১৩. চিঠি পেয়ে স্তম্ভিত

মা রেবা,

তোমার চিঠি পেয়ে স্তম্ভিত হয়েছি। কী করে তুমি এমন একটি ডিসিশান একা-একা নিতে পার? এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবার আগে কারো সঙ্গে তুমি যোগাযোগরও প্রয়োজন মনে করলে না? হুট করে ঠিক করলে পিএইচডি করবে। সুযোগ পেয়েছ-ভালো কথা। সুযোগ পেলেই সব সুযোগ নেওয়া যায় না। সুযোগ মানুষের জীবনে সব সময়ই আসে। একটি দিক দেখলে হয় না, সব দিক দেখতে হয়। চার-পাঁচ বছর তুমি একা-একা আমেরিকায় থাকবে এটা একটা কথা হল? আর জামাই তার চাকরিবারি ছেড়ে তোমার সঙ্গে থাকবে, এটাইবা ভাবলে কী করে? তুমি তোমার ট্রেনিং শেষ হওয়ামাত্র দেশে রওনা হবে। আমার ধারণা আমেরিকায় গিয়ে ওদের চাকচিক্য দেখে তোমার মাথা ঘুরে গেছে। এটা ঠিক না। নিজের অবস্থানটা আগে জানা থাকা দরকার।

ছোট জামাই এখন ঢাকা নেই। সেরাজশাহীতে তার বোনের বাড়িতে গিয়েছে এক সপ্তাহের জন্যে। কাজেই তার সঙ্গে এই মুহূর্তে কোনো আলোচনা করতে পারছি না। তবে আমার ধারণা সে যথেষ্টই বিরক্ত হবে।

মা, তুমি এই নিয়ে আর কোনো লেখালেখি করবে না। চলে আসবে। তোমার মাও এ ব্যাপারে খুব অসুখী। দোয়া নিও।

রইসউদ্দিন

 

হোট আপা,

তোমার চিঠি পড়ে সবাই খুব আপসেট। সবচে বেশি আপসেট মা। তিনি খুব কান্নাকাটি করছেন। তার ধারণা আমেরিকায় তোমার থেকে যাবার যে-ইচ্ছা, তাঁর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে।

তুমি তোমার বেশ কিছু চিঠিতে পাশা চৌধুরী নামের এক জন ভদ্রলোকের কথা উল্লেখ করেছ। মার চিন্তা তাকে নিয়ে। আমি জানি এসব খুবই আজেবাজে চিন্তা, তবু আপা–আমার নিজেরও খানিকটা ভয়-ভয় লাগছে। প্লীজ তুমি চলে আস।

ভালো কথা, তুমি ছোট দুলাভাইকেও ঐ ভদ্রলোকের কথা লিখেছ। ঐদিন ঘোট দুলাভাই তা নিয়ে খুব ঠাট্টা-তামাশা করলেন। তুমি সত্যি থেকে গেলে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ঠাট্টা-তামাশার পর্যায়ে থাকবে না।

দুলাভাই এখন পর্যন্ত তোমার পিএইচডি এনডোলমেন্টের কোনো খবর জানেন না। তিনি ঢাকায় নেই। যখন জানবেন, তখন তাঁর মনের অবস্থা কী হবে, তাই ভেবে খুব খারাপ লাগছে।

টুটুল বরিশাল গিয়েছে বড়ো দুলাভাইকে আনবার জন্যে। কী যে ঝামেলা তুমি তৈরি করেছ আপা! ভালোবাসা নাও। কাল আবার একটা চিঠি দেব।

ফরিদা ইয়াসমিন

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *