টাইকান ছিল বড় মজার মানুষ। ওকাকুরা শেষবার যখন এসেছিলেন যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন, ‘আমি জাপানে গিয়ে আমাদের দু-একটি আর্টিস্ট পাঠিয়ে দেব। তারা এদেশ দেখবে, নিজেরা ছবি এঁকে যাবে, তোমরা দেখতে পাবে তাদের কাজ—তাদেরও উপকার হবে তোমাদেরও কাজে লাগবে।’ তিনি ফিরে গিয়ে দুটি আর্টিস্ট পাঠালেন—টাইকানকে আর হিশিদাকে। ছেলেমানুষ তখন তারা। টাইকানের তবু একটু মুখচোখের কাঠকাঠ গড়ন ছিল, একরকম লাগত বেশ; হিশিদা ছিল একেবারে কচি, ছোট্টখাট্ট ছেলেটি। তার মুখখানি দেখলে কে বলবে যে এ ছেলে; ঠিক যেন একটি জাপানী মেয়ে, ছেলের বেশে, প্যান্টকোট-পরা; আপেলের মত লাল টুকটুক করছে দুটি গাল, কাঁচের মত কালো চোখ, মিষ্টি মুখের ভাবখানি। আমি ঠাট্টা করে তাকে বলতুম, ‘তুমি হলে মিসেস টাইকান।’ শুনে তারা দুজনেই হেসে অস্থির হত।
টাইকান আর হিশিদা সুরেনের বাড়িতেই থাকত। এদিকে ওদিকে ঘুরে ঘুরে খুব ছবি আঁকত। অনবরত স্কেচ করে যেত; কত সময়ে দেখতুম, গাড়িতে যাচ্ছি, টাইকান রাস্তার এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে বাঁ হাত বের করে তার তেলোতে ডান হাতের আঙুল বুলিয়ে চলেছে। আমি জিজ্ঞেস করতুম, ‘ও কি করছ টাইকান?’ সে বলত, ‘ফর্মটা মনে রাখছি। একবার হাতের উপরে বুলিয়ে নিলুম, লাইন মনে থাকবে বেশ।’ কখনো বা দেখতুম তাড়াতাড়ি জামার আস্তিন টেনে তাতে পেনসিল কলম দিয়ে স্কেচ করছে। নিজের সাজসজ্জার দিকে তার লক্ষ্যই ছিল না তেমন—মস্ত বড় একটা খড়ের হ্যাট মাথায় দিয়ে রোদে রোদে কলকাতার শহর বাজার ঘুরে বেড়াত, খেয়ালই করত না লোকে কি ভাববে তার ওই খ্যাপার মত সাজ দেখে। কিছু বলতে গেলে হাসত, বলত, ‘কি আর হয়েছে তাতে। জানো, এই টুপি রোদ্দুরে বেশ ঠাণ্ডা রাখে মাথা।’ টাইকান আমাদের স্টুডিয়োতে আসত, বসে কাজ করত। সেই সব ছবির আরার একজিবিশন হত, লোকে কিনত। আমরাও অনেক সময়ে ফরমাশ দিয়ে ছবি আঁকাতুম। বিদেশে এসেছে, তাদের খরচ চালাতে হবে তো— ওই ছবির টাকা দিয়েই খরচ চলত।
প্রথম যখন টাইকান ছবি আঁকলে সিল্কের উপরে হালকা কালি দিয়ে, চোখেই পড়ে না; আমাদের মোগল পার্শিয়ান ছবির কড়া রঙ দেখে দেখে অভ্যেস; আর এ দেখি, রঙ নেই, কালি, নেই, হালকা একটু ধোঁয়ার মত—এ আবার কি ধরনের ছবি। এত আশা করেছিলুম জাপানী আর্টিস্ট আসবে, তাদের কাজ দেখব, কি করে তারা ছবি আঁকে, রঙ দেয়। আর এ দেখি কোত্থেকে একটু কয়লার টুকরো কুড়িয়ে এনে তাই দিয়ে প্রথমে সিল্কে আঁকলে, তার পর পালক দিয়ে বেশ করে ঝেড়ে তার উপরে একটু হালকা কালি বুলিয়ে দিলে, হয়ে গেল ছবি। মন খারাপ হয়ে গেল। সুরেনকে বললুম, ‘ও সুরেন, ছবি যে দেখতেই পাচ্ছিনে স্পষ্ট। সুরেন বললে, ‘পাবে পাবে, দেখতে পাবে, অভ্যেস হোক আগে।’ সত্যিই তাই। কিছুদিন বাদে দেখি, দেখার অভ্যেস হয়ে গেল; তাদের ছবি ভালোও লাগতে লাগল। অনেক ছবি এঁকেছিল তারা। আমাদের দেবদেবীর ছবি আঁকবে, বর্ণনা দিতে হত শাস্ত্ৰমতে। টাইকান এঁকেছিল সরস্বতী ও কালীর ছবি দুটি; সরলার মা কিনে নিলেন।
আমাদের স্টুডিয়োর জন্যে ছবি আঁকার, দেয়ালে ছিল মস্ত বড় একটা বিলিতি অয়েল পেন্টিং—সেটা রাজেন মল্লিককে বিক্রি করে দিলুম। সেই দেয়ালের মাপে টাইকানকে বললুম ছবি এঁকে দিতে। রাসলীলা আঁকবে। বললে, ‘বর্ণনা দাও।’ বর্ণনা দিলুম। এদেশি মেয়েরা কি করে শাড়ি পরে দেখাতে হবে। বাড়ির একটি ছোট মেয়েকে ধরে এনে তাকে মডেল করে দেখালুম, এই করে শাড়ির আঁচলা ঘুরে ঘুরে যায়। শাড়ির ঘোরপেঁচ স্টাডি হল। কোথায় কি গহনা দিতে হবে পুরোনো মূর্তির ছবি ফোটো দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলুম। সব হল। এইবার সে মেঝে জুড়ে কাগজ পেতে ছবি আরম্ভ করলে। প্রথমে কয়লা দিয়ে সিল্কে ড্রইং করে তার পর একটা আসন পেতে চেপে বসল ছবির উপরে। রঙ লাগাতে লাগল একধার থেকে। দেখতে দেখতে কদিনের মধ্যেই ছবি শেষ হয়ে এল। আকাশে চাঁদের আলো ফুটল, সবই হল, কিন্তু টাইকান ছবি আর শেষ করছে না কিছুতেই। বালিগঞ্জের দিকে থাকত, সকালেই চলে আসত, এসেই ছবির উপরে ঢাকা দেওয়া কাপড়টি সরিয়ে ছবির দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে আর কেবলই এদিকে ওদিকে ঘাড় নাড়ে, কি যেন মনের মত হয়নি এখনো। রোজই দেখি এই ভাব। জিজ্ঞেস করি, ‘কোথায় তোমার আটকাচ্ছে।’ সে বলে, ‘বুঝতে পারছিনে ঠিক, তবে এইটে বুঝছি এতে একটা অভাব রয়ে গেছে।’ এই কথা বলে, ছবি দেখে, আর ঘাড় দোলায়। একদিন হল কি, এসেছে সকালবেলা, স্টুডিয়োতে ঢুকেছে—তখন শিউলি ফুল ফুটতে আরম্ভ করেছে, বাড়ির ভিতর থেকে মেয়েরা থালা ভরে শিউলি ফুল রেখে গেছেন সে-ঘরে, হাওয়াতে তারই কয়েকটা পড়েছে এখানে ওখানে ছড়িয়ে—টাইকান তাই-না দেখে ফুলগুলি একটি একটি করে কুড়িয়ে হাতে জড়ো করলে। আমি বসে বসে দেখছি তার কাণ্ড। ফুলগুলি হাতে নিয়ে ছবির উপরে ঢাকা দেওয়া কাপড়টি একটানে তুলে ছবির সামনের জমিতে হাতের সেই ফুলগুলি ছড়িয়ে দিলে, দিয়ে ভারি খুশি। থালা থেকে আরো ফুল নিয়ে ছবির সারা গায়ে আকাশে মেঘে গাছে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিলে। এবারে টাইকানের মুখে হাসি আর ধরে না। একবার করে উঠে দাঁড়ায়, দূর থেকে ছবি দেখে, আর তাতে ফুল ছড়িয়ে দেয়, এই করে করে থালার সব কটি ফুলই ছবিতে সাজিয়ে দিলে। সে যেন এক মজার খেলা। ফুল সাজানো হলে ছবিটি অনেকক্ষণ ধরে দেখে এবারে ফুলগুলি সব আবার তুলে নিয়ে রাখলে থালাতে। শুধু একটি শিউলি ফুল নিলে বাঁ হাতে, আসন চাপালে ছবির উপরে, তার পর সাদা কমলা রং নিয়ে লাগল ছবিতে ফুলকারি করতে। একবার করে বাঁ হাতে ফুলটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আর ফুল আঁকে। দেখতে দেখতে ছবিটি ফুলে ফুলে সাদা হয়ে গেল—আকাশ থেকে যেন পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে, হাওয়াতে ফুল ভেসে এসে পড়ছে রাসলীলার নাচের মাঝে। রাধার হাতে দিলে একটি কদমফুল, গলায়ও দুলিয়ে দিলে শিউলিফুলের মালা, কৃষ্ণের বাঁশিতেও জড়ালে একগাছি। ফুলের সাদায় জ্যোৎস্না রাত্তির যেন ফুটে উঠল। এইবার টাইকান ছবি শেষ করলে, বললে, ‘এই অভাবটাই মেটাতে পারছিলুম না এতদিন।’ সেই ছবি শেষে একদিন দেয়ালে টাঙানো হল। টাইকান নিজের হাতে বাঁধাই করলে, বালুচরী শাড়ির আঁচলা লাগিয়ে দিলে ফ্রেমের চারদিকে। বন্ধুবান্ধবদের ডেকে পার্টি দেওয়া হল স্টুডিয়োতে, রাসলীলা দেখবার জন্য। বড় মজায় কেটেছে সে সব দিন।
টাইকান আমায় লাইন ড্রইং শেখাত, কি করে তুলি টানতে হয়। আমরা তাড়াতাড়ি লাইন টেনে দিই—তার কাছেই শিখলুম একটি লাইন কত ধীরে ধীরে টানে তারা। আমার কাছেও সে শিখত মোগল ছবির নানান টেকনিক। এমন একটা সৌহার্দ ছিল আমাদের মধ্যে—বিদেশী শিল্পী আর দেশী শিল্পীর মধ্যে কোনো তফাত ছিল না। এখন সেইটে বড় দেখতে পাইনে।
টাইকান দেখতুম রীতিমত নেচার স্টাডি করত—আমাদের দেশের পাতা ফুল, গাছপালা, মানুষের ভঙ্গি, গহনা, কাপড়-চোপড়, যেখানে যেটি ভালো লেগেছে খাতার পর খাতা ভরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের লোকদের মুখচোখের ছাঁদ ভারতীয় বৈশিষ্ট্য দস্তুরমত অনুশীলন করেছে। সেই সময়ে টাইকানের ছবি আঁকা দেখে দেখেই একদিন আমার মাথায় এল, জলে কাগজ ভিজিয়ে ছবি আঁকলে হয়। টাইকানকে দেখতুম ছবিতে খুব করে জলের ওয়াশ দিয়ে ভিজিয়ে নিত। আমি আমার ছবি সুদ্ধ কাগজ দিলুম জলে ডুবিয়ে। তুলে দেখি বেশ সুন্দর একটা এফেক্ট হয়েছে। সেই থেকে ওয়াশ প্রচলিত হল।
