রাত আটটা। সত্তর জন সদস্যের চুক্তিপত্রে সই করা হয়ে গেছে। এরা বসে আছে মস্ত একটি হলঘরে। সমস্ত দিনের ধকলে সবাই কিছুটা ক্লান্ত এবং উত্তেজিত। অনিশ্চয়তার একটি ব্যাপার আছে। অনিশ্চয়তা মানুষকে দুর্বল করে দেয়।
হাতি ফকনার ঘরে ঢুকল নটা পনেরয়। এর চেহারায় এমন কিছু আছে, যা দেখলে ভরসা পাওয়া যায়।
হ্যালো, আমি ফকনার, তোমাদের মধ্যে কেউ-কেউ হয়তো আমাকে চেন। কি, চেন না?
কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। এক জন রিক্রুট শুধু দাঁত বের করে হাসল। সম্ভবত সে চেনে।
আমি ছোট্ট একটা বক্তৃতা দেব। কারণ, বক্তৃতার ব্যাপারটি আমার পছন্দ নয়। তোমাদেরও সম্ভবত নয়। এটা অলস মানুষদের একটা শখের ব্যাপার।
মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল। নড়েচড়ে বসল অনেকেই।
আগামীকাল সকাল দশটায় আমরা চলে যাব ট্রেনিং-গ্রাউন্ডে। সেই ট্রেনিংগ্রাউন্ডটি কোথায় তা জানার দরকার নেই। যেটা জানা দরকার সেটা হচ্ছে, ট্রেনিং দেবে কে? যিনি ট্রেনিং দেবেন তাঁর নাম এন্ড্রু জনাথন। কমান্ডো ট্রেনিং-এ তাঁর মতো যোগ্য ব্যক্তি দ্বিতীয় কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। তোমরা নিজেরাও তা বুঝতে পারবে। ট্রেনিংয়ের দ্বিতীয় পর্যায় পরিচালনা করবেন রবিনসন। তাঁর ট্রেনিং এড়ু জনাথনের ট্রেনিংয়ের মতো ভয়াবহ হবার কথা নয়।
সবাই নড়েচড়ে বসল।
আমার এরচে বেশি কিছু বলার নেই। তোমাদের কারো কিছু জিজ্ঞাস্য আছে?
এক জন উঠে দাঁড়াল।
বল, কি জানতে চাও।
মিশনটি সম্পর্কে জানতে চাই।
সে-সম্পর্কে যথাসময়ে জানা যাবে। জানার সময় এখনো হয় নি। আর কিছু?
পারিশ্রমিকের অর্ধেক শুরুতেই দেবার কথা বলা হয়েছিল।
শুরুতেই দেওয়া হবে। যারা ট্রেনিং শেষ করতে পারবে, তাদেরকে পারিশ্রমিকের টাকার অর্ধেক দিয়ে দেওয়া হবে। এখন নয়। আর কিছু বলার আছে?
সবাই চুপ করে রইল।
আজ রাতটা তোমরা নিজেদের মতো কাটাতে পার। এ-শহরে বেশ কিছু সুন্দরী মেয়ে আছে। রাত কাটানোর জন্যে এদের সঙ্গিনী হিসেবে পাবার চেষ্টা করতে পার। কিছুভালোনাইট ক্লাবও আছে। অনেক রকম আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা আছে সেখানে। শুধু একটা জিনিস মনে রাখবে—এখানে রিপোর্ট করতে হবে আগামীকাল সকাল আটটায়।
এক জন উঠে দাঁড়াল। বেশ উঁচু স্বরে বলল, যাদের আমোদ-প্রমোদে যাবার মতো টাকা নেই, তারা কী করবে?
বেন ওয়াটসন শান্ত স্বরে বলল, সবার জন্যে আজ একটি বিশেষ অ্যালাউন্স-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ রাতের জন্যে সবাইকে নগদ দু শ ডলার করে দেওয়া হবে।
প্রচন্ড তালি পড়ল। কয়েক জন একসঙ্গে শিস দিতে শুরু করল।
যে-অস্থিরতা ও উত্তেজনা এতক্ষণ চাপা ছিল তা কেটে যেতে শুরু করেছে। ফকনার মৃদু হাসল। কজন এদের ভেতর থেকে ফিরে আসবে? মনে করা যাক, সব ঘড়ির কাঁটার মতো হবে। ফোর্টনক থেকে বের করে আনা হবে নিশোকে। যথাসময়ে ওদের নেবার জন্যে আসবে ট্রান্সপোর্ট প্লেন। তবুও ক জন ফিরবে? আজ রাতটি কি অনেকের জন্যেই শেষ স্বাধীন রাত নয়? এটা হয়তো তারও শেষ রাত। ফকনার উঠে গিয়ে টেলিফোনের ডায়ার ঘোরাল।
হ্যালো। লিজা ব্রাউন?
কে?
চিনতে পারছ না?
লিজা ইতস্তত করে বলল, ফকনার?
হ্যাঁ, ফকনার। লিজা, পার্লারে কতক্ষণ থাকবে?
রাত এগারটায় বন্ধ হবে।
তুমি কি ডিনার খেয়ে নিয়েছ?
না, কিছুক্ষণের মধ্যেই খাব।
একটা কাজ করলে কেমন হয় লিজা। কোনট-একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যদি আমরা ডিনার খাই, তাহলে কেমন হয়?
লিজা কিছু বলল না। ফকনার বলল, আজ আমার জন্মদিন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
লিজা হেসে ফেলল।
হাসছ কেন?
প্রথম যেদিন তুমি আমাকে বাইরে খেতে বললে, সেদিনও বলেছিলে—আজ আমার জন্মদিন।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ। অবশ্যি আমি সেদিনই বুঝেছিলাম, এটা মিথ্যা কথা।
বুঝতে পেরেছিলে?
হ্যাঁ। মেয়েরা অনেক জিনিস বুঝতে পারে।
আর কী বুঝতে পেরেছিলে?
বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি আমাকে বাইরে খাওয়াতে চাচ্ছ ঠিকই, কিন্তু তোমার হাতে বেশি পয়সা নেই। কাজেই তুমি আমাকে নিয়ে যাবে খুব সস্তা ধরনের কোনো জায়গায়, এবং মেনু দেখে খুব সস্তা কোনো খাবারের অর্ডার দেবে।
তাই দিয়েছিলাম, না?
হা। আজও কি সেরকম হবে?
ফকনার হেসে ফেলল, তোমার বুঝি খুব ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে ইচ্ছা করে? হ্যাঁ। আমার ইচ্ছা করে ফারপোতে ডিনার খেতে। সেখানে ডিনারের মাঝখানে অর্কেস্ট্রা বাজারে আমার প্রিয় গান-ব্লু দানিয়ুব।
আর কি?
এই, আর কিছু না।
তুমি তৈরি থাক, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
ফকনার ফারপোতে দুটি সিট রিজার্ভ করল। অর্কেস্ট্রাকে বলল, র দানিয়ুব-এই গানটি বাজাতে হবে। ফ্লাওয়ার শপে টেলিফোন করে বলল, আগামী এক মাস প্রতি দিন দুটি করে লাল গোলাপ লিজা ব্রাউনের নামে পাঠাতে হবে। কে পাঠাচ্ছে, সেসব কিছুই বলা যাবে না। ঠিকানা হচ্ছে ফার্গো পিজা পার্লার নর্থ অ্যাভি। লিজার বাড়ির ঠিকানা জানা থাকলে ভালো হত। ফকনারের ঠিকানা জানা নেই।