১২. ফয়সল সাহেব পিঠের নিচে

ফয়সল সাহেব পিঠের নিচে দু’টি বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছেন। তাঁর মুখ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে ভোর বেলাতে তার উপর দিয়ে বড় রকমের একটা ঝড় গিয়েছে। লোকজন তাকে দেখতে আসতে শুরু করেছে। সবাই একই কথা বিভিন্নভাবে বলছে।

কী করে ব্যাপারটা হল?

ব্যথাটা প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?

ডাক্তারের কাছে কখন গেলেন?

ডাক্তার কী বলল?

এখন অবস্থা কী?

খাওয়া-দাওয়া কী করছেন?

ফয়সল সাহেব দুপুরের মধ্যেই মহাবিরক্ত হয়ে গেলেন। বীথিকে ডেকে বললেন, যেসব প্রশ্ন সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে সেগুলির উত্তর লিখে তুমি দেয়ালে টানিয়ে দাও। এক দুই করে নম্বর দিয়ে দেবে।

বীথি হ্যাঁ সূচক ঘাড় নেড়েছে। অন্য কিছু বললেই তিনি রেগে যাবেন নানান তর্ক-বিতর্ক শুরু করবেন। এই ঝামেলায় না যাওয়াই ভাল।

দাঁড়িয়ে থাকবে না, এক্ষুণি লিখে ফেল। সবশেষে লিখবে এখন দয়া করে বিদেয় হন। যা জানিবার সবই জেনেছেন। মিলি কী করছে?

রান্না ঘরে বাচ্চার দুধ গরম করছে।

একেবারে আণ্ডাবাচা নিয়ে চলে এসেছে? সে জানে না বাচাকাঁচা আমি পছন্দ করি না? ওকে বল বাসায় চলে যেতে। আমার মরার সময় এখনো হয়নি। সময় হলে তাকে খরব দেৱে

বীথি বলল, এটা বলা কী ঠিক হবে?

খুবই ঠিক হবে। তুমি বলতে না পারলে আমি বলব। ডেকে আন তাকে।

ডেকে আনতে হল না। মিলি তার ছেলে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকল। আদুরে গলায় বলল, তোমার পাশে ওকে শুইয়ে দেই।

কেন?

দুধ খাবে। ও দুধ খাওয়ার সময় কাউকে কাছে থাকতে হয়।

ফয়সল সাহেব রুক্ষ গলায় বললেন, ঝামেলা করিস না, ওকে নিয়ে বাসায় চলে যা।

মিলি তাকিয়ে রইল অবাক হয়ে। সে বাবার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। মিলি তাকাল বীথির দিকে। বীথি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

বাসায় চলে যাব?

হ্যাঁ।

কেন?

কেন কী? এখানে থেকে লাভটা কী হচ্ছে? বাচ্চার ঘ্যান ঘ্যান পেশাব পায়খানা। একশ ঝামেলা।

কখন সে ঘ্যান ঘ্যান করল?

ফয়সল সাহেব প্রচণ্ড এক ধমক দিলেন। মার কোলের বাচ্চাটি এতক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। এই বার সে কাঁদতে শুরু করল। মিলির নিজের চোখেও পানি এসে গেল। সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চোখ মুছল। মিলি ভেবে রেখেছে বেশ কয়েক দিন এ বাড়িতে থাকবে। সুটকেস গুছিয়ে এনেছে। কাজের একটি মেয়েকেও এনেছে সঙ্গে এখন কী হুঁট করে চলে যাবে? বাসায় গিয়ে বলব কী? বাবা তাড়িয়ে দিয়েছেন?

বাবু ক্রমাগত কাঁদছে। ক্ষিধের কান্না। বাবার কানে যাচ্ছে এবং তিনি নিশ্চয়ই আরো রাগিছেন। মিলি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এল। আগে যে ঘরটিতে সে থাকত সেই ঘর সকালবেলা সে নিজের জন্যে গুছিয়ে নিয়েছে। এখন কেন যেন মনে হচ্ছে এটা অন্যের বাড়ি। এ ঘরে সে আগে কোনোদিন থাকেনি।

অসুখ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দেয়ালে টানানোর পর ফয়সল সাহেব ঘোষণা করলেন, কাউকে যেন এ ঘরে ঢুকতে না দেয়া হয়। বীথিকে বললেন,

কাউকেই আসতে দেবে না। ওসমানকেও নয়। বুঝতে পারছ?

পারছি।

ওসমান কী এসেছিল?

জি না। এখনো আসেনি। খবর পাননি বোধ হয়।

খবর পেলেও আসবে না। মহালায়েক ছেলে। সাহিত্য সভাতে চলে গেছে। কিংবা কোনো মহাকাব্য লিখছে। মহাসাহিত্যিক তো। ও এলেই হাকিয়ে দেবে।

ফয়সল সাহেব সিগারেট ধরালেন। বীথি মৃদু স্বরে বলল, ডাক্তার খুব করে বলে গেছেন আপনি যেন সিগারেট না খান। তিনি বিরক্তিতে ভ্রূ কুঁচকালেন।

মরবার সময় হয়ে গেছে, সিগারেট খেলেও মরব, না খেলেও মরব, কাজেই এসব নিয়ে বাজে তর্ক করবে না।

তিনি সিগারেট শেষ করে ঘুমুতে গেলেন। ঘুমুলেন সন্ধ্যা পর্যন্ত।

ওসমান সাহেব এলেন বিকেলে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সকালে যারা এসেছিল তাদের অনেকেই আবার এসেছে। ওসমান সাহেব হকচাকিয়ে গেলেন। এরা সবাই তার আত্মীয়-স্বজন, অথচ কাউকেই ভাল করে চেনেন না। মৃত্যু, অসুখ এইসব বড় বড় ঘটনার সময় তাদের দেখা পাওয়া যায়। তাঁরা আসেন। আন্তরিকভাবেই খোজ-খবর করেন।

ওসমান সাহেবকে দেখে কালো লম্বামত একজন বুড়ো মানুষ বললেন, ভাল আছে বাবা? ওসমান সাহেব হাসলেন। বুড়ো লোকটি বললেন, যাবার সময় হয়ে এসেছে আমাদের। সবাই চলে যাচ্ছে। ভদ্রলোকের বলার ভঙ্গিতে কোন হতাশার ছোঁয়া নেই। যেন বেড়াতে যাবার মত কোনো ব্যাপার নিয়ে কথা বলছেন।

ওসমান সাহেব মনে মনে বললেন, যাবার সময় হল বিহঙ্গের। নিতান্তই অর্থহীন কথা। এ সময় এটা মনে হবার কোনই কারণ নেই। কিন্তু একেক সময় একেকটা কথা মনে আসে এবং ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে থাকে। যাবার সময় হল বিহঙ্গের এই লাইনটি এখন মাথায় ঘুরতেই থাকবে। আটকে যাওয়া রেকর্ডের মত। কিছুতেই তাড়ানো যাবে না।

বুড়ো লোকটি বললেন, যাও বাবা তুমি ভেতরে যাও। আমরা আছি কিছুক্ষণ।

ওসমান সাহেবের কাছে। এ বাড়ি এখন অপরিচিত বাড়ি। সহজভাবে ভেতরে যেতেও কেন জানি সংকোচ লাগছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেউ একজন এসে বলবে, আপনি কাকে চাচ্ছেন?

তিনি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলেন। এক সময় দোতলায় তার এবং মিলির ঘর পাশাপাশি ছিল। মিলি একটু খুঁটিখাট শব্দ হলেই ছুটে এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলত, ভাইয়া একটু দেখত। চোর এসেছে। মিলির ভয় কী এখনো আগের মতই আছে? বিয়ের পর মেয়েদের অনেক কিছু বদলে যায়। ভীরু মেয়েরা হঠাৎ সাহসী হয়ে ওঠে। লাজুক মেয়েগুলি হাত নেড়ে নেড়ে হড়হড় করে কথা বলে।

স্নামালিকুম। কখন এসেছেন?

বীথি, তাকে দেখে উঠে আসতে শুরু করেছে। উঠে আসার ভঙ্গিটি অত্যন্ত সাবলীল। এটা যেন তার নিজের বাড়ি-ঘর। সে অতিথির খোঁজ নিতে আসছে।

স্যারের ঘুম ভেঙেছে। আপনি কী দেখা করবেন?

আছেন কেমন?

ভালই। তবে খুব দুর্বল। সারা বিকাল ঘুমিয়েছেন। সাধারণত উনি বিকেলে ঘুমান না।

মিলি আসেনি?

এসেছে। সে ঘুমুচ্ছে।

সবাই ঘুমুচ্ছে। ব্যাপার কী?

বীথি হাসল। ওসমান সাহেব ভাবলেন, সুন্দর মেয়েদের সব কিছুই কী সুন্দর? তিনি এখন পর্যন্ত কোন সুন্দরী মেয়ে দেখেননি যাদের হাসি অসুন্দর।

স্যারের ঘরে যাবেন এখন?

ধীরে-সুস্থে যাই। তার মেজাজ কেমন?

খুব খারাপ। সবার ওপর রেগে আছে। আপনি কী বসবেন বারান্দায়? চেয়ার এনে দেব?

না বসব না। দাঁড়িয়ে থাকতেই ভাল লাগছে।

চা খাবেন? চা এনে দেব?

দিতে পারেন।

বীথি নেমে গেল। তাঁর আবার মনে হল এই মেয়েটি এ বাড়িতে অত্যন্ত সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে। আশ্ৰিত মানুষ কখনো এত সহজ হয় না। তাদের চোখে-মুখে সবসময় একটা বিনীত ভাব ফুটে থাকে।

ভাইয়া তুমি কখন এসেছ?

মিলি বের হয়েছে তার ঘর থেকে। দীর্ঘ ঘুমের জন্য তার চোখ-মুখ ফোলা ফোলা।

তুই অসময়ে ঘুমুচ্ছিলি ব্যাপার কী?

রাতে তো আমার ঘুম হয় না, এই জন্যে দিনে ঘুমাই।

রাতে ঘুম হয় না নাকি?

না।

কেন?

এমনি হয় না। ভাইয়া, বাবা আজ আমার সঙ্গে খুব রাগারগি করেছে।

তাই নাকি?

একটা বাইরের মেয়ের সামনে আমাকে অপমান করেছে।

বাইরের মেয়েটা কে? বীথি?

হ্যাঁ। ওর কাণ্ডকারখানা দেখেও অবাক হয়েছি। এমন ভাব করছে যেন সব কিছু তার। এ বাড়ির সব আলমারীর চাবি তার কাছে থাকে।

থাকুক না। তাতে অসুবিধা কী?

বাইরের একটা মেয়ের কাছে আলমারীর চাবি থাকবে? বলছি কী তুমি?

নিজের ছেলেমেয়েরা যখন কাছে নেই তখন এছাড়া আর কী করবেন। ও নিয়ে তুই কিছু বলতে যাবি না।

বলব না কেন? একশ বার বলব। তুমি যে ঘরটিতে থাকতে সে ঘরটিতে এখন সে থাকে। অথচ নিচে এতগুলি ঘর খালি পড়ে আছে।

আমি তো আর এখানে থাকি না। কাজেই কোনো অসুবিধা নেই।

যথেষ্ট অসুবিধা আছে। এ বাড়িতে আমাদের ঘরগুলি ঠিক আগের মত থাকবে। যখন ইচ্ছা! আমরা আসব। যতদিন ইচ্ছা থাকব। নিজেদের ঘরগুলিতেই থাকব।

তুই থাকিস। তোর ঘর তোর খালিই আছে।

মিলি মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে রইল। বীথিকে ট্রেতে করে চা নিয়ে আসতে দেখে তাঁর মুখ আরো অন্ধকার হয়ে গেল। সে ঢাপ স্বরে বলল, আপনি ভাইয়ার ঘর দখল করে আছেন কেন?

ভাইয়া খুব বিরক্ত হয়েছে। সে প্রায়ই নিজের ঘরে এসে থাকে। আপনি আসার পর সে একবারও আসেনি।

বীথি অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওসমান সাহেব কী বলবেন ভেবে পেলেন না। এমন অপ্রস্তুত করতে পারে মিলি।

কিন্তু বীথি মেয়েটি বেশ শক্ত, সে সহজেই নিজেকে সামলে নিয়েছে। অন্য কোনো মেয়ে হলে সামলাতে পারত না। কেন্দো-টেদে ফেল।

বীথি বলল, স্যার আপনাকে ডাকছেন। চা খেয়েই যান। চিনি হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে।

বাবা আপনার শরীর কেমন? ফয়সল সাহেব ছেলের প্রশ্নের জবাব দিলেন না। হাত উঁচিয়ে দেয়ালে টানানো প্রশ্নোত্তরগুলি দেখিয়ে দিলেন। ওসমান সাহেব মৃদু হাসলেন। বৃদ্ধ মানুষের মধ্যে শিশুর ব্যাপারগুলি দেখা দিতে থাকে কথাটা মিথ্যা নয়।

হাসছিস কেন? কাজটা হাস্যকর?

হ্যাঁ। এর উদ্দেশ্য যদি কথা কম বলা হত তাহলে হাস্যকর হত না। কিন্তু আপনি কথা কম বলছেন না। বরং আগের চেয়ে বেশি বলছেন।

ঘরে ঢুকেই সেটা বঝে গেলি? বড় সাহিত্যিক হয়ে গেছিস মনে হয়। শুদ্ধ করে তো তিনপাতা বাংলা লিখতে পারিস না।

ওসমান সাহেব একটা চেয়ার টেনে বাবার পাশে বসলেন। মৃদু স্বরে বললেন, রাগ করার মত কিছু তো বলিনি, রাগ করছেন কেন? এই শরীরে রাগ করাটা ঠিক হবে না।

যোগ করতে হলে দুখ দৈ খেয়ে শবীর ঠিক করতে হবে? কী চুপ করে আছিল কেন? বল গুনে ফেলি।

ওসমান সাহেব শান্ত স্বরে বললেন, আমাকে দেখে আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন, আমি বরং যাই। পিবে আসব। তিনি উঠে দাঁড়ালেন।

বোস তুই, কথা আছে।

তিনি বসলেন। ফয়সল সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকলেন ছেলের দিকে।

কী বলবেন বলুন।

কেন তোর রাজকাৰ্য পড়ে আছে নাকি? না কোনো মহাকাব্য লেখার কথা?

আমার লেখালেখি আপনার পছন্দ নয়?

এই সব নাকি কান্না আমার পছন্দ হবার কথা না। আমার বয়স হয়েছে। আমি বার বছরের খুকি না।

ফয়সল সাহেব বালিশের নিচ থেকে সিগারেট বের করলেন। তার হয়ত ধারণা ছিল ওসমান নিষেধ করবে। কিন্তু ওসমান সাহেব কিছুই বললেন না।

তোর সঙ্গে আমার খুব জরুরি কথা আছে।

বলুন, আমি শুনছি।

ঠিক ঠিক জবাব দিবি।

তিনি বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাবা কী বলবেন আঁচ করতে চেষ্টা করছেন।

শুনলাম বৌমা নাকি আলম নামের কোন এক ছেলেকে বিয়ে করেছে? কথাটা সত্যি?

কার কাছ থেকে শুনেছেন?

কার কাছ থেকে শুনেছি সেটা জরুরি নয়। ঘটনাটা সত্যি কী না বল।

আমি ঠিক জানি না।

কিছুই জানিস না। কিছুই শুনিসনি?

ওসমান সাহেব চুপ করে রইলেন।

বেকুবের মতো চুপ করে থাকিস না, কথার জবাব দে।

আমিও শুনেছি।

ঘটনা সত্যি?

সত্যি হতেও পারে। ও আমাকে একটা শিক্ষা দেবার জন্যে এটা করবে। ঐ ছেলেটির প্রতি তার আলাদা কোনো মমতা আছে বলে মনে হয় না।

তুই একটা মহাবেকুব। তুই বেকুব, তোর বোন বেকুব। দুইজনই বেকুব।

ওসমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। মৃদু স্বরে বললেন, এটাই কী আপনার জরুরি কথা?

না, এটা জরুরি কথা হবে কেন? তোদের কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা তোদের ব্যাপার? আই ডোন্ট থিংক আই কেয়ার।

জরুরি কথা কী বলুন শুনে যাই।

এখন বলতে ইচ্ছে করছে না।

ঠিক আছে। আমি পরে আসব।

আসার কোনো দরকার নেই। যে সব বেকুবদের বৌ অন্য লোকের সঙ্গে ভোগে যায় তাদের সাথে দেখা–সাক্ষাৎ হওয়ার আমার কোনো প্রয়োজন নেই।

আপনি ব্যাপারটা যেভাবে দেখছেন আসলে এটা সেরকম নয়। আমরা আলাদা হয়েছিলাম। এই অবস্থায় তার যদি কোনো একটি ছেলেকে পছন্দ হয় এবং সে তাকে বিয়ে করে তাতে দোষের তো কিছু নেই।

ফয়সল সাহেব বাড়ি কাঁপিয়ে ধমকে উঠলেন–শাট আপ। মিলি এবং বীথি দুজনেই ছুটে এল। মিলির কোলে তার বাচ্চাটি কাঁদছে। ওসমান সাহেব নিঃশব্দে বেরিয়ে এলেন। বসার ঘরে অনেকেই তখনো বসে আছে। একজন বলল, চললেন? তিনি জবাব দিলেন না।

গেট খুলে বাইরে পা ফেলামাত্র মিলি বলল, ভাইয়া বাবা ডাকছে। তিনি ফিরে এলেন। ফয়সল সাহেব বেশ সহজ এবং স্বাভাবিক। বিছানায় বসে আছেন। পা বুলিয়ে। ছেলেকে ঢুকতে দেখে পা দোলানো বাড়িয়ে দিলেন।

ডেকেছেন নাকি বাবা?

হুঁ বোস। জরুরি কথাটা বলেই ফেলি।

তিনি কিছু বললেন না। বাবার মুখোমেখি বসলেন। ফয়সল সাহেব গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে বললেন, একটা বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। অল্প বয়সী একটা মেয়ে।

অল্প বয়সী একটা মেয়ে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবে কেন?

রাজি হয় টাকার লোভে। পৃথিবীতে পুরুষ মানুষ হয় তো দু’একটা পাওয়া যাবে যাদের টাকার লোভ নেই। কিন্তু মেয়ে মানুষ পাওয়া যাবে না। এ বাড়িটা মেয়েটির নামে লিখে দিলেই সুড়সুড়ি করে রাজি হবে।

মেয়েদের সম্পর্কে আপনার বড় খারাপ ধারণা।

তোর তো খুব উচ্চ ধারণা ছিল। তার ফল তো হাতে হাতে দেখলি। তোকে লাথি মেরে চলে গেল।

তিনি কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। বাবার দিকে তাকিয়ে রইলেন এক দৃষ্টিতে। যেন বাবাকে বুঝতে চেষ্টা করছেন।

বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করাই ভাল। এতে বেঁচে থাকার আগ্রহ জন্মে। কী বলিস তুই? সাহিত্যিক মানুষ তোর ধারণাটা শুনি।

তিনি জবাব দিলেন না। একবার ভাবলেন, জিজ্ঞেস করেন মেয়েটি কে? জিজ্ঞেস করা হল না। সব প্রশ্ন সবসময় করা যায় না।

বাবা আজ যাই।

ঠিক আছে যা।

ফয়সল সাহেব পা দোলাতে লাগলেন। তিনি খুব মজা পাচ্ছেন।

ওসমান সাহেব উদ্দেশ্যহীনভাবে অনেকক্ষণ রাস্তায় হাঁটলেন। বেশ শীত পড়েছে। শীতের রাতে হাঁটতে ভালই লাগে। তার মাথায় ক্রমাগত বাজছে যাবার সময় হল বিহঙ্গের। তাড়ানো যাচ্ছে না। এটাকে।

তিনি বাড়ি ফিরলেন রাত দশটায়। নবী তখনও আছে। বসার ঘরে আরামের ভঙ্গি করে সিগারেট টানছে। চা কফি–টেবিলের উপর রাখা।

কোথায় ছিলেন। সারাদিন? আমি সেই সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছি। আপনার কোনো ট্রেস নেই। কলেজেও ফোন করেছিলাম। তারাও কিছু জানে না।

ওসমান সাহেব জবাব দিলেন না।

সায়েন্স ফিকশনটা নামিয়ে দিয়েছি। বসে আছি আপনাকে পড়বার জন্যে। তিনি ক্লান্ত স্বরে বললেন, আজ থাক, অন্য একদিন পড়বা। আজ আমার শরীরটা ভাল না।

না না। আজই পড়বেন। গরম গরম। যান, হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। আকবরের মা, চা কর

আমাদের জন্যে। তুরন্ত।

নবী শীস দিতে লাগল। একজন সুখী ও পরিতৃপ্ত মানুষ। হাসিমুখে বলল।

আইডিয়াটা জমিয়ে ফেলেছি। অতটা ভাল হবে বুঝতে পারিনি। আপনি গিয়েছিলেন কোথায়? মনিকার ওখানে নাকি?

ওসমান সাহেব হ্যাঁ না কিছুই বলেন না। তাঁর খুব ইচ্ছা হতে লাগল বাবার মত চেঁচিয়ে উঠতে–শাট আপ। কিন্তু তিনি তা করলেন না। চাদর গায়ে দিয়ে বসলেন সোফায়। মৃদু স্বরে বললেন, পড়ুন।

নবী পড়তে শুরু করল। গল্প জমে গেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওসমান সাহেব এক সময় মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলেন। চমৎকার লেখা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *