১২. দ্য ট্রিউইজার্ড টুর্নামেন্ট
গাড়ি কখনও ধীরে, কখনও প্রচণ্ড জোরে চলল ক্যাসেলের দিকে। চতুর্দিকে ঘন অন্ধকার, বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া। এক ইঞ্চি দূরের কিছু দেখা যায় না। তবু হ্যারি গাড়ির বন্ধু কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। বৃষ্টির চাদর ভেদ করে সবুজ অরণ্য, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঘর। ঘরের সীমানা বন্ধু, ভারি পর্দা ফেলা ফাঁক দিয়ে ভিতরের আলো দেখা যাচ্ছে। চতুর্দিকে অদ্ভুত এক জাদুমুগ্ধ পরিবেশ। হারমিওন, রন, জর্জ–ফ্রেড, জিনি সকলেই ক্লান্ত… খুব সম্ভব ঘুমিয়ে পড়েছে। হ্যারির চোখে ঘুম নেই।… গাড়ি এসে থামল বিরাট ওক গাছের দরজাওয়ালা ক্যাসেলের সামনে। অন্ধকারে সেটা চোখে পড়ে না কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুতের চমকানিতে ও দেখতে পেল পৌঁছে গেছে। ওক গাছের প্রকাণ্ড দরজা থেকে পাথরের চওড়া সিঁড়ি নেমে গেছে উঠোন পর্যন্ত। ওরা পৌঁছবার আগে আরও অনেকে এসে পৌঁছেছে। তারা জিনিসপত্র নিয়ে নামতে ব্যস্ত। হ্যারি, রনরা গাড়ি থেকে সাবধানে নামল। চমৎকার পাথরের সিঁড়ি দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজার গোড়ায় প্রথম হলে যাবার মুখে আলো জ্বলছে। তারই দাপটে অন্ধকার গুটি সুটি মেরে পালিয়েছে।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ রন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল–ঈশ্বর তোমার বৃষ্টি বন্ধ কর। রাস্তাঘাট, নদী–নালা সব তো জলে ভরে গেছে–কানায় কানায়… আর বৃষ্টি হলে হ্রদের জল যে ক্যাসেলে ঢুকবে। আমি তো ভিজে জজরে…!
হঠাৎ জলভর্তি একটা ছোট বেলুন রনের গায়ে লেগে ফেটে গেল। লাল রঙ করা জল। তারপরই হলের বিশফুট উঁচু থেকে অবিশ্রান্তভাবে বেলুন ছেলে মেয়েদের গায়ে মাথায় পড়তে লাগল। আরও বেশি তারা ভিজে গিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল–নতুন ছাত্র–ছাত্রীদের অভ্যর্থনা!
রন দেখল বাদরামি করছে পীভস (জাদু বিদ্যালয়ের পালিত ভূত)!
কে যেন ভীষণ রেগে বলল–পীভস! ভাল চাও তো নিচে নেমে এসো!
প্রফেসর (মিসেস) ম্যাকগোনাগল ওদের দেখতে পেয়ে ভেঁজা ফ্লোর উপেক্ষা করে একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে রন, হ্যারিদের বুকে টেনে নিলেন। ভেজা ফ্লোরে চিৎপটাং হচ্ছিলেন–হারমিওন ধরে ফেলল। উঃ কি কাণ্ড করেছে ভূতটা। দুঃখিত মিস গ্র্যাঞ্জার–।
–ঠিক আছে, ঠিক আছে প্রফেসর, হারমিওন ম্যাকগোনাগলের গায়ে হাত বুলোত বুলোতে হেসে বলল
ডেপুটি হেড মিস্ট্রেস প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দারুণ রেগে গিয়ে আবার বললেন–পীভস নিচে নেমে এস… তার বাছাই টুপি (একমাত্র প্রফেসররা মাথায় দেন) ও চশমা ঠিক করতে করতে বললেন।
–কই কিছু তো করছি না! কা কা করে পীভস বললেও পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের গায়ে আরও জলভরা বেলুন উঁড়লে ওরা ভীষণভাবে চিষ্কার করে গ্রেট হলে দৌড়ে ঢুকে পড়লো। পীভস তারপরে আরও একটা ছোট ছেলের গায়ে বেলুন ছুঁড়ল।… ছেলেটা ভয় পেয়ে গেল। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের ওপর দাঁড়িয়ে আনন্দে পাগলের মত ধেই ধেই করে নাচতে লাগল পীভস।
ম্যাকগোনাগল সব ছেলেদের কঠিন স্বরে বললেন–দাঁড়িয়ে থেকো না… তোমরা সবাই চল গ্রেট হলে।
ডবল দরজা ঠেলে সকলে গ্রেট হলে ঢুকল। রন মাথার ভেজা চুলের জল হাত দিয়ে ঝরাতে ঝরাতে দাঁত ঠক ঠক করে পিছু পিছু ভেতরে ঢুকল।
নতুন ছেলে–মেয়েদের অভ্যর্থনার জন্য গ্রেট হল দারুণভাবে সজ্জিত। ওইখানে প্রথমে খাওয়া–দাওয়া হবে। শত শত মোমের আলোতে সোনার থালা আর গবলেট (পানপাত্র) আলো পড়ে চমকাচ্ছে।
কিছু থালা হাওয়াতে ভাসছে! দেখতে দেখতে চারটে ছাত্রাবাসের ছেলে মেয়েরা চারটে লম্বা টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ল। পাঁচ নম্বর টেবিলের ধারে বসলেন স্টাফরা। হলটা ছেলেমেয়েদের হাসি–ঠাট্টা, কথায় গমগম করে উঠল। চারটে টেবিল, চারটে ছাত্রাবাসের গ্রিফিন্ডর, হাফল পাফ, র্যাভেন ক্ল আর স্নিদারিং। হ্যারি, রন, হারমিওন আর নেভিল হলের এক পাশে স্লিদারিন, র্যাভেন রু, হাফল পাফকে ছাড়িয়ে গ্রিফিন্ডারের পাশে বসে পড়ল। পাশেই নিয়ারলি হেডলেস নিক… গ্রিফিন্ডারের ভূত। মুক্তোর মত সাদা, মোটামুটি স্বচ্ছ, ভাল জামাকাপড় পরেছে। গলা থেকে প্রায় কাটা মাথাটা যাতে না দোলে তার জন্য গলায় শক্ত শক্ত গলাবন্ধ কোট পরেছে।
–শুভ সন্ধ্যা নিক ওর গ্রুপের ছেলে–মেয়েদের বলল।
–হ্যারি তখন ওর ট্রেইনারের থেকে জমা জল বের করতে ব্যস্ত।…. যাঁ, ঈশ্বর যা করবার তা করেছ। আমার যে বড় ক্ষিধে পেয়েছে, হ্যারি বলল।
তারপরই ও শুনতে পেল হ্যারি–হ্যারি!
পাশ ফিরে দেখল ওর হিরো তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কলিন ক্রিভে।
কেমন আছ কলিন? হ্যারি দারুণ খুশি মনে তাকাল কলিনের দিকে।
–হ্যারি একটা কিছু অনুমান কর। জানো আমার ভাই ডেনিস স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
–দারুণ খবর কলিন।
–দারুণ উত্তেজনা, কলিন চেয়ারে উঠে নাচতে নাচতে বলল–উঃ! কি ভাল হয় ও যদি গ্রিফিন্ডরে আসে। তুমি কিন্তু কাউকে খবরটা দেবে না, কলিন বলল।
নিক বলল-একই স্কুলে সাধারণত ভাই–বোনেরা একই হলে থাকে। তাই না? উইসলিদের দেখ, ওদের সাত ভাই–বোন সবাই গ্রিফিন্ডরে।
প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের অনেক কাজ। ভোজ শুরু হবার আগে গ্রেট হল মুছে শুকনো করতে হবে। লোকজন নিয়ে তাই করছেন। ওরা দেখল একটা শূন্য চেয়ার। বুঝতে পারলো না সেটা কার!
ওদের স্কুলে এখনও ডার্ক আর্টস বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য কোনও কোর্স চালু হয়নি। হারমিওন বলল–আশ্চর্য! ওটা তো দরকার। এর আগে টিচার আসেনি তা নয়। এসেছিলেন, কিন্তু তিন মাসের বেশি কেউ টেকেনি। হ্যারির সবচেয়ে প্রিয় অধ্যাপক লুপিন, গতবছর স্কুল ছেড়ে দিয়েছেন। হ্যারি টেবিলে কোনও নতুন মুখ দেখতে পেল না।
হারমিওন বলল-এমনও হতে পারে কাউকে কর্তৃপক্ষ পাননি… কিন্তু তা বললেও ওকে খুবই উদগ্রিব দেখাল।
হ্যারি আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টেবিল দেখল। হতাশ হল–নতুন মুখ একটিও নেই। চার্মস টিচার, ফ্লিট উইট, একগাদা কুশনের ওপর বসে গাছগাছরার অধ্যাপক প্রফেসর প্রাউটের পাশে অকারণে মুখটা গম্ভীর করে বসে রয়েছেন। উনি এস্ট্রোনমি বিভাগের প্রফেসর সিনিস্ট্রার সঙ্গে বকবক করছেন। তার অপর পাশে রয়েছেন তেল চকচকে চুলে পোসান মাস্টার (বিষ তৈরি করেন জাদুশক্তির জন্য) স্নেইপ, হ্যারির ওকে একদম পছন্দ হয় না। স্নেইপও হ্যারিকে সুনজরে দেখলেন না। উনি জানেন গত বছরে হ্যারি আর রন সিরিয়সকে আজকাবান থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। লম্বা নেকো স্নেইপ, সিরিয়সের পরম শত্রু! নতুন নয়, তাদের স্কুল জীবন থেকে বৈরতা। স্নেইপের একপাশের আসন খালি, হ্যারি ভাবল ম্যাকগোনাগলের হতে পারে। অন্যপাশে হেডমাস্টার সর্বজনপ্রিয় ডাম্বল ডোর। মাথায় বড় বড় চুল, বুক পর্যন্ত ঝুলে পড়া শুদ্র দাড়ি। শান্ত সৌম্য চেহারা। সকলেই তাকে ভালবাসে যেমন… তেমনি শত্রু অনেক। মোমবাতির আলো পড়ে সিল্কের মত সাদা চুল দাড়ি কাঁচের মত ঝলসাচ্ছে। গায়ে সবুজ সিঙ্কের বড় মাপের আলখেল্লা। তাতে নানা সূচিশিল্প করা। তারা আর চাঁদের প্রতিকৃতিতে ভর্তি! ডাম্বল ডোর তার সরু সুর লম্বা আঙ্গুল থুতনিতে রেখে তন্ময় হয়ে কিছু ভেবে চলেছেন। হ্যারি ছাদের সিলিং-এ তাকাল। দেখে মনে হয় আকাশ মেঘে ঢাকা কাল আকাশ। কাল আর রক্ত বেগুনি খণ্ড খণ্ড মেঘ সেই আকাশে ভেসে চলেছে। হ্যারি চোখ ফেরাতে পারে না… একদৃষ্ট তাকিয়ে থাকে; অথচ নতুন তো দেখেছে না। প্রথম যখন এসেছিলো তোগার্টে তখনও ছিল একই দৃশ্য!
রন হ্যারিকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল–তাড়াতাড়ি… পেটে আমার ক্ষিধের আগুন জ্বলছে। আমি এখন একটা পুরো জলহস্তি পেলে কচকচিয়ে খেতে পারি। ওর হয়ত আরও কথা বলার ছিল; কিন্তু গ্রেট হলের ওক কাঠের বিরাট দরজা খোলার সাথে সাথে রন চুপ করে গেল। দেখল প্রফেসর ম্যাকগোনাগল একদল প্রথম বর্ষের ছেলেদের নিয়ে আসছেন। হ্যারি আর রনের মতই এরা ভিজে চুপচুপে। কিন্তু তারা শান্ত। ওরা যেন সমুদ্র সাঁতরে এসেছে… জাহাজে চেপে নয়। সকলেই দারুণ ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছে। একটি ছেলেকে দেখে মনে হল ও হ্যাগ্রিডের মোলস্কিন (মোটা সুতি কাপড়ের) ওভারকোট গায়ে দিয়েছে। কোটটা এত বড় যে মনে হয় ও একটা কালো রঙ-এর ডিউক বা ওপরে রাজপুরুষের বেশ পরেছে। বিরাট কলারের ওপর ছোট মুখটা দারুণ প্রফুল্ল শুধু নয় উত্তেজিত। হ্যারি কলিনকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে দুটো বুড়ো আঙুল দেখাল।
ছাত্রছাত্রীরা প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে ঘিরে দাঁড়াল। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সামনে একটা তে–পায়া স্টুল রাখলেন। তার ওপর একটা পুরনো, জীর্ণ, দাগওয়ালা জাদুকরের হ্যাট রাখলেন। প্রথম বর্ষের ছাত্ররা সেই টুপির দিকে তাকিয়ে রইল। অন্য যারা সেখানে জমা হয়েছিল তারাও তাকিয়ে রইল। সকলেই নীরব। তারপর টুপি মানুষের মুখের মত হাঁ হয়ে গেল। তারপর সেই টুপিটা গান গাইতে শুরু করল:
হাজার বছর বা তারও আগে
যখন আমাকে সেলাই করে নতুন বানানো
হয়েছিল
খ্যাতনামা চারজন জাদুকর ছিলেন,
আজও তাদের নাম অজ্ঞাত নয়,
ওয়াইল্ড মুরের অতি সাহসী গ্রিফিন্ডর,
গ্লেন থেকে এসেছিলেন ফেয়ার র্যাভেনক্ল,
ভ্যালি ব্রোড থেকে সুইট হাফপাফ,
ফেন থেকে এসছিলেন শ্রুড স্লিদারিন
তারা একই ইচ্ছা, আশা ও
স্বপ্ন দেখেছিলেন
নতুন নতুন ছেলে–মেয়েদের
জাদু শিক্ষার।
এইভাবেই হোগার্টের স্কুল
শুরু হয়েছিল স্কু
লের প্রতিটি প্রতিষ্ঠাতা
ছাত্র–ছাত্রীদের নিজেদের
নামে চারভাগে ভাগ করেছিলেন,
তাদের গুণের
প্রতি লক্ষ্য রেখে,
যারা সাহসী তারা গেল গ্রিফিন্ডরে
খুবই বাকিদের থেকে ভিন্ন,
সবচেয়ে চালাকেরা গেল র্যাভেনক্লতে,
যারা কঠোর পরিশ্রমী তারা হাফপাফে
ক্ষমতা লোভীরা অবশ্যই স্লিদারিনে
তারা যখন পৃথিবীতে ছিলেন,
তারা ভিড়ের
মধ্য থেকে তাদের গুণাগুণ দেখে ভাগ করেছিলেন,
এখন তো তারা নেই… পৃথিবী থেকে চলে গেছেন,
তাহলে, কেমন করে তোমরা কে কোথায় যাবে
ঠিক হবে?
গ্রিফিন্ডর আগেই ঠিক করে গেছেন
আমার মাথায় তার মাথা থেকে ফুঁ দিয়ে
কিছু ঘিলু ঢুকিয়ে দিবেন।
যাতে আমি তাদের মত নির্বাচন করতে পারি!
এখন আমার কথা কান দিয়ে শোনো,
আমি আজও ভুল করিনি,
তোমাদের
মনের মধ্যে ঢুকে
বলে দিতে পারি কোথায় তোমরা
যাবে!
গানের শেষে গ্রেটহলে হাততালি, হুড়োহুড়ি শুরু হল।
এবার বক্তৃতা দেবেন অন্যান্য প্রফেসররা। তারপর প্রফেসর ডাম্বলডোর উদাত্ত কণ্ঠে ভাষণ দেবেন : এটাই প্রোগ্রাম।… তারপর খাবার পালা।
প্রফেসর গানের শেষে রোল করা একটা পার্চমেন্ট বার করলেন।
–যখন তোমরা তোমাদের নাম শুনবে মাথায় টুপিটা চাপিয়ে চেয়ারে বসবে।
হ্যাটটা বলে উঠল অ্যাকারকে স্টুয়ার্ট!
একটি ছেলে কাঁপতে কাঁপতে স্টুলে বসল। টুপিটা মাথায় পড়ল।
হ্যাট উচ্চস্বরে বলল–র্যাভেনক্ল!
স্টুয়ার্ট অ্যাকারলে মাথার টুপিটি খুলে দ্রুত ব্ল্যাভেনক্ল টেবিলের সিটে বসল। তখন হ্যারির চোখ পড়ল র্যাভেনক্ল সীকার–চোর ওপর। সে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। হ্যারির হঠাৎ করে ইচ্ছে হল, সে র্যাভেন ক্ল–দের টেবিলে যেয়ে বসে। অদ্ভুত নিশ্চয়ই তাহলে হ্যারি হঠাৎ র্যাভেন ক্ল গ্রুপে বসতে চাইবে কেন!
–ব্যাডডক ম্যালকম!
স্লিদারিন!
হ্যারি লক্ষ্য করল ম্যালফয় ভীষণ জোরে হাততালি দিল।
–ব্র্যান স্টোন, এলিনর!
–হাফলপাফ।
–কন্ডওয়েল ওয়েন!
হাফলপাফ
–ক্রিভে ডেনিস!… ও এগিয়ে গেল হ্যাগ্রিডের মতো বিরাট ওভারকোটটা সামলাতে সামলাতে। ঠিক সেই সময় হ্যাগ্রিড অন্য একটা দরজা দিয়ে হলে ঢুকলেন। সাধারণ মানুষের চাইতে দ্বি–গুণ লম্বাদেহ–তেমনি তিনগুণ চওড়া।
হ্যাগ্রিডের মাথায় বড় বড় চুল, কাল লম্বা দাড়ি। দেখলে অদ্ভুত এক অন্য জগতের মানুষ মনে হয়। হ্যারি, রন, হারমিওন জানে তার মত উদারচেতা মানুষ পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। স্টাফ টেবিলে বসে সকলের দিকে চোখ বোলালেন। দেখলেন ডেনিস ক্রিভে শান্ত হয়ে স্টুলে বসে। ওর টুপি বলছে না কোন ছাত্রাবাস ওর।
গ্রিফিন্ডর টুপি বলে উঠল।
গ্রিফিন্ডরের সকলে হাততালি দিল। হ্যাগ্রিড বাদ রইলেন না। ডেনিস ক্রিভে একগাল হেসে টুপিটা খুলে স্টুলের ওপর রেখে তাড়াতাড়ি ওর ভাইয়ের পাশে বসল।
গ্রিফিন্ডর পরপর তিন বছর লাগাতার ইন্টারহাউজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
প্রিটচার্জড গ্রাহাম!
স্লিদারিন
কুইরকে, ওলো?
র্যাভেন ক্ল
এবং সবশেষে হুইটবাই, কেভিন হাফল পাফ!… বাছাই শেষ হল। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল টুপি আর স্টুলটা নিয়ে হল ছেড়ে চলে গেলেন।
-এবার খাওয়া শুরু হবে, রন সোনার থালা আর কাঁটা চামচের দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে রইল।
প্রফেসর সহাস্যে হাত দুটো প্রসারিত করে সকলকে স্নেহ–ভালবাসা–স্বাগতম জানালেন–আমার তোমাদের মাত্র দুটো মাত্র দুটো শব্দ বলার আছে।
ডাম্বলডোরের গুরু গম্ভীর গলা সমগ্র হলটা যেন কেঁপে কেঁপে উঠল প্রতিধ্বনিতে। খাবার খাও।
–দারুণ, দারুণ… শূন্য ডিমগুলো জাদুদণ্ডের প্রভাবে নিমেষের মধ্যে নানা সুস্বাদু খাবারে পূর্ণ হয়ে গেল।
বেচারা নিয়ারলী হেডলেস নিক রন–হ্যারি–হারমিওনের খাবার ভর্তি ডিমের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চোখ তার আর নড়ে না।
মুখ ভর্তি সেদ্ধ আলু নিয়ে রন হেসে বলল–আরে বিয়ারও আছে।
হেডলেস নিক বলল–শুধু আমাদের স্কুলে হয়, আর কোথাও নয়। তোমরা তো জানো না রান্নাঘরে গোলমাল হয়েছিল।
কেন কী হয়েছিল? হ্যারি বলল। মুখে ওর তখন একগাদা টুকরো টুকরো হাড়ছাড়া গরুর মাংশ!
হেডলেস নিক ওর গলার কলারটা সামান্য ওপরে তুলে বলল–পীভসকে বাদ দেওয়াতে ও খুব মনে ব্যথা পেয়েছে শুধু নয়, রাগও করেছে। ও একটা অসভ্য জংগলী, ব্যবহারটাও ভাল নয়, কথাবার্তার ছিরিছাঁদ নেই। তোমরা তো জান আমাদের একটা ভূত কাউন্সিল আছে। বেশিরভাগ সদস্য ওকে এই সুযোগ দিতে চাইলেও বাদ সাধলেন ব্লাডি ব্যারণ। বললেন, ওকে সভ্য মানুষদের ভোজে আসতে দেওয়া ঠিক হবে না।
ব্ল্যাডি ব্যারণ আবার ফ্রিদারিং হাউজের ভূত। মোটামুটি স্বাভাবিক। কৃশকায়া, নীরব অবচ্ছায়া… রূপালী আর রক্তের মত লাল পোশাক পরে থাকে। স্কুলে ওই একমাত্র ভূত বা অপচ্ছায়া সে পীভসের মত বাদরকে রুখতে পারে।
আমরা অন্য কিছু ভেবেছিলাম, তা রান্নাঘরে কী হয়েছিল? রন জিজ্ঞেস করল ফিস ফিস করে।
হেডলেস নিক বলল–ওকে পার্টিতে আসতে দেওয়া ঠিক হবে না শুনে রান্নাঘরে বাদরামী শুরু করে। থালা–বাসন ছোঁড়াছুড়ি, কাঁচের বাসন ভাঙা… ওইসব যা ইচ্ছে তাই।
হারমিওনের হাত থেকে কমলালেবু রসে ভর্তি কাঁচের গবলেট সটকে গিয়ে ভেঙে গেল। তারই ঝন ঝন শব্দ। টেবিলে মিষ্টিরস পড়ে আঠার মত আটকে রইল। পামকিনের জুস আরও অনেক কিছু। টেবিলের পাট পাট সাদা চাদরে নানান রঙ-এর ছাপ পড়ে গেল।
হারমিওন বলল–হোগার্টে কি হাউজ এলফ আছে?
হেডলেস নিক বলল–আছে। আশ্চর্য হয়ে হারমিওনের মুখের দিকে তাকাল প্রায় একশ হবে। ব্রিটেনে কোনও বাড়িতে এত সংখ্যক নেই।
–আজ পর্যন্ত তো আমি একটাও দেখিনি, হারমিওন বলল। দিনের বেলা ওরা কিচেন থেকে বেরোয় না, হেডলস নিক বলল। রাত্রে বাড়ি–ঘর সাফ করার জন্য বেরায়। তাই তুমি এদের। ভাল এলফরা ভালভাবেই থাকে।
–ওরা তো পারিশ্রমিক পায় নিশ্চয়ই?… অসুখ করলে ছুটি… অবসরের পর পেনসন এই সব পায়?
হেডলেস নিক হারমিওনের কথা শুনে খুব জোরে জোরে হেসে উঠল। এত হাসি যে গলার মাফলার সরে গেল, স্লিপার খুলে গেল। সামলে নিয়ে বলল, তারা এসব চায় না।
হারমিওন এমনিতেই খুবই কম খায়। নিকের কথা শোনার পর খাওয়ার প্লেট সরিয়ে হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে রইল।
রন হাসল, বলল–আঃ হারমিওন, এত কথা কি ভাবলে চলে! বলতে বলতে অর্ধেক পুডিং হ্যারির হাঁটুর উপর ফেলে।… সরি হ্যারি রাগ করো না।
হারমিওনের কণ্ঠে বেদনা। বেদনা মিশ্রিত গলায় বলল-এলফরা এক কথায় ক্রীতদাস। ঈশ্বর এমনভাবে ওদের সৃষ্টি করেছেন যে না পারে প্রতিবাদ করতে, না পারে হিংস্র হতে। ক্রীতদাসদের তৈরি এই ডিনার। তোমাদের মনে ব্যথা লাগে না রন? অনেক অনুরোধেও হারমিওন একটা দানাও দাঁতে কাটলো না। গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইল।
রন বলল–আ, কি মিষ্টি! ইচ্ছে করেই মিষ্টি গন্ধ হারমিওনের নাকের কাছে পৌঁছে দিল… আহা স্পটেড ডিঙ্ক, দেখ দেখ! চকলেট গেটু!
