১২. ক্যাপ্টেন ঘুমিয়ে পড়ে

ক্যাপ্টেন ঘুমিয়ে পড়ে। হারিয়ে ফেলে সারাদিনের স্মৃতি। সুখ দুঃখ আনন্দ-বেদনা সোহাগ-ভালোবাসার স্মৃতি।

মণিকা?

দোতলার ওর ঘরে শুয়ে শুয়ে দূরের আকাশের অজস্র তারা দেখে আর হারিয়ে যায় নিজের স্মৃতির অরণ্যে। ঘুমোতে পারে না। কিছুতেই না। অনেক চেষ্টা করেও পারে না। ভাবে। কত কিছু, কত কিভাবে। আকাশ-পাতাল ভাবে।

ভাবে ক্যাপ্টেনকে। নিশ্চয় পায়জামা আর স্যান্ডো গেঞ্জিটা পরে উপুড় হয়ে দুটো বালিশ জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। নাকি ওই মোটা মোটা খাকির ইউনিফর্ম পরেই ঘুমোচ্ছে? কিছু বিচিত্র নয়। হয়তো ঘামে সমস্ত জামা-কাপড় ভিজে গেছে! হয়তো…

ভীষণ অস্বস্তিবোধ করে মণিকা। এপাশ-ওপাশ করল কয়েকবার। একবার উঠে বসে। বিছানা ছেড়ে একবার জানালার ধারে দাঁড়ায়!

দুর থেকে একটা তারা ছিটকে পড়ল? নাকি চোখের ভুল?

মনটা আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকলেও মনটা ছটপট করে।

ও কি খেয়েছে?

ঠোঁটটা কামড়াতে কামড়াতে নিজেই মাথা নেড়ে বলে না, না। এতদিনের ট্যুরের পর আজই ফিরেছে। ফিরেই তো চলে এসেছে আমার কাছে। রাজভবনের ফিরতে ফিরতেও বেশ রাত হয়ে গেছে। এত ক্লান্তির পর আর কি ইউনিফর্ম ছেড়ে স্নান করে খাওয়া-দাওয়া করতে পেরেছে?

নিশ্চয়ই অত ঝামেলার মধ্যে যায়নি। বড় কৌচটায় কাত হয়ে সিগারেট খেতে খেতে ঘুম এসে গেছে।

জ্বলন্ত সিগারেটটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েনি তো?

কতদিন দুপুরে গিয়ে দেখেছে সিগারেট খেতে খেতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে গেছে কার্পেটের ঠিক পাশেই। আচ্ছা যদি কার্পেটের উপর পড়ত? কার্পেটে আগুন লাগলে কি সর্বনাশ হতো বলো তো?

মণিকা ভীষণ রেগে যেত।

ক্যাপ্টেন হাসত। হাসতে হাসতেই ও মণিকার গাল দুটো চেপে ধরে বলত, জ্বলব না বলেই তো ভগবান তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।

বাজে বকো না।

বাজে না মণিকা। তা না হলে ঠিক এই সময়েই এখানে আসবে কেন?

সেকথা ভেবে মণিকা আর শান্তি পায় না। দূরের আকাশের ওই তারাগুলো যেন হঠাৎ একটু বেশি দপদপ করে জ্বলতে শুরু করেছে।

জানালার কাছে সরে আসে কিন্তু বিছানাতেও ফিরে যেতে পারে না। পায়চারি করে ঘরের মধ্যে।

কিন্তু এখন এই রাত্রিতে কে ওর ঘরে গিয়ে দেখবে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো পড়ে আছে কিনা? বেয়ারা-চাপরাশীরাও তো আর এখন ওর ঘরে যাবে না।

হা ভগবান। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মণিকা। কি বিশ্রী অশান্তি!

বিছানার উপর বসে বসে এবার ভাবে। হঠাৎ নিজের উপরই রাগ হয়। নিজেকেই অপরাধী মনে হয়। এতদিন পর কত ক্লান্ত হয়ে এলো। তবুও তো আমি ওকে কিছু খেতে দিলাম না। নিশ্চয়ই ভীষণ খিদে পেয়েছিল। শুধু এক কাপ কফি খাইয়েই…

আচ্ছা ও কি ভেবেছিল এখানেই খাওয়া-দাওয়া করবে? এমন সময় এলে তো মা কোনদিন খাইয়ে ছাড়েন না! তাছাড়া ও তো জানত না মা নেমন্তন্নে গেছেন। আমজাদ-রমজনেকেও হয়তো বলে এসেছিল ডিনার খাবে না।

দুটো হাঁটুর ওপর মুখ রেখে চুপচাপ বসে থাকে মণিকা। চুপচাপ বসে থাকলেও মনের মধ্যে সমুদ্রের গর্জন চলে অবিশ্রান্ত ধারায়।

কি বিশ্রী অশান্তি! সোল আনা দুশ্চিন্তা আছে, সে দুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্ত হবার ক্ষমতাও আছে কিন্তু নেই সে সুযোগ। এক বিচিত্র অনুভূতি। সব কিছু থেকেও কিছু করার নেই।

আচ্ছা একবার টেলিফোন করলে হয় না? নিজে যখন যেতে পারছি না তখন অন্তত টেলিফোনেও বলতে পারি, ইউনিফর্ম পরেই ঘুমোচ্ছ নাকি? পায়ের জুহোমোজাও নিশ্চয়ই…

শেষে বলতে পারত, আর কত কাল আমাকে এমন দুশ্চিন্তা ভোগ করতে হবে বলতে পার?…

কিন্তু টেলিফোন তো নীচে। পাশের ঘরেই বাবা-মা ঘুমোচ্ছেন। বারান্দার কোণায় তো আবার চাকরটা শুয়ে থাকে। অন্ধকারে পা টিপে টিপে না হয় নীচে গেলাম। তবুও টেলিফোন করতে হলে তো আলো জ্বালাতেই হবে। তাছাড়া ও ঘরের সব দরজা-জানালা বন্ধ। বাইরের একটু আবছা আলো আসারও পথ নেই।

আলো জ্বাললেই তো জানাজানি হয়ে যাবে। চাকরটা উঠে পড়বে, বাবা-মা টের পেতে পারেন। কি কৈফিয়ত দেব ওদের?

অন্ধকারে টেলিফোন করতে পারব না? কোনো কিছুতে ধাক্কাটাক্কা খেয়ে পড়ব না তো?

তাহলে তো আরো কেলেঙ্কারি! বাড়িতে মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না।

আর যেন ভাবতে পারে না। মণিকা ছটপট করে। বিছানা ছেড়ে আবার জানালার ধারে। দাঁড়ায়। চারধারে তাকিয়ে দেখে। নিস্তব্ধ পৃথিবী। দিনের অশান্তি, দাপাদাপি নেই। বাতাসে আগুনের হলকা নেই। দিনের বেলায় অজস্র লালসার মোহে পাগলের মতো যারা ছুটে বেড়ায়, তারাও ঘুমোচ্ছে। দীন-দরিদ্রের দল সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেছে, দিনের শেষে কোনোমতে একমুষ্টি অন্ন পড়েছে ওদের পেটে কিন্তু এই গভীর রাত্রিতে তারাও ঘুমোচ্ছ। কেউ প্রাসাদে, কেউ ফুটপাথে। তা হোক না। চিন্তা-ভাবনা-দুশ্চিন্তা থেকে এখন সবার ছুটি। ঠগ-জোচ্চোর লম্পট-বদমাইশরাও আর জেগে নেই।

দরজা খুলে ছাদে বেরিয়ে আসে মণিকা। একবার বৈকুণ্ঠবাবুর বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে।, ওদের ঘরেও আলো জ্বলছে না। বৌদি তাহলে রোগের জ্বালা থেকেও একটু ছুটি পেয়েছেন, একটু ঘুমিয়েছেন।

অন্যদিন যখনই ঘুম ভেঙেছে, তখনই দেখেছে ওদের ঘরে আলো জ্বলছে। একেবারে শেষ রাত্তিরের দিকেই তো উনি একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হন। তবে কি রাত অনেক হলো?

ছাদের এদিক-ওদিক ঘুরে মণিকা আবার ফিরে আসে ঘরে। ওই জানালার ধারে। একটু দাঁড়ায়, একটু পায়চারি করে, আবার একটু বসে।

তবে কি একবার আলো না জ্বালিয়েই পা টিপে টিপে নেমে যাব? খুব আস্তে আস্তে ফিসফিস করে কথা বললে কি কেউ শুনতে পাবে?

শেষ পর্যন্ত অন্ধকারেই টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। শেষ ধাপ পর্যন্ত নেমে গেল কিন্তু বারান্দায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। চাকরটা কোথায় শুয়ে আছে? এই এত রাত্রে এত অন্ধকারে যদি চাকরটার উপর গিয়ে পড়ে? তাহলে ও কি ভাববে?

তাছাড়া…

তাছাড়া আবার কি? ও যদি বলাইদার মতো মুহূর্তের জন্য পাগল হয়ে ওঠে? কিচ্ছু বলা যায় না। হাজার হোক পুরুষ! ঠিক জোয়ান না হলেও প্রৌঢ় নয়। বড় সর্বনাশা বয়স। এই রাত্রের অন্ধকারে ও নিজেকে বাঁচাবে কেমন করে? লজ্জায় চিৎকার পর্যন্ত করতে পারবে না।

ফিরে যাব? নীচে এসেও ফিরে যাব?

