১২. প্যাকেট করা নতুন ক্যাসেট

প্যাকেট করা নতুন ক্যাসেট ডেক জোগাড় করতে কামালের বেশ ঝামেলা হয়েছে। তিন ঘন্টার জন্যে নিয়ে যাবে, প্যাকেট খোলা যাবে না-এই কথার পরও কোনো দোকানদার রাজি হয় না। এই তিন ঘন্টার জন্যে পাঁচ শ টাকা দিতে সে রাজি, তাতেও কাজ হয় না। শেষ পর্যন্ত সাত শ টাকায় রফা হল। ঠিক হল দোকানের এক জন কর্মচারীও সাথে যাবে। তাতেই সই। এত যন্ত্রণা করে শেষ পর্যন্ত একটা পয়সা না পাওয়া গেলে মাথায় বাড়ি।

দোকানের কর্মচারী যাবার পথে বলল, তিন ঘন্টার জন্যে জিনিসটা নিচ্ছেন কেন?

কামাল বিরক্ত হয়ে বলল, এত কথার আপনার দরকার কি? এই নেন পঞ্চাশটা টাকা রাখেন। চা-পানি খাবেন। আর দয়া করে মুখটা বন্ধ রাখবেন।

ব্যাপরটা কি?

ব্যাপারটা কি না জিজ্ঞেস করার জন্যেই তো পঞ্চাশ টাকা। আবার বলেন ব্যাপারটা কি? বাড়ি কোথায় ভাই আপনার?

কর্মচারী চুপ করে গেল।

ক্যাসেট ডেক ভদ্রলোকের পছন্দ হল। মুখে সে কিছু বলল না তবে পছন্দ যে হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। চোখ চক চক করছে। চোখের পাতা ঘন ঘন কাঁপছে। কামাল মনে মনে বলল, হারামজাদা লোভী।

ভদ্রলোক বললেন, কত চান আপনি?

কামাল বলল, এর আসল দাম আপনি জানেন?

আপনি কত হলে দিতে পারেন শুনি।

পনের হাজার।

আপনি পাগল না-কি, ব্ল্যাক মার্কেটের জিনিস চাচ্ছেন পনের হাজার।

ব্ল্যাক মার্কেটের বলেই পনের চাচ্ছি—আসল দাম চল্লিশ।

আমি ছয় হাজার দিতে রাজি।

কত বললেন?

ছয়।

রাগে কামালের ব্ৰহ্মতাল জ্বলে গেল। হারামজাদা বলে কি?

রাজি থাকলে বলেন আমি এক্ষুনি দিয়ে দিচ্ছি ক্যাশ।

এই দামাদামি কার কাছে শিখছেন ভাইসাব?

কি বললেন?

না বলব আবার কি?

ব্ল্যাক মার্কেট করছেন এইটাই তো অপরাধ তার ওপর আবার প্রফিট করার চেষ্টা।

তা তো ঠিকই।

আপনাকে তো পুলিশেও ধরিয়ে দিতে পারি। পারি না?

জ্বি পারেন। কেন পারবেন না?

সাড়ে ছয় পাবেন।

কামাল মধুর ভঙ্গিতে হাসল। ভদ্রলোক বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে যান, সাত হাজার। ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছি। রাজি থাকলে বলেন হ্যাঁ।

রাজি আছি। বিকালে আসব টাকা জোগাড় রাখবেন।

বিকালে আসতে হবে না এখনই দিয়ে দিচ্ছি। আপনার লোককে বলুন ফিট করে দিক।

এটা তো দেওয়া যাবেনা। আরেক জনকে দেখাতে নিয়ে যাব। আমার তিনটা সেট আছে তিনটাই বেচতে হবে।

একই জিনিস?

জ্বি একই জিনিস। একই কোম্পানি। একই মাল।

ওদের কাছে কততে বেচবেন।

যত পাওয়া যায়। তবে সাত পর্যন্ত আসলে ছেড়ে দেব। বেশি লোভ করতে নাই।

আপনি নিজে কত দিয়ে কিনেছেন?

কামাল মধুর ভঙ্গিতে হাসল। ভদ্রলোক বললেন, এইটাই রেখে যান। অন্য সেট কাস্টমারদের দেখান।

অন্য দুই সেট আছে টঙ্গিতে। আবার টঙ্গি যাব? বিকেলে আমি নিয়ে আসব। জিনিস দেখে ফিট করে তারপর টাকা দিবেন। আমি ভাই এক কথার মানুষ।

 

কামাল সন্ধ্যার পর ঐ বাড়িতে উপস্থিত হল। ভদ্রলোক চিন্তিত হয়ে অপেক্ষা করছেন। এটাই স্বাভাবিক। কামালকে দেখেই উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, জিনিস কোথায় সেটা শুনি।

আপনার এখান থেকে গেলাম না? ভদ্রলোক জিনিস দেখে মুগ্ধ। এক কথায় বার হাজার দিতে রাজি। আমি তিনটাই খালাস করে দিলাম পঁয়ত্রিশ হাজারে।

সে কি?

তিনটাই কিনে নিলেন?

জ্বি। আমি ভাবলাম খবরটা আপনাকে দিয়ে যাই। বলে গিয়েছিলাম, অপেক্ষা করে আছেন।

এই খবরে আমার লাভটা কি? বার হাজার তো আমিও দিতে পারতাম।

আপনি তো ভাই দিতে চান নাই। আপনি বলেছেন সাত।

ভদ্রলোক মুখ কালো করে বসে রইলেন। কামাল বলল, ভাইসাব মন খারাপ করবেন না, এই রকম চালান যদি আরো আসে আপনাকে খবর দিব। আমি আপনাকে কথা দিলাম যে দাম আপনার সাথে ঠিক হয়েছে ঐ দামেই দিব। সাত হাজার। আমি এক কথার মানুষ।

কবে আসবে এরকম চালান?

তার কি ভাই কোনো ঠিক আছে? কালও আসতে পারে, আবার ধরেন দুই মাসও লাগতে পারে। তবে আপনাকে কথা দিচ্ছি আসামাত্র আপনাকে টেলিফোন করব। আমি এক কথার মানুষ।

ভদ্রলোক মন খারাপ করে বসে রইলেন। কামাল হৃষ্টচিত্তে বেরিয়ে এল। হারামজাদা টোপ গিলেছে। এখন টেলিফোন করলেই পকেটে টাকা নিয়ে ছুটে আসবে। টঙ্গি আসতে বললে টঙ্গি আসবে। জয়দেবপুর যেতে বললে যাবে জয়দেবপুর। তবে টেলিফোন করতে হবে মাস খানেক পরে। দু এক দিনের মধ্যে করলে সন্দেহ করতে পারে। লোভ, লোভ। শালা ললাভের জন্যে মারা পড়ছিস। লোভটা একটু কমা। একটু না-কমালে ধনে প্রাণে যাবি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *