শিক্ষা ও পণ্ডিতসমাজ
সার্বজনীন স্তরে অষ্টাদশ শতাব্দীর সমাজে শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম ছিল। হিন্দুদের পাঠশালা ও মুসলমানদের মকতাব। এ ছাড়া ছিল। কথকতা গান, যাত্রাভিনয় ও পাঁচালী গান যার মাধ্যমে হিন্দুরা পৌরাণিক কাহিনীসমূহের সঙ্গে পরিচিত হত। পাঠশালায় ছেলেমেয়ে উভয়েই পড়ত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মেয়েরা লেখাপড়া করে বিদুষী হতেন, তা আমরা অষ্টাদশ শতাব্দীর রচনা থেকে জানতে পারি। ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর নায়িকা বিদ্যা তো বিদ্যারই মূর্তিময়ী প্ৰতীক ছিল। রাণী ভবানীও বেশ সুশিক্ষিতা মহিলা ছিলেন। বর্ধমানের রাজপরিবারের মেয়েরাও সুশিক্ষিতা ছিলেন। তবে মেয়েদের মধ্যে দু-চারজন উচ্চশিক্ষিতা হলেও সাধারণ মেয়ের অল্পশিক্ষিতাই হত। এর প্রধান কারণ ছিল বাল্যবিবাহের প্রচলন l
উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছিল মুসলমানদের ক্ষেত্রে মৌলবীগণ পরিচালিত। মাদ্রাসা ও হিন্দুদের ক্ষেত্রে ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতগণ পরিচালিত চতুষ্পাঠীসমূহ। পাঠশালার সঙ্গে চতুষ্পাঠীর প্রধান পার্থক্য ছিল এই যে, পাঠশালা যে কোন জাতির লোক প্ৰতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে পারতেন, কিন্তু চতুস্পাঠিসমূহ সাধারণতঃ ব্ৰাহ্মণপণ্ডিতগণই পরিচালনা করতেন। চতুষ্পাঠীসমূহে নানা শাস্ত্রের শিক্ষা দেওয়া হত। চতুষ্পাঠীসমূহের শ্ৰেষ্ঠ কেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ। শাস্ত্র অনুশীলন, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার জন্য নবদ্বীপের বিশেষ প্ৰসিদ্ধি ছিল। এই প্ৰসিদ্ধিৱঃ জন্যই নবদ্বীপকে বাঙলার ‘অকসফোর্ড’ বলে অভিহিত করা হত। নব্যন্যায় ও’ স্মৃতির অনুশীলনের জন্য নবদ্বীপ বিশেষভাবে খ্যাত ছিল। তবে নবদ্বীপই একমাত্র শিক্ষাকেন্দ্ৰ ছিল না। ব্ৰাহ্মণপণ্ডিতদের শান্ত্রি অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার পীঠস্থান হিসাবে পূর্ববঙ্গে কোটালিপাড়ার বিশেষ প্ৰসিদ্ধি ছিল। পশ্চিমবঙ্গে শাস্ত্ৰ অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার জন্য ত্ৰিবেণী, কুমারহট্ট (কামারহাটি), ভট্টাপঞ্জী (ভাটপাড়া), গোন্দলীপাড়া (চন্দ্রনগর), ভদ্ৰেশ্বর, জয়নগর-মজিলপুর, আব্দুল, বালী, বর্ধমান প্ৰভৃতিরও প্ৰসিদ্ধি ছিল। দ্রাবিড়, উৎকল, মিথিলা ও বারাণসী থেকে দলে দলে ছাত্র বর্ধমানের চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করতে আসত। এই সকল চতুষ্পাঠীতে যে মাত্র মব্যস্তায় বা স্মৃতিশাস্ত্রেরই অনুশীলন হত, তা নয়। জ্যোতিষ, আয়ুৰ্বেদ, ন্যায়, কোষ, নাটক, গণিত, ব্যাকরণ, ছন্দোসূত্র প্রভৃতি ও দণ্ডী, ভারবী, মাঘ, কালিদাস, প্ৰমুখদের কাব্যসমূহ এবং মহাভারত, কামন্দকীদীপিকা, হিতোপদেশ প্রভৃতি পড়ানো হত।
দুই
চতুষ্পাঠীতে যে মাত্র পুরুষেরাই পড়ত, তা নয়। মেয়েরাও কেউ কেউ চতুস্পাঠীতে পড়ে বিদুষী হত! তাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কৃত শিক্ষার উচ্চ সোপানে উঠেছিল। যেমন পশ্চিমবঙ্গের হটি বিদ্যালঙ্কার ও হাঁটু বিদ্যালঙ্কার, এবং পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের আনন্দময়ী দেবী ও কোটালিপড়ার বৈজয়ন্তী দেবী। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে স্থপ্রসিদ্ধা ছিলেন হাট বিদ্যালঙ্কার। তিনি ছিলেন রাঢ়দেশের এক কুলীন ব্ৰাহ্মণ পরিবারের বালবিধবা। সংস্কৃত ব্যাকরণ, কাব্য, স্মৃতি ও নব্যান্যায়ে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করে বারাণসীতে এক চতুষ্পাঠী স্থাপন করেছিলেন। বেশ বৃদ্ধ বয়সে ১৮১০ খ্ৰীস্টাব্দে তিনি মারা যান। হটু বিদ্যালঙ্কারের আসল নাম রূপমঞ্জরী। তিনিও রাঢ়দেশের মেয়ে ছিলেন, তবে তিনি জাতিতে ব্ৰাহ্মণ ছিলেন না। তাঁর পিতা নারায়ণ দাস অল্প বয়সেই মেয়ের অসাধারণ মেধা দেখে, তার ১৬/১৭ বছর বয়সকালে তাঁকে এক ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতের চতুষ্পাঠীতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অধ্যয়ন করে রূপমঞ্জরী ব্যাকরণ, সাহিত্য আয়ুৰ্বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্ৰে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। নানা জায়গা থেকে ছাত্ররা তার কাছে ব্যাকরণ, চড়কসংহিতা, নিদান ও আয়ুর্বেদের নানা বিভাগের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করতে আসত। অনেক বড় বড় কবিরাজ তার কাছে চিকিৎসা সম্বন্ধে পরামর্শ নিতে আসতেন। রূপমঞ্জরী শেষপৰ্যন্ত অবিবাহিতাই ছিলেন এবং মস্তকমুণ্ডন করে মাথায় শিখা রেখে পুরুষের বেশ ধারণ করতেন। ১০০ বৎসর বয়সে ১৮৭৫ খ্রীস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
আনন্দময়ী ও বৈজয়ন্তী দেবী দুজনেই ছিলেন পূর্ববঙ্গের মেয়ে। আনন্দময়ী জাতিতে ব্ৰাহ্মণ ছিলেন না। তাঁর পিতার নাম লাল রামগতি সেন। ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের অন্তর্গত জিপসা গ্রামে তার জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই আনন্দময়ীর বিদ্যাশিক্ষার প্রতি তীব্ৰ অনুরাগ ও মেধা ছিল। সংস্কৃত সাহিত্যে -बू९,नडि नाड करब डिनि বিশেষ প্ৰসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। মহারাজা রাজবল্লভ যখন রামগতি সেনের নিকটা অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের প্রমাণ ও প্রতিকৃতি চেয়ে পাঠান, তখন পিতা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায়, আনন্দময়ী নিজেই সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে অগ্নিষ্টেম যজ্ঞের প্রমাণ ও প্রতিকৃতি নিজেই তৈরী করে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। গান রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্তা ছিলেন। তার রচিত গানসমূহ বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি মাঙ্গলিক উৎসবে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তা ছাড়া, তিনি নিজ খুল্লতাত জয়নারায়ণকে ‘হরিলীলা’ (১৭৭২ খ্রীস্টাব্দে রচিত) কাব্য রচনায় সাহায্য করেছিলেন। তিনি বিবাহিতা ছিলেন। পয়গ্রাম নিবাসী পণ্ডিত অযোধ্যানারায়ণের সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল। পিতৃগৃহে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে তিনি অনুমৃত হন। তাঁর মা-ও কাশীর মণিকর্ণিকার ঘাটে সহমৃতা হয়েছিলেন। সুতরাং এ থেকে বুঝতে পারা যাচ্ছে যে অষ্টাদশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজে অনুমৃতা ও সহমৃতা হওয়া ব্যাপকভাবে প্ৰচলিত ছিল।
বৈজয়ন্তীদেবী ব্ৰাহ্মণকন্যা ছিলেন। ফরিদপুরের খানুকা গ্রামে তাঁর জন্ম। স্বামী ছিলেন কোটালিপাড়া নিবাসী প্ৰখ্যাত পণ্ডিত কৃষ্ণনাথ সার্বভৌম। কাব্য, সাহিত্য, দর্শন, ধর্মশাস্ত্ৰ প্ৰভৃতিতে পাণ্ডিত্যের জন্য বৈজয়ন্তী বিশেষ প্ৰসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি সুন্দরী ছিলেন না এবং শ্বশুরকুল অপেক্ষা হীন ছিলেন বলে বহুদিন যাবৎ স্বামীগৃহে যেতে পারেন নি। পরে সংস্কৃত লোকে রচিত পত্রে তার কবিত্বশক্তির পরিচয় পেয়ে স্বামী তাকে নিজগৃহে নিয়ে যান। সেখানে তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিতভাবে ‘আনন্দালতিকা’ নামে এক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। এখানি সংস্কৃত ভাষায় একখানি উচ্চমানের কাব্যগ্রন্থ বলে প্রসিদ্ধ।
তিন
অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিক্ষার সার্বজনীন মাধ্যম ছিল পাঠশালা। প্ৰতি গ্রামেই *ार्छाला छेिल। পাঠশালাসমূহ পরিচালন করতেন গুরুমশাইরা। গুরুমশাইদের ছাত্ররা মশাই’ বলে সম্বোধন করত। গুরুমশাই খুব বদ্যান্যতার সঙ্গে বেতের ব্যবহার করতেন। পাঠশালাসমূহে ভর্তি হতে বা পড়তে কোন পয়সাই লাগত না। মাত্র মাঝে মাঝে গুরুমশাইকে একটা ‘সিধে’ দিতে হত। পাঠশালাসমূহে শিক্ষা দেওয়া হত। অক্ষর পরিচয়, ফল বানান, যুক্তাক্ষর ও লিখনপ্রণালী। দলিল লেখালেখি কোথাও শেখানো হত। এছাড়া অঙ্ক বিভাগে থাকত শঠকে, কড়াকে, গণ্ডাকে, বুড়িকে, সেরকে, মনকে, নামতা, সইয়ে, আড়াইয়ে, তেরিজ, জমা খরচ, -গুণ, ভাগ, বাজার দরকষা, সুদকষা, কাঠাকালি, বিঘাকালি, পুষ্করিণীকালি, ইটের পাঁজাকালি ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনের অনেক ব্যবহারিক বিষয়। এক কথায়, পাঠশালায় শিক্ষা করলে, একজন রীতিমত শিক্ষিত ও কৃতবিদ্য বলে সেকালে গণ্য হত। নিজ পরিবার মধ্যেও বিশেষ মৰ্যাদা লাভ করত।
পাঠশালায় যে মাত্র ছেলেরাই লেখাপড়া শিখত তা নয়, মেয়েরাও। সন্ত্রান্ত ঘরের মেয়েদের বাড়িতেই লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করা হত। তাদের লেখাপড়ার জন্য পণ্ডিত নিযুক্ত করা হত। এভাবেই লেখাপড়া শিখেছিলেন বর্ধমানের মহারাণী কৃষ্ণকুমারী, নাটোরের রাণী ভবানী (১৭১৪-১৭৯৩) প্রমুখরা। বর্ধমান রাজবাড়ির আর যারা লেখাপড়া শিখেছিলেন তঁরা হচ্ছেন মহারাজা তেজশ্চন্দ্ৰের পট্টমহিষী মহারাণী কমলকুমারী ও মহারাজা প্ৰতাপচন্দ্ৰ বাহাদুরের দুই রাণী। এঁরা সকলেই সুশিক্ষিতা ছিলেন। নবদ্বীপাধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০-১৭৮২) বাহাদুরের পরিবারের মেয়েরাও বিদ্যাভ্যাস করতেন। রাজা সুখময় রায় বাহাদুরের (?-১৮১১) পুত্র শিবচন্দ্র রায়ের মেয়ে .श्द्रश्नादौe मर्छुङ, तारा ७ श्कोि এই তিন ভাষায় এমন সুশিক্ষিতা হয়েছিলেন যে পণ্ডিতেরাও তেঁাকে ভয় করতেন। তিনি সেকালের একজন নামজাদা পণ্ডিত কুমারহট্ট নিবাসী রূপচাদ ন্যায়ালঙ্কারের কাছ থেকে সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণাদি তাবৎ গ্রন্থ পাঠ করে সেকালের একজন সুশিক্ষিতা মহিলা হয়েছিলেন। সাধারণ গ্রামের মেয়েরাও পাঁচালী ও কথকতার মাধ্যমে মঙ্গলকাব্যসমূহ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণাদির কাহিনীসমূহের সহিত রীতিমত পরিচিত হতেন। বলা বাহুল্য পাঁচালী গানই ছিল গণশিক্ষার প্রধান মাধ্যম।
চার
যারা চতুষ্পাঠীসমূহ পরিচালনা করতেন, তারা সকলেই বিখ্যাত পণ্ডিত, ছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত পণ্ডিতদের নাম আমরা চারটা সূত্র থেকে *পাই। এ চারটা সুত্র হচ্ছে-(১) মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের (১৭১০-১৭৮২) -অধিক্টোম ও বাজপেয় যজ্ঞে যে সকল পণ্ডিত উপস্থিত ছিলেন, (২) যে এগারজন পণ্ডিত দ্বারা ওয়ারেন হেষ্টিংস ‘বিবাদার্ণবসেতু’, নামক ব্যবস্থাপুস্তক রচনা করিয়ে ছিলেন, (৩) মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব এক সপ্তাহব্যাপী যে ‘বিচার’-এর আয়োজন করেছিলেন, তাতে যে সকল পণ্ডিত উপস্থিত ছিলেন, ও (৪) ১৮০০ খ্ৰীস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় যে সকল পণ্ডিত ওই কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
১১৬০ বঙ্গাব্দের (১৭৫০ খ্রীস্টাব্দ) মাঘ মাসে নবদ্বীপাধিপতি রাজা কৃষ্ণচন্দ্ৰ রায় অগ্নিষ্টেম ও বাজপেয় যজ্ঞ করেন। ওই যজ্ঞে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বহুসংখ্যক ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিত সমাগত হন। বাঙলার যে সকল পণ্ডিত আহুত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন। হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত, রামগোপাল সার্বভৌম, রাধামোহন গোস্বামী (১৭৩০-৩২), জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন (১৬৯৪-১৮০৭), রমাবল্লভ বিদ্যাবাগীশ, বীরেশ্বর ন্যায়পঞ্চানন, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, রমানন্দ বাচস্পতি, মধুসুদন ন্যায়ালঙ্কার, গোপাল ন্যায়ালঙ্কার, শিবরাম বাচস্পতি, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি প্ৰমুখ। এঁদের মধ্যে বাণেশ্বর ছিলেন রুষ্ণচন্দ্রের (১৭১০ – ১৭৮৯) সভাপণ্ডিত। গুপ্তিপাড়ায় তার জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন রামদেব তর্কবাগীশ। কৃষ্ণচন্দ্ৰ কোন কারণে বাণেশ্বরের ওপর রুষ্ট হলে, তিনি বর্ধমান রাজ চিত্ৰসেনের আশ্রয়ে যান। সেখানে তিনি চিত্ৰসেনের আদেশে বৰ্গীর হাঙ্গামা সম্বন্ধে গদ্যে-পদ্যে ‘চিত্রচম্পূৰ্ণ সংজ্ঞ্যক এক গ্ৰন্থ রচনা করেন। (আগে দেখুন)। চিত্রসেনের মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় যান। পরে কলকাতায় মহারাজা নবকৃষ্ণ দেবের (১৭৩৩-১৭৯৭) আশ্রয়ে যান। ওয়ারেন হেষ্টিংস (১৭০২-১৮১৮) যে এগার জন পণ্ডিতের সাহায্যে ‘বিবাদার্ণব সেতু’ নামে হিন্দু আইনের এক গ্ৰন্থ রচনা করিয়েছিলেন, বাণেশ্বর তাদের অন্যতম ছিলেন। বর্ধমান রাজসভায় থাকাকালীন তিনি ‘চন্দ্রাভিষেক’ নামে একখানি নাটকও রচনা করেছিলেন।
তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন। ১৬৯৬ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে ১১১ বৎসর জীবিত থেকে, তিনি মারা যান। ১৮০৭ খ্ৰীস্টাব্দে। চব্বিশ বৎসর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন। অসাধারণ নৈয়ায়িক হিসাবে জগন্নাথের খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৮৭ বৎসর তিনি তার এই খ্যাতি অমান রাখেন। জগন্নাথ মহারাজা নবকৃষ্ণ দেবের রাজসভাও অলঙ্কত করতেন। মহারাজ তাকে একখানা তালুক ও পাকা। বসতবাড়ী দিয়েছিলেন। মহারাজ একবার তাকে বাৎসরিক এক লক্ষ টাকা আয়ের একটা জমিদারী দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জগন্নাথ তা প্ৰত্যাখান করে বলেন যে তা হলে তার বংশধরেরা বিলাসী হয়ে পড়বে ও ধনগর্বে বিদ্যচর্চা বন্ধ করে দেবে। ইংরেজরাও জগন্নাথকে জজ-পণ্ডিত নিযুক্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাও তিনি প্ৰত্যাখান করেছিলেন তার পৌত্র গঙ্গাধরের আনুকুল্যে। স্বপ্রীম কোর্টের বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোনস্-এর আদেশে জগন্নাথ বিবাদ ভঙ্গার্ণব’ নামে একখানা ব্যবস্থাপুস্তক রচনা করেছিলেন (১৭৮৮-৯২)। কোলব্রুক সাহেব সেখানা তর্জমা করে নাম দেন ‘A Digest of Hindu Law on Contracts and Succession’. এ বইখানার ইতিহাস এখানে বলা দরকার। হিন্দুদের প্রাচীন শাস্ত্ৰসমূহ থেকে কাৰ্যোপযোগী একখানা ব্যবস্থাপুস্তক সংকলন করবার প্রথম আয়োজন করেন ওয়ারেন হেষ্টিংস। এ কাজের ভার তিনি এগার জন পণ্ডিতের ওপর দেন। (যথাক্রমে তারা হচ্ছেন রামগোপাল ন্যায়ালঙ্কার, বীরেশ্বর পঞ্চানন, কৃষ্ণজীবন ন্যায়ালঙ্কার, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, কৃপারাম তর্কসিদ্ধান্ত, কৃষ্ণচন্দ্র সার্বভৌম, গৌরীকান্ত তর্কসিদ্ধান্ত, কৃষ্ণকেশব তর্কালঙ্কার, সীতারাম ভট্ট, কালীশঙ্কর বিদ্যাবাগীশ ও শ্যামসুন্দর ন্যায়সিদ্ধান্ত) এঁরা যে ব্যবস্থাপুস্তক রচনা করেছিলেন, তা প্ৰথম ফারসীতে এবং তা থেকে ন্যাথানিয়াল ব্রাশী হালহেড ইংরেজিতে অনুবাদ করেন (১৭৭৫-৭৬)। কিন্তু দুবার ভাষান্তরিত হবার ফলে গ্ৰন্থখানি (‘Gentoo Code) মূল সংস্কৃত থেকে পৃথক হয়ে পড়েছিল। সেজন্য একখানি বিশুদ্ধ ও প্রামাণিক ব্যবস্থাপুস্তক রচনা করবার জন্য সচেষ্ট হন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোনস। প্ৰথমে তিনি এর ভার দেন মিথিলার স্মর্ত পণ্ডিত সৰ্বরী। ত্ৰিবেদীর ওপর। সৰ্বরী ত্ৰিবেদী যে বইখানা তৈরী করেছিলেন ৩ার নাম ছিল ‘বিবাদ সারার্ণব’। কিন্তু সেখানা মনঃপূত না হওয়ায় জোনস এর ভার দেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের ওপর। জগন্নাথের বইখানা ছিল ৮০০ পৃষ্ঠার বই এবং এখানার নাম ছিল ‘বিবাদভঙ্গার্ণব’। জোনস্-এর হঠাৎ মৃত্যু ঘটায় কোলব্রুক সাহেব সেখানে ইংরেজিতে তর্জমা করান।
