দবির মিয়া চৌধুরী সাহেবের বাড়ি থেকে তার দোকানে চলে গেল। সেখানেও বেশিক্ষণ বসল না, গেল থানায়। ওসি সাহেব ডিউটিতে ছিলেন না। সেকেণ্ড অফিসার অত্যন্ত অমায়িক ভঙ্গিতে তাকে বসতে বললেন। চায়ের ফরমাস করলেন।
জ্বি-না, চা খাব না।
আরে ভাই খান। ওসি সাহেব আপনাকে ডাকবার জন্যে লোক পাঠিয়েছিলেন। এসে ভালোই করেছেন।
ডেডবডির ব্যাপারে খোঁজ নিতে আসলাম। ওসি সাহেব সকালে আসতে বলেছিলেন।
ডেডবডি তো রাতেই সুরতহালের জন্য পাঠান হয়েছে।
দবির মিয়া কিছু বলল না। সেকেণ্ড অফিসার বললেন, বুঝলেন ভাই, রাত্রে ঘুমাচ্ছিলাম। যখন বলল মনসুর কেমন-কেমন করে যেন শ্বাস নিচ্ছে, তখনই বুঝলাম অবস্থা খারাপ।
ডাক্তার ডাকিয়েছিলেন?
আরে, ডাক্তার ডাকব না? বলেন কি আপনি। পুলিশের চাকরি করি বলেই কি অমানুষ হয়ে গেলাম নাকি ওসি সাহেব নিজে গিয়ে দুধ গরম করে আনলেন।
ডাক্তার এসেছিল?
বললাম তো তাই এসেছিল। আর আপনি যা ভাবছেন, পিটিয়ে মেরে ফেলেছি। আমরা, সেটাও ঠিক না। মারধোর হয়, কিন্তু মানুষ মেরে ফেলবার মতো মারধোর কি করা যায় নাকি? থানা কম্পাউণ্ডের মধ্যে ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। ছেলেপুলে আছে। এর মধ্যে এরকম একটা কাণ্ড কি করা যায়? আপনিই বলেন।
তাহলে লোকটা মরল কীভাবে?
ভয়ে। স্রেফ ভয়ে, আর কিছু না। এখন যদি পাবলিক হৈ-চৈ শুরু করে, তাহলেই মুশকিল। পুলিশ সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা খারাপ। এই যে মুক্তিযুদ্ধে এতগুলো পুলিশ আমরা মারা গেলাম–কেউ মনে রাখছে সে-কথা, বলেন? মিলিটারি অফিসার যে কজন মারা গেছে পুলিশ অফিসার মারা গেছে তার চার গুণ। সেই সব কথা আর কারো মনে নেই। ঠিক বলেছি কিনা বলেন?
দবির মিয়া জবাব দিল না।
এই জন্যেই ওসি সাহেব আপনাকে খবর পাঠিয়েছেন, পাবলিক যাতে হৈ-চৈ শুরু না করে।
আমার এইখানে কী করার আছে? কী বলছেন এই সব
সেকেণ্ড অফিসার হাসিমুখে বললেন, আপনি বলবেন মনসুর মিয়া চুরির মধ্যে ছিল। তার জন্যেই চুরি হচ্ছিল এত দিন।
কী বলছেন এই সব? চোর-ডাকাতের জন্যে মানুষের কোনো সিমপ্যাথি নেই। চোর-ডাকাত শেষ হলেই পাবলিক খুশি।
আমি একটা নিরপরাধ মানুষকে চোর বাবা
নিরপরাধ, বুঝলেন কী করে? ব্যাটা শুধু চুরি না, ডাকাতির মধ্যেও ছিল। প্রমাণ আছে রে ভাই। বিনা প্রমাণে তো বলছি না। মারাত্মক শয়তান পোক, এত দিন টের পান নি।
দবির মিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সেকেণ্ড অফিসার সাহেব বললেন, চা খান, ঠাণ্ডা হচ্ছে। চিনি ঠিক হয়েছে কিনা দেখেন তো। এরা চিনি দিয়ে একেবারে সরবত বানিয়ে রাখে। এককাপ চায়ে এক পোয়া চিনি দেয়। মনে করে মিষ্টি দিলেই চা ভালো হয়।