কুরায়শদের বয়কট
রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সাহায্য করার প্রশ্নে বনু হাশিম ও বনু আবদিল মুত্তালিব গোত্রের আহবানের প্রেক্ষিতে কুরায়শী অন্যান্য গোত্রেরা বিরোধিতা করে এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তাদের নিকট হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ওই গোত্রদ্বয়ের সাথে বিয়ে-শাদী ও বেচা-কেনার সম্পর্ক
ছিন্ন রাখার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে এবং দীর্ঘদিন যাবত ওদেরকে আবু তালিব গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ করে রাখে। এ বিষয়ে তাদের নিবর্তনমূলক ও অন্যায় চুক্তিপত্র তৈরী
এবং এ সকল প্রেক্ষাপটে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াত ও সত্যতার পক্ষে প্রকাশিত দলীলপ্ৰমাণাদি এ পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে।
যুহরী থেকে মূসা ইবন উকবা বর্ণনা করেছেন যে, মুশরিকগণ ইতোপূর্বে মুসলমানদের প্রতি যত অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছিল। পরবতীতে তারা তার চেয়েও কঠোরতর নির্যাতন চালাতে শুরু করে। যার ফলে মুসলমানদের জীবনযাত্ৰা দুর্বিষহ হয়ে উঠে। তাঁরা নানা প্রকারের কঠোর বিপদ-আপদের সম্মুখীন হন। প্রকাশ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে হত্যার ষড়যন্ত্রে ঐকমত্যে পৌছে। ওদের কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করে আবু তালিব নিজে বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের সকল লোককে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হতে বললেন এবং হত্যা প্রয়াসীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করার নির্দেশ দিলেন। বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের মুসলিম-কাফির নির্বিশেষে সকলে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পাশে এসে দাঁড়ান। কেউ আসেন গোষ্ঠীগত সম্মান রক্ষার তাড়নায় আর কেউ আসেন ঈমানী চেতনায়। কুরায়শের লোকেরা দেখল যে, স্বগোত্রীয় লোকেরা তাঁর পক্ষপাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং ঐ প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তখন মুশরিকরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, তাঁকে হত্যা করার জন্যে ওঁরা যতক্ষণ তাদের হাতে সমর্পণ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ওদের সাথে উঠাবসা করবে না ক্ৰয়-বিক্রয় করবে না এবং ওদের ঘর-বাড়ীতে প্ৰবেশ করবে না। এমর্মে তারা একটা চুক্তিনামা ও অঙ্গীকার-পত্ৰ সম্পাদন করে নিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সমর্পণ না করা পর্যন্ত তারা বনু হাশিম গোত্রের সাথে কোন আপোস-মীমাংসা করবে না এবং কোন প্রকারের সহানুভূতি-সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে না। এ প্রেক্ষিতে বনু হাশিম গোত্রের লোকজন আবু তালিব গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ থাকেন। এ সময়ে তাঁরা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে পতিত হন। কুরায়শরা এদের হাট-বাজার বন্ধ করে দেয়। তাদেরকে তারা কোন ভোগ্যপণ্য বিক্রির জন্যে মক্কায় আসতে দিত না। আবার তাদের কিছু ক্ৰয়ের প্রয়োজন হলে কুরায়শী লোকেরা, এগিয়ে গিয়ে তা ক্রয় করে নিত যাতে অন্তরীণ লোকদের নিকট ওই পণ্যদ্রব্য পেঁৗছতে না পারে। এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নাগালের মধ্যে পাওয়া এবং তাঁকে হত্যা করা। চাচা আবু তালিব তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে রক্ষা করার জন্যে নানা কৌশল অবলম্বন করতেন। রাতের বেলা অন্তরীণ লোকেরা যখন ঘুমোতে যেত, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে তাঁর বিছানায় শোয়াতেন। উদ্দেশ্য হল কোন ষড়যন্ত্রকারী যদি সেখানে থাকে, তবে সে যেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে ওখানে দেখে। পরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আবু তালিব তার কোন পুত্ৰকে কিংবা ভাইকে কিংবা চাচাত ভাইকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিছানায় যেতে বলতেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে অন্য একটি বিছানায় নিয়ে আসতেন এবং তিনি সেখানে ঘুমােতেন। এ অবস্থায় তৃতীয় বছরের মাথায় বনু আবদ মানাফ, বনু কুসাই এবং বনু হাশিমের নারীদের গর্ভজাত কতক লোক এ অমানবিক আচরণের জন্যে নিজেদেরকে দোষারোপ করে। তারা উপলব্ধি করে যে, এর মাধ্যমে তারা আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্ন করেছে এবং মানবাধিকার লংঘন করেছে। সে রাতেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিনামা তারা ভঙ্গ করবে এবং ওই চুক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। এদিকে আল্লাহ তা’আলা তাদের চুক্তিপত্রের প্রতি উইপোকা পাঠালেন। চুক্তিপত্রের যে যে স্থানে চুক্তি বিষয়ক শব্দ ছিল সে সে স্থানগুলো পোকাতে খেয়ে ফেলে। বর্ণিত আছে যে, চুক্তিপত্রটি
কা’বা গৃহের ছাদের সাথে ঝুলানাে ছিল। আল্লাহ তা’আলার নামের স্থানগুলোও পোকায় খেয়ে ফেলে। ফলে শিরক, জুলুম-অত্যাচার এবং আত্মীয়তা ছিন্নকারী বিষয় সম্বলিত বিবরণগুলো অবশিষ্ট থাকে। চুক্তিনামার এ অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা প্রিয়নবী (সা)-কে অবহিত করেন। তিনি চাচা আবু তালিবকে এটা জানান। আবু তালিব বললেন, উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির কসম, সে নিশ্চয়ই আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেনি। বনু আবদিল মুত্তালিব গোত্রের কতক সঙ্গী-সাথী নিয়ে তিনি মাসজিদুল হারামে উপস্থিত হন। সেখানে কুরায়শগণ উপস্থিত ছিল। তাদেরকে এদিকে আসতে দেখে কুরায়শগণ মনে করেছিল যে, সুকঠিন দুঃখ-দুৰ্দশায় অতিষ্ঠা এরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে হস্তান্তর করার উদ্দেশ্যে গিরিসংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে। সেখানে উপস্থিত হয়ে আবু তালিব বললেন, তোমাদের এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে তা আমরা এখন তোমাদেরকে বলবো না। তোমরা যে চুক্তিনামা তৈরী করেছ। আগে সেটি নিয়ে আসা। তারপর তোমাদের আর আমাদের মাঝে কোন আপোস রফা হলেও হতে পারে। চুক্তিনামা উপস্থিত করার পূর্বে তারা সেটি দেখে ফেলে। কিনা এ আশংকায় তিনি এ কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তাদের হাতে সমর্পণ করা হবে এ ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধের্ব উঠে এবং নিশ্চিত হয়ে তারা চুক্তিনামাটি হাযির করে। সেটি সকলের সম্মুখে রাখা হয়। তারা বলল, এখন সে সময় এসেছে যে, তোমরা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে এবং এমন এক বিষয়ের প্রতি তোমরা ফিরে আসবে যা তোমাদের সম্প্রদায়কে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করবে। ওই একটি মাত্র ব্যক্তি আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তোমরা নিজেদের সম্প্রদায় ও গোত্ৰকে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করে দেয়ার জন্যে ওই বিপজনক লোকটিকে আস্কারা দিয়েছ।
আবু তালিব বললেন, আমি তোমাদের নিকট এসেছি তোমাদেরকে একটি ন্যায়ানুগ প্রস্তাব দেয়ার জন্যে। আমার ভাতিজা কখনো মিথ্যা বলে না। সে আমাকে জানিযেছে যে, তোমাদের নিকট যে চুক্তিনামা রয়েছে তার সাথে আল্লাহ তা’আলার কোন সম্পর্ক নেই। সেটিতে আল্লাহ তা’আলার যত নাম ছিল তার সবগুলো তিনি মিটিয়ে ফেলেছেন। তোমাদের অকৃতজ্ঞতা, আমাদের সাথে আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং আমাদের প্রতি তোমাদের জুলুম-নির্যাতনের বিষয়গুলো তাতে অবশিষ্ট রেখেছেন। সুতরাং ভাতিজা যা বলেছে ঘটনা যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা হুশিয়ার হও! আল্লাহর কসম, আমাদের শেষ ব্যক্তিটির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনাে তাকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করব না। আর সে যা বলেছে তা যদি অসত্য হয়, তবে আমরা নিশ্চয় তাকে তোমাদের হাতে তুলে দিব। এরপর তোমরা তাকে হত্যা করবে, নাকি জীবিত রাখবে সেটা তোমাদের ইচ্ছা। তারা বলল, ঠিক আছে, আপনার প্রস্তাবে আমরা রাষী। এরপর তারা চুক্তিনামা খুলল এবং সত্যবাদী সত্যায়িত রাসূল যেমন বলেছেন ঘটনা হুবহু তেমনি দেখতে পেল।
কুরায়শরা যখন দেখল যে, ঘটনা আবু তালিবের বর্ণনা মুতাবিকই ঘটেছে, তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম, এটি নিশ্চয়ই তোমাদের ওই লোকের জাদু। এ কথা বলে তারা ইতোপূর্বেকার সম্মতি প্রত্যাহার করে এবং পূর্বের চাইতেও জঘন্য কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর স্বগোত্রীয়দের প্রতি কঠোর জুলুম-নির্যাতনের অঙ্গীকারে অবিচল থাকে।
আবু তালিব গোত্রের লোকজন বললেন, আমরা নই। বরং আমাদের বিরোধী পক্ষই জাদুমন্ত্র ও মিথ্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতর পাত্ৰ। তোমরা কী মনে করা? আমরা তো দেখছি যে, আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের প্রশ্নে তোমরা যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছ। আমাদের কর্ম অপেক্ষা সেটিই জাদুমন্ত্রের বলে অভিহিত হওয়ার অধিকতর যোগ্য তোমাদের এ ঐকমত্যের বিষয় যদি জাদুর ভেল্কিবাজি না হতো, তা হলে তোমাদের চুক্তিনামা নষ্ট হত না। সেটিতো তোমাদেরই হাতে ছিল। ওই চুক্তিনামায় মহান আল্লাহর যত নাম ছিল তিনি তার সবগুলো মুছে দিয়েছেন। আর সীমালংঘন ও সত্যদ্রোহিতার কথাগুলো অবশিষ্ট রেখেছেন। এখন বল, আমরা জাদুকর, নাকি তোমরা?
এ প্রেক্ষিতে বনু আবদ মানাফ, বনু কুসাই, হাশিমী নারীদের গর্ভজাত কতক কুরায়শী পুরুষ যাদের মধ্যে ছিলেন আবুল বুখতারী, মুতঙ্গম ইবন আব্দী, যুহায়ার ইবন আবু উমাইয়া ইবন মুগীরা, যামআ ইবন আসওয়াদ, হিশাম, ইবন আমরা (চুক্তিনামাটি তার কাছে ছিল। তিনি বনু আমির ইবন লুওয়াই গোত্রের লোক ছিলেন) এবং বনু আমির গোত্রের অন্য কতক সন্ত্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোক বলে উঠলেন এ চুক্তিনামায় যা আছে তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক বা দায়-দায়িত্ব নেই।
তখন আবু জাহল (তার উপর আল্লাহর লা’নত বৰ্ষিত হোক) বলল, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। রাতের বেলা এ ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর চুক্তিনামা সম্পর্কে, যারা চুক্তিনামা প্ৰত্যাখ্যান ও সেটির সাথে সম্পর্কচূতির ঘোষণা দিলেন তাদের প্রশংসায় এবং আবিসিনিয়ার নাজাশীর প্রশংসা করে আবু তালিব একটি কবিতা রচনা ও আবৃত্তি করেন।
বায়হাকী (র) বলেন, আমার শায়খ আবু আবদুল্লাহ হাফিয এরূপই বর্ণনা করেছেন, মূসা ইবন উকবার বর্ণনার ন্যায়। অর্থাৎ ইবন লাহিয়া…… উরওয়া ইবন যুবােয়র সূত্রে। ইতোপূর্বে মূসা ইবন উকবার বর্ণনা উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আবিসিনিয়ায় হিজরতের ঘটনা ঘটেছিল রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নির্দেশে শিআবে আবু তালিব তথা আবু তালিবের গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ হওয়ার পর। s
আমি বলি, আবু তালিবের যে লামিয়া কাসীদার কথা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, সেটিও তিনি রচনা করেছিলেন তাদের গিরিসঙ্কটে অবস্থান নেয়ার পর। সুতরাং সেখানেই কবিতাটির উল্লেখ করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত ছিল, যা আমরা করে এসেছি। আল্লাহ্ তা’আলাই ভাল জানেন।
এরপর বায়হাকী (র) ইউনুস সূত্রে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর রিসালাতের বাণী প্রচার করেই যাচ্ছিলেন। বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিবের লোকজন তাঁর সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা তাঁকে ওদের হাতে সমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। মূলত কুরায়শ সম্প্রদায়ভুক্ত অন্যান্য গোত্রের ন্যায় বনু হাশিম এবং বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রও ধর্ম বিশ্বাসে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিরোধী ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের জ্ঞাতি ভাইকে লাঞ্ছিত করা ও অত্যাচারীদের হাতে সমর্পণ করা থেকে নিজেদেরকে বঁচিয়ে রেখেছিল।
বনু হাশিম এবং বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয়রা যখন ঐরুপ অবস্থান গ্রহণ করলেন এবং কুরায়শরাও বুঝে নিল যে, মুহাম্মাদ (সা)-কে হাতে পাওয়ার আর কোন উপায় নেই, তখন তারা বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের বিরুদ্ধে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্যে একমত হয়। তারা এ বিষয়ে একমত হয় যে, হাশিমী ও মুত্তালিবীদের কাউকে তারা বিয়ে করবে না এবং নিজেদের কাউকে ওদের নিকট বিয়ে দিবে না। তাদের নিকট কিছু বিক্রি করবে না এবং তাদের থেকে কিছু ক্রয় করবে না। এমর্মে তারা একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করে এবং সেটি কা’বাগৃহে বুলিয়ে রাখে। এরপর তারা মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা তাদেরকে বন্দী করে এবং নানা রকম নির্যাতন-উৎপীড়ন করতে থাকে। কঠিন থেকে কঠিনতর বিপদ নেমে আসে মুসলমানদের উপর এবং এটা তাদেরকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। এরপর মুহাম্মদ ইবন ইসহাক রাসূলুল্লাহ (সা)-সহ হাশিমী ও মুত্তালিবীদের আবু তালিব গিরিসঙ্কটে অবস্থান গ্রহণ এবং সেখানে যে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন তার দীর্ঘ বর্ণনা দেন। ওই বর্ণনায় আছে যে, খাদ্যের অভাবে ক্ষুধার্তা ও তৃষ্ণার্তা শিশুদের আহাজারী গিরিসঙ্কটের বাইর থেকেও শোনা যেত। অবশেষে সাধারণভাবে কুরায়শের লোকজন অন্তরীণ লোকদের ওপর পরিচালিত অত্যাচার-নির্যাতনকে ঘূণার চোখে দেখতে থাকে এবং নির্যাতনমূলক চুক্তিপত্রের প্রতি নিজেদের নারায়ী প্রকাশ করে।
বর্ণনাকারিগণ একথাও উল্লেখ করেন যে, আপনি দয়ায় মহান আল্লাহ ওই চুক্তিনামার প্রতি উইপোকা প্রেরণ করেন এবং চুক্তিনামায় আল্লাহর নাম উল্লিখিত সকল স্থান পোকাতে খেয়ে ফেলে। অবশিষ্ট থাকে শুধু জুলুম-নির্যাতন, আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং মিথ্যাচারগুলোর বিবরণ। এরপর মহান আল্লাহ এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে অবহিত করেন এবং তিনি চাচা আবু তালিবকে তা জানান। বর্ণনাকারিগণ এরপর মুসা ইবন উকবার বর্ণনার ন্যায় অবশিষ্ট ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করেন।
যিয়াদ সূত্রে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ইবন হিশাম বলেন, কুরায়শরা যখন দেখল যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ এমন এক স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে তারা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করেছেন, তাদের মধ্যে যারা নাজাশীর নিকট গিয়েছেন তিনি তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে হযরত উমর (রা) ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন, এখন উমর (রা) ও হামযা (রা) দু’জনেই রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও তাঁর সাহাবীদের সাথে রয়েছেন। বিভিন্ন গোত্রে উপগোত্ৰে-ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে কুরায়শগণ এক সমাবেশে মিলিত হয় এবং তারা বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের বিরুদ্ধে এমন একটি চুক্তিনামা সম্পাদনের বিষয়ে পরামর্শ করে যার বিষয়বস্তু এ হবে যে, তারা ওদের নিকট নিজেদের পুত্ৰকন্যা বিয়ে দিবে না, ওদের নিকট কিছু বিক্রি করবে না এবং ওদের থেকে কিছু ক্ৰয়ও করবে না। আলোচনা শেষে তারা এ বিষয়ে একমত হয় এবং একটি চুক্তিনামা তৈরী করে সকলে তা মেনে চলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্যে তারা সেটিকে কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখে। চুক্তিনামাটির লেখক ছিল মানসূর ইবন ইকরিমা (ইবন আমির ইবন হাশিম ইবন আবদ মানাফ ইবন আবদিন্দদার ইবন কুসাই)। ইবন হিশাম বলেন, কারো কারো মতে সেটি লিখেছিল নাযার ইবন হারিছ। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ওই লেখকের
জন্যে বদ-দুআ করেছিলেন। ফলে, তার হাতের কতক আঙ্গুল অবশ হয়ে যায়। ওয়াকিদী বলেন, চুক্তিনামাটি লিখেছিল তালহা ইবন আবু তালহা আবদামী।
আমি বলি, প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে মানসূর ইবন ইকরিমা-ই চুক্তিনামাটির লেখক ছিল। যেমনটি ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন। তাঁরই হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল। ওই হাত দ্বারা সে কোন কাজ করতে পারত না। এ প্রসংগে কুরায়শের লোকজন বলত, দেখ দেখ, ওই যে মানসূর ইবন ইকরিমা! ওয়াকিিন্দী বলেন, চুক্তিনামাটি কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলানাে ছিল।
ইবন ইসহাক বলেন, কুরায়শরা যখন এই চুক্তি সম্পাদন করে, তখন বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব গোত্রের লোকেরা আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হয় এবং তাঁর সাথে তারা সবাই আবু তালিব গিরিসঙ্কট গিয়ে সমবেত হয়। আবু লাহাব আবদুল উষযা ইবন আবদুল মুত্তালিব বনু হাশিম গোত্র ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সে কুরায়শদের সাথে মিলিত হয় এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।
হুসাইন ইবন আবদুল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন যে, আপনি সম্প্রদায়কে ত্যাগ করে কুরায়শদের শক্তি বৃদ্ধি করার পর আবু লাহাব হিন্দ বিনত উতবা ইবন রাবীআর সাথে সাক্ষাত করে। সে হিন্দকে বলে, হে উতবার কন্যা! আমি কি লাত ও উষযা প্রতিমাকে সাহায্য করতে পেরেছি? এবং যে ব্যক্তি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে, সেগুলোর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে আমি কি তাকে ত্যাগ করতে পেরেছি? হিনদ বলল, হ্যা, অবশ্যই, হে আবু উতবা! আল্লাহ। আপনার কল্যাণ করুন।
ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, আবু লাহাব যে সব কথাবার্তা বলত, তার একটি এই, “মুহাম্মাদ (সা) আমাকে বহু বিষয়ের ভয় প্রদর্শন করেছে। অথচ তার কিছুই আমি এখনও বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি না। সে মনে করে যে, ওগুলো মৃত্যুর পর পাওয়া যাবে। এরপর আমার হাতে আর কীইবা দেয়া হবে? একথা বলে সে তার দু’হাতে ফু দেয় এবং বলে “তোরা দু’হাত ধ্বংস হয়ে যাক, মুহাম্মদ (সা) যা বলছে তার কিছুই তো তোদের মধ্যে দেখছি না। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন–এ, ৩-৫–1 , …..। —ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক।১। ‘ /
ইবন ইসহাক বলেন, চুক্তিনামা সম্পাদনে কুরায়শকুল যখন ঐক্যবদ্ধ হল এবং যা করার তা করল, তখন আবু তালিব নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করলেন :
ألا أبلغا عنى على ذات بيننا – لؤيا وخصا من لؤى بنى كغيبআমাদের মাঝে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সে সম্পর্কে আমার পক্ষ থেকে লুওয়াই
গোত্রকে বিশেষ করে লুওয়াই গোত্রের খুস এবং বনু কাআবি উপগোত্রকে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও।
الم تغلموا آنا وجدانا محمدا–نبیا کم وسلی خط فی اول الگثب
১. সূরা লাহাব : আয়াত ১ }
তোমরা কি জানো না যে, আমরা মুহাম্মাদ (সা)-কে নবীরূপে পেয়েছি। যেমন নবী ছিলেন মূসা (আ)। প্রাচীন কিতাবসমূহে মুহাম্মদ (সা)-এর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে।
وأن عليه فى العباد محبة – والأخير ممن خصة اللّه بالحبতার প্রতি আল্লাহর বান্দাগণের ভালবাসা রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা যাকে ভালবাসা দিয়ে * বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেন, তার চেয়ে উত্তম অন্য কেউ হয় না ১।
وأن الذى الصفنسوا من كتابكُمْ – لَكُمْ كائنا نحسنا كراغية آر سقبতোমাদের কিতাবের মধ্যে তোমরা বিপদাপদ সম্পর্কিত যে সকল বিবরণ পেয়েছ।
তোমাদের দুর্ভোগ স্বরূপ হযরত সালিহ (আ.)-এর উন্ট্রীর চীৎকারের ন্যায় সেগুলো তোমাদের উপর আপতিত হবেই।
الذئب – তোমরা সচেতন হও সতর্ক হও, কবর খোড়ার আগেই এবং সজাগ হও সে সময় আসার আগে যখন নির্দোষ ব্যক্তি দোষী ব্যক্তির ন্যায় বিপন্ন হয়ে যাবে।
ولا تتبعوا أمر الوشاة وتقطعوا – أواصرئا بعد المودّة والقرب – তোমরা মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না এবং বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের পর আমাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করো না।
وتستجلبوا حربا عوانا وربما – أمر على من ذاقة حلب الحرب – কঠিন যুদ্ধ-বিগ্ৰহ তোমরা টেনে এনো না। অনেক সময় স্বাদ গ্রহণকারীর জন্যে যুদ্ধের দুধ ভীষণ তিক্ত হয়।
فلنسنا ورب البيت نسلم أحمدا – لعزاء من عض الزمان ولا كربবায়তুল্লাহ্ শরীফের মালিকের কসম, আমরা আহমদ (সা)-কে কখনো হস্তান্তর করব না কোন কুকুরের হাতে এবং না কোন দুঃখ-দুর্দশার মুখে।
ولما تبين منا ومنكم سوالف – وأيّد أترت بالقساسية الشهب – আমরা আহমদ (সা)-কে তোমাদের হাতে সমর্পণ করব না যতক্ষণ না আমাদের আর
তোমাদের মাঝে যুদ্ধ বিজেতা অশ্বদল এবং যুদ্ধে পারদশী হস্তগুলোর ফায়সালা হয়। যে হস্ত কাসাসী তরবারি দ্বারা দুর্ধর্ষ যোদ্ধাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়।
১. সুহায়লী বলেন : ১, ২, ১, ব্যাকরণগত দিক থেকে এটি একটি জটিল বাক্যাংশ।
ফায়সালা হবে একটি সংকীর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে তুমি দেখতে পাবে তীর ও বল্লমের ভগ্নাংশগুলো এবং দেখতে পাবে কালো কালো বড় বড় শকুন, যেন সেগুলো একত্রিত হয়েছে। পানির ঘাটে।
كأن ضحال الخيل فى حجراته – ومغمعة الابطال معركة الحرب – আস্তাবল ও অশ্বশালায় অশ্বদলের উত্তেজনাকর পায়চারি এবং সাহসী বীর যোদ্ধাদের সদম্ভ হাঁকডাক যেন নিজেই একটি যুদ্ধক্ষেত্ৰ।
آليس أبونا هاشم شاً آزره – وأوصى بنيه بالطعان وبا الضربআমাদের পিতা হাশিম কি যুদ্ধ করার জন্যে লুঙ্গি গুটিয়ে কোমর বাঁধেননি? এবং তিনি
কি তাঁর বংশধরদেরকে বল্লম নিক্ষেপ ও তরবারির পরিচালনায় পারদশী হওয়ার উপদেশ দিয়ে যাননি?