ওপরে শঙ্কর তর্কবাগীশের (১৭২৩-১৮১৬) নাম করেছি। তিনি ছিলেন কর্কশ তর্কশাস্ত্রে প্রতিভার মুখ্য অবতার। ১৭৯১ খ্ৰীস্টাব্দে তীর জীবদ্দশায় লিখিত হয়েছিল–‘Shankar Pandit is the head of the college ofNadia, and allowed to be the first philosopher” and scholar in the “whole university; his name, inspired the youth with the
love of learning, and the greatest rajahs regarded him with great veneration.’ নানাশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল, এবং বাঙালী প্রতিভার মূর্ত প্ৰতীকরূপে ভারতের সর্বত্র তিনি অসাধারণ প্ৰতিপত্তি লাভ করেন।’ যারা মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব অনুষ্ঠিত ‘বিচার’-এ অংশ গ্ৰহণ করেছিলেন তাদের মধ্যেও শঙ্কর তর্কবাগীশ ছিলেন। শঙ্কর তর্কবাগীশ ও জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন ছাড়া, আরও যে সব পণ্ডিত ওই ‘বিচার’-এ অংশ গ্ৰহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন বলরাম তর্কভূষণ, মানিকচন্দ্র তর্কভূষণ ও বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার।
বাঙলার পণ্ডিত সমাজের মধ্যে আর যারা ফোট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামনাথ বিদ্যাবাচস্পতি, শ্ৰীপতি মুখোপাধ্যায়, আনন্দচন্দ্র, রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, কাশীনাথ মুখোপাধ্যায়, চণ্ডীচরণ মুনশী, তারিণীচরণ মিত্র, পদ্মলোচন চূড়ামণি, রামরাম বসু প্ৰমুখ।
অন্যান্য সূত্র থেকে আমরা অষ্টাদশ শতাব্দীর আরও অনেক পণ্ডিত ও শিক্ষিত ব্যক্তির নাম পাই। পণ্ডিতজনের মধ্যে বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখেন। কৃষ্ণানন্দ সার্বভৌম, গোকুলানন্দ বিদ্যামণি, গোপাল ন্যায়ালঙ্কার, চন্দ্রনারায়ণ ন্যায়পঞ্চানন, জগন্নাথ পঞ্চানন, কালিকিঙ্কর তর্কবাগীশ, অনন্তরাম বিদ্যাবাগীশ, কালীশঙ্কর সিদ্ধাস্তবাগীশ, জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, জয়রাম ন্যায়পঞ্চানন, দয়ারাম ন্যায়ালঙ্কার, দুলালচাদ তর্কবাগীশ, বলদেব বিদ্যাভূষণ, বিশ্বনাথ ন্যায়ালঙ্কার, মথুরেশ (মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ), মানিকচন্দ্র তর্কভূষণ, রূপমঞ্জরী, শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার, শ্ৰীকৃষ্ণ সার্বভৌম, হাটী বিদ্যালঙ্কার ও হরিহরানন্দ তীৰ্থস্বামী। এ সকল পণ্ডিতদের শাস্ত্রাঙ্কুশীলন ও সাহিত্যচর্চার কথা আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে বলব। সেখানে আরও বলব। অষ্টাদশ শতাব্দীর সাহিত্যসাধক ও অন্যান্য গুণিজনের কথা। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে যাঁদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, তাঁরা হচ্ছেন গঙ্গারাম দাস (দেব চৌধুরী), গোপাল ভঁড়, গোলাকনাথ দাস, জগন্দ্রাম রায়, আনন্দরাম চক্রবর্তী, ঈশা আল্লাহ খান, কবিচন্দ্র, জয়নারায়ণ রায়, জীবন ঘোষাল, দামোদর মিশ্র, দ্বিজরাম, নিত্যানন্দ মিশ্র, নিধিরাম কবিচন্দ্ৰ, পুরুষোত্তম মিশ্ৰ, বনদূর্লভ, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, রমানাথ রায়, রামসিংহ ও রামগতি সেন।
