণে প্রতুল চৌধুরীকে কেউ পছন্দ কবে না। আর পাঁচটা লেখকের মত ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প লেখেন না ভদ্রলোক। সরাসরি পাঠকদের নকল সাজগুলো খুলে ফেলে দেখিয়ে দেন তারা আসলে কি এবং কি হবার ভান করে থাকে। প্রথম প্রথম লোকের মজা লাগছিল। এখন জঘন্য, অশ্লীল বলে চিৎকার শুরু করেছে। প্রতুলবাবুর সঙ্গে আলাপ করেছিল সে একদিন। খুব ভাল লেগেছিল। ভদ্রলোক বিশ্বাস করেন এই দেশটার প্রধান শত্রু এর জনসাধারণ। নিরানব্বইজনই ভণ্ড।
কি ভাবছ? রামানন্দ জিজ্ঞাসা করলেন।
প্রতুল চৌধুরীর কথা।
সে কে!
একজন বিতর্কিত লেখক। আপনি বাংলা গল্প-উপন্যাস পড়েন?
না ভাই, অত সময় নেই আমার। তবে হ্যাঁ, ছেলেবেলায় পড়েছিলাম। খুব স্ট্রাগল করে আজ এখানে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন গরীব মাস্টার। এসব কথা এখন তো কাউকে বলা যাবে না। আমি তো তোমাদের মত রুপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি। তুমি স্কচ খাও? নেবে?
পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল সুদীপ। তারপর হেসে বলল, এখনও সুযোগ পাইনি।
জয় তোমার গার্লফ্রেন্ড?
না।
না? আই সি! তাহলে কি?
আমরা বন্ধু। ওকে আমার মেয়ে বলে মনেই হয় না।
হ্যাঁ, ওর শরীরটা–আসলে ছেলেবেলায় একবার টাইফয়েড হয়েছিল। যাই হোক তাই বলে মেয়ে বলে মনে হয় না এটা ভাবা ঠিক নয়। আসলে প্যান্ট পরে বলে।
না না, আপনি ভুল বুঝছেন। ওর শরীর কোন ব্যাপারই নয়। একটি মেয়ে নয়, ও আমাদের একজন বন্ধু। এর মধ্যে মেয়ে হিসেবে কোন ভূমিকা ওর নেই।
আমি ঠিক বুঝতে পারি না। তোমার বাবা কি করেন?
শুনেছি আইনের ব্যবসা করেন।
শুনেছ মানে?
আমি কোনদিন দেখতে যাইনি।
ঠিক তখনই দরজায় শব্দ হল। আনন্দকে টাকা দিয়ে জয়িতা নিশ্চয়ই ফিরে এসেছে। রামানন্দ রায় একটু টিপসি এখন। গলার স্বর ভারী। পরিশ্রম করে চিৎকার করলেন, কাম ইন।
চাবুকের মত দরজাটা খুলে গেল। সীতা রায় গনগনে আঁচের মত করে ঢুকলেন। সুদীপ চমৎকার পারফিউমের অস্তিত্ব, সুগঠিত শরীরের বিদ্যুৎ এবং দাম্ভিক পদক্ষেপ দেখল। সীতা রায় সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আমার ঘরে গিয়েছিলে?
চটজলদি মাথা নাড়লেন রামানন্দ রায়, নো নো ডার্লিং।
একটু থমকে গেলেন সীতা রায়। সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় তাঁর শরীরে একটা ঢেউ গড়িয়ে গেল। ঠোঁট কামড়ে এক লহমা দাঁড়িয়ে একবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমার আলমারি কে খুলেছিল?
তোমার আলমারি? স্ট্রেঞ্জ! এত সাহস কার হল? সত্যি যেন অবাক হয়েছেন রামানন্দ।
লিশ্ন! আমি কদিন ছিলাম না, একটু আগে লক্ষ্য করলাম আমার একটা ভাবী হার মিসিং। যাওয়ার কদিন আগে হারটা আমি ভল্ট থেকে এনেছিলাম। আমি জানতে পারি কি কে নিয়েছে? মহিলার মুখে রক্ত জমছে এবার।
রামানন্দ রায় উঠে দাঁড়ালেন, তুমি বসো ডার্লিং। বসো প্লিজ?
সীতা রায় আপত্তি করতে গিয়েও করলেন না! চেয়ারে নোংরা আছে এমন ভঙ্গিতে সেখানে শরীর বাখলেন।
রামনন্দ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি চাবি দিয়ে যাওনি আলমারিতে?
গিয়েছিলাম। এসেও দেখছি বন্ধ আছে। শুধু গয়নাটা নেই। এই বাড়িতে কেউ কখনও আমার জিনিসে হাত দেবে ভাবতে পারিনি। হয় তুমি, জয় কিংবা ওই বুড়োটা ছাড়া আর কেউ নিতে পারে না।
আমি ফেরত চাই, কাল সকাল আটটার মধ্যে।
কথা শেষ করে উঠতে যাচ্ছিলেন সীতা রায়, হাত তুলে ইঙ্গিতে তাকে বসতে বলল সুদীপ, আপনার একটু ভুল হয়ে যাচ্ছে। আমি বাধা দিলাম বলে ক্ষমা চাইছি।
মেদহীন মসৃণ চামড়ার মুখটি স্প্রিং-এর মত ঘুরল, হোয়াটস দ্যাট?
তিনজন নয়, চারজন। আপনি আমার নামটা ইনক্লন্ড করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আমি এই বাড়িতে ছিলাম। সুদীপ খুব সুন্দর করে হাসল।
আর সেটা দেখে যেন সীতা রায়ের শরীর জ্বলে উঠল, আমি বুঝতে পারি না রামানন্দ এত উদার হল কি করে? মেয়ে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বাড়িতে থাকছে, চমৎকার!
রামানন্দ চটপট প্রতিবাদ করলেন, সুদীপ জয়ের বয়ফ্রেন্ড নয়।
কাঁধ নাচালেন সীতা রায়, ইটস নট মাই হেডেক! মেয়ের ব্যাপারে যা ভালমন্দ তুমি বুঝবে! ঠিক আছে, চারজন, চারজনের কেউ ওটা ফেরত দিলে খুশী হবো।
রামানন্দ নতুন করে হুইস্কি টানছিলেন, কিন্তু কে চুরি করবে? কার এত সাহস? তুমি একটু নেবে ডার্লিং। ওহো, তুমি তো আবার ভদকা ছাড়া কিছু খাও না!
সুদীপ বলল, আপনার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে।
বলুন। সীতা রায় তাকালেন না।
এখানে বলাটা ঠিক হবে?
সীতা রায় এবার ঘুরে বসলেন, কি বলতে চাইছেন?
এমন কথা যা হয়তো আপনি চাইবেন না উনি শুনুন।
লুক, আপনি ভনিতা না করে বলতে পারেন।
হারটা আপনি দাজিলিং-এ ফেলে আসেননি তো?
না। সেখানে আমি হার নিয়ে যাইনি।
আপনি খুব নিশ্চিন্ত?
মোর দ্যান দ্যাট।
যিনি আপনার সঙ্গে দার্জিলিং-এ গিয়েছিলেন তাকে একবার ফোন করুন না। হয়তো তিনি এমন কিছু তথ্য দিতে পারেন–।
শুনুন, আমি বলছি হার আমি এখানেই রেখে গিয়েছিলাম। সান্যাল কিছুই জানে না।
তবু যখন বলছে সান্যালকে জিজ্ঞাসা করো না ডার্লিং। রামানন্দ বললেন। এখন ওঁর গলার স্বর আরও জড়ানো। চোখ ছোট হয়ে এসেছে।
আমি ওই স্কাউড্রেলটার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।
সান্যাল তো স্কাউন্ড্রেল তা সবাই জানতাম। শুধু পরের বউ-এর সঙ্গে ঘুমানো ছাড়া ওর কোন কাজ নেই। তুমি বুঝেছ, বেটার লেট দ্যান নেভার ডার্লিং! রামানন্দ যেন তৃপ্তি পেলেন।
আমি কি বুঝি সেটা আমি জানি। আমি দার্জিলিং-এ গিয়েছিলাম কিছু পাহাড়ী বাটিকের জন্যে। সান্যালও ওখানে গিয়েছিল। দ্যাটস অল। আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে রাজী নই। সান্যাল নিশ্চয়ই স্কাউন্ড্রেল, লম্পট, কিন্তু তোমার ওই হিপো ঐন্দ্রিলা দত্ত তার চেয়ে কম নয়। আমি যাচ্ছি। শব্দ করে চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন সীতা রায়।
ওয়েল। জড়ানো গলায় বললেন রামানন্দ রায়, গুডনাইট। কি যেন নাম তোমার? সুদীপ। গুডনাইট। কালকে বিদায় হও ভাই। আমার স্ত্রী চাইছেন না যখন তখন কেটে পড়। গুডনাইট। গ্লাসের বাকিটা শেষ করে টলতে টলতে বিছানার দিকে এগোলেন রামানন্দ রায়। সুদীপ উঠে পড়ল। সীতা রায় স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, কাল সকালে আমার হার চাই। এ ব্যাপারে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
সুদীপ আর দাঁড়াল না। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল শ্রীহরিদা টিভির সামনে উবু হয়ে বসে। কিন্তু টিভিতে কোন ছবি নেই। স্টেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যদিও সেটটা বন্ধ করা হয়নি। নির্ঘাৎ বুড়ো ঘুমোচ্ছে। সে এগিয়ে গিয়ে নবটা ঘুরিয়ে দিতে সীতা রায় বেরিয়ে এলেন। স্মার্ট পায়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ালেন, তুমি তখন কি বলছিলে? দার্জিলিং-এর ব্যাপারে?
আপনি তো আমার কথা শুনতে চাননি!
সীতা রায় সুদীপের আপাদমস্তক দেখলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, আমার ঘরে এস। তিনি আর দাঁড়ালেন না। সুদীপ জয়িতার জন্যে তাকাল। তাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। হার নিয়ে ওই ভদ্রমহিলা একটা কাণ্ড না বাধিয়ে ছাড়বেন না। আপাতত জয়িতাকে সন্দেহের তালিকা থেকে সরানো দরকার। সে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যরাত্রে সীতা রায় চুলে বেশ ব্রাশ বোলাচ্ছিলেন। বললেন, সত্যি করে বলতো তুমি কে?
আমি প্রেসিডেন্সিতে পড়তাম। আমার মা বাবা ছিলেন। তাদের দেওয়া নাম সুদীপ।
তুমি পাস্ট টেলে কথা বলছ?
ব্যাপারটা আমার কাছে অতীত বলে।
সীতা রায়ের মুখে হাসি ফুটল। হাসলে এই মহিলাকে এখনও মিষ্টি দেখায়। বললেন, তোমাকে আমার বেশ অভিনব মনে হচ্ছে। শোন, দার্জিলিং-এ আমি হার নিয়ে যাইনি। শ্রীহরির কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ও চুরি করতেই পারে না। রামানন্দর সাহস হবে না আমার জিনিসে হাত দেওয়ার, সেটা আমি জানি। বাকি থাকল জয়িতা। ওকে আমি বুঝতে পারি না আজকাল। অদ্ভুত ব্যবহার করে। অত্যন্ত উদ্ধত। মুখের ওপর যা-তা কথা বলে। আর এসবই হচ্ছে রামানন্দর প্রশ্রয়ে।
সরল মুখে সুদীপ বলল, জয়িতা তো গয়না পরতে ভালবাসে না। আমরা তো দেখিনি।
কাঁধ নাচালেন সীতা রায়, নিজের মেয়েকে সন্দেহ করতে নিশ্চয়ই আমার ভাল লাগছে না, কিন্তু এছাড়া তো আর কোন রাস্তা নেই। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একলা মনে হয়। আই অ্যাম রিয়েলি অ্যালোন! এবার দার্জিলিং-ট্রিপটা আমার খুব খারাপ গেল।
আমারও তাই মনে হয়। কি
মনে হয়? তুমি জানছ কি করে?
একজন স্কাউড্রেল লম্পট মানুষের সঙ্গে সময় নিশ্চয়ই ভাল কাটে না। তবে ওকে তো সবাই জানত–।
আমি শোনা কথায় বিশ্বাস করি না। তুমি সান্যালকে চেন?
অম্লানবদনে মিথ্যে বলল সুদীপ, হ্যাঁ। আমার এক পরিচিত ভদ্রলোকের স্ত্রী ওর বান্ধবী।
গুড গড! লোকটা–। অনেকদিন পরে আমি ভুল করলাম।
সান্যাল নিতে পারে না?
না না। সে ওসব ঠুনকো জিনিস চায় না। ও যে দার্জিলিং-এ আরও একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে যাচ্ছে তা কে জানত! আমাকে ও প্রথমে প্যারাডাইসে যেতে বলেছিল। সেখানে গেলে তো মরে যেতাম। কাগজে যা দেখলাম! শিউরে উঠলেন সীতা রায়, বড্ড বেশি রিস্ক নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। ওখানে এই হল আর বাড়িতে ফিরে এই দেখছি।
আপনি কিভাবে দার্জিলিং-এ গিয়েছিলেন?
কেন, প্লেনে! আমি ট্রেনে বেশি ট্রাভেল করতে পারি না। সান্যাল এল। আমি তৈরি হয়ে নিলাম। তারপর সোজা এয়ারপোর্ট। বাগডোগরা থেকে ট্যাকসিতে দার্জিলিং-এ। জিজ্ঞাসা করছ কেন?
সান্যাল এখানে এসেছিলেন আপনাকে নিতে?
হ্যাঁ। বলেই সীতা রায় স্থির হয়ে গেলেন। তারপরেই তার মাথা নড়ল, ও যখন এই ঘরে বসেছিল তখন আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও জানবে কি করে কোথায় হার আছে!
চটপট লুফে নিল সুদীপ, যারা জানার তারা জানে। আচ্ছা আমি আসি। সে আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে এল। ভদ্রমহিলার মুখ এখন রক্তশূন্য হয়ে য়ছে। দার্জিলিং-এ যে প্রতারণা তিনি সহ্য করে এসেছিলেন, হার হারানো তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ঠেকছে। শরীরটা তো সাবান ঘষে সাফ করে নেওয়া, যায় কিন্তু স্বর্ণালঙ্কার? সুদীপ হেসে ফেলল। আনন্দ যা চেয়েছে তা করতে গেলে আজই তিনটে গুলি খরচ করতে হত। অবনী তালুকদার, রামানন্দ রায় এবং সীতা রায়দের সংখ্যা যেভাবে হু-হু করে বাড়ছে তাতে অবশ্য তিনটে গুলি বাজে খরচের মধ্যে পড়ত। এই মুহূর্তে তার ভাল লাগল প্যারাডাইসের কথা বলার সময় সীতা রায়ের শি. র ওঠা মুখটা মনে পড়ায়। আনন্দ এ ক্ষেত্রে ঠিক, ধাক্কা দেওয়া দরকার। আতঙ্ক কখনও কখনও মানুষের চেতনা ফিরিয়ে আনে। একবারে না হলে একাধিকবারে।