ولسنا نمل الحرب حتى تُملّنا – ولا نشتكى ما قد ينوب من النكبযুদ্ধ-বিগ্রহে আমরা ক্লান্ত হই না যতক্ষণ না যুদ্ধ নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে যে
সকল কঠিন ও বড় বড় বিপদাপদ আমাদের উপর আপতিত হয় তাতে আমরা কোন অভিযোগ করি না। আমরা তাতে ক্লান্ত হই না।
ولكنا اهل الحفائظ والثهى – اذا طار أرواح الكمأة من الرعب – আমরা কিন্তু তখনও নিরাপত্তারক্ষী ও সুবিবেচক থাকি, যখন প্রচণ্ড ভয়ে অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের প্রাণ উড়ে যায়।
ইবন ইসহাক বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সঙ্গীগণ দুই বছর বা তিন বছর সেখানে অন্তরীণ থাকলেন। ভীষণ দুঃখ-কষ্টে তাদের দিন কাটে। কুরায়শ বংশের যারা আত্মীয়-বৎসল ছিল গোপনে তাদের পাঠানো সামান্যদ্রব্য সামগ্ৰী ব্যতীত অন্য কিছুই তাদের নিকট পৌছাতো না।
কথিত আছে যে, একদিন হাকীম ইবন হিযাম ইবন খুওয়ায়ালিদ ইবন আসাদের সাথে আবু জাহল ইবন হিশামের সাক্ষাত হয়। হাকীমের সাথে একজন ক্রীতদাস ছিল। সে গম বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তার ফুফু খাদীজা বিনত খুওয়ায়ালিদ (রা)-এর নিকট তা” পৌছিয়ে দেয়া। খাদীজা (রা) তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে গিরিসঙ্কটে অন্তরীণ ছিলেন। আবু জাহল তার পিছু নিল। সে বলল, তুমি কি বনু হাশিমের নিকট খাদ্য নিয়ে যােচ্ছ? শাসিয়ে দিয়ে সে আরো বলল, আল্লাহর কসম, তুমি খাদ্য নিয়ে ওদের নিকট যেতে পারবে না। যদি যাও, তবে আমি তোমাকে মক্কায় অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে ছাড়ব। তখন সেখানে উপস্থিত হয় আবুল বুখতারী ইবন হিশাম, ইবন হারিছ ইবন আসাদ; সে বলল, তোমাদের দু’জনের মধ্যে কি ঘটনা ঘটেছে? আবু জাহল অভিযোগ করে বলল, হাকীম ইবন হিযাম বনু হাশিমের নিকট খাদ্য নিয়ে যাচ্ছে। আবুল বুখতারী বলল, সে তো খাদ্যসামগ্ৰী নিয়ে যাচ্ছে তার ফুফুর জন্যে। আমি ওকে খাদ্যসামগ্ৰীসহ পাঠিয়েছি। খাদীজার নিকট খাদ্য পৌছাতে তুমি কি বাধা দেবে? ওর পথ
ছেড়ে দাও। ওকে যেতে দাও। আবু জাহল কথা শুনল না। ফলে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হয়। একটি উটের চোয়াল নিয়ে আবুল বুখতারী তাকে মেরে রক্তাক্ত করে দেয় এবং মাটিতে ফেলে পায়ে মাড়িয়ে দেয়। কাছে দাঁড়িয়ে হযরত হামযা (রা) এসব দেখছিলেন। নিজেদের মধ্যে মারামারির এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট পৌছুক আর তাতে তিনি খুশী হন এটা তারা পসন্দ করেনি।
বস্তৃত এমন দুঃসময়েও রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার সম্প্রদায়ের লোকজনকে দিনে-রাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে রীতিমত আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কাউকে ভয় করছিলেন না। এভাবে কুরায়শদের আক্রমণ থেকে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে রক্ষা করলেন। তার চাচা এবং বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব গোত্রদ্বয় তার সাহায্যে এগিয়ে এল। রাসূলুল্লাহ (সা)-কে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। তখন কুরায়শরা তাঁর দুর্নাম ও সমালোচনা শুরু করে। তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে থাকে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অযথা ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করতে থাকে। এদিকে কুরায়শদের এ সকল অন্যায় আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে কুরআনের আয়াত নাযিল হতে থাকে। যারা তার সাথে শক্ৰতা পোষণ করত, তাদের সম্পর্কেও আয়াত আসতে থাকে। এ জাতীয় কতক কাফির লোকের কথা কুরআন মজীদে এসেছে স্পষ্ট ভাবে নাম উল্লেখ করে। আর কতকের কথা এসেছে সাধারণভাবে। এ প্রসংগে ইবন ইসহাক আবু লাহাব এবং তাকে উপলক্ষ করে সূরা লাহাব (সূরা নং ১১১) নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে কাফির উমাইয়া ইবন খালফকে উপলক্ষ করে $১, ১৫, ৯ JK J., পূর্ণ সূরা (সূরা নং ১০৪) নাযিল হওয়ার কথা এবং আস ইবন ওয়াইলকে উপলক্ষ করে U1″, u3″, ‘[_ _ < °1 এ ৩-১ 141, ১L, ৬,৭,১ (১৯ : ৭৭) আয়াত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।;
এ বিষয়ে ইতোপূর্বে কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আবু জাহল ইবন হিশাম রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলেছিল, তুমি আমাদের উপাস্যকে গালমন্দ করা বন্ধ করবে, না হয় আমরা তোমার উপাস্যকে গালমন্দ করব। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন ৩, ৬-৩ ৩,–১, ৩, ১11 آک) مه ۶۹۹۹||۶ ق ۲۹}}।| 5।| ۹।| NIT SIIg–اللّه فیسلیوا اللّه عدد و بغیر علم-… তাদের উপাস্যদেরকে তোমরা গালমন্দ কর না। তাহলে সীমালংঘন ও অজ্ঞতাবশত তারা আল্লাহকে গালি দিবে (৬ : ১০৮)১ নাযার ইবন হারিছ ইবন কালদা ইবন আলকামা মতান্তরে আলকামা ইবন কালদা সম্পর্কে ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যে সকল মজলিসে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং আল্লাহর দাওয়াত দিতেন তাঁর উঠে যাওয়ার পর নাযার ইবন হারিছ। ওই সকল মজলিসে বসত। সে রুস্তম এবং ইসকানদিয়ারের কাহিনী এবং পারসিক সম্রাটদের আমলে তাদের যুদ্ধ-বিগ্রহের কথা আলোচনা করত। তারপর বলত, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ (সা)-এর কথা আমার কথার চেয়ে মোটেই উত্তম নয়। আমার এগুলো যেমন লিখিত কাহিনী তার কথাও তেমন লিখিত কাহিনী। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা নাযিল
১. সূরা আনআম : আয়াত ১০৮ ৷৷
آG۹۹۶ و قالوا اساطیر الاولین اگتتابها فهی تمالی علیه بگرهٔ و آصیلاً : ۹۹۶۴ এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখে নিয়েছে। এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট পাঠ করা হয় (২৫ : ৫)। আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন : ای 16–وبل لگل آفال آثیم^ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর (৪৫ : ৭)। 2 میچ بیبر
ইবন ইসহাক বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) ওয়ালীদ ইবন মুগীরাকে নিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন। তখন নাযার ইবন হারিছ এসে তাদের নিকট বসে। মজলিসে কুরায়শের অন্যান্য লোকজনও ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) কথা বলছিলেন। নাযার ইবন হারিছ তার কথায় বাধা দেয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এমন জোরালো ভাষায় নাযারের প্রত্যুত্তর দেন যে, সে লা-জবাব হয়ে যায়। এরপর তিনি নাযার ইবন হারিছ ও অন্যান্য লোকদের নিকট এ আয়াত তিল ওয়াত করেন :
انكم و ما تغلبذور من ذون اللّه حصب جهنم أنتم لها واردون – لو كان لهؤلاء ”
ألهة ما وردّوها وكل فيها خلدون – لهم فيها زفير وهم فيها لأيسمعون – তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা কর, সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা সকলে তার মধ্যে প্রবেশ করবে। ওগুলো যদি প্রকৃতই ইলাহ হত, তবে ওগুলো জাহান্নামে প্রবেশ করত না। ওদের সকলেই তার মধ্যে স্থায়ী হবে। সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না (২১ : ৯৮-১০০)। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেখান থেকে উঠে গেলেন। এবার সেখানে উপস্থিত হল আবদুল্লাহ ইবন যাবআরী সাহিমী সেখানে সে বসল, ওয়ালীদ ইবন মুগীরা তাকে বলল, আল্লাহর কসম, একটু আগে আবদুল মুত্তালিবের পৌত্রের মুকাবিলায় নাযার ইবন হারিছ দাঁড়াতেই পারেনি। মুহাম্মদ (সা) বলেছে যে, আমরা সবাই এবং আমরা যাদের উপাসনা করি তারা সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হব। আবদুল্লাহ ইবন যাবআরী বলল, আল্লাহর কসম, আমি যদি তাকে পেতাম, তবে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিতাম। তোমরা মুহাম্মদ (সা)-কে জিজ্ঞেস কর আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদের আমরা উপাসনা করি তারা এবং আমরা উপাসকরা সকলেই কি জাহান্নামের ইন্ধন হবে? তাহলে আমরা তো ফেরেশতাদের উপাসনা করি, ইয়াহুদীগণ। নবী উদ্যােয়র (আ:)-এর উপাসনা এবং খৃস্টানগণ নবী ঈসা (আ:)-এর উপাসনা করে। ইবন যাবআরীর কথায় ওয়ালীদ নিজে এবং তার সাথে যারা মজলিসে উপস্থিত ছিল সকলে খুব খুশী হয়। তারা বুঝতে পারে যে, এটি উপযুক্ত উত্তর এবং তাতে যাবআরীর জয় সুনিশ্চিত। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট পৌছে। ফলে ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আল্লাহ ব্যতীত যে সকল উপাস্য নিজেদের উপাসনা ভালবাসে, সে সকল উপাস্য তাদের উপাসকদের সাথে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। ওরা তো মূলত শয়তানের উপাসনা করে এবং শয়তানগণ যাদের উপাসনার নির্দেশ দেয়, সেগুলোর উপাসনা করে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন :
যাদের জন্যে আমার নিকট হতে পূর্ব থেকে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছেন তাদেরকে ওই জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে। তারা সেটির ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং সেথায় তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল তা ভোগ করবে (২১ : ১০১-১০২) অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ), হযরত উদ্যােয়র (আ) এবং আল্লাহর আনুগত্যে জীবন যাপনকারী যাজক ও পাদ্রিগণ ওই শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হবেন না। যে সকল মুশরিক লোক ফেরেশতাদের উপাসনা করে এবং এ কথা বিশ্বাস করে যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহর কন্যা, তাদের সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াত এবং এর পরবতীর্ণ আয়াতসমূহ নাযিল হয় :
“তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্ৰহণ করেছেন, তিনি পবিত্ৰ, মহান। ওরা তো তার
সম্মানিত বান্দা” (২১ : ২৬)।
ইবন যাবআরীর মন্তব্যে মুশরিকদের আনন্দ প্রকাশের প্রেক্ষিতে নাযিল হল :
যখন মারিয়াম তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় শোরগোল আরম্ভ করে দেয় এবং বলে, আমাদের দেবতাগুলো শ্রেষ্ঠ, না ঈসা? ওরা কেবল বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে একথা বলে। বস্তৃত ওরা এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। (৪৩ : ৫৭-৫৮) তারা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা নিঃসন্দেহে আসার। তারা নিজেরাও এর অসারতা সম্পর্কে অবগত। কারণ, তারা তো আরবী ভাষাভাষী লোক। তাদের ভাষায় L. (যেগুলো) শব্দটি জড় انگ و ما تغ بدون من دون اللّه حصب جهنم آنتن ۹۹।|।| 3 5 ۹۲۹ (“”) نه ۹ ه) ۶۹۲ ৩,১, L. তোমরা এবং তোমরা যাদের উপাসনা করা সকলেই জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরা সকলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে (২১ : ৯৮) আয়াতে L. (যেগুলো) দ্বারা ওই সকল জড় পাথরকে বুঝানাে হয়েছে প্রতিমারূপে তারা যে গুলোর উপাসনা করে। কল্পিত আকৃতি তৈরী করে তারা যে সব ফেরেশতার উপাসনা করে, সে সকল ফেরেশতা ওই শব্দের আওতায় পড়েন না। অনুরূপভাবে হযরত ঈসা (আ), হযরত উদ্যােয়র (আ) এবং কোন পুণ্যবান বান্দা–যেগুলো) শব্দের আওতায় পড়েন না। কারণ, (1, শব্দটি শব্দগত এবং অর্থগত কোন ভাবেই তাদেরকে বুঝায় না। তাই ওই ঝগড়াটে কাফিররাও জানে যে, উল্লিখিত মজলিসে তর্কস্থলে তারা যে ঈসা (আ.)-এর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই অসার ও ভিত্তিহীন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
ওরা কেবল বাক বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে ঐকথা বলে। এরপর আল্লাহ তা’আলা। বলেছেন : ১৯ )। সে ঈসা তো ৭-1 , ‘, ‘$1 , . ১। —আমার এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম। (৪৩ : ৫৯) আমার নবুওয়াত প্রদানের মাধ্যমে,,,,,, x_1,.৯৫
U.এ. এবং তাকে করেছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্যে দৃষ্টান্ত অর্থাৎ আমার পরিপূর্ণ শক্তির প্রমাণ যে, আমি যা চাই তা করতে পারি। যেমন তাকে আমি সৃষ্টি করেছি। মহিলা থেকে পুরুষের স্পর্শ ব্যতিরেকে। হাওয়াকে সৃষ্টি করে, পুরুষ থেকে মহিলা ব্যতিরেকে। আর আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেছি নারী-পুরুষ ব্যতিরেকে। অন্য সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছি। পুরুষ ও মহিলা থেকে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, : (০.০,–, 11, …, J, যেন তাকে মানুষের জন্যে নিদর্শন স্বরূপ স্থির করি। (১৯ : ২১)। অর্থাৎ আমার অনন্য শক্তির প্রমাণ স্বরূপ […, x_2,, এবং আমার নিকট থেকে এক অনুগ্রহ স্বরূপ আমি যাকে ইচ্ছা ওই রহমত ও দয়া প্রদানে কৃতাৰ্থ করি।
ইবন ইসহাক আখনাস ইবন শুরায়কের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, u k & 1 : 1, ৬…–১১, ২ এবং অনুসরণ করবে না সে ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। (৬৮ : ১০) ওয়ালীদ ইবন মুগীরার কথা উল্লেখ করে ইবন ইসহাক বলেন, মুগীরা বলেছিল, ওহী কি শুধু মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ হতে থাকবে। আর আমি বঞ্চিত হতে থাকব। অথচ আমি কুরায়শ বংশের অন্যতম গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নেতা? ছাকীফ গোত্রের প্রধান আবু মাসউদ আমর ইবন আমার (১) ছাকাকীও কি বঞ্চিত হবে? দুই জনপদের আমরা দু’জনই তো প্রতিপত্তিশালী و قالو لولا نازل هذا القران : ۹ اک56 STIT18 5 ISTAT TrfN37 2چ&31}ع می।|।| 5।| 3।|۹|g} * چه “T” آ۶ج ۹۹۴।|।| ۹।|।| ** جملگی آ۹۶||۹|| 5–علی رجل مین القریتین عظیم জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর (৪৩ : ৩১)।
ইবন ইসহাক উবাই ইবন খালফের কথা উল্লেখ করেছেন। সে উকবা ইবন আবী মুআয়তকে বলেছিল, তুমি মুহাম্মাদ (সা)-এর মজলিসে বসেছ এবং তার কথা শুনেছ। এই সং আমার নিকট এসেছে। তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত তার মুখে থুথু না দিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মুখ দেখা তোমার জন্যে হারাম। আল্লাহর দুশমন। উকবা (তার প্রতি আল্লাহর লা’নত) তা-ই করে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা নিম্নের আয়াতদ্বয় ও পরের আয়াত নাযিল করেনঃ
জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের
সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে অন্তরঙ্গ রূপে গ্ৰহণ না कद्धऊाभ (२१ 8 २१-२४)।
ইবন ইসহাক বলেন, উবাই ইবন খালফ একটি জীর্ণ পুরনো হাড় হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসলো এবং বলল, হে মুহাম্মদ! তুমি তা মনে কর যে, জীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও আল্লাহ তা’আলা এটিকে পুনরুখিত করবেন। এরপর সে স্বহস্তে ওই হাড়টিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ
১. সীরাতে হালবিয়্যাতে এরূপ আছে। মিসরী কপিতে আমর ইবন উমর এবং সীরাতে ইবন হিশামে উমর ইবন
উমায়ার।
ভ্ৰ-কুঞ্চিত করে তাকে রেখে রাসূলুল্লাহ্ (সা) প্রস্থান করলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল
করলেন :
—সে ভ্র-কুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। কারণ, তার নিকট অন্ধ লোকটি এল। আপনি কেমন করে জানবেন যে, সে হয়ত পরিশুদ্ধ হত। অথবা উপদেশ গ্রহণ করত। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে পরোয়া করে না। আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন। অথচ সে পরিশুদ্ধ না হলে আপনার কোন দায়িত্ব নেই . অন্যপক্ষে যে আপনার নিকট ছুটে আসে আর সে সশংক চিত্ত। আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন। না, (তা হয় না।) এটি তো উপদেশবাণী। যে ইচ্ছা করবে, সে এটি স্মরণ রাখবে। সেটি আছে মহান লিপিসমূহে, যা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, পবিত্ৰ। (সূরা নং ৮০) কেউ কেউ বলেন, এ ঘটনায় যার সাথে রাসূলুল্লাহ (সা) কথা বলছিলেন, সে ছিল উমাইয়া ইবন খালফ।
(৬১) সূরা আবাসা : ১, ২ ৷৷
এরপর ইবন ইসহাক (র) সে সকল লোকের কথা আলোচনা করেছেন যারা আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় ফিরে এসেছিলেন। বস্তৃত তারা সংবাদ পেয়েছিলেন যে, মক্কাবাসীরা সকলেই ইসলাম গ্ৰহণ করেছে। আসলে এ সংবাদটি সত্য ছিল না। অবশ্য এমন সংবাদ প্ৰচারিত হওয়ার কারণও ছিল। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) মুশরিকদের সাথে বসা ছিলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন :
শপথ নক্ষত্রের যখন সেটি হয় অস্তমিত। তোমাদের সংগী বিভ্রান্তও নয়, বিপথগামীও নয় (৫৩ : ১)। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এ সূরা শেষ পর্যন্ত ওদের সম্মুখে তিলাওয়াত করলেন এবং সিজদা করলেন। সেখানে উপস্থিত মুসলমান, মুশরিক, জিন, ইনসান সকলেই তাঁর অনুসরণে সিজদা দিল। এ ঘটনার পেছনেও একটি কারণ রয়েছে।
আমি আপনার পূর্বে যে সকল রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি তাদের কেউ যখনই কিছু আকাজক্ষা করেছে তখনই শয়তান তার আকাজক্ষায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে। কিন্তু শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। এরপর তাঁর আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (২২ : ৫২)। আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ তাফসীরকার ওই কারণ উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তাঁরা গারানীক (উ:, দ:)-এর কাহিনীও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ কাহিনীর উল্লেখ থেকেই আমি সর্বতোভাবে বিরত রয়েছি। যাতে অনভিজ্ঞ লোকজন বিভ্রান্তির শিকার না হয়।
এ বিষয়ে সহীহ বুখারীতে উদ্ধৃত ঘটনা এই : ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু মামার…… ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সূরা নাজম পাঠান্তে রাসূলুল্লাহ (সা)
সিজদা করলেন। মুসলমান মুশরিক-জিন-ইনসান নির্বিশেষে উপস্থিত সকলে তার সাথে সিজদা করল। এ বর্ণনা ইমাম বুখারী (র) একাই উদ্ধৃত করেছেন। সহীহ মুসলিমে এটি নেই।
ইমাম বুখারী (র) আরো বলেন মুহাম্মদ ইবন বাশ্মশার…… আবদুল্লাহ (র) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা নাজম তিলাওয়াত করলেন। তিনি তখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তাতে তিনি সিজদা করলেন। তার সাথে যারা ছিল তারাও সিজদা করলেন। কিন্তু একজন বৃদ্ধ লোক ছিল ব্যতিক্রম। সে সিজদা করেনি। সে বরং এক মুষ্টি মাটি কিংবা কংকর হাতে নিয়ে তার কপাল পর্যন্ত তুলল এবং বলল, সিজাদার স্থলে আমার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট। পরবতীতে আমি ওই বৃদ্ধকে দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে। ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ (র) এ হাদীছ শু’বা থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমদ (র) বলেন, ইবরাহীম জাফর ইবন মুত্তালিব…… সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) মক্কায় সূরা নাজম তিলাওয়াত করে সিজদা করেন। তার নিকট যারা ছিলেন তারাও সিজদা করেন। এরপর আমি আমার মাথা উঠিয়ে ফেললাম এবং সিজদা দানে অস্বীকৃতি জানালাম। আলোচ্য মুত্তালিব ইবন। আবু ওদাআ তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবতীতে তিনি যার মুখেই এই সূরার তিলাওয়াত শুনতেন তার সাথে সিজদা করতেন। ইমামু নাসাঈ (র) এ হাদীছ আবদুল মালিক ইবন আবদুল হামীদ সূত্রে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল থেকে বর্ণনা করেছেন। উভয় প্রকার বর্ণনার মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করা যায় যে, শেষোক্ত ব্যক্তি সিজদায় গিয়েছিলেন এবং পরে অহংকারবশত সিজদা থেকে মাথা তুলে ফেলেছিলেন আর ইবন মাসউদ (রা) যার সম্পর্কে বলেছেন যে, ওই বৃদ্ধ লোক সিজদা করেনি সে আন্দীে সিজদা করেনি। আল্লাহই ভাল জানেন।
মোদ্দাকথা, সংবাদ বৰ্ণনাকারী যখন দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুসরণে উপস্থিত মুশরিকগণ সিজদা করেছেন তখন তাঁর ধারণা হয় যে, মুশরিকগণ ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সমঝোতায় পৌছেছে। উভয় পক্ষের মধ্যে আর কোন সংঘাত সংঘর্ষ নেই। এই সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং আবিসিনিয়ায় অবস্থানকারী মুহাজিরদের নিকটও গিয়ে পৌঁছে। তার সংবাদটি সঠিক বলে বিশ্বাস করেন। ফলে আশায় বুক বেঁধে তাদের একদল মক্কায় ফিরে আসেন। তাদের কতক অবশ্য সেখানে রয়ে যান। এ হিসাবে তাদের উভয় দলের অবস্থানই যথার্থ।
এ প্রেক্ষাপটে যারা আবিসিনিয়া থেকে ফিরে এসেছিলেন ইবন ইসহাক তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন-উছমান ইবন আফফান (রা), তার স্ত্রী নবী-দুহিতা রুকাইয়া (রা), আবু হুযায়ফা ইবন উতবা ইবন রাবীআ (রা), তার স্ত্রী সাহিলা বিনত সুহায়াল (রা), আবদুল্লাহ ইবন জাহশ ইবন রিঅ্যাব (রা), উতবা ইবন গাযওয়ান (রা), যুবােয়র ইবন আওআম (রা), মুসআব ইবন উমােয়র (রা), সুওয়ায়বিত ইবন সাআদ (রা), তুলায়াব ইবন উমােয়র (রা), আবদুর রহমান ইবন আওফ (রা), মিকদাদ ইবন আমর (রা), আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা), আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ (রা), তার স্ত্রী উম্মে সালামা বিনত আবু উমাইয়া ইবন মুগীরা
(রা), শাম্মাস ইবন উছমান (রা), সালামা ইবন হিশাম (রা), আইয়াশ ইবন আবু রাবীআ (রা), এ দু’জনকে মক্কায় বন্দী করা হয়। তাদের বন্দী থাকা অবস্থায় বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আম্মার ইবন ইয়াসির (রা)—অবশ্য তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন কিনা তাতে সংশয় রয়েছে। মুআত্তাব ইবন আওফ (রা), উছমান ইবন মাযউন (রা), সাইব (রা), কুদামা ইবন মাযউন (রা), আবদুল্লাহ ইবন মাযউন (রা), খুনায়াস ইবন হুযাফা (রা), হিশাম, ইবন আস ইবন ওয়াইল (রা)-খন্দকের যুদ্ধ শেষ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি মক্কায় আটক ছিলেন, আমির ইবন রাবীআ (রা), তাঁর স্ত্রী লায়লা বিনত আবু হাছামাহ (রা), আবদুল্লাহ ইবন মািখরামা (রা), আবদুল্লাহ ইবন সুহায়ল ইবন আমর (রা:) —-বদর যুদ্ধের দিন পর্যন্ত ইনি মক্কায় বন্দী ছিলেন। ওই দিন পালিয়ে মুসলমানদের নিকট চলে যান এবং বদর যুদ্ধে অংশ নেন। আবু সুবরা ইবন আবু রুহাম (রা), তার স্ত্রী উম্মে কুলছুম বিনত সুহায়াল (রা), সাকরান ইবন আমর ইবন আবদে শামস (রা), তার স্ত্রী সাওদা বিনত যামআ (রা), মদীনায় হিজরতের পূর্বে সাকরানের (রা) মৃত্যু হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) সাওদাকে সহধর্মিণীরূপে গ্রহণ করেন। সাআদ ইবন খাওলা (রা), আবু উবায়দা ইবন জারবাহ (রা), আমর ইবন হারিছ ইবন যুহায়র (রা), সুহায়ল ইবন বায়যা (রা), আমর ইবন আবু সারাহ (রা)-প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে সর্বমোট তেত্ৰিশ জন পুরুষ ছিলেন।
ইমাম বুখারী (র) বলেছেন, হযরত আইশা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের হিজরতের স্থান আমাকে দেখানো হয়েছে। সেটি হল দুই কংকরময় ভূমির মধ্যবতী খেজুর বাগান সমৃদ্ধ অঞ্চল। পরবতীতে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারিগণ মদীনায় গিয়ে পৌঁছলেন এবং আবিসিনিয়ায় হিজরতকারিগণের প্রায় সকলেই সেখান থেকে মদীনায় চলে আসেন। এ বিষয়ে আবু মূসা ও আসমা (রা)-এর বর্ণনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে। আবু মূসা (রা)-এর বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে। হযরত আসমা বিনত উমায়াস (রা)-এর বর্ণনাটি “খায়বার বিজয়ের পরবতীর্ণ ঘটনা। এটি আবিসিনিয়ায় হিজরতকারিগণের শেষ দলের মদীনায় প্রত্যাবর্তনকালীন ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণনা করা হবে।
ইমাম বুখারী (র) বলেন, ইয়াহইয়া ইবন হাম্মাদ…… আবদুল্লাহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এমন এক সময় ছিল যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামােযরত থাকলেও আমরা তাকে সালাম দিতাম এবং ওই অবস্থায় তিনি সালামের উত্তর দিতেন। নাজাশীর দেশ থেকে আমরা যখন ফিরে এলাম, তখন তার নামােযরত অবস্থায় আমরা তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু তিনি সালামের উত্তর দিলেন না। আমরা আরয করলাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা:)! আমরা ইতোপূর্ব নামাযের মধ্যে আপনাকে সালাম দিতাম এবং আপনি সালামের উত্তর দিতেন। নাজাশীর ওখান থেকে ফিরে এসে আমরা আপনাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আপনি তো সালামের কোন উত্তর দিলেন না! রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, বস্তুত : নামাযের মধ্যে একাগ্রতাও একান্তভাবে কাম্য। ইমাম বুখারী মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ (র) অন্য সনদে সুলায়মান ইবন মাহরান সূত্রে আ’মাশ থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনাটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উল্লিখিত
যায়দ ইবন আরকামের (রা) হাদীছে “আমরা কথা বলতাম।” অংশে আমরা দ্বারা সকল সাহাবীকে বুঝানোর ব্যাখ্যাকে জোরালো করে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত যায়দ ইবন আরকাম (রা)-এর হাদীছ এই : তিনি বলেছেন ইতোপূর্বে আমরা নামাযের মধ্যে বাক্যালাপ করতাম। অবশেষে নাযিল হল : ৬. ” + i < 1।| 1,2,3,-এবং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দাড়াও বিনীত ভাবে। (২ : ২৩৮) এরপর আমাদেরকে নামাযের মধ্যে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হল এবং নীরবতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হল। আলোচ্য হাদীছে “আমরা” শব্দ দ্বারা সকল সাহাবীকে বুঝানাে হয়েছে। কারণ, হযরত যায়দ ইবন আরকাম (রা) মাদানী ও আনসারী সাহাবী। নামাযে কথা বলা নিষিদ্ধ হয়েছে মক্কী জীবনে। সুতরাং হাদীছে উল্লিখিত “আমরা” শব্দের ব্যাখ্যা এটাই। এতদসঙ্গে তাঁর ংশ্লিষ্ট আয়াত উল্লেখ করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বটে। কারণ, এ আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ তবে এর সমাধান এভাবে হতে পারে যে, তিনি ধারণা করেছেন যে, এটিই নামাযে বাক্যালাপ নিষিদ্ধকারী আয়াত। কিন্তু মূলত নামাযে কথা নিষিদ্ধকারী আয়াত এটি সহ অন্য একটি আয়াতও রয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।
ইবন ইসহাক বলেন, প্রথম অবস্থায় যে সকল মুসলমান মুশরিকদের অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী মুশরিক ব্যক্তিদের আশ্রয়ে গিয়েছিলেন তাদের একজন হলেন হযরত উছমান ইবন মাযউন (রা)। তিনি ওয়ালীদ ইবন মুগীরা-এর আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ (রা:) আশ্রয় নিয়েছিলেন তার মামা আবু তালিবের নিকট। তাঁর মা বাররা ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের কন্যা। উছমান ইবন মাযউন সম্পর্কে সালিহ ইবন ইবরাহীম ইবন আবদুর রহমান ইবন আওফ আমার নিকট নিম্নোক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন এমন বর্ণনাকারী থেকে যিনি সরাসরি উছমান ইবন মাযউন থেকে বর্ণনা করেছেন। উছমান ইবন মাযউন (রা) যখন দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ ভীষণ দুঃখ-কষ্ট ও জুলুম অত্যাচারের মধ্যে দিন গুজরান করছেন আর তিনি ওয়ালীদ ইবন মুগীরার আশ্রয়ে থাকার কারণে সকাল-সন্ধ্যা তথা সৰ্ব্বক্ষণ নিরাপদে চলাফেরা করছেন তখন তিনি আপন মনে বললেন, আল্লাহর কসম, একজন মুশরিক মানুষের আশ্রয়ে থেকে আমার সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত হচ্ছে আর আমার সাখী ও দীনী ভাইগণ আল্লাহ পথে নানা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন— যা আমার উপর আপতিত হচ্ছে না। এটি নিশ্চয়ই আমার ঈমানের দুর্বলতা ও আমলের ত্রুটি। এরপর তিনি ওয়ালীদ ইবন মুগীরার নিকট গেলেন। তাকে বললেন, হে আবু আবদ শামস! আপনি আপনার যিম্মাদারী পালন করেছেন। আপনার আশ্রয় গ্রহণ করে আমাকে রক্ষার যে দায়িত্ব আমি আপনাকে দিয়েছিলাম সেটি আমি এখন প্রত্যাহার করে নিলাম। তিনি বললেন, ভাতিজা! তুমি কেন তা করছি? আমার সম্প্রদায়ের কেউ তোমাকে কষ্ট দিয়েছে বলে কি? উছমান (রা) বললেন, না, তা নয়। বরং আমি আল্লাহ তা’আলার আশ্রয়ে যেতে আগ্রহী হয়েছি। আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় ব্যতীত অন্য কারো নিকট আশ্রয় গ্রহণে আমি রাষী নই। তিনি বললেন, তবে মসজিদে চল এবং সেখানে জনসমক্ষে আমার আশ্রয় প্রত্যাহারের ঘোষণা দিবে–যেমনটি আমি তোমাকে আশ্রয়ে নেয়ার কথাটা প্ৰকাশ্যে ঘোষণা করেছিলাম।
তাঁরা দু’জনে মসজিদে উপস্থিত হন। ওয়ালীদ ইবন মুগীরা বলল, এ হল উছমান ইবন মাযউন, আমার আশ্রয় প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার জন্যে এখানে এসেছে। উছমান ইবন মাযউন বললেন, “হ্যা, তিনি সত্য বলেছেন। আমি তাকে একজন যথাযথ প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ও আশ্রয়দাতারূপে পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় ব্যতীত অন্য কারো আশ্রয় গ্রহণে আমি রাষী নই। তাই এতদ্বারা আমি তাঁর আশ্রয়ের সুযোগ প্রত্যাহার করে নিলাম।” এরপর উছমান (রা) চলে গেলেন। এক জায়গায় দেখলেন, কুরায়শদের এক মজলিসে কবি লাবীদ ইবন রাবীআ ইবন মালিক ইবন জাফর কবিতা পাঠ করছেন। উছমান ইবন মাযউন তাদের ওখানে বসে পড়লেন। লাবীদ বললেন :
الاً گل شیین ماخلااللهٔ باطل. ‘আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুই বাতিল ও অসার।’ হযরত উছমান (রা) বলে উঠলেন, ঠিক, ঠিক, সত্য, সত্য। লাবীদ বললেন, : .
وكل نعيم لأمحالة زائل. ‘সকল নিআমত ও সুখ নিশ্চয়ই তিরোহিত হবে।’ হযরত উছমান ইবন মাযউন (রা) বলে উঠলেন, এটি তুমি অসত্য বলেছি বেহেশতের সুখ ও নিআমত তিরোহিত হবে না। লাবীদ বললেন, হে কুরায়শ সম্প্রদায়! তোমাদের কোন সাখী তো আমাকে কোন দিন বাধা দেয়নি কষ্ট দেয়নি। তোমাদের মধ্যে কবে এ নতুন ব্যাপার ঘটল? উপস্থিত এক ব্যক্তি বলল, এ হল মূর্থি লোকদের মধ্যে একজন। তারা তাদের পিতৃধৰ্ম ত্যাগ করেছে। তার কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না। উছমান (রা)। ওই লোকের কথার প্রতিবাদ করলেন। ক্রমে ক্রমে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। ওই লোক উঠে। হযরত উছমান (রা)-কে চোখে সজোরে চপেটাঘাত করে। তার তা চোখে লাগায় চোখ নীল হয়ে যায়। ওয়ালীদ ইবন মুগীরা নিকটে ছিল। উছমান (রা)-এর উপর অত্যাচার সে দেখছিল। এবার সে বলল, আল্লাহর কসম, হে ভাতিজা! তোমার যে চোখে চড় পড়েনি সে চোখ তো ভাগ্যবান। আহ তুমি তো একটি সুরক্ষা ও নিরাপত্তার মধ্যে ছিলোঁ। উছমান বললেন, আল্লাহর কসম, আমার অসুস্থ চক্ষুটি আল্লাহর পথে যে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে আমার সুস্থ চক্ষুটি বরং ওইরূপ আঘাত পেতে উন্মুখ। হে আবু আবৃন্দ শামস, যে মহান সত্তা আপনার চাইতে অধিক শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান আমি এখন তাঁর আশ্রয়ে রয়েছি। ওয়ালীদ বলল, ভাতিজা! তুমি পুনরায় আমার আশ্রয়ে চলে আস, তোমাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাকে দাও।” উছমান (রা) বললেন, “না তা হয় না।”
ইয়াসার আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আবু সালামা (রা) বলেছেন, তিনি যখন আবু তালিবের আশ্রয় গ্রহণ করলেন, তখন বনু মািখযুমের কতক লোক আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হয়। তারা বলল, হে আবু তালিব! আপনি তো আপনার ভাতিজা মুহাম্মদ (সা)-কে আমাদের হাত থেকে রক্ষা করছেন। এখন আবার আমাদেরই লোক আবু সালামাকে রক্ষা করে বাড়াবাড়ি করছেন কেন? তিনি বললেন, সে আমার আশ্রয় কামনা করেছে। সে আমার ভাগ্নে। আমার
ভাগ্নেকে যদি আমি রক্ষা করতে না পারি, তবে ভাতিজাকেও রক্ষা করতে পারব না। আবু লাহাব দাঁড়িয়ে বলল, হে কুরায়শ সম্প্রদায়!! আল্লাহর কসম, তোমরা কিন্তু এই বয়োবৃদ্ধ সম্মানিত লোকটির সাথে খুব বাড়াবাড়ি করছি। তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে আশ্রয় দানের কারণে তোমরা সবসময় তার প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করছি। আল্লাহর কসম, তোমরা হয়ত একাজ থেকে বিরত থাকবে, নতুবা আমিও তাঁর পক্ষে দাঁড়াব। তিনি যে দায়িত্ব নিয়েছেন সে। দায়িত্ব পালনে আমি তাঁর সাহায্যকারী হব— যাতে করে তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়।” ওরা বলল, “হে আবু উতবা! আপনি যা অপসন্দ করেন, আমরা বরং তা থেকে বিরত থাকব।’ মূলত আবু লাহাব রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিরুদ্ধে ওই লোকদের পরামর্শদাতা ও সাহায্যকারী ছিল। ফলে তারা ততটুকুতেই থেমে যায়।
আবু লাহাবের বক্তব্য শুনে আবু তালিব তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং তিনি আশা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পক্ষে আবু লাহাব তাকে সাহায্য করবে। এ প্রেক্ষিতে আবু তালিবকে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সাহায্য করার জন্যে আবু লাহাবকে উৎসাহিত করে আবু তালিব নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেন :
ان امرؤا أبو عتبة عمه – ألفى روضة ما أن يسام المظالما যে ব্যক্তির চাচা আবু উতায়বা, নিশ্চয় সে ব্যক্তি এমন এক বাগানে অবস্থান করে যেখানে তার উপর কোন জুলুম-অত্যাচার করার কল্পনাও করা যায় না।
آقول لهٔ و این منهٔ نصیحتی–آبا معایب ثیت سوادلات قائما আমি তাকে বলছি, অবশ্য আমার উপদেশ সে কতটুকু মেনে চলবে তা জানি না, হে আবু মুআত্তাব, তোমার বংশ ও গোত্ৰকে তুমি সঠিক ও নিরাপদ রোখ।
ولاً تقلبان الذهر ما غشت خطة – تُسبب بها أما هبطت المواسما তুমি যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন যুগের মধ্যে এমন কোন কালিমা ও মন্দ চিহ্ন যেন না পড়ে যদ্বারা তোমাকে এই বলে গালমন্দ করা হবে যে, যথা সময়ে তুমি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ ठू७न् ि।
কাউকে অক্ষম বানিয়ে দেয়ার দক্ষতা অন্যের নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দাও, অর্থাৎ এই কৃতিত্ব অন্যের হাতে তুলে দিও না। কারণ, অক্ষমতা মেনে নেয়ার জন্যে অবশ্যই তোমাকে সৃষ্টি করা হয়নি।
এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হও। কারণ যুদ্ধই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধবাজ মানুষদেরকে তুমি কখনো দেখবে না যে, আত্মসমর্পণে বাধ্য করা ব্যতীত তারা অনুগত হয়েছে।
কেন তুমি তোমার স্বগোত্রীয়দের বিরুদ্ধে যাবে? তারা তোমার প্রতি কোন বিরাট অন্যায়।
করেনি এবং তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে যুদ্ধলব্ধ মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে কিংবা তোমার নিকট থেকে জরিমানা আদায় করে তোমাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেনি।
আমাদের প্রতি অবাধ্য হওয়া এবং আমাদের ক্ষতি করার অপরাধে আল্লাহ তা’আলা আবদ শামস গোত্ৰ, নাওফিল, তায়ম ও মাখিযুম গোত্রকে উপযুক্ত শাস্তি প্ৰদান করুন।
কারণ, মায়া-মমতা, বন্ধুত্ব ও প্রীতি বন্ধনের পর তারা আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যাতে তার হারাম ও অন্যায় কাজ করতে পারে।
كذبْتُمْ وبيت اللّه نبرى محمدًا – ولما تروا يوما لدى الشغب قائما বায়তুল্লাহ শরীফের কসম, আমরা মুহাম্মাদ (সা)-কে ছেড়ে যাব তোমাদের সে ধারণা
মিথ্যে এবং তোমরা আমাদেরকে উপত্যকার নিকট দণ্ডায়মান দেখতে পাবে না তেমন ধারণাও মিথ্যে।
ইবন হিশাম বলেন, এ কবিতার আরো একটি পংক্তি রয়েছে, আমরা সেটি উল্লেখ করিনি।
masa allah khub sundor vabe ghotonati tole dhorecen pore khusi holam allah tayala aro sudhor kore uposthapon korar tawfiq dan korok AMIN