খুব কাজ করত টাইকান। হিশিদা ততটা করত না, সে বেশ এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াত। কোথায় একটু কি মাটির টুকরো পেলে, তাই ঘষে রঙ বের করলে; বাগানে সিমগাছ ছিল, ঘুরতে ঘুরতে দু-চারটে পাতা ছিঁড়ে এনে হাতে ঘষে লাগিয়ে দিলে ছবিতে। কুলগাছের ডাল পড়ে আছে কোথায়, তাই এনে একটু পুড়িয়ে কাঠকয়লার কাঠি বানিয়ে ছবি এঁকে ফেললে। বেচারা জাপানে ফিরে গিয়েই মারা গেল। মাস ছয়েক ছিল তারা এদেশে। বলেছিল আবার আসবে, আবার আর-একদল আর্টিস্ট পাঠাবে। তা আর হল না। হিশিদা বেঁচে থাকলে খুব বড় আর্টস্ট হত। একটি ছবি এঁকেছিল—দূরে সমুদ্রে আকাশে মিলে গেছে, সামনে বালুর চর, ছবিতে একটি মাত্র ঢেউ এঁকেছে যেন এসে আছড়ে পড়ছে পারে। সে যে কি সুন্দর কি বলব। পান্নার মত ঢেউয়ের রঙটি, তার গর্জন যেন কানে এসে বাজত স্পষ্ট। বড় লোভ হয়েছিল সেই ছবিটিতে। হিশিদা তো মরে গেল, টাইকান ছিল বেঁচে। খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল তাদের সঙ্গে, অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। বরাবর চিঠিপত্র লিখে খোঁজখবর রাখত।
রবিকা সেবার জাপানে যাবেন, নন্দলালকে নিয়ে গেলেন সঙ্গে, ওদের দেশে আর্টিস্টদের ভিতরে গিয়ে থেকে দেখে শুনে আসবে। নন্দলালকে বললুম, ‘টাইকানের কাছে যাবে, খালি হাতে যেতে নেই।’ আমার কাছে ছিল একটি খোদাইকরা ব্রোঞ্জ, বহু পুরোনো, নবাবদের আমলের ঘোড়ার বকলসের একটা কোনো জায়গার ডেকোরেশন হবে। সেইটি নন্দলালকে দিয়ে বললুম, ‘এইটি টাইকানকে দিয়ো আমার নাম করে। একদিকে আংটার মত আছে, বেশ ছবি টানাতে পারবে।’ আর তার স্ত্রীর জন্য দিলুম আমাদের দেশের শাড়ি ও জামার কাপড় কিছু। পরে নন্দলাল যখন ফিরে এল তার কাছে শুনি, টাইকান সেই ব্রোঞ্জটি হাতে নিয়ে মহা খুশি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে আর হাসে।
ওকাকুরা যখন প্রথমবার আসেন এদেশে, যতদূর মনে পড়ে কলকাতায় সুরেনের বাড়িতেই ছিলেন। সেবার খুব বেশি আলাপ হয়নি তাঁর সঙ্গে। মাঝে মাঝে যেতুম, দেখতুম বসে আছেন তিনি একটা কৌচে। সামনে ব্রোঞ্জের একটি পদ্মফুল, তার ভিতরে সিগারেট গোঁজা; একটি করে তুলছেন আর ধরাচ্ছেন। বেশি কথা তিনি কখনোই বলতেন না। বেঁটেখাটাে মানুষটি, সুন্দর চেহারা, টানা চোখ, ধ্যাননিবিষ্ট গম্ভীর মূর্তি। বসে থাকতেন ঠিক যেন এক মহাপুরুষ। রাজভাব প্রকাশ পেত তার চেহারায়। সুরেনকে খুব পছন্দ করতেন ওকাকুরা। সুরেন সম্বন্ধে বলতেন, He is fit to be a king.
দ্বিতীয়বার যখন এলেন দশ বছর পরে, তখন আমি আর্টের লাইনে ঢুকেছি। প্রায়ই আমাদের জোড়াসাঁকোর স্টুডিয়োতে বসে শিল্প সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা হত। নন্দলালদের তিনি আর্টের ট্র্যাডিশন অবসার্ভেশন ও ওরিজিনালিটি বোঝাতেন তিনটি দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে। দেবতার মত ভক্তি করত ওকাকুরাকে জাপানীরা। আমাদের ছিল এক জাপানী মালী। ওকাকুরা এসেছেন শুনে দেখা করবার খুব ইচ্ছে হল তার। স্টুডিয়োতে বসে আছেন ওকাকুরা, নন্দলালের সঙ্গে কথাবার্তা কইছেন, সে এসে দরজার পাশে দূর থেকে উকিঝুঁকি দিতে লাগল। বললুম, ‘এস ভিতরে।’ কিছুতেই আর আসে না, দূরে দাঁড়িয়েই কাঁচুমাচু করে। খানিক বাদে ওকাকুরার নজরে পড়তে তিনি ডান হাতের তর্জনী তুলে ভিতরের দিকে নির্দেশ করলে পর সে হাঁটু-মুড়ে সেখান থেকেই মাথা ঝুঁকতে, ঝুঁকতে ঘরে এল। ওকাকুরাও দু-একটা কথা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সে আবার সেই ভাবেই হাঁটু মুড়ে বেরিয়ে গেল। যতক্ষণ ঘরে ছিল সোজা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলুম, ‘তুমি ওভাবে ছিলে কেন?’ সে বললে, ‘বাবা! আমাদের দেশে ওঁর কাছে যাওয়া কি সহজ কথা? আমাদের কাছে উনি যে দেবতার মত।’
সেবার ওকাকুরা ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে দেখবেন। অনেক জায়গা ঘোরা হয়ে গেছে, আর দু-চার জায়গা দেখা বাকি। বললুম, যাচ্ছ যখন, কোনারকের মন্দিরটা ঘুরে দেখে এস একবার। নয় তো ভারতবর্ষের আসল জিনিসই দেখা হবে না। ওকাকুরা বললেন, ‘পুরীর মন্দিরও দেখবার বড় ইচ্ছে আমার। ব্যবস্থা করে দিতে পার?’ তখন তিনি কঠিন রোগে ভুগছেন, ভাঙা শরীর; তাই নিয়েই এসেছেন বিদেশে বিভুঁয়ে ভারতের শিল্পকীর্তি দেখতে। জগন্নাথের ডাক পড়েছে আমার বিদেশী শিল্পী ভাইকে। কিন্তু জগন্নাথ ডাকেন তো ছড়িদার ছাড়ে না; লাটবেলাটকে পর্যন্ত বাধা দেয় এত বড় ক্ষমতা সে ধরে, তাকে কিভাবে এড়ানো যায়? শিল্পীতে শিল্পীতে মন্ত্রণা বসে গেল। চুপি চুপি পরামর্শটা হল বটে, কিন্তু বন্ধু গেলেন জগবন্ধু দর্শন করতে দিনের আলোতে রাজার মত। দ্বার খুলে গেল, প্রহরী সসম্মানে একপাশ হল, জাপানের শিল্পী দেখে এলেন ভারতের শিল্পীর হাতে গড়া দেবমন্দির, বৈকুণ্ঠ, আনন্দবাজার, মায় দেবতাকে পর্যন্ত।
বড় খুশি হয়েছিলেন ওকাকুরা সেবারে কোনারক দেখে। বললেন, ‘কোনারক না দেখলে এবারকার আসাই আমার বৃথা হত। ভারতশিল্পের প্রাণের খবর মিলল আমার ওখানে।’ তাঁর বিদায়ের দিনের শেষ কথা আমার এখনও মনে আছে, ‘ধন্য হলেম, আনন্দের অবধি পেলেম, এইবার পরপারে সুখে যাত্রা করি।’ দেশে ফিরে গিয়ে কিছুকালের মধ্যেই মারা যান ওকাকুরা।
সেবারেই তিনি বলেছিলেন নন্দলালদের, ‘দশ বছর আগে যখন আমি এসেছিলাম তখন তোমাদের আজকালকার আর্ট বলে কিছুই দেখিনি। এবারে দেখছি তোমাদের আর্ট হবার দিকে যাচ্ছে। আবার যদি দশ বছর বাদে আসি তখন হয়তো দেখব হয়েছে কিছু।’
তিনিও আর এলেন না, আমিও বসে আছি দেখবার জন্যে—কই, দেখছি না তো। হয়তো আবার আমায় আসতে হবে। পথ আছে কি?