১২. লোকের মন জয় করবার রহস্য
আমি সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমন্ত্রিতদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন যিনি ইদানীং প্রচুর অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেকের মধ্যেই বেশ একটা সুখকর ছাপ ফেলার চেষ্টা করছিলেন। তিনি হীরে জহরত মণি মাণিক্যের মালা পরেছিলেন অথচ মুখের কোনো পরিচর্যা করেন নি। সে মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল শুধু তিক্ততা আর স্বার্থপরতা। তিনি এটা বোঝেন নি যে প্রতিটি পুরুষ কি জানেন, অর্থাৎ, কোনো মহিলার মুখে যে ভাব থাকে, সেটা তার জাঁকজমকপূর্ণ দেহের পোশাকের চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চার্লস্ শোয়াব একবার আমাকে বলেন, তাঁর হাসর দাম দশ লক্ষ ডলারেরও বেশি। কথাটা তিনি একটুও বাড়িয়ে বলেন নি। কারণ শোয়াবের ব্যক্তিত্ব, তার আকর্ষণ, মানুষকে চট করে ভালো লাগানোর ক্ষমতাগুলোই তার অস্বাভাবিক উন্নতির মূল ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধুর্যের মধ্যে ছিল তাঁর বিজয়ী হাসি।
একবার আমি মরিস শেভালিয়েরের সঙ্গে সারা বিকেলটা কাটাই–আর সত্যি বলতে কি আমি সম্পূর্ণ তাশ হই। গম্ভীর, অন্ধকার মুখ ভদ্রলোককে যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে আলাদাই লেগেছিল–যতক্ষণ না তিনি হাসলেন। তখনই মনে হল যেন মেঘের মধ্য দিয়ে একফালি সোনাঝরা রোদের হাসি। তার ওই হাসি না থাকলে মরিস শেভালিয়ের বোধ হয় প্যারীতে তার বাবা বা ভাইদে মতোই কাঠের আসবাবপত্র বানানোর কাজেই থেকে যেতেন।
কোনো কথার চেয়ে কাজের মধ্য দিয়েই মনের ভাব বেশি প্রকাশ পায় আর কোনো হাসির মধ্যে জেগে ওঠে এই কথাটাই আমি আপনাকে পছন্দ করি। আপনাকে দেখে খুব খুশি আর আনন্দিত হলাম।
এই জন্যই কুকুরদের এত দাম। আমাদের দেখে তাদের খুশি সত্যই বাঁধ মানে না। আর স্বাভাবিকভাবেই আমরাও তাই হই।
কিন্তু কৃত্রিম কোনো হাসি? না, তাকে কোনো লোককে ঠকানো যায় না। আমরা বুঝতে পারি সেটা যান্ত্রিক আর তাই সেটা আমরা পছন্দ করি না। আমি যে হাসির কথা বলছি সেটা হল সত্যিকার হৃদয় থেকে আনা হাসি। যে হাসি আসে অন্তর থেকে, এরকম কোনো হাসিই ভুবন জয় করতে পারে।
নিউইয়র্কের বিরাট এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিয়োজন অধিকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে, বিক্রয়কারিণী মেয়ে হিসেবে স্কুলের বেড়া পেরোয়নি এমন কোনো মেয়েকেও তিনি চাকরি দিতে প্রস্তুত যদি তার চমৎকার হাসি থাক, বদলে তিনি দর্শনশাস্ত্রের কোনো গম্ভীর পণ্ডিতকে চাইবেন না।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় রবার প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর বোর্ডের চেয়ারম্যান একবা আমাকে বলেছিলেন, যে তার মতে কোনো লোক তার কাজে আনন্দ না পেলে কখনো সাফল্য লাভ করেন না। এই শিল্পপতি ভদ্রলোক বলেছিলেন, প্রাচীন সেই তত্ত্ব কথায় তাঁর বিশ্বাস নেই যে কঠিন পরিশ্রম করলেই সব কাজে অনায়াসে সফল হওয়া যায়। তিনি বলেন : আমি এমন সব মানুষকে জানি যারা সাফল্য লাভ করেন যেহেতু তাদের কাজে তারা প্রভূত আনন্দ পেতেন। আবার অন্যদের দেখেছি তারা কাজ করতে শুরু করার পর সেটা একঘেয়ে হয়ে ওঠায় তাঁরা ব্যর্থ হলেন।
আপনি যদি চান অন্যেরা আপনাকে দেখে আনন্দিত হোক তাহলে অন্যদের দেখে আপনিও আনন্দ প্রকাশ করুন।
আমি হাজার হাজার ব্যবসায়ীকে বলেছি প্রতিদিন এক সপ্তাহ ধরে যাঁর সঙ্গেই দেখা হবে তাদের দেখে হাসতে। তারপর আমার ক্লাসে এসে জানাতে ফল কেমন হল। এতে কি কাজ হয়েছিল? দেখা যাক…এই যে নিউইয়র্ক কার্ব এক্সচেঞ্জর মি. উইলিয়াম বি. স্টাইনহার্টের লেখা একখানা চিঠি। তাঁর চিঠি কোনো ব্যতিক্রম নয় বরং এরকম আরো শয়ে শয়েই আছে।
‘আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় আঠারো বছর’, মি. স্টাইনহার্ট লিখেছিলেন, আর ওই সময়ে আমি কদাচিত স্ত্রীকে দেখে হেসেছি বা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার আগে খুব বেশি কথা বলেছি। ব্রডওয়েতে আমি ছিলাম সবচেয়ে অসুখী মানুষ।
‘আপনি যখন বললেন আমার হাসি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে তখন ঠিক করলাম এক সপ্তাহ ধরে সে চেষ্টা করব। আর তাই পরের দিন সকালে আয়নায় চুল আঁচড়ানোর সময় যখন আমার পেঁচার মতো মুখখানা দেখলাম তখনই নিজেকে বলে উঠলাম, বিল, তোমার মুখ থেকে ওই অন্ধকারটা দূর করতে হবে। তোমায় এবার হাসতে হবে। আর সেটা এখন থেকেই শুরু করা চাই’ প্রাতরাশের সময় আমি আমার স্ত্রীকে হেসে বললাম : সুপ্রভাত, প্রিয়া। ঠিকই যেমন ভেবেছিলাম।
‘আপনি আমাকে সাবধান করেছিলেন ও অবাক হতে পারে। আসলে, আপনি ওর প্রতিক্রিয়াটা কম করেই বলেছিলেন। সে বেশ ধাঁধায় পড়ে যায়। সে বেশ ধাক্কাও খায়। আমি স্ত্রীকে বললাম ভবিষ্যতে এমন কিছুই যে রোজ আশা করতে পারে। আর তাই দু মাস ধরে প্রত্যেক সকালে এই রকমই করে যাই।
‘আমার এই পরিবর্তিত মানসিক ভঙ্গি গত এক বছরে যা হয় নি সেই সুখ দু মাসে এনে দিয়েছে।
‘কোন অফিসে যাওয়ার সময় আমি বাড়ির নিকট বয়কে অভিনন্দন জানাই সুপ্রভাত’ বলে, সঙ্গে থাকে হাসি। দারোয়ানকে দেখেও তাকে হাসি দিয়ে অভিনন্দন জানাই। সাবওয়ের ক্যাসিয়ারকেও খুচরো নেবার সময় অভিনন্দন জানাই। অফিসের দরজায় দাঁড়ানোর সময়েও যাদের কখনো দেখি নি তাদেরও হাসিতে অভ্যর্থনা জানাই।’
‘আচমকাই আবিষ্কার করলাম সকলেই আমাকেও হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা করছে। যারা আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে আমি হাসিমুখেই তাদের কথা শুনি। হামিমুখেই তাদের বক্তব্য শুনি তাকে আমার ধারণা হয়েছে অভিযোগেই ব্যাপারটাও সহজে মিটে যায়। আমি দেখছি এই হাসিই আমাকে প্রত্যেকদিন অনেক বেশি টাকা এনে দিচ্ছে।
আর একজন ব্রোকারের সঙ্গেই আমার অফিস চালাই আমি। তার একজন কেরানি ভারি চমৎকার একটি তরুণ, আমার ওই হাসির ফলাফলে আমার এমনিই আনন্দ হয়েছিল যে তাকে একদিন আমার নতুন মানবিক জীবন দর্শনের কথা বলে ফেললাম। সে তখন স্বীকার করল সে যখন এই অফিসে প্রথম আসে তখন আমাকে সাঙ্ঘাতিক রকম অসুখী বলে ভাবতইদানিং কালে তার গেছে। সে জানিয়েছে আমি হাসলে সত্যিই ভালো লাগে।
‘আমার কাজের পদ্ধতিতে সমালোচনা করাও বন্ধ করেছি। দোষারোপের বদলে আমি এখন শুধু প্রশংসাই করতে থাকি। আমি কি চাই সে কথা বলা একদম ত্যাগ করেছি। এখন শুধু আমি চেষ্টা করি অন্য লোকদের দৃষ্টিতে সবকিছু যাচাই করতে। আর এগুলোই বলতে গেলে আমার জীবনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমি এখন সম্পূর্ণ এক আলাদা মানুষ-একজন অর্থবান, বন্ধুত্বেও সমৃদ্ধ, সুখী মানুষ-এর চেয়ে জীবনে আর কিসের দাম?
ব্যাপারটা মনে রাখবেন–মনে রাখবেন এ চিঠি এমন একজন লেখেন যার কাজ শেয়ার কেনাবেচা-যে ব্যবসাটা অতি কঠিন, শতকরা ৯৯ জনই যে কাজে ব্যর্থ হন।
আপনার হাসবার মতো মনের অবস্থা নেই? তাহলে আপনাকে দুটো কাজ করতে হবে। প্রথমে জোর করে হাসার চেষ্টা করুন। যদি একলা থাকেন তাহলে জোর করে এক কলি গান গাইবার চেষ্টা করুন বা শিস দিন। ভাবতে চেষ্টা করুন আপনি সুখী, আর তাতেই আপনি সুখী হবেন। হার্ভার্ডের অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস্ কথাটা এইভাবে বলেছিলেন :
‘কাজকে মনে হয় অনুভূতি অনুসরণ করে থাকে। তবে আসলে কাজ আর অনুভূতি এক সঙ্গেই চলে। তাই কাজের ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কারণ সেটা মনের এক্তিয়ার থাকে, আর তাতেই পরোক্ষে অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় যা ইচ্ছার বশবর্তী নয়।
তাই সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হল, যদি সুখ না থাকে, আনন্দিত হয়ে সেইভাবেই কথাবার্তা বলা, যেন আপনি সত্যই সুখী…।’
পৃথিবীতে প্রত্যেকেই সুখ অনুসন্ধান করে চলেছে–আর সেটা লাভ করার একটাই মাত্র পথ আছে। আর সেটা হল আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুখ কখনই বাইরের অবস্থার উপর নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে এ সম্বন্ধে আপনি কি ভাবেন তার উপর। একটা উদাহরণ দিচ্ছি–দুজন লোক একসঙ্গে, একই জায়গায় একই কাজ করতে পারে, দুজনেই একই টাকা আর সম্মানও পেতে পারে–তা সত্ত্বেও একজন দুঃখী আর অন্যজন সুখী হতে পারে। কেন? এর কারণ বিভিন্ন রকম মানসিক অবস্থা। চীন দেশে কুলিদের ঘর্মাক্ত কলেবরে প্রচণ্ড রোদে দৈনিক সাত সেন্ট আয় করতে যেমন হাসিমুখে কাজ করতে দেখেছি তেমনই দেকেছি এখানকার পার্ক অ্যাভিনিউতে।
‘কোনোকিছুই ভালো বা খারাপ নয়’, শেক্সপীয়ার বলেছেন? চিন্তাই এটা তৈরি করে।
লিঙ্কন একবার বলেছিলেন : কোনো লোক যতখানি সুখী হতে চায় ততটাই সুখী হতে পারে। তিনি –ঠিকই বলেছিলেন। এর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আমি সম্প্রতি দেখেছি। আমি একদিন নিউইয়র্কের লঙ আইল্যান্ড স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম। ঠিক আমার সামনেই ত্রিশ বা চল্লিশ জন প্রতিবন্ধী খঞ্জ লাঠি আর ক্রাচে ভর রেখে সিঁড়ি বেড়ে উঠছিল। একটি ছেলেকে প্রায় কোলে করেই তুলতে হয়। ওদের হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গি লক্ষ্য করে আমি অবাক হয়ে যাই। ছেলেদের সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে যে লোকটি ছিল তাকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, হ্যাঁ, ব্যাপারটা হল কোনো ছেলে যখন জানতে পারে সে জন্মের মতোই খোঁড়া হয়ে গেছে, তখন প্রথমে সে একটু আঘাত পেলেও সেটা পরে কাটিয়ে ওঠে, তারপর ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে অন্যান্য সাধারণ ছেলের মতোই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ওই ছেলেদের আমার অভিনন্দন জানাই। ওদের কাছে যে শিক্ষা পেয়েছিলাম তা কোনোদিনই ভুলব না।
মেরি পিকফোর্ড যখন ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চলেছিলেন তখন তার সঙ্গে আমি একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম। পৃথিবীর সবাই তখন বোধহয় ভেবে নেয় মেরি পিকফোর্ড অত্যন্ত বিরক্ত আর অসুখী। কিন্তু আমি দেখলাম তিনি বেশ শান্ত স্বভাবের বেশ বিজয়িনী কোনো মহিলা, এমন কাউকে আমি দেখি নি। তার মুখ থেকে সুখ ফেটে পড়ছিল। তার গোপন রহস্যটা কি? ব্যাপারটা তিনি প্রকাশ করেছেন পঁয়ত্রিশ পাতার একটা ছোট্ট বইতে পড়ে দেখলে আনন্দ পাবেন। বইটার নাম ‘হোয়াই নট ট্রাই গড?’
সেন্টলুইয়ের কার্ডিনালের ফ্রাঙ্কলিন বেটগার হলেন আমেরিকার অতি দক্ষ এক বীমাকারী পুরুষ। বেশ ক’বছর আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, যার মুখে সদাই হাসি লেগে থাকে তিনি সব সময়েই স্বাগতম। অতএব কোনো লোকের অফিস কামরায় ঢোকার আগে তিনি একটু থেকে মনে মনে ভেবে নেন কি কি জিনিসের জন্য নিজেকে তিনি ধন্যবাদ জানাতে পারেন। তারপর মুখে একজন সৎ মানুষের হাসি ফুটিয়ে তিনি সেই ঘরে প্রবেশ করেন।
এই সামান্য কৌশলেই তিনি বীমা করানোর কাজে এমন সাফল্য অর্জন করেছেন বলেই ভাবেন।
এলবার্ট হাভার্ডের এই সুন্দর উপদেশটার কথাটা একটু পর্যালোচনা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন শুধু পর্যালোচনায় কাজ হবে না যতক্ষণ না কাজে লাগাচ্ছেন এটা :
যখনই বাড়ির বাইরে যাবেন, মাথাটা উঁচু রেখে ফুসফুঁসে বেশ হাওয়া ভরে নিন, বেশ কিছুটা সূর্যকিরণ গায়ে মেখে নিন। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই হেসে অভ্যর্থনা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তরিকভাবে করমর্দন করুন। ভুল বোঝার কথা মোটেও ভাবনে না আর নিজের নিজের শত্রুদের কথা ভেবে এক মিনিট সময়ও নষ্ট করবেন না। কি করতে চলেছেন ভেবে মনটাকে দৃঢ় করে তুলুন, আর তারপর কোনোকিছু না ভেবেই ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যান। যে সব দারুণ কাজ করতে মনস্থ করেছেন সেই কথাটাই ভাবতে থাকুন–দেখবেন যে, দিন এগিয়ে চললেই আপনি অবচেতন ভাবেই আপনার ইচ্ছা পূরণ করার দিকে এগিয়ে চলেছেন আর সুযোগও পাচ্ছেন, ঠিক যেমন ভাবে প্রবাল, সাগরের ঢেউ থেকে তার দারকারি জিনিসটুকু সংগ্রহ করে নেয়। আপনার মনে আপনার যে সামর্থ, আন্তরিক আর দরকারি ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চান তাই শুধু ভাবতে থাকুন। দেখবেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপনি নিজেকে যেমন কল্পনা করেছেন সেই রকম ব্যক্তিত্ব সম্পন্নই আপনি হয়ে উঠছেন…চিন্তাই হল আসল। সর্বদাই যোগ্য একটা মন তৈরির চেষ্টা করুন-সাহস, সারল্য আর আনন্দময় একটা ভাব। ঠিক ভাবনার পরিণতিতেই আসে সৃষ্টি দক্ষতা। সব জিনিসই আসে ইচ্ছা থেকে আর প্রতিটি আন্তরিক প্রার্থনাই সফল হয়।
প্রাচীন চীনারা খুবই জ্ঞানী মানুষ ছিল–পৃথিবীর নানা ব্যাপারে তাদের জ্ঞান ছিল অসীম। তাদের একটা প্রবাদ নিয়ে আমাদের উচিত সেটা আমাদের টুপির নিচে সেঁটে রাখা। সেটা হল এই রকম : যে মানুষের মুখে হাসি নেই, তার কোনো দোকান খোলা উচিত নয়।
আর দোকানের কথা বলতে গেলে ফ্রাঙ্ক আর্ভিন ফ্লেচারের বিজ্ঞাপনটার কথা মনে রাখা দরকার। তিনি দিয়েছেন এই ঘরোয়া দার্শনিক তত্ত্ব :
খুশির দিনের হাসির মূল্য—
এতে খরচ নেই, তবে সৃষ্টি করে অনেক কিছু।
এতে যারা গ্রহীতা তাদের প্রচুর লাভ হয়, অথচ যারা দেয় তাদের কোনো ক্ষতি হয় না।
এটা ঘটে যায় চোখেল নিমিষে কিন্তু তার স্মৃতি থেক যায় বহুদিন।
কেউ এমন বড় মানুষ নন যার এটি ছাড়াই চলে যায়, আর এমন কেউ দরিদ্রও নেই যার এতে লাভ হয় না।
এতে গৃহে সুখ আসে, ব্যবসায়ে আসে সুনাম, আর হাসি হল বন্ধুত্বের চিহ্ন।
ক্লান্ত মানুষের কাছে হাসি হল বিশ্রাম, হতাশের কাছে আশার আলো, দুঃখিতের কাছে সূর্যের আলো, আর কষ্ট দূর করার ওষুধ।
তা সত্ত্বেও এটা কেনা যায় না, ভিক্ষা করে আনা যায় না, ধার করতে বা চুরি করতেও পারা যায় –কারণ হাসি যতক্ষণ না কাউকে দেয়া যায় ততক্ষণ তার কোনো জাগতিক মূল্য নেই।
আর বড়দিনের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড়ে দোকানের কর্মীরা যদি শ্রান্তিতে আমাদের তা না দিতে পারে আপনারা কি তাদের এই হাসির এক কণা দিয়ে আসতে পারেন না।
কারণ হাসি তাদের বেশি চাই যাদের দেবার মতো আর নেই।
অতএব যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক তাহলে দু নম্বর নীতি হল; হাসুন!