১৪. বড় চাচাকে নিয়ে যেতে

বড় চাচাকে নিয়ে যেতে মিথির দুই মামা এসেছেন।

বাড়ির সামনে একটা পিকআপ এবং একটা ডাইহাট গাড়ি দাঁড়িয়ে। পিকআপে জিনিসপত্র ভোলা হচ্ছে। ব্যাপারটা ঊর্মি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখল। তার খুব খারাপ লাগল। সে ভেতরে এসে বিজুকে বলল, ওরা সবকিছু নিয়ে চলে যাচ্ছে।

বিজু বলল, যাক না। তোর এত মাথাব্যথা কীসের?

মিথি-তিথিরা খুব কান্নাকাটি করছে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখার কোন দরকার নেই। বড় আপা কোথায়?

ঐ বাড়িতে।

যা, আপাকে ডেকে নিয়ে আয়।

ঊর্মি বলল, আমি পারব না। এইরকম কান্নাকাটির মধ্যে আমি যাব নাকি?

বড় চাচা ভীষণ হৈ চৈ করছেন। তিনি কিছুতেই যাবেন না। ক্রমাগত বলছেন—ওরা আমাকে নিয়ে মেরে ফেলবে। খুনীর দল আমাকে নিয়ে মেরে ফেলবে। আমাকে নিয়ে খুন করবে। খুন করতে নিয়ে যাচ্ছে।

মিথির দুই মামা খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। গাড়ির দুই ড্রাইভার তাঁর হাত ধরে তাঁকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তিনি গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছেন। তাঁকে ঘর থেকে বের করতে ড্রাইভার দু জনকে খুব বেগ পেতে হল।

মিথির বড় মামা বিরক্ত গলায় বললেন, এই সামান্য কাজে তোমরা সারা দিন লাগিয়ে দিচ্ছ। হাত দুটা শক্ত করে ধর না কেন?

বাড়ি থেকে বের করে আনার পর বড় চাচা কিছুক্ষণের জন্যে চিৎকার করলেন। তারপর শিশুদের মতো শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন। বিজুকে ডাকতে শুরু করলেন, ও বিজু, বিজুওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ও বিজু,–বিজু…..। আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিজু…….ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

মিথির ছোট মামা বললেন, এক জন কেউ মুখটা চেপে ধর। চিৎকার সহ্য করা যাচ্ছে না। আহ, কি—যে যন্ত্ৰণা।

বড় চাচাকে পিকআপে ওঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ড্রাইভার দু জন পেরে উঠছে না। সাহায্যের জন্যে মিথির বড় মামা এগিয়ে গেলেন। বড় চাচা ফুঁপিয়ে ডাকতে লাগলেন, ও বিজু, বিজু…….

বিজু বেরিয়ে এল। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল বড় চাচার দিকে। তারপর গর্জন করে উঠল, একটা মানুষ যেতে চাচ্ছে না, তারপরও আপনারা তাঁকে জোর করে নিয়ে যাবেন? পেয়েছেন কী আপনারা? মগের মুলুক নাকি?

বড় চাচা কান্না থামিয়ে উঁচু গলায় বললেন, ঘুষি মেরে ওদের নাক ফাঁটিয়ে দে বিজু। কথায় কাজ হবে না। কথার মানুষ এরা না।

বিজু বলল, যান, রেখে আসুন।

মিথির বড় মামা বললেন, কি বলছ তুমি? চিকিৎসা করাতে হবে না? এখানে চিকিৎসাটা কে কবে?

আমরা করব। আমরা কি পানিতে ভেসে গেছি নাকি? একটা লোক ভয় পাচ্ছে, যেতে চাচ্ছে না, তবু তাকে নিয়ে যাবেন। পেয়েছেনটা কী?

বড় চাচা বললেন, খামাখা কথা বলে সময় নষ্ট করছিস বিজু। ঘুষি দিয়ে নাক। ফাটিয়ে দে। এরা কথার মানুষ না।

বিজু বলল, যান রেখে আসুন। নইলে অসুবিধা হবে। পাড়ার লোক ডেকে থোলাই দিয়ে দেব।

বড় চাচা আনন্দে হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে বললেন, দেরি করিস না, ধোলাই দিয়ে দে। রাম থোলাই দিয়ে দে।

 

বড় চাচাকে আবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিথি মিথিরা গাড়িতে উঠে বসেছিল, তারা নেমে আসছে। মালপত্র নামানো হচ্ছে। ঊর্মি বারান্দায় আছে।

বিজু একদিন ইলেকট্রিশিয়ানের সামনে তার গালে চড় মেরেছিল—এই অপরাধের জন্যে কোনোদিন সে বিজুকে ক্ষমা করবে না বলে ভেবে রেখেছিল। আজ ক্ষমা করল। সে এগিয়ে গেল জিনিসপত্র নামানোর কাজে বিজুকে সাহায্য করবার জন্যে। বড় চাচা এখন বেশ স্বাভাবিক। তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। সেখান থেকে চেচিয়ে বলছেন, কাচের জিনিস আছে। আস্তে নামা! এরা কোন একটা কাজ যদি ঠিকমতো করতে পারে। বিজু উৰ্মিটাকে একটা ধমক দে তো—কি রকম টানাটানি করছে। ভাঙবে না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *