চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
০১.
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, বসন্ত যেন আগে এসেছিলো রাজনগরে। এখন তো চৈত্র এসে গেলো। অনাবৃষ্টিতে নদীর জলও শুকিয়ে উঠছে। কিন্তু দোলও এসে পড়েছে। ঘাটের কাছে সকালের থেকেই যেন প্রচ্ছন্ন একটা জ্বালা অনুভব করা যায়। খরার কথা উঠে পড়ছে। স্মরণকালে এমন হয়নি।
সেদিনটা অন্যদিনের মতোই। বাগচীকে রাজবাড়িতে যেতে হয় বলে সে বরং বেশ সকালেই চরণের ডিসপেনসারিতে যায়। কিন্তু রোগী আজকাল যেন কমেছে। বাগচী বেশ গম্ভীরভাবেই বললো–দ্যাখো, চরণ, বাদলা ভাব না থাকায়, জ্বর, সর্দি, পেটের পীড়া কম। চরণও তেমন গম্ভীরভাবেই মন্তব্য করলো–এতো শুকনোবসন্ত, বসন্তনা লেগে যায়। বাগচী বললো–রোগটার সঙ্গে কিন্তু ঋতুর যোগ নেই।
এটা তো দুজনেই লক্ষ্য করছে রোগীর সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ মরেলগঞ্জের রোগী গত কয়েকদিনে একটিও আসেনি। সেখানে পুরাতন রোগের রোগী কোনো অঞ্চল থেকেই কমনয়। বাগচীর একবার মনে হলো সে জিজ্ঞাসা করে, মামলার খবর চরণ আর কিছু শুনেছে কিনা। কিন্তু তার বরং এই অদ্ভুত অনুভূতি হলো, ডানকান মামলা করছে, উকিল ব্যারিস্টারে অনেক খরচ করবে, তার চাইতেও বড়ো কথা সে অনেকগুলি লোককে হলফ করে ঈশ্বরের নামে মিথ্যা বলতে বাধ্য করবে। এই সময়ে একটি অপরিচিত ভীত চেহারার বালককে চরণের বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে বাগচী তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলো। চরণ বললো, অমর্ত্যর ছেলে। অমর্ত্যর স্ত্রী কন্যা এখনো মরেলগঞ্জে আছে। দোলের পূজা করে তারা রাজনগরে চলে আসবে। কৃষ্ণানন্দও সেদিন থেকেই উঠে আসবে। আপাতত তারা চরণের বাড়ির কাছেই তারই জমিতে ঘর তুলে নেবে।
বাগচী বললো–ওদের তো মরেলগঞ্জের সঙ্গে কোনো যোগই থাকলো না।
রাজবাড়ির দিকে যেতে যেতে বাগচীর মনে হলো, পড়া টাইমসগুলোকে ফেরত দিয়ে নতুন টাইমস আনতে হয়। সুতরাং সে কুঠিতে ফিরে তার স্টাডিতে ঢুকলো। কেট এখন খানিকটা সময় বিশ্রাম করে। অনেকসময়ে বাগানে গিয়ে বসে।
সুতরাং তার খোঁজ না করেই সে স্টাডি থেকে বেরিয়ে আসছিলো। এই সময়ে তার মনে হলো, পার্লারে কেউ কথা বলছে। হয়তো রাজকুমার–এই ভেবে উঁকি দিয়ে সে অবাক হলো।
পার্লারে রাজকুমারের বদলে ও সুলিভান। বোঝা যায় সে কিছুক্ষণ এসেছে। তার সামনে ধোঁয়াচ্ছে এমন কফির কাপ। বাগচী হাসিমুখে বললো–বনাত কিনছো নাকি, কেট? নাকি সিল্ক, এখন গরম পড়বে তো?
কেটও হেসে বললো–না, মিস্টার ও সুলিভানের সঙ্গে গল্প করছিলাম।
–বেশ, করো। আমি রাজবাড়িতে যাচ্ছি। বলে বাগচী বেরিয়ে গিয়েছিলো।
লাঞ্চে কেট বললো, ভারি মজার কথা, বাগচী, ওসুলিভান বলেই ফেলো, আমিই নাকি প্রথম ইউরোপীয়ান মহিলা যে তাকে বসতে বলেছে, নিজে থেকে কথা বলেছে, বাড়িতে ঢুকতে আমন্ত্রণ করেছে।
বাগচীর মন তখন প্লেটে, মনের অন্য অংশে বোধ হয় কেটের সান্নিধ্য ও রাজকুমারের ফেনসিং অভ্যাসের কথা সমানভাবে। সে মনের উপরিভাগ থেকে বললো– হেসে, তাহলে দ্যাখো হেট দা সিন, নট দা সিনার–এই উপদেশটা কত কম লোকে মানে। তাছাড়া দেখা যাবে হয়তো ও সুলিভান দরিদ্র বটে, পিতামাতার সিনের ফলভাগী, নিজে সিনার নয়।
.
দোল-উৎসবের আগের দিন ছিলো সেটা। রাজবাড়িতে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়েছে। রানী নয়নতারাকে বললেন, তোমার কাজ শেষ হতে চায় না। বিকেলে বেড়াতে যাবে এমন সময় হয় না। তুমি কি নতুন জেটি ছাড়া আর কিছু দেখেছো? কাল সন্ধ্যার পরে শব্দ শুনে জানা গেলো সেই অ্যালবেট্রস জাহাজ নাকি আবার ভিড়েছে ঘাটে। ভোররাতেও তার ভো শুনলাম। নয়নতারা তো বুঝতেই পারছে, রানীর বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা। সে বললো, পালকী দিতে বলবো রানীমা?
রানীর সেদিন হাতি পছন্দ হলো। তারা দুপুর শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়লেন। তাতে অসুবিধা হলোনা। টোপর-হাওদার চারদিকের জানলার মাথায় বাইরে ছড়ানো ঢাকনা থাকে, জানলায় রেশমের পর্দাও। রানী সেদিন জয়নালকে পছন্দ করেছিলেন। অনেকটা উঁচুতেই সুতরাং সেই হাওদা। খানিকটা দূরে গিয়েই রানী বললেন–হাওয়া দিচ্ছে কিন্তু এখানে।
সেই বিকেলে অনেকটা সময় তারা বেড়ালেন। নতুন জেটিতে খানিকটা দূরে থেকেই একটা গাছতলায় হাতি থামিয়ে তাঁরা অ্যালবেট্রসকে দেখলেন। রানী বললেন, কত। জোরে বা চলে! যাই বলো বাপু, ইংরেজদের যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। একেবারে দাগাবাজ নয়।
নয়নতারার হঠাৎ মনে হলো, এটা কিন্তু সুলুপ নয়। দু-চারটে বন্দুকের গুলিতে এটা বানচাল হয় না।
রানীও বললেন–আচ্ছা, নয়ন, এটা পতাকা নয়? ওর নামই কি ইউনিয়ন জ্যাক?
সেদিন রানীর শখ হলো ফরাসডাঙার পথে ঘুরে বেড়াতে। মন্দিরের পাশ দিয়ে তারা ফরাসডাঙার প্রথম পথগুলোকে দেখে দেখে বেড়ালেন। অবশেষে যখন বিকেল হয়ে গিয়েছে রানী মাহুতকে বললেন–এদিকে একটা ডিয়ার পার্ক ছিলো। চেনো? নয়নতারাকে বললেন, জানো নয়ন, জমিটা চারপাশের জমি থেকে বেশ উঁচু। একসময় হরিণ থাকতো, এখন আর নেই। নয়নতারা কৌতূহল প্রকাশ করলে, রানী হেসে বললেন, কী জানি, খেস্টান ততা। নিজেই খেয়েছিলো হয়তো।
নয়নতারা বললো–দেখুন, রানীমা, কত পাখি! হাঁস নয় তো? নাকি বক?
রানী দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক চাইলেন। হাতিটা তখন কয়েক পা মাত্র চলেছে। নয়নতারা তার দিকের জানলা দিয়ে ঝুঁকেছিলো,হঠাৎমুখ সরিয়ে আনলো, বললো–রানীমা, সাহেব যে!
ততক্ষণে রানীমার চোখেও পড়েছে। হাতিটা এখন যেখানে তা থেকে স্পষ্টই তিন চারজন শ্বেতাঙ্গকে ডিয়ার পার্কের টিলার কাছে দেখতে পাওয়া গেলো। রানীমা হাতিকে গাছের আড়ালে নিতে বললেন।
নয়নতারা জিজ্ঞাসা করলো–অ্যালবেট্রসের নাকি? চড়ুইভাতি করছে?
রানী বললেন, সোভান, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, এবার ফিরে চলল।
.
সেদিন সন্ধ্যার পর রাজকুমারের কাছে বিদায় নিয়ে বাগচী রাজনগরে অগ্রগতির কথা ভাবছিলো। রাজকুমার বলেছিলো, গ্রামের পাশ দিয়ে রেললাইন গেলে গ্রামের উন্নতি হয় কিনা, হলে তা কেন হবে? বাগচীর মনে হচ্ছিলো সে ভালো যুক্তি দিতে পারেনি। কিন্তু কথাটা উঠেছিলো সন্ধ্যায় বাতাসে ভেসে আসা স্টিমশিপের হর্ন থেকে। রাজকুমার জিজ্ঞাসা করেছিলো, ওরা কি এখন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে নিয়মিতভাবে? তাহলে তো একটা স্টেশনও করতে হয় ওদের। সেই স্টেশন থেকেই রেলের কথা উঠেছিলো।
চিন্তা বিচিত্র গতি নিয়ে থাকে। রাজনগরের অগ্রগতির থেকে বাগচীর মন চরণদের সমস্যায় চলে গেলো। বিষণ্ণ মনে সে ভাবলো, ভালো হবে বলে যা কিছু করেছে তার ফলেই তারা আরো বিপন্ন হয়ে পড়লো। অন্তত দুটো পরিবারকে উদ্বাস্তু হতে হলো।
তার এরকম মনে হলো, যা তার সাধ্যাতীত ছিলো তা করতে গিয়েই এই বিপত্তি। তার এরকমও মনে হলো, চরণের চরিত্রে অনেকখানি ছিলো আদর্শবাদ। সেই আদর্শবাদ এরপরে আর কখনো মাথা তুলতে পারবে কি? এ অবস্থায় তার এরকমও মনে হলো, পাদরির পক্ষে বাইবেলের বাইরে যাওয়াই ভুল হয়েছে।
সে রাত্রিতে ডিনারের আগে পরে সে চিন্তা করার জন্য অনেকক্ষণ স্টাডিতে বসে রইলো।
তার মনে পড়লো রাতের পর রাত জেগে মেমোর্যান্ডামগুলোকে তৈরী করেছিলো। সে কিছু পড়ার জন্য বুকশেলফটাতে খুঁজলো কিছুক্ষণ, কিন্তু কিছুই যেন পছন্দ হলো না। বরং লেখার অভ্যাসটাই তাকে প্ররোচনা দিতে থাকলো।
হঠাৎ বুদ্ধিটা মাথায় এলো তার। সে অস্ফুটস্বরে বললো–না, চরণ, আদর্শবাদের মৃত্যুটা অত সহজে মেনে নেওয়া যায় না, যায় কি? না, চরণ। তুমি তো তাহলেও রোগ সারাবে, কেমন কিনা?
সে আর একটু ভাবলো। মজা পেয়ে মিটমিট করে হাসলো। নিজেকে বললো, এতক্ষণ বুদ্ধিটা আসেনি।
এতেই প্রমাণ হয় আজকাল তেমন তীক্ষ্ণ করে সে ভাবে না আর। সে উঠে ডায়েরি ক্যালেন্ডার খুলে তারিখ খুঁজলো। গুড ফ্রাইডের তারিখটাকে পেয়ে মনের আনন্দে হেসে ফেলো। সেই পুনরুত্থানের সূচনা নয়? যখন আদর্শবাদ মৃত্যুর অতীত হয়? আঙুলে গুণে দেখলো গুড ফ্রাইডের আর পাঁচদিন বাকি।
সে কাগজ কলম টেনে নিয়ে তার চেয়ারে বসে পড়লো। পারতেই হবে, নিজেকে বললো–না পারলে চলবে কেন? সে মনে মনে চরণকে বোঝালো, চিকিৎসা তুমি ভালো শিখেছে বটে, কিন্তু ইংরেজি মেটেরিয়া মেডিকা বুঝতে তো অসুবিধা হয়ই। বাংলায় হলে? আপাতত বারোটা পলিস্টে।
বাগচী পাঁচদিনে বারোটা প্রধান ওষুধের রোগলক্ষণ–নিজের অভিজ্ঞতা, এবং মেটেরিয়া মেডিকার অনুবাদের সাহায্যে লিখতে শুরু করলো।
সেদিন রাত এগারোটার সময় কেট এসেছিলো একবার খোঁজ নিতে। বাগচী হেসে বললো, যাচ্ছি ডারলিং, কিছুই না। প্রকৃতপক্ষে গুড ফ্রাইডের কথা মনে হলো। তুমি যাও, আসছি এখনই।
.
০২.
সকালটা অন্যদিনের মতোই শুরু হয়েছিলো চরণের। বনদুর্গা জল পান তামাক দিয়ে বললো, আজই অমর্ত্যমামাদের শেষ দোল মরেলগঞ্জে, তুমি তোমার ছেলে, আর অমর্ত্য মামার ছেলেকে নিয়ে একবার যাও। চরণ এসব ব্যাপারে বনদুর্গার কথা সহজেই মেনে থাকে। কিন্তু আজ সে বললো–তার মন ভালো লাগছে না। দোলের আর আনন্দ কোথায়?
চরণ যখন কৃষ্ণানন্দের বাড়ির কাছাকাছি তখন বেলা দশটা বাজে। অন্যান্যবার সে কি এরকম সময়ে আসে, কিংবা আরো আগে? অন্যান্যবার এ সময়ে মৃদঙ্গের শব্দ শোনা যায়। সে ভাবলো, লজ্জা হতেই পারে। মানুষ যখন কেবলই হেরে যেতে থাকে তখন তার তো মনে হয়ই আমার আবার উৎসব কেন? আর আজ কিনা মদন-বিমোহন যাঁর রূপ, তাকে। রং দিয়ে, ফুলের সৌরভ দিয়ে সাজাবে। বোধ হয় চুপচাপ ফিরে যাওয়াই ভালো।
অমর্ত্যর বাড়ি আগে পড়ে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিঃসাড় দেখে সে ভাবলো, সকলেই তাহলে কৃষ্ণানন্দের বাড়িতে পূজার কাজে। সে নিজেকে বোঝালো, তা ভালো, বিপদে একত্র হতে হয়। কৃষ্ণানন্দর বাড়িতে মানুষের সাড়া পাওয়া গেলো। তার বাইরের দিকের ঘরেই বেশ কয়েকজন মানুষ। চরণ ঢুকতে ঢুকতে দেখলো কৃষ্ণানন্দ ছাড়াও পাড়ার দু-চারজন পুরুষ আছে, একপাশ ঘেঁষে কৃষ্ণানন্দর পরিবার ছাড়াও স্ত্রীলোকও কয়েকুজন। চরণকে ঢুকতে দেখেই তাদের একজন হু হু করে কেঁদে উঠলো। এসবক্ষেত্রে মেয়েদের দিকে চাওয়া হয় না। কিন্তু আনন্দের দিন তো বটে, তখন এ রকম হলো কেন? যেন এই ভেবে চোখ তুলে চরণ দেখলো, যে কেঁদে উঠলো সে অমর্ত্যর স্ত্রী বটে।
কৃষ্ণানন্দ বোধ হয় নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে যদিও সেই প্লাবনে পাড় ভেঙে পড়া থেকে বাঁচানোর মতো মহীরুহ সে নয়। সে তো নিজেই থরথর করে কাঁপছে। সে বললো–দ্যাখো, চরণ, এই চিঠিটা অমর্ত্যর বিছানায় ছিলো।
ফাঁকা কাগজে একছত্র লেখা : চললেম, সখি। অমতাঁর বাইরেটা শক্ত ছিলো, বলবান ছিলো সে, কিন্তু রসিকতা ছিলো নিজেদের মধ্যে। এটা তার স্ত্রীকেই লিখে থাকবে। কিন্তু এই দুঃসময়ে এটা কী রকম রসিকতা? স্ত্রী বলেছে, অমর্ত্য তার মাথা খারাপ হওয়ার আগে কখনো কখনো তাকে সখি বলতো বটে। তাই বলে ভোররাত থেকে মানুষটার দেখা নেই! তাছাড়া কৃষ্ণানন্দ কোমরের কাপড় থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বার করে বললো, আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম চরণ, এই চিঠিটা তোমাকে লেখা ইংরেজিতে, তাই আমি পড়িনি। চোপ, ফের কাদছো তোমরা! এই বলে ঘরের স্ত্রী পুরুষকে ধমকাতে গিয়ে কৃষ্ণানন্দ নিজেই ভ্যাক করে কেঁদে ফেলো।
কৃষ্ণানন্দ ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো–গোপালদার এক কিষাণ কুতঘাট থেকে এদিকে। আসছিলো, তার হাতে এই চিঠিটা দিয়েছে সেই ও সুলিভান।
চিঠিটা ইংরেজীতে লেখা নয়, চরণকে লেখাও নয়। এতক্ষণ এই মিথ্যা ছলনায় কি কৃষ্ণানন্দ এই বিপন্ন বিহ্বল লোকগুলিকে শান্ত রাখছিলো? সে কি ভেবেছিলো এত বড়ো দুর্ভাগ্যের কথা প্রকাশ করে শত্রুকে হাসতে দেওয়া যায় না? তার হয়তো মনে হয়েছিলো কিছু করতে হলে চরণের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার।
অমর্ত্য লিখেছে :
কৃষ্ণদাদা, তুমি আমাকে মানুষ করেছো। তোমাকে ছেড়ে যেতেও কষ্ট। সাহেব বলেছে সে দেশ নতুন, সেখানে নীলচাষ নাই। জমি বিক্রির টাকা রাজকুমারের কাছে গচ্ছিত আছে। তা দিয়ে বউ-ছেলেকে…(লেখাটায় এখানে জলের দাগ)…চরণকে বলো সে যেন আমাকে না খোঁজে। মাঝরাতেই আমরা দূরে চলে যাবো। এইটুকু শুনেছি, সে দেশের নাম মরিস। অ্যালবেট্রস…(এখানে লেখায় জল পড়েছে, তা মোছর চেষ্টায় লেখাও মুছে গিয়েছে)।
চরণ লাফিয়ে উঠে ছুটতে শুরু করলো। সে তো জানেই কুতঘাটের নতুন জেটিতে অ্যালবেট্রস বাঁধা আছে।
সে কুতঘাটে পৌঁছে অ্যালবেট্রসকে দেখতে পেলোনা। একটা জেলেনৌকো ভিড়লো। চরণ তাকে জিজ্ঞাসা করতেই জানলো মাঝরাতে মাইলচারেক আঁটিতে তারা কলের জাহাজকে পেরিয়েছে বটে।
চরণ ফোঁপাতে লাগলো। সে বুঝতে পারলোনা যাকাঁপছে, ভেঙে পড়তে চাচ্ছে, তাকে চোখে দেখতে দিচ্ছে না, তা আলো ঢালা নদীর জল কিনা।