অথর্ববেদ–সংহিতা — চতুর্দশ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : বিবাহ–প্রকরণম
[ঋষি : সূর্যা সাবিত্রী। দেবতা : আত্মা, সোম, বিবাহ, বধূবাস, সংস্পর্শমোচন, বিবাহমন্ত্ৰাশিষ। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী, বৃহতী, উষ্ণিক।]
সত্যেনোত্তভিতা ভূমিঃ সূর্যেপোত্তভিতা দৌঃ। ঋতেনাদিত্যাস্তিষ্ঠন্তি দিবি সোমো অধি শ্রিতঃ ॥ ১৷৷ সোমেনাদিত্য বলিনঃ সোমেন পৃথিবী মহী। অথথা নক্ষত্রাণামেষামুপস্থে সোম আহিতঃ॥ ২॥ সোমং মন্যতে পপিবান্ যৎ সম্পিষন্ত্যোধি। সোমং যং ব্রহ্মাণে বিদুন তস্যাশ্নাতি পার্থিবঃ ॥ ৩৷৷ যৎ ত্বা সোম প্রপিবন্তি তত আ প্যায়সে পুনঃ। বায়ুঃ সোমস্য রক্ষিতা সমানাং মাস আকৃতিঃ। ৪আচ্ছদ্বিধানৈপিতে বাহঁতৈঃ সোম রক্ষিতঃ। গ্রামিচ্ছুম্বন্ তিষ্ঠসি ন তে অশ্নাতি পার্থিবঃ ॥ ৫৷৷ চিত্তিরা উপবহণং চক্ষুরা অভ্যঞ্জন। দ্যৌভূমিঃ কোশ আসী যদয়াৎ সূর্যা পতি৷৬৷৷ রৈভ্যাসীদদেয়ী নারাশংসী নন্যাচনী। সূর্যায় ভদ্ৰমিদ বাসো গাথয়ৈতি পরিষ্কৃতা ॥ ৭৷ স্তোমা আসন প্রতিষয়ঃ কুরীরং ছন্দ ওপশঃ। সূর্যায় অশ্বিনা বরাগ্নিরাসীৎ পুরোগবঃ ॥ ৮সোমমা বধুয়ুরভবদখিনাস্তামুভা বরা। সূর্যাং যৎ পত্যে শংসন্তীং মনসা সবিতাদদাৎ ॥ ৯৷৷ মনো অস্যা অন আসীদ দৌরাসীদুত চ্ছদিঃ।। শুক্রাবনড়াহাবাস্তাং যদয়াৎ সূর্যা পতিম্ ॥ ১০ ঋকত্সামাভ্যামভিহিতৌ গবৌ তে সামনাবৈতাম। শ্রোত্রে তে চক্রে আস্তাং দিবি পন্থাশ্চরাচরঃ। ১১। শুচী তে চক্রে যাত্যা ব্যানো অক্ষ আহতঃ। অনো মনস্ময়ং সূর্যারোহৎ প্রতী পতিম্ ॥ ১২৷৷ সূর্যয় বহতুঃ প্ৰাথাৎ সবিতা যমবাসৃজৎ। মঘাসু হন্যন্তে গাবঃ ফনীষু বুহ্যতে ॥১৩৷৷ যদশ্বিনা পৃচ্ছমানাব্যতং ত্রিচক্রেণ বহতুং সূর্যায়াঃ। কৈকং চক্রং বামাসীৎ ক দোয় তস্থথুঃ ॥১৪৷ যদযাতং শুভশতী বরেয়ং সূর্যামুপ। বিশ্বে দেবা অনু তুদ বামজান পুত্রঃ পিতরমবৃণীত পূষা ৷ ১৫৷৷ ঘে তে চক্রে সূর্যে ব্রহ্মাণ ঋতুথা বিদুঃ। অথৈকং চক্রং যদ গুহা তদদ্ধাতয় ইদ বিদুঃ ॥ ১৬৷৷ অর্যমণং যজামহে সুবন্ধুং পতিবেদন। উর্বরুকমিব বন্ধনাৎ প্রেতো মুঞ্চামি নামুতঃ ॥ ১৭প্রেত মুঞ্চামি নামুতঃ সুবদ্ধামমুতস্কর। যথেয়মিন্দ্র মীবঃ সুপুত্রা সুভগাসতি। ১৮৷৷ প্র ত্বা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাদ যেন ত্বাবাৎ সবিতা সুশেবাঃ। ঋতস্য যোনৌ সুকৃতস্য লোকে স্যোনং তে অস্তু সহসম্ভলায়ৈ ৷ ১৯৷৷ ভগস্তৃত নয়তু হস্তগৃহ্যাশ্বিনা ত্বা প্র বহতাং রথেন। গৃহা গচ্ছ গৃহপত্নী যথাসো বশিনী ত্বং বিদথমা বদাসি। ২০৷ ইহ প্রিয়ং প্রজায়ৈ তে সমৃধ্যতামস্মিন্ গৃহে গার্হপত্যায় জাগৃহি। এনা পত্যা তন্বং সং স্পৃশস্বাথ জির্বিবিদথমা বদাসি ॥ ২১৷৷ ইহৈব স্তং মা বি যৌষ্টং বিশ্বমায়ুবত। ক্রীড়ন্তৌ পুত্রৈপ্তভিমোদমানৌ স্বস্তকৌ॥ ২২৷ পূর্বাপরং চরতো মায়য়ৈতৌ শিশু ক্রীড়ন্তৌ পরি যাতোহর্ণবম। বিশ্বান্যো ভুবনা বিচষ্ট ঋতূরনন্যা বিদধজ্জায়সে নবঃ ॥ ২৩ নবোনবো ভবসি জায়মানোহাং কেতুরুষসামেষ্যগ্র। ভাগং দেবেভ্যো বি দধাস্যায় প্র চন্দ্রমস্তিরসে দীর্ঘমায়ুঃ ॥ ২৪৷৷ পরা দেহি শামুল্যং ব্রহ্মভ্যো বি ভজা বসূ। কৃত্যেষা পদ্বতী ভূত্বা জায়া বিশতে পতিম্ ॥ ২৫৷৷ নীললোহিতং ভবতি কৃত্যাসক্তিৰ্যজ্যতে। এধন্তে অস্যা জ্ঞাতয়ঃ পতিৰ্বন্ধেযু বধ্যতে৷ ২৬৷৷ অশ্লীলা তনূর্ভবতি রুশতী পাপয়ামুয়া। পতির্যদ বব্বো বাসসঃ স্বমঙ্গমভূর্ণতে। ২৭। আশসনং বিশসনমথো অধিৰিকৰ্তনম। সূর্যায়াঃ পশ্য রূপাণি তানি ব্রহ্মোত শুম্ভতি। ২৮এয় তৃষ্টমেতৎ কটুকমপাষ্টবদ বিষবন্নৈতদত্তবে। সূর্যাং যো ব্রহ্মা বেদ স ইদ বাধূয়মহতি। ২৯ স ইৎ তৎ সস্যানং হরতি ব্রহ্মা বাসঃ সুমঙ্গল। প্রায়শ্চিত্তিং যো অধ্যেতি যেন জায়া ন রিষ্যতি ॥ ৩০ যুবং ভগং সং ভরতং সমৃদ্ধমৃতং বদন্তাবৃতোদ্যেষু। ব্ৰহ্মণস্পতে পতিমস্যৈ নোচয় চারু সম্ভলো বদতু বাচমেতাম্ ॥ ৩১ ইহেদসাথ ন পরো গমাথেমং গাবঃ প্ৰজয়া বর্ধয়াথ। শুভং যতীরুদ্বিয়াঃ সোমবর্ধমো বিশ্বে দেবাঃ ক্রন্নিহ বো মনাংসি। ৩২। ইমং গাবঃ প্রজয়া সং বিশাথায়ং দেবানাং ন মিনাতি ভাগ। অস্মৈ বঃ পূষা মরুতশ্চ সর্বে অম্মৈ বো ধাতা সবিতা সুবাতি ॥ ৩৩। অনৃক্ষরা ঋজবঃ সন্তু পন্থানো যেভিঃ সখায়ো যন্তি নো বরেয়ম। সং ভগেন সময্যা সং ধাতা সৃজতু বৰ্চসা ॥ ৩৪৷৷ যচ্চ বর্চো অক্ষেষু সুরায়াং চ যদাহিত। যদ গোম্বশ্বিনা বৰ্চস্তেনেমাং বসাবতম্ ॥ ৩৫৷৷ যেন মহানগ্ল্যা জঘনমখিনা যেন বা সুরা। যেনাক্ষা অভ্যষিচ্যন্ত তেনেমাং বচসাবতম্ ॥ ৩৬ ৷৷ যো অনিখো দীদয়স্বন্তর্যং বিপ্রাস ঈড়তে অধ্বরেষু। অপাং নপান্মধুমতীরপো দা যাভিরিন্দ্রো বাবৃধে বীৰ্য্যবান্ ৷৷ ৩৭৷ ইদমহং রুশন্তং গ্রাভং তদূষিমপোহামি। যো ভদ্রো রোচনস্তমুদচামি ॥ ৩৮ আস্যৈ ব্রাহ্মণাঃ মপনীৰ্হরবীরপ্পীরুজাপঃ। অৰ্মণণা অগ্নিং পযেতু পূষ প্রতীক্ষন্তে শ্বশুরো দেবশ্চ ৷৷ ৩৯। শং তে হিরণ্যং শমু সন্ধাপঃ শং মেথির্ভবতু শং যুগস্য তর্ম। শং ত আপঃ শতপবিত্ৰা ভবন্তু শমু পত্যা তন্বং সং স্পৃশস্ব৷ ৪০৷৷ খে রথস্য খেহনসঃ খে যুগস্য শতক্রতো। অপালামিন্দ্র ত্রিপূত্বাকৃপণাঃ সূর্যচম্॥ ৪১। আশাসানা সৌমনসং প্রজাং সৌভাগ্যং রয়িম। পরনুব্রতা ভূত্বা সং নহ্যস্বামৃতায় কম্ ॥ ৪২৷৷ যথা সিন্ধুনদীনাং সাম্রাজ্যং সুষুবে বৃষা। এবা ত্বং সম্রাজ্ঞেধি পতুরস্তং পরেত্য। ৪৩৷৷ সম্রাজ্ঞেধি শ্বশুরেষু সম্রাজ্ঞত দেবৃষু। ননান্দুঃ সম্রাজ্ঞেধি সম্রাজ্ঞত শশ্বাঃ ॥ ৪৪৷৷ যা অকৃন্তন্নবয় যাশ্চ তত্নিরে যা দেবীরা অভিতোহদদন্ত। তাস্থা জরসে সং ব্যয়ায়ুষ্মতীদং পরি ধৎস্ব বাসঃ ॥ ৪৫। জীবং রুদন্তি বি নয়ন্ত্যধ্বরং দীর্ঘামনু প্রসিতিং দীধর্নরঃ। বামং পিতৃভ্যো য ইদং সমীরিরে ময়ঃ পতিভ্যো জনয়ে পরিজে। ৪৬। স্যোনং ধ্রুবং প্রজায়ৈ ধারয়মি তেহম্মানং দেব্যাঃ পৃথিব্যা উপস্থে। তমা তিষ্ঠানুমাদ্যা সুবৰ্চা দীর্ঘং ত আয়ুঃ সবিতা কৃপোতু ॥ ৪৭ ৷৷ যেনাগ্নিরস্যা ভূম্যা হস্তং জগ্রাহ দক্ষিণম্। তেন গৃহামি তে হস্তং মা ব্যথিষ্ঠা ময়া সহ প্ৰজয়া চ ধনেন চ ৷৷ ৪৮৷ দেবস্তে সবিতা হস্তং গৃহ্বাতু সোয়মা রাজা সুপ্রজসং কৃণোতু। অগ্নিঃ সুভগাং জাতবেদাঃ পত্যে পত্নীং জরদষ্টিং কৃণোতু ॥ ৪৯। গৃমি তে সৌভগত্বায় হস্তং ময়া পত্যা জরদষ্টিৰ্যথাসঃ। ভগো অর্যমা সবিতা পুরন্ধির্মহং ত্বাদুৰ্গাৰ্হপত্যায় দেবাঃ ॥ ৫০। ভগস্তে হস্তমগ্রহীৎ সবিতা হস্তমগ্রহী। পত্নী ত্বমসি ধর্মাহং গৃহপতিস্তব ॥ ৫১। মমেয়মস্তু পোষ্যা মহং হৃদদ বৃহস্পতিঃ। ময়া পত্যা প্রজাবতি সং জীব শরদঃ শতম্ ॥ ৫২। ত্বষ্টা বাসো ব্যদধাঙ্গুভে কং বৃহম্পতেঃ প্রশিষা কবীনাম। তেনেমাং নারীং সবিতা ভগশ্চ সূর্যামিব পরি ধত্তাং প্রজয়া ৷৷ ৫৩৷৷ ইন্দ্রাগ্নী দ্যাবাপৃথিবী মাতরিশ্বা মিত্রাবরুণা ভগো অশ্বিনোভা। বৃহস্পতির্মরুততা ব্ৰহ্ম সোম ইমাং নারীং প্রজয়া বধয়ন্তু ॥ ৫৪৷ বৃহস্পতিঃ প্রথমঃ সূর্যায়ঃ শীর্ষে কেশাঁ অকল্পয়ৎ। তেনেমামশ্বিনা নারীং পত্যে সং শোভয়ামসি ॥ ৫৫৷৷ ইদং তদ্রপং যদবস্ত যোষা জায়াং জিজ্ঞাসে মনসা চরন্তী। মন্বর্তিষ্যে সখিভিনবশ্বৈঃ ক ইমান বিদ্বান্ বি চচৰ্ত পাশা৷ ৫৬। অহং বি ষ্যামি ময়ি রূপমস্যা বেদদিৎ পশ্য মনসঃ কুলায়ম্। ন স্তেয়মদ্মি মনসোদমুচ্যে স্বয়ং শ্যুনো বরুণস্য পাশা৷ ৫৭৷ প্র ত্বা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাদ যেন ত্বাবধাৎ সবিতা সুশেবাঃ। উরুং লোকং সুগমত্র পন্থাং কৃপোমি তুভ্যং সহপত্নৈ বধু ৷৷ ৫৮উদ্যচ্ছধ্বমপ রক্ষো হনাথেমাং নারীং সুকৃতে দত। ধাতা বিপশ্চিৎ পতিমস্যৈ বিবেদ ভগো রাজা পুর এতু প্রজান ॥ ৫৯। ভগস্ততক্ষ চতুরঃ পাদা ভগস্ততক্ষ চত্বাযুলানি। ত্বষ্টা পিপেশ মধ্যতোহনু বর্ধানৎসা নো অস্তু সুমঙ্গলী ॥ ৬০৷৷ সুকিংশুকং বহতুং বিশ্বরূপং হিরণ্যবৰ্ণং সুবৃতং সুচক্র। আ রোহ সূর্যে অমৃতস্য লোকং স্যোনং পতিভ্যো বহতুং কৃণু ত্বম্ ॥ ৬১৷ অভ্রাতৃঘীং বরুণাপশুখ্রীং বৃহম্পতে। ইন্দ্ৰাপতিঘ্নীং পুত্রিনীমাম্মুভ্যং সবিতর্বহ৷৷ ৬২৷৷ মা হিংসিষ্টং কুমাৰ্যং স্কুণে দেবকৃতে পথি। শালায়া দেব্যা দ্বারং স্যোনং কৃশ্যে বধূপথ ৷ ৬৩। ব্রহ্মাপরং যুজ্যতাং ব্রহ্ম পূর্বং ব্রহ্মান্ততে মধ্যতো ব্রহ্ম সর্বতঃ। অনাব্যাপাং দেবপুরাং প্রপদ্য শিবা স্যোনা পতিলোকে বি রাজ ॥ ৬৪।
