এম ২.৩
অধিকাংশ আলেমদের মতে (n. হানাফিরা বাদে যার বৃত্তান্ত রয়েছে নিম্নের ২.৮ এ) কোন মহিলার পক্ষে মুখমণ্ডল অনাবৃত রেখে গৃহের বাইরে যাওয়া বে আইনি—কোন প্রলোভন থাকুক আর না থাকুক। যখন প্রলোভন থাকে (মহিলার উপর কোন পুরুষের) তখন আলেমরা একমত যে মহিলার মুখমণ্ডল আবৃত থাকতেই হবে। এখানে প্রলোভন বলতে বুঝানো হচ্ছে যৌন সঙ্গমের ইচ্ছা অথবা তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তবে অগত্যায় পড়লে যদি মহিলার প্রয়োজন হয় তবে সে দৃষ্টি দিতে পারে, যদি প্রলোভনের সম্ভাবনা না থাকে।
কোন মহিলার বিবাহযোগ্য কোন পুরুষের নিকটে থাকা বে-আইনি। (A.নিজের স্ত্রী অথবা অ-বিবাহযোগ্য আত্মীয় ছাড়া কোন পুরুষের জন্যে অন্য কোন নারীর সাথে একাকী থাকা একেবারেই বে-আইনি। তবে যদি দুই নারীর সাথে পুরুষ একা থাকে তবে তা বে-আইনি হবে না।
এম ৫.১
স্বামীর যৌন-আহ্বানে স্ত্রীকে অনতিবিলম্বে সাড়া দিতে হবে যখনই সে ডাকবে, যদি শারীরিকভাবে সে স্ত্রী সক্ষম হয়। স্বামীর আহ্বানকে স্ত্রী তিনদিনের বেশী দেরি করাতে পারবে না।
এম ৫.২
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সংগম করবে চার রাতে এক বার। কেননা স্বামীর হয়ত চার বিবি থাকতে পারে। স্ত্রীকে এর জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা করতেই হবে। যদি সম্ভব হয় তবে স্বামী এর চাইতে অধিক অথবা কম সঙ্গমও করতে পারে। এমন ভাবে স্ত্রীর সঙ্গমের চাহিদা মিটাতে হবে যেন স্ত্রী চরিত্রবতী থাকে, তার যৌন ক্ষুধা আর না জাগে। এর কারণ এই যে স্বামীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে তার স্ত্রী যেন সর্বদা চরিত্রাবতী থাকে।
এম ৫.৪
স্ত্রীর দেহকে উপভোগ করার পূর্ণ অধিকার থাকবে স্বামীর। (A: আপাদমস্তক পর্যন্ত, তথা পায়ের পাতা পর্যন্ত। কিন্তু পায়ু পথে সঙ্গম করা যাবেনা—এটা বে-আইনি), তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যৌনসংগম কালে স্ত্রী যেন ব্যথা না পায়। স্বামী তার স্ত্রীকে যেখানে খুশী নিয়ে যেতে পারবে।
এম ৫.৬
যৌন মিলনের জন্য শরীর পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে স্ত্রীকে চাপ দেবার অধিকার স্বামীর আছে।
এম ১০.৩
স্বামী তার স্ত্রীকে পবিত্র আইন শিক্ষার জন্য গৃহের বাইরে যাবার অনুমতি দিতে পারবে। সেটা এই কারণে যে যাতে করে স্ত্রী জিকির করতে পারে এবং আল্লাহ্র বন্দনা করতে পারে। এই সব ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য স্ত্রী প্রয়োজনে তার বান্ধবীর গৃহে অথবা শহরের অন্য স্থানে যেতে পারে। এ ছাড়া স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, ছেলে…ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না। শুধু ব্যতিক্রম হবে হজ্জের ক্ষেত্রে, যেখানে এই ভ্রমণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না। হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রী স্বামী অথবা তার মাহরাম ছাড়া শহরের বাইরে যেতে পারবে যতক্ষণ না এই দূরত্ব ৭৭ কি: মিঃ (৪৮ মাইল) এর অধিক না হয়।
১০.৪ – স্ত্রীর ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা।
স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া। (O. কারণ হচ্ছে বাইহাকি এক হাদিসে দেখিয়েছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন:
যে মহিলা আল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে সে পারবেনা কোন ব্যক্তিকে গৃহে ঢোকার যদি তার স্বামী সেই ব্যক্তির উপর নারাজ থাকে। আর স্বামী না চাইলে স্ত্রী গৃহের বাইরে যেতে পারবে না।)
কিন্তু স্ত্রীর কোন আত্মীয় মারা গেলে স্বামী স্ত্রীকে অনুমতি দিতে পারে গৃহের বাইরে যাবার।
এম ১১.২
স্বামীকে স্ত্রীর দৈনিক ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে হবে। স্বামী সচ্ছল হলে স্ত্রীকে প্রতিদিন এক লিটার শস্য দিতে হবে যা কিনা ঐ অঞ্চলের প্রধান খাদ্য। (O. এখানে প্রধান খাদ্য বলতে বুঝান হচ্ছে যা ঐ অঞ্চলের লোকেরা সর্বদা খায়, এমনকি তা যদি শক্ত, সাদা পনিরও হয়। স্ত্রী যদি তা গ্রহণ না করে অন্য কিছু খেতে চায়, তবে স্বামী তা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। স্বামী যদি প্রধান খাদ্য ছাড়াও স্ত্রীকে অন্য কিছু খেতে দেয় তা স্ত্রী গ্রহণ না করলেও করতে পারে।) অসচ্ছল স্বামী প্রতিদিন তার স্ত্রীকে ০.৫১ লিটার খাদ্যশস্য দিবে। আর যদি স্বামীর সামর্থ্য এর মাঝামাঝি হয় তবে স্বামী তার স্ত্রীকে প্রতিদিন ০.৭৭ লিটার খাদ্যশস্য দিতে বাধ্য থাকবে।
এছাড়াও স্বামীকে শস্য পেষণের খরচ দিতে হবে যাতে ঐ শস্য আটা করে রুটি বানানো হয়। (O. স্ত্রী একাজ নিজে করলেও স্বামীকে খরচটা দিতে হবে স্ত্রীকে।) রুটি খাওয়ার জন্য অন্য যে সব সামগ্রী দরকার, যেমন, মাংস, তেল, লবণ, খেজুর, সির্কা, পনীর ইত্যাদি তা ও সরবরাহ করতে হবে। এসবের পরিমাণ নির্ভর করবে মরশুমের উপর। ফলের মরশুমে যে ফল পাওয়া যাবে তাই হবে প্রধান। ঐ শহরের লোকেরা যে পরিমাণ মাংস খায় স্ত্রীকেও সেই পরিমাণ মাংস দিতে হবে।
স্বামী স্ত্রী উভয়ে রাজী থাকলে স্ত্রীর দৈনিক খোরপোষের খরচ স্বামী টাকায় অথবা কাপড়ে দিতে পারবে।
এম ১১.৩ – স্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি বস্তু সমূহ:
স্ত্রী তার কেশবিন্যাসের জন্য তেল, শ্যাম্পু, সাবান, চিরুনি পাবে। (যা সেই সহরে সচরাচর ব্যবহার হয়।) স্বামীকে তার স্ত্রীর বগলের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য যে সুগন্ধির প্রয়োজন তা দিতে হবে। যৌন সংগমের পূর্বে ও পরে স্ত্রীর গোসলের যে পানি দরকার তা স্বামীকে দিতে হবে। সন্তান প্রসবের পরে রক্ত ধৌত করার জন্য যে পানির প্রয়োজন তাও স্বামীকে দিতে হবে। এই দুটি কারণ ছাড়া স্বামী তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসল অথবা ধৌতের জন্যে যে পানির প্রয়োজন তার খরচ দিতে বাধ্য থাকবে না।
এম ১১.৪
স্বামী তার স্ত্রীর প্রসাধন সামগ্রী, চিকিৎসকের খরচ, ঔষধের খরচ অথবা এই ধরনের অন্যান্য খরচ বহন করতে বাধ্য থাকবে না, যদিও স্বামী চাইলে তা করতে পারে। এটা শুধু সুপারিশ, বাধ্যবাধকতা নয়। কিন্তু শিশু জন্মের সাথে জড়িত খরচ স্বামীকে বহন করতে হবে।
এম ১১.৫ – কাপড় চোপড়ের খরচ:
স্ত্রী যে অঞ্চলে থাকবে ঐ অঞ্চলের যা প্রধান পোশাক স্ত্রী তা পাবে। (O. পোশাক নির্ভর করবে স্ত্রী লম্বা না বেঁটে, খর্ব না স্থূল এবং মরশুম গ্রীষ্ম না শীত কাল।) গ্রীষ্ম কালে স্বামী বাধ্য থাকবে স্ত্রীকে মাথা ঢাকার কাপড় দিতে। এছাড়া গায়ের লম্বা জামা, অন্তর্বাস, জুতা ও একটা গায়ের চাদর দিতে হবে, কেননা স্ত্রীকে হয়ত বাইরে যেতে হতে পারে। শীতের মরশুমে ঐ একই পোশাক দিতে হবে এবং অতিরিক্ত হিসাবে একটা লেপের মত সুতি বস্ত্রও দিতে হবে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য। শীতের সময় প্রয়োজন পড়লে গরম করার তেল অথবা লাকড়ি যা দরকার তাও দিতে হবে। এ ছাড়াও সামর্থ্য অনুযায়ী স্বামীকে দিতে হবে, কম্বল, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি। (O. খাওয়াদাওয়া ও পান করার জন্য যেসব সামগ্রী দরকার তাও স্ত্রীকে দেওয়া দরকার।)
এম ১১.৬
দৈনিক ভাতা শুরু হবে দিনের শুরুতে। স্বামী তার স্ত্রীকে দিনের প্রথমে স্ত্রীর দৈনিক ভাতা দিতে বাধ্য থাকবে। মরশুমের শুরুতেই স্বামী তার স্ত্রীকে পোশাকের কাপড় দিয়ে দিবে।
এম ১১.৯ – স্বামীর ভরণপোষণ শর্তযুক্ত:
স্ত্রীর ভরণপোষণ স্বামী সে পর্যন্তই বহন করবে যে পর্যন্ত চাহিবার মাত্র স্ত্রী তার স্বামীকে দেহদান করে অথবা দেহদানের প্রস্তুতি দেখায়। এর অর্থ হচ্ছে স্ত্রী স্বামীকে পূর্ণ যৌন উপভোগ করতে দিবে এবং কোন অবস্থাতেই স্বামীর যৌন চাহিদার প্রত্যাখ্যান করবে না। স্বামীর ভরণপোষণ স্ত্রী পাবেনা যখন:
স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হবে, তার মানে যখন স্ত্রী স্বামীর আদেশ অমান্য করবে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও।
স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে ভ্রমণে যায় অথবা স্বামীর অনুমতি নেয়, কিন্তু ভ্রমণ করে নিজের প্রয়োজনে।
স্ত্রী হজ্জ অথবা ওমরা করার উদ্দেশ্যে এহরাম করে।
স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে নফল রোজা রাখে।
এম ১১.১০
যে স্ত্রী ইদ্দতে থাকবে, সে তালাক (অস্থায়ী) অথবা বিধবার জন্যই হোক, তার অধিকার থাকবে স্বামীর গৃহে থাকার ইদ্দতের সময় পর্যন্ত। এরপর ভরণপোষণের ব্যাপারটা এই রকম:
১. তিন তালাক (স্থায়ী তালাক) হয়ে গেলে স্ত্রী ইদ্দতের সময় ভরণপোষণ অথবা ইদ্দতের পর কোন প্রকার ভরণপোষণ পাবে না। বিধবা নারীও কোন দৈনিক ভাতা পাবে না।
২. ভরণপোষণ হবে একমাত্র ইদ্দতের সময়, তাও যদি তালাক অস্থায়ী হয় যথা এক তালাক অথবা দুই তালাক, যেখানে সম্ভাবনা আছে যে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত চাইবে।
৩. তিন তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে সে দৈনিক ভাতা পাবে (শিশু ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত। এর পর শিশুর দেখা শোনা ও লালনপালনের জন্যে।) ।
স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা না থাকলে সে কোন ভাতাই পাবে না।
এম ১১.১১
আদালত যৌন সংগম উপভোগের ব্যাপারে স্বামীর সাক্ষ্য, প্রমাণ গ্রহণ করবে।
আদালতে যদি প্রমাণ না করা যায় যে স্বামী স্ত্রীর ভাতা দিতে ব্যর্থ—তখন স্ত্রী যা বলবে এই ব্যাপারে তাই গ্রহণ করা হবে। স্বামী স্ত্রী যদি যৌন উপভোগের ব্যাপারে একমত না হয় তখন স্বামী এ ব্যাপারে যাই বলবে আদালত তাই সত্য বলে মেনে নিবে। অর্থাৎ স্বামী যদি বলে যে স্ত্রী তার দেহদান করতে অপারগ, তখন স্বামীর ভাষ্যই সত্যি বলে গৃহীত হবে। এমন যদি হয় স্বামী স্বীকার করে নিলো যে প্রথমে স্ত্রী তার দেহদান করতে রাজী হল, কিন্তু পরে তার দেহ সমর্পণ করল না তখন স্বামীর ভাষ্য আদালত অগ্রাহ্য করতে পারে।