১৪. ফজরের নামাজ শেষ করে

ফজরের নামাজ শেষ করে সম্রাট হুমায়ূন কিছুক্ষণ ঘুমান। দিনের কাজকর্ম শুরু হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর।

আজি নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছে। সম্রাট নামাজ শেষ করে বাগানে গেছেন। তার মন প্রফুল্লা। গত রাতের শেষ অংশে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছেন। শেষরাতের স্বপ্ন অর্থবহ। একজন তফসিরকারীকে দিয়ে স্বপ্নের অর্থ করাতে হবে।

স্বপ্নে তিনি তাঁর পিতা বাবরকে দেখেছেন। পাদশাহ বাবর ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছেন। পেছনে পেছনে যাচ্ছেন হুমায়ূন। জায়গাটা মনে হলো কাশ্মীরের কোনো বাগান। কাশ্মীর পাদশাহ বাবরের অতি প্রিয় স্থান। কাশ্মীরকে তিনি বলতেন, আমার ব্যক্তিগত বাগিচা।

ঘোড়ায় যেতে যেতে একটা জলা জায়গার কাছে বাবর থামলেন। ঘোড়া থেকে নামলেন না। হুমায়ূনকে বললেন, তাকিয়ে দেখো কী সুন্দর জলপদ্ম! যাও এই পদ্মটি তুলে আনো। আমি এত সুন্দর জলপদ্ম কখনো দেখি নি।

পিতার আদেশ শুনে হুমায়ূন ঘোড়া থেকে নামলেন। পদ্ম আনতে তাকে পানিতে পা ফেলতে হলো। পানি বরফশীতল। কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ।

স্বপ্নের এই পর্যায়ে সম্রাটের ঘুম ভাঙল। অনেকদিন তিনি পিতাকে স্বপ্নে দেখেন না। তাঁর চেহারাও হুমায়ূনের কাছে অস্পষ্ট হয়ে আসছিল। স্বপ্নে পিতাকে অতি স্পষ্ট দেখে হুমায়ূনের মন আনন্দে পূর্ণ হয়েছে। তিনি নিশ্চিত এটি একটি ভালো স্বপ্ন।

লাহোরের এই বাগানে জলপুষ্প ফোটার জন্যে একটি জলাধার করা হয়েছে। সম্রাট হুমায়ূন জলাধারের দিকে যাচ্ছেন। তাঁর মন বলছে জলাধারে তিনি জলপদ্ম ফুটে আছে দেখবেন।

খুব কাছ থেকে কেউ একজন বলল, আমি কি সম্রাটের সঙ্গে কিছুক্ষণ থাকতে পারি? অতি জরুরি কিছু কথা আমার সম্রাটকে বলা দরকার।

সম্রাট ঘাড় ফিরিয়ে বৈরাম খাঁকে দেখলেন। বৈরাম খাঁকে চিন্তিত এবং বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। হুমায়ূন বললেন, আপনার সঙ্গ আমার সবসময় প্রিয়। আসুন আমরা দুজন জলপদ্মের সন্ধানে যাই। জরুরি। আলাপের জন্য সময় অনেক পাওয়া যাবে।

বৈরাম খাঁ এগিয়ে এলেন। হুমায়ূন বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে বিনিদ্র রজনী কেটেছে। বলুন জরুরি কথা।

আমি একটি পত্র নিয়ে এসেছি।

হুমায়ূন বললেন, পত্র কে পাঠিয়েছে? শের শাহ?

না, পত্রটি লেখা হয়েছে শের শাহকে। লিখেছেন আপনার ভ্রাতা মীর্জা কামরান।

হুমায়ূন জলাধারের দিকে যাচ্ছিলেন, বৈরাম খাঁর কথায় তার থমকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা। তিনি থমকে দাঁড়ালেন না। জলাধার পর্যন্ত গেলেন। সেখানেও জলপদ্ম ফুটেছে। স্বপ্নের মতো সুন্দর না হলেও সুন্দর। একসঙ্গে অনেকগুলি ফুটেছে বলেই সুন্দর। স্বপ্নে একটা জলপদ্মই ছিল। হুমায়ূন আনন্দিত গলায় বললেন, বাহ্‌!

বৈরাম খাঁ বললেন, পত্রটা কি এখন পড়বেন?

হুমায়ূন বললেন, এই অপূর্ব দৃশ্য কিছুক্ষণ দেখতে দিন, তারপর পত্র পাঠ করব।

দীর্ঘনিঃশ্বাস চাপতে চাপতে বৈরাম খাঁ বললেন, অবশ্যই। আপনি দৃশ্য দেখুন।

 

শের শাহকে লেখা মীর্জা কামরানের পত্র—

দিল্লীর মহান সম্রাট, জগৎ স্বীকৃত বীরপুরুষ মহানুভব শের শাহ।

আমি দীর্ঘ পত্রালাপে যাচ্ছি না। আমার ভাই হুমায়ূন মীর্জা এই বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। মূল কথায় যাই। আমি আমার ভাইকে বন্দি করে আপনার হাতে তুলে দিতে রাজি আছি। বিনিময়ে আমি কী পাব তা দূত মারফত জানালে খুশি হব।

ইতি
আপনার অনুগত
মীর্জা কামরান

হুমায়ূন ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে আবারও জলাধারভর্তি পদ্মের দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, বৈরাম খাঁ, আপনি কি এই ফুলগুলির আয়ু জানেন?

বৈরাম খাঁ বললেন, আমি সৈনিক মানুষ। আমার চিন্তা আমার মহান সম্রাটের এবং আমার সৈন্যদের আয়ু নিয়ে।

হুমায়ূন বললেন, অপূর্ব এই ফুল মধ্যরাতে ফোটে এবং মধ্যদুপুরে বুজে যায়। সাত দিন এরকম চলে, তারপর এর আয়ু ফুরায়।

সম্রাট, আমরা কি মূল বিষয়ে আসতে পারি?

মূল বিষয়ে যেতে মন চাচ্ছে না বলেই পুষ্প বিষয়ে কথা।

অবস্থা যে গুরুতর তা কি বুঝতে পারছেন?

পারছি।

আপনার কি মনে হয় না। এই মুহূর্তেই কামরান মীর্জাকে বন্দি করা প্রয়োজন?

তা কি সম্ভব?

বৈরাম খাঁ বললেন, গত রাতে শেষ প্রহরে আমি তাকে বন্দি করেছি। আপনার হুকুম পাওয়ামাত্র তাকে আপনার সামনে উপস্থিত করা হবে।

সম্রাট বললেন, শাবাশ।

বৈরাম খাঁ মাথা নিচু করে প্রশংসা গ্রহণ করলেন। হুমায়ূন বললেন, কেউ চমৎকার কোনো কাজ করলে আমরা বলি শাবাশ। কেন বলি জানেন?

না।

পারস্য-সম্রাট শাহ আব্বাসের কারণে বলি। শাহ আব্বাস সারা জীবন প্রশংসনীয় সব কাজকর্ম করে গেছেন। সেখান থেকেই শাবাশ শব্দটি এসেছে।

বৈরাম খাঁ বললেন, আমি সৈনিক মানুষ। এত কিছু আমার জানার প্রয়োজন নাই। যুদ্ধবিদ্যা জানা প্রয়োজন। তারপরেও সম্রাটের কাছ থেকে শিক্ষামূলক প্রতিটি বিষয় আমি মনে রাখি। এখন অধীনের আপনার প্রতি দুটি বিশেষ অনুরোধ আছে।

আপনার যে-কোনো অনুরোধ রাখা হবে। অন্যায় অনুরোধ হলেও আমি রাখব। বলুন কী অনুরোধ?

আমার দুটি অনুরোধ-কামরান মীর্জাকে বিদ্রোহ এবং গোপন ষড়যন্ত্রের শান্তি মৃত্যুদণ্ড দেবেন। এবং এই দণ্ডাদেশ আজ সূর্যাস্তের আগেই কার্যকর করবেন।

দ্বিতীয় অনুরোধ কী?

যার কারণে আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানতে পারি তাকে পুরস্কৃত করবেন।

সে কে?

তার নাম হরিশংকর।

হরিশংকরকে পুরস্কৃত করা হবে। তাঁকে আমার সামনে উপস্থিত করুন।

কামরান মীর্জাকে কখন উপস্থিত করব?

আসরের নামাজের পর। বৈরাম খাঁ বললেন, আমি কি আশা করতে পারি, মাগরেবের নামাজের আগেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে?

হুমায়ূন জবাব দিলেন না।

বৈরাম খাঁ বললেন, হাতির পায়ের নিচে মস্তক পিষ্ট করে মৃত্যুই হলো এমন অপরাধীর নিম্নতম শাস্তি।

হুমায়ূন এবারও কিছু বললেন না।

আমি শাস্তির ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে রাখব। আপনার আদেশ পাওয়ামাত্র শাস্তি কার্যকর হবে।

 

কামরান মীর্জাকে বন্দি করা হয়েছে—এই খবর অন্তঃপুরের রাজমহিষীরা জেনেছেন। কামরান মীর্জার মা গুলারুখ বেগম আতঙ্কে অস্থির। তিনি জানেন তাঁর ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের এই শাস্তির বিধান। মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু তিনি নিতে পারছেন না। তিনি কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারাচ্ছেন। দুপুরের দিকে খবর পাওয়া গেল সম্রাট হুমায়ূন এসেছেন, গুলারুখ বেগমের সঙ্গে দেখা করতে। গুলারুখ বেগমের উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। দুজন দাসী তাকে ধরাধরি করে সম্রাটের সামনে উপস্থিত করল।

হুমায়ূন বললেন, মা! আপনি নিশ্চয়ই কামরান মীর্জার কর্মকাণ্ড বিষয়ে অবগত হয়েছেন?

গুলারুখ বেগম হাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন।

হুমায়ূন বললেন, আপনার কি কামরান মীর্জার বিষয়ে কিছু বলার আছে? বাদ আসার তার বিচার বসবে।

গুলারুখ বেগম বললেন, অপরাধী অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে। আমার বলার কিছু নেই।

আপনার করুণ অবস্থা দেখে আমি ব্যথিত। আমি দুপুরে আমার সঙ্গে খাবার গ্রহণের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি কি আমার সঙ্গে খাবার গ্রহণ করবেন?

না।

হুমায়ূন বললেন, আল্লাহ্পাক আপনার মনের কষ্ট দূর করুক। আমিন।

 

কামরান মীর্জকে রাখা হয়েছে সাধারণ একটি তাঁবুর ভেতরে। তাঁর দুই হাত পেছন দিকে শক্ত করে বাধা। তাঁকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁবুর চারদিকে বৈরাম খাঁ’র অনুগত একদল ঘোড়সওয়ার সৈন্য। এদের নেতৃত্বে আছে সাদ মুহম্মদ। সে কামরানের সঙ্গে তাঁবুর ভেতর আছে।

কামরান মীর্জা বললেন, তোমার নাম কী?

সাদ মুহম্মদ।

কামরান বললেন, এটা আবার কেমন নাম! আমি তোমার নাম দিলাম। বাদ মুহম্মদ।

আপনার অভিরুচি।

আমার বাঁধন খুলে দাও। আমি জোহরের নামাজ আদায় করব।

বিশেষ বিশেষ অবস্থায় ইশারায় নামাজ পড়ার বিধান আছে। আপনার এখন সেই অবস্থা।

আমি ক্ষুধার্ত। আমার জন্যে দুপুরের খাবারের কী ব্যবস্থা?

সাদ মুহম্মদ জবাব দিল না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইল।

কামরান বললেন, তুমি ব্যাঙাচির কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আসো, আমাকে দুপুরের খাবার দেওয়া হবে কি না।

কাকে ব্যাঙচি বলছেন?

বৈরাম খাঁকে। ব্যাঙচি তার যথার্থ পরিচয়।

আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার হুকুম নেই।

সম্রাটের সামনে আমাকে কখন হাজির করা হবে?

জানি না। শুনেছি আসরের পর।

আমি আমার ভাইকে চিনি। আমার ভাই যখন শুনবেন আমাকে না। খাইয়ে রাখা হয়েছে তিনি রাগ করবেন। তুমি যাও, আমার খাবারের ব্যবস্থা করো।

আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্যে হাতি এবং পাথর প্রস্তুত করা হয়েছে। আমার উপদেশ, আপনি আহারের কথা চিন্তা না করে আসন্ন মৃত্যুর কথা চিন্তা করুন। এবং আল্লাহপাকের নাম নিতে থাকুন।

আমি তৃষ্ণার্তা। পানি খাব।

আপনার সামনে থেকে উঠে যাওয়ার হুকুম আমার নেই।

বাদ মুহম্মদ, তোর ধৃষ্টতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার মনে থাকবে।

 

হুমায়ূন আচার্য হরিশংকরকে ডাকে পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর সঙ্গে দুপুরের খাদ্য গ্ৰহণ করবেন। হরিশংকর নিরামিশাষী। তাঁর জন্যে ত্রিশ পদের নিরামিষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি ছোওয়া বাঁচিয়ে রেশমের আসনে আলাদা বসেছেন।

সম্রাট বললেন, আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।

হরিশংকর বললেন, আমার জীবন আমি আপনাকে নিবেদন করেছি। কাজেই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কিছু নেই।

আপনি কীভাবে জানলেন, কামরান মীর্জা শের শাহ’র কাছে পত্র পাঠিয়েছে?

সম্রাটের স্বার্থেই আমি কামরান মীর্জার আস্থাভাজন হয়েছি। আমি এই পত্রের বিষয়ে সরাসরি তার কাছ থেকে জানতে পারি।

আপনি একজনের বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন।

আমি যা করেছি সম্রাটের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে করেছি। সম্রাটের জন্যে যদি আরও হাজারজনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হয়, আমি করব।

আপনি খাদ্য গ্রহণ করছেন না। খাবার নাড়াচাড়া করছেন। কারণ জানতে পারি?

আমি একটি বিষয় নিয়ে কঠিন উদ্বেগের মধ্যে আছি বলেই আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণা লোপ পেয়েছে।

উদ্বেগের কারণ জানতে পারি?

শের শাহ বিশাল বাহিনী নিয়ে লাহোরের দিকে ছুটে আসছেন। এই বিশাল বাহিনীকে পরাস্ত করা এই মুহুর্তে সম্রাটের পক্ষে সম্ভব না।

এমন পরিস্থিতিতে আপনার পরামর্শ কী?

আমি অতি ক্ষুদ্র একজন। সম্রাটকে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তারপরও বলব সম্রাট যেন কান্দাহারের দিকে চলে যান।

পালিয়ে যেতে বলছেন?

হ্যাঁ। য পলায়তি স্ব জীবতি।

এর অর্থ কী?

এর অর্থ, যে পলায়ন করে সে বেঁচে থাকে।

 

মীর্জা কামরানকে সম্রাটের সামনে উপস্থিত করা হয়েছে। তাঁর কোমরের তরবারি গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই হাত শক্ত করে পেছন দিকে বাঁধা। সম্রাটের সামনে বন্দিদের এইভাবেই উপস্থিত করানোর রীতি।

কামরান কুর্নিশ করার চেষ্টায় সামান্য নিচু হলেন।

হুমায়ূন বললেন, আমার ভাইকে কেন তোমরা এভাবে আমার সামনে উপস্থিত করেছ? এক্ষুনি হাতের বাঁধন খুলে দাও। গলা থেকে তরবারি নামাও।

তা-ই করা হলো। সম্রাট উঠে এসে ভাইকে আলিঙ্গন করলেন। সম্রাট বললেন, আমার মহান পিতা মৃত্যুর আগে আমাকে বলেছেন, তুমি সবসময় ভাইদের দেখবে ক্ষমাসুন্দর চোখে। আমি তা-ই করছি। ভাই কামরান, এসো তুমি আমার ডানপাশে এসে বসো।

কামরান মীর্জা তা-ই করলেন। অসময়ের একটি তরমুজ এসেছিল। খোরাসান থেকে। সম্রাট নিজের হাতে সেই তরমুজের খণ্ড ভাইয়ের মুখে তুলে দিলেন। এমন আবেগঘন মুহূর্তে দরবারে ‘মারহাবা’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। কেউ মারহাবা ধ্বনি দিল না। সম্রাট ভাইকে বিশ্রাম নিতে পাঠালেন।

মধ্যরাতে বৈরাম খাঁ সম্রাটকে ডেকে তুললেন। দুটি দুঃসংবাদ আছে, সম্রাটকে জানানো প্রয়োজন। প্রথম দুঃসংবাদ, শের শাহ লাহোরের কাছাকাছি চলে এসেছেন।

দ্বিতীয় দুঃসংবাদ, মীর্জা কামরান কিছুক্ষণ আগেই তার সেনাবাহিনী নিয়ে কান্দাহার রওনা হয়েছেন। সম্রাট হুমায়ূনের সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ সৈন্য কামরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনজন ছাড়া বাকি আমীররাও তাই করেছেন।

হুমায়ূন বললেন, বৈরাম খাঁ, এর কারণ কী?

বৈরাম খাঁ বললেন, বিচারসভায় আপনার কর্মকাণ্ড দেখা হয়েছে আপনার দুর্বলতা হিসেবে। সবাই থাকে সবলের পক্ষে।

আমি কি দুর্বল?

আপনি অনেক বেশি সবল। এটা ধরার ক্ষমতা তাদের নেই।

হুমায়ূন বললেন, সবকিছুই তিনবার করে ঘটে। সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য আসে পরপর তিনবার। তুমি আমাকে দুটি দুঃসংবাদ দিয়েছ। এখন তৃতীয়টি দাও।

বৈরাম খাঁ বললেন, সম্রাট যদি কামরান মীর্জকে মৃত্যুদণ্ড দিতেন তাহলে সেই আদেশ দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়া ছিল। হাতি এবং হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট করার জন্যে পাথর ছিল। কামরান মীর্জা সেই পাথরে সাদ মুহম্মদকে হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট করেছেন।

সাদ মুহম্মদ কে?

সম্রাটের এবং আমার অতি অনুগত একজন। তার হাতেই কামরান মীর্জা বন্দি হয়েছিলেন।

বৈরাম খাঁ, আপনি কি নিয়তি বিশ্বাস করেন?

করি না। কিন্তু আপনি বললে করব।

সম্রাট দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি বলছি না। স্বয়ং আল্লাহপাক নিয়তির কথা বলেছেন। সূরা বনি ইসরাইলে বলা আছে, আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়াছি।

নিয়তির হাতে সম্রাট নিজেকেই সমৰ্পণ করলেন। স্ত্রী হামিদা বানু এবং অল্পকিছু অনুগতজন নিয়ে শুরু হলো তাঁর পথেপ্ৰান্তরে পালিয়ে থাকার দিন। তাকে তাড়া করে ফিরল। আরেক নিয়তির সন্তান শের খাঁ। ভুল বললাম, খাঁ না। তিনি এখন শের শাহ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *