১২. বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে ভারতীয় কৃষি: কৃষিক্ষেত্রে সংকট ও ভারতীয় কৃষকের আত্মহত্যা

দ্বাদশ অধ্যায়

বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে ভারতীয় কৃষি
কৃষিক্ষেত্রে সংকট ও ভারতীয় কৃষকের আত্মহত্যা

ভারতীয় কৃষি অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের সামগ্রিক প্রভাব বোঝার জন্য আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনাগুলির একটি সারসংক্ষেপ এখানে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হিসেবে রাখা হল।

বিগত তিন দশক ধরে ভারতীয় কৃষির মূলগত বৈশিষ্ট্য কোনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশিমাফিক লাগু করা বাণিজ্য ও মেধা-স্বত্ব সংক্রান্ত নীতিগুলি ভারতীয় কৃষিতে সরকারের ভূমিকা কমিয়ে দেশি-বিদেশি কোম্পানি, বহুজাতিক উৎপাদক ও বাণিজ্য কোম্পানিগুলির ভূমিকাকে অনেকখানি বাড়িয়ে তুলেছে, ভারতীয় কৃষিকে তা বিশ্ব-বাজারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে এর ফল হয়েছে সুদূরপ্রসারী। এই নীতিগুলি এবং ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে সেগুলির গুরুত্ব নিয়ে আমরা সানুপুঙ্খ আলোচনা করেছি। আমরা বিভিন্ন তথ্যের সাহায্যে দেখেছি নয়া আর্থিক নীতি প্রয়োগের পর ভারতে প্রধান প্রধান কৃষিপণ্যগুলির উৎপাদন-বৃদ্ধির হারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। যদিও কৃষিতে নতুন ধরনের অধিক উৎপাদনশীল উপকরণের প্রয়োগ বেড়েছে, ব্যক্তিগতভাবে চাষির উদ্যোগ বেড়েছে, ফলে সরকারের উৎপাদনশীল বিনিয়োগ কমলেও বেসরকারি উদ্যোগে সেচ ও বীজের উৎপাদন যথেষ্ট বেড়েছে। কিন্তু এই সুফল সবসময় ছোট ও মাঝারি চাষির স্বার্থের অনুকূলে কাজে লেগেছে এমন নয়। কৃষি উৎপাদনের বিভিন্ন দিকে সরকারি সহযোগিতা হ্রাস, বীজ, সার ইত্যাদি কৃষি উপকরণের বাজারে সরকারের ভূমিকা হ্রাস এবং বেসরকারি ভূমিকা বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে ঋণের বাজারে ঋণের জোগানের উৎস হিসেবে বড় জমির মালিক ব্যবসায়ী-মহাজনের প্রাধান্য ইত্যাদির কারণে কৃষি-উৎপাদন চালানোর ক্ষেত্রে চাষির ব্যক্তিগত দায় অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। সেচের জলের জোগান অনেকাংশে বড় চাষি, পণ্য ও উপকরণ ব্যবসায়ী এবং ঋণদাতার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বীজের ক্ষেত্রেও সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থার জায়গায় ব্যবসায়ী-মহাজনের ভূমিকা বেড়েছে। শুধু যে প্রতিটি উৎপাদনের উপকরণের ওপর ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই নয়, উপযুক্ত সময়ে সেচের জলের মতো চাষের অত্যাবশ্যক উপকরণগুলি যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষি-উপকরণের বাজারে বিদেশি কোম্পানিগুলির প্রবেশের বাধা অনেকাংশে দূর হওয়ায় সার ও অধিক ফলনশীল বীজের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এইসব আমদানিকৃত উপকরণ যেহেতু অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই চাষের খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বহুজাতিক সংস্থার জোগান দেওয়া উপকরণের সংমিশ্রণে যে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ চালু হয়েছে, সে সম্বন্ধে চাষির যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় তাকে এই উপকরণগুলির যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারে জোগানদাতা কোম্পানির এজেন্টদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কৃষি-উপকরণ ব্যবহার হওয়ার তথ্য সামনে আসছে। এসবের ফলে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে এবং শস্যবৈচিত্রের প্রসার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেইসঙ্গে শুধু উৎপাদন-ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে তাই নয়, অত্যধিক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জমির উৎপাদিকা শক্তি ক্ষয় করেছে, ভূগর্ভস্থ জল ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে, জল নিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা, জলের জোগানের ওপর গ্রামের অধিক ক্ষমতাশালী বড় জমির মালিক-ব্যবসায়ী ঋণদাতার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ অনেকসময় জলের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে তুলছে। সেইসঙ্গে বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলিতে সরকারি ব্যয়হ্রাস এই সমস্যাকে তীব্রতর করে তুলেছে।

অন্যদিকে কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের সরাসরি যোগের পরিণামে আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার সঙ্গে দেশীয় বাজারে শস্যপণ্যের দামের ওঠানামার ফলে কৃষি-উৎপাদন থেকে চাষির আয় অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, কৃষি-উৎপাদনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। একই সঙ্গে খোলা-বাজার নীতি কৃষিপণ্যের আমদানিকেও অবাধ করেছে। অধিক ব্যয়ে তৈরি দেশি শস্যপণ্য শুধু যে আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নত দেশের ভরতুকি-নির্ভর সস্তার পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে তাই নয়, দেশীয় বাজারেও ভারতীয় পণ্যকে আমদানি-কৃত সস্তার বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এইভাবে বিশ্বায়নের ফলে ভারতীয় কৃষি ও কৃষকের আয়ে ও জীবনযাত্রায় অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ভারতীয় কৃষিতে এই অনিশ্চয়তার প্রকাশ ঘটেছে ২০০০ সালের আগে ও পরে বিভিন্ন রাজ্যে ভারতীয় কৃষকের জীবনে ঘনিয়ে ওঠা তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে। এই অনিশ্চয়তা তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছিল এবং সেই অবস্থা থেকে ভারতীয় কৃষক এখনও সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি।

চাষির দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে জিন-রূপান্তরিত বিটি তুলার ভূমিকা

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রস্তাবিত মেধা-স্বত্ব আইনের প্রয়োগ ও বীজের অবাধ আমদানি কৃষিক্ষেত্রে জিনগত সংমিশ্রণে রূপান্তরিত নতুন অধিক ফলনশীল পেটেন্ট করা বীজের ব্যবহার বাড়িয়ে তোলে। বিটি তুলাবীজ একমাত্র জিনগত রূপান্তরের দ্বারা নির্মিত অধিক ফলনশীল তুলাবীজ, যার চাষ এদেশে আইনের অনুমতি পেয়েছে। ভারত সরকারের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক ১৯৮৬ সালে এই বিশেষ জিন-পরিবর্তিত বীজটিকে পরিবেশগত অনুমতি দেয়। আমাদের দেশে এখনও অবধি ১১২৮ রকমের বিটি তুলার হাইব্রিড বীজ চাষের জন্য পাওয়া যায়। এই বিটি তুলাবীজ দশটি রাজ্যে চাষ হয়। এগুলি হল: গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, তামিলনাডু, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং রাজস্থান। বিটি তুলা চাষের অধীন জমির পরিমাণ ২০০২ সালে ২৯০৭৩ হেক্টর থেকে বেড়ে ২০১৬–’১৭ সালে ৮৫.২৯ লাখ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। এই পরিমাণটি মোট তুলাচাষের এলাকার শতকরা ৮১ ভাগ।

আমদানি-রফতানি সম্পর্কিত নির্দেশাবলি এবং চারাগাছ, ফল এবং বীজের আমদানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংশোধিত ১৯৮৯ সালের নীতির সাপেক্ষে, ২০০২ সালের জাতীয় বীজ নীতি সমস্ত বীজ ও চারাগাছের উপকরণগুলিকে এদেশে বাধাহীন ভাবে আমদানি করার অনুমতি দেয়। নতুন উদ্ভাবিত বীজের সমস্ত প্রকার ধরনই এই অনুমতি পায়।

এটা প্রমাণিত যে, বিটি তুলা চাষ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বীজ, সার, সেচ এই সমস্ত খাতে বিটি তুলা চাষের ব্যয় সাধারণ উচ্চফলনশীল চাষের তুলনায় অনেক বেশি, একমাত্র কীটনাশক খাতে ব্যয় এ ক্ষেত্রে সামান্য কম। বিটি তুলার কার্যকারিতা সম্বন্ধে যাঁরা অনুসন্ধান করেছেন তাঁরা বিটি তুলার উৎপাদনশীলতা সম্বন্ধে একমত নন। একর-প্রতি বিটি তুলার উৎপাদন-ব্যয় অনেক বেশি, আবার বিটি তুলা চাষে প্রতি একরে উৎপাদনশীলতার মাত্রাও সাধারণ উচ্চফলনশীল বীজের তুলনায় অনেক বেশি। কেউ কেউ আবার দেখেছেন, বিটি তুলা চাষে ব্যয় বেশি কিন্তু উৎপাদনশীলতা কম, ফলে চাষির লাভ হয় না। চাষি ফলন থেকে যে-দাম পায় তাতে চাষের বিপুল খরচ মেটানো যায় না, বিটি তুলা চাষ করলে চাষির বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ২০০৩ সালে সুমন সহায় ও এস রহমান অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ১০০টি জোতের চাষিদের নিয়ে তৃণমূল স্তরে একটি সমীক্ষা করেন। এই চাষিরা সকলেই পাশাপাশি বিটি ও সাধারণ তুলার চাষ করত। জমির মান, সেচের সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি অনুযায়ী জোতগুলিকে উচ্চ মানসম্পন্ন, মাঝারি মানসম্পন্ন, ও নিম্ন মানসম্পন্ন— এই তিন প্রকার জোতে ভাগ করে নিয়ে এই দুই প্রকার তুলা চাষের উৎপাদন-ব্যয়, উৎপাদনশীলতা, লাভ ইত্যাদি নিয়ে তুলনামূলক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ চালানো হয়। সাধারণ তুলা পরিণতি পায় ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে, বিটি তুলা পরিণতি পায় ১০০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে, কিন্তু এদের পাতা এবং ডালের বৃদ্ধি সাধারণ তুলার তুলনায় কম। বিটি তুলার দু’টি ধরন এখানে বিবেচনা করা হয়েছে, বিটি ১৬২ ও বিটি ১৮৪। তাছাড়া বিটি তুলায় সাধারণ তুলার তুলনায় বলের সংখ্যা কম (গড়ে প্রতিটি গাছে ৫০টি, যেখানে সাধারণ তুলার ক্ষেত্রে বলের সংখ্যা গড়ে চারাগাছ-প্রতি ৯০টি)। বিটি তুলার ক্ষেত্রে বল তাড়াতাড়ি পড়ে যায়, বিটি তুলায় সাধারণ তুলার তুলনায় পাতার দৈর্ঘও ছোট।

সুমন সহায় ও এস রহমানের পরিসাংখ্যিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, বিটি তুলা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সাধারণত চারা গাছকে সুরক্ষিত রাখতে পারলেও তার বিশেষ একধরনের পোকার (বলওয়ার্ম) শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেখা যায় বিটি ও সাধারণ বীজের মধ্যে উৎপাদনশীলতার পার্থক্য আছে। নিকৃষ্টতম, মাঝারি ও উৎকৃষ্টতম— এই তিন ধরনের বিটি বীজের উৎপাদনশীলতা যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ২.৭৫, ৪.৭৫ এবং ৭.৫ কুইন্টাল, সেখানে সাধারণ বীজের ক্ষেত্রে এই মাপগুলি প্রতি হেক্টরে ৩.২৫, ৫.৫০, এবং ৯.০ কুইন্টাল। অথচ বিটি বীজের ক্ষেত্রে এই উৎপাদনশীলতা পাওয়ার জন্য অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হয়েছে। সহায় ও রহমানের সমীক্ষাভিত্তিক বিশ্লেষণে বিটি বীজের চাষে যেখানে বিনিয়োগ করতে হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৫৭১৬ টাকা, সাধারণ বীজে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতি হেক্টরে ৪৭৩৩ টাকা। খরচের এই পার্থক্যের মূল কারণ, সুমন সহায় ও রহমানের সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ গবেষণায় তৈরি বিটি বীজের খরচ সাধারণ বীজের চার গুণেরও বেশি। কিন্তু দেখা গেছে যে-সাধারণ বীজ ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও উচ্চফলনশীল। এই বীজের গুণগত মানের তুলনায় বিটি পদ্ধতিতে তৈরি বীজের মান অত উচ্চস্তরের না হওয়ায় এই বীজ থেকে তৈরি ফসলের বাজার-দাম সাধারণ বীজে তৈরি তুলার দামের তুলনায় অনেক কম। এই সমস্ত কারণের মিলিত ফল হল, চাষি তার অতিরিক্ত ব্যয় অনুযায়ী বিটি বীজে তৈরি ফসলের দাম পেল না। সহায় ও রহমান দেখিয়েছেন, বিটি বীজের ফসলে চাষির লাভ সাধারণ বীজের ফসলের তুলনায় অনেক কম। নিকৃষ্টতম জমি থেকে বিটি বীজের চাষে চাষির বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।

সারণি ১২.১ সহায় ও রহমানের সমীক্ষা থেকে বিটি ও সাধারণ উচ্চফলনশীল বীজে তুলনামূলক বিনিয়োগ (টাকা/প্রতি হেক্টরে)

 সাধারণ উচ্চফলনশীলবিটি তুলা
বীজ৪০০১৬০০
সার২৮০০২৮০০
কীটনাশক১৫৩৫১৩১৬
মোট৪৭৩৩৫৭১৬

সহায় এবং রহমানের এই পর্যবেক্ষণ ২০০৪–’০৫ সালে বিটি বীজের তুলা-চাষিদের আত্মহত্যার ঘটনার যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিলেও পরবর্তী বেশ কিছু সমীক্ষানির্ভর বিশ্লেষণে এর বিপরীত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে। আসলে সহায় ও রহমান উল্লেখ করেছেন যে, মাহাইও-মনসান্টো কোম্পানির জোগান দেওয়া এই বিশেষ বিটি তুলা-বীজটি গুণগত মানে বাজারে লভ্য বিভিন্ন ধরনের বীজের তুলনায় নিম্ন গুণমান সম্পন্ন। অপেক্ষাকৃত উচ্চতর গুণমানসম্পন্ন বীজের জোগানদাতা বিভিন্ন দেশি বীজ-কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও এই বিশেষ বীজটিকে কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেই প্রশ্নটি তাঁরা তুলেছেন।

এ নারায়ণমূর্তি (২০০৬) দেখিয়েছেন, বিটি তুলার উৎপাদন-ব্যয় অত্যধিক বেশি ঠিকই, কিন্তু এই বীজের তুলা-চাষে উৎপাদনশীলতাও যথেষ্ট বেশি। ফলে সাধারণ উচ্চফলনশীল বীজের তুলনায় প্রতি একক উৎপাদন-ব্যয় থেকে উৎপাদন হয় অনেক বেশি, অর্থাৎ এই চাষ বিনিয়োগ-দক্ষ। বিটি তুলা চাষে ব্যয়ের তুলনায় লাভও অনেক বেশি থাকে বলে বিটি তুলার চাষ সাধারণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের দেশের ছোট ও ক্ষুদ্র চাষির বিটি তুলাচাষের বিপুল প্রারম্ভিক বিনিয়োগভার বহন করা সম্ভব হয় না, ফলে প্রায়শই বিটি তুলার ছোট বা প্রান্তিক চাষি বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে সেই খরচ মিটিয়ে থাকে। তাই চাষ করার পর ফসল বাজারজাত করার সময় চাষি যদি দেখে তুলার বাজার-দাম এত নীচে নেমে গেছে যে ওই দামে ফসল বিক্রি করে সে সুদ সমেত তার বিপুল ঋণ শোধ করতে পারবে না, তখন বিপদে পড়ে। অনেক সময়ে চাষিকে আত্মহত্যার পথ নিতে হয়। গম ও ধানের ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক বা প্রযুক্তিগত সহায়তায় হাইব্রিড জিন-পরিবর্তিত বীজ তৈরি করছিল, তাদের এই শর্তে গম ও ধানের বীজ আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হয় যে, বীজ আমদানির দু’বছরের মধ্যে বিদেশি কোম্পানিটি মূল বীজ বা ব্রিডার বীজ তৈরির প্রকৌশলটি এই কোম্পানির হাতে তুলে দেবে। এই নতুন জিন-রূপান্তরিত বীজের বহুল ব্যবহার ভারতীয় তুলা, দানাশস্য ও সবজির বাজারে অভাবনীয় প্রভাব সৃষ্টি করে। এই অধিক ফলনশীল বীজ দেশের বাজার থেকে দেশি সনাতন বীজ ও চারার ব্যবহার কমিয়ে হাইব্রিড শস্যের ব্যাপক ব্যবহার ঘটায়। কিন্তু এই নতুন বীজ সাধারণভাবে অধিক ফলনশীল হলেও এর থেকে ফলন অনেকসময়েই অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে এই বীজের ব্যবহার অতিরিক্ত ব্যয়বহুল, উপযুক্ত পরিমাণে মিশ্রিত সার ও জলের প্রয়োগ ছাড়া এই বীজ থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। ২০০২ সালে বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টো ও ভারতীয় বীজ কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ভারতে হাইব্রিড বিটি তুলার উৎপাদন শুরু হয়। এই বীজের ব্যবহার অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যয়বহুল কৃষি-উপকরণের ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ ছাড়াও এই বীজের পরিবেশগত ও অন্যান্য নানা কুফল নিয়ে বিভিন্ন বিপরীত পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও এর ব্যবহার সর্বব্যাপী হয়ে ওঠে ও সনাতন দেশি বীজগুলি বাজার থেকে অপসারিত হয়।

২০০০ সালের প্রথম দশকে অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে বহুসংখ্যক তুলা-চাষির আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে ছিল দেশের বাজারে অতিরিক্ত ব্যয়ে বিটি বীজের সাহায্যে তৈরি তুলা বিক্রি করতে না পারা। একই সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার খোলা-বাজার নীতির অনুসরণে ভারতের বাজারে ভরতুকি-যুক্ত সস্তার তুলা নিয়ে আমেরিকা প্রবেশ করে। বস্তুত ১৯৯৮-২০০৩ এর হিসাবে দেখা গেছে, আমেরিকা তুলার যে-রফতানি মূল্য ধার্য করেছিল তা সে দেশে তুলার উৎপাদন ব্যয়ের থেকে গড়ে শতকরা ৫০ ভাগেরও কম। ভারত সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে শস্যসংগ্রহের পরিবর্তিত নীতিটি এক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। ২০০৪–০৫ সালে সরকার যে সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেছিল তা মহারাষ্ট্রে তুলার উৎপাদন-ব্যয়ের থেকে কম ছিল। খোলা-বাজার নীতি, জিন-রূপান্তরিত বিটি বীজের বহুল ব্যবহার, চাষের ব্যয়ের বিপুল বৃদ্ধি, সরকারি সহযোগিতা হ্রাস ও স্বল্প সুদে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অভাব— এইসমস্ত বিভিন্ন নীতির মিলিত প্রভাবে ভারতীয় কৃষির সংকট বাড়ে, তুলা উৎপাদক ভারতীয় কৃষকের দুর্ভোগ চরমে ওঠে ও বহুসংখ্যক তুলা চাষি আত্মহত্যা করে।

অন্যান্য শস্যের চাষে চাষির ক্ষতি

শুধু উচ্চফলনশীল বিটি তুলাই নয়, গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় কৃষি নয়া অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবে যে-ধারাবাহিক পরিবর্তনের দিকে চলেছে তার সামগ্রিক ফল কৃষির পক্ষে ও ভারতীয় কৃষকের পক্ষে বিশেষ কোনও সুফল যে ফলাতে পারেনি তা আমরা বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের নানা দিক আলোচনা করে দেখতে পাই। প্রথমত, গম, ধান, ইত্যাদি খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও উৎপাদিকা শক্তির দীর্ঘকালীন বৃদ্ধি-হারে স্থবিরত্ব, দ্বিতীয়ত, নতুন ধরনের সংকর বীজের সঙ্গে ব্যবহৃত অন্যান্য কৃষি-উপকরণের অত্যধিক খরচ, তৃতীয়ত, নয়া আর্থিক নীতির সামগ্রিক পরিণামে কৃষিতে ভরতুকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার নীতি, যার প্রভাবে সরকার কর্তৃক কৃষিপণ্যের ন্যূনতম মূল্য-নীতি প্রয়োগের সময় চাষের ব্যয় যথাযথ হিসাবে এনে মূল্য স্থির না করার প্রবণতা, খোলা-বাণিজ্য নীতি ও কৃষি-উপকরণের বাণিজ্যে দেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির সহযোগিতায় তৈরি উপকরণ, অথবা বিদেশ থেকে আমদানি-কৃত বিপুল ভরতুকি-যুক্ত প্রযুক্তি ও পণ্যের জন্য নির্ভরতা, বিদেশি উপকরণ-বিক্রেতা কোম্পানির নতুন ভূমিকা – এসবের মিলিত প্রভাবে নতুন প্রযুক্তির ভিত্তিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যে চাষির অনেক সময়েই কোনও উদ্বৃত্ত থাকে না, বা ক্ষতি হয়। এইসব নতুন উপকরণের ব্যবহারে চাষে উৎপাদনশীলতা বেশি হলেও তা খরচের তুলনায় কম আয় দেয়। ফলে চাষি অনেক সময়েই তার নিজস্ব পারিবারিক খরচ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট লাভ করতে পারে না, অথবা অনেক সময়েই চাষে তার ক্ষতি হয়। আমরা নীচের সারণিতে ২০০৪–০৫ থেকে ২০১৬–১৭ সাল অবধি কয়েকটি রাজ্যের চাল, গম, তুলা, ও আখ চাষের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সরকারি হিসাব উপস্থিত করেছি। ভারতের গম উৎপাদক প্রতিটি রাজ্যে দশ বছরে হেক্টর-পিছু উৎপাদন-ব্যয় ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের তফাত হিসাব করে গম চাষির হেক্টর-প্রতি নিট আয় দেখেছি। আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে সরকারের ‘কমিশন অন এগ্রিকালচারাল প্রডাকশন অ্যান্ড কস্ট’-এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। উৎপাদন-ব্যয় হিসাবের সময় আমরা কমিশনের দেওয়া C2 হার অনুযায়ী কৃষি-উৎপাদনের খরচ হিসাব করেছি। সরকারের C2 পদ্ধতির হিসাবে কৃষি-উৎপাদনের যাবতীয় প্রকৃত খরচ ছাড়াও পারিবারিক শ্রম বাবদ খরচ বাজার-চলতি মজুরির দামে হিসাব করে মোট ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হয়। এইভাবে উপকরণের খরচ ও চাষির নিজের পরিশ্রমের মূল্য একযোগে বাদ দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের ওপর যে-উদ্বৃত্ত থাকে তাকে চাষির নিট আয় বা লাভ হিসাবে দেখা হয়। নিট আয় বা লাভ ছাড়াও আমরা মোট ১৭টি ধান উৎপাদক রাজ্যের প্রতি টাকা উৎপাদন-মূল্য পিছু কত খরচ পড়ে তার হিসাব করার জন্য মোট উৎপাদন-ব্যয়ের সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের অনুপাতটি দেখেছি। আমাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় প্রতিবছরই ধান চাষ থেকে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের জন্য ধানের ওপরই একান্তভাবে নির্ভরশীল, অথচ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও আলোচ্য সময়ে প্রতি বছর চাষিকে বিপুল ক্ষতি বহন করতে হয়। যে-রাজ্যগুলিতে এই কালপর্বে ধান চাষ থেকে কিছুমাত্র উদ্বৃত্ত পাওয়া গেছে সেখানেও প্রায়শই উদ্বৃত্তের পরিমাণ এত কম যে তা চাষির জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। আমরা এখানে টেবিলগুলিতে কয়েকটি মাত্র বছরের তথ্য পেশ করেছি, অন্যান্য বছরের তথ্যের জন্য এই অধ্যায়ের শেষে সংযোজন দেখতে হবে।

অন্ধ্রপ্রদেশে ধানের ক্ষেত্রে ২০১০–১১ বাদে সব বছরেই লাভ ধনাত্মক। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশে ধান চাষে কিছু উদ্বৃত্ত পাওয়া গেলেও ২০১০–১১-পর থেকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দেখা যায় যৎসামান্য। অসমে একমাত্র ২০১১–১২ সাল বাদ দিয়ে প্রতি বছরই ধান চাষ করে চাষি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিহারেও দু’-এক বছর বাদ দিয়ে প্রায় প্রতি বছরই ধান চাষ করে চাষিকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। তামিলনাডুতে ২০০৪, ’০৫, ’০৬, ’১১, ’১৪ ও ’১৫ সালে ধান চাষে চাষি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুজরাত, কর্ণাটক, পঞ্জাব ও হরিয়ানা বাদে প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই অধিকাংশ বছর ধান চাষিকে ক্ষতি বহন করতে হয়েছে।

সারণি ১২.২ ধানের উৎপাদন খরচ ও নিট আয়

এই অধ্যায়ের শেষে সংযোজন দ্রষ্টব্য

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

গমের ক্ষেত্রে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও রাজস্থান বাদে প্রতিটি রাজ্যেরই জুটেছে ঋণাত্মক কৃষি-আয়। এমনকী গুজরাতেও গম উৎপাদনে ২০১২ সালে ঋণাত্মক কৃষি-আয় চিন্তার কারণ হয়েছে। হিমাচল প্রদেশে আলোচ্য বছরগুলির প্রতিটিতেই গম উৎপাদন থেকে ঋণাত্মক আয় হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ে মাঝে একবছর বাদে প্রতি বছরেই গম উৎপাদন থেকে ঋণাত্মক আয় হয়েছে। ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও একেবারে একইরকম। প্রতিটি রাজ্যেই হয় অধিকাংশ বছর গম চাষে চাষির ক্ষতি হয়েছে অথবা দু’/একটি বছরে যৎসামান্য লাভ হয়েছে। বিভিন্ন বছরের বিস্তৃত তথ্য এই অধ্যায়ের শেষে সংযোজনে দেওয়া হয়েছে, এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি বছরের তথ্য নীচে দেওয়া হল। আখ চাষের ক্ষেত্রে অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল হলেও মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের আখ চাষিরা প্রায়ই আখচাষে ক্ষতির সামনে পড়েছে। ২০০৪, ’০৫, ’০৭, ’১৪, ও ’১৫ সাল এই আখ উৎপাদকদের ক্ষতি হয়েছে

কৃষি-উৎপাদনে চাষির নিট আয় ঋণাত্মক বা ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করতে হলে, তুলা চাষের কথা বাদ দেওয়া যায় না। আমরা ২০০৪ থেকে ২০১৪–১৫ পর্যন্ত বিভিন্ন তুলা উৎপাদক রাজ্যের চাষিদের তুলা চাষে ক্ষতির ওপর তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন বছরের তথ্যের জন্য এই অধ্যায়ের সংযোজন দ্রষ্টব্য। আমরা দেখছি, অন্ধ্রে ’০৫, ’১২, ’১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে, মহারাষ্ট্রে ’০৪, ’০৫, ’০৬, ’১২, ’১৪, ও ’১৫ সালে, হরিয়ানায় ’০৫, ’০৬, ’১৪, ’১৫ সালে, কর্ণাটকে ’১৪ ও ’১৫ সালে, মধ্যপ্রদেশে ’০৪, ’০৬, ’১৪, ’১৫ সালে, তামিলনাড়ুতে ’০৪, ’০৫, ’১১ সালে, ওডিশাতে ’১২, ’১৪, ’১৫ সালে, পঞ্জাবে ’১৪, ’১৫ সালে, এবং তামিলনাড়ুতে ’১২ ও ’১১ সালে তুলা চাষে চাষিদের ক্ষতি হয়েছিল। নিট আয় ঋণাত্মক নয়, এমন বছরেও চাষিদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্বৃত্তের পরিমাণ এতই কম থাকে যে, ক্ষতির বছরের লোকসান মেটানোর পক্ষে তা যথেষ্ট হয় না। ভারতীয় চাষির আত্মহত্যার ঘটনাগুলিকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা যায় না, কারণ এই ঘটনাগুলি নয়া উদারনীতি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রস্তাবিত নীতি ভারতীয় কৃষিতে প্রয়োগের ফল। ভারতের অর্থনীতি তথা কৃষি-অর্থনীতি এই পরিবর্তন গ্রহণ করার অবস্থায় ছিল না। ভারতের কৃষি ছোট চাষি-নির্ভর, অসম্পূর্ণ, অনুন্নত বাজার-ব্যবস্থার কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত। তা এই পরিবর্তনের সামনে দাঁড়াতে পারে না। বাইরে থেকে প্রযুক্ত নীতিগুলির প্রভাবের সঙ্গে তার দুর্বল বৈশিষ্ট্যগুলির সংঘাতে ভারতের কৃষি-অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

সারণি ১২.৩ গম উৎপাদন, খরচ ও নিট আয়

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

তুলা

সারণি ১২.৪ তুলার উৎপাদন খরচ ও নিট আয়

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

আখ

সারণি ১২.৫ আখের উৎপাদন খরচ ও নিট আয়

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

বিশ্ব-বাজারের সঙ্গে ভারতীয় কৃষিপণ্যের বাজারকে যুক্ত করার ফলে কৃষিপণ্যের দামের ওঠাপড়া ও অনিশ্চয়তা ভারতীয় কৃষকের সামনে সংকটের সূচনা করেছে। বিদেশি প্রযুক্তির উচ্চফলনশীল বীজ ও সারের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কমিশন এজেন্টদের চাপানো অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা, কমিশন এজেন্ট-ব্যবসায়ীদের পরামর্শে প্রয়োজনাতিরিক্ত পরিমাণে উপকরণের ব্যবহার চাষিদের ওপর প্রভূত ব্যয়ভার চাপিয়েছে। উদারনীতির সূত্র অনুযায়ী কৃষি-অর্থনীতি প্রয়োজনমাফিক সরকারি ঋণের সাহায্য পেতে পারে না। কৃষির প্রাথমিক ব্যয় বহন করার ক্ষমতা এই কৃষি-অর্থনীতির থাকে না। ফলে বেসরকারি ঋণের জন্য আবার কমিশন এজেন্ট বা মহাজনদের কাছে ধারে উপকরণ ক্রয় করতে হয়। এরপর উপযুক্ত দামে ফসল বিক্রি করতে পারার ওপরই নির্ভর করে চাষি তার এই ঋণ শোধ করতে পারবে কি না। পণ্যের সরকারি সহায়ক মূল্যের সহযোগিতা যথাযথ না পেলে চাষির পক্ষে উপযুক্ত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারার কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। অনেক সময় পণ্যে শোধ দেওয়ার শর্তে চাষি অসংগঠিত বাজারে কৃষি-ঋণ পেয়ে থাকে, সেখানে কম দামে তাকে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয়। ফলে তার পরবর্তী চাষের ব্যয় ও তার নিজস্ব ভোগের ব্যয় মেটানো অনেক সময়েই খুব কষ্টকর হয়ে ওঠে। এইভাবে অপরিশোধিত ঋণ জমা হতে থাকে, শেষপর্যন্ত যা শোধ দেওয়া তার ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এর পরবর্তী বিভিন্ন বছরে ভারতের নানা রাজ্যে চাষিদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলির পিছনেও অনুরূপ কারণগুলি কাজ করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে তুলা, লঙ্কা, বাদাম ইত্যাদি বাণিজ্যিক পণ্যের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন-ব্যয় ও বিশ্ব-বাজারে দামের ওঠাপড়ার সঙ্গে দেশি বাজারে দামের ওঠাপড়া চাষিদের সামনে অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সারা ভারতের শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে চাল, গম প্রভৃতি জলনির্ভর শস্যগুলির ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন ব্যয়ের কারণে ও বিশেষ করে গমের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বিপুল ভরতুকি-নির্ভর সস্তার গমের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার কারণে ছোট ও মাঝারি চাষিদের বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে।

শস্যের উৎপাদন-ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং শস্যের উৎপাদনশীলতা ও দামের সেই অনুপাতে বৃদ্ধির অভাব মূলত চাষিদের শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপুল ক্ষতির কারণ, তবে চাষিদের আত্মহত্যার আশু কারণ হল চাষিদের ঋণগ্রস্ততা ও এই ঋণ শোধে চাষিদের অক্ষমতা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চাষির আত্মহত্যার পিছনে কারণগুলি অনুসন্ধান করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন। সৃজিত মিশ্র (২০০৬) মহারাষ্ট্রের কৃষিতে ও ঋণের বাজারে কৃষি-উপকরণ ও পণ্য ব্যবসায়ীর একই সঙ্গে ঋণ, পণ্য ও উপকরণ জোগানদারের ভূমিকায় নামার উল্লেখ করেছেন। চাষের অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে চাষিকে চাষ শুরুর সময়ে কমিশন এজেন্ট ও পণ্যের ও উপকরণের যুগ্ম বাজারে নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় থাকা ব্যবসায়ী-মহাজনের ওপর ঋণের ও ব্যয়বহুল কৃষি উপকরণের জন্য নির্ভর করতে হয়। সরকারি সহযোগিতায় সস্তায় উপকরণ পাওয়ার সুবিধা উদারনীতির চাপে সংকুচিত হয়ে উঠেছে বলেই এই সব উপকরণের জোগানে ব্যবসায়ী-মহাজন-কমিশন এজেন্টদের ব্যাপক প্রাধান্য দেখা দিয়েছে। যখন টাকায় ঋণশোধের শর্ত থাকে তখন অত্যুচ্চ হারে সুদ চাপানো হয়। এর পাশাপাশি অনেক সময়েই কৃষি-উপকরণ জোগানোর বিপরীতে কৃষিপণ্য ঋণ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ঋণের অর্থমূল্য হিসাবের সময় উপকরণের দামের ওপর জোগানদাতার একচেটিয়া সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে। পণ্যের দাম ঠিক করার সময় ফসল ওঠার পরেই ফসলের বাজারে যে কম দাম থাকে সেই দামের হিসাবে ঋণশোধের জন্য ফসলের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। ফলে ফসল ওঠার পর চাষি যদি দেখে আশানুরূপ হারে ফসল পাওয়া গেল না, তখনই ঋণগ্রস্ত চাষি সংকটে পড়ে। তার পক্ষে ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। জমে থাকা বিপুল ঋণের কারণে তখন চাষির সামনে আত্মহত্যার পথ ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না। অনিতা গিল (২০০৪) পঞ্জাবের কৃষির ওপর একটি জোত-স্তর সমীক্ষার সাহায্যে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কৃষি-ঋণের বাজারে অনুরূপ পণ্য ও উপকরণ-বাজারের সংযুক্ত বাজার-ব্যবস্থার প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করেছেন। পাতিয়ালা ও অমৃতসরের কৃষিতে কৃষক ও জমিহীন কৃষি-শ্রমিকদের নিয়ে তাঁর এই অনুসন্ধানটি থেকে দেখা যায়, জমিহীন কৃষি-শ্রমিকরা বছরের যে-সময়ে যথেষ্ট কৃষিকাজ থাকে না সে সময়ে ঋণের জন্য জমির মালিক ও কমিশন এজেন্টদের ওপর নির্ভর করে। জমির মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ তারা ব্যস্ত মরশুমে কম মজুরিতে শ্রমের বিনিময়ে শোধ করে। জমির মালিকরা ঋণশোধের জন্য অনেক সময়ে জমি বন্ধকি হিসেবে রেখে বড় চাষির কাছে ঋণ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে যথাসময়ে সুদ সমেত ঋণ শোধ করতে না পারার জন্য ছোট চাষির জমি বড় মালিকের কাছে হস্তান্তরিত হয়। পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাবার্ডের চেয়ার ইউনিটের তরফে পঞ্জাবের তুলা চাষ এলাকার ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল ’৯৮–’৯৯ সালে, তা থেকে পঞ্জাবের তুলা-চাষিদের ঋণগ্রস্ততার খবর পাওয়া যায়। পঞ্জাবের তুলা চাষে উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং মুনাফার নিম্নগতি পঞ্জাবের চাষিদের বিপুল ঋণগ্রস্ততার দিকে নিয়ে যায়। ২০০৬ সালের একটি সরকারি সমীক্ষা থেকে বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে পঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে আত্মহত্যার তথ্য সামনে আসে। ২০০০ সালের প্রথম দশকে কৃষক সংগঠন ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন জানায় যে, পঞ্জাবে ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ১৩০০০ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে পি নরসিমা রাও ও কে সি সুরি (২০০৬) তাঁদের সমীক্ষায় কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাগুলির দীর্ঘকালীন ও আশু কারণ খুঁজেছেন। ভি শ্রীধর অনুরূপ গ্রাম-সমীক্ষায় একইরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। কৃষিতে নয়া আর্থিক নীতিগুচ্ছের প্রয়োগের ফলে শুধু যে কৃষিপণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে কৃষকের আয়ে অনিশ্চয়তা এনেছে তাই নয়, এই নীতি প্রয়োগের অর্থ কৃষিতে সরকারি সহায়তা হ্রাস। কৃষিপণ্যের দামের অস্থিরতা ও কখনও কখনও তার নিম্ন গতি চাষিকে যে-অসহায়তার মধ্যে ফেলে, তা থেকে তাকে রক্ষা করার লক্ষ্যে সরকারি সহায়ক মূল্যের ভূমিকা আশানুরূপ নয়। কৃষি-উপকরণের ওপর, বিশেষ করে সারের ওপর, ভরতুকি কমানোর ফলে সেসবের বর্ধিত ব্যয়ভার বহনে সরকারি সাহায্যের জরুরি ভূমিকা খাটো হয়েছে।

কেরালার কফি, রাবার, মশলা ইত্যাদির উৎপাদকদেরও একই প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এইসব রফতানি পণ্যের উৎপাদকদের আয়ের অনিশ্চয়তাও জুড়ে গেছে বিশ্ব-বাজারের দামের ওঠানামার সঙ্গে। তাদেরও প্রতি বছরই ঝুঁকির সঙ্গে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে (এস মহাননকুমার ও আর কে শর্মা, ২০০৬), এই অবস্থায় চাষিকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। চাষিদের আত্মহত্যার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই কম-বেশি ঘটেছে। প্রধানত আলু-চাষিদের এই অবস্থায় পড়তে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত কালীশংকর চট্টোপাধ্যায়ের সমীক্ষা (২০১৭) দ্রষ্টব্য।

কৃষির এই সংকটের পরিণামে কৃষিকাজ ছেড়ে কৃষির সঙ্গে যুক্ত বা অ-কৃষি অসংগঠিত কাজকর্মে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কৃষির এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০-পরবর্তী, বিশেষ করে ২০০০ সালের পরবর্তী নয়া আর্থিক নীতি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রস্তাবিত নীতিগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। রূপান্তরিত সংকর বীজ ব্যবহারের নানা কুফল নিয়ে অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবিদ-গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় কৃষির এই সংকট ভারতীয় অর্থনীতিকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সামনে নিয়ে আসে। প্রথমত, পণ্যের উৎপাদনে আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন বিভাজন ও বিশেষীকরণ। চাল, গম, তুলার মতো সনাতন ভারী ও কম মূল্যের খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমানো, শস্যকণা উৎপাদন থেকে সরিয়ে এনে জমিকে ফল, সবজির মতো হালকা ও বেশি মূল্যের পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত করা। সেইসঙ্গে যোগ করতে হবে আমেরিকা, ফ্রান্স ইত্যাদি উন্নত রফতানিকারক দেশগুলির দ্বারা চাল-গমের মতো পণ্য উৎপাদনের বিশেষীকরণ ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অবাধে এইসব পণ্য সরবরাহ। এর ফলে ভারতীয় কৃষি-অর্থনীতি আরও রফতানি-মুখী ও আরও আমদানি-নির্ভর হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি অসংগঠিত ঋণদাতা ক্ষেত্রগুলির প্রাধান্য (অর্থাৎ গ্রামীণ মহাজন, ব্যবসায়ী ইত্যাদি অসংগঠিত ঋণদাতা ক্ষেত্রগুলির প্রাধান্য কমিয়ে) সরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের জায়গায় বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলির হাতে চুক্তি-চাষ মারফত একই সঙ্গে ঋণের, কৃষি উপকরণের ও কৃষি পণ্যের বাজারের এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের নিয়ন্ত্রণ চলে আসা। এবং একইসঙ্গে বিশ্ব-বাজারে ভারতীয় প্রক্রিয়াজাত ফল-সবজির রফতানি-মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। ভারতীয় কৃষিকে উজ্জীবিত করার এটাই বিশ্বব্যাংক নির্দেশিত পথ, যে-পথ অনুসরণ করে ভারতীয় কৃষি-অর্থনীতিতে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন শুরু হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। তার আগে এই অধ্যায়ে আমরা গত দু’-দশকে চাল, গম, তুলা ইত্যাদি সনাতন অধিক জল-নির্ভর ভারতীয় কৃষি উৎপাদনের সংকট, ভারতীয় চাষিদের আত্মহত্যা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ও এই বিষয়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণগুলি আলোচনা করে নিলাম।

বিভিন্ন কৃষি-পণ্য উৎপাদনের দীর্ঘকালীন হ্রাস-বৃদ্ধির প্রবণতা সংক্রান্ত তথ্যের (সংযোজন অংশে উপস্থাপিত) ভিত্তিতে বিশ্বায়নের ফলে বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় কৃষি কতটা তার দীর্ঘকালীন স্থবিরত্ব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। কৃষিপণ্যের দামের ও ভারতীয় কৃষকের আয়ের দ্রুত ওঠানামা, কৃষকের কৃষিকাজের জায়গায় অ-কৃষি, অসংগঠিত ছোট সংস্থায় যুক্ত হওয়ার প্রবণতার বৃদ্ধি, মোট জনসংখ্যায় কৃষিতে নিযুক্ত মানুষের শতাংশের পরিবর্তন, গ্রামীণ অ-কৃষি অসংগঠিত সংস্থায় মানুষের নিযুক্তির বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ হারের হ্রাস, কৃষিপণ্যের দামের সময়ভিত্তিক প্রবণতা ও আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে তুলনা, বিভিন্ন জোতের চাষি পরিবারের আয় ও ভোগ, দারিদ্র, ঋণগ্রস্ততা, ইত্যাদি বিষয়ে প্রাপ্য তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত আমরা আলোচনা করেছি, কৃষিক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি ভারতীয় কৃষি সংক্রান্ত সরকারি নীতিগুলিকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে ও কতটা বাস্তবে প্রযুক্ত হয়েছে। এটি দেখার জন্য প্রথমত আমরা আলোচনা করেছি ভারতীয় অর্থনীতি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কতটা রফতানি অভিমুখী ও আমদানি-নির্ভর হয়ে উঠেছে। রফতানি ও আমদানি পণ্যগুলির ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে এবং এ ক্ষেত্রে শস্যবৈচিত্রের মাত্রাবৃদ্ধির প্রভাব কতটা। দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও চুক্তিচাষের কতটা প্রসার ঘটেছে ও চুক্তি-চাষের ফলে ঋণ, কৃষি-উপকরণ ও কৃষিপণ্যের বাজার কতটা প্রভাবিত হয়েছে।

আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে ভারতীয় কৃষিতে শস্যবৈচিত্র, এর নানা দিক, কৃষি-আয়ের ওপর এর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছি।

তথ্যসূত্র

১. Sahai, S., Shakeelur Rahaman. 2003. “Performance of Bt cotton.” Economic and Political Weekly. (26th July).

২. তদেব

৩. A G bai forum

৪. Narayanamoorthy, A. and S S Kalamkar. 2006. “Is Bt Cotton Cultivation Economically Viable for Indian Farmers? An Empirical analysis.” Economic and Political Weekly. (30th June, 2006).

৫. Mishra, Srijit. 2006. “Farmers’ Suicides in Maharashtra.” Economic and Political Weekly (22nd April, 2006).

৬. Gill, Anita. 2004. “Interlinked Agrarian Credit markets.” Economic and Political Weekly. (14th August, 2004).

৭. Chattopadhyay, Kali Shankar. 2017. Farmer Suicides in West Bengal. Agro-Economic Research Centre, Visva-Bharati. GOI.

সংযোজন

সারণি এ-১ ধান

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

সারণি এ-২(ক) গম

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

সারণি এ-২(খ) গম

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

সারণি এ-৩(ক) তুলা

সারণি এ-৩(খ) তুলা

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

সারণি এ-৪(ক) আখ

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

সারণি এ-৪(খ) আখ

Source: Directorate of Economics and Statistics DAC&FW Website

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *