আইয়ুবশাহীর অভ্যুদয় ও লেখক সংঘ
বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বাতিল করে সেকালে যেসব দেশে সামরিক শাসন জারি করা হতো, সেই শাসকেরা ওই রকম ক্ষমতা দখলকে ‘বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করতেন। শুধু তাঁরা যে করতেন তা নয়, তাঁদের তাঁবেদার ও সমর্থকেরাও তাকে বিপ্লবই বলতে চাইতেন। আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলকেও আখ্যায়িত করা হলো ‘বিপ্লব’ বলে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের হর্তা-কর্তা বিধাতা নিযুক্ত করেছিলেন যাকে, তার নাম মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ওমরাও খান। তাকে চোখে দেখা তো দূরের কথা, বাংলার মানুষ তাঁর নামটিও কখনো শোনেনি। তিনিই হলেন আমাদের শাসক। আইন পরিষদ নেই, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নেই, তিনি একাই সব। তেমন ধরনের সরকার বাংলার মানুষ বখতিয়ার খিলজির পর থেকে হাজার বছরে কখনো দেখেনি। সিরাজদ্দৌলার পতনের পর ইংরেজ রবার্ট ক্লাইভ এ দেশের শাসনভার গ্রহণ করলেও মীর জাফর আলী খান ওরফে মীরজাফর নামেমাত্র হলেও বাংলার নবাব ছিলেন কিছুকাল। ৫৮-র সামরিক শাসনের পর এ দেশে বেসামরিক নাগরিকের তিলমাত্র ক্ষমতা থাকল না।
তবে এটাও ঠিক, আইয়ুব ক্ষমতা দখল করে অনেকগুলো ভালো সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেন। তার প্রথমটি যদিও কবি-সাহিত্যিকদের জন্য। সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ প্রভৃতি সব পেশার মানুষের জন্যও সংস্কারের কাজ শুরু করেন। যেমন শিল্পসচিব আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে গঠিত হয় ১২ সদস্যবিশিষ্ট বিজ্ঞান কমিশন ১৯৫৯-এর শুরুতেই। ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন বা জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার পরিচালক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার এফ আর খান। গঠিত হয় কুদরতুল্লাহ শাহাবের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড বা পাকিস্তান লেখক সংঘ। জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা নামটি চমৎকার, কিন্তু কী উদ্দেশ্যে সেটি গঠিত তা প্রথমে বোঝা যায়নি।
৩১ জানুয়ারি ‘৫৯, পাকিস্তানের দুই অংশের খ্যাতিমান লেখকদের এক সম্মেলনে আইয়ুব বলেন :
‘পাকিস্তানের লেখকগণের মধ্যে সংগ্রাম করার শক্তি এবং সৃজন করার যথেষ্ট প্রতিভা রয়েছে। তারা পাকিস্তানের প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন এবং পাকিস্তানের সংহতির জন্য অভাবনীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম।’
তিনি বলেন, পাকিস্তানের জাতীয় সাহিত্যে থাকবে পাকিস্তানের আদর্শের রূপায়ণ। কিন্তু সেই আদর্শ কী? সে প্রশ্নের জবাবও তিনিই দেন :
‘পাকিস্তানের জনসাধারণের জন্য অধিকতর সুখী, আরামদায়ক, উন্নত, আনন্দময় ও সৃষ্টিশীল জীবনব্যবস্থার বাস্তব রূপায়ণই পাকিস্তানের আদর্শ। এই আদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করার ব্যাপারে লেখকগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন।’
শুধু এটুকু নয়, তিনি আরেকটু খোলাসা করে বলেন:
‘আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ইসলামের নীতিগুলোকে আধুনিক মানের উপযোগী ভাষায় প্রকাশ করা, কারণ আধুনিক ভাষাই হচ্ছে যথার্থ শক্তির ভাষা। এ ভাষা। অবশ্যই বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও চলতি ঘটনাবলি প্রকাশের ভাষা হওয়া উচিত; কারণ দুনিয়া ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে, আর এখানে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের যথোপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’
আইয়ুব খান জাতীয় সংহতি, জাতীয় পুনর্গঠন ও পাকিস্তানি জাতীয় চরিত্র গঠনের ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং সে কাজে তিনি বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতা চান এবং তা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পানও। ক্ষমতা দখলের ছয় মাসের মধ্যে জেনারেল আইয়ুব গঠন করেন ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন বা জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা। ২৩ মার্চ ১৯৫৯, প্রেসিডেন্ট এক বেতার ভাষণে বলেন :
‘আমাদের সম্মুখে জাতীয় পুনর্গঠন ও ব্যক্তিগত চরিত্র পরিশুদ্ধ করার দায়িত্ব রয়েছে এবং কেবল স্ব-স্ব কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেই আমরা তা পালন করতে পারি।’
আমাদের লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের ‘চরিত্র পরিশুদ্ধ’ করার তাগিদ আসে অবাঙালি সামরিক শাসকের কাছ থেকে। দেশের বুদ্ধিজীবীগণের দায়িত্ব সম্পর্কে আইয়ুব খান। বলেন, ‘চিন্তাশীল ও বুদ্ধিমান লোক হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাবলি নির্ধারণ, ও তার সঠিক সমাধানের উপায় উদ্ভাবন করে তারা খাঁটি স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন। জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে সাহায্য করার এই-ই তাঁদের পক্ষে উস্কৃষ্ট পন্থা।
আমাদের খ্যাতিমান লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা সেদিন বাস্তবিকই ‘খাঁটি স্বদেশপ্রেমের পরিচয়’ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে আমাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকেরা খাঁটি স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিতে না পারায় নাজিমুদ্দীন রোডের উঁচু পাঁচিলঘেরা বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন।
জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা ও পাকিস্তান লেখক সংঘের মূল উদ্দেশ্য যা-ই হোক, এই দুই সংস্থা বেশ কিছু ইতিবাচক কাজও করেছিল, তাতে আমাদের লেখকসমাজ উপকৃত হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিলেন সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদীরা।
১৯৫৯-এর ৪-৫ জুলাই লাহোরে পাকিস্তান লেখক সংঘের কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান লেখকদের অনেকেই তাতে যোগ দেন। অধিবেশনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে একটি ছিল ‘সংঘের তরফ থেকে একটি প্রকাশনালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা। এই সিদ্ধান্তে বাঙালি লেখকেরা খুবই উফুল্ল হন। তখন ঢাকায় প্রকাশনা শিল্পের শৈশব অবস্থা। সাহিত্যের বইপত্রের প্রকাশক পাওয়া ছিল খুবই কঠিন।
সংঘের দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংঘের সদস্যদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধাজনক জীবন-বীমা পলিসির বন্দোবস্ত করা। এ সম্পর্কে আমাদের লেখকদের মন্তব্য ছিল, ‘এসব সংবাদ নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। কারণ, বাঙালি লেখকদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থা ছিল খারাপ। অকালে মারা গেলে পরিবার-পরিজন অসহায় হয়ে পড়ত। লেখকদের সুবিধাজনক জীবন-বীমা থাকলে তাদের মৃত্যুর পর পরিবার কিছুটা উপকৃত হতে পারত।
লেখক সংঘের বই প্রকাশের সংবাদে লেখকদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। মাহে নও মন্তব্য করেছিল, দেশের সকল স্থানের সকল শ্রেণির সৃষ্টিধর্মী লেখকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের উদ্যোগে তাদের শ্রেষ্ঠ রচনাবলী প্রকাশনের যে ব্যবস্থা করছেন, তার ফলে সাহিত্যক্ষেত্রে নূতন উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে বাধ্য।
প্রকাশনা শুরু করার জন্য লেখক সংঘকে একটি তহবিলও করে দেওয়া হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গিল্ডকে বিনা সুদে এক লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুর’ করা হয়েছে। এই অর্থ দ্বারা গিল্ডের নিজস্ব প্রকাশনালয় প্রতিষ্ঠার মৌলিক পরিকল্পনা কার্যকরী করার প্রাথমিক ব্যবস্থাদি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে বলতে ১৯৫৮-র এপ্রিলের মধ্যে।
পাকিস্তান লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠার এক বছর উপলক্ষে এক নিবন্ধে মাহে নও লিখেছিল:
‘১৯৫৮ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত গোটা জাতিই এই ব্যাপক নৈরাশ্য আর হতাশার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, জাতীয় জীবন ও চিন্তাধারার রূপকার ও শিল্পী হিসেবে লেখকগণ হয়ে পড়েছিলেন দিশেহারা।’
[মাহে নও, জানুয়ারি ১৯৬০]
এই বক্তব্যটি বস্তুত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সামরিক সরকারের। সামরিক শাসনের আগে পাকিস্তানের তথা বাংলার লেখক-শিল্পীরা ‘হতাশার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলেন’ এবং তাঁরা হয়েছিলেন ‘দিশেহারা’, তেমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে বিভেদ, হিংসা-প্রতিহিংসা ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে রাজনীতি খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে পড়েছিল। তাতে মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দেওয়াও স্বাভাবিক।
সরকার-সমর্থক লেখক-বুদ্ধিজীবীরা বলেন, লেখক সংঘ বা রাইটার্স গিল্ডকে একটি অভিনব ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন বলেও অভিহিত করা যেতে পারে। অভিনব’ বললাম এই কারণে যে, ট্রেড ইউনিয়নকে যেমন শ্রমিকদের তরফ থেকে মালিকদের কাছে বা সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করতে হয় এবং সে জন্য হয়তো আন্দোলন করতে হয়, রাইটার্স গিল্ডের বেলায় সে কথাটা একেবারেই খাটে না। কারণ, বর্তমান বিপ্লবী সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার মধ্য দিয়েই এর গোড়াপত্তন হয়েছে। বস্তুত, রাইটার্স গিল্ডের প্রতিষ্ঠা বিপ্লবী সরকারের বহুমুখী প্রগতিশীল কর্মসূচির একটি গৌরবময় অধ্যায় বললেও অত্যুক্তি করা হয় না।
‘রাইটার্স গিল্ড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাটাই মূলত একটি বিপ্লবী চিন্তাধারার পরিচায়ক। শুধু এশিয়া ও আফ্রিকাতেই নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই এর নজির বড় একটা চোখে পড়ে না।
[মাহে নও]
লেখকদের জন্য জীবন-বীমা ব্যবস্থা করা ছিল একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যদিও সে উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফলপ্রসূ হয়নি।
১৯৫৯-এর জুলাইতেই লাহোরে লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়েছিল :
‘লেখক সংঘের তরফ থেকে প্রত্যেক সদস্যের জন্য ৫০০০ টাকার একটি জীবন-বীমার পলিসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পলিসির জন্য লেখক-সদস্যদের মাসিক মাত্র ৫ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে।’ তবে সেকালে এমন লেখকই ছিলেন বেশি, যিনি ৫ টাকা প্রিমিয়াম দিলে ১০ দিন বাজার করতে পারতেন না।
১৯৬২-র ৩১ জানুয়ারি লেখক সংঘের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব হয় করাচিতে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিদলে গিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চল শাখার সম্পাদক মুনীর চৌধুরী, লেখক সংঘ পত্রিকার দুজন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই। সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব উপস্থিত থাকতে পারেননি অনিবার্য কারণে।
তিনি লেখকদের উদ্দেশে পাঠিয়েছিলেন একটি বাণী। সেই বাণী পাঠ করে শোনান মুনীর চৌধুরী। লেখকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বলেছিলেন :
‘পাকিস্তান লেখক সংঘের প্রতি অতীতে প্রেরিত আমার বিভিন্ন বাণী, আপনাদের পেশা, কার্যধারা, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে : সর্বোপরি চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতায় আমার সক্রিয় সহযোগিতা আপনাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার গভীর উৎসাহের পরিচয়।
‘পাকিস্তানের সামনে আজ একটি বড় সমস্যা হলো পাকিস্তানের আদর্শ অনুযায়ী জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা। আমি জানি না সবাই এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কি না। এই কর্মে আপনাদের দায়িত্ব সর্বাধিক, কারণ লেখক তার পরিবেশের বাহ্যিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিগন্তের যথার্থ রূপায়ণে ও প্রতিফলনের মাধ্যমে এই ঐক্যকে যথেষ্ট প্রভাবান্বিত করতে পারেন।
‘আমাদের সামনে যেসব সামাজিক সমস্যা রয়েছে, তার মূল উচ্ছেদ কেবল আইনের সাহায্যেই করা সম্ভব নয়, সামাজিক দুর্নীতির ব্যাপক উচ্ছেদ আপনাদেরই দায়িত্ব।
‘আমাদের উত্তরসূরিরা যেন কখনো বলতে না পারেন যে আমাদের সামনে একটি স্বাধীন ও মহৎ জাতি গঠন করার যে সুবর্ণ সুযোগ ছিল, তা আমরা নষ্ট করেছি। ইতিহাসের পথনির্দেশে আপনাদের লেখনী অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। আমার আবেদন, আপনাদের লেখনী সর্বপ্রথম দেশের জন্য ব্যবহার করুন, যে ব্যবহার আপনারাই আমার চেয়ে ভালো জানেন। আপনারা সর্বদা আমার পূর্ণ সহযোগিতা লাভ করবেন।’
বাঙালি লেখকদের প্রভাবশালী অংশ আইয়ুবের দেওয়া কোনো সুযোগই নষ্ট হতে দেননি। এবং লাভ করেছেন তাঁর পূর্ণ সহযোগিতা ও পেয়েছেন তাঁর আনুকূল্য। ওদিকে প্রগতিশীল ও স্বায়ত্তশাসনকামী রাজনীতিকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ছিল কারাগারগুলো।