১৩. রসোদ্গার

রসোদ্গার

রজনী বিলাস কহয়ে রাই।
সব সখীগণ বদন চাই।।
আঁখি ঢুলু ঢুলু অলস ভরে।
ঢুলিয়ে পড়িল সখীরে কোরে।।
নয়নের জলে ভাসয়ে মুখ।
দেখি সখী কহে, কহনা দুঃখ।।
ফুঁপায়ে ফুঁপায়ে কাঁদয়ে রাধা।
কহে চণ্ডীদাস নাগর ধান্দা।।

————–

রসোদ্গার ।। ধানশী ।।

রসোদ্গার ।। সিন্ধুড়া ।।

রাই, আজু কেন হেন দেখি।
আঁখু ঢুলু ঢুলু,                 ঘুমেতে আকুল,
জাগিয়াছ বুঝি নিশি।।
রসের ভরেতে,                 অঙ্গ নাহি ধরে,
বসন পড়িছে খসি।
স্বরূপ করিয়া,                 কহনা আমারে,
মনের মরম সখি।।
এক কহিতে,                 আন কহিতেছে,
বচন হইয়া হারা।
রসিয়ার সনে,                 কিবা রস রঙ্গে,
সঙ্গ হয়েছে পারা।।
ঘন ঘন তুমি,                 মুড়িতেছ অঙ্গ,
সঘনে নিশ্বাস ছাড়।
স্বরূপ করিয়া,                 কহনা কহসি,
কপট কেন বা কর।।
ভালের সিন্দূর,                 আধেক আছয়ে,
নয়নে আধ কাজল।
চাঁদ নিঙ্গাড়িয়া,                 এমন করিয়া,
কেবা নিল এ সকল।।
চণ্ডীদাসে কয়,                 যেবা সেই হয়,
ভালে ভুলাইলে কাজ।
সঙ্গের সঙ্গিনী,                 বঞ্চিতে নারিবে,
কিবা কর আর লাজ।।*

————–

রসিয়ার – রসিকের।

* পদকল্পতরুতে কৃষ্ণপ্রসাদের ভণিতাযুক্ত দৃষ্ট হয় বস্তুতঃ তাহা নহে। পদসমুদ্রগ্রন্থে চণ্ডীদাসের ভণিতা আছে। পদসমুদ্র ১৬০৫।

রসোদ্গার ।। ধানশী ।।

ঐছন শুনইতে, মুগধ রমণী।
সখীগণ ইঙ্গিতে, অবনত বয়নী।।
লাগে বচন নাহি করে পরকাশ।
সখীগণে কহইতে, প্রিয়তম ভাষ।।
কহইতে না কহসি, রজনীকো কাজ।
আমার শপথি তোয়ে যদি কর লাজ।।
পহিল সমাগমে, হইল যত সুখ।
পুনহি মিলনে পাওব কত সুখ।।
ঐছন বচন শুনি, কহে মৃদু ভাষি।
চণ্ডীদাস ইহ রস পরকাশী।।*

————–

পহিল – প্রথম।

* পদসমুদ্র ১৬০৬।

রসোদ্গার ।। সুহই ।।

কহে সুবদনী,                     শুন গো সজনি,
দুঃখ কি বলিব আর।
কি করি এখন,                     জুড়াই জীবন,
বদন দেখিব তার।।
তাহার আরতি                     কিবা দিবা রাতি,
ভুলিতে নাহিক পারি।
মনে হলে মুখ,                     ফাটে মোর বুক,
গুমরে গুমরে মরি।।
সহেনাক আর,                     করি অভিসার
আজি হই বলরাম।
যশোদা মন্দিরে,                    যাইব সত্ত্বরে,
ভেটিব নাগর কান।।
শুনিয়া ললিতা,                     হাসি কহে কথা,
বলাই সাজিলে পরে।
চণ্ডীদাস ভণে,                     যশোদা যতনে
সঁপিবে তোমার করে।।

————–

আরতি – আশক্তি; আদর। অভিসার – নায়ক সহবাসার্থ সঙ্কেত স্থানে গমন। ভেটিব – সাক্ষাৎ করিব।

প্রথম পহর নিশি,                  সুস্বপন রাশি। ধ্রু।
সব কথা কহিয়ে তোমারে।
বসিয়া কদম্ব তলে,                  সে কানু করিছে কোলে,
চুম্ব দিছে বদন কমলে।।
অঙ্গে দেই চন্দন,                  বলে মধুর বচন,
আরে বাঁশী বায় সুমধুরে।
চাহিলেন সুরতি,                  না দিনু যে পাপমতি,
দেখিনু কানু দোয়জ পহরে।।
তৃতীয় পহর নিশে,                  শ্যামের কোলেতে বসি,
নেহারনু সে চাঁদ বদনে।
ঈষৎ হাসন করি,                  প্রাণ মোর নিল হরি,
বেয়াকুলি হইনু মদনে।।
চতুর্থ পহরে কান,                  করিল অধর পান,
মোরে ভেল রতি অশোয়াসে।
দারুণ কোকিল নাদে,                  ভাঙ্গিল মোহর নিদে,
রহ গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে।।

————–

রসোদ্গার ।। বিভাস ।।

বায় – বাজে। সুরতি – রতিক্রীড়া। দোয়জ – দ্বিতীয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *