চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
উত্তপ্ত স্বভাব
অসহিষ্ণু হয়ে কথার উত্তর দেয়া, সামান্য কারণে উগ্র হয়ে উঠা বর্বর জাতির লক্ষণ। অতীত সভ্যতা, পুথি-লিখিত জ্ঞান-গৌরবের ভণ্ডামি কি উপকারে আসবে, যদি না প্রতিদিন জীবনের সর্ব কাজে মাধুরী, বিনয়, ভদ্রতা ফুটিয়ে তুলতে পারি?
আবার বলি—সহজে স্বভাবের ধীরতা নষ্ট করা, নিষ্ঠুর কথার উত্তরে ততোধিক নিষ্ঠুর কথা ব্যবহার করা, ভদ্রতা নয়, শান্ত হও। হত্যা করবার জন্য যে হস্ত উত্তোলিত হয়েছে, একবার নামাও, আবার চিন্তা কর।
বিরুদ্ধ মত শুনে যে উগ্র হয়ে উঠে-অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করে, ক্ষমতা থাকলে প্রতিদ্বন্দীকে হত্যা করতে কুষ্ঠিত হয় না—সে বড় অসভ্য ও বর্বর।
যে জাতি মানুষের উপর অসহিষ্ণু শাসনের ব্যবস্থা করে, সে জাতির স্থান নিম্নে হবেই।
কি পল্লীগ্রামে, কি উচ্চ সমাজে, কখনও স্বভাবকে বলগামুক্ত করো না—সাবধান!
নিষ্ঠুর কথা বলতে, চোখ দুটিকে ক্ৰোধে খাড়া করে তুলতে কি তোমার লজা হয় না-এ যে নিম্নস্তরের লোকের কাজ!
যে জাতি সভ্য ও ভদ্রভাবে কথা বলতে জানে না, তারা অতি নীচ। তারা চিরকালই মানুষের মনুষ্যত্বের অশ্রদ্ধা লাভ করে।
প্রতি কাজে মানুষের কর্মজীবন ও উপাসনার পরিচয় পাওয়া যায়! এ তুমি বিশ্বাস করো।
যুবক বয়সে পরের দৃষ্টির উপর নিজের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে প্ৰাণের খুবই একটা লোভ জন্মে। —নিজের মহিমা ও মর্যাদা চারিদিকে পাত্ৰেঅপাত্রে ছড়িয়ে দেবার জন্যে মন সর্বদা সজাগ থাকে। আত্মার এই নীচ আকাজক্ষাকে সবলে চুৰ্ণ করে দিতে হবে।
যে সহিষ্ণু ও ধীর হতে শেখে নাই, তার ধাৰ্মিক লোক হবার কোন অধিকার নাই।
তুমি দোকানদার, তোমার কাছে ক্রেতা জিনিস কিনতে এসেছে-ক্রেতা যতই বিরক্ত করুক না কেন, কখনও অসহিষ্ণু হয়ে তার প্রতি ইতর ভাষা প্রয়োগ করো না, যদি তা কর তাহলে বুঝবো তুমি একটা কাপুরুষ। একটা বিরুদ্ধ কথা শোনা মাত্রই উগ্র হয়ে উঠো না, একটু অপমানে স্বভাবকে উত্তপ্ত করে তুলো না— অপেক্ষা কর, ধৈর্য অবলম্বন করা-তোমার বিনয়ের জয় আসছে।