১২
জোয়ার্দার মেয়ের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বসেছেন। সুলতানা বসেন নি। কিছুদিন ধরে তিনি স্বামীর সঙ্গে খেতে বসছেন না। অনিকা বলল, আমি একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করছি জবাব দিতে পারবে?
জোয়ার্দার বললেন, না।
চেষ্টা করে দেখ। চেষ্টা না করেই বলছ, ‘পারব না’।
জোয়ার্দার বললেন, আমি চেষ্টা করলেও পারব না।
অনিকা বলল,
‘নাই তাই খাচ্ছ থাকলে কোথায় পেতে
কহেন কবি কালিদাস পথে যেতে যেতে।’
জোয়ার্দার বললেন, পারব না মা।
কথাবার্তার এই পর্যায়ে খাবার টেবিলের পাশে সুলতানা এসে দাঁড়ালেন। অনিকা বলল, এই ধাঁধাটার উত্তর তুমি দিতে পারবে?
সুলতানা বললেন, তোমার খাওয়া শেষ হয়েছে তারপরেও বসে আছ কেন? উঠে হাতমুখ ধোও, নিজের ঘরে যাও। কাল ছুটি আছে এক ঘণ্টা টিভি দেখতে পারবে।
অনিকা উঠে গেল। সুলতানা অনিকার চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব আশা করি সত্যি উত্তর দেবে।
জোয়ার্দার বললেন, “আমি তো কখনো মিথ্যা বলি না’। সুলতানা বললেন, শুরুই তো করলে মিথ্যা দিয়ে। এমন কেউ নেই যে মিথ্যা বলে না।
জোয়ার্দার হতাশ গলায় বললেন, কী জিজ্ঞেস করবে জিজ্ঞেস কর।
সুলতানা বললেন, মিথ্যা বলে পার পাবে না। আমার কাছে সব তথ্যপ্রমাণ আছে। রঞ্জু লোক লাগিয়ে রেখেছিল সে বের করেছে। ঐ মেয়েটার সঙ্গে যে তোমার বিয়ে হয়েছিল তা আমি জানি।
কোন মেয়েটা?
ন্যাকা সাজবে না। খবরদার ন্যাকা সাজবে না। শায়লা মাগির কথা বলছি।
এখন বুঝতে পারছি। গালাগালি করছ কেন? এটা ঠিক না।
তুমি যদি তার সাথে লটরপটর করতে পার আমি গালাগালি করতে পারি।
সুলতানা হাতে মোবাইল নিয়ে বসেছিলেন। মোবাইল বাজছে। তিনি মোবাইল হাতে উঠে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন, হাতমুখ ধুয়ে বসার ঘরে বসে থাক। আমি আসছি।
টেলিফোন করেছে রঞ্জু। তার গলার স্বরে রাজ্যের ভয়। কথাও ঠিকমতো বলতে পারছে না।
বুবু! একটু আসতে পারবে? আজকে মারাই যাচ্ছিলাম। চোখ গেলে ফেলতে চেয়েছিল। অনেক কষ্টে চোখ বাঁচিয়েছি।
কে চোখ গেলে ফেলতে চেয়েছিল?
দুলাভাইয়ের বিড়ালটা।
তোর দুলাইভাইয়ের আবার কীসের বিড়াল?
রঞ্জু বলল, যে বিড়ালটা আমাকে কামড়ায় সেটা দুলাভাইয়ের বিড়াল।
তুই এখন কোথায়?
স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বুবু গাড়ি পাঠিয়েছি তুমি আস। তোমার পায়ে পড়ি দুলাভাইকে সঙ্গে আনবে না।
জোয়ার্দার অনেকক্ষণ হল বসার ঘরে বসে আছেন। সুলতানা আসছে না। এগারটা বেজে গেছে এখন ঘুমুতে যাওয়া উচিত। তবে কাল ছুটির দিন কাজেই আজ একটু দেরিতে ঘুমুতে গেলেও ক্ষতি হবে না।
টিভি দেখতে দেখতে জোয়ার্দার ঘুমিয়ে পড়লেন।
.
রঞ্জু কেবিনে শুয়ে কাতরাচ্ছে। বিড়াল তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড়েছে। সেলাই লেগেছে নয়টা। ডাক্তার তাকে সিডেটিভ ইনজেকশান দিয়েছেন।
সুলতানা হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন রঞ্জু ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাত দিয়ে অদৃশ্য কিছু তাড়াবার চেষ্টা করছে।
টেলিফোনে ক্রমাগত রিং হচ্ছে। জোয়ার্দারের ঘুম ভাঙল রিঙের শব্দে।
হ্যালো কে?
আমি শায়লা।
ও আচ্ছা।
জোয়ার্দার টিভির উপর রাখা ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত একটা দশ।
এতবার টেলিফোন করলাম টেলিফোন ধরছ না। প্রথমে তোমার মোবাইলে করেছি না পেয়ে শেষে ল্যান্ডফোনে।
জোয়ার্দার বললেন, আপনি কি প্রচুর অ্যালকোহল খেয়েছেন?
শায়লা বলল, হ্যাঁ খেয়েছি। আমি পুরোপুরি ড্রাঙ্ক। সোজা বাংলায় মাতাল। মাতাল বলেই তুমি তুমি করছি।
শায়লা কোনো সমস্যা?
হ্যাঁ সমস্যা। তোমার কারণে একজন আজ আমাকে চূড়ান্ত অপমান করেছে।
কে অপমান করেছে? সুলতানা?
না। মিসির আলি সাহেব। আপনার তোলা বরকতউল্লাহর ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম। ছবিগুলো দেখতে বললাম। উনি দেখলেন না। বরং এমন কথা বললেন যেন আমি একজন মানসিক রোগী।
মিসির আলি সাহেব কে?
আছেন একজন আপনি না চিনলেও চলবে।
শায়লা কাঁদছ কেন?
মাতাল হয়েছি এই জন্য কাঁদছি। আপনি তো মাতাল হন নি। আপনি কেন আমাকে তুমি তুমি করছেন?
সরি।
আপনি আর কখনো আমার অফিসে আসবেন না।
আচ্ছা আর যাব না।
শায়লা টেলিফোন রেখে দিল।