3 of 3

১২ সেপ্টেম্বর, রবিবার ১৯৭১

১২ সেপ্টেম্বর, রবিবার ১৯৭১

মন খুব খারাপ। আবু এয়ারপোর্টের উদ্দেশে বাসা থেকে গেল এগারোটার দিকে। সকালে উঠে পরটা করে ডিম, মিষ্টি, গোশত ভুনা দিয়ে যতটা সম্ভব ভারি নাশতা খাইয়ে দিয়েছি আবুকে। করাচির প্লেন কটায় ছাড়বে আবু জানে না, তার ওপর নির্দেশ ছিল বারোটার মধ্যে তেজগাঁও এয়ারপোর্ট পৌঁছানোর।

গতকাল বিকেলে আবুকে পাগলাপীরের কাছে নিয়ে গেছিলাম। বাবার পায়ের কাছে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট রেখে সালাম করার কথা আবুকে আগেই বলে দিয়েছিলাম। বাবা আবুকে খুব খাতির করে কথাবার্তা বললেন, দোয়া করলেন, তার কোমরে ফুঁক দিয়ে দিলেন।

কাল রাতে প্রথমে নিচতলায় ডাইনিংরুমের চৌকিটায় আবুর জন্য বিছানা করেছিলাম। খানিক পরে উপলব্ধি করলাম আবু একা একা নিচতলায় থাকার চিন্তায় খুব স্বস্তি পাচ্ছে না। তখন ওকে আমাদের বেডরুমে নিয়ে গেলাম। খাটের ওপর আবু আর শরীফকে দিয়ে আমি মেঝেতে তোষক পেতে শুলাম। কিন্তু ঘুম তেমন হল না। অনেকক্ষণ কথাবার্তা, তারপর নামাজ, কোরান শরীফ পড়া, তারপর শুয়ে শুয়ে আবার কথাবার্তা। ভোরের দিকে অল্প একটুখানি ঘুম।

মাত্র বিশ ঘন্টার জন্য এসে আমাদের দুঃখক্লিষ্ট জীবনে একটুখানি আলোড়ন তুলে আবু চলে গেল তার অজানা, অনির্দিষ্ট ভাগ্যের পথে। কে জানে, করাচিতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আমরা জানি না সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।