১২. সম্রাট দ্বিতীয় আকবর
জাঁহাপনা, সভাসদরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
চকচকে রত্নখচিত রাজদরবারের আলখাল্লা পরা আমবারের রাজার কথাগুলো ২৩ বছরের আকবরের কানে মধুবর্ষণ করলো। রাজা আর তাহাব্বুর খানকে সাথে নিয়ে তিনি বালুময় মাটির উপর দিয়ে তার তাঁবুর দিকে হেঁটে চললেন। একজন পরিচারক মাথার উপর বিরাট একটি সাদা ছাতা ধরে রয়েছে। তাঁবুর কাছে পৌঁছে দেখলেন তার রাজপুত মিত্ররা তাঁবুটিকে ঐতিহ্যবাহী মোগল সর্বাধিনায়কের লাল টকটকে রঙে রাঙিয়েছে। তাঁবুর ছাউনির নিচে স্থাপন করা মখমলে ঢাকা নিচু সোনার সিংহাসনটির দিকে এগোতেই দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান রাজপুত রাজারা একযোগে তাকে কুর্নিশ করলো। এই সদিচ্ছাজ্ঞাপক ভঙ্গি দিয়ে ওরা তার প্রতি যে আস্থা আর শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে তা তিনি উপভোগ করলেও, রাজপুতদের গর্ব আর সামাজিক অবস্থান ও পদমর্যাদা সম্পর্কেও তিনি সচেতন। তিনি জানেন তার এই নতুন অবস্থানের অহংকারে তাকে ডুবে থাকলে চলবে না। তিনি দ্রুত রাজাদেরকে উঠতে ইশারা করে বললেন, যদিও আমি আপনাদের নেতা, তবে আমার এই অবস্থানে পৌঁছাবার জন্য আপনারা যে সমর্থন আর উৎসাহ যুগিয়েছেন তার জন্য আমি আপনাদের কাছে ঋণী। আপনারা আমার সহযোদ্ধা-ভাই। আমরা একসাথে মিলে মোগল সাম্রাজ্যকে এর বর্তমান খণ্ডিত অবস্থা থেকে নতুনভাবে আবার এর ঐক্যবদ্ধ গৌরবময় অবস্থায় ফিরিয়ে আনবো। তবে তা করার আগে আমার বাবা আর তার গোঁড়ামিপূর্ণ হামসাচ্চা সমর্থকদের মধ্যে বিভাজন করার যে শক্তি মূর্ত রয়েছে তা আমাদেরকে দমন করতে হবে। তাদের সর্বশেষ সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে আমরা কী জানি?
মেবারের রানা বললেন, “আমাদের চরদের কাছ থেকে আমরা যে খবর পেয়েছি তাতে বুঝা যাচ্ছে যে, আওরঙ্গজেব আজমিরেই রয়েছেন এবং আমরা সেখানে পৌঁছার আগে তাঁর বাইরে থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তা পাওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। আর এখান থেকে আজমির যেতে তিন থেকে চারদিন লাগবে। ‘সে যাইহোক, আজমির দুর্গ খুবই সুরক্ষিত।
তবে শহরের অনেক বাসিন্দা রাজপুত বংশীয় আর আমরা বিশ্বাস করি ওরা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ওদের সাহায্য নিয়ে আমরা প্রতিরক্ষা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে আপনার বাবাকে কজা করতে পারি।
রানার দুই সারি পেছন থেকে মোটামতো একজন সেনা কর্মকর্তা বলে উঠলো, ‘আর আমাদের লোকজনদের সাথে তিনি যা ব্যবহার করেছেন, তাতে তাকে মেরে ফেলাই ঠিক হবে।
রানা ঘুরে লোকটির দিকে ইস্পাতকঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘থাম রবি। এসব বিষয়ে তোমার বিচার করার অধিকার নেই। আর তা তোমার ভালর জন্যই বলছি।
আকবর বললেন, একটা ব্যাপার আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই। আমি কখনও আমার বাবার মৃত্যুদণ্ড দিতে রাজি হব না। তাকে আরামদায়ক অবস্থায় আটক করে রাখতে হবে।’
‘আমার পেছনে এই রবির মতো মাথা-গরম দু-একজন লোকেরা রাজদরবারের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়, এদের স্থান কেবল যুদ্ধের ময়দান। আপনার কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসার আগে থেকেই আমরা জানতাম যে, আপনি তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে রাজি হবেন না। তাঁকে কারাগারে বন্দী করে রাখার বিষয়ে আমরা একমত।
‘শুনে আমি খুশি হলাম।
তবে আপনাকে অনুরোধ করবো, যত আরামেই তাঁকে বন্দী রাখুন, জায়গাটি অবশ্যই ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে কোথাও হতে হবে। আগ্রা কিংবা দিল্লিতে রাখলে তিনি তাঁর অতিসূক্ষ্ম বুদ্ধি আর কূটচাল দিয়ে কোনো একটা ফন্দি বের করে মতবিরোধ জাগিয়ে তুলবেন। সবচেয়ে ভাল হয় তাকে কয়েকশো মাইল দূরে কোথাও নির্বাসন দিলে।
‘কোথায় সেটা হতে পারে তেমন কোনো জায়গার কথা ভেবেছেন?
‘রাজস্থানের মরুভূমির মাঝে কোনো দুর্গ কিংবা জয়সলমির দুর্গ-নগরী সম্ভবত ঠিক হবে। সেখানে যে কঠিন পরিশ্রমী আর ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা থাকে, তাদের মধ্যে তিনি খুব একটা সমর্থক পাবেন না।
মাঝখান থেকে তাহার খান বললেন, জাঁহাপনা, আমরা সবাই এই বিষয়ে মোটামুটি একমত যে, আপনার বাবাকে বন্দী করা হবে। কোথায় তাকে রাখা হবে সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার। প্রথমে তাকে আমাদের পাকড়াও করতে হবে। আর রানা যাই বলুন আমার মনে হয় না ব্যাপারটা এত সহজ হবে। আমাদেরকে দ্রুত কাজে লেগে পড়তে হবে।
‘তুমি ঠিক বলেছ তাহাবুর খান। রানা, আজমির দুর্গকে বাইরের সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আর আমার বাবাকে বন্দী করার জন্য আপনার সেনাবাহিনী। কখন রওয়ানা দেবে?
‘আগামীকাল ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে।
‘আমার সেনারাও তাই করবে। তাহাব্বুর খান, তুমি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দাও। কাল ভোরে আমরা মোগল সাম্রাজ্যের একটি নতুন প্রভাত সৃষ্টি করার জন্য রওয়ানা দেব।’ এই প্রথম সম্রাটের ক্ষমতার স্বাদ আর সেই সাথে সঠিক শব্দ চয়ন করতে পেরে আকবর বেশ খুশি হলেন। তার ঠোঁটে মৃদু হাসি দেখা দিল।
*
আজমির দুর্গের মূল আঙিনায় একটি ছড়ানো নিম গাছের ছায়ার নিচে বসে আওরঙ্গজেব চাপরাশিকে হুকুম করলেন, ‘ওয়াজিম খানকে আমার কাছে পাঠাও।’ ওয়াজিম খান ছিলেন তাঁর পুরোনো একজন উজিরের ছেলে। আওরঙ্গজেবের গুপ্তচর চক্রের কেন্দ্রে সে দিন দিন একজন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি হয়ে উঠেছিল। তিনি খুব আশা করতেন তাঁর বাদবাকি উপদেষ্টা আর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও তার মতো কর্মঠ, উদ্ভাবনপটু আর বিচক্ষণ হোক।
কয়েক মিনিট পর কালো পোশাক পরা বলিষ্ঠ ওয়াজিম খান হাজির হল। প্রভুর কাছে ছুটে আসার কারণে সে তখনও একটু একটু হাঁপাচ্ছিল। আওরঙ্গজেব হাতের ইশারায় তাকে তার পাশে বসতে বললেন, এখানে আমার কাছে এসে বস।
ওয়াজিম খান ভ্র থেকে ঘাম মুছে আসন গেড়ে তার পাশে বসতেই ম্রাট জিজ্ঞেস করলেন, ‘আকবর আর তার রাজপুত মিত্রদের খবর কী?
‘ওরা প্রচুর সৈন্য নিয়ে আজমিরের পথে রয়েছে।
‘তাই আশা করেছিলাম। আচ্ছা, দুদিন আগে তুমি যখন আমার সাথে দেখা করেছিলে, তখন আমার ছেলের শিবিরের একজন গণকের কথা বলেছিলে। তুমি বলেছিলে তাকে ঘুষ দিলে সে পঞ্জিকা থেকে গণনা করে ওদেরকে জানাবে যে, বারো দিন পর নতুন চাঁদ উঠার আগে আজমির আক্রমণ করা শুভ নয়। আর এতে আমরা মূল্যবান কিছু সময় হাতে পাব।
হ্যাঁ, আমি লোক পাঠিয়েছি। ওরা ইতোমধ্যেই কিছু সফলতার খবর জানিয়েছে।
যুক্তিসম্পন্ন কোনো মানুষ কি করে যে এইসব আজেবাজে বিষয়ে বিশ্বাস করে তা আমি বুঝি না। যাই হোক, তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে, ওরা এটা বিশ্বাস করে সামনে এগোন আপাতত স্থগিত করেছে। আর তাই যদি হয় তাহলে বাইরে থেকে আমাদের সেনারা হয়তো তাদের আক্রমণের আগেই এখানে পৌঁছতে পারবে। ওরা কতদূর এগোল, জেনেছ কিছু?
কাসিদরা নিশ্চিত করেছে, বিভিন্ন দিক থেকে আপনার বিশ্বস্ত সেনারা দ্রুত এদিকেই ছুটে আসছে। তবে ওরা এখনও বেশ দূরে রয়েছে আর নতুন চাঁদ উঠার আগে অনেকেই এখানে পৌঁছতে পারবে না।’
‘ঐ বিশ্বস্ত সেনাবাহিনীর মধ্যে কী মুয়াজ্জম আছে?
হ্যাঁ, আপনার ছেলে সবার আগে ঘোড়ায় চড়ে এদিকেই আসছেন। আরো কয়েকজনের সাথে তিনি হয়তো বেশ আগেই আপনার কাছে পৌঁছে যাবেন। আমার গুপ্তচরেরা জানিয়েছে তার সদর দফতরের কয়েকজন তরুণ সেনানায়ক তাকে তার ভাইয়ের সাথে যোগ দেবার জন্য অনুরোধ করেছিল, তবে তিনি তাদেরকে জানিয়েছেন যে, তিনি প্রথমে তার বাবা আর নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন।
আওরঙ্গজেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তার ছেলেরা তার বিরুদ্ধে এক হচ্ছে না। তারপর বললেন, ভালো কথা বলেছ। আমি তাকে নতুন দায়িত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করবো আর তার ভাইয়ের অধীনে যেসব জায়গাজমি আছে সেগুলো তাকে দেব। তবে মুয়াজ্জমের শিবিরে যারা আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য তাকে উস্কে দিতে চেয়েছিল তাদের একটা তালিকা আমাকে দাও। সময় এলে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।’
‘অবশ্যই জাঁহাপনা। শাহজাদা আকবরের এগিয়ে আসা থামাতে আর কিছু কি আমি করতে পারি? আমি ইতোমধ্যেই আপনার সেনা কর্মকর্তাদের বলেছি মুসাফিরের ছদ্মবেশে কিছু চর পাঠাতে, যাতে ওরা তার শিবিরে ঢোকার চেষ্টা করে ওদের পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করে। সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আপনার হুকুমে কোষাগার থেকে সৈন্যদের মাঝে অর্থপুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে, আর তা পেয়ে ওরা খুব খুশি হয়েছে। এতে ওদের মনোবল চাঙ্গা হয়েছে আর ওরা নতুন উদ্যমে অনুশীলন করছে, যদিও সংখ্যায় বেশ কম। রসদের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছে অস্ত্রভাণ্ডারে বারুদ, গাদা বন্দুক আর কামানের গোলা যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে। শস্যভাণ্ডার আর পানির আধারগুলোও ভর্তি রয়েছে। কাজেই ওরা যদি দুর্গ অবরোধ করে তাহলে আমরা প্রতিরোধ করতে পারবো।’
‘তোমার কথা শুনে আমি খুশি হলাম। এই মুহূর্তে তোমার জন্য আর কোনো কাজ নেই। আরো দু-একটা বিষয় নিয়ে আমি ভাবছি, তবে তা তোমাকেও বলার আগে আমাকে আরো ভাবতে হবে কিভাবে আকবরের এগিয়ে আসা ব্যাহত করা যায়।
*
বর্শার ডগায় কমলা রঙের লম্বা সরু পতাকা উড়িয়ে অশ্বারোহী দলের প্রথম সারিটি সামনে এগোতেই আকবর মন্তব্য করে উঠলেন, কি সুন্দর লাগছে দেখতে। দুই পাশে তাহাব্বুর খান আর মেবারের রানাকে নিয়ে তিনি তার যুদ্ধহস্তির খোলা হাওদার উপর দাঁড়িয়েছিলেন। ত্রিশ হাজার অশ্বারোহী সেনার বেশিরভাগই ছিল আম্বার ও বিকানিরের রাজপুত আর মারওয়াড় এবং মেবারের অশ্বারোহী সেনা। ক্রমাগত আরো সেনা আসছিল। ওরা সবই চকচকে কমলা, হলুদ আর লাল রঙের রণবেশ আর পাগড়িপরা ছিল। সূর্য আর চন্দ্রের প্রতাঁকের নিচে অগ্নিশিখা সম্বলিত পতাকা ওরা বহন করছিল। ঘোড়ার পিঠে বাদকদল ঢাক আর শিঙায় রক্ত গরম করা রণসঙ্গীত বাজিয়ে চলছিল। আকবরের হাতির সামনে দিয়ে কুচকাওয়াজ করে যাওয়ার সময় সৈন্যরা একযোগে খাপ থেকে তরোয়াল বের করে ঠোঁটে লাগাতেই সকালের রোদ পড়ে তরোয়ালের পাতে ঝিলিক দিয়ে উঠছিল। এক এক সারিতে পঞ্চাশজন ঘোড়সওয়ার থাকলেও প্রায় এক ঘণ্টা লাগলো সবাইকে হাতির সামনে দিয়ে পার হয়ে যেতে।
এরপর এল গোলন্দাজ বাহিনী। প্রথমে এল পানি নিরোধক কাপড়ে ঢাকা বারুদ আর কামানের গোলা বহনকারী শকটগুলো। তারপর এল আট কিংবা দশ চাকার গরুর গাড়িতে টেনে আনা লম্বা নলের কামান। কামান টেনে আনা আঁড়গুলোর শিংয়ে লাল নীল রঙের ফিতা বাঁধা ছিল। গোলন্দাজদের মধ্যে অনেক তুর্কি ভাড়াটে সেনা ছিল। কাঁধে লোহার দণ্ড নিয়ে ওরা কামানের পাশে পাশে হাঁটছিল। দুই তিনজন ইউরোপিয়কে দেখে আকবর বেশ মজা পেলেন। তার কাছে আসতেই কামানের নলের উপর চড়ে বসে ওরা তাদের টুপি নাড়ছিল। রোদে পুড়ে ওদের মুখ লাল হয়ে রয়েছে।
কামানের সারি চলে যাওয়ার পর আকবর তাহব্দুর খানকে বললেন, আজমির দুর্গের অবরোধ যদি শুরু করতে হয় তবে এগুলোই তার জন্য যথেষ্ট। এমন সময় ধূলিধূসরিত পথে পদাতিক সেনারা আসতে শুরু করলো। পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে এরা ছিল সবচেয়ে সাধারণ। অনেকে খালি পায়ে পুরোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, বল্লম আর তীর-ধনুক নিয়ে এসেছে। তাসত্ত্বেও এদেরকেও যথেষ্ট সুশৃঙ্খল মনে হল আর তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওরা তার জয়ধ্বনি করতে করতে গেল।
পরিদর্শন শেষ হওয়ার পর আকবর হাতির পিঠ থেকে নামলেন। রানা আর। তাহাব্বুর খানকে সাথে নিয়ে তিনি একটি অস্থায়ী কাঠের মঞ্চের দিকে হেঁটে চললেন। সেখানে অন্যান্য রাজপুত রাজা আর তার নিজের মোগল জ্যেষ্ঠ সেনানায়করা তার জন্য অপেক্ষা করছিল। নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা মঞ্চের চারপাশে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড গরমে ঘামছিল। সকালবেলা যে কালো মেঘ দিগন্তে দেখা গিয়েছিল, তা এখন মাথার উপর অর্ধেক আকাশ ঢেকে ফেলেছে। ঝড় আসতে আর বেশি দেরি নেই। আকবর ক্ষীপ্রগতিতে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে মঞ্চে উঠে রাজপুত রাজা আর তার সেনাপতিদের তার পেছনে অর্ধবৃত্তাকারে দাঁড়াতে বললেন। তারপর কয়েক পা হেঁটে মঞ্চের সামনে গিয়ে একহাত তুলে সবাইকে চুপ হতে বলে উপরের দিকে মুখ করে নিচে দাঁড়ান নিম্নপদস্থ সেনাপতিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করলেন।
দুই হাত তুলে নিচের সবাইকে আলিঙ্গনের ভঙ্গিতে তিনি বললেন, “আজ আপনাদের শৃঙ্খলা আর বিভিন্ন শাখার অস্ত্রভাণ্ডার দেখে আমি আর আমার সহযোদ্ধা ভাইয়েরা সত্যি অভিভূত হয়েছি। শুধু তাই নয় আপনারা সবাই আমাকে যে দিলখোলা সালাম জানিয়েছেন তাও অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ছিল। আজমির দুর্গ থেকে এই দেওয়ারাই মাত্র দশ মাইল দূরে। আগামীকাল আমরা সামনে এগিয়ে দুর্গ ঘিরে ফেলে আমার বাবা আর তার মুষ্টিমেয় সমর্থকদের আত্মসমর্পণ করতে শক্তি প্রয়োগ করবো। হিন্দু, মুসলিম আর শিখ, সবার কাছ থেকে সমর্থনের বার্তা এসেছে। কাজেই একবার আমার বাবা আমাদের কজায় এলে সমস্ত বিরাধিতা অদৃশ্য হয়ে যাবে। বিজয় আমাদের হবে আর এই সাম্রাজ্য আবার একতাবদ্ধ হবে।
আকবরের বক্তৃতার সাথে সাথে আকাশ থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হল।