বঙ্গানুবাদ –সত্যের দ্বারা পৃথিবী-আকাশ ও সূর্য-চন্দ্রমা স্থিত, সূর্যের দ্বারা আকাশ স্থিত, সোমের দ্বারা পৃথিবী পূজিত ও সত্যবলযুক্ত হয়ে আছে। সোম নক্ষত্রগণের নিকটে থাকেন। সোম-ঔষধিকে চূর্ণ করে পানকারী জন নিজেকে সোমপায়ী বলে উপলব্ধি করে, কিন্তু এই সোম ভাগই সোম নয়; যাকে জ্ঞানীজন সোম বলেন, তা আরও কিছু, তাকে চূর্ণ করে পান করা যায় না।…যখন সূর্যা পতির নিকট চলেন, তখন জ্ঞান উপবহণ, চক্ষু অভ্যঞ্জন ও দ্যাবাপৃথিবী আবরণে পরিণত হয়। ন্যোচনী রৈম্যা সূর্যার সাথে গমন করে। তারা নারাশংসী গাথা সমূহে সজ্জিত হয়ে সূর্যার পরিধান বহন করে চলেছিল। স্তোত্রসমূহ সূর্যার কেশজাল, স্তুতিসমূহ প্রতিধি, অগ্নি পুরোগব ও অশ্বিদ্বয় সূর্যার বর হয়। যখন সে পতির সাথে মিলিত হয়, তখন মন রথরূপ হয়েছিল, শুভ্রতা বৃষভ হয়েছিল এবং দ্যুলোক গৃহরূপ হয়েছিল। ঋক্-সাম দুই বৃষভ, সূর্য-চন্দ্র চক্র, ব্যান অক্ষদণ্ড হয়েছিল এবং মঘা-ফাল্গুনী নক্ষত্রে রথ আকর্ষিত হয়েছিল। অশ্বিদ্বয় তিন চক্রের রথে আগমন করেছিলেন। সূর্যা রথে উপবিষ্টা হয়ে পতির সমীপে চলেন। সবিতা সূর্যাকে বিবাহের যৌতুক দেন। ইন্দ্র আশীর্বাদ করেন–এই কন্যা সৌভাগ্যবতী-সুসন্তানশালিনী হোক। এই মধুরভাষিণী শ্রেষ্ঠ কর্মশালিনী কন্যা সুখী হোক। সে স্বগৃহে গমন পূর্বক পালিকা এবং সর্ববশকত্ৰী হোক। আপন গৃহে গার্হপত্যাগ্নির প্রতি সচেতন থাকুক। তার সন্তানের নিমিত্ত বস্তুনিচয় বৃদ্ধি লাভ করুক।…ব্রহ্মণস্পতি এই পতি-পত্নীর মনকে উজ্জ্বল করুন।…পূষা, মরুৎ-গণ, ধাতা, সবিতা এদের মার্গকে সুগম করুক।…শ্বশুর-দেবর এর প্রতীক্ষায় আছেন।…হে বধূ? তোমার নিমিত্ত জল কল্যাণকারী হোক, আকাশ সুখদায়ী হোক, সুবর্ণ সুখদ হোক। তুমি কল্যাণ লাভ পূর্বক পতি-দেহকে স্পর্শ করো।…হে শতকর্মা ইন্দ্র! আমি সেই হবিকে পবিত্র করে সূর্য-সম দীপ্তিমান অগ্নিকে উপহার দিয়েছি। হে বধূ! সন্তান, ধন, সৌভাগ্য ও প্রসন্নতার কামনাশালিনী তুমি পতির অনুকূল থেকে অমৃতময় সুখ প্রাপ্ত হও। অমৃতবৰ্ষক সমুদ্র, যেমন নদীসমূহের রাজ্যকে প্রাপ্ত হয়, তেমনই তুমি পতিগৃহকে প্রাপ্ত হয়ে সম্রাজ্ঞীর সমান হও। তুমি শ্বশুর, দেবর, ননদ ও শ্বশ্র–সকলের মধ্যে সম্রাজ্ঞী হয়ে থাকো। হে আয়ুষ্মতী! স্ত্রীগণ কর্তৃক সূত্র-বুনন পূর্বক নির্মিত এই শতায়ু দানশীল বস্ত্র পরিধান করো। যজ্ঞরূপা কন্যাকে যখন পুরুষ (পতি) গ্রহণ পূর্বক গমন করে, তখন (কন্যার) পিতা শোক করতে থাকেন, কন্যাপক্ষীয় সকলে তার নিমিত্ত রোদন করে। এই নিমিত্ত, (বরের কথন)–হে বধূ! তুমি মাতৃপক্ষীয় এবং বরপক্ষীয় সকলকে আলিঙ্গন করো। আমি এই পাষাণ তোমার উপবেশনের জন্য রাখছি; হে : শোভনরূপশালিনী ও সকলকে প্রসন্নতা-দানশালিনী! তুমি এর উপর উপবিষ্টা হও। হে বধূ! যে প্রকারে অগ্নি এই পৃথিবীর দক্ষিণ হস্ত ধারণ করেছিলেন, সেই প্রকারে আমি তোমার পাণিগ্রহণ করছি। তুমি দুঃখী হয়ো না। আমার সাথে ধন-সন্তানসহ নিবাস করো।…তোমাকে ভগ, অৰ্মা, সবিতা ও লক্ষ্মী গৃহস্থ ধর্মের নিমিত্ত আমাকে প্রদান করেছেন।..তুমি আমার ধর্ম-পত্নী এবং আমি তোমার ধর্মপতি। বৃহস্পতি তোমাকে আমার নিমিত্ত দান করেছেন; অতএব তুমি সন্তানবতী ও শতায়ু হয়ে আমার পোষক থাকো। হে শুভে! বৃহস্পতির আজ্ঞাক্রমে ত্বষ্টাদেব এই কল্যাণকারী বস্ত্র নির্মাণ করেছেন। এই বস্ত্রের দ্বারা সবিতা ও ভগ দেবতা তোমাকে সন্তান-ইত্যাদি সম্পন্ন করুন। অশ্বিদ্বয় ইন্দ্রাগ্নি, মিত্রাবরুণ, দ্যাবাপৃথিবী, বৃহস্পতি, বায়ু, মরুৎ-বর্গ, ব্রহ্মা ও সোম দেবতা এই স্ত্রীকে সন্তানে সমৃদ্ধ করুন।…(ঋত্বিকের কথন)–হে অশ্বিদ্বয়! যেমন বৃহস্পতি সূর্যার কেশবিন্যাস করে সজ্জিত করেছিলেন, তেমনই আমরাও পতির নিমিত্ত এই স্ত্রীকে সজ্জিত করছি। আমি এর মনরূপ হৃদয়কে জ্ঞাত আছি। এর রূপকে দর্শন করে একে নিজের দ্বারা আবদ্ধ করছি। আমি চৌর্যকর্ম করছি না। স্বয়ং এর কেশরাশি গ্রথিত করে বরুণ-পাশ হতে মুক্ত করছি।….হে বৃহস্পতি! হে ইন্দ্র! হে সবিতা! এই বধূকে তার ভ্রাতা, পতি, পশু ইত্যাদির ক্ষয়কারিণী না করে পুত্র, ধন ইত্যাদির সম্পন্নকী করে আমাদের প্রাপ্ত করাও। হে দেবগণ! এই বধূকে বহনশালী রথের যেন কোন হানি ঘটে। আমরা তার পতিশালার দ্বারে দণ্ডায়মান হয়ে এই বধূর আগমন-পথকে কল্যাণময় করে দিচ্ছি। এই পথের সম্মুখভাগে, পশ্চাতে, ভিতরে, বাহিরে, মধ্যভাগে, সর্বদিকে ব্রাহ্মণগণ বিরাজিত থাকুন। হে বধূ! তুমি দেবগণের নিবাসশালিনী, রোগ-রহিত, স্বাস্থ্যপ্রদ পতিগৃহকে প্রাপ্ত হও এবং এই স্থানে মঙ্গলময়ী হয়ে প্রসন্ন থাকো।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বিবাহপরমেতৎ কাণ্ডং। তত্র বক্ষ্যমানানি কর্মাণি ভবন্তি। তেষু তন্মন্ত্রবিনিয়োগাঃ সূত্রকারেণ প্রায়োইন্বৰ্থমেব কৃতান্তে কৌশিকে দশমেধ্যায়ে বিস্তরেণ প্রপঞ্চিতাস্তত্রৈব দ্রষ্টব্যঃ। অত্র তু কর্মক্রমস্য মন্ত্রবৎ দিগদর্শনং।…ইত্যাদি। (১৪কা, ১অ. ১সূ.)।
টীকা –চতুর্দশ কাণ্ডের দুটি অনুবাকের দুটি সূক্তই বিবাহ সম্পর্কিত। এগুলির যথাযথ বিনিয়োগ কৌশিক সূত্রের দশম অধ্যায়ে বিস্তারিত ভাবে দেওয়া আছে। এখানে কর্মক্রমের দিগদর্শন উল্লেখিত হচ্ছে। উপযুক্ত সূক্তটি কন্যার পিতৃগৃহে করণীয় কর্ম ও মন্ত্রাবলীর বিনিয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সবিতাদেবের কন্যা সূর্যার বিবাহকে উপলক্ষ করে যা বলা হয়েছে, তা লোকসমাজে প্রচলিত সাধারণ বিবাহ সম্পর্কের প্রযোজ্য। যেমন,-আজহোম (১৮, ২৩-২৪ মন্ত্র), কুমারীর হস্তগৃহীত শরাবসম্পূট কোনও অনুচরের মাধ্যমে, বরের প্রতি প্রেরণ (৩১ মন্ত্র), ব্রাহ্মণ প্রেরণ (৩১), কুমারী রক্ষার্থে পালক প্রেরণ (৩৪), জল গ্রহণার্থে ভ্রমণ ও জলে লোষ্ট্র প্রক্ষেপণ (৩৭), অবগাহন (৩৮), জলের কলস পূরণ (৩৮), জলের ঘট যথাক্রমে আনয়ন (৩৯), সেই জলে সকল জলকার্যকরণ এবং শাখায় ঘটস্থাপন ও পুনরায় আজ্যহোম (১৭), কুমারীর কেশবন্ধন (৫৮), বর কর্তৃক পাণিগ্রহণ (৪৮-৫২), কন্যার ললাটপ্রদেশে হিরণ্যবন্ধন (৪০-৪১), কুমারীকে শীতল জলে সেচন (৩৫, ৪৩), অক্ষত বস্ত্ৰে কুমারীর আচ্ছাদন (৪৫, ৫৩), বরবধূকে অক্ষত বস্ত্র পরিহিত করণ (৪৫,৫৩, ৫৫), বধূর সীমন্তে বর কর্তৃক শপ লেপন (৫৫-৫৬) তথা অমন্ত্রক ব্রীহি-যব লেপন, পিতৃগৃহ থেকে নীয়মানা কন্যার ও পিতৃগৃহস্থ আত্মীয় স্বজনের ক্রন্দন (৪৬) ইত্যাদি কথিত হয়েছে ॥ (১৪কা, ১অ. ১সূ.)।