1 of 2

১৩. ব্যাপারটা বেশ মজার

ব্যাপারটা বেশ মজার। সারারাত বাইরে কাটিয়ে সকালে ছেলে আর একজনকে নিয়ে ফিরল কিন্তু এ বাড়ির কেউ সেটা দেখেও দেখল না। বাবা বসেছিলেন রকে, একবার তাকালেন এবং তারপরেই উদাস হলেন। আনন্দ থাকাকালীন এই ঘরে দুকাপ চা এসেছিল। দরজার কাছে শব্দ হচ্ছে শুনে কল্যাণ উঠে গিয়ে দেখেছিল মেজবৌদি যার নাম বিনীতা সংকুচিত হয়ে দুটো কাপ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এবং সেই দেওয়ার দৃশ্যটি বড় বউদি যূথিকা নজর করছে তার দরজায় দাঁড়িয়ে। আশেপাশে কোথাও মা নেই। আনন্দ মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়নি, সে নিজেও আলাপ করিয়ে দেয়নি। সুজন আজকাল প্রায়ই রাত্রে বাড়িতে ফেরে না। প্রথম প্রথম এই নিয়ে চেঁচামেচি হলেও এখন প্রত্যেকের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কল্যাণ কাউকে কিছু না বলে এই প্রথম রাত্রেই বাড়ির বাইরে কাটাল। অথচ কেউ তাকে একটা কথাও জিসা করল না। প্রথমে মজা লাগছিল, শেষ পর্যন্ত মনটা খারাপ হয়ে গেল।

জয়িতা আর সুদীপ চলে গেলে এই ব্যাপারটা সে আনন্দকে বলেছিল। কথাটা শুনে আনন্দ ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কেউ তোকে খুব জেরা করলে, ধমক দিলে তোর ভাল লাগত?

কল্যাণ বলেছিল, সেই মুহূর্তে কিরকম লাগত জানি না, কিন্তু এটা হওয়ায় এখন মনে হচ্ছে আমি যেন বিদেশে বাস করছি।

আনন্দ বলেছিল, পারিবারিক সেন্টিমেন্টাল অ্যাটাচমেন্টগুলো না থাকলে এইরকম মনে হয়। আমার কথাই ধর, আমি হোস্টেলে আছি। অসুখ করলেও কেউ দেখার নেই। হোস্টেলের অন্য ছেলেরা যে তখন পাশে আসে না তা নয় কিন্তু তাদের ওপর তো আমি জোর করতে পারি না। এইসব করে-টরে-বেঁচেথাকা আর কি! কার লাইন রে?

কল্যাণ হেসে ফেলল, এক জীবনে যার কিছুই করা হয় না।

আনন্দ মাথা নেড়েছিল, কিন্তু এক জীবনে আমরা অনেক কিছুই করতে চাইব।

রাত্তিরে বাড়িতে ফিরে চুপচাপ এইসব কথাই ভাবছিল সে। টাকা থাকলে এই ভারতবর্ষে বসে যে কোন অস্ত্র কেনা যায়। শুধু ঠিকঠাক লোকের কাছে পৌঁছে যেতে পারলেই হল। প্রয়োজনে তারা সেইসব অস্ত্রের ব্যবহারও শিখিয়ে দিতে পারে। তার জন্যে ভাল টাকা দরকার। কিন্তু আনন্দ চাইছে গ্রেনেড, ডিনামাইট আর রিভলভার। যেগুলো সহজে বহন করা যায় এবং যার প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক, প্রয়োগ করতে দীর্ঘ অনুশীলনের প্রয়োজন হয় না। জয়িতা যে টাকা এনেছে এবং সুদীপ যা ব্যবস্থা করবে তাতে বেশ কয়েকটা অ্যাকশনে অস্ত্রের অভাব হবে না। অবশ্য ততদিন যদি পুলিস তাদের ধবে না ফেলে। প্যারাডাইসের ব্যাপারটা যেরকম নির্বিঘ্নে ঘটে গেল প্রতিবার যে তাই হবে এমন আশা করা ভুল। কিন্তু তার আগে যদি নাড়া দেওয়া যায়, পাথরের মত অনড় মানুষের মনগুলোকে যদি বিচলিত করা যায়–ব্যাপারটা খুব আশাপ্রদ বলে মনে হয় না কল্যাণের কাছে। অতবড় নকশাল আন্দোলন যা পারেনি তারা চারজন বিক্ষিপ্তভাবে সেটা করতে পারবে এমন আশা করা বোকামি। কিন্তু কল্পনা করতে দোষ কি? গ্রেপ্তার এড়িয়ে যদি বুর্জোয়া শোষকদের দুর্গগুলোতে একটার পর একটা আঘাত করা যায় তাহলে হয়তো আগামীকালের জন্যে কটা কাজ আগাম করে যাওয়া হবে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন চাই, আজ কিংবা আগামীকাল।

আনন্দ বলে পশ্চিমবাংলায় একমাত্র সি পি এম এই কাজটি করতে পারত। তাদের সংগঠন-শক্তি যদি এই কাজে ব্যবহার করা হত তাহলে ফল পাওয়া যেতই। কিন্তু তারা এখন ক্ষমতালোভী এবং সংবিধানের আশ্রয়ে নিরাপদ থাকতে চায়। সুবিধে অনুযায়ী সর্বহারা শব্দটির সীমা বাড়িয়ে বাড়িয়ে লক্ষপতিকেও তারা অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর কেউ নয়, কোন রাজনৈতিক দল নয়, একমাত্র দেশের মানুষ যদি এগিয়ে না আসে সক্রিয়ভাবে তাহলে এই সমাজব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। যে দেশে শুধু অর্থবানরাই গণতন্ত্রের সুবিধে ভোগ করতে পারে সে দেশের মানুষ আর কতকাল শুধ দেওয়ালের কোণ খুঁজে যাবে। দিন পালটাবেই কিন্তু কবে সেটাই কেউ জানে না। সুদীপ সেদিন একটু অশ্লীল হলেও সত্যি কথা বলেছিল। পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না জানলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদীপ বলেছিল, বাঙালি মল মূত্র এবং বীর্য ছাড়া আজ আর কিছুই ত্যাগ করতে জানে না। কথাটা সত্যি, হয়তো বেশিরকমের সত্যি। আনন্দর কথা অনুযায়ী পরিকল্পিত পথে মানুষের অসাড় হয়ে যাওয়া বোধগুলোকে আঘাত হেনে হেনে সক্রিয় করতে হবে। তার জন্যে যদি এক জীবন খরচ হয়ে যায় কোন আক্ষেপ নেই। চাকরির জন্যে পড়াশুনা এবং বেঁচে থাকার জন্যে চাকরি করা এবং মরে যাওয়ার জন্যে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। কিন্তু অস্বস্তি অন্য জায়গায়। প্যারাডাইসকে কেন্দ্র করে যে বিরাট কাণ্ডটি ওরা করে এল তার প্রতিক্রিয়া তো কিছুই হচ্ছে না। শুধু আজ একজনকে বলতে শুনেছে, ভালই হয়েছে, ওসব জায়গা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়াই উচিত। শুনে খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু লোকটা কথা বলছিল কোন উত্তাপ না নিয়ে। খবরের কাগজগুলোতেও তাদের উদ্দেশ্যটা ছাপা হয়নি। অবশ্য ওরা জানেই না ঘটনাটার পেছনে কি পরিকল্পনা আছে। এ ব্যাপারে আনন্দ কাউকে জানাতে চায়নি। এখন কল্যাণের মনে হল এইটে ভুল হচ্ছে। এদেশের মানুষ নিজেদের যতই বুদ্ধিমান মনে করুক, আসলে তাদের বুঝিয়ে দিলেও তারা বুঝতে চায় না যেখানে সেখানে নীরব থাকা মানে পণ্ডশ্রম। একটা প্যারাডাইস পোড়ানো তখনই মূল্যবান হবে যখন তাই নিয়ে ঢোল পেটানো যাবে।

দরজায় শব্দ হল। কল্যাণ মুখ ফিরিয়ে দেখল মেজবউদি দরজায় দাঁড়িয়ে। সে উঠে বসতেই নিচু স্বরে প্রশ্ন হল, খাবে না?

কল্যাণ জিজ্ঞাসা করল সরাসরি উত্তর না দিয়ে, সবাই খেয়ে নিয়েছে?

হ্যাঁ। তুমি রাত্রে ফেরনি বলে মা আজও খাবার রাখতে নিষেধ করেছিলেন।

তাহলে আমার খাবার আসবে কোত্থেকে?

আছে।

ভাল। কল্যাণ কথাটা বলতেই বিনীতা ফিরে যাচ্ছিল, সে আবার ডাকল, শোন, তোমার খুব ভাল লাগার কথা নয় এখানে। তাহলে আছ কেন?

বিনীতা একটু থমকে গেল। তারপর মুখ না ফিরিয়েই বলল, কেন, আমি তো ভালই আছি।

কল্যাণ হেসে ফেলল, চমৎকার! আচ্ছা তুমি প্যারাডাইস-এর ঘটনা জানো?

বিনীতা নীরবে মাথা নাড়ল।

তুমি খবরের কাগজ পড়ো না?

না। তারপর সে চলে গেল।

কল্যাণ খুব বিমর্ষ হল। বিনীতারা কি করে জানবে? ওরা যতদিন না জানছে, ওদের ভাবনা যতক্ষণ পালটাচ্ছে ততক্ষণ–!

ঠিক সেই সময় বাইরে একটি গলা শোনা গেল, কি ব্যাপার, সাতসকালে বাড়িটার এই অবস্থা কেন? মা–মা–?

গলাটা মেজদার। একটু হাঁকাহাঁকির পর বাবার কথা শোনা গেল, সে নেই।

নেই মানে? মা কোথায় গেল?

তোর দাদার সঙ্গে তারকেশ্বরে গিয়েছে।

সাবাস! তোমার বাড়ির হালচাল কিরকম! বা

বা কোন জবাব দিল না। মেজদা এবার তার বউকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকল।

একটা প্রাণবন্ত মানুষ যার কোন লক্ষ্য নেই, যে সম্মান আদায় করতে জানে না, ভাবেও না, বাড়িতে ফিরল। মানুষটিকে খুব ভাল লাগছিল কল্যাণের। কিন্তু মা আর দাদা এই মুহূর্তে বাড়িতে নেই তা সে জানত না। হঠাৎ তারকেশ্বরে কেন? এই বাড়িটাই যেন ভারতবর্ষ। কেউ কারও খবর জানে না, জানতে চায় না। কারও সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। অথচ একই বাড়িতে প্রত্যেকের বাস। খাবারটা আসছে না। যতক্ষণ মেজবউদি কথা তোলেনি ততক্ষণ খিদেটাই ছিল না। কল্যাণ দেখল বড়বউদি যূথিকা যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। চোখাচোখি হতে যূথিকা এগিয়ে এসে দরজায় দাঁড়াল, কি খবর? আজ বাইরে রাত কাটাবে না?

ঠোঁট কামড়াল কল্যাণ। একটা কটু কথা বলার ইচ্ছে সামলে নিল, না।

আজ তোমার ভাগ্যে আর খাবার জুটবে না। মেজকর্তা না এলে জুটতো। কেউ কি তার ভাগ ছাড়ে!

যূথিকা হাসল। তারপর ঘরে পা দিয়ে বলল, অনেকদিন এই ঘরে আসিনি। বসব?

মাথা নাড়ল কল্যাণ। যূথিকার হাতে এখনও ব্যান্ডেজ জড়ানো। কিন্তু প্রসাধনে সুখের আমেজ। খাটের একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে যূথিকা বলল, ছোটকর্তার খবর শুনেছ?

কি খবর? কল্যাণ একটু অবাক হল।

পুলিস ধরেছে। আচ্ছাসে প্যাঁদাচ্ছে। বড্ড বাড় বেড়েছিল।

যাঃ! সুজনকে পুলিস ধরবে কেন? ও তো সরকারি দলের লোক।

অত খায় না। তোমার দাদা বলছিল ওকে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বেলগাছিয়ার ওয়াগন ব্রেকারদের কাছ থেকে যারা হিস্যা পায় তাদের কাছে টাকা চেয়েছিল, তাই। অল্পে তো মন ভরে না সোনারষ্টাদের। এর আগে নাকি কেস ছিল থানায়, এখন ধরে নিয়ে গেছে।

কেউ জামিন দিয়ে ছাড়াতে যায়নি?

কে যাবে? তোমার দাদা তো খবর শুনে তারকেশরে চলে গেল। বাপের ক্ষমতা জানো। যাক, এইসব ফালতু কথায় আমার দরকার নেই। সেদিন তোমার কথা আমার পিসতুতো বোন বর্ষা বলছিল। অমন সুন্দরী মেয়ে যে কেন দেখা হলেই তোমার কথা বলে তা বুঝি না বাবা! যূথিকা চোখমুখ ঘুরিয়ে কথাগুলো বলে ফিক করে হেসে ফেলল। এবং তখনই দরজায় বিনীতাকে দেখা গেল একটা ডিসে রুটি আর তরকারি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। যূথিকার হাসি চট করে মিলিয়ে গেল, বিনীতা খাবারটা টেবিলের ওপর রেখে বেরিয়ে যাচ্ছিল, যূথিকা ডাকল, এই যে, এখানে তো তোমার ভাসুর নেই, দেওরদের সঙ্গে তো খুব মাখামাখি, তা এখন মুখে বাক্যি নেই কেন?

কি কথা বলব?

অ! মন খারাপ? এতকাল বাদে স্বামী ঘরে এল তাও মন ভাল হল না। তা ভাল হবে কি করে? কাউকে অত মারধর করলে কি মন ভাল থাকে? কিন্তু স্বামীকে খাবার না দিয়ে দেওরকে দিচ্ছ যে বড়! রুটি তো ওই কটাই পড়েছিল!

উনি খেয়ে এসেছেন। বিনীতা আর দাঁড়াল না।

কল্যাণ একমুহূর্ত চিন্তা করল। সুজনের জন্যে সে কখনও কোন টান তেমন বোধ করেনি। এর আগে মাস্তানি করার জন্যে কল্যাণ তাকে এড়িয়েছে যতটা সম্ভব। ও আছে থাকতে হয় বলেই, এইরকম একটা মনোভাব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কল্যাণ চটপট খেয়ে নিল। খিদেটাকে সে কখনই এড়িয়ে যেতে পারে না। এমন কি এ বাড়ির তরকারির সেই বিদঘুটে স্বাদটাকে পর্যন্ত খেয়াল করল না।

যূথিকা বলল, অত তাড়াহুড়ো কিসের! ধীরে ধীরে খাও। এরকমভাবে গল্প করার সুযোগ তো পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, যেকথা বলছিলাম, আজ বর্ষা এসেছিল। তুমি যদি ফার্স্ট ক্লাস পাও তাহলে ওর বাবা তোমাকে আমেরিকায় পাঠাতে রাজী আছেন। আমার পিসেমশাইকে তো জানেনা, টাকার কোন হিসেব নেই। বর্ষার সঙ্গে একটু ইয়েটিয়ে করলেই হয়ে যাবে।

তাতে এ বাড়ির কি লাভ?

এ বাড়ির কথা কে ভাবছে! তোমারই ভাল হবে, বর্ষা তত খারাপ মেয়ে না!

বড় বাজে কথা বলছ।

ইস! তুমি অমন করে বকছ কেন আমাকে? কতদিন পরে তোমার সঙ্গে নিরিবিলিতে একটু কথা বলতে এলাম। মেজ তো ছোটর সঙ্গে ভাব জমিয়েছে। আমার কপাল কেন পোড়া হবে? যেন খুব মজার কথা বলেছে এমনভাবে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল যূথিকা।

খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। কল্যাণ কোন কথা না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল। কলতলায় মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসতেই সে মেজাকে দেখতে পেল।

খালিগায়ে লুঙ্গি পরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল, জিজ্ঞাসা করল, কি খবর রে? বাড়িটা ডিপফ্রিজ হয়ে গেল কেন?

কল্যাণ বলল, অনেকদিন বাদে এলে বলে এইরকম মনে হচ্ছে। আমি একটু আসছি।

এত রাত্রে কোথায় যাচ্ছিস?

প্রশ্নটা শুনে কল্যাণের ভাল লাগল। এইরকম আন্তরিক গলায় এ বাড়িতে কেউ আজকাল কথা বলে। সে জবাব দিল, থানায়। শুনলাম সুজনকে ধরে নিয়ে গেছে।

সেকি? সে-ই তো এতকাল পাড়ার হিরো ছিল। কি করেছিল সে?

জানি না।

আমি যাব তোর সঙ্গে?

মাথা নাড়ল কল্যাণ, না। অনেকদিন পরে এলে, তুমি এখন রেস্ট নাও।

রাত্রের কলকাতা দিনের চেয়ে অনেক সুন্দরী। আলো-আঁধারিতে মেশা রাস্তার নির্জনতা চমৎকার শান্তি ছড়ায়। রাত হয়েছে, পথের চেহারায় মালুম হল। দু-একটা রিকশা কিংবা অলস মানুষ ছাড়া পথটা পরিষ্কার। বঙ্কিমদার ওষুধের দোকানটাও বন্ধ।

থানা বেশি দূরে নয়। বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে কল্যাণ দেখল বেশ জোরালো আলো জ্বলছে। দুজন কনস্টেবল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে একজন মোলায়েম গলায় জিজ্ঞাসা করল, কি চাই ভাই?

কল্যাণ বলল, দারোগাবাবুর সঙ্গে দেখা করব।

ও সি সাহেব তো এখন থানায় নেই। কি ব্যাপার বলুন। লোকটি সত্যি বিনীত।

আমার ভাইকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে সেই ব্যাপারে কথা বলব।

ও, ওপাশের ঘরে যান, সেকেন্ড অফিসার আছেন।

থানা সম্পর্কে কত উলটো-পালটা ঘটনা শুনেছিল কল্যাণ, এখন মনে হল সেগুলো সব ঠিক নয়। ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখল তিনজন মানুষ তিনটে টেবিলের ওপাশে বসে গল্প করছেন। তাদের সামনে মোটামুটি এই রাত্রেও ভিজিটারস আছে। যে যার কেস নিয়ে কথা বলছেন। তিনজনের মধ্যে যিনি বেশি সক্রিয় তাঁকেই সেকেন্ড অফিসার সাব্যস্ত করল সে। ভদ্রলোক তখন তাঁর সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে আশ্বস্ত করছিলেন, আপনার কোন চিন্তা নেই, আপনি বাড়ি যান, আমরা দেখছি। মানুষটি বিদায় হলে সেকেন্ড অফিসার চেয়ারে হেলান দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে উঁচু গলায় মন্তব্য করলেন, সত্যি, মানুষ কত সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকে! মানুষের কত ঝকমারি! তারপর কল্যাণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন ভাই, আপনার কি সমস্যা?

কল্যাণ ওঁর মুখোমুখি হল, আমি শুনলাম আমার ভাইকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।

ভাই-এর নাম?

সুজন। আমি কল্যাণ।

ও হ্যাঁ, সুজন আমাদের এখানে আছে। ও আপনার কিরকমের ভাই?

নিজের।

পার্টি করেন?

না।

ও থাক না এখানে কিছুদিন। কেন এত ব্যস্ত হচ্ছেন?

আমি জানতে চাইছি ওর বিরুদ্ধে কেসটা কি? ও জামিন পেতে পারে কিনা?

কেস যেমন হয়ে থাকে। মাস্তানদের কেস হাওয়া পালটালেই তৈরি হয়ে যায়। আর জামিন? হ্যাঁ নিশ্চয়ই পেতে পারে। কিন্তু জামিন পেলে ওর ক্ষতি হবে। সুজনও চাইছে না বাইরে বের হতে। অন্তত দিনচারেক। আপনি ওর সঙ্গে কথা বলবেন? যান না, ওপাশেই ওরা আছে। হাত বাড়িয়ে আর একটা দরজা দেখিয়ে দিলেন অফিসার।

কল্যাণ সেদিকে কিছুটা হাঁটার পর খাঁচাটাকে দেখতে পেল। জনা পনেরো বিভিন্ন বয়স এবং চেহারার মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে। কেউ কেউ আবার তাস খেলছে! এত রাত্রে সুজন একটা সিনেমা পত্রিকা দেখছিল। তাকে দেখে বিন্দুমাত্র অসুখী মনে হচ্ছিল না। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে বটে, কিন্তু কল্যাণের মনে হল সুজন মোটেই আহত নয়। মাধরের সামান্য চিহ্ন তার শরীরে নেই। চিৎ হয়ে শোওয়া সুজনের একটা হাঁটুর ওপর আর একটা পা দুলছিল। নিঃশব্দে সরে এল কল্যাণ, অফিসার ঠিকই বলেছেন। সুজনের চেহারা এবং ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে মোটেই অসুখী নয়। এই অবস্থায় ওর জমে হবার কোন মানে হয় না।

অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন, কি বলল?

কল্যাণ মাথা নাড়ল, ঠিক আছে।

আরে ভাই, আমরা তো চিরকাল পাবলিকের গালাগাল খেয়ে এলাম, কিন্তু মানুষের উপকারও তো কিছুটা করি। সুজন যদি বাইরে থাকত তাহলে ওর অ্যান্টিপার্টি ওকে ছিঁড়ে খেত। শেলটার নেবার জন্যে থানার চেয়ে আর ভাল জায়গা কি আছে। চার পাঁচ দিনে হাওয়া নর্মাল হয়ে গেলে হয়তো ওর অ্যান্টি পার্টি শেলটার নিতে আসবে! কথা থামিয়ে অফিসার বেজে ওঠা টেলিফোনটাকে কবজা করলেন, হ্যালো! হ্যাঁ, ইয়েস স্যার, হ্যাঁ, তিনটে ছেলে আর একটা মেয়ে, একুশ-বাইশ বছর, ও কে স্যার, ঠিক আছে।

চলে যাওয়ার আগে শব্দগুলো কানে যাওয়া মাত্র কল্যাণ শক্ত হয়ে দাঁড়াল। সেকেন্ড অফিসার খানিকক্ষণ পরে রিসিভার নামিয়ে ঘুরে দ্বিতীয় অফিসারকে জিজ্ঞাসা করল, পাল, আমাদের তল্লাটে তিনটে ছেলে আর একটা মেয়ের কোন গ্যাঙ আছে?

পাল যার নাম তিনি বললেন, মেয়ে? তিনটে ছেলে আর মেয়ে? ওই তো খালধারের হিমি আর তার নাগর। কিন্তু কেসটা কি?

প্যারাডাইসে ডাকাতি। রুটিন রিপোর্ট দিতে হবে। হিমির ফোরফাদার অবশ্য ওই কাজ করতে যাবে , তবু ওদের ডেকে পাঠাও।

কল্যাণ বলল, আমি আসছি।

সেকেন্ড অফিসার ততক্ষণে কি সব লেখা শুরু করেছেন সেই অবস্থায় মাথা নাড়লেন। নির্জন রাস্তায় নেমে কল্যাণের পা সিরসির করতে লাগল। পুলিশ তাহলে বুঝতে পেরেছে কজন ছিলে। ওরা এখন পাড়ায় পাড়ায় খোঁজ করছে। আনন্দকে খবরটা দিতে হবে। এখন কোন অবস্থায় চারজনের প্রকাশ্যে দেখা করা উচিত নয়। জোরে জোরে পা চালাতে লাগল কল্যাণ।

 

সুদীপ আর অবনী তালুকদার মুখোমুখি বসেছিল। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উত্তেজিত শব্দ বিনিময় হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবনী তালুকদার বললেন, তোমাকে টাকা দিয়ে আমার কি লাভ?

আপনাকে আর কখনও আমার মুখোমুখি হতে হবে না!

তোমাকে আমি কেয়ার করি নাকি? তোমাকে আমি ভয় পাই?

পান। মা এতকাল শুয়ে থাকলেও ভয় পেতেন। শেষ কাটা আমি। এটাকে উপড়ে ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন, সুযোগটা হাতছাড়া করার মত বোকা আপনি নন। সুদীপ নির্লিপ্ত গলায় বলল।

সুদীপ, আমি তোমার বাবা, ডোন্ট ফরগেট ইট!

আমার সন্দেহ আছে।

মানে? হোয়াট ড়ু য়ু মিন?

আমার বাবার মিনিমাম যেটুকু হৃদয় থাকা উচিত আপনার তা নেই।

অবনী তালুকদারের মুখটা বুলডগের মত হয়ে গেল, টাকা নিয়ে তুমি কি করবে?

ফুর্তি করব।

স্টপ ইট, এইভাবে কথা বলবে না আমার সঙ্গে। তুমি তাহলে এই বাড়িতে আর থাকবে না? আমার সম্পত্তির ওপর কোনদিন নজর দেবে না?

ঠিক বলেছেন।

কিন্তু এসব নিয়ে আমি কি করব? আমি মরে গেলে তো তুমি মালিক হবে। আমার ইচ্ছে না থাকলেও–।

আমার ইচ্ছে নেই। পাপের টাকা ভোগ করতে চাই না।

ও। তাহলে এখন টাকা চাইছ কেন?

পুণ্য করব বলে। অনেকক্ষণ একই কথা বলছেন, মালটা বের করুন।

ওই ভাষায় কথা বললে আমি এক পয়সা দেব না।

আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন। নার্স কোথায়?

নার্স আমি ছাড়িয়ে দিয়েছি। আমার আয়া হলেই চলবে।

সাবাস!

ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোতমাকে টাকা দিচ্ছি আমি। কিন্তু তোমাকে এখনই লিখে দিতে হবে ভবিষ্যতে আমার সম্পত্তির ওপর তোমার কোন দাবী থাকবে না। অবনী তালুকদার উঠলেন চেয়ার ছেড়ে। রাগী এবং অন্ধ মেয়ের মত দেখাচ্ছিল তাঁকে।

সুদীপ বলল, আপনি যা ইচ্ছে লিখে আনুন আমি সই করছি।

হঠাৎ বেশ হালকা লাগল নিজেকে। সুদীপ দুবার আঙ্গুলে তবলার বোল তুলল টেবিল ঠুকে। এবং সেই সময় জলের জাগ হাতে একজন অল্পবয়সী মেয়েকে সে দেখতে পেল। মেয়েটির গায়ের রঙ শুধু কালো নয়, মুখে সৌন্দর্যের বিন্দুমাত্র ছায়া নেই। ঈশ্বর ওকে শুধু বাড়তি শরীর দিয়েছেন। মেয়েটি অবনী তালুকদারের ঘরের দিকে যাওয়ার সময় সুদীপের দিকে স্পষ্টতই অপছন্দের দৃষ্টি রেখে গেল। সুদীপের চোয়াল শক্ত হচ্ছিল, কিন্তু নিজেকে সামলে নিল সে। অবনী তালুকদার এখন যা ইচ্ছে করতে পারে। এই লোকটার পিতৃত্ব যখন সে অস্বীকার করেছে তখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে মায়ের ঘরের দিকে তাকাল। তারপর নিজের ঘরে এসে দাঁড়াল। এবং তখনই বুকের মধ্যে একটা কাঁপুনি চলে এল। এই ঘরটায় সে এতকাল একা একা ছিল। দেওয়ালের দাগগুলো পর্যন্ত তার ভীষণ চেনা, ওই দাগগুলোকে নিয়ে মনে মনে কত ছবি এঁকেছে এককালে। এখনও বুকসেলফে তার বই, ওয়ার্ডরোবে জামা প্যান্ট। সুদীপ বাইরে বেরিয়ে আসতেই দেখতে পেল অবনী তালুদার কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তার মুখের চেহারা এখন স্বাভাবিক নয়। একটু চিন্তিত এবং আত্মপ্রত্যয়ের অভাব হচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল। যদিও তিনি রাগত ভঙ্গিটা রাখার চেষ্টা করলেন, ওঘরে কি করছিলে?

শেষবার দেখে এলাম।

সুদীপের কথা শেষ হওয়া মাত্র অবনী তালুকদার টেবিলে ফিরে গেলেন। সেখানে একটা মোটা লম্বা খাম রাখা ছিল। সেইটে ঠেলে দিয়ে তিনি বললেন, এই নাও তোমার টাকা।

সুদীপ এগিয়ে এসে খামটা তুলে নিল, কত আছে?

সত্তর। এর বেশি এক পয়সা দেবার উপায় নেই আমার। গুনে নিতে পার।

সুদীপ চিন্তা করল এক লহমা। না, আর চাপ দিতে প্রবৃত্তি হচ্ছে না। সে নোটগুলোকে দেখল। বেশির ভাগই একশ টাকার বান্ডিল, দশও আছে। খামের মুখটা বন্ধ করে সে জিজ্ঞাসা করল, আপনার অঙ্কে কখনই ভুল হয় না, তবে ওর মধ্যে জালি মিশে যায়নি তো?

জালি! জালি মানে? হতভম্ব হয়ে গেলেন অবনী তালকুদার। ওঁর হাতে ধরা কাগজটা এবার কাপতে লাগল। সুদীপ প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে কাগজটা টেনে নিল। তারপরেই সে সোজা হয়ে দাঁড়াল। বাড়িতে টাইপরাইটার নেই। অথচ অবনী তালুকদার ইংরেজিতে টাইপ করিয়ে রেখেছিলেন। পুরো ব্যাপারাটাই তিনি পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। লেখাটা পড়ল সে। আমি সুদীপ তালুকদার, বয়স একুশ বছর দুমাস তিনদিন, শ্রীঅবনী তালুকদারের একমাত্র পুত্র, স্বেচ্ছায় এবং সানন্দে ঘোষণা করছি যে আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি আমার পিতা শ্ৰীঅবনী তালুকদারের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির ওপর থেকে জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার ত্যাগ করছি। আজ থেকে আমি এবং আমার বংশধরগণ আর শ্রীঅবনী তালুকদারের স্থাবর অস্থাবর কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবে না। এই ঘঘাষণা আমি কোন চাপের দ্বারা করতে বাধ্য হচ্ছি না। নিচে তার নাম, আজকের তারিখ এবং ঠিকানা টাইপ করা।

সুদীপ হেসে জিজ্ঞাসা করল, সাক্ষী থাকবে না কেউ? কলমটা দিন।

দরকার নেই। অবনী তালুকদার একটা সস্তা কলম টেবিলের ওপর রাখলেন।

সুদীপ বেশ যত্ন করে সই করল। তারপর কাগজ এবং কলম রেখে উঠে দাঁড়াল, এখন থেকে আপনি মুক্তপুরুষ। যা ইচ্ছে করুন কেউ বলতে আসবে না। চলি।

সুদীপ পা বাড়াতেই অন্য গলায় কথা বললেন অবনী তালুকদার, সুদীপ, এটা কি ঠিক করছ?

মানে? সুদীপ অবাক হয়ে ফিরে তাকাল।

আফটার অল উই আর ফাদার অ্যান্ড সন। এইভাবে চলে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে?

আপনি তো এতকাল তাই চেয়েছিলেন। মাকে আপনি কোনকালেই সহ্য করেননি। আমার সঙ্গে আপনার কোন সেতু ছিল না। চিরটাকাল আপনি নিজের জন্যে ভেবে এসেছেন। তাছাড়া আমারও এই শাবকের জীবনে থাকার বাসনা নেই। প্লিজ, শেষমুহূর্তে আর কোন নাটক তৈরি করবেন না। টাকাগুলোর জন্যে ধন্যবাদ।

সুদীপ বেরিয়ে আসছিল, পেছন থেকে অবনী তালুকদার বলে উঠলেন, টাকাগুলো সাবধানে নিয়ে যেও, দিনকাল খারাপ।

বাইরে বেরিয়ে এসে সতর্ক হল সুদীপ। এত সহজে টাকাগুলো হাতছাড়া করার মানুষ অবনী তালুকদার নন। তিনি টাকা দেবেন এটা বাড়িতে ফেরার আগেই ভেবে রেখেছিলেন, নইলে লেখাটা টাইপ করা হত না। টাকাটা যাতে হাতছাড়া না হয় তার একটা ব্যবস্থা করে রাখেনেনি তো! দিনকালের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে নির্মল রাখার জনেই কি এই মন্তব্য! সুদীপ রাস্তাটা দেখল। এখন রাত হয়েছে। ঠাকুরের দোকানের সামনে দু-তিনজন খদ্দেরের ভিড়। খানিকটা দূরে একটা প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে আছে। কোন সন্দেহজনক ব্যাপার চোখে পড়ল না। বাঁ পাশের ফুটপাত দিয়ে হনহন করে হাঁটতে লাগল সে প্যাকেটটাকে হাতে ঝুলিয়ে। এত টাকা সঙ্গে নিয়ে সে কোনদিন হাঁটেনি বলে কেমন একটা ঘোর লাগছিল। প্রাইভেট কারটা দাঁড়িয়ে আছে ডান ফুটপাত ঘেঁষে। এই ব্যাপারটাও অস্বাভাবিক। সে যখন প্রায় সমান্তরাল তখন একটা লোক গাড়ির ভেs থেকে মুখ বার করে তাকে দেখল। সুদীপ আরও জোরে পা চালাতেই ইঞ্জিনের আওয়াজ কানে এল। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হল এই মুহূর্তে সাবধান হওয়া উচিত। কয়েক পা দৌড়ে চট করে বাঁ দিকের গলিতে ঢুকে পড়ল সে। কোন দিকে না তাকিয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছিল সুদীপ খামটাকে আঁকড়ে ধরে। এই গলিটা তার মুখস্থ। ছেলেবেলায় অনেক সুকোচুরি খেলেছে সে। ডান দিকের একটা বাড়ির পাশ দিয়ে একটা মানুষ যেতে পারে এমন পথ আছে। সুদীপ সেইটে ব্যবহার করল। এখন আর পেছনে তাকাবার সময় নেই। কেউ তাকে অনুসরণ করছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। কয়েকটা কুকুরের চিৎকার কানে এল। এরা গৃহপালিত জীব। আক্রান্ত হবার ভয় নেই।

ঘড়িতে যখন এগারোটা তখন বালিগঞ্জ পার্ক রোডে পৌঁছাল সুদীপ। প্যারাডাইসে অভিযান করেও যা হয়নি এই মুহূর্তে তার চেয়ে অনেক বেশি ছিবড়ে মনে হচ্ছিল নিজেকে। বাকি পথটা অদ্ভুত আতঙ্ক নিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কেউ আক্রমণ করেনি, সামনে এসে দাঁড়ায়নি। অথচ প্রতিক্ষণই মনে হচ্ছিল কেউ না কেউ আসছে।

লিফটে চেপে জয়িতাদের ফ্ল্যাটের দরজায় চলে এল সুদীপ। বেল বাজাতেই দরজা খুলল। সুদীপ দেখল অত্যন্ত সুন্দরী এবং সুবেশা এক মহিলা তার সামনে দাঁড়িয়ে। তখনও ধাতস্থ হয়নি সুদীপ, কিছু বলার আগেই মহিলা প্রশ্ন করলেন, কাকে চাই?

জয়িতা আছে?

আছে। তুমি কে?

আমি সুদীপ। ওর সঙ্গে পড়ি।

ও। এত রাত্রে এসেছ, কি ব্যাপার?

আমি এখন এই বাড়িতে আছি।

এই বাড়িতে, মানে, আমাদের এখানে তুমি আছ অথচ আমি জানি না!

সীতা রায়ের গলায় বিস্ময় ফুটে উঠতেই ভেতর থেকে জয়িতা বলে উঠল, বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়ে গিয়েছে, ভেতরে আয় সুদীপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *