১৪. রাষ্ট্রপতিত্বের পর
পুষ্পের দিকে তাকাও, কত স্বাচ্ছন্দ্যে সে তার সুগন্ধ আর মধু বিলিয়ে দেয়। যখন তার কাজ শেষ হয়ে যায়, সে তখন নীরবে ঝরে পড়ে।
-ভগবদ্গীতা
.
রাষ্ট্রপতি হিসাবে আমার ব্যস্ততা ছিল। প্রথম বছরে আমার লক্ষ্য ছিল আমাদের সুন্দর দেশটার চারদিকে ভ্রমণ করা। সমস্ত রাজ্যে গিয়ে দেখা মানুষ কিভাবে তাদের পরিমন্ডলে সুখ দুঃখের মাঝ দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। কেরালা উপকূলের ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে লাক্ষাদ্বীপ গঠিত। আমার বড় দুঃখ আমি এই দ্বীপমালা সফর করতে পারি নি। অন্যান্য সব জায়গা আমি সফর করেছি একবার কিংবা একাধিকবার। প্রত্যেকটা এলাকাতেই নিজস্ব আকর্ষণ আছে। ভারতীয় হিসাবে সবার মধ্যেই সরলতা আর আতিথেয়তার মনোভাব আমি লক্ষ্য করেছি। অন্যেরা আমার এই সফরকে কী দৃষ্টিতে দেখেছিল সেটাই দেখবার বিষয়। আমি আউট লুক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটা রিপোর্ট এখানে উদ্ধৃত করতে পারি। ‘কালাম একজন পরিব্রাজক রাষ্ট্রপতি, তার ১০ মাসের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পাবার পর তিনি এর মাঝেই ২১ টি রাজ্য সফর করেছেন। এটা বলতে দ্বিধা নেই অধিকাংশ রাষ্ট্রপতি এই কাজটা পাঁচ বছরে সম্পন্ন করতেন। এই সফরগুলোর মধ্যে ১৫ টারও অধিক প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।…’
রাষ্ট্রপতিত্বের শেষ দিকে, আমি দুটো বিষয়ে হিসাব করে সন্তুষ্ঠ হলাম। আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের বিষণ্নতা আর নিরাশার ভাব লক্ষ্য করি। আমি তাদের কাছে গিয়ে বলি তাদেরকে আস্থাশীল এবং কাজের প্রতি উৎসাহী হতে হবে।। কোন যুবককেই ভবিষ্যতকে ভয়ের চোখে দেখতে হবে না যখন ভারত সুন্দরভাবে প্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত উন্নত হবে, তোমাদেরও উন্নতি ঘটবে, আমি তাদেরকে বললাম। প্রকৃতপক্ষে, প্রবৃদ্ধির হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধাপে ধাপে বাড়ছিল। আমার আমল শেষে যুবকদের মনোভাব ভিন্ন রকমের ছিল। তারা উন্নত ভারতে বসবাস করতে চাচ্ছিল। আর ভারতের উন্নয়নের জন্য কাজ করতেও তারা ইচ্ছুক ছিল।
লোকজন অবাক হতেন আমি কিভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকার মাঝেও বাইরের সাথে খাপখাইয়ে নিতে পারি। যা হোক, আমি রাষ্ট্রপতি হবার আগে আমি গভীরভাবে আমার লেখালেখি, শিক্ষাদান আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবকদেরকে কাজে উদ্বুদ্ধকরণে ব্যস্ত ছিলাম। সে সময় আমাকে সেমিনার ও কনফারেন্সে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হতো। আগের কাজগুলোতে ফিরে যেতে আমি ইচ্ছে করলাম। আন্না ইউনিভার্সিটি, চেন্নাই, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি), হায়দ্রাবাদ, পন্ত ইউনিভার্সিটি অব এ্যাগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, পন্তনগর, দিল্লি ইউনিভার্সিটি; আইআইএম আহমেদাবাদ; আইআইএম, ইন্দোর; আইআইটি, খড়গপুর, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বিএইচইউ) এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আমার ডাক আসছিল।
২৬ জুলাই ২০০৭ থেকে আজ পর্যন্ত আমি আমার জীবনের মিশনকে মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাই। আমার শিক্ষাদান ও গবেষণা কর্ম এখন পন্ত ইউনিভার্সিটিতে চালিয়ে যাচ্ছি। আমার দিকদর্শন হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদেরকে ভারতের সবুজ বিপ্লবের হাতিয়ার করা। পন্ত ইউনিভার্সিটি ভারতের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশাল এলাকায় এক্সপেরিমেন্টাল ফার্মিং এর ব্যবস্থাযুক্ত এটা খুবই বড় একটা ক্যাম্পাস। খড়গপুরে ভারতের প্রথম আইআইটি, বিশিষ্ট প্রফেসর হিসাবে আমি শিখিয়েছিলাম লিডারসিপ এন্ড সোসাল ট্রানফরমেশন, হায়দ্রাবাদের আইআইআইটিতে আমি শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলাম ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড নলেজ প্রোডাক্টস সম্বন্ধে, যা ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনের সাথে সম্পর্কিত ছিল। বিএইচইউ আর আন্না ইউনিভার্সিটিতে আমি শিখিয়েছি টেকনোলজি এন্ড ইটস নন লাইনার ডাইমেনশন টু ট্রান্সফরম রুরাল ইকোনমি, আহমেদাবাদের আইআইএম এবং ইউনাইটেড স্টেটস এর লেক্সিংটন এর গাট্টোন কলেজ অব বিজনেস এন্ড ইকোনমিকস এ পড়িয়ে ছিলাম ন্যাশনাল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স ডেভেলপমেন্টের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত একটা ইন্টার্যাকটিভ কোর্স। ছাত্রছাত্রীরা উন্নয়ন সম্পর্কিত আউট অব দি বক্স আইডিয়া প্রদান করেছিল, যার টেন পিলার অব এ কমপিটেটিভ প্রোফাইল ২০২০ এর আগেই ভারতের জন্য অতি জরুরি ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একদল ছাত্রছাত্রী পিইউআর কে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারসিপ ভেন্চার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছিল।
বিদেশ থেকে বহুসংখ্যক আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে আসার পর ইউনাইটেড স্টেটস, ইউনাইটেড কিংডম, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ইসরায়েল, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নেপাল, আয়ারল্যান্ড, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, তাইওয়ান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও শিল্পায়ন সমাজ থেকে আমন্ত্রণ লাভ করেছিলাম। সফর কালে আমি অনেকগুলো ইউনিভার্সিটি ও রিচার্স ইনস্টিটিউট, শিল্পকারখানা পরিদর্শন করি। ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ কনফারেন্সেও যোগদান করি। আমি সব জায়গাই ভারতের উন্নয়ন মিশনের কথা ব্যক্ত করে তাদের কাছে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মূল্যবোধ শিক্ষার জন্য অন্যান্য দেশের অংশীদারিত্বের আহ্বান জানাই। যতদূর মনে পড়ে, আমি ১২০০ এরও বেশি প্রোগ্রাম, মিটিং যোগদান করি এবং পনেরো মিলিয়ন লোক বিশেষ করে তরুণদের সাথে মিলিত হই। তরুণদের স্বপ্নগুলোকে আমি শেয়ার করি। আমি বুঝতে চেষ্টা করি তারা কিভাবে নিজেদেরকে অনুপম করে গড়ে তুলতে চায়, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে তারা কেমনভাবে তাদের সাহস, শক্তি আর উদ্দীপনাকে কাজে লাগাতে চায়। সমস্ত চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে তাদের এই কর্মযজ্ঞই উন্নয়নের ধারায় পৌঁছে দেবে ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০৩০ সফল করতে।
এইসব ঘটনার প্রত্যেকটি আমার জীবনে একটা নতুন দিকদর্শন প্ৰদান করেছিল। আমি বিদেশ সফর করে কী কী শিখতে পেরেছি সে সম্বন্ধে আমি দেশে ফিরে এসে বিশ্লেষণ করতে লেগে পড়লাম। আমি আশার আলো দেখতে পেলাম সমস্ত দিকের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলেই সমৃদ্ধ হবে সবার জীবন।
