১৩. ক্যামারলেনগো বের হয়ে এল

১২১.

ঠিক এগারোটা ছাপ্পান্নতে ক্যামারলেনগো বের হয়ে এল। বের হয়ে এল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়।

চারধারে শোরগোল পড়ে গেল। এতক্ষণে যেন বুঝতে পারছে লোকজন, কী হবে এরপর। কেউ চিৎকার করছে, করছে প্রার্থনা, ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে চারপাশ।

অকল্যানের হাত থেকে রক্ষা কর আমাদের। রক্ষা কর ডেভিলের হাত থেকে। ফিসফিস করল সে।

দৌড়ে যাচ্ছে ক্যামারলেনগো হাতে মহামূল্যবান ক্যানিস্টার নিয়ে। তার ছবি দেখা যাচ্ছে সব মিডিয়া ভ্যানের দরজায়। স্ক্রিনে।

তাকাল ক্যামারলেনগো ক্যানিস্টারের ভিতরে। সেখানে ফুটে আছে তার ছবি। অর্ধনগ্ন বুক, বিদ্ধস্ত।

ঈশ্বর রহস্যময় পথে কাজ করেন।

এগিয়ে গেল ক্যামারলেনগো। সবাইকে চমকে দিয়ে।

এখনো একটা কাজ বাকি।

গডম্পিড়! ভাবছে সে, গ্ডস্পিড।

 

চার মিনিট…

এগিয়ে যাচ্ছে ক্যামারলেনশো। সরাসরি নেমে যাচ্ছে ব্যাসিলিকার সামনের মঞ্চে ধাপগুলো পেরিয়ে। বলছে সবাইকে, বিশ্বাস রাখুন, বিশ্বাস রাখুন।

নামছে সে মানুষের দিকে।

ল্যাঙডন ভেবে পায় না। কী করছে লোকটা। সবাইকে মেরে ফেলল নাকি!

শয়তানের ষড়যন্ত্রের, বলছে ক্যামারলেনগো, কোন স্থান নেই স্রষ্টার ঘরে।

ফাদার! চিৎকার করল ল্যাতন, কোথাও যাবার নেই।

স্বর্গের দিকে চোখ দিন! আমরা স্বর্গের দিকে চোখ রাখতে ভুলে গেছি।

তারপর হঠাৎ করে সব পরিষ্কার হয়ে গেল চোখের সামনে।

তারকা ভরা ইতালির আকাশ, তাবল সে, চলে যাবার একমাত্র পথ।

সামনে যে হেলিকপ্টারটা আছে, সেটায় করে বেরিয়ে যাবার কথা ছিল তার। যাবার কথা ছিল হাসপাতালে। সেটা যে কোথায় যাবে তা ঠিক ঠিক বুঝে গেল ল্যাঙডন।

সমুদ্রে মেডিটারিয়ান সিতে? সেটা ট্রেনে কয়েক মিনিটের পথ। দুশ মাইল গতিতে সেখানে যেতে কতক্ষণ লাগবে নাকি সিটির তিন মাইল বাইরের লা কাভা রোমানায়? সেটা কত বড় দুই বর্গমাইল? সেখানে, রোমের পাথুরে এলাকাটায় পৌঁছতে পৌঁছতে সমস্যা হবার কথা নয়।

 

সরে যান সবাই! ঘোষণা করল ক্যামারলেনগো, সরে যান! এক্ষুনি!

কপ্টারের চারধারের সুইস গার্ডরা বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে ক্যামারলেনগোকে আসতে দেখে।

ব্যাক! বলল যাজক।

পিছনে সরে গেল গার্ডরা।

সারা দুনিয়াকে দেখতে দিয়ে এগিয়ে গেল ক্যামারলেনগো চপারের পাইলট ডোরে।

আউট! সন! নাউ।

সাথে সাথে ছিটকে বেরিয়ে পড়ল গার্ড।

ওঠার জন্য তার দুহাতই দরকার দেখে ধরিয়ে দিল সে ক্যানিস্টারটাকে পাইলটের হাতে। তারপর বলল, ধর। ভিতরে ঢুকলে ফিরিয়ে দিও আমার কাছে।

উঠে দেখল সে, ল্যাওডন তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে।

এবার তুমি বুঝতে পারছ। এবার ফিরে এসেছে বিশ্বাস।

তাকাল ক্যামারলেনগো পরিচিত যন্ত্রগুলোর দিকে। তারপর বাড়িয়ে দিল হাত।

কিন্তু যে গার্ডের হাতে সে জিনিসটাকে দিয়েছিল সে বলল, সে নিয়ে নিয়েছে সেটাকে।

কে?

দেখাল গার্ড, সে।

 

উঠে এল পিছন দিয়ে ল্যাঙডন। তার হাতে ক্যানিস্টারটা।

ফ্লাই, ফাদার!

কী করছেন আপনি?

আপনি উড়িয়ে নিবেন, নিক্ষেপ করব আমি। সময় নেই! শুধু আশীর্বাদপ্রাপ্ত চপারটাকে উড়িয়ে নিন!

মেঘের আঁধার ঘনিয়ে এল ক্যামারলেনগোর মুখে, আমি একাই কাজটা করতে পারি। আমার একার করার কথা।

তিন মিনিট, ফাদার! তিন মিনিট!

আর দেরি করল না ক্যামারলেনগো। সোজা চালিয়ে দিল চপারকে। উঠে আসার আগের গর্জন করল সেটা।

দৌড়ে আসছিল ভিট্টোরিয়াও। তাদের চোখে চোখে দেখা হল। তারপর একটা পাথরের টুকরার মত ডুবে গেল সে।

 

২২.

চপারের ভিতরে, ক্যামারলেনগোর পিছনে বসে তাকিয়ে আছে রবার্ট ল্যাঙডন নিচের দিকে। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে। নিচটা যেন আলোর সমুদ্র।

এন্টিম্যাটার ক্যানিস্টারটা একেবারে ভারি ঠেকল তার হাতে।

দু মিনিট।

উপরে উঠে এসে মোহময় লাগছিল শহরটাকে। আলোয় আলোয় ভরা। যত কাছে মনে করছিল সমুদ্রকে, বাস্তবে সেটা তত কাছে নয়।

উঠে গেল চপার আরো আরো। তারপর সেটা এগিয়ে গেল রোমের সীমানা পেরিয়ে। সেদিকে শুধুই পাহাড় আর পর্বত।

লা কাভা রোমানা!

সেদিকেই যাচ্ছে তাহলে চপারটা সামনে দেখা যাচ্ছে সে জায়গাটাকে। পরিত্যক্ত। কিন্তু কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটছে এখানে। এগুচ্ছে না তারা সামনে।

ল্যাঙডন তাকাল নিচে। সেখানে আলোর খেলা। মিডিয়া ভ্যানের আলো।

তারা এখনো ভ্যাটিকানের উপরেই আছে!

ক্যামারলেনগো! সামনে চলুন! অনেক অনেক উপরে উঠে গেছি আমরা। সামনে যেতেই হবে। আমরা ক্যানিস্টারটাকে ভ্যাটিকানের উপর ফেলে দিতে পারি না!

কোন জবাব দিল না ক্যামারলেনগো।

হাতে দু মিনিটের চেয়েও অনেক কম সময় আছে। আমি দেখতে পাচ্ছি না কাভা রোমানা। মাত্র দু মাইল দূরে। উত্তরে। আমাদের হাতে একদম-

না। একাজটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমি দুঃখিত। হাসল কামারলেনগো তার দিকে তাকিয়ে। আমি আশা করেছিলাম আপনি আসবেন না, মাই ফ্রেন্ড! কিন্তু যা করার করে ফেলেছেন আপনি। চূড়ান্ত আত্মত্যাগ।

তাকাল ক্যামারলেনগোর চোখে চোখে ল্যাঙডন। পড়ে ফেলল তার মনের কথা। তাহলে এমন কোন জায়গাই কি নেই যেখানে আমরা যেতে পারি?

উপরে। আরো আরো উপরে। এটাই একমাত্র নিশ্চয়তা।

বুঝতে পারল সে। লুক এ্যাট দ্য হেভেন্স!

আরো আরো উপরে উঠছে তারা। মানুষের থেকে অনেক অনেক দূরে।

যাত্রা একমুখী যাত্রা।

 

১২৩.

একই মুহূর্তে উপরের দিকে তাকিয়ে ছিল ভিট্টোরিয়া। দেখছে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে আসছে হেলিকপ্টারটা। এমনকি এর গর্জনও হয়ে এসেছে স্নান। সারা পৃথিবী, সারা দুনিয়ার সমস্ত হৃদয় এক হয়ে বাজছে।

তাকিয়ে আছে সে উপরে। কী ভাবছে ল্যাঙডন? সে কি বুঝতে পারেনি এখনো?

উপরে তাকিয়ে আছে জনসমুদ্র। চেয়ে আছে চপারটার দিকে। তারা রোমান আকাশে হারিয়ে যাচ্ছে সেটা, আরো আরো উপরে। হঠাৎ টের পায় ভিট্টোরিয়া। বাঁধ ভেঙে আসছে কান্না।

তার পিছনে, একশ একষট্টিজন কার্ডিনাল তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। তাদের হাত জোড়া করা। প্রার্থনা করছে অনেকেই। কাঁদছে কেউ কেউ, আবেগ গোপন করার চেষ্টা না করে।

বসতবাড়িগুলোয়, বারে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, এয়ারপোর্টে, হাসপাতালে, সারা দুনিয়া জুড়ে সমস্ত আত্মা আজ, এ মুহূর্তে চেয়ে আছে অনিমেষ। হাত জোড়া করে রেখেছে কেউ কেউ, কেউ আকড়ে ধরে আছে প্রিয় সন্তানকে।

তারপর, নিষ্ঠুরভাবে, সেন্ট পিটার্সের ঘণ্টা বাজতে শুরু করল।

আর কান্নাকে বাধা দিতে পারল না ভিট্টোরিয়া।

তারপর… সারা দুনিয়ার চোখের সামনে… বয়ে গেল সময়।

 

মৃত্যুময় নিরবতা আর সবকিছুর চেয়ে নিষ্ঠুর হয়ে দেখা দিল।

ভ্যাটিকান সিটির উপরে, একটা আলোর বিন্দু দেখা দিল। দেখা দিল একটা ছোট্ট রেখা। একেবারে খাঁটি সাদা আলো।

তারপর ঘটল ব্যাপারটা।

একটা আলোর ঝলক। তীব্র। সুতীব্র। অন্ধ করে দেয়া আলোর এক বিশাল গোলক দেখা দিল আকাশের বুকে। দূর করে দিল অন্ধকার, তিমির বিনাশী আলো দখল করে নিল আকাশের বুক। গতি বাড়িয়ে বাড়িয়ে সেটা এগিয়ে আসতে শুরু করল নিচের দিকে। অকল্পনীয় গতিতে।

তারপর নিচের সম্মিলিত মানুষ হিম শিতল আতঙ্কে শিউরে উঠল। ঢাকল তাদের মুখাবয়ব। বন্ধ করল চোখ।

তারপর, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছায়, আলোটা এগিয়ে এসে হঠাৎ কাঁচের গোলার মত স্থির হয়ে গেল। একপলের জন। থেমে গেল। গেল থমকে।

সাথে সাথে সেটার ধাক্কা অনুভব করল নিচের মানুষ।

কিন্তু এটুকুই।

আবার আলোটা ফিরে যেতে শুরু করল কেন্দ্রের দিকে।

এরপর এল আসল ধাক্কা। তাপের একটা দেয়াল। বাতাসের দুর্ধর্ষ আঘাত। নিচু হয়ে গেল সবাই, শিউরে উঠল। ঠিক ঠিক অনুভব করল তার ক্ষমতা, শক্তিমত্তা।

যেন খুলে গেছে নরকের অভিশপ্ত দুয়ার। তারই আঁচ এসে লাগছে সবার গায়ে। আলোকিত হয়ে আছে রোমের আকাশ, এখনো।

ফিরে যাচ্ছে আলোটা। হার মেনে নিয়ে। একেবারে যে বিন্দু থেকে এসেছিল, সে বিন্দুতে।

তার সমস্ত ক্ষমতাকে সরিয়ে নিয়ে, হার মেনে, ফিরে গেল আলো আর তাপের নিষ্ঠুর বলয়।

 

১২৪.

এর আগে এত মানুষ এত নিরব ছিল না কখনোই।

থমকে গেল সবাই। উপর থেকে সব শেষ হয়ে যেতে দেখে শিউরে উঠে তাকাল মাটির দিকে। সামলে নেয়ার চেষ্টা করল অপ্রত্যাশিত ধাক্কাটা।

যেন পুরো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ শ্রদ্ধায় মোয়াল মাথা।

হাঁটু গেড়ে প্রার্থনায় রত হল কার্ডিনাল মর্টাটি। তার সাথে যোগ দিল বাকি সব কার্ডিনাল। সুইস গার্ড নিচু করল তাদের লম্বাটে তলোয়ারের ফলা। থমকে থাকল স্থাণুর মত।

কারো মুখে কোন কথা ফুটছে না।

নড়ছে না কেউ।

সবখানে, সব মানুষ, নতুন, আনকোরা নূতন ক্ষমতার প্রথম ঝলক দেখে পাথর হয়ে গেল। আবেগ। ভয়। বিশ্বাস। বিস্ময়।

কাঁপছে ভিট্টোরিয়া। ভিতর থেকে অসহায় কান্না দমকে দমকে উঠে আসছে। সব সব ব্যাপার ছাড়িয়ে একটা কথাই বারবার তার ভিতরে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।

রবার্ট!

তাকে বাঁচানোর জন্য সে এসেছিল সেন্ট এ্যাঞ্জেলোর দুর্গে।

রক্ষা করেছিল তাকে।

আর তারপর, তারই সৃষ্টির কারণে শেষ হয়ে গেল সে।

 

প্রার্থনা করতে করতে মাটির মনে একটা কথাই খেলে গেল বারবার, কামারলেনগোর মত সৌভাগ্যবান যদি সে হতে পারত! যদি ঈশ্বর তার সাথেও কথা বলতেন! যদি সেও জীবন দিয়ে দিতে পারত মানুষের কল্যাণে!

মর্টাটি পুরনো বিশ্বাসের উপর দাঁড়ানো এক আধুনিক মানুষ। অলৌকিকে তার পূর্ণ আস্থা কোনকালেই ছিল না।

এখন আছে।

ঈশ্বরের ঈশ্বর হয়ে লাভটা কী, যদি তিনি সৃষ্টির সাথে চরম মুহূর্তে যোগাযোগ না করেন!

হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করল সে তরুণ ক্যামারলেনগোর জন্য, যে তার ছোট জীবন দিয়ে অমর হয়ে রইল শেষ দিন পর্যন্ত। যে এক মুহূর্তে সব অবিশ্বাসের ভিত্তিমূল ধ্বসিয়ে গেল।

একপল পরেই, ভ্যাটিকানের আশপাশে একটু মৃদু গুঞ্জন উঠল। গুঞ্জন পরিণত হল কলরবে। কলরব চিৎকারে।

চোখ খুলে তাকাল মর্টাটি।

দেখ! দেখ!

সবাই তার পিছনে আঙুল তাক করে ছিল। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার দিকে।

সাদা হয়ে গেছে তাদের মুখমন্ডল। কেউ বসে পড়ল হাঁটু গেড়ে, কেউ উন্মাদের মত চিৎকার করল। বাকিরা অপ্রতিরোধ্য ফেঁপানিতে আক্রান্ত হল।

দেখ! দেখ!

সবার বাড়ানো হাতের দিকে তাকাল মাটি। ব্যাসিলিকার সবচে উপরের লেভেলের দিকে তাক করে ছিল লোকজন তাদের হাত।

সেখানে, দাঁড়িয়ে আছেন যিশু খ্রিস্ট।

দাঁড়িয়ে আছে তার বিশাল মূর্তি।

প্রথমে বুঝতে পারল না মাটি, তারপর যখন দেখতে পেল, ক্রস করল নিজেকে। যিশুর মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে আছে ক্যামারলেনগো কার্লো ভেন্ট্রেস্কা।

 

১২৫.

আর পড়ছে না রবার্ট ল্যাঙডন।

আর কোন ভয় নেই। নেই বেদনা। এমনকি দুরন্ত বাতাসের ঝাঁপ্টাও নেই। শুধু পানির কুলকুল শব্দ। যেন সে শুয়ে আছে কোন এক অচেনা, অনিন্দসুন্দর সাগরতীরে।

সাথে সাথে বুঝতে পারল ল্যাঙডন, এরই নাম মৃত্যু।

আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে থাকা অসাড়তাকে বাধা দিল না সে। চায়ও না বাঁধা দিতে। চলে যাচ্ছে সে সেখানে, অনন্ত সুখের জগতে।

নিয়ে চল আমাকে, দয়া করে নিয়ে চল…

শান্তির এক নিঝর বয়ে চলেছে তার ভিতরে ভিতরে।.কে যেন তার স্বপ্নটা ভেঙেচুরে দেয়ার চেষ্টা করছে।

না! আমাকে হতে দাও!

জাগতে চায় না সে। তার সচেতনতার চারপাশে ভর করেছে ডেমনরা। অকল্যানের দূতেরা। কাঁছে ঘেষতে পারছে না তারা। চোখের সামনে ঝাঁপসা আলো বয়ে যাচ্ছে। ভেসে আসছে আওয়াজ, যেন সমুদ্রের অন্য প্রান্ত থেকে, অচেনা কোন দেশ থেকে।

না, প্লিজ!

তারপর, হঠাৎ করে, সে সব বুঝে উঠতে শিখল…

 

একেবারে উপরে চলে গিয়েছিল হেলিকপ্টার। বাতাস যেখানে অনেক হাল্কা। ভিতরে ফেঁসে গিয়েছিল। তার আত্মরক্ষার তাগিদ বারবার বলছিল, ফেলে দাও, ফেলে দাও ক্যানিস্টারটা।

কিন্তু, জিনিসটা বিশ সেকেন্ডেরও কম সময় পার করে নেমে আসবে একেবারে নিচে। মানুষের মহানগরীর বুকে।

উপরে, আরো আরো উপরে!

একটা ছোট প্লেন যেতে পারে চার মাইল উপর পর্যন্ত। হেলিকপ্টার নির্ভর করে বাতাসের ঘনত্বের উপর। তার আছে রোটর। সেটাতে বাতাস লাগতে হবে।

কত উপরে তারা? দু মাইল? তিন মাইল?

যদি ঠিক ঠিক হিসাব কষে ফেলতে পারে ক্যানিস্টারটা, তাদের নিচে এবং পৃথিবীর উপরে একটা নিরাপদ জায়গায় বিস্ফোরিত হবে সেটা।

একচুল এদিক সেদিক হতে পারবে না।

আর আপনি যদি ভুল হিসাব করেন? জিজ্ঞেস করেছিল ক্যামারলেনগো।

সে এখন আর কন্ট্রোল ধরে নেই। কপ্টারটা কি অটো পাইলটে চলছে?

উপরে হাত দিল ক্যামারলেনগো, বের করে আনল কালো একটা লাইলনের ব্যাগ।

ক্যানিস্টারটা আমার হাতে দিন। বলল ক্যামারলেনগো, তার কণ্ঠে কর্তৃত্ব।

কী করবে ভেবে পেল না ল্যাঙডন। এগিয়ে দিল ক্যানিস্টার, নব্বই সেকেন্ড।

ক্যামারলেনগোর কাজ দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল ল্যাঙডনের। সে ক্যানিস্টারটাকে সেই কার্গো বক্সে ভরে দিল। তারপর লক করে দিল সেটাকে।

কী করছেন আপনি!

চিন্তার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করছি। ছুড়ে দিল সে চাবিটা। জানাল দিয়ে। বাইরে।

যেন ল্যাঙডনের আত্মাও বেরিয়ে পড়ল চাবিটার সাথে সাথে।

ক্যামারলেনগো কার্লো প্যাকটা স্কুলের ব্যাগের মত করে জড়িয়ে নিল তার গায়ে, পিঠের সাথে আটকে নিল।

আই এ্যাম স্যরি, বলল ক্যামারলেনগো, ব্যাপারটা এমন হবার কথা ছিল না।

তারপর সে খুলল দরজা, নেমে গেল খোলা আকাশে।

 

ল্যাঙডন যেন জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থান করছে। যেন দুঃস্বপ্ন আর মরণের মধ্যে খেলা করছে। ভেবে পায় না সে কী করবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিল। কিছু একটা করতেই হবে।

প্রতিবস্তুর ক্যানিস্টারটা নাগালের বাইরে।

উপরের দিকে গুলির মত উঠে যাচ্ছে চপার প্রতিনিয়ত।

পঞ্চাশ সেকেন্ড। উপরে, আরো উপরে। কেবিনের ভিতরে পাগলের মত হাতড়ে গেল ল্যাঙডন। পয়তাল্লিশ সেকেন্ড। আরেকটা প্যারাস্যুটের আশায় হাতড়াল সে। যেখানে যেখানে সম্ভব। চল্লিশ সেকেন্ড। আর কোর প্যারাস্যুট নেই। পঁয়ত্রিশ সেকেন্ড। এগিয়ে গেল সে দরজার দিকে। তাকাল নিচে, খোলা বাতাসের সাথে যুঝতে বুঝতে। নিচে কালো পৃথিবীর বুকে আলোকিত রোম। বত্রিশ সেকেন্ড।

এবং সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিল সে।

অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত…

 

কোন প্যারাস্যুট ছাড়াই খোলা দরজা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল রবার্ট ল্যাঙডন। কালো রাত তার দেহকে নিয়ে নিল দখলে।

এবার সে কোন পুলের উপরে লাফ দিয়ে পড়ছে না, পড়ছে না কোন পানির আধারের উপর। নিচে ইট আর কংক্রিটের বিশাল মহানগরী।

অসম্ভব দ্রুতিতে নেমে আসছে সে। নেমে আসছে নিচে। প্রতি মুহূর্তে বেড়ে যাচ্ছে অবিশ্বাস্য গতি।

সাথে সাথে তার মনে পড়ে গেল সার্নে শোনা কথাটা।

এক স্কয়ার ফুটের ড্রাগ একটা পড়ন্ত বস্তুর গতি রোধ করবে বিশভাগ।

সাথে করে নিয়ে এসেছিল সে উইন্ড শিল্ডের একটা কভার। অনেকটা গ্লাইডারের মত। উপরদিকে উঁচু হয়ে আছে তার হাত, পা নিচের দিকে।

নামছে সে তীব্ৰগতিতে।

তারপর, মাথার উপরে কোথাও এক সুতীব্র বিস্ফোরণের আওয়াজ পেল ল্যাঙডন।

প্রচন্ড শকওয়েভের পুরোটাই টের পায় সে। টের পায়, ওঠে কেঁপে। অবিশ্বাস্য শকওয়েভের ধাক্কা সামলে নিয়েছে তার মাথার উপরের শিন্ড।

সাথে সাথে তাপের এক অপ্রতিরোধ্য দেয়াল এগিয়ে আসে। আশপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যায় অসম্ভব।

ঝাঁকি খায় সে। মনে হয় কোন গরম চুল্লির ভিতরে বসে আছে। কিন্তু হাল ছাড়ে না। ফস্কাতে দেয় না হাতের অবলম্বনটাকে।

এরপর চোখ খুলে দেখল সে আলোর অনির্বচনীয় ফুলঝুরি। আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল ভয়ে।

তারপর, যেমন হঠাৎ করে ধাক্কাটা এসেছিল, চলেও গেল তেমন করে।

কালো আকাশের বুকে নেমে এল সে আগের মত।

গাণিতিক হিসাবে জান খারাপ করে দিচ্ছে সে।এক স্কয়ার ফুটের ড্রাগ তার পড়ার গতিকে নামিয়ে আনবে বিশভাগ।

এটা এক স্কয়ার ফুন্টর চেয়ে বেশ বড়।

কিন্তু গতি বাড়ছেই প্রতি মুহূর্তে।

নিচে, কালো আকাশের বুকে নক্ষত্রলোকের মত, আস্তে আস্তে প্রসারিত হল আলোয় আলোয় ছাওয়া রোম। ইট পাথরের মহানগরী।

মাঝে মাঝে আলোতে বিরতি যে নেই তা নয়। কালো একটা সাপ একেবেকে চলে গেছে নিচের মহানগরীর বুক চিরে।

হঠাৎ তালুতে অনুভব করল সে একটা ব্যথা। আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। অন্য হাতটা টেনে নিচে নামাল সে, দুহাত দিয়ে দু কোণার হ্যান্ডেল ধরে ছিল, ব্যাখ্যাটা কমে গেল একটু।

সাথে সাথে আরো একটা ব্যাপার বুঝতে পারল, তার গতি বেঁকে যাচ্ছে ডানে।

আশার ক্ষীণ একটা রেখা দেখা দিল সাথে সাথে। খুব অল্প, কিন্তু বেঁকে যাচ্ছে গতিপথ।

বিপরীত হাত নিচু করল সে এবার। আবার বিপরীত দিকে বেঁকে যাচ্ছে গতি।

মনোনিবেশ করল সে সাথে সাথে, কাজের প্রতি। নিচের কালো সাপটাই এখন ভরসা। সেটা ডানে, কিন্তু ভরসাও আছে। অনেক উপরে ল্যাঙডন এখন। মরিয়া হয়ে সেদিকে ঘুরিয়ে নিল ডানাটাকে।

বাকিটা ঈশ্বরের হাতে।

খুব বেশি বেঁকে যাচ্ছে না। এটা কোন সত্যিকার গ্লাইডার নয় যে যেদিকে খুশি ঘোরানো যাবে বিমানের মত।

এবার, জীবনে প্রথমবারের মত একটা মিরাকলের জন্য প্রার্থনা করল সে উপায়ান্ত র না দেখে।

নিচ থেকে উঠে আসছে অন্ধকার… নড়াল সে শরীর, বাঁকিয়ে দিল গোটা দেহটা একদিকে… কাজ হচ্ছে, অনেক বেঁকে যাচ্ছে সে… অনেক… উঠে আসছে স্রোতস্বিনী সাইবার… তারপর, আঘাত হানল সে।

গূঢ় আঁধার গিলে নিল অবশেষে।

 

টাইবারের বুকে একটা হাসপাতাল আছে, আইসোলা টাইবেরিনার উপরে।

হাসপাতালটায় যোলশ পঁয়ষট্টির প্লেগের অনেক প্রভাব ছিল। তখন থেকেই এখানে মানুষ দেখতে আসে হাসপাতালটাকে। দেখতে আসে সুন্দর দ্বীপটাকে।

তারা তুলল একটা শরীর পানি থেকে। কে দেখেছিল প্রথম, বলতে পারবে না। কিন্তু তুলল।

এখনো সচল আছে হৃদপিন্ড।

কয়েক মিনিট ধরে চেষ্টা চালাল তারা। তারপর, হাল ছেড়ে দিল।

কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেশে উঠল মরণাপন্ন লোকটা।

আবার বিশ্বাস ফিরে এল তাদের বুকে, টাইবেরিনা দ্বীপে অলৌকিক কিছু একটা আছেই।

 

১২৬.

কার্ডিনাল মর্টাটি এমন সুন্দর নিরবতার কোরাস কখনো শোনেনি। সিস্টিন থেকে যেন অনিন্দ্যসুন্দর সুর লহরী বেরিয়ে আসছে।

ক্যামারলেনগো ভেস্কোর দিকে যখন তাকাল সে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। সবাই সব দেখেছে। দেখেছে, কী করে সে হেলিকপ্টার নিয়ে উড়ে গেল আকাশে, কীভাবে আলোর পিন্ড বিস্ফোরিত হল, কী করে ধাক্কা এল সবার কাছে।

আর এখন দাঁড়িয়ে আছে ক্যামারলেনগো। তাদের সবার মাথার উপরে। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার চূড়ায়।

একেই কি বলে ঈশ্বরের মদদ? এ্যাঞ্জেলদের সহায়তা?

অসম্ভব….

এ যে ক্যামারলেনগো তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এক অচিন্তনীয় সৌকর্য ভর করেছে তার উপর আজকে।

সারা চত্বর ভরে গেল শত কণ্ঠের কাকলীতে। একদল সন্যাসিনী হাঁটু গেড়ে বসল। আস্তে আস্তে একটা রব উঠল চারধার থেকে। যেভাবে ঝড় শুরু হয়, প্রথমে একটু শব্দ, তারপর সেটার সাথে একটা লয় যুক্ত হয়, যুক্ত হয় আরো আরো শব্দ। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক লয়ে।

তেমন করেই সারা স্কয়ারের মানুষ জয়ধ্বণি দিল শুধু মাত্র ক্যামারলেনগোর নাম ধরে।

অবাক বিস্ময়ে দেখল মর্টাটি, চারপাশের কার্ডিনালরাও যোগ দিল তাদের সাথে।

সত্যি সত্যি কি এমনটাই হচ্ছে?

 

ভেবে পায় না কার্লো ভেন্ট্রেস্কা, সে, নাকি তার আত্মা, নেমে এল স্বর্গ থেকে? ভেবে পায় না কী করে তার প্যারাস্যুট আর সব জায়গা থাকতে নামল ভ্যাটিকানের এক কোমল বাগানে। কী করে সে এতগুলো ধাপ বেয়ে উঠে এল। এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার চূড়ায়, সেটা তার শরীর, নাকি আত্মা!

অনুভূতি তার একটা ভৌতিক আত্মার মত।

হালকা।

সে ভেবে পায় না আসলে লোকগুলো তার নাম ধরে চিৎকার করছে, নাকি ঈশ্বরের নাম ধরে? সেই একই আনন্দ, যেটা সে পেয়ে এসেছে প্রতিদিন প্রার্থনার সময়….

সারাটা জীবন এ মুহূর্তের জন্যই সে প্রার্থনা করে এসেছে। চার্চের কাজে যেন লাগা যায়।

আপনাদের ঈশ্বর জীবিত, বলতে ইচ্ছা করছে তার চিৎকার করে, চারপাশের অলৌকিকের দিকে একটু নজর দিন।

তারপর, যখন সেই স্পিরিট তাকে নাড়ালেন, নড়ল সে, হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ছাদের উপর।

শুরু করল প্রার্থনা।

 

১২৭.

একটু পরে, শুয়ে আছে ল্যাঙডন একটা বিছানায়। দেখতে পাচ্ছে না কিছু, কারণ,

চোখ বন্ধ। সামনের দৃশ্যগুলো এম্নি এম্নি সরে গেল। পানির সেই অনুভূতি এখনো কাজ করছে ভিতরে।

তাকাল সে কোনক্রমে চোখ মেলে। চারধারে সাদা পোশাক পরা অবয়ব। কেন তারা সাদা? নাকি ভুল দেখছে সে? কোথায়? স্বর্গে?

বমি করা শেষ করেছে, বলল এক লোক ইতালিয়তে, ঘুরিয়ে দাও এবার।

লোকটার কন্ঠে পেশাদারীত্ব।

কেউ একজন তাকে উল্টে দিচ্ছে… বসার চেষ্টা করল ল্যাঙডন। কোমল হাতে সরিয়ে দেয়া হল চেষ্টাটাকে। পকেট হাতড়াচ্ছে অন্য কেউ। ভিতর থেকে সব বের করে আনছে।

তারপর, সে হারিয়ে গেল অন্য কোন জগতে।

 

ডক্টর জ্যাকোবাস মোটেও ধর্মভীরু নয়, ওষুধ তাকে অনেক আগেই সেখান থেকে সরিয়ে এনেছে। আজ রাতের ঘটনা দেখেছে সে ঠিক ঠিক।

তারপর আকাশ থেকে মানুষ পড়া শুরু হল?

ডক্টর জ্যাকোবাস আর তার কর্মচারীরা তাকিয়ে ছিল ভ্যাটিকানের দিকে। তারপরই, আকাশ থেকে এই আত্মা পড়ল। পড়ল পানিতে। পড়ার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় আঘাতে। ডুবে যায়।

ঈশ্বর নিজহাতে তাকে এখানে ন্যস্ত করেছেন।

নাহলে কী করে তারা শুনতে পেল শব্দটা! কী করে সে আর পুরো নদী বাদ দিয়ে পড়ল হাসপাতালের দ্বীপে!

ই আমেরিকানো, বলল এক নার্স, ওয়ালেট থেকে একটা কাগজ বের করে।

আমেরিকান? ইতালিয়রা আমেরিকা সম্পর্কে একটা কৌতুক করে। আমেরিকানরা ইতালিতে, রোমে এত বেশি বিচরণ করে যে এক সময় ইতালির জাতীয় খাদ্য হয়ে যাবে হ্যাম বার্গার।

কিন্তু আমেরিকানরা আকাশ থেকে পড়তে শিখল কবে থেকে?

স্যার, আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন কী? কোথায় আপনি, জানেন?

আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে লোকটা।

অবাক হবার কিছু নেই। সি পি আর করার পর লোকটা হড়হড় করে অনেক। পানিবের করে দিয়েছে বুক থেকে, পেট থেকে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পড়ছে নার্স। সি চিয়ামা রবার্ট ল্যাঙডন।

অসম্ভব!

ডক্টর জ্যাকোবাস তাকে হেলিকপ্টারে উঠে অনেক অনেক উপরে চলে যেতে দেখেছে। তারপর ঘটেছে বিস্ফোরণ। সেই লোকটাই হয় কী করে!

এই সে লোকটা আমার মনে আছে। পরনে এখনো টুইড জ্যাকেট! বলল নার্স এমন সময়ে চিক্কার করল এক রোগিনী, হাতের রেডিও উঁচু করে।

এইমাত্র ক্যামারলেনগো নেমে এসেছে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার উপরে।

সিদ্ধান্ত নিল ডক্টর জ্যাকোবাস, সকাল আটটা পর্যন্ত ডিউটি শেষ করে সে গির্জায় যাবে।

 

আবার জ্ঞান ফিরল রবার্ট ল্যাঙডনের। সে একটা এক্সামিনেশন টেবিলে শুয়ে আছে। চারপাশে নানা জিনিস। কেউ একজন একটা ইঞ্জেকশন নিয়ে এগিয়ে এল।

স্বর্গ? অবশ্যই নয়।

এলিয়েন? হতে পারে।

সে শুনেছিল এমন অনেক কথা। মানুষকে অনেক বিপদের হাত থেকে তারা উদ্ধার করে। তারপর নিয়োজিত হয় সেবায়।

তোমাদের জীবনের মত নয় আমাদের… উঠে বসল আতঙ্কিত হয়ে ল্যাঙটন।

মিস্টার ল্যাঙডন, প্লিজ! দৌড়ে এল ডক্টর জ্যাকোবাস।

তাকাল ল্যাঙডন স্থির দৃষ্টিতে। এখনো সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। আমি… মনে করেছিলাম…

ইজি। মিস্টার ল্যাঙডন। আপনি একটা হসপিটালে আছেন।

হাসপাতাল দু চোখে দেখতে পারে না ল্যাঙডন। কিন্তু তার পরও, হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে। এলিয়েনদের হাতে পড়ার চেয়ে, ভিনগ্রহের অষুধ খাবার চেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকা অনেক ভাল।

আমার নাম ডক্টর জ্যাকোবাস, আপনি যে বেঁচে আছেন… জোর বরাত বলতে হয়।

আমার পোশাক আশাক কোথায়?

একটা পেপার রোব পরে আছে।

সেগুলো ভিজে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে আমরা কেটে ফেলি।

আপনার পকেটে আঠালো কী যেন পাওয়া গেছে। বলল নার্স।

হায় হায়! গ্যালিলিও ডায়াগ্রামা! পৃথিবীতে একমাত্র কপি!