আবার আস্তে আস্তে উপরে উঠে যায় মণিকা। পিঠে দুটো বালিশ দিয়ে একটু কাত হয়ে বসে বিছানায়। ঠিক করল ভোর হতে না হতেই টেলিফোন করবে ক্যাপ্টেনকে। তারপর দেখা হলে বলবে, যাকে ভালোবাস তাকে কাছে টেনে নেবার পৌরুষটুকুও তোমার নেই?

মনে মনে রিহার্সাল দেয় মণিকা।

ঘুম ভাঙল অনেক বেলায়। চাকরটার ডাকাডাকিতে।

চোখ মেলেই চাকরটাকে দেখে চমকে উঠে মণিকা! মুহূর্তের জন্য রাত্রের বিভীষিকার কথা মনে আসে।

পাশ ফিরতেই এক টুকরো রোদ্দুর চোখে এসে পড়ায় হুঁশ ফিরে আসে।

চা এনেছিস?

হ্যাঁ এইতো।

রেখে যা।

পাশ ফিরে শুয়ে চায়ের কাপে এক চুমুক দিতে না দিতেই মা এসে বললেন, হারে তোর টেলিফোন।

আমার টেলিফোন?

মা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তোর টেলিফোন। তাড়াতাড়ি আয়।

পুরো চা না খেয়েই নেমে গেল মণিকা।

হ্যালো…

কিরে তোর যে কোনো পাত্তাই নেই?

ক্যাপ্টেন নয়?

কে বলছিস?

আজকাল কথা শুনেও বুঝতে পারিস না?

সত্যি বুঝতে পারেনি মণিকা। একে ঘুম থেকে উঠেছে, তারপর ভেবেছিল গভর্নমেন্ট হাউস থেকে ফোন এসেছে। তাছাড়া ভিক্টোরিয়ার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ নেই বললেই চলে। কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে, তার ঠিকঠিকানাই নেই। দুচারজন ছাড়া আর কেউ কলকাতা নেই। আরতির সঙ্গে কদিন আগেই হঠাৎ দেখা হয়েছিল। তারপর ও কয়েকদিনের জন্য আবার দার্জিলিং চলে গিয়েছিল।

ঘুম থেকে উঠেই তোর টেলিফোন ধরতে এলাম আর তুই বকতে শুরু করেছিস?

এখন ঘুম থেকে উঠলি?

তবে কি? আমি কে তোদের মতো প্রিজনার হয়ে গেছি?

ওসব বীরত্ব অন্যকে দেখাস। বল, কখন আসছিস?

তুই আয় না।

না, না তুই আয়। অনেক কথা আছে।

মণিকা উত্তর দেবার আগেই আরতি আবার বলে, দেরি করবি না কিন্তু? আর মাসিমাকে বলে আসিস কখন ফিরবি ঠিক নেই।

তার মানে?

আয় না! দুজনে বেরিয়ে পড়ব।

নট এ ব্যাড আইডিয়া বাট…

আরতি আর কথা বাড়ায় না। আর বকতে পারছি না, তাড়াতাড়ি চলে আয়।

টেলিফোন রিসিভার নামিয়ে রাখার পর মণিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। কাল রাত্তিরের কথা মনে পড়ল। মনে পড়ল উৎকণ্ঠা ভরা প্রতিটি প্রহরের কথা, প্রতিটি মুহূর্তের বেদনা, জ্বালা।

ভেবেছিল ভোরবেলায় উঠেই ফোন করবে, দরকার হলে একবার ছুটে গিয়ে দেখে আসবে।

ভোরবেলায় সম্ভব না হলেও একটু বেলা হলে নিশ্চয়ই যেত কিন্তু…

আরতির টেলিফোন এসেই সব গোলমাল হয়ে গেল। তবে…

হয়তো মনটা একটু হালকা হবে। একটু হাসি ঠাট্টা করে কিছু সময় কাটবে। নিজের কাছ থেকে নিজেকে আর এমন করে লুকিয়ে রাখতে হবে না। অন্তত কিছুক্ষণের জন্য।

তাছাড়া আরতি ওর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ভিক্টোরিয়ায় পড়ার সময় ওরা পাশাপাশি ঘরে থাকত। রাত্রে খাওয়া-দাওয়া হলেই মাঝে মাঝে চলে যেত ওই লনের কোণায়। কত কথা, কত গল্প, গান হতো দুজনের।

বাংলার লেকচারার প্রফেসর রায়চৌধুরি আরতিকে একটু বেশি খাতির করতেন বলে অনেকেই সন্দেহ করত। ঠাট্টা তামাসাও করত। আরতি সবার কাছে স্বীকার করতে চাইত না কিন্তু রাত্রিবেলায় লনের ওই কোণায় বসে মণিকার সঙ্গে গল্প করতে করতে জানতে চাইত, আচ্ছা মণিকা তোর কি মনে হয় রে?

আগে বল তোর কি মনে হয়?

হঠাৎ আরতি চঞ্চল হয়ে উঠত, জানিস আজকে কি হয়েছে?

কি?

আমি লাইব্রেরির ওই ভেতরের ঘরটায় একটা রেফারেন্স বই দেখতে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা…

ওখানে আর কেউ ছিল?

না!

তোকে কিছু বললেন নিশ্চয়ই।

হঠাৎ আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, চেহারাটা প্রতিদিনই আরো বেশি সুন্দর হচ্ছে, এবার পড়াশুনাটাও একটু…

মণিকা উত্তেজনায় আরতির হাতটা চেপে ধরে বলল,

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে–
কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে।

সে সব দিনের কথা মনে হতেই মণিকা আপন মনে হাসতে হাসতে বার্মিজ ছাতাটা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

হাসিমুখেই আরতি অভ্যর্থনা করল। ওটাই ওর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে আরতির। একে সুন্দরী তারপর হাসি-খুশি। চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত! হয়তো প্রফেসর রায়চৌধুরিকেও। হয়তো আরো কাউকে। বা অনেককেই। পিছলে পড়ে যেতে যেতে সামলে নিয়েছে। সব সময়ই?

প্রাণ খুলে হাসতে হাসতেই সব কথা বলত মণিকাকে। আরতির সব কিছু মেনে নিতে পারত। তবুও ভালো লাগত, ভালোবাসত।

এখনও কি সবার কাছেই এমন হি-হি করে হাসিস?

হাসব না কেন?

এত রূপ আর এত হাসি, ভালো না! কোনোদিন যে বিপদে পড়বি!

দরজা দিয়ে বারান্দায় পা দিয়েই মণিকা বলল।

আরতি হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে বলল, বিপদে যে পড়িনি সেকথা তোকে কে বলল?

পড়েছিস?

পড়ব না?

কার কাছে রে?

আরতি এবার মোড় ঘুরতে চায়, চল চল, উপরে চল।

আগে বল কার কাছে বিপদে পড়েছিস।

আঃ তুই উপরে চল না!

আই উইল নট মুভ অ্যান ইঞ্চ আনলেস…

আরতি হাসতে হাসতে, মণিকার কানে ফিসফিস করে বলল, যদি বলি তোর বলাইদা!

বলাইদা। প্রায় আঁতকে ওঠে মণিকা।

কেন বলাইদা কি ভগবান?

কোন জবাব দেয় না মণিকা। মুহূর্তের জন্য যেন পাথর হয়ে গেছে। মাথাটা যেন ঘুরে উঠল।

আরতি একটু পরে আবার বলল, তোর তো ধারণা বলাইদা একটা ডেমি-গড। বাট আই সে হি ইজ জাস্ট এ ম্যান।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর কোনো কথা হলো না। সিঁড়ি দিয়ে আরতির বড়দা নেমে এলেন, কেমন আছ মণিকা?

অনেকদিন পর বড়দাকে দেখে ভালো লাগল। সব চাইতে ছোট বোনের বন্ধু বলে স্নেহ করতেন ওকে।

মণিকা তাড়াতাড়ি একটা প্রণাম করল। ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।

ভালোই আছি, তবে বয়স হয়েছে তো!

বড়দা শেষে বললেন, এখন অফিস যাবার সময়। কথাবার্তা বলতে পারলাম না। আর একদিন এসো।

আসব।

বড়দা গাড়িতে উঠে চলে গেলেও মণিকা ওই দিকেই চেয়ে রইল।

কি রে কি দেখছিস?

ঘাড় নাড়তে নাড়তে মণিকা উত্তর দেয়, কিচ্ছু না।

তবে ওদিকে চেয়ে আছিস যে?

ভাবছি…

কি ভাবছিস?

বড়দার কথা।

আরতি কিছু বলল না। বড়দাকে ওরা সবাই ভীষণ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে।

উপরে থেকে আরতির মা ডাক দিলেন, কি রে তোরা ওপরে আসবি না?

আর দেরি করে না। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠল দুজনেই।

আরতির মাকে প্রণাম করে মণিকা চলে গেল ওই বহুদিনের পরিচিত কোণার ঘরে। আরতির। ঘরে। কতদিন কাটিয়েছে এই ঘরে। কত স্মৃতি জমে আছে এই ঘরে!

ঘরে ঢুকেই মণিকা দরজা বন্ধ করল।

দরজা বন্ধ করছিস কেন?

মণিকা সে কথার জবাব না দিয়ে আরতিকে টেনে এনে পাশে বসাল!

বলাইদার কথা তো আগে বলিসনি?

তুই কি জানতে চেয়েছিস?

লুকিয়ে চুরিয়ে কথা বলার বালাই নেই আরতির। তাছাড়া ভিক্টোরিয়া ছাড়ার পরই তো রেঙ্গুনে চলে গেলি…

সব কথা খুলে বলেছিল আরতি। সেফ ডিপোজিট ভল্ট বা ফিক্সড ডিপোজিটে ওর বিশ্বাস নেই। ইন্টারেস্ট নেই। আরতি যেন জীবন্ত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট। জীবনের সম্পদ গচ্ছিত রাখে না, সঙ্গে সঙ্গে চেক কেটে উইথড্র করে বলে দেয় বন্ধুদের। মণিকাকে।

বি-এ পাশ করার পরই বড়দা কলকাতা এসে গেলেন। আমি এখান থেকেই ইউনিভার্সিটি যাতায়াত করতাম। একদিন…।

কী ভীষণ বৃষ্টি হলো! ট্রাম-বাস তো দুরের কথা মানুষের হাঁটা চলা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। ওই টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই ভিজতে ভিজতে একদল চলে গেল ওয়াই-এম-সি-এ রেস্টুরেন্টে। আরতি, শুভ্রা, জয়া আর সঙ্ঘমিত্রা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল মেট্রো। মার্লিন ব্র্যান্ডোর টি হাউস অফ দি আগস্ট মুন দেখতে।

ইন্টারভ্যালের সময় ইনার-লবিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পপকর্ন খাবার সময় হঠাৎ বলাইদার সঙ্গে দেখা।

আরে বলাইদা যে।

বলাইদা খুশি হলেন আরতিকে দেখে। ভুলে যাওনি দেখছি!

ভিক্টোরিয়ায় পড়বার সময় আপনার এত চকলেট-কেক-পেস্ট্রি খাবার পরও ভুলে যাব?

আরতি আলাপ করিয়ে দিল, এরা আমার বন্ধু। শুভ্রা, জয়া, সমিত্রা। সবাই একসঙ্গেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি।

এবার বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল, আওয়ার ইউনিভার্সাল বলাইদা! আসলে মণিকার বলাইদা হলেও উই হ্যাঁভ এনজয়েড হিজ জেনরসিটি টু অফ।

ডোন্ট সে অল দি।

সিনেমা শেষ হবার পর বলাইদা ওদের চারজনকে নিয়েই গ্রান্ডে গেলেন। ওর ঘরে। চ-কফি-স্ন্যাকস-এ সেন্টার টেবিল ভরে গেল।

জয়া বলল, এই এত?

আরতি সাবধান করে দেয়, ডোন্ট আগুঁ! বলাইদা গত জন্মে আমাদের ঠাকুমা ছিলেন। তাই একটু ভালো করে না খাইয়ে শান্তি পান না।

আরতি হাসে। বলাইদা ওর মাথাটা ধরে একটা ঝুঁকুনি দিয়ে বললেন, হাসতে শুরু করলে তো!

আবার হাসতে হাসতে আরতি বলে, দিন, দিন একটু ভালো করে মাথাটা ধরে ঝাঁকুনি দিন তো! আপনার মতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট-এর হাতে ঝাঁকুনি খেয়ে যদি ব্রেনটা একটু সতেজ হয়।

কয়েকদিনের জন্য কলকাতা এসেছিলেন বলাইদা। চা-কফি খাইয়ে বিদায় দেবার সময় বললেন, কালকে একবার টেলিফোন করবে তো?

কখন?

এনি টাইম ইউ লাইক।

পরের দিন দুপুরের দিকে একটা ক্লাশ করেই আরতি ইউনিভার্সিটি থেকে চলে গিয়েছিল বলাইদার হোটেলে। বেশ লাগল। এত বড় হোটেলে আসার একটা রোমাঞ্চ আছে বৈকি! ছাত্রজীবনে যে আনন্দ, যে সম্মান পাবার নয়, আরতি তাই পেয়েছে। খুব খুশি।

সেই চির-পরিচিত হাসিটি সারা মুখে ছড়িয়ে বলাইদাকে বললে, এসে গেছি তো?

একটু আদর করে বলাইদা বললেন, এই হাসিটুকু এনজয় করার জন্যই তো আসতে বলেছি।

আরতি আরো খুশি হয়।

তারপর লাঞ্চ। ওই ঘরে বসেই। ঠিক খিদে না থাকলেও আরতি বিশেষ আপত্তি করল না। খেতে খেতে হাসি-ঠাট্টা।

তোমার হাসি আমি মুভিতে তুলে রাখব।

মুভিতে?

মুভিতে আরতিকে ধরা হলো। তার হাঁটা-চলা ওঠা বসা! সব কিছু।

একেবারে ওই কোণা থেকে একবার জোরে জোরে এদিকে এসো তো।

এবার টায়ার্ড হয়ে গেছি। আর পারছি না।

এখনই টায়ার্ড?

কাল বৃষ্টিতে ভিজে সারা শরীরটা বেশ ব্যথা হয়েছে।

ব্যথা? বলাইদা মুহূর্তের জন্য কি যেন ভাবলেন। সেকথা আগে বলনি কেন?

…জানিস মণিকা, এক গেলাস গরমজলে কি একটা ওষুধ মিশিয়ে বলাইদা আমাকে খেতে দিলেন। বললেন পনের-বিশ মিনিট রেস্ট নাও। সব সেরে যাবে।

তারপর? মণিকা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকতে থাকতে জানতে চায়।

আস্তে আস্তে ঔষুধটা খেলাম। সারা শরীরটা বেশ গরম হয়ে উঠল। আর শুরু হলো আমার হাসি। কথায় কথায় হাসি। আমি বেশ বুঝতে পারলাম বলাইদা আমার কাছে এসেছেন, কথায় কথায় আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন, আদর করছেন…

তুই কিছু বলছিলি না?

না। কেমন যেন একটা নেশার ঘোরে মজা লাগছিল। তাছাড়া কথায় কথায় এত হাসি পাচ্ছিল যে কি বলব?…

তোকে কি হুইস্কি-টুইস্কি খাইয়েছিলেন?

তা জানি না রে। বোধহয় ব্র্যান্ডি! নিশ্চয়ই ডোজটা বেশ বেশি ছিল আর তাই আমার নেশা হয়েছিল।

আরতি একটু থামে। একবার ভালো করে মণিকাকে দেখে নেয়।

আমার পর খুব ঘেন্না হচ্ছে, তাই না?

মণিকা একটু হাসে। বোধহয় একটু কষ্ট করেই হাসে। ঘেন্না হবে কেন? যে বন্ধু এমন গোপন কথা খুলে বলতে পারে, তার পর রাগ হয়?

আরতি আবার শুরু কর।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সারা শরীর দিয়ে আগুন বেরোতে শুরু করল। নিজেই বোধহয় কিছু কাপড়-চোপড় সরিয়ে বড় কৌচটায় শুয়ে পড়লাম। মনে আছে বলাইদা আমাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন…

হতচ্ছাড়ি মেয়ে কোথাকার! মণিকা যেন স্বগতোক্তি করে।

আরতি খিল খিল করে হাসে। কি করব বল? আই ওয়াজ হেলপলেস।

থাক থাক! আর শুনতে চাই না তোর কীর্তি।

খুব রেগে গেছিস তো?

রাগব কেন?

আমার কীর্তি-কাহিনি শুনে রাগ হয়নি?

না।

তবে অমন করে কথা বলছিস কেন?

তাইতো? মণিকা নিজেই যেন একটু অবাক হয়। হাত দিয়ে জানালার পর্দাটা সরিয়ে বাইরের শূন্য আকাশ দেখতে দেখতে উত্তর দিল, হয়তো দুঃখে।

কিসের দুঃখ কার জন্য দুঃখ?

তোর জন্য। হয়তো বলাইদার জন্যও।

আরতি এবার একটু সিরিয়াস হয়।

দ্যাখ মণিকা, একটা কথা বলি। এমনি টুক-টাক অ্যাকসিডেন্ট বহু মেয়ের জীবনেই ঘটে কিন্তু আমরা স্বীকার করতে পারি না। স্বীকার করতে চাই না…

মণিকা প্রতিবাদ করে। কিন্তু ঠিক আগের মতো জোর করে নয়। তুই যেন সব মেয়ের কথা জানিস!

সবার কথা না জানলেও ভিক্টোরিয়া আর ইউনিভারসিটির কিছু মেয়ের কথা জানি…

মণিকার মনে দ্বিধা আসে। আর এসব আলোচনা করতে চায় না। এই সবই আলোচনা করবি নাকি বেরুবি।

আরতি উঠে দাঁড়ায় দাঁড়া। কিছু খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর তোর কথা শুনি!

আমার আর কি কথা শুনবি?

গতবার তো শুধু ফটোটা দেখিয়েই পালিয়ে গেলি। কিছুই তো শোনা হলো না।

শোনাবার মতো এখনও কিছু হয়নি!

লুকোবার মতো কিছু না হলেও শোনাবার মতো নিশ্চয়ই অনেক কিছু হয়েছে।

একটু লজ্জা, একটু দ্বিধা এলেও আরতির মতো বন্ধুকে কিছু না বলে শান্তি পাচ্ছিল না মণিকা।

জানিস আরতি আমি যেন মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি। ঠিক ভালো লাগছে না। তাছাড়া…

তাছাড়া কি?

ও এমন একলা একলা থাকে যে বড় দুশ্চিন্তা হয়। কাল সারারাত তো ঘুমোতেই পারিনি।

কেন?

নানা কারণে।

আরতি হাসে। বলে, যাই বলিস খুব ইন্টারেস্টিং হাজব্যান্ড হবে তোর। একবার আলাপ করিয়ে দিবি না?

ঠিক লাঞ্চ টাইমে মণিকা রাজভবনে টেলিফোন করল।

কি, খেতে বসেছ?

না। একটু দেরি আছে।

আমি আসব?

বারণ করেছি কোনোদিন?

লাঞ্চ খেয়েই তো আবার গভর্নরের কাছে দৌড়বে?

ইউ আর মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান গভর্নর টু মি।

তাইতো কেবল ট্যুর করে করে ঘুরে বেড়াও।

আরতি হঠাৎ টেলিফোনটা কেড়ে নেয় মণিকার হাত থেকে।

গুড আফটারনুন। আমি আরতি। মণিকার সঙ্গে আমিও থাকতে পারি তো?

উইথ প্লেজার।

নর্থ গেট পুলিশ অফিসের সামনে ট্যাক্সি দাঁড়াল! মণিকা একবার বাইরের দিকে মুখ বাড়াতেই সার্জেন্ট হাত নেড়ে ট্যাক্সিকে ভিতরে যেতে বলল। মার্বেল হলের সামনে পোর্টিকোতে ট্যাক্সি থামতেই একজন বেয়ারা এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল, মণিকা ব্যাগ থেকে টাকা বার করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভিতরের দিকে ফিরতেই দুজন বেয়ারা সেলাম দিল। লিফট-এর সামনে আসতেই লিফট-ম্যানও সেলাম দিল।

মণিকাকে নিয়ে ফিস ফিস আলোচনার দিন শেষ হয়েছে রাজভবনে। নর্থ গেট পুলিশ অফিস থেকে শুরু করে সমস্ত বেয়ারা চাপরাশী-লিফটম্যানরাই চিনে গেছে মণিকাকে। আমজাদ, রমজান থেকে নটবর সবার সঙ্গেই ওর বেশ ভাব। ক্যাপ্টেন হঠাৎ কাজে বেরিয়ে গেলে মণিকা তো ওদের সঙ্গেই গল্প করে।

লিফট-এ উঠতেই মণিকা বলল, কি নটবর, তোমার ছেলের মুখে ভাত দেবে কবে?

নটবর কৃতজ্ঞতায় প্রায় গলে যায়। আর আমাদের ছেলের আবার মুখে ভাত!

আঃ। ওসব কথা বলে না। দিন ঠিক করে আমাকে খবর দিও।

নটবর আর উত্তর দিতে পারে না। লিট-এর দরজা খুলে দিয়ে মুখ নীচু করে শুধু মাথাটা কাত করে।

করিডোর দিকে হাঁটতে হাঁটতে আরতি বললে, তুই তো বেশ জমিয়েছিস!

দরজা নক্ করে ভিতরে ঢুকতেই ক্যাপ্টেন অভ্যর্থনা করল, আসুন, আসুন।

মণিকা আলাপ করিয়ে দিল, আমার বন্ধু আরতি। ভিক্টোরিয়ায় একসঙ্গে পড়তাম। তারপর এম-এ পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে গেল।

ক্যাপ্টেন মণিকাকে একটু শাসন করল, পুরো নামটা না বললে কি আলাপ করানো হয়?

মণিকা উত্তর দেবার আগেই আরতি বললো, আমি মিসেস আরতি সরকার।

থ্যাঙ্ক ইউ।

বড় কৌচটায় ওরা দুজনে আর ছোট কৌচে ক্যাপ্টেন বসল।

মিঃ সরকার কি কলকাতাতেই থাকেন?

মণিকা বললে, না উনি কার্শিয়াং-এর ডিভিশন্যাল ফরেস্ট অফিসার।

হোয়াট এ লাকি গার্ল? ইন্ডিয়াতে থেকেও সারা বছর কন্টিনেন্টাল ক্লাইমেট এনজয় করেন?

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে আরতি জবাব দেয়, হা! তা বটে! দ্বারভাঙা বিল্ডিং ছেড়ে ডি-এফ-ওর বাংলো! তাছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কফিহাউস বা বেকার ল্যাবরেটরির মাঠে আড্ডা না দিয়ে কিছু চোর-জোচ্চোর কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে নিত্য সন্ধ্যা কাটান নট এ ব্যাড থিং।

একটু থেমে আরতি হাসতে হাসতে বলে, তাই না?

মণিকা একটু শাসন না করে পারে না। আলতু-ফালতু কবি না তো আরতি। তোর মতো সুখে কটা মেয়ে থাকে বল তো?

সুখ? আরতি মুহূর্তের জন্য সিরিয়াস হয়। পরমুহূর্তে রং বদলায়। হাসতে শুরু করে। এক্সকিউজ মি ক্যাপ্টেন রয়, আপনি কি আমাদের লাঞ্চ খাওয়াবেন?

একশো বার। উইথ প্লেজার, বাট…

মণিকা জিজ্ঞাসা করল, আমজাদ কোথায়?

একটু বাইরে পাঠিয়েছি। এক্ষুনি আসবে।

কিছু আনতে পাঠিয়েছ।

হ্যাঁ।

কি?

ক্যাপ্টেন উঠে গিয়ে একটা টেলিগ্রাম এনে মণিকার হাতে দিল। আজ সকালেই মা-র কাছ থেকে পেলাম…

তোমার আজ জন্মদিন?

হ্যাঁ।

আরতি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে ডান হাতটা এগিয়ে দিল, উইস ইউ বেস্ট অফ লাক ক্যাপ্টেন।

হাসি মুখে হ্যাঁন্ডসেক করে ক্যাপ্টেন বলল, মেনি মেনি থ্যাঙ্কস।

মণিকা আবার প্রশ্ন করে, কই আমাকে তো কিছু বলেনি?

মা-র টেলিগ্রামটা পাবার পরই তোমাকে টেলিফোন করেছিলাম। শুনলাম বেরিয়ে গেছ।

তুমি টেলিফোন করেছিলে? একবার না, কয়েকবার।

এর মধ্যে দরজা নক্ করেই আমজাদ একটা বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকল। লিজিয়ে সাব।

প্যাকেটটা খুলে আন।

মণিকা জানতে চাইল, কিসের প্যাকেট?

 মা কিছু মিষ্টি-টিষ্টি পাঠিয়েছেন আর কি! একটু আগেই আই-এ-সি থেকে জানাল, এলাহাবাদ থেকে একটা প্যাকেট এসেছে। তাই ভাবলাম মা-র দেওয়া মিষ্টিটা খেয়েই লাঞ্চ খাব।

আরতি বলল, চলুন লাঞ্চ খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। উই উইল সেলিব্রেট ইওর বার্থডে।

আমজাদ প্যাকেটটাকে খুলে ঘরে ঢুকতেই মণিকা এগিয়ে গেল, দাও।

আমজাদ ফিরে যাচ্ছিল। মণিকা বলল, দাঁড়াও আমজাদ, চলে যেও না।

প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি বের করে আমজাদকে দিয়ে বলল, আজ তোমাদের সাহেবের জন্মদিন। তাইতো এই মিষ্টি এলাহাবাদ থেকে মা পাঠিয়েছেন।

আমজাদ হাত তুলে কপালে ঠেকাল, আল্লা সাহেবের ভালো করুন।

যাও এবার তুমি লাঞ্চ দেবার ব্যবস্থা কর।

আমজাদ চলে গেল। মণিকা দুটো মিষ্টি বের করে ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিল, নিজেরাও দুজনে নিল।

হঠাৎ আমজাদ ফিরে এলো। সাব, দশ মিনিট টাইম নিচ্ছি।

ঠিক আছে, ঠিক আছে।

দশ মিনিট নয়, পনের-কুড়ি মিনিট পরে বুড়ো রমজানই প্রথম ঘরে ঢুকল। হাতে একটা বিরাট ফুলের তোড়া। পিছনে আমজাদ, গঙ্গা, নটবর ও তিন চারজন।

ফুলের তোড়াটা ক্যাপ্টেনকে এগিয়ে দিয়ে রমজান বলল, বহুত বহুত মুবারক হো সাব।

গঙ্গার হাতে বিরাট একটা কেক। আমজাদ আর ওরা ডাইনিং টেবিলে লাঞ্চ রাখল।

মণিকা খুব খুশি। আরতিও। ক্যাপ্টেন একটু বিস্মিত। মুগ্ধ।

বড় আনন্দে কাটল সারাদিন। সারা সন্ধ্যা। খাওয়া-দাওয়া হাসি-ঠাট্টা-গান।

শেষে আরতিকে নামিয়ে দিয়ে ক্যাপ্টেন মণিকাকে পৌঁছতে গেল। গাড়ি থেকে নামবার আগে মণিকা একটু নীচু হয়ে ক্যাপ্টেনকে প্রণাম করল।

ক্যাপ্টেন মণিকার হাত দুটো চেপে ধরে বলল, একি করছ?

আমজাদ-রমজান কত কি তোমাকে দিল। আমি না হয় শুধু একটা প্রণাম করেই শ্রদ্ধা। জানালাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *