কালীরূপে কতশত পরাৎপরা গো।
অন্নদা ভুবনা বালা : মাতঙ্গী কমলা : দুর্গা উমা কাত্যায়নী বাণী সুরবালা গো।।
সুন্দরী ভৈরবী তারা : জগতে সারা : উন্মুখী বগলা ভীমা ধূমা ভীতিহরা গো।
রাধানাথের দুঃখ ভরা : নাশ গো সত্বরা : কালের কামিনী কালী করুণাসাগরা গো।।
নিবেদন শুনহ ঠাকুর পঞ্চানন। যজ্ঞ দেখিবারে যাব পিতার ভবন।।
শঙ্কর কহেন কটে যার ঘরে যাবে। নিমন্ত্রণ বিনা গিয়া অপমান পাবে।।
যজ্ঞ করিয়াছে দক্ষ শুন তার মর্ম্ম। আমারে না দিবে ভাগ এই তার কর্ম্ম।।
সতী কন মহাপ্রভু হেন না কহিবা। বাপঘরে কন্যা যাবে নিমন্ত্রণ কিবা।।
যত কন সতী শিব না দেন আদেশ। ক্রোধে সতী হৈলা কালী ভয়ঙ্কর বেশ।।
মুক্তকেশী মেঘবরণা দন্তুরা। শবারূঢ়া করকাঞ্চী শব কর্ণপুরা।।
গলিত রুধিরধারা মুণ্ডমালা গলে। গলিতরুধির মুণ্ড বাম করতলে।।
আর বাম করেতে কৃপাণ খরশাণ। দুই ভুজে দক্ষিণে অভয় বরদান।।
লোলজিহ্বা রক্তধারা মুখের দুপাশে। ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাট বিলাসে।।
দেখি ভয়ে মহাদেব ফিরাইলা মুখ। তারা রূপ ধরি সতী হইলা সম্মুখ।।
নীলবরণা লোলজিহ্বা করালবদনা। সর্পবান্ধা ঊর্দ্ধ এক জটাবিভূষণা।।
অর্দ্ধচন্দ্র পাঁচখানি শোভিত কপাল। ত্রিনয়ন লম্বোদর পরা বাঘছাল।।
নীল পদ্ম খড়্গ কাতি সমুণ্ড খর্পর। চারি হাতে শোভে আরোহণ শিবোপর।।
দেখি ভয়ে পলাইতে চান পশুপতি। রাজরাজেশ্বরী হয়ে দেখা দিলা সতী।।
রক্তবর্ণা ত্রিনয়না ভালে সুধাকর। চারিহাতে শোভে পাশাঙ্কুশ ধনুঃশর।।
বিধি বিষ্ণু ঈশ্বর মহেশ রুদ্র পঞ্চ। পঞ্চপ্রেতনিরমিত বসিবার মঞ্চ।।
দেখিয়া শঙ্কর ভয়ে মুখ ফিরাইলা। হইয়া ভুবনেশ্বরী সতী দেখা দিলা।।
রক্তাবর্ণা সুভূষণা আসন অম্বুজ। পাশাঙ্কুশ বরাভয়ে শোভে চারি ভুজ।।
ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাটে উজ্জ্বল। মণিময় নানা অলঙ্কার ঝলমল।।
দেখি ভয়ে মহাদেব গেলা এক ভিতে। ভৈরবী হইয়া সতী লাগিলা হাসিতে।।
রক্তবর্ণা চতুর্ভূজা কমলআসনা। মুণ্ডমালী গলে নানা ভূষণভূষণা।।
অক্ষমালা পুথি বরাভয় চারি কর। ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাট উপর।।
দেখি ভয়ে বিশ্বনাথ হৈলা কম্পিত। ছিন্নমস্তা হৈলা সতী অতি বিপরীত।।
বিকশিত পুণ্ডরীক কর্ণিকার মাঝে। তিন গুণে ত্রিকোণমণ্ডল ভাল সাজে।।
বিপরীত রতে রত রতিকামোপরি। কোকনদ বরণা দ্বিভূজা দিগম্বরী।।
নাগযজ্ঞোপবীত মুণ্ডাস্থিমালা গলে। খড়্গে কাটি নিজমুণ্ড ধরি করতলে।।
কণ্ঠ হৈতে রুধির উঠিছে তিন ধার। একধারা নিজমুখে করেন আহার।।
দুই দিকে দুই সখী ডাকিনী বর্ণিনী। দুই ধারা পিয়ে তারা শবআরোহিণী।।
চন্দ্র সূর্য্য অনল শোভিত ত্রিনয়ন। অর্দ্ধচন্দ্র কপালফলকে সুশোভন।।
দেখি ভয়ে ত্রিলোচন মুদিলা লোচন। ধূমাবতী হয়ে সতী দিলা দরশন।।
অতি বৃদ্ধা বিধবা বাতাসে দোলে স্তন। কাকধ্বজরথারূঢ় ধূম্রের বরণ।।
বিস্তারবদনা কৃশ ক্ষুধায় আকুলা। এক হস্ত কম্পমান আর হস্তে কুলা।।
ধূমাবতী দেখে ভীম সভয় হৈলা। হইয়া বগলামুখী সতী দেখা দিলা।।
রত্নগৃহে রত্নসিংহাসনমধ্যস্থিতা। পীতবর্ণা পীতবস্ত্রাভরণ ভূষিতা।।
এক হস্তে এক অসুরের জিহ্বা ধরি। আর হস্তে মুদ্গর ধরিয়া উর্দ্ধ করি।।
চন্দ্র সূর্য অনল উজ্জ্বল ত্রিনয়ন। ললাটমণ্ডলে চন্দ্রখণ্ড সুশোভন।।
দেখি ভয়ে ভোলানাথ যান পলাইয়া। পথ আগুলিলা সতী মাতঙ্গী হইয়া।।
রক্তপদ্মাসনা শ্যামা রক্তবস্ত্র পরি। চতুর্ভূজা খড়্গ চর্ম পাশাঙ্কুশ ধরি।।
ত্রিলোচনা অর্দ্ধচন্দ্র কপালফলকে। চমকিত বিশ্ব বিশ্বনাথের চমকে।।
মহাভয়ে মহাদেব হৈলা কম্পমান। মহালক্ষ্মীরূপে সতী কৈলা অধিষ্ঠান।।
সুবর্ণ সুবর্ণ বর্ণ আসন অম্বুজ। দুই পদ্ম বরাভয়ে শোভি চারি ভূজ।।
চতুর্দন্ত চারি শ্বেত বারণ হরিষে। রত্নঘটে অভিষেকে অমৃত বরিষে।।
ভারত কহিছে মাগো এই দশ রূপে। দশ দিকে রক্ষা কর কৃষ্ণচন্দ্র ভূপে।।