আপনার ব্যক্তিগত জিনিসগুলো আমরা আলাদা করে রেখেছি। বলল সে একটা প্লাস্টিক বিন দেখিয়ে, ওয়ালেট, ক্যামকর্ডার, একটা কলম।

আমার কোন ক্যামকর্ডার নেই।

তাকাল সে। সনি রুবি ক্যামকর্ডার। মনে পড়ে গেল সাথে সাথে। কিং কোহলারের শেষ আকুতি।

এগুলো আপনার পকেটেই পাওয়া গেছে। ক্যামকর্ডারটায় কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। নতুন একটা কিনতে হতে পারে। আপনার ভিউয়ার ভেঙে গেছে। আওয়াজ অবশ্য আসছে এখনো। বারবার প্লে হচ্ছে সেটা। দুজন লোক বচসা করছে যেন।

একবার কানে নিয়ে ঠেকাল সে ক্যামকর্ডারটা। তারপরই চিনতে পারল কোন দুজন কথা বলছে।

উঠে বসতে চাইল সে উত্তেজনায়।

মাই গড।

আবার শুরু থেকে কথাগুলো চলল। কানের কাছে নিয়ে এল সে ক্যামকর্ডারটাকে।

সব পরিষ্কার হয়ে আসছে… এন্টিম্যাটার… হেলিকপ্টার…

কিন্তু এর মানে…

আবার বমি পেল! কাঁপতে কাঁপতে উঠে এল সে টেবিল থেকে। দাঁড়াল কম্পমান পায়ের উপর।

মিস্টার ল্যাঙডন! ডক্টর জ্যাকোবাস এগিয়ে এল সাথে সাথে।

আমার কিছু জামা কাপড় প্রয়োজন।

প্রয়োজন বিশ্রামও।

আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। চেক আউট করছি। এখনি। কিছু পোশাক দরকার।

কিন্তু স্যার আপনি! ডক্টর জ্যাকোবাস বাক বিতন্ডা করার চেষ্টা করল।

এখনি!

আমাদের হাতে কোন পোশাক নেই। হয়ত কাল আপনার কোন বন্ধু কোন কাপড়চোপড় আনতে পারে।

ডক্টর জ্যাকোবাস, আমি এক্ষুনি আপনার দুয়ার পেরিয়ে যাচ্ছি। পোশাক প্রয়োজন। আমি যাচ্ছি ভ্যাটিকান সিটিতে। কেউ নাঙা গায়ে ভ্যাটিকানে যেতে পারে না। আমার কথা কি পরিষ্কার বুঝতে পারছেন আপনি?

কোনক্রমে হজম করল কথাগুলো ডক্টর জ্যাকোবাস, এই লোকটাকে পরার মত কিছু দাও।

 

হসপিটাল টাইবেরিনা থেকে বেরিয়ে এল ল্যাঙডন প্যারামেডিকের পোশাকে।

একই পোশাক পরা মহিলা ডাক্তার বলেছে, তাকে ভ্যাটিকানে পৌঁছে দিবে স্বল্পতম সময়ে।

মল্টো ট্রাফিকো, বলল সে। ভ্যাটিকানের চারপাশের এলাকা যানবাহনে সয়লাব।

কন্ডো কন্ডাসেন্ডে ডি এম্বুলেঞ্জে।

এম্বুলেঞ্জে?

এরো এম্বুলেঞ্জে।

মাথা নাড়ল সে।

হাসল মহিলা, ফ্লাই ভ্যাটিকান সিটি। ভেরি ফাস্ট!

 

১২৮

একটা জীবন পার করে, উন আশি বছর বয়সে, এই অলৌকিক দেখা খুব জরুরি ছিল, জানে মর্টাটি।

সিনর মর্টাটি! এক সুইস গার্ড চিৎকার করল, আপনার কথামত আমরা ছাদে গিয়েছিলাম। ক্যামারলেনগো রক্ত মাংসের মানুষ। একেবারে আমাদের চেনা ক্যামারলেনগো। স্পিরিট নন।

তোমাদের সাথে কি কথা বলেছেন?

নিল ডাউন হয়ে প্রার্থনায় রত। তাকে ছোয়ার সাহস হয়নি আমাদের।

মাটি একটু চিন্তা করলেন, বল তাকে, তার কার্ডিনালরা অপেক্ষা করছে।

সিনর, যেহেতু তিনি একজন মানুষ… ইতস্তত করছে গার্ড।

কী?

তার বুক… পোড়া। ক্ষতস্থান বেঁধে দিব কি? তিনি নিশ্চই ব্যাথায় আছেন।

তিনি একজন মানুষ। সুতরাং মানুষের মতই তার সেবা করবে। গোসল করাও। ভাল করে ঢেকে দাও ক্ষতস্থান অষুধ সহ। পরিষ্কার রোবে ঢেকে দাও। সিস্টিন চ্যাপেলে তার জন্য অপেক্ষা করব আমরা।

দৌড়ে গেল গার্ডরা।

রাজকীয় ধাপে বসে আছে ভিক্টোরিয়া। বিদ্ধস্ত। এগিয়ে গেল কার্ডিনালরা। যাচ্ছে তারা সিস্টিন চ্যাপেলে।

তাকাল মর্টাটি। তার করার মত আরো অনেক কাজ আছে।

ঢুকে গেল চ্যাপেলে। তারপর লাগিয়ে দিল দরজা।

গড হেল্প মি!

 

হসপিটাল টাইবেরিনার দু রোটরের এ্যারো এম্বুলেঞ্জে ভ্যাটিকান সিটির পিছন দিয়ে ঢুকল। আর মনে মনে আশা করল ল্যাঙডন, এটাই যেন তার জীবনের শেষ হেলিকপ্টার ভ্রমণ হয়।

ভ্যাটিকানে নামতে কোন অসুবিধা নেই বোঝানোর পর সেটাকে ল্যান্ড করাতে পারল তারা ভিতরে।

গ্রাজি। বলল সে। নামল নিচে।

মহিলা পাইলট তার দিকে একটা উড়ো চুমু ছুড়ে দিয়ে চলে গেল সাথে সাথে।

মাথাটাকে পরিষ্কার করে নেয়ার চেষ্টা করল সে। চেষ্টা করল ভাবতে, যা সে ভাবছে।

কী করবে, ঠিক করা আছে সব।

এগিয়ে গেল সে সামনের দিকে। হাতে ক্যামকর্ডার দৃষ্টি রাখল, যেন কেউ দেখতে পায়।

 

কার্ডিনাল মর্টাটি তাকিয়ে আছে সিস্টিন চ্যাপেলের ঘড়ির দিকে। বিশাল পেন্ডুলামের দিকে।

ইট ওয়াজ এ মিরাকল! বলল এক কার্ডিনাল, দ্য ওয়ার্ক অব গড!

ঠিক! বলল আরেকজন, ঈশ্বর তার ইচ্ছাকে প্রকাশ করেছেন।

ক্যামারলেনগো আমাদের পোপ হবেন, চিৎকার করল অন্য কার্ডিনাল, তিনি কোন কার্ডিনাল নন, কিন্তু তাকে স্বয়ং ঈশ্বর আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন।

ঠিক তাই! দেরি করল না আরেক কার্ডিনাল, কনক্লেভের নিয়ম মানুষের গড়া। আমাদের উপরে মূল্য দিতে হবে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে! আমি ব্যাটিংয়ের জন্য অত্যন্ত দ্রুত অনুরোধ করছি।

একটা ব্যালটিং? বলল কার্ডিনাল মর্টাটি, আমার মনে হয় সে দায়িত্বটা বর্তেছে আমারই কাঁধে।

প্রত্যেকে ঘুরল তার দিকে।

মাটির ভিতরে কী এক অব্যক্ত ব্যাথা কেঁদে মরছে।

প্রিয় বন্ধুবর্গ! বলল সে অবশেষে, আমি মনে করি বাকি জীবনের কটা দিন আমার কাটবে আজকের দেখা দৃশ্যের ব্যাখ্যা নিয়ে। আর এখনো, আপনারা যে কথা বলছেন ক্যামারলেনগের ব্যাপারে… এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়। সম্ভবত।

নিরব হয়ে গেল পুরো ঘর।

কীভাবে আপনি সে কথা বলেন? ক্যামারলেনগো পুরো ক্যাথলিক চার্চকে রক্ষা করেছেন। ঈশ্বর সরাসরি কথা বলেছেন তার সাথে। স্বয়ং যমদূতের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। আর কোন চিহ্ন দেখতে হবে আমাদের? তাছাড়াও, তার বক্তব্য, তার আধুনিকতা, তার তেজস্বীতা, দূরদৃষ্টি এবং নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব এবং তারুণ্য ক্যাথলিক চার্চকে এক অবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ক্যামারলেনগো আমাদের কাছে আসছেন এখনি। বলল মাটি, অপেক্ষা করা যাক। ব্যাটিংয়ের আগে তার কথা শোনা যাক। কোন না কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে তখনি।

ব্যাখ্যা?

আপনাদের গ্রেট ইলেক্টর হিসাবে কনক্লেভের নিয়ম রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। নিয়ম অনুযায়ী, আপনারা জানেন, একজন ক্যামারলেনগো কখনোই পোপ হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন না। তিনি কোন কার্ডিনাল নন। একজন প্রিস্ট… একজন চ্যাম্বারেলইন। এমনকি তার অপ্রতুল বয়সের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। যদি ব্যাটিংয়ে তাকে স্থান দেয়াও হয়, আমি আশা করব আপনারা এমন একজনকে ঠিক করবেন যিনি ভ্যাটিকান লর ভিতরে পড়েন।

কিন্তু আজ রাতে যা যা হয়েছে এখানে, তাতে অবশ্যই ভ্যাটিকানের আইন পাল্টে রাখা যায় কিছুক্ষণের জন্য! বলল নাছোড়বান্দা আরেক কার্ডিনাল।

তাই কি? ঈশ্বর কি চান আমরা ভ্যাটিকানের নিয়ম ভাঙি?

আপনি কি দেখেননি যা দেখলাম আমরা সবাই? কী করে আপনি সেই ক্ষমতার উপরে কথা বলছেন?

আমি ঈশ্বরের ক্ষমতার ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তুলছি না। ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই আমরা এখনো বেঁচে আছি। তাঁর ইচ্ছাতেই এখনো কনক্লেভ নষ্ট হয়ে যায়নি।

 

১২৯.

সিস্টিন চ্যাপেলের হলওয়েতে বসে থেকে অবাক হয়ে তাকাল ভিক্টোরিয়া ভেট্রা। সারা গায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা, মেডিক্যাল রোবে আবৃত যে লোকটা আসছে সে কি আরেক আত্মা?

উঠে দাঁড়াল সে, অবিশ্বাস ভরা কন্ঠে বলল, র… বার্ট!

কথা বলল না লোকটা কোন।

জাপ্টে ধরল ভিট্টোরিয়াকে। সমস্ত শক্তি দিয়ে। মিশিয়ে ফেলতে চাইল তার সাথে। তারপর, খুঁজে পেল তার ঠোঁট।

ওহ্ গড! ওহ্… থ্যাঙ্ক, গড!

আবার চুমু খেল ল্যাঙডন তাকে।

সরে যাবার চেষ্টা করল ভিট্টোরিয়া। কিন্তু পারল না। থাকল ল্যাঙডনের হাতের ভিতরেই। যেন কত বছর ধরে পরস্পরকে তারা চেনে।

 

এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা! বেছে নেয়া জন ছাড়া কে এমন বিস্ফোরণের মুখে বেঁচে আসতে পারে? বলছে কেউ একজন।

আমি। বলল ল্যাঙডন।

সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল মাটি। মিস্টার… ল্যাঙডন?

কোন বাক্যব্যয় না করে এগিয়ে গেল সে সিস্টিন চ্যাপেলের সামনের দিকে। সাথে সাথে এল দুজন গার্ড। একটা কার্টে করে নিয়ে আসছে এক টিভি সেট।

তারা সেটটায় কারেন্ট দিল। তারপর ল্যাঙডনের ইশারায় বেরিয়ে গেল বাইরে।

এখন এখানে শুধু ল্যাঙডন, ভিট্টোরিয়া আর কার্ডিনালরা। টেলিভিশনে সনি রুবির আউটপুট দিল সাথে সাথে। চাপ দিল প্লে।

জ্যান্ত হয়ে উঠল টেলিভিশন।

দেখা গেল পোপর অফিস। সেখানে পিছন দিয়ে ক্যামারলেনগো বসে আছে আগুনের সামনে। উঠছে, কথা বলছে কারো সাথে।

বোঝাই যায় ছবিগুলো ভোলা হয়েছে হিডেন ক্যামেরায়।

বলল ল্যাঙডন, এ ছবি ঘণ্টাখানেক আগের। সার্নের ডিরেক্টর ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার তুলেছিল নিহত হবার আগে।

আর রিওয়াইন্ড করল না সে। যা দেখতে হবে তা সামনেই আছে। আসছে। লিওনার্দো ভেট্রা ডায়েরি রাখত? বলছে ক্যামারলেনগো, মনে হয় খবরটা সার্নের জন্য ভাল। এন্টিম্যাটার রাখার প্রসেস সম্পর্কে যদি সেখানে কিছু লেখা থাকে, তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু জানানো থাকে–

নেই, বলল কোহলার, আপনি জেনে খুশি হবেন যে সেই প্রক্রিয়াগুলো চলে গেছে লিওনার্দো ভেট্রার সাথে সাথে। অবশ্য তার ডাইরিগুলোয় অন্য কোন ব্যাপারে কথা আছে। আপনার ব্যাপারে।

যেন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে ক্যামারলেনগো, বুঝলাম না।

সেখানে লেখা আছে, গত মাসে লিওনার্দো একটা মিটিং করেছিল। গত মাসে। আপনার সাথে।

ইতস্তত করল ক্যামারলেনগে। তাকাল দরজার দিকে, রোচারের উচিৎ হয়নি একা আপনাকে এখানে পাঠাননা। আমার সাথে কথা না বলে কী করে আপনি এখানে এলেন?

রোচার সত্যিটা জানে। আমি আগেই কল করেছি। বলেছি তাকে, কী করেছেন। আপনি।

কী করেছি আমি! যে কাহিনীই আপনি তাকে বলে থাকুন না কেন, রোচার একজন সুইস গার্ড এবং এই গির্জার উপর তার বিশ্বাসের অন্ত নেই। একজন পাগলাটে বিজ্ঞানীর চেয়ে তার ক্যামারলেনগোর উপর বিশ্বাস আছে তার।

আসলে, সে এত বেশি বিশ্বস্ত যে বিশ্বাস করছিল না। সে এত বেশি বিশ্বাসী যে তার অনুগত একজন গার্ড ষড়যন্ত্র করছে জেনেও সে কথাটা বিশ্বাস করেনি। সারাদিন ধরে সে অন্য একটা ব্যাখ্যার খোজ করছিল।

তারপর আপনি তাকে দিলেন?

খবরটা। আঘাত হয়ে এসেছিল তার কাছে।

রোচার আপনার কথা বিশ্বাস করলে আমাকে এ্যারেস্ট করত।

না। কাজটা করতে দিতাম না আমি। আমি তাকে এ মিটিং পর্যন্ত চুপ থাকতে বলেছি।

একটা বিচিত্র হাসি দিল ক্যামারলেনগো, আপনি গির্জাকে এমন এক তথ্য দিয়ে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছেন যা কেউ বিশ্বাস করবে না!

আমার ব্ল্যাকমেইল করার কোন দরকার নেই। আমি শুধু আপনার কষ্ঠ থেকে সত্যিটা জানতে চাই। লিওনার্দো ট্রো আমার বন্ধু ছিল।

কিছু বলল না ক্যামারলেনগো। সোজা তাকিয়ে থাকল কোহলারের দিকে।

এটা বোঝার চেষ্টা করুন, বলল কোহলার, প্রায় এক মাস আগে, লিওনার্দো ট্রো আপনার সাথে যোগাযোগ করে, পোপের সাথে একটা জরুরি মিটিংয়ে বসতে হবে তার। আপনি জানতেন, পোপ পছন্দ করতেন লিওনার্দোকে। তার কাজের জন্য। বলেছিল লিওনার্দো। জরুরি প্রয়োজন।

আগুনের দিকে ফিরল ক্যামারলেনগো। বলল না কিছুই।

অত্যন্ত গোপনে ভ্যাটিকানে এসেছিল লিওনার্দো। এখানে এসে তার মেয়ের বিশ্বাস নষ্ট করেছিল। ব্যাপারটা তাকে অনেক যন্ত্রণা দেয়। কিন্তু কোন উপায় ছিল না। তার আবিষ্কার তাকে গভীর দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিল। ভ্যাটিকানে এসেছিল সে পোপের কাছ থেকে পরামর্শ পাবার জন্য। একটা গোপন মিটিং, বলেছিল সে আপনাকে। এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ব্যাপারে। প্রমাণ করেছিল সে, জেনেসিস করা সম্ভব। আরে সেই অসীম ক্ষমতার উৎস- যাকে ট্রো বলে ঈশ্বর- তৈরি করতে পারে সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত।

নিরবতা।

সব দেখে শুনে পোপ স্থবির হয়ে যান, বলছে কোহলার, তিনি চাইলেন লিওনার্দো প্রকাশ্যে আসুক। হিজ হেলিনেস মনে করলেন, এই আবিষ্কার বিজ্ঞান আর ধর্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে। পোপের সারা জীবনের স্বপ্নগুলোর একটা। তারপর লিওনার্দো আপনাকে জানাল সব কথা, নিচে নেমে। কেন সে চার্চের গাইডেন্স চায়। আপনাদের বাইবেল যেমন বলে, সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপরীত। আলো এবং আঁধার। ভেট্রা জানাল যে সে বস্তু তৈরি করতে পারে। পারে

প্রতিবস্তু বানাতে। আমি কি বলে যাব?

নিরব হয়ে আছে ক্যামারলেনগো। সে কয়লার দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ।

লিওনার্দো ভেট্রী এখানে আসার পর, বলছে কোহলার, আপনি সার্নে গিয়ে তার কাজ দেখে এসেছিলেন। লিওনার্দোর ডায়েরিতে লেখা আছে, ব্যক্তিগতভাবে আপনি সেখানে, তার ল্যাবে, একটা ভ্রমণ শেষ করেছিলেন।

চোখ তুলে তাকাল ক্যামারলেনগো।

বলে গেল কোহলার, মিডিয়ার মনোযোগ না কেড়ে পোপ কোন ভ্রমণ করতে পারতেন না। তাই তিনি আপনাকেই পাঠালেন। লিওনার্দো আপনাকে তার ল্যাবে একটা গোপনীয় অভিযানে নিয়ে যায়। সে একটা এন্টিম্যাটার এ্যানিহিলেশন দেখায় বিগ ব্যাঙ- সৃষ্টির ক্ষমতা। সে আপনাকে আরো কিছু দেখায়। দেখায় এক বিশাল পরিমানের স্পেসিমেন। সে যে প্রতিবস্তু বানাতে জানে তার নিদর্শনস্বরূপ। আপনি। বিস্মিত হয়ে পড়েন। ফিরে আসেন ভ্যাটিকানে। পোপকে জানানোর জন্য।

ছোট্ট করে শ্বাস ফেলল ক্যামারলেনগো, আর তাতে আপনার ঘাবড়ানোর কী হল? যে আজ রাতে আমি সারা দুনিয়ার সামনে বলে দিই লিওনার্দোর কথা এবং বলে দিই যে এন্টিম্যাটার সম্পর্কে কিছুই জানি না?

না! ব্যাপারটা আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে যে লিওনার্দো ট্রেী প্রায় প্রমাণ করে ফেলেছে যে আপনাতের ঈশ্বর বলে কেউ আসলেই আছে। আর আপনি খুন করে বসেন তাকে!

ঘুরল এবার ক্যামারলেনগগা। কোন শব্দ নেই। শুধু আগুনের পোড়া আওয়াজ।

হঠাৎ একটা ঝাঁকি খেল কোহলারের ক্যামেরা। ঝাঁকি খেল সারা ফ্রেম। তারপর  একটা হাত বেরিয়ে এল বাইরে। সেখানে পিস্তল ধরা।

আপনার সমস্ত পাপের স্বীকারোক্তি দিন, ফাদার!

অবাক হয়ে তাকাল ক্যামারলেনগো, আপনি কখনো এখান থেকে জীবিত বের , হতে পারবেন না।

মরলে আমার জন্য ভাল হয়। আমি সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাই যেটা আমাকে একেবারে বাল্যকাল থেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আপনাদের বিশ্বাসের অভিশাপ। এবার দু হাতে বাড়িয়ে ধরল সে গানটাকে, একটা সুযোগ দিচ্ছি আপনাকে। পাপের স্বীকারোক্তি করুন… অথবা মারা পড়ন এই মুহূর্তে।

দরজার দিকে তাকাল ক্যামারলেনগো।

বাইরে আছে রোচার। সেও আপনাকে শেষ করে দিতে প্রস্তুত।

রোচার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রতিরক্ষক–

রোচার আমাকে এখানে ঢুকতে দিয়েছে, সশস্ত্র অবস্থায়। তোমার মিথ্যাগুলো ঠিক ঠিক ধরে ফেলেছে সে। তোমার মাত্র একটা অপশন আছে। সত্যি কথা বল আমার সামনে। তোমার নিচের ঠোঁটে শুনতে চাই আমি কথাগুলো।

অস্বস্তিতে ভুগছে ক্যামারলেনগো।

গান কক করল কোহলার সাথে সাথে, তোমার কি কোন দ্বিধা আছে যে খুন করে ফেলব এখনি?

কোন ব্যাপার না তোমার মত লোকের কাছে বলায় বা না বলায়। তোমার মত মানুষ বুঝতে পারবে না কখনো।

চেষ্টা কর।

উঠে বসল ক্যামারলেনগো। আগুনে একটা স্লেট আছে, সেদিকে ফিরল। তারপর বলতে লাগল, সময়ের শুরু থেকে এই চার্চ ঈশ্বরের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করেছে। কখনো কথা দিয়ে, কখনো তরবারি দিয়ে। আর সব সময় টিকে গেছি আমরা।

কথা টেনে নিচ্ছে ক্যামারলেনগো।

কিন্তু আগের দিনের ডেমনরা ছিল আগুনের। তারা এমন শত্রু যাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারি আমরা। কিন্তু স্বয়ং শয়তান ভিন্নরূপী। যত সময় যায়, ততই সে রূপ পাল্টায়। হঠাৎ তেতে উঠল ক্যামারলেনগো, আমাকে বলুন, মিস্টার কোহলার, চার্চ কী করে ব্যাখ্যা করবেন আমাদের মনের কোন ব্যাপারটা ঠিক আর কোনটা ভুল? আমরা কী করে মেনে নেই সে ভিত্তিটা যার উপর দাঁড়িয়ে আছি সবাই?

যতবার চার্চ তার কণ্ঠ উঁচু করে ততবার আপনারা পাল্টা চিৎকার করেন। আমাদের অবহেলা করতেন। বলতেন পশ্চাতমুখী। আর এভাবেই আপনাদের ভিতরের অকল্যাণটা উঠে আসে। আত্মকেন্দ্রীক ব্যাপারগুলো আরো বেড়ে যায়। ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সারের মত।

আজ আর মানুষ ঐশ্বরিক মিরাকলে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে বৈজ্ঞানিক মিরাকলে। বিজ্ঞান এসেছে আমাদের খাদ্যাভাব, দারিদ্র আর রোগ-শোককে মুছিয়ে দেয়ার জন্য। বিজ্ঞান- অশেষ মিরাকলের নতুন ঈশ্বর মানুষকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমি শয়তানের কাজ দেখেছি। দেখেছি আরো অনেক কিছু…

কীসব আজেবাজে কথা বকছ! ভেট্টার আবিষ্কার তোমাদের ঈশ্বরের অস্তিত্বই প্রমাণ করেছে। সে তোমাদের পক্ষের লোক।

আমাদের পক্ষের? বিজ্ঞান আর ধর্ম কখনোই এক দল হয়ে যেতে পারবে না! আমরা একই ঈশ্বরকে খুজি না, আপনি আর আমি, খুজি না! আপনার ঈশ্বর কে? প্রোটন, ভর আর পার্টিকেলের চার্জ? কী করে আপনার ঈশ্বর উৎসাহ দেয়? কী করে আপনার স্রষ্টা মানুষের মনের ভিতরে ঢুকে যায় এবং প্রমাণ করে যে সেই সর্বশক্তিমান?

ভেট্রা ছিল পথভ্রষ্ট! তার কাজ রিলিজিয়াস ছিল না, ছিল স্যাকরিলিজিয়াস! মানুষ কিছুতেই একটা টেস্ট টিউবে গডের সৃষ্টি তুলে আনতে পারে না। তারপর সে টেস্ট টিউব দুলিয়ে সবাইকে বলতে পারে না যে গড আছেন। তাহলে সেই টেস্ট টিউবের কর্তা আর ঈশ্বরের মধ্যে ফারাকটা কোথায়? এতে ঈশ্বরের মহিমা বাড়ে না, ছোট করে দেখানো হয় তাকে।

ক্যামারলেনগোর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে সবদিকে।

আর তাই তুমি খুন করে ফেললে লিওনার্দো ভেট্রাকে?

চার্চের খাতিরে! সমস্ত মানবজাতির খাতিরে। এই কাজের পাগলামি থামিয়ে দেয়ার জন্য। মানুষ সৃষ্টির ক্ষমতা তার করলে নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। একটা টেস্ট টিউবের ভিতর স্রষ্টা? একটা ফোঁটা যা পুরো মহানগরীকে বাষ্প করে দিতে পারে? তাকে থামানো প্রয়োজন ছিল!

থামল ক্যামারলেনগো। তাকাল হঠাৎ আগুনের দিকে। সে হয়ত তার অপশনগুলো মনে মনে ঝালিয়ে নিচ্ছে।

স্বীকার করে ফেলেছ। তোমার আর কোন গতি নেই।

বিষণ্ণভাবে হাসল ক্যামারলেনগো, দেখতে পাচ্ছেন না আপনি আপনার পাপ থেকে স্বীকারোক্তি করে নেয়াই আপনার শেষ পরিণতির জন্য ভাল হয়। যখন আপনার মত লোকের পাশে ঈশ্বর থাকেন, তখন অনেক অপশন থাকে হাতে। কিন্তু এখন তিনি আপনার সমর্থনে নেই।

হঠাৎ ঝাঁকি খেল ক্যামারলেনগগা। তারপর খুলে ফেলল তার বুকের কাপড়। সরিয়ে ফেলল।

থাম! বলল কোহলার, কী করছ!

যখন ক্যামারলেনগো ফিরল, তার হাতে ছিল একটা লাল গনগনে সিল। দ্য ইলুমিনেটি ডায়মন্ড। হঠাৎ লোকটার চোখের দৃষ্টি পাগলের মত হয়ে গেল। আমি কাজটা নিজে নিজে করার কথা ভাবছিলাম! বলল সে, কিন্তু আপনি এসে গেলেন, একটা পথ বেরিয়ে গেল আমার জন্য।

তাকাল সে একবার পাগলের দৃষ্টিতে। তারপর চোখ বন্ধ করল, ফিসফিস করে বলল, মাতা মেরি! আশীর্বাদ কর মা… তোমার সন্তানকে ধরে রাখ!

তারপর, আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ডায়মন্ড সিলটা বসিয়ে দিল নিজের বুকে। চিৎকার করে উঠল।

আর কোহলার, অবাক নিজের অবশ পায়ের উপর ভর করেই উঠে দাঁড়াল। কাঁপছে হাতের পিস্তলটা এলোমেলোভাবে।

আরো আরো জোরে চিৎকার করে উঠল ক্যামারলেনগো। আঘাতে আঘাতে হতবিহ্বল হয়ে। তারপর সে সিলটাকে ছুড়ে ফেলে দিল কোহলারের পায়ের দিকে। পড়ে গেল মেঝেতে, যন্ত্রণায় কাত্রাতে কাত্রাতে।

এরপর কী হল তা বোঝা যায় সহজেই।

গুলি ছোঁড়া হল কোহলারের বুক লক্ষ্য করে। পড়ে গেল সে হুইলচেয়ারের উপর।

না! বাধা দেয়ার চেষ্টা করল রোচার।

এখনো মেঝেতে পড়ে আছে ক্যামারলেনগো, গোঙ্গাচ্ছে, আঙুল তুলল সে রোচারের দিকে, ইলুমিনেটাস!

ইউ বাস্টার্ড! এগিয়ে গেল রোচার রোষে ক্যামারলেনগোর দিকে, ইউ।

তিনটা বুলেট দিয়ে চাট্রান্ড তাকে ফেলে দিল। সাথে সাথে মারা গেল রোচার।

এরপর কী ঘটেছে সবাই মোটামুটি জানে। সুইস গার্ডের জবানিতে এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সেটা বারবার প্রচার করা হয়েছে।

সবশেষে, হাত বাড়িয়ে দিল কোহলার, ল্যাঙডনের দিকে, দা… দাও এটা মিডিয়ার হাতে!

এরপরই, কালো হয়ে গেল স্ক্রিন।

 

১৩০.

একটু একটু করে সচেতন হয়ে আসছে ক্যামারলেনগগা। তাকে সুইস গার্ড এগিয়ে আনছে সিস্টিন চ্যাপেলের রাজকীয় স্টেয়ারকেসের দিকে। গান ভেসে আসছে সেন্ট পিটার্স স্কয়ার থেকে।

গ্রাজি ডিও।

শক্তির জন্য সে প্রার্থনা করেছে। ঈশ্বর তাকে শক্তি দিয়েছেন। তার দুর্বল মুহূর্তে কথা বলেছেন তিনি।

তোমার অভিযানটা পবিত্র, বলেছেন ঈশ্বর, আমি তোমাকে শক্তি দিব।

এমনকি ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি থাকার পরও একটু একটু দুর্বল লাগছে তার।

যদি তোমাকে না হয়ে থাকে, ঈশ্বর চ্যালেঞ্জ করেছেন কাকে?

যদি এখন না হয়, তাহলে কখন?

যদি এ পথে না হয়, তাহলে কীভাবে?

জিসাস, ঈশ্বর মনে করিয়ে দেন তাকে রক্ষা করেছেন সবাইকে… তাদের পথের জন্যই রক্ষা করেছেন। দুটা যুক্তি দিয়ে যিশু খুলে দিয়েছেন পথ। আতঙ্ক এবং আশা। তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন সমস্ত বিশ্ব চরাচরকে।

কিন্তু তা সহস্র বছর আগের কথা। মানুষ মিরাকলের কথা ভুলে গেছে। তারা হয়ে উঠেছে অবিশ্বাসী।

অন্তরাত্মার মিরাকল কি হারিয়ে যাবে?

সব সময় সে ঈশ্বরের কাছে আবেদন জানিয়েছে একটা সুযোগের জন্য একটা মাত্র সুযোগ। আর সে জানিয়ে দিবে সবাইকে, বিশ্বাস করতে হয়। কিন্তু নিরব ছিলেন তিনি। তারপর সুযোগ এল। সে রাতের সুযোগ।

সে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দেখেছিল, যে লোকটা সে সব সময় সঙ্গ দিয়ে এসেছে। পবিত্র ভেবে এসেছে, পোপত্বের সময়টাতেও আগলে রেখেছে, সে লোক এত বড় ভন্ড!

আপনি ভঙ্গ করলেন! চিৎকার করেছিল সে, আর সবাইকে বাদ দিয়ে আপনি তুবড়ে দিলেন পবিত্রতা!

পোপ নিজের কাজের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কিছুই শুনতে চায়নি ক্যামারলেনগো। দৌড়ে চলে এসেছিল সে, বমি করতে করতে, নিজের রক্তে নেয়ে উঠতে উঠতে, নিজেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে দেখতে।

নেমে এসেছিল সে সেন্ট পিটারের সমাধিতে।

মাদার মেরি, কী করব আমি?

ন্যাক্রোপোলিসে বসে বসে কান্নাকাটি করতে করতে ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করে এ দুনিয়া থেকে তুলে নেয়ার কথা বলার সময় কথা বলে ওঠেন তিনি।

পরমপিতা!

তার মাথায় কথাগুলো বজ্রপাত ঘটায়, তোমার ঈশ্বরের সেবা করতে তুমি কি চাও না?

চাই! কেঁদে উঠেছিল ক্যামারলেনগো।

তোমার ঈশ্বরের জন্য কি জীবন দিয়ে দিতে পারবে?

পারব। এখুনি তুলে নিন আমাকে।

তোমার চার্চের জন্য কি মরতে পারবে?

পারব। দয়া করে আমাকে সে শক্তি দিন!

কিন্তু… তুমি কি মানবজাতির জন্য প্রাণপাত করতে পারবে?

থমকে গেল ক্যামারলেনগো। পারবে। সে পারবে।

পারব। আমি মানুষের জন্য প্রাণত্যাগ করতে পারব। আপনার পুত্রের মত।

আরো কয়েক ঘণ্টা পর, সেখানে, শুয়ে থেকে থেকে তার মায়ের দেখা পেল ক্যামারলেনগী।

তোমাকে নিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা আছে…

আরো উন্মাদনার মধ্যে ডুবে যায় ক্যামারলেনগো। তারপর আবার সাড়া দিয়ে ওঠেন ঈশ্বর। কথা বলেন না, আওয়াজ করেন না। কিন্তু সে বুঝতে পারে।

তাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আন।

আমি যদি না করি… তাহলে কে?

এখন যদি না করি… কখন?

গার্ডর চ্যাপেলের দরজা খোলার সময় আবার কথা বলে ওঠে তার ভিতর। ঈশ্বর তাকে বেছে নিয়েছেন। সেই বাল্যকাল থেকেই। অনাদিকাল থেকে।

তার ইচ্ছা পূর্ণ হবে।

একটা নতুন রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে তার ভিতরে ভিতরে। সাদা রোবে আবৃত করেছে তাকে সুইস গার্ড। তার আগে গোসল করিয়েছে, তার আগে পরিষ্কার করে দিয়েছে ক্ষতস্থান, জড়িয়ে দিয়েছে কাপড়ে। ব্যথা কমানোর জন্য মরফিনের একটা ইঞ্জেকশনও দিয়েছে সেইসাথে। তার আশা ছিল তারা কোন পেইন কিলার দিবে না।

যিশু উপরে চলে যাবার আগে তিনদিন যন্ত্রণাকাতর হয়েছিলেন।

সে ঠিকই টের পাচ্ছে, ড্রাগের প্রভাবে তার জ্ঞান লোপ পাচ্ছে একটু একটু করে। তন্দ্রা চলে আসছে।

যখন সে চ্যাপেলে ঢুকল, কার্ডিনালরা যে তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তা দেখে মোটেও অবাক হল না।

তারা আমার প্রতি বিস্ময়াভিভূত নয়। তারা ঈশ্বরের প্রতি বিস্ময়াভিভূত। ঈশ্বর আমার ভিতর দিয়ে কাজ করেছেন।

যত সে এগিয়ে যাচ্ছিল, ততই টের পাচ্ছিল, আরো কিছু আছে তাদের চোখে।

কী?

তাদের চোখে তাকায় ক্যামারলেনগো, কিন্তু কোন আবেগ দেখতে পায় না।

তখনি ক্যামারলেনগো তাকাল অল্টারের দিকে। দেখতে পেল রবার্ট ল্যাংডনকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *