১৪. লাজুক, ভদ্র ও বিনয়ী

একটি লাজুক, ভদ্র ও বিনয়ী ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল জরীর। মুসলমানদের বিয়ে বড় বেশি সাদাসিধা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই উৎসবের সমাপ্তি। যে-ছেলেটির সঙ্গে কোনো জন্মেও জরীর পরিচয় ছিল না, তার সঙ্গে পরম পরিচয়ের অনুষ্ঠানটি এত ক্ষুদ্র হতে দেখে ভালো লাগে না। মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় কী-যেন একটা বাকি থেকে গেল।

জরীর দিকে চোখ তুলে তাকান যায় না। শ্যামলা রংয়ের এই মেয়েটি এত রূপ কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল! দেখে দেখে বুকের ভেতরে আশ্চর্য এক ব্যথার অনুভূতি হয়। ভয় হয়, সেই লাজুক, ভদ্র ও বিনয়ী ছেলেটি কি এই রূপের ঠিক মূল্য দেবে? হয়তো দেবে, কারণ ছেলেটি কবি, মাঝে মাঝে গল্পও লেখে। হয়তো দেবে না, না চাইতে যা পাওয়া যায় তার তো কোনো কালেই কোনো মূল্য নেই।

জরী বসে আছে সম্রাজ্ঞীর মতো। তার যে-বন্ধুরা এতক্ষণ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছিল, তারা এখন খানিকটা দুরে সরে বসেছে। বিয়ের পরপরই অবিবাহিত মেয়েদের থেকে বিবাহিতরা আলাদা হয়ে পড়ে। আভা জিজ্ঞেস করল, কেমন লাগছে জরী?

জরী হাসল। কনক বলল, আমার এখনো বিশ্বেস হচ্ছে না, তোর বিয়ে হয়ে গেছে।

জরীর মা ক্লান্ত ও অবশ্য ভঙ্গিতে পাশেই বসে। বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকেই তিনি অবিশ্রান্ত কাঁদছেন। জরী অনেকটা সহজ হয়েছে, হালকা দু-একটা কথাও বলছে। বরের ছোট বোন জরীকে নিয়ে কী–একটা রসিকতা করায় সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে জারীও হোসেছে। একসময় সে বলল, মা, বড়োচাচা কোথায়?

আনিসের ঘরে, আনিসের অসুখটা খুব বেড়েছে। ডাকব তোর চাচাকে?

না। আনিস ভাইয়ের মার সঙ্গে একটু আলাপ করব।

আতর বৌ ছেলের কাছে ছিলেন না। বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। জরী ডাকছে শুনে ঘরে এলেন। জরী বলল, ভালো আছেন চাচী?

হ্যাঁ মা।

জরী হঠাৎ তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করল। আতর বৌ বললেন, স্বামী ভাগ্যে ভাগ্যবতী হও, লক্ষ্মী মা।

বরের ছোট বোনটি আবার কী-একটা হাসির কথা বলে সবাইকে হাসিয়ে দিল। আতর বৌ বললেন, এই ছোট্টটি দেখেছি জরীকে। কি দুষ্টুই না ছিল! এখন কেমন বৌ সেজে বসে আছে। অবাক লাগে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *