১৪. পাথুরিয়াঘাটা
পরদিন। নিষ্ঠুর উদ্যতবজ্র নিয়তি যে এভাবে নেপথ্যে প্রতীক্ষা করছিল তা কেউ আশঙ্কা করেনি। অতর্কিতে নেমে এল সেই বজ্র পাথুরিয়াঘাটার প্রাসাদে। উৎসব-গৃহে মুহূর্তমধ্যে দেখা দিল শ্মশানের হাহাকার!
কর্তামশাই যে তাঁর কর্মময় জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়েছেন তা জানতে কারও বাকি ছিল না। মায়ের নিরঞ্জন সমাপনান্তে যে কর্তামশায়ের গঙ্গাযাত্রার আয়োজন হচ্ছে এ-কথা গোপন রাখার চেষ্টা হলেও বস্তুত সকলেরই জানা। সেজন্য মানসিকভাবে সকলে প্রস্তুত। কিন্তু এ কী হয়ে গেল! কেন, কেন এমনটা হয়?
প্রতিদিনের মতো প্রত্যুষে ব্রহ্মময়ী গিয়েছিল প্রাসাদ-সংলগ্ন উদ্যানে, পুষ্পচয়নে। হঠাৎ তার গগনবিদারী আর্তনাদ শুনে লোকজন ছুটে গেল। যা হবার নয়, তাই হয়েছে। পুষ্পবিতানে এক বিষধর সর্প দংশন করেছে বালিকাকে।
এ উদ্যানে সাপের উপদ্রব ছিল না। তাছাড়া কার্তিক মাস। এসময়ে সর্পকুল তাদের শীতকালীন যোগনিদ্রায় অভিভূত থাকে। কিন্তু—‘নিয়তি কেন বাধ্যতে?
ধরাধরি করে ওকে নিয়ে আসা হল বৈঠকখানায়। ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি। ওঝা, গুণীন, কবিরাজ! কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। দ্বিপ্রহরের পূর্বেই সব সব যন্ত্রণার অবসান হল।
গোপীমোহন যেন পাথর হয়ে গেলেন। অন্তঃপুরে ব্রহ্মময়ীর গর্ভধারিণী মূর্ছাগতা; কিন্তু সেখানে তাঁর কোন কর্তব্য নাই। পিসিমাতা ঠাকরুণ আছেন, বড়বাড়ির বৌঠানরাও দুঃসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন জোড়াসাঁকো থেকে। আত্মীয়-স্বজনেরা যথাকর্তব্য করছে। সংবাদটি গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছিল কর্তামশাইয়ের কাছ থেকে—সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বাবামশাই কী করছেন, জানেন না। গোপীমোহন প্রগাঢ় পণ্ডিত—সংসারের অনিত্যতা সম্বন্ধে তাঁকে অবহিত করতে যাওয়া বৃথা। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এল না কেউ। তিনি নিজেও কোন সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না।
“বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়…”!
জীর্ণানি? সে যে ছিল টাট্কা জুঁই ফুলের মতো তরতাজা! এ বাড়িতে সেই তো এসেছিল সবার শেষে! আজ কেন তাকে বিদায় নিতে হবে সবার আগে? কে দিয়েছে এই বিধান? পরম করুণাময়ী?
প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য শোভাযাত্রার বিরাট আয়োজন হয়েছিল। প্রতিবারই হয়। সারি সারি গো-গাড়িতে সঙ-সাজানো আছে। চলন্ত গো-শকটে পুতুলনাচের আয়োজন। গুদামঘর থেকে বার করা হয়েছে নয়-জোড়া তেরমুখী কারবাইড গ্যাসের ঝাড়। বাজনাদারেরা বায়না পেয়ে হাজির হয়েছে। বিচিত্র সাজে। এমনকি পথের ধারে ধারে সমবেত হয়েছে মানুষজন, যারা প্রতি বছর এসে বসে থাকে পথের ধারে–পাথুরেঘাটা ঠাকুরবাড়ির নিরঞ্জন শোভাযাত্রা দেখতে। কেউ ওঁর পরামর্শ নিতে এল না। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বড়দাই হুকুম দিলেন—শোভাযাত্রা হবে না। শাস্ত্রীয় বিধানে যেটুকু না করলেই নয়, তাই করা হবে। সন্ধ্যালগ্নে প্রতিমা নিরঞ্জন করে বাহকেরা ফিরে আসবে।
রাত্রেই ব্রহ্মময়ীকে নিয়ে যেতে হবে শ্মশানে।
কে-যেন এসে খবর দিয়ে গেল—বাবামশাই ডেকে পাঠিয়েছেন।
গোপীমোহন নিজেকে শক্ত করেন। অনিবার্য নিয়তিকে মেনে নিতে হয়। মনে পড়ে যায় বৃদ্ধের কথা। কী প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন তিনি! গতকাল অপরাহ্ণে উনি গোপন করতে চাইলেও বৃদ্ধ বুঝতে পেরেছিলেন—কবিরাজ-মশাই কী নিদান দিয়ে গেছেন। নিজেই বলেছিলেন, মায়ের নিরঞ্জন হয়ে গেলে গঙ্গাযাত্রার আয়োজন করিস, গুপী। কালীঘাটে।
বৃদ্ধ মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলেন, এমন সময় শেষ মুহূর্তে তাঁকে পেতে হল এই কুলিশ কঠোর আঘাত। দ্বিপ্রহরে পাথুরিয়াঘাটার রাজপ্রাসাদ যখন হঠাৎ বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল আর্ত ক্রন্দনরোলে তখন বৃদ্ধের বোধহয় বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে যায়। তিনি নিজে-নিজে পালঙ্ক থেকে নেমে পড়তে চান—কী-উদ্দেশ্য ছিল তা তিনিই জানেন—ভারসাম্য রক্ষিত হয়নি। পড়ে যান মেঝেতে। তারপর থেকে তাঁর বাম অঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত—বাম হস্ত ও বাম পদ!
ধীরপদে গোপীমোহন এসে দাঁড়ালেন পিতৃদেবের শয্যাপ্রান্তে।
বৃদ্ধ তাঁর ডান হাতে ধরলেন পুত্রের হাতখানি! আকর্ষণ করলেন নিজের দিকে।
গোপীমোহন এগিয়ে এলেন কাছে। বৃদ্ধ ওঁকে আকর্ষণ করলেন। মাথাটা টেনে নামিয়ে নিলেন নিজের বুকের উপর। আর আত্মসংযম করা সম্ভবপর হল না স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতের। পিতার পাঁজরসর্বস্ব বুকে মুখ লুকিয়ে হুহু করে কেঁদে ফেললেন।
বৃদ্ধ ওঁর কর্ণমূলে হঠাৎ অদ্ভুত একটা কথা বললেন। নিতান্ত পাগলের প্রলাপ : দিদিভাইকে যেন চিতায় তুলিনি গুপী! নরম শরীর! আগুনের তাপ সইবে না!
দর্পনারায়ণ বোধকরি প্রবেশ করেছেন তাঁর দ্বিতীয় শৈশবে! তাঁর আদরের নাতনি যে শীতাতপ রাজ্যের ওপারে চলে গেছে সে বোধটুকুও নেই!
.
বিধান দিলেন শিরোমণি-মশাই’ দু-দিক রক্ষা হল।
চিতায় না তুলে মরদেহ কীভাবে সৎকার করা যাবে? কবর তো দেওয়া যায় না। ওদিকে—হোক শিশুসুলভ চাপল্য—পিতার এই অযৌক্তিক শেষ আদেশ লঙ্ঘনই বা করেন কী করে? দু-দিক রক্ষা করে কুল-পুরোহিত বিধান দিলেন—সর্পদংশনে মৃত্যু হয় যার, তাকে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া শাস্ত্রসম্মত। তাকে দাহ করতে নেই। লক্ষ্মীন্দরের মরদেহ এভাবেই সৎকার করা হয়েছিল। অগত্যা।
কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না গোপীমোহন। তাঁর বিশ্বাস, এ প্রথাটি বর্জনীয়। এতে গঙ্গার জল দূষিত হয়ে যায়। তাছাড়া আগুনের উত্তাপ যার সহ্য হয় না সে কি সইতে পারে কাক-শকুনের বীভৎস আক্রমণ? কামট-কুম্ভীরের কদর্য দংশন! নিজ বুদ্ধি-বিবেচনা মতো তিনি জ্যাকবের মাধ্যমে আনিয়ে নিলেন একটি ছোট্ট কফিন। ব্রহ্মময়ীকে কফিনজাত করে ভাসিয়ে দেওয়া হল কলার ভেলায়। তখন গঙ্গায় জোয়ার এসেছে। ছোট্ট মেয়েটা কপিলমুনির আশ্রমের দিকে গেল না। এগিয়ে চলল উজানে, ঢেউয়ের দোলায় নাচতে নাচতে। ঠিক যেভাবে আলতা-পায়ে, নোলক দুলিয়ে সে সারা বাড়ি নেচে বেড়াত।
পরদিন আবার ডাক পড়ল দ্বিতলের কক্ষে—কর্তামশাই ডাকছেন।
ইতিমধ্যে দুজনেই কিছুটা সামলেছেন। দিন কারও অপেক্ষায় বসে থাকে না। ব্রহ্মময়ীর গর্ভধারিণীও উঠে বসেছেন। সংসারের কাজ—যেটুকু না করলে নয়—করা হচ্ছে। শুধু মাত্র একটি দুরন্ত মেয়েকে আর সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় না।
কর্তামশাই এবার যে-কথা বললেন তাও অপ্রত্যাশিত।
তিনি অনুভব করেছেন, তাঁর সময় হয়েছে। গঙ্গাযাত্রার আয়োজন এবার করা চলতে পারে। তবে কালীঘাটে নয়। মূলাজোড়ে!
মূলাজোড়ে? কেন?
বিচিত্র হেতু। পূর্বরাত্রে দর্পনারায়ণ স্বপ্নে তাঁর নাতনিকে প্রত্যক্ষ করেছেন। দিদিভাইকে উনি স্বপ্নে দেখেছেন প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর ললিতাসনে! সে তার দাদুকে জানিয়েছে—তার কোন যন্ত্রণা নেই, সে “ব্রহ্মময়ীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও বলেছে, সে মূলাজোড়ের শ্মশানঘাটে তার দাদাভাইয়ের জন্য প্রতীক্ষা করছে।
—দেরী করবেন না যেন দাদাভাই, ভাইফোঁটা নিতে হবে না?
হোক মৃত্যুপথযাত্রীর প্রলাপ, পিতার আদেশ জীবনে কোনদিন লঙ্ঘন করেননি। আজও করলেন না। এ ব্যবস্থা করা আর কঠিন কী?
বজরা করে রওনা দিলেন ওঁরা। সঙ্গে আরও দুটি নৌকা। তাতে আত্মীয়স্বজনেরা। হরি-সংকীর্তনের দল। শিরোমণি-মশাই, কবিরাজ-মশাই ইত্যাদিরা।
মূলাজোড়ে ছুটে গেল অশ্বারোহী ব্যবস্থাপক। ওঁরা উপনীত হবার পূর্বেই সব আয়োজন সম্পূর্ণ। সংবাদ পেয়ে মূলাজোড় গ্রামের ইতর-ভদ্র সমবেত হয়েছে শ্মশানঘাটে। পাথুরিয়াঘাটার রাজামশাই—হ্যাঁ, রাজামশাই বইকি—দর্পনারায়ণকে সবাই এক ডাকে চেনে—কালীঘাটকে উপেক্ষা করে মূলাজোড়ে এসেছেন গঙ্গাযাত্রায়! জনসমাগম তো হতেই পারে।
.
মহাশ্মশানে জনারণ্য। কাতারে কাতারে মানুষ। পাথুরিয়াঘাটার দর্পনারায়ণ ঠাকুর বজরায় করে এসেছেন মূলাজোড়ে। কলিতীর্থ কালীঘাটকে উপেক্ষা করে। গঙ্গার তীরে খাটানো হয়েছে প্রকাণ্ড একটা সামিয়ানা। তার এক দিকে চিকের আড়াল। সেখানে অপেক্ষা করছেন পুরললনার দল—গোপীমোহনের সহধর্মিণী, পিসিমারা, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মহিলাবৃন্দ। পরের বজরায় এসেছেন তাঁরা। দর্পনারায়ণের দেহ একটি পালঙ্কে শায়িত। তাঁর অর্ধ-অঙ্গ গঙ্গাতীরে, অর্ধ-অঙ্গ গঙ্গানীরে। না, অর্ধ-অঙ্গ নয়, শুধু বলিরেখাঙ্কিত চরণদুটি করছে। ছোট ছোট ঢেউ এসে আঘাত করছে চরণদ্বয়ে—ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল। একদল কীৰ্তনীয়া পালঙ্কটি পরিক্রমা করছে হরিসংকীর্তন করতে করতে। গঙ্গায় পরিক্রমা করার সময় তাদের হাঁটু-জলে নেমে যেতে হচ্ছে। কিছু দূরে বসে শিরোমণি শ্রীমদ্ভগবৎগীতা পাঠ করে চলেছেন :
“নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্তাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।”
কবিরাজ-মশাই মাঝে মাঝে অগ্রসর হয়ে আসছেন, নাড়ির গতি পরীক্ষা করে যাচ্ছেন। তাঁর দক্ষিণহস্তে একটি সাবেক বালুকা-ঘড়ি। বলছেন, তাঁর গণনা অভ্রান্ত—সূর্যাস্তকালে দর্পনারায়ণের প্রাণবায়ু পটাকাশে বিলীন হয়ে যাবে। দর্পনারায়ণের শিয়রের কাছে বসে আছেন গোপীমোহন। কিছুক্ষণ পরে পরে গঙ্গোদক ঢেলে দিচ্ছেন বৃদ্ধের বিশুষ্ক ওষ্ঠাধরে। তারকব্রহ্ম নাম শোনাচ্ছেন। দর্পনারায়ণের বাম অঙ্গ পড়ে গেছে; তবু পূর্ণজ্ঞান আছে তাঁর। মাঝে মাঝে দু-একটি কথাও বলছেন। অধিকাংশ সময়ে নির্নিমেষ নয়নে শেষবারের মতো তাকিয়ে দেখছেন এই রূপরসশব্দগন্ধস্পর্শময় জগৎকে।
মনে হল, বৃদ্ধ কিছু বলতে চান। গোপীমোহন তাঁর কর্ণমূল অগ্রসর করে দিলেন। প্রশ্ন করলেন, কিছু বলবেন?
—হুঁ! আজ তো শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি?
সেই পাগলের প্রলাপ! বৃদ্ধ বিদায়কালে জানতে চাইছেন, আজ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া কিনা। গোপীমোহন তাঁকে জানালেন।
—দি—দি-ভাই আসেনি?
এর কী জবাব?
ঠিক তখনই অগ্রসর হয়ে এলেন মূলাজোড়ের সর্বানন্দ বাচস্পতিমশাই। গোপীমোহনের পাশে এসে বললেন, আপনাকে এ সময়ে বিরক্ত করতে হচ্ছে বলে বড় বিব্রত বোধ করছি। কিন্তু নিতান্ত নিরুপায় হয়েই আসতে হয়েছে।
—বলুন?
—আমাদের একটি সমস্যায় আপনাকে কিছু বিধান দিতে হবে।
—বিধান? শাস্ত্রীয় বিধান? আমি দেব আপনাকে?
বাচস্পতিমশাই সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেন সমস্যাটা এমন যে, শুধু শাস্ত্রজ্ঞ হলেই তার সমাধান লাভ করা যাবে না। তাকে ফেরঙ্গ ব্যাপারেও পণ্ডিত হতে হবে।
বাধ্য হয়ে ঘাটে উঠে এলেন গোপীমোহন। দেখলেন মূলাজোড়ের আরও কয়েকজন এসেছেন একই হেতুতে। বাচস্পতিমশাই তাঁদের সকলের হয়ে ঘটনাটি বিবৃত করেন।
গতকাল জোয়ারের সময় গঙ্গাস্রোতে ভাসতে ভাসতে একটি কফিন এসে ঠেকেছে মূলাজোড়ের স্নানঘাটে। ‘কফিন’ বস্তুটাকে ওঁরা চেনেন—ফেরঙ্গরা ঐরকম কাঠের বাক্সে মৃতদেহকে রক্ষিত করে কবর দেয়—যেমন দেয় মুসলমানেরা। ফলে কফিনের ভিতরে যে দেহটি আছে—যতই ছোট হোক—সেটি বিধর্মীর। প্রশ্ন হচ্ছে, কফিনসমেত মৃতদেহকে ভূগর্ভস্থ গর্তে স্থাপিত করাই প্রথা—কী সাহেবদের, কী মুসলমানের। কোন দুয়ে হেতুতে ওটিকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়েছে ওঁরা আন্দাজ করতে পারছেন না। জোয়ারের জলের সঙ্গে সেটি যদি ভেসে যেত তাহলে মূলাজোড়ের দায়িত্ব থাকত না; কিন্তু তা যায়নি। এক্ষেত্রে কী করণীয়? মৃতদেহকে ওখানে পচতে দেওয়া যায় না—চণ্ডাল দিয়ে সৎকার করানো অসম্ভব নয়; কিন্তু তাতে বিধর্মীরা আপত্তি করবে না তো? গোপীমোহন যেহেতু ফারসিতে আলিম, ইংরেজিতে পণ্ডিত, তাই তাঁর নির্দেশ চাইতে এসেছেন ওঁরা।
.
দর্পনারায়ণকে স্বপ্নে ঠিকই বলেছিল ব্রহ্মময়ী।
দাদাভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বলেছিল, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম-দুয়ারে পড়ল কাঁটা!
তবে ভাই-বোন দুজনেই তখন যমদুয়ারের কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে বৈকুণ্ঠলোকে উপনীত। একই চিতায় দাহ করা হল দুজনকে। দ্বিতীয়া তিথি তখনও ছিল।
তোমরা যদি শ্যামনগরে যাও ব্রহ্মময়ীর মন্দিরে প্রণাম করে এস।
ব্রহ্মময়ী নামটি অসামান্য পণ্ডিত গোপীমোহন ঠাকুরের দেওয়া; কিন্তু তোমরা এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ সে নামটি তিনি চয়ন করেছিলেন যে কিশোরবয়স্ক বিদ্রোহীর প্রভাবে
তিনি ‘অসামান্যতর’ পণ্ডিত। ইতিহাসে সেই দক্ষিণপাড়ার চাটুজ্জে-মশায়ের নিরুদ্দিষ্ট জামাত বাবাজীবনের নাম :
রাজা রামমোহন রায়।