সবারই কথা কাজ আর কাজ। সব কাজকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে সময়ের প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, আমার সিডিউল যেন নিজেই প্রাণ পেল। এখন আগের চেয়ে আমার কাজ অনেক বেশি। আমি চিন্তা করলাম নিজের জন্য বেশি বেশি ভাববার প্রয়োজন নেই। একদিন আগে আমি আর. কে, প্রসাদের সাথে কথা বলেছিলাম। সে আমার সিডিউল এবং প্রোগ্রাম দেখা শোনা করতো। শুক্রবারে আমি মইসোর থেকে ফিরে এসে সোমবারে মোরাদাবাদ ও রামপুর যাবার কথা ছিল। মাঝরাতে দিল্লিতে ফিরে আসার আগে চারটা অনুষ্ঠানে যোগ দেবার কথা। বুধবারে প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্ক এ একটা ভাষণ দান, বৃহস্পতিবারে গৌহাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা, শুক্রবার রাতে দিল্লিতে ফিরে আসা, তারপর আবার শনিবার সকালে বিমান যোগে লাখনৌ যাত্রা ধর্মযাজকদের কনক্লেভ এ যোগদানের উদ্দেশ্যে। চলতি মে মাসের সিডিউল ছিল এমন :
সিডিউল ফর মে ২০১২
মঙ্গলবার, ১ মে
* বোকারো পরিদর্শন : বোকারো স্টিল প্ল্যান্ট পরিদর্শন এবং ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ, চিন্ময় বিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ।
* রাচি’র’ হোয়াট ক্যান আই গিভ’ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ।
শনিবার ও রবিবার, ৫ ও ৬ মে
*চেন্নাই, ত্রিচি এবং কাড়াইকুড়ি সফর
সোমবার, ৭ মে
* গভর্নমেন্ট এসআর সেকেন্ডারি স্কুল, ছত্রিশগড় থেকে আসা ৩০ জন ছাত্র ও শিক্ষকের সাথে মিলিত হওয়া
বুধবার ৯ মে
* মথুরার সাংস্কৃতি গ্রুপ অব ইন্স্টিটিউট এর ‘হোয়াট ক্যান আই গিভ’ প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ।
* বৃন্দাবনের বিধবাদের জন্য নির্মিত পাগল বাবার আশ্রম পরিদর্শন
শুক্রবার ১১ মে
* সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টে টেকনোলজি ডে উদ্বোধন
শনিবার ১২ মে
* ইউ পি’র আজমগড়ে বেদান্ত হসপিটাল উদ্বোধন এবং আজমগড়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান
মঙ্গলবার ১৫ মে
* ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কর্পোরেশনের ২০১২ এর ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব কো-অপারেটিভ উদ্বোধন
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ১৭ -১৮ মে
* সিএমআর ইস্টিটিউট অব টেকনোলজির গ্রাজুয়েশন ডে সেলিব্রেশনে প্রধান অতিথি
* মইসোর এ ডিফেন্স ফুড রিচার্স ল্যাব এর গোল্ডেন জুবিলীর অনুষ্ঠানে ভাষণদান
* অল ইন্ডিয়া ইন্স্টিটিউট অব স্পিক এন্ড হেয়ারিং পরিদর্শন
* জেএসএস ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন ও ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান
সোমবার ২১ মে
* তীর্থঙ্কর মহাবীর ইউনিভার্সিটি মোরাদাবাদ এর প্রথম কনভোকেশনে চিফ গেস্ট
* রামপুর পরিদর্শন, রামপুর জেলার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান * সি.এল. গুপ্তা আই ইনস্টিটিউট পরিদর্শন এবং ডাক্তার স্টাফদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান
* মোরাদাবাদ ইনস্টিটিউড অব টেকনোলজি পরিদর্শন এবং ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান
বুধবার ২৩ মে
* প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্কে আফ্রিকান নেশনস এর উদ্দেশ্যে ভাষণদান
বৃহস্পতিবার ২৪ মে
* গৌহাটি সফর এবং আইআইটি গৌহাটি এর বাৎসরিক কনভোকেশনে ভাষণদান
শনিবার ২৬ মে
হিন্দুস্থান টাইমস হিন্দুস্থান ইউ পি এ ভাষণ, লাখনৌ এর ডেভেলপমেন্ট কনক্লেভে ভাষণ দান
অনুষ্ঠানগুলোর বিষয় বৈচিত্র্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভাষণ দিতে হয়েছিল। বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভাষণ তৈরি করা হয়েছিল।
.
২৬ মে লাখনৌ কনক্লেভ এ উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের উপর মত বিনিময় করাই ছিল উদ্দেশ্য। স্বাভাবিকভাবে আমি আমার উপস্থাপনার জন্য প্রস্তুত হলাম। বিশেষজ্ঞদের সাথে এবং নতুন চিফ মিনিস্টার অখিলেশ যাদবের সাথে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবো বলে আমি খুশি হলাম। আটত্রিশ বছর বয়সী দেশের তরুণতম চিফ মিনিস্টার তিনি।
আর্থিক অগ্রগতিতে ইউপি দেশেরমধ্যে সবচেয়ে উচুঁ স্থানে। প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদে ইউপি খুবই ঋদ্ধ। ইউপিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ তরুণ মানব সম্পদ হিসাবে বিশেষ অবদান রেখে আসছিল। আমার বিশেষজ্ঞ আমাকে জানালেন ২০১৬ এর মধ্যে বিশ্বের ১০০ দক্ষ চাকুরীজীবীদের মধ্যে প্রায় আটজনই আসবে এই রাজ্য থেকে।
ইউপি এর ইকোনোমিক প্রোফাইল পর্যালোচনা করে আমি জানতে পারলাম জনসংখ্যার ৭৩ পার্সেন্ট কৃষি এবং কৃষি সম্পর্কিত কাজের সাথে জড়িত। রাজ্যের ৪৬ পার্সেন্ট আয় আসে কৃষি খাত থেকে। ১১তম প্লান পিরিয়ডে রাজ্যের জিএসডিপি(গ্রোস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ছিল ৭.৩ পার্সেন্ট, লক্ষ্যমাত্রা ৬.১ পার্সেন্টের চেয়ে বেশি। রাজ্যে ২.৩ মিলিয়ন ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিট আছে। বর্তমানে ২.৫ মিলিয়ন তরুণ বেকার, তাদের মধ্যে ০.৯ মিলিয়নের বয়স পঁয়ত্রিশের বেশি।
এই প্রেক্ষাপটকে মনে রেখে আমি বললাম বর্তমান পার ক্যাপিটা ইনকাম ২৬,০৫১ রুপি থেকে ১০০,০০০ রুপিরও বেশিতে উন্নিত করা প্রয়োজন। শিক্ষিতের হার ১০০ পার্সেন্টে উন্নিত করা দরকার। আইএমআর ( ইন্টফ্যান্ট মোর্টালিটি রেট) ১০ এরও নিচে নামিয়ে আনা প্রয়োজন, তার সাথে সাথে লেপরোসি, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু এবং টিবির মতো রোগগুলোকে নির্মূল করতে হবে।
আমি বললাম এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০০ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। আমার মতামতগুলোর মধ্যে আর একটা ছিল ইউপি মানুষের দক্ষতা জরিপ করা সম্পর্কিত। রাজ্যের সমস্ত জেলার বিভিন্ন ফিল্ডের মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি যাচাই করা এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত হবে। আমার ইচ্ছা ছিল ডাইনামিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজ্যের উন্নতি করা।
.
ইউনাইটেড স্টেটস ও ভারতের মধ্যে ইন্ডো-ইউএস নিউক্লিয়ার ডিল নামে ১২৩ এগ্রিমেন্ট চুক্তি সহি হয়।। এই চুক্তির অধীনে ভারত সিভিল ও মিলিটারী নিউক্লিয়ার সুযোগ সুবিধাকে পৃথক করতে এবং সমস্ত সিভিল নিউক্লিয়ার সুযোগ সুবিধাকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এর অধীন নিরাপদ করতে রাজি হলো। এর বিনিময়ে ইউনাইটেড স্টেটস রাজি হলো ভারতের সাথে সম্পূর্ণ সিভিল নিউক্লিয়ার কো-অপারেশনে ইউপি (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ এ্যালায়েন্স) সরকার দীর্ঘকালীন আলাপ আলোচনান্তে ২০০৮ এর ২২ জুলাই আইএইএ-এর সাথে সেফগার্ড এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের আগে মুখোমুখি হলো আস্থা ভোটের।
বামপন্থী দল বাইরে থেকে ইউপিএ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিরোধিতা করে সমর্থন প্রত্যাহার করলো। সমাজবাদী দলের প্রেসিডেন্ট মুলায়েম সিং যাদব এবং তার সহযোগী অমর সিং দু’জনেই সমর্থনের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হলেন। ডিল ভারতের জন্য অনুকূল হবে নাকি পশ্চিমারা বিশেষ করে ইউনাইটেড স্টেটস এর ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করবে এসব বিষয়ে তারা নিশ্চিত ছিলেন না। অবস্থা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য মুলায়েম সিং ও অমর সিং ১০ রাজাজী মার্গে আমার বাসভবনে সাক্ষাৎ করে এই ডিল এ ভারতের সুবিধা ও অসুবিধা সম্বন্ধে আলোচনার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। আমি তাদেরকে বললাম এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে থোরিয়াম ভিত্তিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর তৈরিতে ভারত ভবিষ্যতে আত্মনির্ভর হবে। তার অর্থ, আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা এনার্জি সেক্টরকে উন্নত করতে পারবো। বর্তমানে আমাদের সঞ্চিত ইউরেনিয়ামের জন্য ডিল আমাদের সহায়ক হবে।
একবার তামিলনাড়ুর কুনদানকুলামে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠে, বিশেষ করে ২০১১ তে জাপানের ফুকুসীমাতে সুনামী আঘাত হানলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও দ্বারা সমর্থিত স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে। তারা দাবি করে কুনদানকুলামের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে হবে। তারা ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। মারাত্মক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আমি ভারতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নিরাপত্তা সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে একটা স্টাডি করে তার ফলাফল প্রকাশের জন্য এগিয়ে আসি। এ বিষয়ে ইংরেজি খবরের কাগজে ও স্থানীয় খবরের কাগজেও তা প্রকাশ করি। আমি আমার আর্টিকেলে তুলে ধরি উন্নয়নের জন্য কেন এই টেকনোলজির প্রয়োজন।
এর পাশাপাশি আমি আমার টিম সাথে নিয়ে ২,০০০এম.ওয়াট থার্ড জেনারেশন প্লাস প্লান্ট পর্যবেক্ষণ করতে কুনদানকুলামে যাই। আমি বুঝতে চেষ্টা করি কেন স্থানীয় লোকজন জাপানের ফুকুসীমার সুনামীর ঘটনাকে এর সাথে সম্পৃক্ত করছে। আমি সারাদিন বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় লোকজনদের সাথে মিলিত হই এবং এই প্লান্ট থেকে প্রথম পর্যায়ে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে সে সম্বন্ধে স্টাডিও করি। আমি একটি নোট থেকে নিশ্চিত হই যে এটাতে সর্বশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে এটা নিরাপদ। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের নিরাপত্তা সম্পর্কে চারটি বিষয় যাচাই করার প্রয়োজন দেখা দেয়। স্ট্রাকচারাল ইন্ট্রিগ্রিটি সেফটি, থারমাল হাইড্রোলিক সেফটি, রেডিয়েশন সেফটি এবং নিউট্রোনিক সেফটি। এই প্লান্টে এই চারটি সেফটিই সুরক্ষিত আছে। পরে আমি মতামত দেই যে প্লান্ট সংলগ্ন গ্রামবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রশিক্ষণ এবং বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সেখানে একটি বিশেষ পিইউআরএ কমপ্লেক্স স্থাপন করা উচিত।
আমার প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়েছে জেনে আমি খুশি হই। সরকার ঘোষণা করলো পাওয়ার প্লান্টের লভ্যাংশের ২ পার্সেন্ট কুনদানকুলাম এলাকার লোকজনদের কল্যাণে ব্যয় হবে। প্লান্ট চালু হওয়ায় এনার্জি সেক্টরের অগ্রগতির দ্বার উন্মোচিত হলো।
//গত পাঁচ বছরে আমি লক্ষ লক্ষ শিশু,তরুণ আর জ্ঞানীগুণিদের সাথে মিলিত হবার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি দেশ ও বিদেশের বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং রিচার্সমূলক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সুযোগও পেয়েছিলাম। একজন শিক্ষক হিসাবে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের কাছে ন্যাশনাল ইস্যুর আলোকে সমাজকে গড়ে তোলার সুযোগ আমার ঘটেছিল। সর্বপরি আমি আটটিরও অধিক রাজ্যে ইমার্জেন্সি ট্রাউমা ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে লাইভ সেভিং সিস্টেমকে পরিচিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। /