দ্বাদশ অধ্যায়
মন্ত্রঃ– দৃশানো রুক্স উব্যা ব্যদৌদদুৰ্মৰ্ষমায়ুঃ শ্রিয়ে রুচানঃ। অগ্নিরমৃতোঅভবদ্বয়োবির্যদেনং দৌরজনয়ৎসুরেতাঃ ॥১॥নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে দাপয়েতে শিশুমেকং সমীচী। দ্যাক্ষামা রুল অন্তর্বি ভাতি দেবা অগ্নিং ধারয়ন্দ্রবিণোদঃ ॥২॥ বিশ্বা রূপাণি প্রতি মুঞ্চতে কবিঃ প্রসাবীদ্ভদ্রং দ্বিপদে চতুষ্পদে। বি নামখ্যৎসবিতা বরেণ্যোহণু প্রয়াণমুষসোবিরাজতি।৩৷সুপর্ণোহসি গরুস্ত্রিবৃত্তে সিরো গায়ত্রং চক্ষুবৃহদ্রথন্তরে পক্ষৌ স্তোম আত্মা ছাংস্যঙ্গানি যজুংষি নাম। সাম তে তনূর্বামদেব্যং যজ্ঞাজ্ঞিয়ং পুচ্ছং ধিষ্ণ্যাঃ শফাঃ সুপর্ণোহসি গরুত্মান্দিবং গচ্ছ স্বঃ পত৷৷৷৷ বিষ্ণোঃ ক্রমোহসি সপত্নহা গায়ত্ৰং ছন্দ আবোহ পৃথিবীমন্ বিক্রমস্ব। বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যভিমাতিহা ত্ৰৈষ্ঠুভং ছন্দ আরোহান্তরিক্ষমনু বিক্রম। বিষ্ণো ক্রমোহস্যরাতীয়তো হন্তা জাগতং ছদ আ নোহ দিবমনু বি ক্রমস্ব। বিষ্ণো ক্রমোহসি শয়তো হন্তাহহনুষ্ঠুভং ছন্দ আরোহ দিশোহনু বিক্রম৷৷৷৷ অক্রন্দদগ্নিঃ স্তনয়ন্নিব দৌঃ ক্ষামা রেরিহদ্বীরুধঃ সমঞ্জ। সদ্যো জজ্ঞানো বি হীমিদ্ধো অখ্যদা রোদসী ভানুনা ভাত্যন্তঃ৷৬৷৷ অগ্নেহভ্যাবৰ্ত্তিন্নভি মা নি বর্তযুষা বচসা প্রজয়া ধনেন। সন্যা মেধয়া রয্যা পোষেণ।।৭৷৷ অগ্নে অঙ্গিরঃ শতং তে সন্ত্রাবৃতঃ সহস্রং ত উপবৃতঃ। অধা পোষস্য পোষেণ পুনর্নো নষ্টমা কৃধি পুনর্নো রয়িমা কৃধি।।৮। পুনরূজা নি বর্ত পুনরগ্ন ইষ্যাহত্যুষা। পুনর্নঃ পাহ্যংহসঃ ॥৯৷ সহ রয্যা নি বাগ্নে পিম্বস্ব ধারয়া। বিশ্বপস্ন্যা বিশ্বম্পরি।১০ আ ত্বাইহার্ষমন্তরভূবস্তিষ্ঠাবিচাচলিঃ। বিশত্ত্বা সর্বা বাঞ্ছন্তু মা তৃদ্ৰাষ্ট্ৰমবিশৎ।১১৷ উত্তমং বরুণ পাশমদবাধমং বি. মধ্যমং শ্ৰথায়। অথা বয়মাদিত্য এতে তৰানাগসো অদিতরে স্যাম৷১২৷৷ অগ্রে বৃহনুষসামূৰ্ব্বো অস্থান্নিজগন্ তমসো জ্যেতিষাংগাৎ। অগ্নির্ভানুনা রূশতা স্বঙ্গ আ জাতো বিশ্বা সদ্মন্যপ্রাঃ ॥১৩৷৷ হংসঃ শুচিষসুরন্তরিক্ষসদ্ধোতা বেদিষদতিথিদুরোণসৎ। নৃদ্বরসদৃতসদ বোমসদজা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ৷৷১৪৷৷ সীদ ত্বং মাতুরস্যা উপস্থে বিশ্বান্যগ্নে বয়ুনানি বিদ্বান্। মৈনাং তপসা মাহচিহভি শোচরন্তরস্যাং শুক্র জ্যোতির্বি ভাহি৷৷১৫৷ অন্তরগ্নে রুচা ত্বমুখায়াঃ সদনে স্বে। তস্যাং হরসা তপঞ্জাবেদঃ শিবো ভব৷৷১৬৷ শিববা ভূত্বা মহ্যমগ্নে অথো সীদ শিব। শিবাঃ কৃত্বা দিশঃ সর্বাঃ স্বং যোনিমিহাসদঃ ॥১৭৷ দিম্পরি প্রথমং যজ্ঞে অগ্নিরস্মদ দ্বিতীয়ং পরি জাতবেদাঃ। তৃতীয়ম নৃমণা অজশ্রমিন্ধান এনং জরতে স্বাধীঃ।।১৮।বিদ্মা তে অগ্নে ত্রেধা ত্রয়ানি বিদ্যা তে ধাম বিস্তৃতা পুরুত্ৰা বিদ্যা তে নাম পরমং গুহা যদ্বিদ্যা তমুৎসং যত আজগন্থ৷৷১৯৷৷ সমুদ্রে ত্বা নৃমণা অস্বন্তচক্ষা ঈধে দিবো অগ্ন উধ। তৃতীয়ে ত্বা রজসি তস্থিবাং সমপামুপন্থে মহিষা অবধ৷৷২০৷৷ অক্রন্দদগ্নিঃ স্তনয়ন্নিব দ্যৌঃ ক্ষামা রেরিহদ্বীরুধঃ সমঞ্জ। সদ্যো জজ্ঞানো বিহীমিদ্ধো অখ্যদা রোদসী ভানুনা ভাত্যন্তঃ৷৷২১৷ শ্ৰীণামুদাররা ধরুণো রয়ীণাং মনীষাণাং প্রার্পণঃ সোমগোপাঃ। বসুঃ সূনুঃ সহসো অন্দু রাজা বি ভাত্যগ্র উষসামিধানঃ৷৷২২৷৷ বিশ্বস্য কেতুর্ভুবনস্য গর্ভ আ রোদসী অধৃণাজ্জায়মানঃ বীডুং চিদ্রিমভিনৎ পরায়ঞ্জনা যদগ্নিমযজন্ত পঞ্চ৷২৩৷ উশিপাবকো অরতিঃ সুমেধা মর্তেগ্নিরমৃতো নি ধায়ি। ইয়র্তি ধূমমরুষং ভরিভ্রদুচ্ছক্রেণ শোচি দ্যামিনক্ষ৷৷২৪৷৷ দৃশানো রুক্স উৰ্য্যা ব্যদৌ দুৰ্মৰ্ষমায়ুঃ শ্রিয়ে রুচানঃ। অগ্নিরমৃতো অভবদ্বয়োভিদেনং দৌরজনয়ৎ সুরেতাঃ।।২৫৷ যস্তে অদ্য কৃণবঙদ্রশোচেহপূপং দেব ঘৃতবন্তমগ্নে। প্রতং নয় প্রতরং বসো অচ্ছামি সুম্নং দেবভক্তং যবিষ্ট৷২৬ আতং ভজ সৌবসেম্বগ্ন উথ উথ আ ভজ শস্যমানে। প্রিয়ঃ সূর্যে প্রিয়ে অগ্না ভবাতৃজ্জাতেন ভিনদদুজ্জনিত্বৈঃ২৭৷৷ ত্বমগ্নে যজমানা অনু দ্যু বিশ্বা বসু দধিরে বার্যাণি। ত্বয়া সহ দ্রবিণমিচ্ছমানা ব্ৰজং গোমন্তমুশিজো বি কবুঃ২৮৷৷ অস্তাব্যগ্নির্নরাং সুশেবো বৈশ্বানর ঋষিভিঃ, সোমগোপাঃ। অদ্বেষে দ্যাবাপৃথিবী হুবেম দেবা ধৰ্ত্ত রয়িমম্মে সুবীর৷৷২৯৷৷ সমিধাহগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্বোধয়তাতিথি আহস্মিন্ হবা জুহোতন৷৷৩০৷ উদু ত্বা বিশ্বে দেবা অগ্নে ভরন্তু চিত্তিভিঃ। স নোভব শিবং সুপ্রতীকো বিভাবসুঃ৷৩১৷৷ প্রেগ্নে জ্যোতিষ্মন্ যাহি শিবেরিচিভিষ্ট। বৃহর্ভিানুভির্ভাসম্মা হিংসীম্বা প্রজাঃ।।৩২৷৷ অক্ৰন্দদাগ্নিঃ স্তনযন্নিব দ্যৌঃ ক্ষামা রেরিহীরুধঃ সমঞ্জন। সদ্যো স্তজ্ঞানো বি হীমিদ্ধো অখাদা রোদসী ভানুনা ভাত্যন্তঃ।।৩৩৷৷ প্র প্রায়মগ্নির্ভরতস্য শৃদ্বে বি যৎসূর্যো ন রোচতে বৃহদ্ভাঃ। অভি যঃ পুরুং পৃতনাসু তন্থেী দীদায় দৈব্যো অতিথিঃ শিবো নঃ।।৩৪।। আপো দেবীঃ প্রতি গৃভনীত ভম্মৈমৎস্যোনে কৃণুধ্বং সুরভা উ লোকে। তস্মৈ নমন্তাং জনয়ঃ সুপত্নীৰ্মাতেব পুত্রং বিভৃস্পেনৎ৩৫৷ অস্বপ্নে সধিষ্টব সষেধীরনু রুধ্যসে। গর্ভে সঞ্জায়সে পুনঃ।।৩৬. গর্ভো অস্যোযধীনাং গর্ভো বিশ্বস্য বৃতস্যাগ্নে গর্ভো অপামসি।।৩৭৷ প্ৰসদ্য ভস্মনা যোনিমপশ্চ পৃথিবীমগ্নে। সংসৃজ্য মাতৃভিষ্টং জ্যোতিষ্মন্ পুনরাসদঃ।।৩৮৷৷ পুনরাসদ্য সদনমপশ্চ পৃথিবীমগ্নে। শেষে মাতুর্যাপস্থেহস্তরস্যাং শিবতমঃ।।৩৯৷৷ পুনরুজ্জা নিবৰ্ত্ত পুনরগ্ন ইয়ুষা। পুনর্নঃ।।৪০৷ সহ রয্যা নি বর্তস্বাগ্নে পিন্বস্ব ধারয়া। বিশ্বস্ন্যা বিশ্বম্পরি।।৪১৷৷ বোধা মে অস্য যবিষ্ট সংহিষ্ঠস্য প্রভৃতস্য স্বধাবঃ। পীয়তি ত্বো অনু ত্বো গুণাতি বন্দাররুষ্টে তন্বং বন্দে অগ্নে।।৪২৷৷ স বোধি সূরির্মঘবা বসুপতে বসুদাবনু। যুষোধ্যস্বদ দ্বেষাংসি বিশ্বকর্মণে স্বাহা।।৪৩৷৷ পুনস্ত্রাহবিত্যা রুদ্রা বসবঃ সমিন্ধতাং পুনব্ৰহ্মণ্যে বসুনীথ যজ্ঞৈঃ। ঘৃতেন ত্বং তন্বং বর্ধয়স্ব সত্যাঃ সন্তু যজমানস্য কামাঃ।।৪৪।। অপেত বীত বি চ সর্পতাতে যেহত্র স্থ পুরাণা যে চ নূতনাঃ। অদাদ্যমোহবসানং পৃথিব্যা অকৃমিং পিতরো লোকমস্মৈ৷৷৪৫৷৷ সংজ্ঞানমসি কামধবণং ময়ি তে কামধরণঃ ভূয়াৎ। অগ্নেৰ্ভস্মাস্যগ্নেঃ পুরীষমসি। চিতঃস্থ পরিচিত উচিতঃ শ্ৰধ্বম্৷৬৷৷ অয়ং সো অগ্নিস্মন্ সসামমিঃ সুতং দধে জঠরে বাবশানঃ। সহয়িং বাজমতাং ন সপ্তিং সস সস্তয়সে জাতবেদঃ।৪৭৷ অগ্নে যত্তে দিবি বর্চঃ পৃথিব্যাং যদোষীস্বা যজত্র। যেনান্তরিক্ষমুর্বাততন্থ ত্বেষঃস ভানুরর্ণবো নৃচক্ষাঃ।।৪৮।। অগ্নে দিবো অর্ণমিচ্ছা জিগাস্যচ্ছা দেবাঁ ঊচিযে ধিষ্যা যে। যা নোচনে পরস্তাৎ সুর্যেস্য বাশ্যাবাস্তদুপতিষ্ঠন্ত আপঃ।।৪৯। পুরীষ্যাসো অগ্নযঃ প্রাবণেভিঃ সজোষসঃ। জুষন্তো যজ্ঞমহোহনমীবা ইযো মহীঃ৫০৷৷ ইমগ্নে পুরুংসং সনিং শশ্বত্তমং হবমানায় সাধ। স্যান্নঃ সূনুস্তনয়ো বিজাবাগ্নে সাত সুমতি ভূত্বশ্মে।।৫১।। অয়ং তে যোনিঋত্বিয়ো যতো জাতো অনোচথাঃ। তাং জানম্নগ্ন অ নোহাথা নো বধয়া রযিম্।।৫২৷ চিদসি তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বদ বা সীদ। পরিচিদসি তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্ব বা সীদ।৫৩ লোকং পুণ ছিদ্রং পৃণাথো সীদ। বা ত্ব। ইন্দ্রাগ্নী ত্বা বৃহস্পতিরস্মিন্ যোনাবসীষদ৷৷৫৪৷৷ তা অস্য সূদদোহসঃ সোমং শ্রীণন্তি পৃশ্নয়ঃ। জন্মদোবানাং বিশস্ত্রি নোচনে দিবঃ।।৫৫৷৷ ইন্দ্ৰং বিশ্বা অবীবৃধসমুদ্ৰবাচসং গির। রথীতমং রথীনাং বাজানাং সৎপতিং পতিম্।।৫৬৷৷ সমিতং সংকল্পেথাং সংপ্রিয়ৌ রোচিষ্ণু সুমনস্যমানৌ। ইষমূৰ্জমভি সংবসানৌ।।৫৭৷৷ সং বাং মংসি সংব্ৰতা সমুচিত্তান্যাকরম্। অগ্নে পুরীষ্যাধিপা ভব ত্বং ন ইষমূর্জং যজমানায় ধেহি।।৫৮।। অগ্নে ত্বং পুরীষ্যো রয়িমা পুষ্টিম অসি। শিবাঃ কৃত্বা দিশঃ সর্বাঃ স্বং যোনিমিহাইসদঃ৫৯৷ ভবতং নঃ সমনসৌ সচেতসাবরেপসৌ। মা যজ্ঞং হিংসিষ্টং মা যজ্ঞপতিং জাতবেদসৌ শিৰৌ ভবতমদ্য নঃ।।৬০া৷ মাতেব পুত্রং পৃথিবী পুরীষ্যামগ্নিং স্বে যোনাবভারুখা। ব্যাং বিশ্বৈর্দেঋতুভিঃ সংবিধানঃ প্রজাপতি বিশ্বকর্মা বি মুঞ্চতু।।৬১৷৷ অসুম্বন্তমযজমানমিচ্ছ স্তেনস্যোত্যামম্বিহিতঙ্করস্য। অন্যমম্মদিচ্ছসাত ইত্যানমো দেবী নিঋতে তুভ্যমস্তু।।৬২।। নমঃ সু তে নিঋতে তম্মতেজোহয়স্ময়ং বি চুতা বন্ধমেত। যমেন ত্বং যম্যা সংবিদানোত্তমে নাকে আধি লোহয়ৈন।৬৩৷৷ যস্যান্তে ঘোর অসঞ্জুহোম্যেং বন্ধানামবসর্জনায়। যাং বা জনো ভূমিরিতি প্রমন্দতে নিঋতিং ত্বাহহং পরিবেদ বিশ্বতঃ।।৬৪৷৷ যং তে দেবী নিঋতিরাববন্ধ পাশং গ্রীবাশ্ববিত্য। তং তে বি শ্যাম্যায়ুযো ন মধ্যাদথৈতং পিতৃমক্তিঃ প্রসূতঃ। নমো ভূত্যৈ যেদং চকার।।৬৫৷ নিবেশনঃ সঙ্গমনো বসূনাং বিশ্বা রূপাহভি চষ্টে শচীভিঃ। দেব ই সবিতা সত্যাধর্মেন্দ্রো ন তৗ সমরে পথীনা৷৷৬৬৷৷ সীরা যুঞ্জন্তি কবয়ো যুগা বি তন্বতে পৃথ। ধীরা দেবেষু সুম্নয়া৷৬৭৷৷ যুক্ত সীরা বি যুগা তনুধ্বং কৃতে যোনৌ বপতেহ বীজ। গিরা চ ঞষ্টিঃ সভরা অসমো নেদীয় ইৎসৃণ্যঃ পমেয়াৎ৷৷৬৮৷৷ শুনং সু পালা বি কৃষন্তু ভূমিং শুনং কীনাশা অভি যন্তু বাহৈঃ। শুনাসীরা হবিষা তোমানা সুপিপ্পলা ওষধীঃ কর্তনাস্মৈ৷৷৬৯৷ ধৃতেন সীতা মধুনা সমজ্যতাং বিশ্বৈর্দেবৈরনুমতা মরুদ্ভিঃ। উর্জস্বতী পয়সা পিন্বমানাস্মন্ সীতে পয়সাহভ্যা বৃস্বা৷৭০৷৷ লাঙ্গলংপরীরবৎসুশেবং সোমপিৎসরু। তদুপতি গামবিং প্রফবং চ পীবরীং প্রস্থাবদ্ৰথবাহণ৷৷৭১৷৷ কামং কামদুঘে ধু মিত্রায় বরুণায় চ। ইন্দ্রায়শ্বিভ্যাং পূষ্ণে প্রজাভ্য ওষধীভ্যঃ৭২৷৷ বি মুচ্যধ্বময়্যা দেবাযানা অগন্ম তমসম্পারমস্য। জ্যোতিরাপাম৷৷৭৩৷ সজুরব্দো অয়বোভিঃ সজুরুষা অরুণীভিঃ। সজোষসাবশ্বিনা দংসোভিঃ সজুঃ সূর এতশেন সুজবৈশ্বানর ইডয়া ঘৃতেন স্বাহা।।৭৪৷৷ যা ওষধীঃ পূর্বা জাতা দেবেভস্ত্রিযুগং পুরা। মনৈ নু বজ্রণামহং শতং ধমানি সপ্ত চ৷৭৫ শতং বো অম্ব ধামানি সহস্রমুত বো রুহঃ। অধা শতক্ৰত্বো ঘূয়মিমং মে অগদং কৃত।।৭৬৷৷ ওষধীঃ প্রতি মোদধ্বং পুষ্পবতীঃ প্রসূবরীঃ। অশ্বাইব সজিত্বরী বীরুধঃ পারয়িষ্ণব।৭৭৷৷ ওষধীরিতি মাতরস্তদ্বো দেবীরূপ ব্রুবে। সননয়মশ্বং গাং বাস আত্মানং তব পুরুষ৷৷৭৮৷ অশ্বখে বো নিষদনং পর্ণে বো বসতিস্তৃতা। গোভাজ ইকলাসথ যৎসনবথ পুরুষ৷৭৯৷৷ যত্রৌষধীঃ সমগ্নত রাজানঃ সমিতাবিধ। বিপ্রঃ স উচ্যতে ভিষগ্রহ্মোহামীবচাতনঃ ৮০ অশ্বাবতীং সোমাবতীমূর্জয়ন্তীমুদোজস। আ বিসি সর্বা ওষদীরশ্ম অরিষ্টতাতয়ে৷৮১৷ উছুম্মা ওষধীনাং গাবো গোষ্ঠাদিবেরতে। ধনং সনিয্যন্তীনামা আনং তব পুরুষ৷৷৮২৷৷ ইষ্কৃতির্নাম বো মাতাহখো যূয়ং স্থ নিষ্কৃতীঃ। সীরাঃ পতত্রিণী স্থন যদাময়তি নিষ্কৃথ।৮৩৷৷ অতি বিশ্বাঃ পরিষ্ঠা স্তেন ইব ব্রজমক্রমু। ওষধীঃ প্রাচুচ্যবুর্যৎকিং চ তম্বো রপঃ৮৪৷৷ যদিমা বাজয়ন্নহমোষধীৰ্হস্ত আদধে। আত্মা যক্ষ্মস্য নশ্যতি পুরা জীবগৃভো যথা৷৮৫৷৷ যস্যৌষধীঃ প্ৰসৰ্পৰ্থঙ্গমঙ্গং পরুস্পরু। ততো যং বি বাধ উগ্রো মধ্যমশীরিব।৮৬ সাকং যক্ষ্ম প্র পত চাষেণ কিকিদীবিনা। সাকং বাতস্য ব্রাজ্যা সাকং নশ্য নিহায়া৷৮৭৷৷ অন্য বো অন্যামবত্বান্যানাস্যা উপাবত। তাঃ সর্বাঃ। সংবিদানা ইদং মে প্রাবতা বচঃ।।৮৮৷৷ যাঃ ফলিনীৰ্যা অফলা অপু যাশ্চ পুষ্পিনীঃ। বৃহস্পতি-প্রসূতাস্তা নো মুঞ্চংহসঃ৮৯৷ মুঞ্চন্তু মা শপথ্যাদথো বরুণ্যাদুত। অথো যমস্য পীশাৎ সম্মাদেব-কিন্বিষাৎ৯০৷৷ অবপতন্তীরবদন্দিব ওষধয়স্পরি। বং জীবমশ্নবামহৈ ন সরিষ্যতি পুরুষঃ ৯১। যা ওষধীঃ সোমরাজ্ঞীবী শতবিচক্ষণাঃ। তাসামসি ত্বমুত্তমারং কামায় শং হ্রদে।৯২। যা ওষধীঃ সোমরাজ্ঞীর্বিষ্ঠিতাঃ পৃথিবীমনু। বৃহস্পতিপ্রসূতা অস্যৈ সংদত্ত বীর্য।৯৩৷ যাশ্চেদমুপথন্তি যাশ্চ দূরং পরাগতাঃ। সর্বাঃ সংগত্য বীরুঘোহস্যৈ সংদত্ত বীর্য৷৯৪৷ মা বো রিষৎ খনিতা, যস্মৈ চাহং খনামি বঃ। দ্বিপাচ্চতুষ্পদম্মাকং সর্বৰ্মনাক্রম্৷৯৫৷ ওষধয়ঃ সমবদন্ত সোমেন সহ রাজ্ঞা। যস্মৈ কৃপোতি ব্রাহ্মণস্তং রাজন্ পারয়ামসি৷৯৬৷ নাশয়িত্রী বলাসস্যার্শস উপচিমসি। অথো শতস্য যক্ষ্মাণাং পাকারোরসি নাশনী ॥৯৭৷ ত্বাং গন্ধর্বা অখনামিন্দ্রাং বৃহস্পতিঃ। জ্বামোষধে সোমো রাজা বিদ্বান্ যক্ষ্মাদমুচ্যত৷৯৮ সহস্ব মে অরাতীঃ সহস্ব পৃতনায়তঃ। সহস্ব সর্বং পাম্মানং সহমানাসস্যাষধে৷৯৯৷ দীর্ঘায়ুস্ত ওষধে খনিতা যস্মৈ চ ত্বা খনাম্যহম্। অযথা ত্বং দীঘায়ুভূত্বা শতশা বি রোহতাৎ৷১০০। ত্বমুত্তমাস্যোষধে তব বৃক্ষা উপস্তয়ঃ। উপস্তিরস্তু সোহস্মাকং যো, অশ্ম অভিদাসতি৷১০১৷৷ যা মা হিংসীজ্জনিতা যঃ পৃথিব্যা যো বা দিবং সত্যধর্মা ব্যান। যশ্চাপশ্চান্দ্রাঃ প্রথমমা জজান কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷১০২৷ অভ্যা বর্তম্ব পৃথিবি যজ্ঞেন পয়সা সহ।বপাং তে অগ্নিরিষিততা অরোহৎ।১০৩। অগ্নে যত্তে শুক্রং যচ্চন্দ্ৰং যৎ পূতং যচ্চ যজ্ঞিয়। তদদেবেভ্যো ভরামসি৷৷১০৪৷ ইষমূৰ্জমহমিত আদমৃতস্য যোনিং মহিষস্য ধারা। আ মা গোযু বিশত্বা তনুষু জমি সেদিমনিরামমীবা৷৷১০৫৷৷ অগ্নে তব শ্রবো বয়ো মহি ভ্রাজন্তে অৰ্চয়ো বিভাবসো। বুহানো শবসা বাজমুথ্যং দধাসি দাশুষে কবে৷৷১০৬৷৷ পাবকবৰ্চা শুত্রবচা অনবৰ্চা উদিয়র্ষি ভানুনা। পুত্রো মাতরা বিচরপাবসি পৃণক্ষি রোদসী উডে৷১০৭৷৷ ঊর্জো নপাজ্জাবেদঃ সুশস্তিভিৰ্মন্দস্ব ধীতিভিৰ্তিতঃ। তে ইষঃ.. সন্দধুভূরিবর্পসশ্চিত্রোতয়ো বামজাতাঃ ॥১০৮। ইরজ্যন্নগ্নে প্ৰথয়স্ব জন্তুভিরস্মে রায়ো অমর্ত্য। স দর্শস্য বপুষো বি রাজসি পৃণক্ষি সানসিং ক্রতু৷১০৯৷৷ ইষ্কর্তারমধ্বস্য প্রচেতসং ক্ষয়ন্তং রাধসো মহঃ। রাতিং বামস্য সুভগাং মহীমিষং দধাসি সানসিং রয়ি৷১১০ ঋতাবানং মহিষং বিশ্বদর্শতমগ্নিং সুন্নায় দধিরে পুরো জনাঃ। কর্ণং সপ্রথস্তমং ত্বা গিরা দৈব্যং মানুষ যুগা।১১১৷ আপ্যায়স্ব সমেতু তে বিশ্বতঃ সোম বৃষ্ণ। ভবা বাজস্য সঙ্গথে।১১২। সং তে পয়াংসি সমু যন্তু বাজাঃ সং বৃষ্ণ্যান্যভিমাতিষাহঃ। আপ্যায়মাননা অমৃতায় সোম দিবি শংস্যুত্তমানি ধিত্ব৷১১৩৷ আ প্যায়স্ব মদিন্তম সোম বিশ্বেভিরংশুভিঃ। ভবা নঃ সপ্রথমঃ সখা বৃধে।১১৪৷ আ তে বৎসো মনো যমৎপরমাচ্চিৎসধস্থা। অগ্নে ত্বাঙ্কাময়া গিরা৷৷১১৫৷৷ তুভ্যং তা অঙ্গিরস্তম বিশ্বাঃ সুক্ষিতয়ঃ পৃথ৷৷ অগ্নে কামায় যেমিরে৷১১৬৷ অগ্নিঃ প্রিয়েযু ধামসু কামো ভূতস্য ভব্যস্য। সম্রাডেকো বিরাজতি।১১৭৷৷
[কাণ্ড–১১৭, মন্ত্র সংখ্যা–১২৯]।
.
মন্ত্ৰার্থঃ— ১। [এই দ্বাদশ অধ্যায়ে উখার উপর ধারণীয় মন্ত্রের সংগ্রহ আছে। যজমান একটি স্বর্ণহার গলে ধারণ করেন, তার নাম রূক্স। বাস্তবিক এই রূক্স সূর্যের প্রতীক। এখানে সূর্যের স্তুতিই করা হয়েছে]। আপন মহতী জ্যোতিতে প্রকাশিত এই দৃশ্যমান সূর্য পূর্ব দিকে উদয় প্রাপ্ত হয়েছেন। সমগ্র দিনব্যাপী এঁর জীবন (অধিষ্ঠান) সৰ্বৰ্থা দুর্ধর্ষ (অর্থাৎ অপরাজেয়)। ইনি শোভাপ্রাপ্ত হওয়ার নিমিত্ত দীপ্তিকে ধারণ করে থাকেন। সূবীর্যা দ্যুলোক যখন এই সূর্যকে প্রকট করেন, তখন হবিরান্নের দ্বারা অগ্নি অমৃতত্ব (অর্থাৎ দেবত্ব) প্রাপ্ত হয়েছিলেন (অর্থাৎ হবিরান্নে অগ্নিকে তৃপ্ত করা হয়েছিল বা হোম প্রারম্ভ করা হয়েছিল)
২। সমান চিত্ত তথা সমান প্রেমভাগে আপন আপন কালযাত্রাকারী, পরন্তু স্বরূপে শুক্লকৃষ্ণ হয়ে পরস্পর বিপরীত বর্ণশালী এই দিন-রাত্রি এই এক অগ্নিশিশুকে স্তন্যপান (অর্থাৎ হবিরাদি লাভ) করায় (বা সকাল-সন্ধ্যায় হোম সম্পন্ন করায়)। যেমনই এবং যখন পর্যন্ত (সায়ংকাল) এই প্রকাশমান রূক্স (সূর্য) দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যভাগে (অন্তরিক্ষে) চমকতা সৃষ্টি করে, সেইরকমই ধন (প্রাণ) দানকারী দেবগণ এই অগ্নিকে (বা অগ্নিহোত্রকে) ধারণ করেন, আমিও সেই অগ্নিকে ধারণ (বা তৃপ্ত) করছি৷
৩। ক্রান্তদ্রষ্টা এই সূর্য আপন কিরণকে বিবিধ রূপে ব্যক্ত করেন বা অন্ধকারাচ্ছন্ন পদার্থের বিবিধ কার্যকে প্রকাশিত করে। সেই সূর্য দ্বিপাদ মনুষ্য ইত্যাদি ও চতুষ্পদ গো ইত্যাদি পশুর নিমিত্ত কল্যাণ (স্ব স্ব ব্যাপারে নিরত) উৎপন্ন করে। এই বরণীয় সূর্য স্বর্গকে প্রকাশিত করে থাকেন। এই সূর্য উষার গমনের পর আকাশে শোভায়মান হয়ে থাকে।
৪। হে সবিতাদেব! তুমি গরূড়ের স্বরূপ। ত্রিবৃৎ সাম তোমার শির; গায়ত্ৰ সাম তোমার আঁখি; বৃহৎসাম ও রথন্তর সাম তোমার দুই পক্ষ। পঞ্চদশস্তোম তোমার অন্তঃকরণস্থানীয়; সাতটি ছন্দ তোমার অঙ্গ; সকল যজু তোমার নাম; বামদেব্য সাম তোমার শরীর; যজ্ঞাযজ্ঞিয় সাম তোমার পুচ্ছ, তথা হোত্র ইত্যাদি ধিষ্ণন্যসমূহে (অর্থাৎ যথাযথ স্থানে) স্থিত অগ্নিসমূহ তোমার হস্ত বা পদের পাঞ্জা বা খুর। হে সবিতৃদেব! তুমি শুভগতি গরুড়পক্ষী। তুমি দ্যুলোকে গমন করো এবং স্বর্গে উড্ডয়ন করো।
৫। [যজমান চারটি যজুমন্ত্র সহকারে পূর্বদিকে চার কদম অগ্রসর হন। তখন যজমান স্বয়ংই নিজেকে এই অগ্নির সাহচর্যে যজ্ঞের অভিমানী দেব বিষ্ণুরূপে মান্য করে থাকেন। হে আমার প্রথম পাদন্যাস! তুমি বিষ্ণুর (বা যজ্ঞদেবের পান্যাস স্বরূপ। তুমি শত্রুর বিনাশকারী; তুমি গায়ত্রী ছন্দের উপর আরূঢ় হও এবং এই পৃথিবীকে বিকসিত করে নাও (জয় করো)। হে আমার দ্বিতীয় পাদন্যাস!তুমি বিষ্ণুর প্রক্রম তুমি অভিমানী শত্রুকে হননকারী; তুমি ত্রিষ্টুপ ছন্দের উপর আরূঢ় হও এবং অন্তরিক্ষকে বিক্রমিত করে নাও (অর্থাৎ বিক্রমের দ্বারা অধিকার করো)। হে তৃতীয় পাদন্যাস! তুমি বিষ্ণুর প্রক্রম। তুমি অদাতৃত্ব আচরণকারী (অর্থাৎ দান করতে পরাম্বুখ) জনের বিনাশকারী; তুমি জগতী ছন্দের উপর আরূঢ় হও এবং দ্যুলোককে অনুক্রান্ত করে নাও। হে আমার চতুর্থ পাদন্যাস! তুমি বিষ্ণুর চতুর্থ পাদন্যাস।তুমি শত্ৰুত্ব আচরণকারীগণের বিনাশক; তুমি অনুষ্টুপ ছন্দের উপরে আরূঢ় হও এবং এই পূর্ব ইত্যাদি চারটি দিক-বিদিককে আপন পরাক্রমে অনুক্রমিত (বা বিজিত) করে নাও।
৬। মেঘের ন্যায় গর্জিত হয়ে অগ্নি নিনাদ করছে। মেঘের ন্যায়ই এ (এই অগ্নি) পৃথিবীকে সর্বথা লোহন করছে, তথা লতা ইত্যাদিতে ব্যাপ্ত করছে। অরনিমন্থন হতে তৎক্ষণাৎ উৎপন্ন হয়ে এই অগ্নি অত্যন্ত প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে। এই অগ্নি আপন প্রকাশের দ্বারা সকল বস্তু মাত্রকেই প্রকাশিত করে থাকে এবং দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে, মেঘের মধ্যস্থ বিদ্যুতের মতো, আপন প্রকাশে বা দীপ্তিতে প্রদীপ্ত দান করে থাকে৷৷
৭। হে আমার সম্মুখে আগমনকারী অগ্নি!তুমি আয়ু, ব্রহ্মতেজঃ, সন্তান, ধন, অভীষ্টলাভ, ধারণাবতী বুদ্ধি, সুবর্ণালঙ্কারী তথা গো-অশ্ব ইত্যাদির পুষ্টির সাথে সাথে আমাদের সম্প্রপ্ত হও।
৮। হে অঙ্গে অঙ্গে রসভূত অথবা অঙ্গসৌষ্ঠবসম্পন্ন অগ্নি! আমাদের প্রতি অতিশয় প্রেমবশ তোমার শত শত আবৃত্তি (অর্থাৎ স্বয়ংই অসংখ্য বার আগমন) আমাদের যজ্ঞস্থানে সম্ভব হোক এবং তোমার দ্বারা প্রদীয়মান ধন-পশু ইত্যাদির উপবৃত্তিগুলি (অর্থাৎ সপ্রাপ্তিগুলি) সহস্র সহস্র হোক। হে অগ্নি! তোমার আবৃত্তি ও উপবৃত্তিগুলি দ্বিগুণিত-চতুগুৰ্ণিত হোক (অর্থাৎ অধিক অধিক ধন প্রদান করুক), সেগুলির দ্বারা তুমি আমাদের নষ্ট ধন-পশু ইত্যাদিগুলিকে পুনরায় সম্প্রপ্ত করাও। হে অগ্নি! আমাদের গো-অশ্ব-ধনকে পুনরায় সিদ্ধ (সপ্রাপ্ত) করাও।
৯। হে অগ্নি! তুমি পুনরায় আমাদের বলবীর্যে সম্পন্ন করো; পুনরায় আমাদের অন্ন ও আয়ুর সাথে সম্প্রাপ্ত হও। এখানে এই যজ্ঞে আগমন পূর্বক, হে অগ্নি! তুমি পুনঃ পুনঃ পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো।
১০। হে অগ্নি! তুমি ধনের সাথে আমাদের সম্প্রপ্ত হও। হে অগ্নি! বৃষ্টিধারা যেমন সকলের উপর বর্ষণকারী, সেইভাবে সমগ্র বিশ্বের উপর ধন আসিঞ্চিত (অর্থাৎ বর্ষণ) করো।
১১। হে অগ্নি! আমি তোমাকে আহুত করেছি। তুমি এই উখার মধ্যে স্থিত হও। তুমি এর মধ্যে সম্পূর্ণ অচঞ্চল তথা স্থিরমান হয়ে উপবেশন করো, সকল প্রজা তোমাকে কামনা করুক এবং সমগ্র রাষ্ট্র (বা রাজ্য) তোমার পরিচর্যা (যজ্ঞ ইত্যাদি কর্ম) হতে যেন ভ্রষ্ট না হয়।
১২। হে বরণীয় পরমাত্মা (বরুণ)! আমাদের মস্তকস্থ বন্ধন (পাশ) দূর করো; নিম্নে পাদভাগস্থ বন্ধন দূর করো এবং দেহের মধ্যভাগে (অর্থাৎ বক্ষ ইত্যাদিতে) বিলগ্ন বন্ধনকে শিথিল করো। হে অদিতির পুত্র বরুণ! নিষ্পাপ আমরা এখন যেন তোমার যজনকর্মে যোগ্য হই এবং অদিতির প্রতিও আমরা যেন অনাগস (অর্থাৎ অপরাধহীন) হতে পারি৷
১৩। [এইখানে অগ্নিকে আদিত্যরূপে স্তুতি করা হচ্ছে]। উষার অগ্রেই মহান্ অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে স্থিত হয়েছে। সেই অগ্নি রাত্রির অন্ধকারকে পার করেছে। জ্যোতির সাথে সে সূর্যরূপে সম্মুখে এসেছে। শোভন অঙ্গশালী অগ্নি অন্ধকার ইত্যাদি নাশকারী আপন জ্যোতির সাথে প্রকট হয়েছে এবং উৎপন্ন হওয়া মাত্রই সমস্ত লোক-লোকান্তরকে (আলোকে) ব্যাপ্ত করেছে৷৷
১৪। গমনশীল, পবিত্র স্থানে স্থিতিশীল, স্বয়ং ধনস্বরূপ বা সকলকে বসতি দানকারী, অন্তরিক্ষে স্থিতিশীল, দেবগণকে আহ্বানকারী, বেদিতে স্থিতিশীল অতিথিস্বরূপ বা সর্বপূজ্য, যজ্ঞগৃহে স্থিতিশীল, মনুষ্যের মধ্যে জঠরাগ্নি বা প্রাণরূপে স্থিতিশীল, শ্রেষ্ঠস্থানে স্থিতিশীল, আকাশে বিদ্যুৎরূপে স্থিতিশীল, জলে উৎপন্ন, গো-ইত্যাদিতে ঘৃত ইত্যাদি রূপে উৎপন্ন, সত্যে (যজ্ঞে) অরণিমন্থনে উৎপন্ন স্বয়ং পরমসত্য ও অত্যন্ত মহান এই অগ্নি (তৎস্বরূপ পরমাত্মা)।