খাওয়া–দাওয়া শেষ। প্লেট দেখে পিপীলিকা কেঁদে যায়…. ঠিক সেই সময় এলবাস ডাম্বলডোর চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন… সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত গ্রেট হল গভীর এক নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল। শুধু ঝড়ো হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আর বৃষ্টির ছাটের জানালার কাঁচে।
–তো, ডাম্বলডোর সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমরা এখন খাওয়া দাওয়া করেছি, বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছি (হারমিওন বলল–) আমি তোমাদের সকলকে চুপ করে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।… তোমাদের কাছে আমি কিছু বলবে, আশা করি মনযোগ দিয়ে শুনবে।
–মি. ফিলচ আমাকে তোমাদের জানাতে অনুরোধ করেছেন… কিছু জিনিস ক্যাসেলে আনার যে বিধিনিষেধ ছিল তার থেকে কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন ইও–ইওস, ফেঞ্জড ফ্রিসবীস এবং এভার–বেসিং বুমেরাংগস। পুরো লিস্ট… প্রায় চারশ সাইতিরিশ জিনিস। কারও ইচ্ছে থাকলে ফ্লিচের অফিসের নোটিশ বোর্ডে দেখে আসতে পার।
কথা কইতে কইতে ডাম্বলডোরের ঠোঁট দুটো শেষপ্রান্ত সামান্য কুঞ্চিত হল।
–তোমরা একটা কথা মনে রাখবে সব ছাত্র–ছাত্রীদের নিষিদ্ধ বনে ঢাকা সম্পূর্ণ মানা। তেমনি তৃতীয় বর্ষের নিচের ছাত্র–ছাত্রীদের হগসমেড গ্রামে যাওয়া নিষিদ্ধ।
–তোমাদের একটা দুঃখজনক সংবাদ জানানো উচিত, এ বছর কিডিচ কাপ খেলা হবে না।
–কী বললেন ডাম্বল ডোর? চাপাগলায় হ্যারি যেন নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল।
ডাম্বলডোর বলে চললেন–নতুন একটা ইভেন্টের জন্য এই দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। তবু আমার মনে হয় নতুন ইভেন্টটা তোমাদের সকলের ভাল লাগবে। তোমাদের শিক্ষকদেরও। আমি অতি আনন্দের সঙ্গে তোমাদের জানাচ্ছি ট্রাই উইজার্ড টুর্নামেন্ট হোগার্টে এই বছর হবে। সে কারণে আমরা এই কাজে ব্যস্ত থাকবো। তাই কিডিচ টুর্নামেন্ট করা সম্ভব হবে না।
মাঝ পথে ফ্রেড উইসলি বেশ জোরে জোরে বলল–স্যার আপনি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। মুডি হলে আসার পর থেকেই একটা নীরবতা সমস্ত হলটা ছেয়ে রয়েছে।
প্রায় সকলেই হেসে উঠল আর সেই হাসি ডাম্বলডোর যথাযথভাবে আকারে ইঙ্গিতে প্রশংসা করলেন।
–শোনো ঠাট্টা করা আমার স্বভাববিরুদ্ধ মি. উইসলি, ডাম্বলডোর বললেন তা হলে তোমাদের একটা গল্প বলতে হয় এক গ্রীষ্মে একটি অতি প্রাকৃত জg, একটি কুৎসিত ডাইনি, এবং একটি অতি ক্ষতিকারক প্রেত… বন্দী হয়…
প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার গলা খুক খুক করে সকলকে শুনিয়ে কেশে ডাম্বলডোরকে থামতে বললেন। এখন ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্ট নিয়ে কথা বলতে হবে এটা বোঝাতে চাইলেন।
–অবশ্য গল্প বলার সময়টা ঠিক নয়… না, তোমাদের আমি টুর্নামেন্ট বিষয়ে বলব ডাম্বলডোর বললেন–আমিও তোমাদের সবিস্তারে ব্যাখ্যা করতে পারব না… যারা সম্পূর্ণ জানে তারা ভুল টুল বললে আমাকে ক্ষমা করবে। সংক্ষেপে বলি… প্রায় সাতশ বছর আগে এই টুর্নামেন্টের উদ্ভব হয়েছিল। তিনটি স্কুলের বন্ধুতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হোগার্টস, বকসব্যাটনস ও ডারমাংগ। ওই তিনটি স্কুলের মধ্যে থেকে তিনটি সেরা চ্যাম্পিয়নকে তাদের প্রত্যেককে একটি করে জাদু বিদ্যা দেখাতে হত। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ওই তিনটি স্কুলের একটিকে হোস্ট হতে হতো। সকলেই একমত হয়েছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের জাদুকর, জাদুবিদদের মধ্যে এ খেলার মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। ভালই চলছিল…হঠাৎ বহু লোকের মৃত্যুর কারণে খেলাটা বন্ধ হয়ে গেল।
হারমিওন উদ্বেগ ও ভয়ের সঙ্গে বলল–বহু মানুষের মৃত্যু? হারমিওনের উদ্বেগ বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী পাত্তাই দিল না। তারা খেলা পুনরায় চালু করার জন্য আকুল। হ্যারি খেলাটি সম্পর্কে আরও আরও বেশি জানার জন্য ব্যাকুল। বহু বছর আগে অনেক লোকের মৃত্যু, খেলাটি চিরতরে বন্ধ জেনে হ্যারি বিস্মিত হয়। হ্যারি এর কোন কারণ খুঁজে পায় না।
–বহু রাজ্য টুর্নামেন্ট নতুন করে শুরু করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে; কিন্তু কেউই কৃতকার্য হতে পারেনি। ডাম্বলডোর বললেন–যাই হোক আমাদের আন্তর্জাতিক ম্যাজিক্যাল কো–অপারেশন এবং ম্যাজিক্যাল গেমসের ডিপার্টমেন্ট মনে করেছেন ওই টুর্নামেন্টটি আবার চালু করা দরকার। আমরা বহু আলোচনা, পর্যালোচনার পর আমরা কতগুলো ব্যবস্থা নিয়েছি যেন কোনও চ্যাম্পিয়ন (পুরুষ বা মেয়ে) কোনও বিপদ বা মৃত্যুর সম্মুখীন না হয়।
-এই বছরের অক্টোবরে বকসব্যাটনস আর ডারমস্ট্রংগ স্কুল তাদের কিছু বাছাই করা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের এখানে আসছে। তিনজন চ্যাম্পিয়ন ঠিক হবে হেললোওয়েনে। একজন নিরপেক্ষ বিচারক ঠিক করবেন কোন ছাত্র–ছাত্রী ট্রাই উইজার্ড কাপে প্রতিমোগিতা করতে উপযুক্ত। যারা উপযুক্ত হবে তাদেরকে প্রাইজমানী দেয়া হবে এবং তাদের স্কুলকে অভিনন্দিত করা হবে।
–আমি এতে অংশ নেব! ফ্রেড উইসলি উত্তেজিতভাবে তার টেবিলে পাশে বসা বন্ধুদের বলল।
হ্যারি প্রত্যেকটি হাউজ টেবিলের ছাত্র–ছাত্রীদের মুখের দিকে তাকাল। তারা যেন ছটফট করছে টুর্নামেন্ট শুরুর দিনটির জন্য।… সকলেই চায় হোগার্ট চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু স্কুলকে কে প্রতিনিধিত্ব করবে। সেটাই তো প্রতিযোগিতা, সেটাইতো গৌরব।
ডাম্বলডোর আবার বলতে লাগলেন–হল আবার স্তব্ধ। শুধু ঝমঝম বৃষ্টি আর তার কাঁচে আঘাতের শব্দ। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকালে জানালার বাইরে ক্ষণিক চোখে পড়ে গভীর নিষিদ্ধ অরণ্য!
–আমি জানি তোমরা সবাই চাও দুটি স্কুলকে পরাজিত করে হোগার্টে কাপ নিয়ে আসতে।… বড় কথা মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিক যারা সিলেকশনের জন্য আসবেন তাদের বলা হয়েছে শুধু সতের বছর বা তার উর্বের ছাত্ররাই এই প্রতিযোগিতার জন্য বিবেচিত হবে।… ডাম্বলডোর হঠাৎ মুড পাল্টে বলতে শুরু করলেন,
এই বয়সের রেস্ট্রিকসন ঘোষণা করাতে মনে হয় যমজ দুই উইসলি খুবই চটেছে। কিন্তু উপায় নেই… খেলাটি মোটেই ছোটদের উপযুক্ত নয়। খুবই শক্ত ও বিপদের। আমার ব্যক্তিগত ধারণা বয়সের সীমারেখা খুবই প্রয়োজনীয়। কোনও রকম ভুরু কুচকে লাভ নেই।… ডাম্বলডোরের দুই নীল চোখ ফ্রেড আর জর্জের ওপর ন্যাস্ত হল–আমি চাই না, বিশেষ অনুরোধ করছি তোমাদের সতের বছর বয়স না হলে অযথা স্বপ্ন দেখে সময় নষ্ট করবে না।
–আগেই বলেছি অক্টোবরে ওই দুই স্কুলের প্রতিনিধিরা কথাবার্তা বলার জন্য আমাদের আমন্ত্রণে হোগার্টে আসছেন। আমি সর্বান্তকরণে আশাকরি তোমরা তাদের সাদর অভ্যর্থনা করবে ও তাদের সহযোগিতা দেবে।… শুধু তাই নয় হোগার্টের যে চ্যাম্পিয়ন হবে তাকে তোমরা উৎসাহিত করবে।… থাকগে অনেক রাত হল। তোমরা ট্রেন জার্নি ও বৃষ্টিতে ভিজে খুবই ক্লান্ত। কাল সকালে উঠে পড়াশুনা শুরু করবে! শুতে যাও চটপট!
প্রথম ও শেষ পর্ব শেষ হল। ডাম্বলডোরকে দেখা গেল মুডির সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। ছেলেমেয়েরা শুতে যাবার জন্য হৈ হৈ করে এনট্রেন্স হলের দিকে এগোল। এক ঝাক তরতাজা ফুল চলেছে ডাম্বলডোরের দিকে।
জর্জ উইসলি বলল-এই এপ্রিলে আমরা সতেরোতে পা দেবো। দেখি কে বাধা দেয়?
ফ্রেডেরও তাই মত।… একহাজার সোনার অর্থ, ছেলে–খেলা?
হারমিওন বলল–বন্ধুরা এবারে চল। এখানে কথা বলতে থাকলে শুধু তোমরাই থাকবে আর কাউকে পাবে না সবাই চলে যাচ্ছে।
ওরা পাঁচজন এনট্রেন্স হলের দিকে চলল।
ফ্রেড আর জর্জের একই কথা, দেখি ডাম্বলডোর কেমন করে আমাদের বাধা দেয়!
–ইমপারসিয়ল জাজটি কে? কে ঠিক করবে কারা চ্যাম্পিয়ন?–জানি না।
–ঠিক আছে, এক ডোজ পোসান খেলে কেমন হয়? তাহলে বয়স বাড়বে। বয়সের পোসান!
–ডাম্বলডোর জানেন কার কত বয়স।
–কিন্তু উনি তো স্কুল চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করতে পারবেন না।
–মনে হয় ডাম্বলডোরের আমাদের ওপর রাগ আছে তাই অংশগ্রহণ করতে দেবে না।
হারমিওনের মাথায় এক চিন্তা… অনেক মানুষ অকারণে মারা গেছে। হল ছেড়ে, করিডোর দিয়ে যেতে যেতে হারমিওন ভেবে চলল। কেন মারা গেছে? কী কারণে?
ওরা হই–চই করতে করতে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের সামনে মোটা মহিলার ছবির সামনে দাঁড়াল। পাশওয়ার্ড না–বললে মোটা মহিলা দরজা খুলবে না।
–পাশ ওয়ার্ড?
জর্জ বলল–বান্ডার ড্যাশ! নিচে এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছে।
পোর্ট্রেট সরে গেলে… সামনেই অন্ধকার এক সুড়ঙ্গ। ওটাই কমনরুমে যাবার পথ! গোলাকৃতি কমনরুমে ফায়ার প্লেসে কাঠের আগুন জ্বলছে। মাঝে মাঝে ফটফট শব্দ হচ্ছে। হারমিওন উজ্জ্বল চোখে ফায়ার প্লেসের আগুন দেখতে লাগল। হ্যারি দূর থেকে শুনতে পেল হারমিওনের স্বর ক্রীতদাসী। তারপরই মেয়েদের ডরমেটরিতে ও চলে গেল।
ওদের ডরমেটরি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন। জানালায় গাঢ় গোলাপি পর্দা ঝুলছে। দেওয়ালে চারটে পোস্টার। ভিনস আর সিমাস অনেক আগে শুয়ে পড়েছে। ভিন ওর আয়ারল্যান্ডের কৃত্তিম গোলাপ ওর খাটের মাথার ওপর গেঁথে রেখেছে। তাছাড়া ভিক্টর ক্রামের পোস্টার! পুরনো ওল্ড হাম ফুটবল টিমের পোস্টারও দেওয়ালে সেঁটে রেখেছে।
হ্যারি, রন, আর নেভিল রাতের ড্রেস পরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। খুব সম্ভব একজন হাউস-এলফ ওদের বিছানা যাতে গরম থাকে ওয়ার্মিং প্যানস রেখে গেছে। গরম বিছানায় শুতে আরাম লাগল। বাইরে তখন সমানে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। মাঝে মাঝে অরণ্য থেকে ঝড়ো হাওয়া এসে ঘরের জানালা কাঁপিয়ে দিয়ে চলেছে।
রন বলল–ফ্রেড আর জর্জ যদি দলে ঢুকতে পারে তাহলে দেখে নিও আমি ম্যানেজ করে নেব।
হ্যারি বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে বলল–ধর যদি না পার। ওর এখন সামনে ভাসছে অজানা সেই টুর্নামেন্ট। কিন্তু ওর যে বয়স সতেরো হয়নি। কিন্তু ওতো হোগার্টিস কিডিচ চ্যাম্পিয়ন।… ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে–ও একজন স্কুলের প্রতিনিধি, গায়ে জার্সি… ও ট্রাই–উহাজার্ভ টুর্নামেন্ট জিতেছে। সবাই ওকে ঘিরে ধরে হর্ষ–উল্লাস করছে।… ভাসা ভাসা… অনেক দর্শকের মাঝে ও যেন চোখে দেখতে পেল।
হ্যারি আপন মনে হেসে উঠল। ও যা মনের চোখে দেখল তা কি রন দেখতে পেয়েছে?