১২. মাগরেবের নামাজের আজান

খবির হোসেন মাগরেবের নামাজের আজান দিলেন এবং বিস্মিত হয়ে লক্ষ করলেন, বেশ কিছু লোকজন আসছে। তাঁর মন আনন্দে পূর্ণ হল। একটি লাইন পুরো হলেও মনে শান্তি। এক জনের কথা আল্লাহ্ না-শুনতে পারেন, কিন্তু দশ জন মানুষ একত্রে দাঁড়ালে অন্য রকম জোর হয়। নামাজ পড়িয়েও আনন্দ।

অজুর পানি তোতা নেই, এটা একটা সমস্য হতে পারে। সবাই এসে অজু করতে চাইবে, এবং বিরক্ত হবে। পরে অন্য এক দিন যখন নামাজে যেতে ইচ্ছা করবে তখন যাবে না এই অজুহাতে যে, অজুর পানি নেই। মানুষের অজুহাতের শেষ নেই। এরা অন্ধকার থেকেও অজুহাত খুঁজে বের করে।

খবির হোসেন আজান শেষ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। না, লোকগুলি তাঁর এখানে আসছে না। উত্তরের রাস্তা ধরে এগুচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে? মনিরউদ্দিনের বাড়ির দিকে কি? মনিরউদ্দিনের কিছু হয়েছে নাকি?

শক্ত বাতাস দিচ্ছে। মেঘ উড়ে-উড়ে যাচ্ছে বাতাসে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টির একটি ফোঁটা পড়ে নি। এরকম কিছুক্ষণ চললে হয়তো আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঝকঝকে তারা উঠবে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলেই তাঁর বান্দার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। বান্দারা অন্ধ বলে সেটা টের পায় না। ফাবিয়ায়ে আলা রাৰিকুমা তুকাজজিবান। আল্লাহপাকের নিয়ামত অস্বীকার করার কোন পথ নেই। এই অনন্ত আকাশ, শস্যের বিশাল মাঠ, জলভরা নদীসবই তাঁর দান।

নামাজে দাঁড়িয়ে খবির হোসেনের মনে হল, তিনি কান্নার শব্দ শুনছেন। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই মনের ভুল। মনিরউদ্দিনের বাড়ি অনেকটা দূরে। এতদূর থেকে কান্নার শব্দ আসার কথা নয়। এটা অন্য কোনো শব্দ। আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসছে, সেই আনন্দে হয়তো দল বেঁধে সবাই বের হয়েছে। আবার খবির হোসেনের নামাজের গণ্ডগোল হল। রুকুতে না-গিয়ে সেজদায় চলে গেলেন। শয়তান চলাফেরা করে রক্তো সে-ই এইসব করাচ্ছে। তুচ্ছ জাগতিক বিষয়ে তাঁর মন ফিরিয়ে আনছে। হে আল্লাহপাক, হে করুণাময়, তুমি শয়তানের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর।

কিন্তু কান্নার শব্দটি সত্যি-সত্যি আসছে। এর মানে কী? কে কাঁদবে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *