রাত অনেক। মাইক্রোবাস আঠারোবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। রূপা বসেছে ড্রাইভারের পাশের সিটে। তার চোখে ঘুম নেই। পেছনের একটি সিটে বালিশে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন হারুন। আরেক সিটে ঘুমাচ্ছেন সুলতান। মদিনা আসে নি! শায়লা এবং টগরের দেখাশোনার জন্য সেও থেকে গেছে। অতি অল্প সময়ে টগরের সঙ্গে তার ভাল ভাব হয়েছে। এর খুব প্রয়োজন ছিল। টগরের বয়স তের। তার আচরণ চার বছরের শিশুর মত। সে একটি বাড়তি ক্রমোজম নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে।
রূপা বলল, ড্রাইভার সাহেব আমরা মনে হয় চলে এসেছি। ঐটা রেল স্টেশন না?
জী আফা।
রেল স্টেশনে নিশ্চয়ই চায়ের দোকান আছে। সেখানে জিজ্ঞেস করবেন উকিল বাড়ি কোথায়।
জী আচ্ছা।
প্রথম আমি এক কাপ চা খাব তারপর উকিল বাড়ি যাব।
রেল স্টেশনের চায়ের দোকান খোলা। উকিল বাড়ির সন্ধান সেখানেই পাওয়া গেল। চায়ের দোকানি একজনকে সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছে যে বাড়ি চিনিয়ে দেবে। দোকানের চা কখনোই ভাল হয় না। এই চা-টা ভাল। চা খাওয়ানোর জন্যে অনেক চেষ্টা করেও রূপা তার সুলতান চাচা বা বাবাকে জাগাতে পারল না। তাদের চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করেছে।
মাইক্রোবাস রাশেদের পৈতৃক বাড়ির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। আর যাবে না। এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে।
রূপা বলল, বাবা আর সুলতান চাচা ঘুমাচ্ছেন। তাদের এখন জাগানোর দরকার নেই। আমি একা যাব। রাশেদ সাহেবকে একটা সারপ্রাইজ দেব।
রূপা এগুচ্ছে। আকাশে সপ্তমীর চাঁদ। ড়ুবে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ড়ুবন্ত চাঁদের আলোয় অনেক রহস্যময়তা। চারপাশে প্রচুর জোনাকি। রূপা অনেক দিন পর এত জোনাকি একসঙ্গে দেখল। বাহ্! কি সুন্দর একটা পুকুর। চঁাদের আলোয় বনের ছায়া পড়েছে পুকুরে। রূপার ইচ্ছা করছে এখনই পুকুরে নেমে সাঁতার কাটতে। একটা কুটুম পাখি ডাকছে। কি সুন্দর পাখিটার গলা।
রূপা বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ঘর দেখা যাচ্ছে। ঘরের দুজা নেই। রাশেদ কি এই ঘরেই থাকে? রূপা প্রথম কথা রাশেদকে কি বলবে ঠিক করছে। সে বলবে, প্রকৃতি ঠিক করে রেখেছে আমরা দুজন বাকি জীবন একসঙ্গে থাকব। আমি এসেছি।
ঘরের ভেতর থেকে রাশেদ ভয়ার্ত গলায় বলল, কে? কে? উঠানে কে?
রূপা বলল, ভয় পেও না। আমি রূপা।
হতভম্ব রাশেদ উঠানে এসে দাঁড়িয়েছে। সে বিস্ময়ে অভিভূত গলায় বলল, এইমাত্র স্বপ্ন দেখেছি একগাদা ধবধবে শাদা ফুল নিয়ে তুমি এসেছ। ঘুম ভেঙে দেখি সত্যি তুমি। ফুল কোথায়?
ফুল আনতে ভুলে গেছি। সরি।
সপ্তমীর চাঁদ ড়ুবে গেছে। চারদিক অন্ধকার। তারপরও অন্য এক আলোয় উকিল বাড়ি আলোকিত। এই আলোর উৎস প্রকৃতি জানে। মানুষ জানে না। প্রকৃতি তার সব রহস্য কখনোই প্রকাশ করে না!
এক কথায় অসাধারণ। স্যার হুমায়ূন আহমেদের রচনা আমি যতো পড়ছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি। একটা মানুষ এতো চমৎকার ভাবে কিভাবে লেখেছেন!!
উপন্যাসের চরিত্র আমার কাছে পুরো বাস্তব মনে হয়েছে। প্রতিটি চরিত্রের সাথে এমন ভাবে মিশেছি যেনো তারা সবাই আমার পরিচিত কেউ। আর সব ঘটনা আমার সামনে বাস্তবায়িত হয়েছে।