চার
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষপাদে অনেকে ইংরেজি ভাষাও শিখতে আরম্ভ করেছিল। ইংরেজদের সঙ্গে কাজকর্মের সুবিধার জন্য এদেশের একশ্রেণীর লোকের মধ্যে ইংরেজি শেখার প্রবল আকাঙ্খা জেগেছিল। বস্তুতঃ ১৭৭৪ খ্ৰীস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্ট স্থাপনের পর থেকেই বাঙালী ইংরেজি শিখতে শুরু করেছিল। এ সময় আমরা সুপ্রিম কোটের আইনজীবীদের মধ্যে রামনারায়ণ মিশ্র ও আনন্দরামের নাম শুনি। সুপ্রিম কোটের কেরানীদের তো ইংরেজি শিখতেই হত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে শেরিফের আফিসের হেড ক্লার্ক রামমোহন মজুমদারের নাম হিকির ‘স্মৃতিকথা’য় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া, এটনীদের ক্লার্কদেরও ইংরেজি জানতে হত। এ রকম কেরানীদের মধ্যে আমরা হিকির ‘হেড কেরানী রামধন ঘোষের নাম শুনি। সে যুগে যারা সাহেবদের দেওয়ানী বা বেনিয়ানি করত, তাদেরও ইংরেজি জানতে হত। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির গোলন্দাজ বাহিনীর ক্যাপটেন নাথানিয়াল কিণ্ডারসলের স্ত্রী শ্ৰীমতী কিণ্ডারসলে ১৭৬৫ থেকে ১৭৬৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতায় বাসু করেছিলেন। তিনি তাঁর ভ্ৰমণ কাহিনীতে লিখে গেছেন যে এদেশের বেনিয়ানরা মোটামুটি ভাল ইংরেজি বলে। (‘usually speak pretty tolerable English’)। হেষ্টিংস-এর বেনিয়ান কান্তবাবুও ইংরেজি জানতেন।
এরা সকলে প্ৰথম প্ৰথম কিভাবে ইংরেজি শিখতেন, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তিনখানা শব্দকোষ প্ৰকাশিত হওয়ায় ইংরেজি শেখার খানিকটা সুবিধা হয়েছিল। এই তিনখানা শব্দকোষ হচ্ছে ১৭৯৩ খ্রীস্টাব্দে প্ৰকাশিত অ্যারন আপজন কৃত ‘ইঙ্গরাজি ও বাঙ্গালি বোকেবিলারি’, ১৭৯৭ খ্রীস্টাব্দে প্ৰকাশিত জন মিলারের ‘শিক্ষাগুরু’ ও ১৭৯৯ খ্ৰীস্টাব্দে প্রকাশিত হেনরী পিটস ফরস্টারের ‘ভোকাবুলারী’। এই তিনখান বইয়ের মধ্যে ফরস্টারের বইটাই বাঙালী সমাজের বিশেষ কাজে লেগেছিল। এ থেকে শব্দচয়ন করে বাঙালী কাজ চালাবার মত ইংরেজি শিখেছিল। সে যুগের বাঙালীরা অবশ্য গ্রামার বা ইডিয়মের ধার ধারত না। তবে সাহেবরা সে রকম ইংরেজি বুঝত।
শিক্ষাক্ষেত্রে অষ্টাদশ শতাব্দীর খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে জেনারেল ক্লড মাটিন (১৭৩৫-১৮০০) নামে কোম্পানির এক কর্মচারী কর্তৃক বিনামূল্যে ‘বিদ্যার্থীদের পাঠার্থে।’ এক বিদ্যায়তন স্থাপনের জন্য তেত্ৰিশ লক্ষ টাকা উইল করে রেখে যাওয়া। সেই টাকার কিছু অংশে পরবর্তী শতাব্দীতে স্থাপিত হয়েছিল কলকাতায় ‘লা মার্টিনিয়ার’ বিদ্যায়তন (১৮৩৩-৩৫)।
পাঁচ
অষ্টাদশ শতাব্দীর শিক্ষাপ্রসারে ওয়ারেন হেস্টিংস-এর (১৭৩২-১৮৮১) নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। হেস্টিংস ছিলেন একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি। প্ৰাচ্যবিদ্যাসমূহের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। তিনি হিন্দু আইনের যে বই এদেশের এগার জন পণ্ডিতদের দিয়ে প্রণয়ন করিয়েছিলেন তার কথা আমর! আগেই বলেছি। এ ছাড়া, তিনি হালহেডকে দিয়ে ইংরেজিতে বাংলাভাষার একখানা ব্যাকরণ লিখিয়েছিলেন এবং তা ছাপাবার জন্য চালস উইলকিনসকে দিয়ে বাংলা হরফ তৈরী করিয়েছিলেন। উইলকিনসকে দিয়ে তিনি ‘শ্ৰীমদভগবদগীতা’র ইংরেজি অনুবাদও করিয়েছিলেন, এবং তার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। মুসলমানদের উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি একটা মাদ্রাসাও স্থাপন করেছিলেন। এ সম্পর্কে ১৭৮০ খ্রীস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার শিক্ষিত পদস্থ মুসলমানরা ওয়ারেন হেস্টিংস-এব। সঙ্গে দেখা করে জানান যে, তারা মাজিউদ্দিন নামে একজন পণ্ডিতের সন্ধান পেয়েছেন, এবং এই সুযোগে একটা মাদ্রাসা বা কলেজ প্ৰতিষ্ঠা করলে মুসলমান ছাত্ররা মজিউদিনের অধীনে মুসলমান আইন শিখে সরকারী কাজে সহায়তা করতে পারবে। হেস্টিংস এই প্ৰস্তাবে সম্মত হয়ে পরবর্তী অকটোবর মাসে মজিউদিনের ওপর একটা মাদ্রাসা স্থাপনের ভার দেন। আগে বৌবাজারের দক্ষিণপূর্বে যে বাড়ীতে চার্চ অভ স্কটল্যাণ্ডের জেনানা মিশন ছিল, সেই জমির ওপরই মাদ্রাসটি প্রথম নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু সনাতনী হিন্দুদের তরফ থেকে এরূপ কোন প্ৰস্তাব না আসায়, কোন সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়নি। বস্তুতঃ শিক্ষার ব্যাপারে মুসলমানরা যেরূপ উদ্যোগী ছিল, সনাতনী হিন্দুরা সেরূপ ছিল না। এ সম্পর্কে অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট দানশীল মুসলমানের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি হচ্ছেন হাজী মহম্মদ মহসীন (১৭৩২-১৮১২)। তিনি মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতিকল্পে এক লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা আয়ের এক সম্পত্তি দান করেছিলেন। হুগলীর ইমামবাড়া, হুগলী কলেজ, মাদ্রাসা, মহসীন বৃত্তি প্ৰভৃতি তাঁরই অর্থ সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া, তার অর্থে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও হুগলীতে আরবী শিক্ষার জন্য বিদ্যায়তন স্থাপিত হয়েছিল।
গোড়ার দিকে ইংরেজদেরও এদেশে শিক্ষাবিস্তারের প্রয়াসের অভাব ছিল। এ সম্বন্ধে ডবলিউ. ডবলিউ. হাণ্টার বলেছেন–’During the early days of the East India Company’s rule the promotion of education was not recognised as a duty of government’। বস্তুতঃ শতাব্দীর উত্তীর্ণ হবার পর ১৮১৩ খ্রীস্টাব্দের,সময়েই শিক্ষাবিস্তারের জন্য প্রথম এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্ৰসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে পরবর্তী কালে ইংরেজি ভাষার শব্দ বাংলা ভাষাকে (বিশেষ করে কথ্যভাষাকে) বেশ সমৃদ্ধশালী করে তুলেছিল।