আইয়ুবীয় পৃষ্ঠপোষকতা
প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মোহাম্মদ আইয়ুব খান যে উদ্দেশ্যেই পাকিস্তান লেখক সংঘ এবং জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা বা বিএনআর প্রতিষ্ঠা করুন না কেন পূর্ব পাকিস্তানের আধুনিক কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের জন্য তা ছিল আশীর্বাদের মতো। পঞ্চাশের দশকে পূর্ব বাংলার সাহিত্যে বহু আধুনিক চেতনাসম্পন্ন কবি সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু তাঁদের রচনা প্রকাশের জায়গার ছিল অভাব। পুরোনো দুটি বিখ্যাত সাময়িকী– মোহাম্মদী ও সওগাত নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছিল। মাহে নও ছিল সরকারি সাময়িকী। সিকান্দার আবু জাফর প্রকাশ করেন সমকাল– আধুনিকতাবাদীদের মুখপত্র। সেটা বছরে বের হতো তিন-চার সংখ্যা। সব কবি সাহিত্যিককে ধারণ করার ক্ষমতা সমকাল-এর ছিল না। আরও দু-একটি সাহিত্যপত্র বের হচ্ছিল অতি অনিয়মিত। মানসম্মত সাহিত্যের প্রসার ঘটাতে মানসম্মত ও রুচিসম্মত সাহিত্য সাময়িকীর প্রয়োজন। সেই রকম নিয়মিত সাহিত্যপত্র পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় ছিল না।
সেই অভাব পূরণে পাকিস্তান লেখক সংঘের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে লেখক সংঘ সাহিত্য সাময়িকী ও বই প্রকাশ শুরু করে। লেখক সংঘ পত্রিকা নামে কবি গোলাম মোস্তফার সম্পাদনায় সংগঠনের সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হয়। তা সম্ভবত একটি সংখ্যাই বেরিয়েছিল। তারপর লেখক সংঘ পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পরিক্রম–পাকিস্তান লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখার মাসিক সাহিত্য ও সংস্কৃতিপত্র। প্রথমে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় এবং পরে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় পুরো ষাটের দশক পরিক্রম নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। পরিক্রমের একটি সম্পাদনা পরিষদ ছিল। তাতে ছিলেন সৈয়দ মুর্তজা আলী, আহমদ শরীফ, আবদুর রশীদ খান, আবদুল গনি হাজারী ও জাহানারা আরজু। তবে তাঁরা ছিলেন নামেমাত্র। সম্পাদনার দায়িত্ব পুরোটাই পালন করেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম ও হাসান হাফিজুর রহমান। এবং শেষের দিকে কখনো তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন নজরুলবিষয়ক লেখক শাহাবুদ্দিন আহমদ ও রশীদ হায়দার। প্রকাশক হিসেবে নাম থাকত নাট্যকার আশকার ইবনে শাইখের।
পরিক্রম নামটির মধ্যেই আধুনিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। পঞ্চাশের দশক থেকে ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্র, যার অফিস ছিল প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে, মার্কিন পরিক্রমা নামে একটি ম্যাগাজিন বের করত। লেখক সংঘের কর্মকর্তারা ওই নামটি থেকে প্রভাবিত হয়ে পরিক্রমা নামে সাময়িকী প্রকাশের উদ্যোগ নেন। উদ্যোক্তাদের কাছে শুনেছি, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পরামর্শ দেন পরিক্রমা নয়, পরিক্রম নামকরণই হবে যথার্থ। তিনি বলেন, ‘পরিক্রমার ম-এর আকার ফেলে দাও।’ মুনীর চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম বা হাসান হাফিজুর রহমান কেউই পাকিস্তানবিরোধী ছিলেন না, তবে একই সঙ্গে বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের মধ্যে কোনো সংশয় ছিল না। অর্থাৎ তাঁরা বাঙালি জাতীয়তাবাদীও ছিলেন।
লেখক সংঘের পশ্চিমাঞ্চলের কার্যালয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের রাজধানী লাহোরে। তাতে যুক্ত ছিলেন উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি প্রভৃতি ভাষার খ্যাতিমান লেখকেরা। সমৃদ্ধ ভাষা ও সাহিত্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য ছিল উর্দু লেখকদের। দুই অঞ্চলের লেখকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে পাকিস্তান লেখক সংঘ।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় প্রাচীনপন্থী ও আধুনিকতাবাদী তরুণ দুই শ্রেণির লেখকই ছিলেন। প্রাচীনপন্থী ও পাকিস্তানবাদী লেখকদের সাহিত্য সাময়িকী ছিল মাসিক মাহে নও– কেন্দ্রীয় সরকারের পত্রিকা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে প্রকাশিত হলেও লেখক সংঘের পরিক্রম ছিল আধুনিকতাবাদীদের সাহিত্যপত্র। বিষয়বস্তু হিসেবে মাহে নও-এ যেমন ইসলাম ও মুসলমান প্রাধান্য পেত, পরিক্রমে প্রাধান্য পেত বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিশ্বসাহিত্য। মাহে নও এর লেখকদের মধ্যে যেমন থাকতেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ বরকতউল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, আবুল ফজল, আ ন ম বজলুর রশীদ, সুফিয়া কামাল, ফররুখ আহমদ প্রমুখ; তেমনি পরিক্রম-এ বেশি লিখতেন শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত ওসমান, খান সারওয়ার মুর্শেদ, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক প্রমুখ। নারী সাহিত্যিকদের মধ্যে জাহানারা আরজু, জাহানারা হাকিম, লতিফা হিলালীসহ ছিলেন কয়েকজন। সৈয়দ শামসুল হকের অচেনা নামে আস্ত একটি উপন্যাস পরিক্রম এর এক সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ষাটের দশকের শেষ দিকে। মাহে নও-এর মতো পরিক্রমও লেখকদের পারিতোষিক দিত। সেকালে পূর্ব বাংলার লেখকদের জন্য তা ছিল বড় প্রাপ্তি।
কোথায় ছিল লেখক সংঘের কার্যালয়? কোথা থেকে বের হতো পরিক্রম? বাংলা একাডেমির গেট দিয়ে ঢুকতে বাঁ দিকে ছিল একটি ছোট্ট এক কামরার ঘর। ইট-সিমেন্টের দেয়াল কিন্তু টিনের চাল। ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে বর্ধমান হাউসের নিরাপত্তা প্রহরীদের বসার জন্য। ওই ঘরটি লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখাকে দেওয়া হয়েছিল তাদের কর্মকর্তাদের কার্যালয় হিসেবে। সেখানে খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকেরা প্রতিদিন কেউ না কেউ বসতেন। তবে প্রতি মাসে একবার একটি বড় বৈঠক হতো। ছাত্রজীবনে সেসব বৈঠকের কোনো কোনোটিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। মুনীর চৌধুরী, খান সারওয়ার মুর্শিদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতেন দেশি ও বিদেশি সাহিত্য সম্পর্কে। কয়েক বছর আগে বাংলা একাডেমি সেই ঘরটি ভেঙে সেখানে একটি দালান বানিয়েছে। স্বাধীনতার পরে ওই ঘরটিতে ছিল বাংলা একাডেমির ডাকঘর। সেই সময়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ওই ঘরটি রেখে দেওয়া উচিত ছিল। হতে পারত সেখানে একটি ছোট্ট প্রদর্শনশালা। প্রদর্শিত হতে পারত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের সাহিত্য সাধনার জিনিসপত্র।
খুবই সুন্দরভাবে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হতো পরিক্রম। কিছুদিন নিউজপ্রিন্টে ছাপা হতো, পরে কর্ণফুলী মিলের সাদা উন্নতমানের কাগজে বের হতো। মনেটাইপে নির্ভুল ছাপা। অঙ্গসজ্জা ভালো। শুধু লেখকেরা নন, চিত্রশিল্পীরাও পৃষ্ঠপোষকতা পেতেন লেখক সংঘ থেকে। পরিক্রম-এর প্রচ্ছদ কাইয়ুম চৌধুরী এবং দেবদাস চক্রবর্তীই সবচেয়ে বেশি আঁকতেন। লেখক সংঘের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত থাকলেও স্বাধীনতার পরে তারা উভয়েই আইয়ুব সরকার ও লেখক সংঘের ঘোর সমালোচকে পরিণত হন। অব্যাহত সেই সরকারের নিন্দা করতেন।
প্রকাশনাশিল্পের সেই ঘোর দুর্দিনে লেখক সংঘ এবং বাংলা একাডেমি আধুনিক প্রকাশনার সূচনা করে। ষাটের দশকে বাংলা একাডেমি বহু মূল্যবান বই প্রকাশ করেছে, শুধু গবেষণামূলক বই নয়, সৃষ্টিশীল বইও। লেখক সংঘ অত করেনি, তবে যা করেছে তার গুণগত মূল্য অসামান্য। ফররুখ আহমদের কাব্য-নাটক নৌফেল ও হাতেম সম্ভবত লেখক সংঘ প্রকাশনীর প্রথম বই। শামসুর রাহমানের দ্বিতীয় ও শ্রেষ্ঠ কবিতার বই রৌদ্র করোটিতে প্রকাশ করে লেখক সংঘ। শামসুর রাহমান তাঁর এলোমেলো স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘বই বাবদ আমার প্রাপ্য টাকাও চটজলদি পেয়ে গেলাম। সেখানে অন্য প্রকাশকেরা চটজলদি তো দূরের কথা, দেরিতেও টাকা দিতেন না। তিনি আরও লিখেছেন, ‘…রৌদ্র করোটিতের জন্য আদমজী পুরস্কার পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম।… সেবার কথাসাহিত্যে আদমজী পুরস্কার পান শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার তাঁর সারেং বৌ উপন্যাসের জন্য। পশ্চিম পাকিস্তানের আহমদ নদিম কাশমি পুরস্কৃত হন কবিতার জন্য। তিনি একজন প্রগতিশীল উর্দু কবি। এই বর্ষীয়ান কবি ছোটগল্প লিখেও প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
[কালের ধুলোয় লেখা, পৃ. ১৫৪-৫৫]
আদমজী, দাউদ প্রভৃতি পুরস্কার সরকারের তত্ত্বাবধানেই প্রবর্তিত হয়। জমকালো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হতো করাচিতে। শামসুর রাহমান, শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী প্রমুখ পিআইএ বা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিমানে করাচি যান। পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের হাত থেকে। শামসুর রাহমানের স্মৃতিচারণা :
‘শহীদুল্লাহ কায়সার এবং আমি ১৯৬৩ সালে করাচিতে যাই আদমজী পুরস্কার গ্রহণের উদ্দেশ্যে। শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচিতি আমার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ছিল সঙ্গত কারণেই। প্রগতিশীল রাজনীতিতে সমর্পিত ছিলেন তিনি।… পুরস্কারের অর্থমূল্য আহামরি কিছু ছিল না। [কথাটি সঠিক নয়] তবে সেকালের পক্ষে ভালোই। তবে কবিতার জন্য জীবনের প্রথম পুরস্কার লাভের একটি আলাদা শিহরণ বোধ করেছিলাম। পুরস্কারটি গ্রহণ করতে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের হাত থেকে, যার বিরুদ্ধে হাতির শুঁড় কবিতাটি লিখেছিলাম। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমাদের বসতে হয়েছিল একেবারে প্রেসিডেন্টের পাশে। কথা প্রসঙ্গে আইয়ুব খান আমাকে আমার বইয়ের নাম এবং তার অর্থ অনুবাদ করতে বললেন। আমি নির্দ্বিধায় বললাম, সানরেইস অন দ্য স্কাল। সেই মুহূর্তে আমার মুখে রৌদ্র করোটিতের ইংরেজি এ রকমই এসেছিল। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব মৃদু হাসলেন।’ [পৃ. ১৫৫]
ষাটের দশকে আইয়ুব খানের পাশে বসার সৌভাগ্য ছিল বিধাতার সান্নিধ্য লাভের মতো।
প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সেই স্মৃতি আরও বিস্তারিত আমাদের শুনিয়েছেন অনেকবার। প্রেসিডেন্টের এক পাশে শামসুর রাহমান, অন্য পাশে শহীদুল্লাহ কায়সার। মঞ্চে পশ্চিম পাকিস্তানের পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যান্য লেখক। শামসুর রাহমান তার স্মৃতিকথায় বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন, লেখক সংঘ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নেই, যদিও লেখক সংঘের পরিক্রম-এর তিনি ছিলেন নিয়মিত লেখক এবং সেখান থেকে লেখার জন্য সম্মানী পেতেন। লেখক সংঘের বর্ধমান হাউসের ছোট্ট ঘরের আড্ডায়ও তিনি যোগ দিতেন।
লেখক সংঘ প্রকাশনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে ছিল আনিসুজ্জামানের মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য। বিষয়বস্তুর কারণেই হোক বা পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার জন্যই হোক, এই বইটিও তাকে এনে দেয় প্রচুর খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা। মুসলমান লেখকদের নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করায় ১৯৬৫ সালে আনিসুজ্জামান পান। দাউদ পুরস্কার। মুনীর চৌধুরীও একই সঙ্গে পুরস্কৃত হন তাঁর মীর মানস-এর জন্য, যা প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি। এ সম্পর্কে আনিসুজ্জামান স্বাধীনতার পর ১৯৭২-এ লেখেন :
‘দাউদ-পুরস্কার গ্রহণ করা আমাদের উচিত হয়েছিল কিনা, এ সম্পর্কে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছিল; কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি তর্কের ঝড় উঠেছিল পাক-ভারত সংঘর্ষের সময়ে মুনীর চৌধুরী ও আমাদের অপর দুই সহকর্মীর বেতার অনুষ্ঠান নিয়ে।’
[আনিসুজ্জামান, মুনীর চৌধুরী, ১৯৭৫, পৃ. ২৯]
লেখক সংঘ প্রকাশ করেছিল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাহিত্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ অন্বেষণ, হামেদ আহমেদের উপন্যাস প্রবাহ, আলাউদ্দিন আল আজাদের উপন্যাস ক্ষুধা ও আশা, হাসান আজিজুল হকের গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, ইব্রাহীম খাঁর অনুবাদ ইতিকাহিনী, হাসান হাফিজুর রহমানের আরো দুটি মৃত্যু গল্পের বই প্রভৃতি। মুনীর চৌধুরীর শেকসপিয়ারের অনুবাদ মুখরা রমণী বশীকরণ, নজরুলের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে বিদ্রোহী রণক্লান্ত– রবীন্দ্রনাথ থেকে সাম্প্রতিককালের ৪৬ কবির নজরুলের ওপর লেখা ৪৬টি কবিতার সংকলন। এটি সম্পাদনা করেন কবি আবদুল কাদির।
লেখক সংঘ দুটি চমৎকার কবিতার সংকলন প্রকাশ করে। আফ্রিকা ও এশিয়ার কবিদের কবিতার অনুবাদ আফ্রো-এশীয় কবিতাগুচ্ছ এবং সমাজতান্ত্রিক চীনের একটি নাটকের অনুবাদ শ্বেতকুন্তলা। পূর্ব বাংলার প্রতিনিধিত্বশীল কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধের তিনটি সংগ্রহ প্রকাশের প্রকল্পও নেয়। পূর্ব বাংলার প্রবন্ধ সম্পাদনার দায়িত্ব নেন আহমদ শরীফ, পূর্ব বাংলার গল্পের দায়িত্ব পালন করেন মুনীর চৌধুরী এবং পূর্ব বাংলার কবিতার সম্পাদক শামসুর রাহমান। লেখক সংঘে জড়িত থাকার কথা শামসুর রাহমানের কোনো স্মৃতিচারণায় পাওয়া যায় না।
লেখক সংঘে যারা কাজ করেছেন তারা আমাদের সাহিত্যের উপকার করেছেন। বাংলাদেশ ও বাঙালির তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি। আইয়ুব সরকারের প্রশংসা করে প্রচারণাও সেখান থেকে হয়নি। কিন্তু লেখক সংঘের সঙ্গে জড়িত থাকাকে স্বাধীনতার পরে কেন তাঁরা অমর্যাদাকর মনে করেছেন তা বোধগম্য নয়।