১৫। হে অগ্নি! সকল প্রজ্ঞানভাগে জ্ঞানশালী তুমি এই মঞ্চে বা উখারূপ মাতৃক্রোড়ে উপবেশন করো। আপন তাপে বা আপন জ্বালা-উত্মায় তুমি এই স্থানকে তাপিত করো না। তুমি এই উখার মধ্যে শুভ্রজ্যোতিতে সদা দেদীপ্যমান হও।
১৬। হে অগ্নি! আপন গৃহরূপ এই উখার মধ্যে তুমি আপন কান্তিতে পূর্ণভাবে প্রকাশিত হও। আপন তেজঃ প্রভাবে এই উখাকে তাপিত করেও, হে অগ্নি! তুমি এর প্রতি (এই উখার প্রতি) কল্যাণকারী হও
১৭। হে অগ্নি! আমার নিমিত্তও তুমি কল্যাণকারী হয়ে আপন শিবস্বরূপে (বা মঙ্গলময় রূপে) এই উখায় স্থিত হও। সকল দিককে কল্যাণকারিণীরূপে প্রস্তুত করে, হে অগ্নি! তুমি আপন যোনিভূতা এই উখায় স্থিত হও।
১৮। সর্বপ্রথম আদিত্যরূপে অগ্নি দুলোকে উৎপন্ন হয়েছিল। উৎপন্ন হয়ে লভ্য এই অগ্নি আমাদের অরণিমন্থন হতে দ্বিতীয় রূপে (প্রথম উৎপত্তির পরে) উৎপন্ন হয়েছিল। মনুষ্যের কল্যাণ কামনাকারী এই অগ্নি (যজ্ঞ ইত্যাদির অনন্তরে) মেঘে (অথবা সমুদ্রে) বিদ্যুতাগ্নি (ঝ বড়বাগ্নি অথবা উভয়) রূপে উৎপন্ন হয়েছিল। জলে নিহিত বিদ্যুতাগ্নি (বা বড়বাগ্নি অথবা উভয়াগ্নি), সেই জল হতে সামিধ্যমান হয়ে সতত সেই জলকে ক্ষপিত (অর্থাৎ বর্ষিত) করতে থাকে। (অজস্র-জন্মা এই অগ্নিকে যজমান প্রজ্বলিত করে আপন জরা পর্যন্ত পরিচর্যা করে থাকেন)।
১৯৷ হে অগ্নি! আদিত্য, পার্থিবাগ্নি ও বিদ্যুতাগ্নি রূপে তোমার তিন জন্ম সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত আছি। তারা (সেই রূপত্রয়) দ্যুলোক পৃথিবী ও অন্তরিক্ষে স্থিত (তা-ও আমরা জ্ঞাত আছি)। পরন্তু সেই সাথে কাষ্ঠ ইত্যাদি গত সর্বত্র তোমার সূক্ষ্ম ব্যাপকতাও আমরা জ্ঞাত আছি। তোমার যে প্রাণস্বরূপ অত্যন্ত নিভৃতস্বরূপ আছে, আমরা তা-ও জ্ঞাত আছি। আমরা সেই পরমাত্মস্রোতকেও জ্ঞাত আছি, যে স্থান হতে তুমি সকল স্বরূপে অবতরিত হয়েছ৷
২০। সমুদ্রের (অন্তরিক্ষের) মধ্যে সর্বকল্যাণকারী সেই প্রজাপতি আছেন, হে অগ্নি! তুমি তাকে সমিন্ধিত (সম্যগ দীপ্ত) করে থাকো। হে অগ্নি! জলের মধ্যে বড়বাগ্নিরূপেও সেই সর্বদ্রষ্টা পরমাত্মা তোমাকে প্রজ্বলিত রাখেন। হে অগ্নি আদিত্যরূপে যখন তুমি দ্যুলোকের উৎসে (স্তনে) লগ্ন থাকো, (তখনও সেই প্রজাপতি তোমাকে প্রকাশিত করে রাখেন। তৃতীয় এই পার্থিবলোকে স্থিত তথা জলের ক্রোড়ে (জঠরাগ্নিরূপে) বিদ্যমান তুমি অগ্নির প্রাণ সমিন্ধিত করতে থাকো।
২১। মেঘের ন্যায় গর্জন পূর্বক অগ্নি নিনাদ করছে। সে পৃথিবীকে মেঘবর্ষণের ন্যায় অত্যন্ত লেহন করে এবং দাবাগ্নি রূপে লতাবল্লীকে ব্যাপ্ত করে। তৎক্ষণাৎ উৎপন্ন হয়ে সে দ্যাবাপৃথিবীকে প্রকাশিত করে এবং আপন প্রকাশে (দীপ্তিতে) তাদের মধ্যে চমকতার (দীপ্তির) সঞ্চার করে৷৷
২২। সম্পত্তির দাতা, ধনের ধারণ ধারণকর্তা, অভিলষিত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপক, সোমের রক্ষক, ধনস্বরূপ বা সকলের সফলের বাসক, বলের পুত্র, জলে বরুণরূপে রাজা এবং অত্যন্ত উগ্ৰস্বভাব এই অগ্নি উষাকালে প্রজ্বলিত হয়ে বিভাসিত (শোভান্বিত) হচ্ছে।
২৩৷ এই অগ্নি বিশ্বের প্রকাশক; এ ভুবনের গৰ্ভরূপ (প্রাণরূপে ভুবনে ব্যাপ্ত হয়ে আছে)। উৎপন্ন হয়ে সে স্বপ্রকাশ ইত্যাদিতে দ্যাবাপৃথিবীকে ব্যাপ্ত করে নিচ্ছে। ইন্দ্ররূপে সে দৃঢ় পর্বতকেও (বা মেঘকেও) বিদীর্ণ করে ফেলছে–যখন চারজন ঋত্বিক ও পঞ্চম যজমান মিলিত হয়ে এই অগ্নির পূজন (যজ্ঞ) করতে থাকেন।
২৪। কমনীয়, পবিত্রকারী, দুষ্টের প্রতি প্রেমরহিত তথা সুষ্ঠু মেধাবী এই অমর অগ্নি মনুষ্যগণের মধ্যে তাদের কামনা ইত্যাদি পূর্ণকারী করে আহ্বানীয়াগ্নি প্রভৃতি রূপে নিহিত হয়ে আছে। এই অগ্নি অরোমান ধূমকে (ধোঁয়াকে) উপরে ছড়িয়ে দেয়। বর্ষা ইত্যাদির দ্বারা সে জগতের ভরণ-পোষণ করে এবং সে আপন শুভ্র দীপ্তিতে দ্যুলোক পর্যন্তকেও ব্যাপ্ত করে।
২৫। পরিদৃশ্যমান এই রূক্সাভ (স্বর্ণাভ) আপন মহতী আভায় বিভাসিত হচ্ছে। সে আপন প্রজ্বলিত ক্ষণে স্পর্শযোগ্য বা সহনীয় নয়। সে শোভার নিমিত্ত প্রকাশিত হয়ে থাকে। বিবিধ হবিরান্নে এই অগ্নি দেবত্বকে প্রাপ্ত করে–যখন এতে দ্যুলোক সুষ্ঠু বল উৎপন্ন করে (অর্থাৎ যখন দ্যুলোকে সূর্যের উদয় হয় এবং সেই সূর্যোদয় দর্শনে লোকে যজ্ঞ প্রারম্ভ করে, তখন সে যজ্ঞের অগ্নিরূপে দেবত্বকে প্রাপ্ত করায়)।
২৬। হে দ্যোতমান শুভদীপ্তি অগ্নি! অদ্য (প্রতিপদে) যে যজমান ঘৃতে নিমজ্জিত করা (ডুবানো) পুরোশকে তোমার নিমিত্ত পাক করেছেন–হে যুবতম এবং সর্বত্র ব্যাপ্ত অগ্নি! সেই যজমানকে অদ্য দেবতাবর্গের দ্বারা উপভোগ্য স্বর্গ ইত্যাদি সুখের অভিমুখ প্রাপ্ত করাও৷৷
২৭। হে অগ্নি! সেই যজমানকে তুমি সুকীর্তিকারী যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মে নিরত করো এবং তার প্রতি নিষ্কৈবল্য-প্রগাথ ইত্যাদি রূপ সেই সেই (যথাযথ) শাস্ত্র পাঠ করতে আসেবিত করো (অর্থাৎ সেই কর্ম ও স্তোত্র ইত্যাদিতে নিরত করো) এই রকমে তোমার দ্বারা আসেবিত (যজ্ঞকর্মে নিযুক্ত) সেই যজমান সূর্যের প্রিয় হয়ে থাকেন এবং তিনি অগ্নিরও প্রিয় হয়ে থাকেন (অর্থাৎ অগ্নি ও সূর্যের প্রিয়ভাজন হয়ে থাকেন)। তিনি উৎপন্ন (জাত) পুত্রের বৃদ্ধি প্রাপ্ত হন এবং (অজাত বা ভাবী)পৌত্র-প্রপৌত্র হতে মহতী অভিবৃদ্ধি সম্প্রপ্ত হন৷৷
২৮। হে অগ্নি! প্রতিদিন তোমাকে যজনকারী যজমান সকল বরণীয় রত্ন ইত্যাদি ধন সম্প্রপ্ত হন। তোমার পরিচরণের (পরিচর্যার) সাথে গোধন কামনাকারী উশিক জন (অর্থাৎ জ্ঞানকর্মসমুচ্চয়কারী মেধাবীগণ), হে অগ্নি! পূর্বকালে পণিগণের দ্বারা (দস্যুদের দ্বারা) চুরিকৃত ও গোপন রক্ষিত গাভীগণকে মুক্ত করেছিলেন (বা দেব্যানমার্গ ভেদ করে গো-ধন উদ্ধার করেছিলেন) ॥
২৯। মনুষ্যগণকে সুখে সেবনকর্তা (সুখ প্রদানকারী) অগ্নি এই প্রকারে জ্ঞানী ঋত্বিগণের দ্বারা সংস্তুত হয়েছে। সেই অগ্নি সকলের নেতা (অর্থাৎ পরিচালক বা নির্বাহক) এবং সোমের সংরক্ষক। আমরা দ্বেষরহিত দ্যাবাপৃথিবীর আহ্বান করছি। হে দেবগণ! তোমরা আমাদের মধ্যে সুষ্ঠু বীর্যশালী পুত্রযুক্ত গো-অশ্ব ইত্যাদি ধন নিহিত করো (প্রদান করো)।
৩০। হে ঋত্বিক যজমান ইত্যাদি! আপনারা সমিধসমূহের দ্বারা এই অগ্নির পরিচরণ করুন। অতিথি অপেক্ষা পূজ্য এই অগ্নিকে ঘৃত ইত্যাদিতে সমিন্ধিত করুন, তথা পূর্ণ প্রজ্বলিত এই অগ্নিতে বিবিধ হবিরান্নের দ্বারা হোম করুন।
৩১। হে অগ্নি! প্রাণস্বরূপ বিশ্বদেবগণ তোমাকে আপন বুদ্ধিবৃত্তির সাথে। উর্ধ্বে ধারণ করুক। সুন্দর মুখ ও প্রভাধন তুমি, হে অগ্নি! তুমি আমাদের প্রতি কল্যাণকারী হও।
৩২। হে অগ্নি! তুমি আপন কল্যাণকারী জ্বালার সাথে এই স্থান হতে প্রস্থান করো। তুমি আপন বৃহৎ বৃহৎ জ্বালার দ্বারা ভাসমান (উজ্জ্বল) হয়ে স্বশরীরে আমাদের সন্তানগণকে হিংসিত করো না।
৩৩। মেঘের ন্যায় গর্জন পূর্বক অগ্নি নিনাদ করছে। বর্ষণ ইত্যাদির দ্বারা মেঘের ন্যায় সে (দাবাগ্নিস্বরূপ হয়ে) পৃথিবীকে অত্যন্ত লেহন করছে এবং লতা-বল্লরীতে (অর্থাৎ ওষধিসমূহে) সংসক্ত হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ উৎপন্ন (জাতমাত্র) হয়ে সে দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে বিদ্যমান সকল পদার্থকে প্রকাশিত করছে এবং তার মধ্যে (অর্থাৎ দ্যুলোক ও ভূলোকের মধ্যে) স্বপ্রকাশে (আপন দ্যুতিতে) ভাসমান হচ্ছে।
৩৪। এই অগ্নি যজমানের আহ্বান শ্রবণ করে; সে সূর্যের ন্যায় মহতী আভাশালী (দীপ্তিময়) হয়ে প্রকাশিত হয়ে থাকে; যুদ্ধে এই অগ্নি রাজা পুরুর (অর্থাৎ রাক্ষস হন্তারক ইন্দ্রের) সহায়ক হয়েছিল। আমাদের কল্যাণকারী দৈবী অতিথি এই অগ্নি অত্যন্ত দেদীপ্যমান হয়ে আছে।
৩৫। (নদী বা পুষ্করিণীর জলে উখার ভস্ম নিক্ষেপ করার পর) হে জলদেবীগণ (বা জলরাশি)! তোমরা এই ভস্মকে সহর্ষে স্বীকার করো। তোমরা এই ভস্মকে সুখকারী ও সুগন্ধিত স্থানে ধারণ করো। বরুণের সুপত্নী স্ত্রীগণ এর (অর্থাৎ এই ভস্মের) সেবার নিমিত্ত নমিত থোক। মাতা যেমন পুত্রকে ধারণ করেন, সেই রকম এই বরুণপত্নীগণ ভস্মকে জলে ধারণ করুক৷
৩৬। হে অগ্নি! জলের মধ্যে তোমার সহস্থিতি (বা স্থান) আছে। জলের মধ্যে তুমি বীজে প্রবেশ পূর্বক ওষধি-লতারূপে (বা ওষধিরূপে) অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধি লাভ করে থাকে। এই রকমে সেই সেই লতা-গুল্ম ইত্যাদির মাধ্যমে পুনঃ প্রকট হতে থাকো।
৩৭। হে অগ্নি! তুমি (ভেষজ হতে উৎপন্ন হওয়ায়) ওষধির গর্ভ, তুমি (অরণি হতে জাত হওয়ায়) বনস্পতির গর্ভ। তুমি (জঠরাগ্নিরূপে) সমস্ত ভূতমাত্রের (অর্থাৎ প্রাণিজাতের) গর্ভরূপ এবং তুমি বাড়বাগ্নি ও বিদ্যুতাগ্নিরূপে জলেরও গর্ভ ॥
৩৮। হে অগ্নি! জল ও পৃথ্বীরূপ আপন স্থানকে সম্প্রপ্তি পূর্বক তুমি অত্যন্ত কল্যাণকারী হয়ে এই উখার অভ্যন্তরে ঐভাবে শয়ন করে থাকো, যেমন শিশু তার মাতার ক্রোড়ে শায়িত থাকে।
৩৯। হে অগ্নি! তুমি পুনরায় আমাদের বলবীর্য সম্পন্ন করো। পুনরায় অন্ন ও আয়ুর সাথে আমাদের সম্প্রাপ্ত হও।
৪০। হে অগ্নি! এইস্থানে এই যজ্ঞে সপ্রাপ্ত হয়ে (অর্থাৎ আগমন করে) তুমি আমাদের পুনরায় পাপ হতে রক্ষা করো৷৷
৪১। হে অগ্নি! তুমি গো অশ্ব ইত্যাদি ধনের সাথে আমাদের সম্প্রপ্ত হওঁ এবং সর্বমঙ্গলা বর্ষার ধারায় এই পৃথিবীর উপর সর্বত্র লতা-বনস্পতির বৃদ্ধি সাধন করো।
৪২। হে অন্নবান্ ও অত্যন্ত যুবা অগ্নি! আমার এই অতিশায়িত তথা তোমার শ্রোত্রপথ-প্রাপিত বচনসমূহ (অর্থাৎ স্তোত্রসমূহ) তুমি শ্রবণ করো জ্ঞাত হও। এক ব্যক্তি (অর্থাৎ কেহ) আক্রোশ বশে তোমার নিন্দা করে এবং অন্য এক ব্যক্তি (অর্থাৎ অপর কেহ) তোমার স্তুতি করে থাকে। হে অগ্নি! বন্দনশীল আমি তোমার শরীরের বন্দনা করি।
৪৩। হে ধনস্বামী! হে ধনের প্রদাতা অগ্নি! বিদ্বান্ ও ধনবান্ তুমি, আমাদের অভিপ্রায় অনুজ্ঞাত হও। হে অগ্নি! তুমি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে (অর্থাৎ সুপ্রীত হয়ে) দৌর্ভাগ্যসমূহ দূর করো। সর্বকর্মক্ষম অগ্নির নিমিত্ত এই আহুতি প্রদান করছি৷৷
৪৪। উপশান্ত তোমাকে আদিত্য-রুদ্র-বসুগণ পুনরায় প্রজ্বলিত করুক এবং হে ধনের নেতা অগ্নি! যজ্ঞের দ্বারা যজমান পুরোহিত ইত্যাদিগণও তোমাকে পুনঃ পুনঃ প্রবুদ্ধ করুন। ঘৃতের দ্বারা তুমি আপন জ্বালা-শরীরকে বর্ধিত করো। তোমার তৃপ্তির দ্বারা আমাদের এই যজমানের সকল সঙ্কল্প সফল হোক।
৪৫। হে যমদূতবর্গ! তোমরা পুরাতন যারা এইস্থানে আছ, কিংবা তোমাদের নবীন যারা এইস্থানে বিদ্যমান, সকলেই এই স্থান হতে এখনই অপগমন করো (হটে যাও); দূরে অপগত হও এবং বহু দূর ভাগে গমন করো। এই স্থানটি যম স্বয়ং এই যজমানকে প্রদান করেছেন এবং স্বয়ং পিতৃগণও এঁর নিমিত্ত (অর্থাৎ এই যজমানের নিমিত্ত) এই স্থানকে নিশ্চিত (অর্থাৎ স্থির বা নির্ধারণ করেছেন।
৪৬। হে ঊষা (বা লোনা অর্থাৎ লবণাক্ত)! তুমি গো ইত্যাদি পশুগণের সম্যক্ জ্ঞানসাধক (অর্থাৎ পশুগণ লবণাক্ত স্থানকে জ্ঞাত হয়ে লেহন প্রারম্ভ করতে থাকে)। তুমি কামনাসমূহের ধারক (অর্থাৎ যজ্ঞের দ্বারা মনোরথ-সম্পন্নকারী) তোমার মনোরথ সম্পাদকত্ব আমাতে (অর্থাৎ যজমানে) বর্তাক। হে সিকতা (অর্থাৎ বালু)! অগ্নির ভস্মই এবং পুরুষ (অর্থাৎ পূরক বা ত্যাজ্য পদার্থ)। হে পরিস্রিতি (অর্থাৎ যজ্ঞবেদীস্থ বালুতে উৎকীর্ণ সূক্ষ্ম রেখা)! তোমার ভূমিতে বিস্তীর্ণ হয়েছে। তুমি সর্বতোভাবে স্থাপিত হও। ঊর্ধ্বে স্থাপিত হয়ে তোমরা গার্হপত্যচিতিকে সেবা করো।
৪৭। এই সেই গার্হপত্য-অগ্নি (যা ইষ্টকের দ্বারা চয়িত বা নির্মিত), যাতে গার্হপত্যচিতির চয়েনের দ্বারা অত্যন্ত অভিলাষী ইন্দ্র সহস্ৰমূল্যক, বহু (বহুজনের) তৃপ্তকারী অন্ন, পানেও মদকারী তথা তৃপ্তিকর অভিযুত সোমকে আপন জঠরে ধারণ (বা পান) করে থাকেন। হে উৎপন্নলভ্য অগ্নি! সহস্র জনকে পালনে সমর্থ, বলস্বরূপ এবং অশ্ব সমান বেগকারক সোমহবিঃ (সোম রূপ হবিঃ) প্রাপ্ত হয়ে, এখন যজমানের দ্বারা স্থূয়মান হও।
৪৮। হে সমর্যাদ (মর্যাদার সাথে) যজনীয় অগ্নি! তোমার যে আদিস্বরূপ তেজ দ্যুলোকে আছে, যে আগ্নেয়স্বরূপ এই পৃথিবীতে বর্তমান, যা ওষধিসমূহে রয়েছে, এবং যা মেঘস্থ জলে বিদ্যমান; যা আপন তেজে তুমি বিস্তৃত অন্তরিক্ষকে বিস্তারিত করেছ, তোমার সেই ভাসমান (দীপ্তিময়), গমনশীল এবং মনুষ্যকে দর্শনকারী (অর্থাৎ মনুষ্যের শুভাশুভের প্রতি লক্ষ্যবা) সেই তেজ (যা আমরা ইষ্টকা রূপে এইস্থানে চয়ন করে রেখেছি)।
৪৯। হে অগ্নি! দ্যুলোক-সম্বন্ধি জলের সাম্মুখ্য প্রাপ্ত হও (অর্থাৎ অভিমুখে গমন করো) যে দেবতাগণ প্রাণস্বরূপ এবং আমাদের বুদ্ধিকে প্রেরিতকারী–তুমি তাদেরও তাদেরও প্রাপ্ত করে আমাদের হিতাহিত সাধন করো। হে অগ্নি! যে জল সূর্যের উপরে দিব্যলোকে বিদ্যমান আছে এবং সূর্যের নিম্নে যে জল স্থিত হয়ে আছে–তুমি সেই দুই প্রকার জলের আভিমুখ্য প্রাপ্ত হয়ে বর্ষণ করতে থাকে।
৫০। পশুহিতকারিণী, অত্যন্ত বেগবান্ মনের সাথে সমান প্রীতিযুক্ত, দ্রোহরিহত, ক্ষুধা-পিপাসারূপ ব্যাধির উপরে (বা সম্পর্কের বাহিরে) এবং মহতী বর্ষাসমূহ (বা অন্নসমূহ) দানকারী এই চিতিসাধিকা ইষ্টকাসমূহ (অর্থাৎ অগ্নিসকল) এই যজ্ঞকে প্রীতির সাথে সেবন করুক৷
৫১। হে অগ্নি! বহুকর্মসাধনভূত অন্ন তথা গাভী-সম্বন্ধী দুগ্ধ-দধি ইত্যাদির অজস্র দান এই যজমানের নিমিত্ত সম্পাদিত করো। আমাদের বংশবিস্তারী এবং বিজেতা ঔরস পুত্ৰ উৎপন্ন হোক। হে অগ্নি! এই রকম তোমার কল্যাণবুদ্ধি আমাদের প্রতি বর্তাক।
৫২। হে অগ্নি! এই বেদি ঋতুতে ঋতুতে তোমার জন্মদাত্রী। এতে উৎপন্ন হয়ে তুমি প্রজ্বলিত হয়ে থাকো। হে অগ্নি! তা জ্ঞাত হয়ে তুমি তাতে (অর্থাৎ বেদিতে) আরূঢ় হও। তারপর আমাদের গো-অশ্ব ধনের বর্ধন করো।
৫৩। হে ইষ্টকা! এখন তুমি স্থাপিত হয়ে গিয়েছ। সেই বাণীদেবতার দ্বারা স্থাপিত হয়ে তুমি এখন অঙ্গে অঙ্গে রমণীয় প্রাণের ন্যায় এই গার্হপত্যচিতিতে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে স্থিত হও। হে দ্বিতীয় ইষ্টকা! তুমি সর্বতোভাবে স্থাপিত হয়েছ। এখন তুমি বাণীরূপ দেবতার দ্বারা চারিদিকে স্থাপিত হয়ে এই গার্হপত্যচিতিতে অঙ্গে অঙ্গে রমণীয় প্রাণের ন্যায় দৃঢ়রূপে স্থিত হও
৫৪৷ হে লোকশৃণসংজ্ঞিকা (অর্থাৎ সর্বলোক ও সর্ব ছিদ্র পূরণকারী) ইষ্টকা! গার্হপত্যচিতিতে স্থাপিত পূর্বে মনোনীত ইষ্টকের চ্যুতি-স্থান (বাতিল হওয়ার কারণে) শূন্য স্থান তুমি পূর্ণ করো–মুক্ত হয়ে যাওয়া ছিদ্রও তুমি পূর্ণ করো। এই রকম ছিদ্র ইত্যাদিকে পূর্ণ করে, হে ইষ্টকা! তুমি দৃঢ় ভাবে এইস্থানে স্থিত হও! হে ইষ্টকা! ইন্দ্র, অগ্নি ও বৃহস্পতি দেবতা তোমাকে এই গাহপত্যচিতিতে ধারণ করেছেন।
৫৫। দুলোকের সম্বন্ধিত অথবা দ্যুলোক হতে সম্প্রপ্ত নানাপ্রকার জলযুক্ত অন্ন দেবতাগণকে জন্মে জন্মে (প্রতিবর্ষে বা প্রতিদিনে) এবং প্রতি সবনে এই যজমান সোমকে পরিপক্ক করে থাকেন। অথবা যজ্ঞপরিণামভূতা অন্ন-উৎপাদিকা জলরাশি দ্যুলোক হতে এই পৃথিবীলোকে পতিত হয়ে প্রতিদিন দেবগণের নিমিত্ত ও এই যজমানের নিমিত্ত ওষধি, বনস্পতি ও অন্নরূপে সোমকে পরিপক্ক (বা সংস্কার) করে থাকে।
৫৬। অন্তরিক্ষের ন্যায় ব্যাপক অথবা অক্ষোভনীয়, রথারোহী অবস্থায় যুদ্ধকারী যোদ্ধাগণের মধ্যে অত্যন্ত ধীর, অন্নের স্বামী তথা সৎপথাবলম্বী জনগণের পালক ইন্দ্রকে ঋক্ যজুঃ সামলক্ষণা বাণীসমূহ বা স্তুতিগুলি পরিবর্ধিত করে থাকে।
৫৭। হে চিতি ও উখাস্থ অগ্নি! পরস্পর প্রিয়, দীপ্তিযুক্ত, প্রসন্নচিত্ত তথা অন্ন-ঘৃত ভক্ষণকারী তোমরা দুইজন পরস্পর সংগত (মিলিত) হও (অর্থাৎ এক বিচারশালী হও)।
৫৮। হে অগ্নিদ্বয়! আমি তোমাদের দুইজনের মন, কর্ম এবং বুদ্ধিবৃত্তিগুলি পর্যন্ত এক করে দিয়েছি। হে পশুহিতকারী অগ্নি! তুমি আমাদের পালক হও এবং এই যজমানকে জল (দধি ইত্যাদি) তথা অন্ন প্রদান করো।
৫৯। হে অগ্নি! তুমি পশুহিতকারী, ধনবান্ ও পুষ্টির সাথে যুক্ত হও। সকল দিককে আমাদের নিমিত্ত কল্যাণকারীরূপে নির্মাণ করে তুমি নিজে এই স্থানে গার্হপত্যচিতিতে প্রতিষ্ঠিত হও।
৬০। হে অগ্নিদ্বয়! তোমরা দুইজন আমাদের নিমিত্ত সমানাচিত্ত, সমান বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন এবং পাপহরিত (বা হিংসাহীন) হও। তোমরা দুইজন আমাদের এই যজ্ঞকে বিঘটিত করো (অর্থাৎ সুসম্পন্ন করো) এবং আমাদের এই যজমানকে হিংসা করো না। হে উৎপন্নমাত্রই জ্ঞাতা (অর্থাৎ জাতবেদা) অগ্নিদ্বয়! আজ তোমরা দুইজনেই আমাদের প্রতি কল্যাণকারী বুদ্ধিশালী হও।
৬১। মৃত্তিকা-নির্মিতা উখা পশুহিতকরী এই অগ্নিকে আপনার অভ্যন্তরে ধারণ করেছেন, যেমন মাতা আপন পুত্রকে ধারণ করে থাকেন সৃষ্টিরূপ কর্মকারী প্রজাপতি বিশ্বদেবগণ ও ঋতুগণের সাথে–এই উখার দ্বারা বিরাট মহান কর্ম পূর্ণ করা হয়েছে–এইরকমে একমত হয়ে সেই উখাকে অগ্নির বন্ধন হতে মুক্ত পৃথক করুক।
৬২। [তিনটি নৈঋতি সংজ্ঞকা ইষ্টককে যথাক্রমে সম্মুখ, দক্ষিণে ও উত্তরে ধারণ করণীয়] হে নৈঋতি! যারা সোমযাগে অকর্মশীল, যারা হবির্যোকে অকর্মশীল সেই গুপ্ত চোর, প্রকট চোরদের (লুটেরা দস্যুদের) তুমি ইচ্ছা করো–তাদের গতি অনুসরণ করো (অর্থাৎ পশ্চাতে গমন পূর্বক সেই চোর-ডাকাতগণকে ধরে ফেলো)। আমাদের অর্থাৎ সোমযাগকারীদের ব্যতীত অন্য দুষ্ট ইত্যাদিগণকে কামনা করো, হে নৈঋতি! তাদের পশ্চাতে ধাবন করা তোমার কর্তব্য। হে নিঋতি দেবী! দুষ্টকে বিনাশকারিণী তোমাকে প্রণাম।
৬৩। হে দুঃসহ তেজঃশালিনী (তিগ্মতেজা) নিঋতিদিগভিমানিনী দেবতা! তোমাকে নমস্কার। লৌহের সমান এই জীবন-মৃত্যুর বন্ধনকে তুমি ছিন্ন করে দাও। অগ্নি ও পৃথিবীর সাথে ঐকমত্য প্রাপ্ত হয়ে হে নিঋতি! তুমি এই যজমানকে উত্তম স্বর্গলোকে অধিরূঢ় করো।
৬৪। হে ক্রস্বভাবা নিঋতি! এই যজমানের স্বর্গগমনের বন্ধনভূত এই পাশকে ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে আমি তোমার মুখে আহুতি প্রদানের ন্যায় এই নিঋতি নামে অভিহিত ইষ্টক চিতিতে ধারণ করে আছি। হে নিঋতি! এই যে সাধারণ জনগণ তোমাকে ভূমি রূপে মান্য করে স্তুতি করে, তা সমীচীন নয়। আমি তো তোমাকে সর্বথা নিঋতি (অর্থাৎ দারিদ্র্য, পরবশতা, মৃত্যু) বলেই জ্ঞাত আছি।
৬৫। হে যজমান! নিঋতি দেবী আপনার গলে ঝুলন্ত যে বন্ধন দিয়েছিল, আমি এখন তা মন্ত্রের দ্বারা ছিন্ন করে দিচ্ছি। গার্হপত্যচিতিরও মধ্যস্থ সেই সবই পাশকে এখন ছিন্ন করে দিচ্ছি। পাশ দিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে, হে যজমান! নিঋতির দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে আপনি এই হবিরম্ন ভক্ষণ করুন। (চমসের দ্বারা ইষ্টকের মধ্যে জল সিঞ্চ কর্তব্য)। যে ভূতিদেবী এই অগ্নিরূপ কর্ম করেছিলেন, তাঁকে সর্বৰ্থ নমস্কার করি।
৬৬। যজমানকে স্বগৃহে স্থাপনকারী, প্রাপ্তিকারক, তথা নিশ্চয়রূপে স্বর্গ ইত্যাদি ফলের প্রাপক অগ্নিহোত্র ইত্যাদি ধর্মধারী এই অগ্নি সর্বপ্রেরক সবিতাদেবের ন্যায়, আপন আপন কর্মে যুক্ত আহবনীয়-অতিপ্ৰণীতা আগ্নি-ধিষ্ম্য ইত্যাদি অগ্নিগণকে সর্বতঃ দর্শন করে। এই অগ্নি পরিপন্থিগণের যুদ্ধ আরম্ভের পর ইন্দ্রের ন্যায় সাথে থাকে (সহায়ক হয়)।
৬৭। অগ্নিক্ষেত্রকে জ্ঞাতশালী তথা কৃষিকর্মে কুশলজন হলকে (হালকে) বৃষের সাথে সংগত (যুক্ত) করছে। দেবতাগণের সুখপ্রাপ্তির অভিলাষে তারা দূরে দূরে যুগসমূহ (হলচালনা) বিস্তার করছে (খেতকে জয় করছে)।
৬৮। হে কৃষকগণ! তোমরা হলের সাথে বলদ যুক্ত করো এবং যুগগুলিকে (হলচালনাকে) বিস্তারিত করো। কর্ষণ হয়ে যাওয়ার পর তাতে (অর্থাৎ কর্ষিত ক্ষেত্রে) বীজ বপন করো। এই বেদবাণী (মন্ত্র) ও ফসল ফলযুক্ত থোক। অল্পকালের মধ্যেই পক্ক হয়ে প্রস্তুত হওয়া ঐ ফসলকে কাস্তের দ্বারা কর্তিত হয়ে আমাদের গৃহে নিয়ে আসুক।
৬৯। সুন্দর ফালগুলি মৃদুতার সাথে ভূমিকে খনন করুক এবং হলবাহী বলদগুলি মৃদুতার সাথে হুঙ্কার করুক (হাঁক দিক)। হে বায়ু ও আদিত্য! আমাদের হবিঃ দ্বারা তর্পিত তোমরা আমাদের জন্য আমাদের গম-ধান ইত্যাদি ফসলকে (বা গাছগুলিকে) সুন্দর ফলসম্পন্ন করে দাও।
৭০। বিশ্বদেব ও মরুৎ-গণের দ্বারা সম্মানিতা হলপংক্তি (সীতা অর্থাৎ লাঙ্গল চালনার সময় জমিতে পাতিত রেখা) মধুর বর্ষাজলে আসিঞ্চিত হোক। হে সীতা! বর্ষাজলে পরিসিঞ্চিতা হয়ে তুমি ঘৃত দুগ্ধ ইত্যাদির সাথে আমাদের অভিমুখ হও। (অর্থাৎ প্রভূত অন্ন উৎপন্ন করো, যাতে আমাদের ঘর ঘৃতে দুগ্ধে পূর্ণ হয়ে যায়)।
৭১। হল বা লাঙ্গল সদা ফালসংযুক্ত, সুখপূর্ণকারী এবং সোমপায়ী যজমানের নিমিত্ত গতিশীল হয়ে থাকে। এই হল (অর্থাৎ হল হতে উৎপন্ন অন্ন ও ধনের সমৃদ্ধি) ফলনশীল (অর্থাৎ বৎস উৎপন্ন করতে সমর্থ) এবং স্থূলকায় ও তেজী গো, মেষ তথা বেগযুক্ত রথাশ্ব দানকারী।
৭২। আমাদের সকল কামনার পূরক (প্রদানকারী) হে সীতা (জনিতে লাঙ্গলের রেখা)! তুমি দয়া করে মিত্র বরুণ-ইন্দ্র-অশ্বিনী-পূষা; সন্তানবর্গ এবং ওষধির নিমিত্ত অদ্য এইক্ষণে আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করো
৭৩। হে দেবযানমার্গের অনুসরণশীল! হে অহিংসনীয় বলদগণ! এইক্ষণে তোমরা স্বয়ং নিজেদের হল হতে মুক্ত করো (অর্থাৎ জগতের স্থিতির মুখ্য হেতুভূতা কৃষিকর্ম সম্পন্ন করে এক্ষণে বিশ্রাম করো। আমরা এই ক্ষুৎপিপাসা রূপ প্রগাঢ় অন্ধকার হতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমরা শান্তি ও এই পরমাত্ম পরম জ্যোতি প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছি৷৷
৭৪। অর্ধমাস ও মাসের সাথে জলদায়ী সম্বৎসরের সমান প্রীতি আছে। উষার সাথে অরুণবর্ণা রশ্মিময়ীর সমান প্রীতি আছে। বিবিধ অদ্ভুত কর্মের সাথে অশ্বিদ্বয়ের সপ্রীতি আছে। আপন এতশ অশ্বের সাথে সূর্যের সমান প্রীতি আছে। সকলের অগ্রে চলনশীল অগ্নির সাথে ইড়ার (অন্নের বা পুরোডাশের) এবং ঘৃতের সাথে অরুণবর্ণা রশ্মিময়ীর সমান প্রীতি আছে। বিবিধ অদ্ভুত কর্মের সাথে অশ্বিদ্বয়ের সপ্রীতি আছে। আপন এতশ অশ্বের, সাথে সূর্যের সমান প্রীতি আছে। সকলের অগ্রে চলনশীল অগ্নির সাথে সমানপ্রীতি আছে। এই সম্বৎসর উষা-অশ্বিদ্বয়-সূর্য ও বৈশ্বানরের নিমিত্ত এই ঘৃতাহুতি প্রদত্ত হচ্ছে।
৭৫। পূর্বকালে তিন যুগ (শীত-গ্রীষ্ম বর্ষা) সহ সকল ঋতুর নিমিত্ত যে যে ওষধিসমূহ উৎপন্ন হয়েছে, আমি সেই পক্ক ধূমিল বর্ণশালী ওষধিকে শত এবং সপ্ত স্থানে বা তেজঃকে জ্ঞাত আছি; (অর্থাৎ শত বৎসরের আয়ুতে মুখমণ্ডলগত সপ্ত প্রাণকে পুষ্ট করে অবস্থানকে জ্ঞাত আছি)।
৭৬। হে মাতা ওষধি! আমি তোমার শত শত তেজঃ (প্রভাসমূহ) এবং সহস্র সহস্র জন্মস্থানকে উৎকৃষ্ট রকমে জ্ঞাত আছি। হে শত-প্রভাব ওষধিসমূহ! এখন তোমরা আমার এই শরীর (বা যজমানকে) রোগরহিত করে দাও
৭৭। ফুলসম্পন্না, ফলের উৎপত্তিকারিণী, যুদ্ধে অশ্বের বিজয়ের ন্যায় রোগপুঞ্জকে বিজিতকারিণী এই আমাদের পারোত্তীর্ণকারিণী হে ওষধিসমূহ! তোমরা সর্বহী প্রসন্না থেকো।
৭৮৷ হে দ্যোতমানা মাতা ওষধিসমূহ! আমি তোমাদের নিকট প্রার্থনা করছি যে, তোমাদের পরিচারক আমি যজমান তোমাদের কৃপায় আপন কীর্তিকে (স্বযশকে) পূর্ণ করে (বা তোমাদের দ্বারা নিরোগ থেকে) যেন অশ্ব, গো, বস্ত্র এবং আপন আত্মিক ইত্যাদি বল সম্প্রপ্ত হই।
৭৯। হে ওষধিসমূহ! আহুতির সময় পিপুল গাছের (বা অশ্বত্থ কাষ্ঠের) চমসে তোমাদের দ্বারা স্বশয়ন এবং পলাশপর্ণের (বা পলাশ কাষ্ঠের) জুহুতে আপন বাস কল্পিত করা হয়েছে। হে ওষধিসমূহ। তোমরা যে যজমানকে পরিচরিত করে থাকো (যার নিমিত্ত আহুতির দ্বারা বিভিন্ন দেবতাকে সপ্রাপ্ত করা হয়। সেই যজ্ঞপাত্রগুলি তৎকালে গো-এর পাত্র (বা ভূমি বা পৃথিবী) হয়ে যায়।
৮০। রাজাগণ যুদ্ধে জয় সম্প্রাপ্ত হওয়ার ন্যায় যে মেধাবী জনের নিকট, হে ওষধিসমূহ! তোমরা রোগ-নিবারণের নিমিত্ত একত্রিত হয়ে থাকো, (অর্থাৎ যে বিদ্বান ওষধি-জ্ঞান প্রাপ্ত হন), সেই বিদ্বানকে বৈদ্য বলা হয়। সে (অর্থাৎ সেই বিদ্বা) রাক্ষস-বিনাশক এবং রোগ-বিনাশক হয়ে থাকে।
৮১। যে ওষধিসমূহ আপন আহুতির দ্বারা অশ্ব-দানকারিণী, যে ওষধিসমূহ সোমের সাথে সঙ্গতশালিনী, যে ওষধিসমূহ বল-প্রদানকারিণী এবং যে ঔষধিসমূহ রাসায়নস্বরূপিণী, সেই সকল ওষধিসমূহকে আমি স্বয়ং এই যজমানের অমঙ্গলবিনাশার্থে জ্ঞাত আছি।
৮২। গোশালা হতে গাভীকে উঠিয়ে চালনা করার ন্যায় যে রোগনাশক ওষধিসমূহ বলবীর্যকেও ঊর্ধ্বগতি প্রাপ্ত করায়, হে যজমান! আপন পরিচারক ব্যক্তিকে ধন প্রদানশালী এই ওষধির (শত শত) প্রভাব সর্বদা তোমার অনুকূল থাকুক।
৮৩। হে ওষধিসমূহ! তোমাদের মাতার নাম নিষ্কৃতি এবং তোমরাও স্বয়ং নিষ্কৃতি; (অর্থাৎ আধি-ব্যাধি হতে নিস্তারকারিণী)। হে ওষধিসমূহ! তরলায়িত হয়ে তোমরা (আমাদের শরীরের সর্বত্র সঞ্চারিণী হও এবং শরীরের যেস্থানে যা কিছুই রোগ জাত হয়ে শরীরকে রুগ্ন করে দেয়, সেইগুলিকে বহিষ্কৃত বা নিষ্কাষিত করে দাও।
৮৪। রোগকে সর্বথা আক্রান্ত করে স্থিতিশীল ওষধিসমূহ শরীরে বিদ্যমান রোগকে সহসা বা অতর্কিতে আক্রমণ করে উপবিষ্ট থাকে–যেমন, কোন চোর গোশালায় প্রবেশ করে গরুর উপর প্রভুত্ব করে (অর্থাৎ গরু চুরি করে)। সেই ওষধিসমূহ তাদের (রোগীদের) শরীর হতে সকল গ্লানি দূর করে দেয়, যেগুলি শরীরের মলরূপ ব্যাধি।
৮৫। মন্ত্রের দ্বারা এই ওষধিগুলিকে বাজীকরণ করবার নিমিত্ত যখন আমি আপন হস্তে গ্রহণ করি–তখন, প্রয়োগের পূর্বেই যক্ষ্মা রোগের সমগ্র পরিবার সেইক্ষণেই বিনষ্ট হয়ে যায়, যেমন– ফাঁসিতে দণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি ফাঁসি দেওয়ার পূর্বেই মৃতপ্রায় হয়ে যায়।
৮৬। হে ঔষধিসমূহ! যে রোগীর দেহে তোমরা অঙ্গে অঙ্গে তথা পর্বে পর্বে (গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে) প্রসারিত হয়ে থাকো, তোমরা সেই সেই স্থান হতে যক্ষা রোগকে তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট করে থাকো, যেমন–তীক্ষ স্বভাব ধনুর্ধর বিপক্ষীয় বীরগণকে নষ্ট করে ফেলে।
৮৭। হে যক্ষ্মরোগ! তুমি চাষ (পিত্ত), কিকিদীবী (কফ) এবং বায়ুর গতির (বায়ুবিকারের) সাথে সাথে এখন এই শরীর হতে দূর হয়ে যাও। হে যক্ষ্ম! সর্বশরীর-পীড়িকা (অর্থাৎ সকলের শরীরের পীড়াদায়ক) ব্যাধির সাথেই এইক্ষণে তুমি বিনষ্ট হয়ে যাও
৮৮। হে ঔষধিসমূহ। তোমাদের মধ্যে এক ওষধি অপর ওষধির প্রভাবকে সুরক্ষিত রাখো (অর্থাৎ অনুপানের উপযযাগিতা) এবং দ্বিতীয় কোন এক অন্য কোন একের প্রভাবকে রক্ষা করো (অর্থাৎ পথ্যের উপযোগিতা রক্ষা করো)। তোমরা সকল রোগনাশন বিষয়ে ঐকমত্য প্রাপ্ত হয়ে এক্ষণে আমার বচন–এই ওষধিসমূহ যক্ষ্ম প্রভৃতি রোগের অবশ্যই নাশকারিণী ইত্যাদিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করো।
৮৯। যে ওষধিসমূহ ফলপ্রদায়িকা, যেগুলি ফল প্রদান করে না, যেগুলি বিনা ফুলশালিনী এবং যেগুলি ফুলসম্পন্না, বৃহস্পতিদেবের দ্বারা উৎপন্ন (বা প্রেরিত) হয়ে সেই সমুদয় ঔষধি আমাকে রোগরূপী পাপ হতে এখনই শীঘ্র মুক্ত করুক।
৯০। শপথ করেও বিপরীত রকম কর্মের কু-ফলস্বরূপ রোগ হতে আমাকে ওষধিসকল রক্ষা করুক। তারা আমাকে বরুণদেবের জলোদর ইত্যাদি রোগ হতে রক্ষা করুক। তারা আমাকে যমরাজের বন্ধনশালী যক্ষ্ম ইত্যাদি রোগ হতে রক্ষা করুক। এই স্থান পর্যন্ত (এমন কি) সেই ওষধিসমূহ আমাকে সকল দেবতার সাথে সম্পন্ধিত রোগসমূহ হতে উন্মুক্ত করুক৷
৯১। দ্যুলোক হতে ভূমির উপরে অবতরিত হয়ে ওষধিসমূহ পরস্পর কথাবার্তা প্রসঙ্গে বলেছিল যে, যে জীবের শরীরে আমরা ব্যাপ্ত হয়ে যাব, পুনরায়, যেন সেই পুরুষ মৃত্যুপ্রাপ্ত না যায়।
৯২। সোমরাজার স্বভূতা যে শত-শত প্রভাবা অনেক ওষধি আছে–হে গৃহীত ওষধি! তুমি সকল ওষধির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমার মনোরথকে পূর্ণ করার নিমিত্ত পূর্ণ সামর্থশালিনী হও এবং হৃদয়ে শান্তি প্রদায়িনী হও
৯৩। সোমরাজার স্বভূতা যে বহু ওষধি এই পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত হয়ে আছে–তারা সকলে, হে ওষধিসমূহ! বৃহস্পতি দেবতার দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে তোমরা আপন আপন প্রভাব এই আমার দ্বারা গৃহীত ওষধিকে প্রদান করো।
৯৪। যে ওষধিসমূহ আমার এই বচন শ্রবণ করেছে এবং যারা এই স্থান হতে দূরে চলে গেছে, তারা সকলে একত্র হয়ে, হে ওষধিসমূহ। তোমরা আমার দ্বারা গৃহীত এই ওষধিকে আপন আপন প্রভাব প্রদান করো।
৯৫। হে ওষধিসমূহ! তোমাদের উপচারার্থ খননকারী যেন নষ্ট না হয় এবং যে রোগীর নিমিত্ত আমি তোমাকে খনন করছি, সেই রোগীও যেন না মৃত্যুগ্রস্ত হয়। আমাদের দ্বিপাদ মনুষ্য ইত্যাদি এবং চতুষ্পদ গো ইত্যাদি সকলেই রোগরহিত হোক।
৯৬। ওষধিগণের রাজা সোমকে সম্ভাষণ করে ওষধিগণ বলেছিল–হে রাজন্! যে রোগীর নিমিত্ত ব্রাহ্মণ আমাদের উপযোগ করেন, আমরা সেই রোগীকে মৃত্যু হতে উত্তীর্ণ করি, সকলকে নয়৷
৯৭। হে গৃহীত ওষধি! তুমি বাতরোগের নাশিকা, তুমি ক্ষয়ব্যাধির নাশয়িত্রী এবং শোথ-ফোঁড়া ইত্যাদিরও নাশিকা। হে ওষধি!তুমি মুখক্ষত বা মন্দাগ্নির নাশিকা এবং অধিক কি, তুমি শত শত যক্ষ্মাভেদেরও বিনষ্টকারিণী।
৯৮৷ হে ঔষধি! তোমাকে গন্ধর্বগণ খনন করেছিল; তোমাকে ইন্দ্ৰ খনন করেছিল এবং তোমাকে বৃহস্পতিদেবও খনন করেছিল। পক্ষান্তরে, বিদ্বান রাজা সোমও, হে ওষধি তোমাকে খনন করে যক্ষ্মা ব্যাধি হতে মুক্তি লাভ করেছিল।
৯৯৷ হে ওষধি! তুমি শত্রুরূপী রোগকে অভিভূতকারিণী। অতএব আমার অজ্ঞাত রোগকে অভিভূত করো; সংগ্রামেচ্ছু রোগকে (বা শত্রুকে) অভিভূত করো এবং আমার সমগ্র পাপকেও তুমি অভিভূত করে ফেলো।
১০০। হে ওষধি! তোমার খননকারী দীর্ঘ আয়ুসম্পন্ন হোক এবং যে রোগীর নিমিত্ত আমি স্বয়ং তোমাকে খনন করছি সেই রোগীও দীর্ঘ আয়ুশালী হোক। সেই সাথে তুমিও স্বয়ং দীর্ঘ আয়ুযুক্ত হয়ে শত শত কাণ্ড প্রকাণ্ডশালী হয়ে সর্বত্র প্রসারিত হও।
১০১। হে ওষধি! তুমি সকল ওষধির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই সমস্ত বৃক্ষ (শাল, তমাল ইত্যাদি) তোমার সহায়ক মাত্র। তোমার প্রভাবে সেই ব্যক্তিও আমাদের পরিচারক হয়ে যাক, যে আমাদের হিংসিত করতে ইচ্ছা করে।
১০২। যিনি পৃথিবীর উৎপাদক অথবা যিনি জগৎপালন ইত্যাদি সত্য ধর্মশালী প্রজাপতি এই দুলোককে ব্যাপ্ত করেছেন (বা যিনি এই দ্যুলোকে সূর্য ইত্যাদি লোকসমূহ নির্মাণ করেছেন) এবং যিনি প্রথম উৎপন্ন হয়ে আহ্লাদক জল (বা মনুষ্য) নির্মাণ করেছেন, আমরা সেই প্রজাপতিদেবের নিমিত্ত হবির দ্বারা পরিচরণ করছি। (এই মন্ত্রে অধ্বর্যু চার লগিষ্টকা– মৃত্তিকার খণ্ড চিতিতে যথাস্থানে ধারণ করবেন)।
১০৩। হে পৃথিবী! তুমি আমাদের সঙ্কল্পিত যজ্ঞে এবং তার সাধনভূত ঘৃত-দুগ্ধ ইত্যাদির সাথে আমাদের সম্মুখে প্রাপ্ত হও। প্রজাপতির দ্বারা প্রেরিত এই অগ্নি তোমার এই কোমল পৃষ্ঠভাগে আরোহণ করুক।
১০৪। হে অগ্নি! তোমার যে স্বরূপ শুভ্রাভ এবং দ্বিতীয় যে (স্বরূপ) আহাদকারী, হে অগ্নি! তোমার যে অন্য পবিত্র স্বরূপ আছে, তথা যা যজনীয়, আমি তোমার সেই সব স্বরূপকেই দেবতাগণের নিমিত্ত সম্পাদিত করছি।
১০৫। অন্ন তথা তার উপসেচন দুগ্ধ-ঘৃত ইত্যাদি; সত্যের বিদ্যায় স্থান এবং মহান্ ইচ্ছাবান্ অগ্নির ধারণা বা আহুতিকে এই উত্তর দিকের সন্নিকটে আমি স্বীকার করছি। এই সব পুরোডাশ ইত্যাদি আগত হয়ে আমার শরীরে প্রবেশ করুক, আমার পুত্র ইত্যাদির শরীরে প্রবেশ করুক এবং আমার গো ইত্যাদি পশুগুলির শরীরে প্রবেশ করুক। অন্নাভাব ও ব্যাধিগ্রস্ততাকে আমি দূর করছি।
১০৬। হে প্রভাধন অগ্নি! যজমানের কীর্তিকে (বা যশকে) পরলোকে শ্রাবিতকারী তোমার ধূম এবং তোমার জ্বালাসমূহ পরম শোভাকে প্রাপ্ত হচ্ছে। হে বিরাট প্রকাশশালী (বৃহদ্ভানু) অগ্নি! তুমি আপন মহৎ বলের দ্বারা হবিদাতা যজমানের নিমিত্ত যজ্ঞের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত অন্ন প্রদান করে থাকো৷
১০৭। হে অগ্নি! শুদ্ধ প্রদীপ্তি, নির্মল জ্যোতি তথা পূর্ণপ্রভা তুমি আপন প্রকাশে ঊধ্বস্থ হয়ে থাকো। বৃদ্ধাবস্থাপ্রাপ্ত মাতা পিতাকে পুত্র কর্তৃক পালনের ন্যায় তুমি আপন যজমানকে স্বর্গে পালন করে থাকো। এই দুই দ্যাবা ও পৃথিবীকে তুমি, হে অগ্নি! হবিঃ তথা বর্ষায় (বৃষ্টির দ্বারা) আপূরিত করছ।
১০৮। জলের পুত্রী ওষধিসমূহের পুত্র হে অগ্নি! হে উৎপন্নমাত্রকেই জ্ঞাতা (জাতবেদা) অবস্থাপন ইত্যাদি কার্যের দ্বারা চিতিতে বিধৃত তুমি শোভন স্তুতিসমূহের দ্বারা প্রহৃষ্ট হও। নানাস্বরূপ, নানা তৰ্পণ এবং বিশিষ্ট কুলগোত্রে উৎপন্ন যজমান তোমাতে বিবিধ চরু-পুরোশ ইত্যাদি হবির দ্বারা হোম করছেন৷
১০৯। হে মরণরহিত অগ্নি! অধ্বর্যু প্রভৃতি জীবিতগণের দ্বারা নিবেদিত হবিঃ ইত্যাদিতে সন্দীপ্যমান তুমি আমাদের ধনের বিস্তার করো। এমতস্বরূপ হে অগ্নি! তুমি আপন দর্শনীয় জ্বালা-সমূহের সাথে এই চিত্যাগ্নিতে বিরাজমান আছ এবং আমাদের চিরন্তন যজ্ঞকে সর্বথা পূর্ণ করে আছো।
১১০। হে অগ্নি! যজ্ঞকে সকলকারী, প্রকৃষ্ট জ্ঞানবান এবং বিশিষ্ট বেদিস্থানে নিবাসকারী যজমানের প্রতি তুমি বরণীয় মহৎ ধন ধারণ করে থাকো, মহতী বর্ষাকে ধারণ করে থাকো এবং চিরন্তন অশ্ব-গো সম্পাদসমূহ প্রদান করে থাকো৷
১১১। সত্যশীল, মহান এবং বিশ্বের দর্শনীয় এই অগ্নিকে পূর্বকালেও ঋষিগণ ধন প্রাপ্ত করার উদ্দেশ্যে আহবনীয় ইত্যাদি বেদিতে স্থাপিত করেছিলেন (অর্থাৎ ধনের নিমিত্ত অগ্নির যজন করেছিলেন)। এই কারণে আজকের (বর্তমান কালের) যজমানও, হে অগ্নি! স্বকর্ণে প্রার্থনা-শ্রবণকারী এবং অতিশয় কীর্তিশালী তোমারূপী দৈবী অগ্নিকে অমাবস্যা পূর্ণিমা ইত্যাদি কালে যোগে (যোগসাধনে) তথা বেদবাণীর দ্বারা পূজা করে থাকেন৷৷
১১২। হে সোম! তুমি অভিবৃদ্ধিকে সম্প্রপ্ত হও। তুমি ও সকলে আরও পুংস্ত্র (পৌরুষ বা শুক্র বা বীর্য) প্রাপ্ত হও। তখন তুমি, হে সোম! আমাদের অন্ন প্রাপ্ত হওয়ার সহায়ক হয়ো৷
১১৩।হে শত্ৰুংসহ সোম। তুমি বসতীবরী প্রভৃতি জল প্রাপ্ত হও; তুমি যব ইত্যাদির সত্ত্ব (ছাতু) এবং তার সাথে সাথে সকল সামর্থ্যও প্রাপ্ত হয়। হে সোম! আমাদের পুত্র ইত্যাদির বিস্তারের নিমিত্ত অভিবৃদ্ধ হয়ে তুমি দ্যুলোকে আমাদের জন্য উত্তম উত্তম অগ্ন বা যশ সম্পাদিত করো ৷
১১৪। হে অত্যন্ত তৃপ্তিকর সোম! তুমি নিজের সমস্ত অবয়বের দ্বারা সম্যক অভিবৃদ্ধ হও। অতিশয় কীর্তিশালী হে সোম! আমাদের মিত্র তুমি আমাদের বৃদ্ধির নিমিত্তভাগী হও।
১১৫। হে অগ্নি! আপন অভিলাষ পূর্ণ করে বেদবাণীতে তোমাকে সংস্তুত করার নিমিত্ত তোমার পুত্ৰাধিক প্রিয় যজমান আপন মনকে স্বর্গ পর্যন্ত সংযমিত করে নিচ্ছে।
১১৬। হে অত্যন্ত অঙ্গারবান্ অগ্নি! আপন আপন অভিলাষগুলির পূর্তির জন্য সমস্ত জাতিসমূহ পৃথক পৃথক্ বিধিতে তোমাকে অভিপূজিত করছে। ১১৭। (অগ্নি) স্বর্গ ইত্যাদি প্রিয় ধামসমূহে সকল ভূত-ভবিষ্য জনের কামনা পূরণের সহায়ক বা পদার্থসমূহের দাতা হয়ে, একাকী সম্রাট রূপে শোভিত হয়। (স্বর্গ ইত্যাদি লোকে বিরাজিত অগ্নি অতীতে উৎপন্ন অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্ত প্রাণীজাতের কামনাপূরণের সহায়ক হয়ে থাকেন এবং ভবিষ্যতেও ইহলোকে প্রাণীজাতের কর্মানুসারী মানদণ্ডের বিচার অনুযায়ী কাম্য স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির সহায়তা দান করেন। তিনিই সর্বলোকের সম্রাট)।