১১১.
কোহলার নামল। তাকে স্বাগত জানাল রোচার।
কোন এলিভেটর নেই? জিজ্ঞাসা করল কোহলার।
কোন বিদ্যুৎ নেই। সার্চের জন্য। সার্চের অংশ।
এমন এক অংশ যা কাজে লাগে না।
নড করল রোচার।
কোহলার সামনে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে তার মনে হল, এটাই শেষ যাওয়া।
পোপের অফিসে যাবার সাথে সাথে দৌড়ে এল এক গার্ড, ক্যাপ্টেন, এখানে আপনি কী করছেন? আমরা মনে করেছিলাম এ লোকের কাছে তথ্য আছে যে
তিনি শুধু ক্যামারলেনগোর সাথে কথা বলবেন।
সন্দেহের চোখে তাকাল গার্ডরা। তারা প্রশিক্ষিত, দক্ষ। বিপদের গন্ধ কী করে যেন টের পেয়ে যায়।
ক্যামারলেনগোকে বল যে সার্নের ডিরেক্টর জেনারেল, ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার তার সাথে দেখা করতে এসেছেন।
ইয়েস, স্যার! দৌড়ে গেল একজন ভিতরে।
এক মুহূর্ত, ক্যাপ্টেন, আপনার অতিখির কথা আমরা বলছি।
কোহলার থামল না। সে চেয়ারটাকে ঘোরাল গার্ডদের দিকে। তাদের চারপাশে। ফার্মাটি! স্যার! স্টপ!
পৃথিবীর সবচে এলিট বাহিনীর কোন তোয়াক্কা করল না সে। যদি শক্ত সমর্থ আর একটু কম বয়েসি হত সে, তখন অন্যরকম ব্যবহার করত গার্ডরা।
কোন কেয়ার করে না সে আজ। জীবনের সমস্ত সাধনা ভেস্তে দিতে চলেছে লোকটা! ক্যামারলেনগোর মত লোকটা মারা গেলে যাবে সে, প্রাণত্যাগ কোন ব্যাপার না আজ।
সামনে এগিয়ে চলেছে সে। সোজা পোপের অফিসের দিকে।
সিনর? বলল এক প্রহরী, পোপের অফিস আড়াল করে তারা দাঁড়িয়েছে। আপনার থামতেই হবে!
একটা সাইড আর্ম বের করল একজন।
থামল কোহলার।
রোচার বলল তাকে, মিস্টারকোহলার, প্লিজ। এক মহুর্ত লাগবে। অঘোষিতভাবে কেউ কখনো পোপের অফিসে প্রবেশ করে না।
তাকাল কোহলার তার চোখে চোখে। তারপর হাল ছেড়ে দিল।
ফাইন, অপেক্ষা করছি আমরা।
তাকাল কোহলার তাদের দিকে। এরা সেই লোকজন। এরাই তারা। এদের জন্য সে কখনো কোন মেয়েকে স্পর্শ করতে পারেনি… একটা এ্যাওয়ার্ড নেয়ার জন্য কোন সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কুঁকড়ে থেকেছে সর্বক্ষণ।
কী সত্য তারা বহন করে? কোন প্রমাণ? ড্যাম ইট! পুরনোদিনের ফেব্রিকে মোড় একটা বই? অলৌকিকের প্রত্যাশা? প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, বিজ্ঞান অলৌকিক কাজ করে।
সামনে একটা আয়না আছে। সেদিকে তাকায় কোহলার। আবার তার নিজের কথা মনে পড়ে যায়। তাকায় সে নিজের পাথুরে চোখের দিকে। সে
আজ রাতে আমি বলি হয়ে যেতে পারি ধর্মের হাতে। কিন্তু এমনটা এই প্রথম ঘটবে না।
ফ্রাঙ্কফুর্টে, তার বিছানার অসাধারণ চাদরে শুয়ে ছিল এগারো বছরের বালক, ম্যাক্স। ভিজে যাচ্ছিল চাদর। তিনজন ডাক্তার ছিল তার পাশে। আর একপাশে, বাবা মা হাঁটু গেড়ে বসে ছিল।
তাকান ছেলেটার দিকে! কী অবস্থা তার! আমাদের এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে। বলেছিল এক ডাক্তার।
না। ঈশ্বর তাকে রক্ষা করবেন। বলেছিল মা।
ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করবেন! ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করবেন!
একঘণ্টা পরে, ম্যাক্স টের পেল, তার সমস্ত শরীর যেন কোন গাড়ির তলায় চাপা পড়ে গেছে। কান্নার মত শক্তিও ছিল না অবশিষ্ট।
আপনার সন্তান অসম্ভব যন্ত্রণা পাচ্ছে বলেছিল আরেক ডাক্তার, আমার ব্যাগে একটা ইঞ্জেকশন আছে–
রুহে! বিটে! বন্ধ চোখেই ম্যাক্সের বাবা বলল। এখনো প্রার্থনা করছে।
বাবা, প্লিজ! অবশেষে মুখ খোলে ম্যাক্স, যন্ত্রণাটা কমাতে দাও!
এক ঘণ্টা পরে, ব্যথার অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে।
আপনার সন্তান প্যারালাইজড হয়ে পড়তে পারে। পারে মার যেতে! আমাদের হাতে সাহায্যে লাগার মত ওষুধ আছে?
ফ্রাউ আর হের কোহলার বাধা দিল। তারা ওষুধে বিশ্বাস করে না। ঈশ্বরের মাস্টারপ্ল্যানে হাত ঢোকানোর কে তার! আরো আরো প্রার্থনা করতে থাকে। অবশেষে ঈশ্বর তাদের হাতে এই সন্তানকে সমর্পণ করেছিলেন। কেন কেড়ে নিবেন?
ম্যাক্সের কানে কানে শোনায় মা, আরো শক্ত হতে হবে। ঈশ্বর তাকে পরীক্ষা করছেন… বাইবেলের আব্রাহামকে যেভাবে পরীক্ষা করেছিলেন… বিশ্বাসের পরীক্ষা।
বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করল ছোট্ট ছেলে ম্যাক্স। কিন্তু ব্যাথাটা আরো আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
এটা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এক ডাক্তার চলে গেল ঘর ছেড়ে। ভোর পর্যন্ত প্রতিটা পেশীতে অসম্ভব বেদনা নিয়ে শুয়ে থাকল সে বিছানায়। কোথায় জিসাস? আমার ব্যাথা কি তিনি দেখতে পাচ্ছেন না?
তখনি, যখন মা ঘুমিয়ে পড়েছে বিছানার পাশে, প্রার্থনা করতে করতে, দেখতে পেল সে, শিয়রে কে একজন এসে দাঁড়িয়েছে।
এ্যাঞ্জেল?
না, এ্যাঞ্জেল নয়, একজন ডাক্তারের কণ্ঠ। দুদিন ধরে যে ডাক্তার তার পাশে বসে থেকে থেকে মা-বাবাকে অনুরোধ করছিল, ইংল্যান্ড থেকে আনা নতুন ওষুধটা দেয়ার জন্য।
আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না যদি এ কাজটা না করি।
একটা সূচের ছোয়া পেল সে। কিন্তু ব্যাথার কাছে সেটা কিছু নয়।
তারপর গুছিয়ে নিল তার জিনিসপত্র। ব্যাগে ভরতে ভরতে কপালে হাত রেখে বলল, এটা তোমাকে রক্ষা করবে। ওষুধের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল সে। এবং দিনে প্রথমবারের মত তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
জ্বর চলে যাবার সাথে সাথে বাবা-মা দাবি করল এই হল অলৌকিক। নিয়ে গেল তাকে গির্জায়।
সেখানে প্রিস্ট বলল, এ একমাত্র ঈশ্বরের খেলা যে, এই ছেলে বেঁচে গেছে।
শুধু শুনল ম্যাক্স। বলল না কিছুই।
কিন্তু আমাদের সন্তান হাঁটতে পারছে না। কাঁদছিল ফ্রাউ কোহলার।
হ্যাঁ। আমার মনে হয় ঈশ্বর তাকে পূর্ণ বিশ্বাস না রাখার জন্য শাস্তি দিয়েছেন।
মিস্টার কোহলার? বলল এক গার্ড, ক্যামারলেনো বলছেন আপনার সাথে তিনি
দেখা করবেন।
নড করল কোহলার এগিয়ে গেল হল ধরে।
আপনার আসার কথা শুনে তিনি অবাক হয়েছেন। বলল এক গার্ড।
আমি নিশ্চিত। তার সাথে একা দেখা করতে চাই।
অসম্ভব! বলল গার্ড, কেউ–
লেফটেন্যান্ট! ঘেউ ঘেউ করে উঠল রোচার, মিস্টার কোহলার যেভাবে যা চান তাই হবে।
চরম অবিশ্বাস নিয়ে সরে দাঁড়াল গার্ড।
দরজার বাইরে, সুইস গার্ড তাকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করল। কিন্তু কোহলার চারধারে গড়ে নিয়েছে একটা ধাতব বলয়। সেটাকে ভেদ করে কিছু বোঝা সম্ভব নয়।
যখন সে পোপের অফিসে ঢুকল, নিবু নিবু আগুনের আলোয় চোখ বন্ধ করে প্রার্থনায় রত ছিল ক্যামারলেনগো।
মিস্টার কোহলার, বলল সে, আপনি কি আমাকে শহীদ করার জন্য এসেছেন?
১১২.
একই মুহূর্তে, ভ্যাটিকানের দিকে এগিয়ে আসছিল ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন।
ন ল্যাঙডনের হাতে একটা মশাল। আলোকিত করে রাখছে সামনের কয়েক কদম। ছাদটা অনেক নিচু, বাতাসে হাল্কা গন্ধ। এটাই এল প্যাসেটো।
রোমান পানির আধারের মত একটা ঘরে এসে তারা প্রবেশ করল উপরের দিকে উঠতে উঠতে। সেখানে সমান হয়ে গেছে টানেলের পথ। উঁচু নিচু নয়।
এদিকে মনে পড়ছে সব ল্যাঙডনের-কোহলার, জ্যানাস, হ্যাসাসিন, নোচার…
ষষ্ঠ ব্র্যান্ড?
আমি নিশ্চিত, তুমি ষষ্ঠ ব্র্যান্ডের কথা শুনেছ। সবগুলোর চেয়ে মহিমান্বিত…
ঘোষণা করল ভিট্টোরিয়া, কোহলার জ্যানাস হতে পারে না! অসম্ভব! অসম্ভব এমন এক শব্দ যেটাকে আজ রাতে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় ল্যাঙডন।
আমি জানি না। কোহলারের ব্যক্তিত্বে অনেক শক্ত একটা চরিত্র আছে। আর আছে অসম্ভব প্রভাব।
এই ক্রাইসিসে সার্নকে একেবারে দানবের মত লাগছে। সার্নের সুনাম ক্ষুন্ন হবে . এমন কিছু করবে না ম্যাক্স।
সার্নের সাথে ভ্যাটিকানের শত্রুতা আজকের নয়। ভ্যাটিকান সব সময় সার্নের সমালোচনা করে এসেছে। সার্নও আজ সবচে বেশি আলোচিত প্রতিষ্ঠান। একই সাথে এর নাম ছড়াচ্ছে। সার্ন যদি চায়, আজ রাতের মত ব্যাপার আর কখনো ঘটেনি….
প্রমোটার পি টি বার্নাম একটা কথা বলত, বলছে ল্যাঙডন, আমি কেয়ার করি না কী বল তোমরা আমার সম্পর্কে, শুধু আমার নামের বানানটা ঠিকমত কর। লোকে দেখবে না কী হল আজরাতে। তারা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াবে সার্নকে। এন্টিম্যাটারের এই খেলা আজ রাতে দেখার পর তারা এটাকে রেজিস্টার করতে উঠেপড়ে লাগবে।
অযৌক্তিক। ধ্বংসের ক্ষমতা দেখানো তাদের কাজ নয়। প্রতিবস্তুর জন্য ব্যাপারটা ভাল হবে না। বিশ্বাস কর।
তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকমও হতে পারে। খ্রিস্টবাদের লবির জন্য এই প্রযুক্তিও অন্ধকারের পথে চলে যেতে পারত। আর এটাতো বস্তুর বিপরীত। তা সমর্থন করার কোন কারণ নেই চার্চের। অন্যদিকে ইলুমিনেটির প্রথম লক্ষ্য ভ্যাটিকান। এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দেয়ার তাল ফাঁদছে তারা হয়ত।
চুপ করে থাকল ভিট্টোরিয়া।
ম্লান হয়ে এসেছে লণ্ঠনের আলো।
ইয়েস! কোহলার কখনোই তেতে উঠত না ক্যামারলেনগোর উপর। কিন্তু সে রীতি ভেঙেছে, মানুষের কাছে আরো ভোলামেলা হয়েছে, চার্চকে আধুনিক রূপ দিয়েছে, কথা বলেছে তাদের ভাষায়, উন্মুক্ত, উদার কণ্ঠে। এটা মানুষের ভাল লেগে যাবে। তার উপর ব্যাপারটা নিয়ে আবারো ভাববে তারা। সাধারণ মানুষেরা। সে টিভির সামনে এন্টিম্যাটারটাকে উপস্থাপিত করে মানুষের ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দিয়েছে। মমতায় আর্দ্র হয়ে উঠবে সবার মন। এ এক অসাধারণ কাজ, বিশ্বাস কর আমাকে! ফলে পাশার দান উল্টে যাচ্ছে। ইলুমিনেটির উপর গিয়ে পড়ছে সমস্ত ঘৃণা। তাই হয়ত আসছে কোহলার তাকে সরিয়ে দিতে।
ম্যাক্স একটা বেজন্মা। কিন্তু সে খুনি নয়। আর আমার বাবার খুনের সাথে সে কখনোই যুক্ত থাকতে পারে না।
সার্নের অনেক শুদ্ধতাবাদীর কাছে লিওনার্দো এক হুমকি হয়ে ছিল। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মকে একত্র করে তালগোল পাকানোর মত ব্যাপার আর নেই।
হয়ত কোহলার আগেই এন্টিম্যাটার প্রজেক্টের ব্যাপারে জেনেছিল আর তাই সে চায়নি বিজ্ঞানের সাথে ঈশ্বর এসে যোগ দিক।
আর তাই সে আমার বাবাকে খুন করবে? তাছাড়া, ম্যাক্স কোহলার কখনোই জানতে পারেনি আমাদের প্রজেক্টের ব্যাপারে।
তোমার যাবার পর হয়ত তোমার বাবা কোহলারের কাছে ধর্ণা দিয়েছিল সাজেশনের জন্য। এমন এক বিদ্ধংসী জিনিস আবিষ্কারের ব্যাপারে তিনি যে উদ্বিগ্ন ছিলেন সেটা তুমিই আমাকে বলেছ।
নৈতিকতার প্রশ্ন তোলা ম্যাক্স কোহলারের কাছে? আমার তা মনে হয় না।
যত দ্রুত তারা এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমে মোড় নেয়া সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে, তত স্নান হয়ে আসছে হাতের মশালের আলো। আলোটা নিভে গেলে কী হবে তা সে ভেবে পায় না।
তাছাড়া, বলছে ভিট্টোরিয়া, কোন দুঃখে কোহলার তোমাকে এতদূর থেকে টেনে এনে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবে? জড়াবে কেন?
আগেই ভেবে রেখেছে সে এর জবাব, কোহলার আমাকে ডেকে তার দিক থেকে পরিষ্কার থাকল। সে কখনোই আশা করেনি আমরা এতদূর যাব।
সেই বিবিস রিপোর্টার, বলল ল্যাঙডন, মনে করে যে সার্নই হল নতুন ইলুমিনেটি লেয়ার।
কী? সে একথা বলেছে?
খোলাখুলি। সে সার্নকে মেসনিক গ্রুপের সাথে থাকার কথা বলেছে শতকণ্ঠে।
মাই গড! এতো সার্নকে একেবারে ধূলার সাথে মিশিয়ে দিবে!
নিশ্চিত নয় ল্যাঙডন।
সার্ন পৃথিবীর বিজ্ঞানের স্বর্গ। তাবৎ বিজ্ঞানী এখানে বসত করে তাদের পিছনে অকল্পনীয় অর্থ ঢালে সার্ন আর এটার ডিরেক্টর হল ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার।
কোহলারই জ্যানাস।
যদি কোহলার এর সাথে জড়িত নাই থাকে, এখানে আসার মানে কী?
পাগলামি বন্ধ করার চেষ্টা হতে পারে। সাপোর্ট দেয়ার জন্য। হয়ত সত্যি সত্যি সে ইলেভেন্থ আওয়ার সামাটারিয়ান। সে হয়ত জানে কে প্রতিবস্ত্র প্রজেক্টের ব্যাপারটা জানে। তা জানাতেই এসে থাকতে পারে।
খুনি বলেছিল যে সে ক্যামারলেনগোকে খুন করতে আসছে।
নিজের দিকে ধ্যান দাও। এ এক সুইসাইড মিশন। ম্যাক্স কখনোই জীবিত বেরুতে পারবে না।
কথাটাকে ত্রিবচনায় ল্যাঙডন, সম্ভবত এটাই আসল কথা।
একটা স্টিলের অতিকায় দরজার সামনে এসে থামল তারা। ধ্বক ধ্বক করছে তার বুক। তাকাল ল্যাঙডন, না, লকটা খোলাই আছে।
সম্প্রতি এই টানেল ব্যবহার করেছে কেউ। আজ রাতেই। কার্ডিনালদের যে এ পথে বাইরে আনা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ঢুকে পড়ল তারা প্রাচীন নগরীতে। বাঁ থেকে একটা শব্দ আসছে। সেন্ট পিটার্স স্কয়ার।
আরো একটা গেটের সম্মুখীন হল তারা। এটাও ভোলা। কোথায় এটা উন্মুক্ত হবে? বাগানে? ব্যাসিলিকায় নাকি পাপাল রেসিডেন্সে?
হঠাৎ করেই ফুরিয়ে গেল টানেল।
সামনে একেবারে বিশাল এক দরজা। স্মথ। নেই কোন হ্যান্ডেল, নব, চর্বির ফুটো নেই, নেই কোন হিঞ্জ। ঢোকার কোন উপায় নেই।
একে বলা হয় সেঞ্জা চিভে–ওয়ান ওয়ে পোর্টাল। হাতের মশালের সাথে সাথে দমে যাচ্ছে ল্যাঙডনের মন।
হাতের ঘড়ির দিতে তাকাল সে। মিকি জ্বলছে।
এগারোটা উনত্রিশ।
হতাশার আওয়াজ তুলে ল্যাঙডন লণ্ঠনটাকে এদিকে দিকে দৌলায়। আঘাত করে দরজায়।
১১৩.
কিছু একটা ঘটছে।
অমঙ্গলজনক কিছু।
বাইরে অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লেফটেন্যান্ট চার্ট্রান্ড। অধীর অন্য গার্ডরাও। এটা ভ্যাটিকানেরা করতে পারে। তাই বলে রোচার এত অদভুত আচারণ করবে কেন?
অমঙ্গলজনক কিছু একটা সত্যি সত্যি ঘটছে।
গত এক ঘণ্টা ধরে রোচারের আচরণ একেবারে অন্যরকম। সে দাঁড়িয়ে আছে চাট্রান্ডের পাশে। চোখে তার পাথুরে দৃষ্টি।
কারো না কারো এই মিটিঙের সময় ভিতরে থাকার কথা।
আরো কিছু ব্যাপার ভোগাচ্ছে লেফটেন্যান্টকে। কার্ডিনালরা। তারা এখনো ভিতরে বদ্ধ থাকার কোন কারণ নেই।
ক্যামারলেনগো পনের মিনিট আগেই তাদের ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সিদ্ধান্তের উপর ছুরি চালিয়েছে রোচার। জানায়নি তাকে। সুইস গার্ডের চেইন অব কমান্ড কখনোই ভাঙা হয়নি এবং বরাচার এখন টপ ডগ।
আধঘণ্টা… রোচার ভাবল, তার সুইস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, প্রিজ, তাড়াতাড়ি কর!
দরজার পাশে কী ঘটছে সেটা দেখার জন্য তড়পানো শুরু করল চার্ট্রান্ড। এই ক্রাইসিসের পুরোধায় ক্যামারলেনগো ছাড়া আর কেউ নেই। অনেকদিন পর লেফটেন্যান্টের ভিতরের ক্যাথলিক লোকটা জেগে উঠল। ইলুমিনেটি একটা ভুল করে বসেছে। ক্যামারলেনগো ভেস্কোকে চ্যালেঞ্জ করা তাদের উচিৎ হয়নি।
নিচ থেকে কেমন যেন একটা ধাতব, ভোঁতা শব্দ উঠে এল। তাকাল রোচার তার দিকে। বুঝে নিল চার্ট্রান্ড। দৌড়ে নেমে গেল সে। ত্রিশ গজ নামার পর ধাঁধায় পড়ে গেল। দেয়ালের আশপাশ থেকে আসছে শব্দটা দেয়ালের ওপাশে মাত্র একটা ঘর আছে। পোপের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। হিজ হোলিনেসের লাইব্রেরি তার মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে। কারো সেখানে থাকার কথা নয়।
নেমে গেল চার্ট্রান্ড। বিনা দ্বিধায় আঘাত হানল হিজ হোলিনেসের লাইব্রেরিতে। প্রাইভেট লাইব্রেরির ভিতরে কখনো যায়নি সে। পোপ না থাকলে সাথে কেউ যেতে পারবে না ভিতরে।
হাত দিল নবে। ঠিক। বন্ধ। ভিতরে কেউ একজন জোরে জোরে আঘাত করছে। কান পাতাল। কথাও হচ্ছে সেখানে!
ভিতরে আর কিছু হোক না হোক আতঙ্ক যে আছে তা টের পায় সে। কেউ কি আটকে পড়েছে? ফিরে যাবে সে? রোচারের সাথে কথা বলবে? না।
চার্ট্রান্ড সিদ্ধান্ত নিতে জানে। সে কাজটাই এখন করবে। সাইড আর্ম বের করল সে। তারপর গুলি ছুড়ল। ছিটকে গেল ভিতরদিকে কাঠ। খুলে গেল দরজা।
চতুষ্কোণ ঘরটার অন্ধকার দূর করার জন্য সে নিজের স্পটলাইট জ্বালল। ওরিয়েন্টাল কার্পেট, একের বুকশেলফ, চামড়ার কাউচ, মার্বেলেরফায়ারপ্লেস। তিন হাজার পুরনো বইয়ের সাথে ঠাসা আছে আধুনিক কালের রাশি রাশি জার্নাল। হিজ হোলিনেসের যা প্রয়োজন পড়তে পারে তার সব।
বিজ্ঞানের পত্রিকা, রাজনীতির পত্রিকা।
শব্দ উঠছে। রেচার সেদিকে তার টর্চ তুলল। দূরে, বসার জায়গার পিছনে একটা বিশাল লোহার দরজা। ভল্টের মত। চারটা অতিকায লক আছে এর গায়ে এর গায়ে লেখা আছে একটা কথা যা ঘুম হারাম করে দিল চাট্রান্ডের।
এল পাসেট্রো
তাকিয়ে থাকল চার্ট্রান্ড।
পোপের গোপন এস্কেপ রুট!
এর কথা সে ভালমতই শুনেছে। কিন্তু এ যে আর ব্যবহৃত হয় না সেটাও সে জানে।
অন্যপাশে কে থাকতে পারে?
কান পাতল সে এ দরজাতেও। ওপাশ থেকে শব্দ আসছে কোহলার… মিথ্যা… ক্যামারলেনগো…
হু ইজ দ্যাট? চিৎকার করল চার্ট্রান্ড।
…আর্ট ল্যাঙডন… ভিট্টোরিয়া ভে…
চার্ট্রান্ড আরো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল, আমি মনে করেছিলাম আপনারা অক্কা পেয়েছেন…
…দরজাটা! বলছে ভিতর থেকে এক কণ্ঠ, খুলুন…
চার্ট্রান্ড তাকাল দরজার দিকে। এটা উড়িয়ে দেয়ার জন্য ডায়নামাইট লাগবে। অসম্ভব! অত্যন্ত পুরু।
… মিটিং… থামান… লেনগো… বিপদে…
দ্রুত সে ছুটে যেতে চায় পোপের অফিসের দিকে। কিন্তু থেমে যায় দরজাটার দিকে তাকিয়ে। দরজার প্রত্যেক কি হোলে একটা করে চাবি লাগানো আছে।
তাকিয়ে থাকল চার্ট্রান্ড।
কত শতাব্দি ধরে এ প্যাসেজ ব্যবহার করা হচ্ছে না তার কোন ইয়ত্তা নেই! কী করে চাবি এল এখানে!
চাবি ঘোৱাল চার্ট্রান্ড তার বাতিটা মাটিতে নামিয়ে রেখে। তারপর পরেরটা। প্রতিটা। খুলল সে দরজা। তাকাল ভিতরে।
রবার্ট ল্যাঙডন আর ভিট্টোরিয়া ভেট্রা দুজনেই জীবিত, বিদ্ধস্ত, ক্লান্ত।
একী! চার্ট্রান্ড দাবি করল, কী চলছে এসব? কোত্থেকে এলেন আপনারা?
ম্যাক্স কোহলার কোথায়? পাল্টা দাবি করল ল্যাঙডন।
ক্যামারলেনগোর সাথে একটা প্রাইভেট–
তাকে পাশ কাটিয়ে দুজনেই ছোটা শুরু করল। পিছনে পিছনে গান উঁচু করে এগিয়ে গেল চার্ট্রান্ড। তারপর দেখতে পেল ল্যাঙডনরা, জায়গাটা পোপের অফিসের আশপাশে।
ক্যামারলেনগো বিপদে আছে! চিৎকার করল ল্যাঙডন, হাত উঁচু করে, দরজা খুলন! ম্যাক্স কোহলার খুন করে ফেলবে ক্যামারলেনগোকে!
রোচার রাগত চোখে তাকিয়ে আছে।
দরজা খুলুন! চিৎকার করল ভিট্টোরিয়াও, তাড়াতাড়ি!
কিন্তু বড় দেরি হয়ে গেছে।
ভিতর থেকে একটা রক্ত হিম করা চিকার এল।
ক্যামারলেনগোর চিৎকার।
১১৪.
এক মুহূর্ত পরে, তখনো চিৎকার চলছিল।
ক্যাপ্টেন বরাচারকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল চার্ট্রান্ড। তারপর জায়গা করে দিল ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডনকে।
তাদের সামনে দৃশ্য হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
কোহলারের পায়ের কাছে পড়ে আছে ক্যামারলেনগো। তার দিকে একটা পিস্তল তাক করে রেখেছে কোহলার। চিক্কার আসছে ক্যামারলেনগোর মুখ থেকে। তার রোব খুলে ফেলা হয়েছে বুকের কাছে। সেখানে কালো দাগ। পাশে পড়ে আছে ব্র্যান্ডটা।
সাথে সাথে দুজন গার্ড বিনা দ্বিধায় গুলি করল কোহলারের বুকে। সে পড়ে গেল। রক্তাক্ত। হুইলচেয়ারের উপর।
দোরগোড়ায় স্থাণুর মত দাড়িয়ে আছে ল্যাঙডন।
একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে ভিট্টোরিয়াও, ম্যাক্স কোনক্রমে ফিসফিস করল
মেঝেতে তড়পাতে তড়পাতে কোনক্রমে ক্যামারলেনগো ফিরল রোচারের দিকে তারপর তর্জনী তুলে দেখাল রোচারকে, একটা মাত্র শব্দ বলল, ইলুমিনেটাস!
ইউ বাস্টার্ড! দৌড়ে গেল বরাচার তার দিকে, ইউ–
এবার ত্বড়িৎগতিতে কাজ করল চট্ৰান্ড। ক্যামারলেনগোর দেখানোর সাথে সাথে সে সাইডআর্ম আবার হাতে নিয়েছিল, বিনা দ্বিধায় গুলি করল সে তিনবার, নোটারের পিছনে। সাথে সাথে নিজের রক্তে ডুবে গেল রোচার। মৃত।
তার দিকে বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে এগিয়ে গেল চার্ট্রান্ড আর গার্ডরা। ক্যামারলেনগোর দিকে। সে এখনো জ্ঞান ধরে রেখেছে।
একজন এগিয়ে গেল ক্যামারলেনগোর দিকে আরো একটা তাকাল তার বুকে আকা চিহ্নটার দিকে। অন্য একজন উল্টো করে ধরল সিলটা।
মরার চেয়ে বড় আরো কিছু ব্যাপার আছে…
বলেছিল হ্যাসাসিন। ঠিক ঠিক ম্যাক্স কোহলার এতদূরে উড়ে এসে চার্চের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির বুকে একে দিল চিহ্নটা। নিজের প্রাণের বিনিময়ে।
যত্ন নেয়া হচ্ছে ক্যামারলেনগোর।
সিক্সথ ব্র্যান্ড!
এগিয়ে গেল ল্যাঙডন ধোঁয়া ওঠা চিহ্নটার দিকে। আর সবগুলোর চেয়ে অনন্য এক চিহ্ন। পুরোপুরি চতুষ্কোণ। আর সবগুলোর চেয়ে বড়।
ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত ব্র্যান্ড… বলেছিল খুনি, আর সবগুলোর চেয়ে অনন্য।
তুলল সে কাঠের হাতলওয়ালা চিহ্নটাকে। সিলটার লোহার অংশ এখনো আগুন ছড়াচ্ছে। জানে না সে কী দেখতে পাবে।
আর সব গার্ড এটাকে দেখে এমন বিস্ফারিত নয়নে কেন তাকিয়ে ছিল বুঝছে না ল্যাঙডন। চতুষ্কোণ। দেখতে জটিল। এম্বিগ্রাম। কিন্তু অর্থ কী এটার?
একটা হাত পড়ল তার কাঁধে।
ভিট্টোরিয়ার হাত মনে হল তার। কিন্তু ভাবনাটা ভুল। সেটা অন্য কারো। রক্তাক্ত। তাকাল মুখ ফিরিয়ে ল্যাঙডন। এবং শিউরে উঠল। কোহলার।
সে এখনো জীবিত!
তাকাল সে চোখ তুলে। সেই চোখ। প্রাণহীন চোখ। পাথুরে চোখ। যেমনটা প্রথম দেখতে পেয়েছিল ল্যাঙডন সার্নে। আজই।
হাত বাড়াল আবার মরতে থাকা ডিরেক্টর জেনারেল। তার অন্য হাতে একটা ম্যাচবাক্সের মত জিনিস।
প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে গেল সে। কোন অস্ত্র নয়ত! হতেই পারে, যে তোক এমন কাজ করতে পারে, সুইসাইড মিশনে আসতে পারে, সে একটা অল্টা মাডার্ন বোমাও বহন করতে পারে নিশ্চিন্তে। : এখনো ঘরের সবাই ক্যামারলেনগোকে নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্তু না, এগিয়ে দিল কোহলার জিনিসটাকে, তারপর বলল, গি-গিভ দিস… টু… মিডিয়া।
মারা যাচ্ছে কোহলার একটু একটু করে।
হাত বাড়াতে গিয়েও কী এক বাঁধা পাচ্ছিল ল্যাঙডন। তারপর সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে সে হাত বাড়াল। মরতে থাকা একজন সেরা বিজ্ঞানীর শেষ মুহূর্তের ইচ্ছা পূরণ করা যায়।
তাকাল সে জিনিসটার গায়ের লেখার দিকে :
সনি রুভি
ম্যাক্স কোহলার তাহলে ছোট ক্যামকর্ডার বয়ে আনছিল! তার শেষ আকুতিটুকু নিয়ে নিল ল্যাঙডন। তারপর ভরে দিল পকেটে।
ঘরের নিস্তব্ধতা ভাঙল ক্যামারলেনগো, কার্ডিনালরা!
এখনো সিস্টিন চ্যাপেলে। ক্যাপ্টেন বোচার আদেশ করেছিল…
ইভাকুয়েট… নাউ, এভরিওয়ান!
সাথে সাথে তাকাল চার্ট্রান্ড একজন গার্ডের দিকে।
বলল ক্যামারলেনগো, হেলিকপ্টার… বাইরে যেতে হবে… আমাকে একটা। হাসপাতালে নিয়ে চল।
১১৫.
এখনো বসে আছে পাইলট, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে। তার রোটোরের ধীর গতির শব্দও ঢাকা পড়ে গেছে মানুষের চিৎকারে। এখনো কোন রায়ট যে বেঁধে যায়নি, শুরু হয়ে যায়নি দাঙা এটা দেখেই সে তুষ্ট এবং বিস্মিত।
বাইরে বিচিত্র সব ব্যাপার হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে প্রার্থনাকারীর সংখ্যা। কেউ কেউ জোরে জোরে কাঁদছে। কেউ আউড়ে যাচ্ছে বাইবেলের পঙতি, বাকিরা সমস্বরে বলে যাচ্ছে যে এই চার্চের পাওনা।
হিমশিম খাচ্ছে সুইস গার্ড।
মিডিয়া লাইটগুলো ঝলসে দিচ্ছে পাইলটের চোখ।
সামনে কয়েকটা ব্যানার ঝুলছেঃ
এন্টিম্যাটার ইজ এন্টিক্রাইস্ট।
সায়েন্টিস্ট = স্যাটানিস্ট
কোথায় তোমাদের ঈশ্বর এখন?
সে অপেক্ষা করছে আমেরিকান লোকটা, চার্ট্রান্ড আর ভিট্টোরিয়ার জন্য। তারা বয়ে আনছে ক্যামারলেনগোকে।
রোচার পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিল। সে বলেছিল, এই সে লোক। এখন পাইলটের নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। সে এয়ারপোর্টেই লোকটার চোখে অন্য কিছু দেখতে পেয়েছিল। অমঙ্গলজনক কিছু।
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে, সিস্টিন চ্যাপেল থেকে, কার্ডিনালদের একটা মিছিল বেরিয়ে আসছে।
মাথা দপদপ করছে পাইলটের। কী করবে সে? একটা এ্যাসপিরিন নিবে? নাকি তিনটা? আহত লোক বহন করতে ভাল লাগে না তার। কিন্তু এ লোক আর কেউ নয়, ক্যামারলেনগো। আজকের হিরো।
মাথাটা খুব বেশি যন্ত্রণা করছে। ফার্স্ট এইড বক্সের মত যে ড্রয়ারটা আছে সেটায় হাত রাখল সে। মনে মনে তড়পাচ্ছে, থাকবে কি কোন এ্যাসপিরিন? মাথাব্যথা নিয়ে
উড়ে যাওয়া খুব ঝুঁকির ব্যাপার।
না, কপাল তার খারাপ। ড্রয়ারটা তালা দেয়া। চাবি নেই তার কাছে।
ক্যামারলেনগোকে বয়ে আনছে ভিট্টোরিয়া, ল্যাঙডন আর দুজন সুইস গার্ড। কোন খার্টিয়া পাওয়া যায়নি, পাওয়া যায়নি কোন স্ট্রেচার। বাধ্য হয়ে তারা একটা টেবিলে বয়ে আনছে। অসাড়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যামারলেনগো।
বয়ে যাচ্ছে সময়।
১১৬.
একদম সামনে চলে এসেছে তারা। স্কয়ারের চারপাশ থেকে মিডিয়ার লাইটে ধাঁধিয়ে যাচ্ছে তাদের চোখ। মানুষজনের উপর দিয়ে আলো ঠিকরে পড়ছে।
দূরে রোটরের শব্দ আসছে। দাঁড়ানো তারা পৃথিবীর সবচে বড় বাঁধানো মঞ্চে। সিঁড়ি বেয়ে নামবে এমন সময় সাবধান হতে বলল তাদের চার্ট্রান্ড।
খোল চত্ত্বরে আর কেউ ছিল না। কিন্তু কোত্থেকে যেন গন্ধ পেয়ে এগিয়ে আসছে ম্যাক্রি আর গ্লিক। ম্যাক্রির হাতে ক্যামেরা রোল করছে।
আল্ট! চিৎকার করল চার্ট্রান্ড, পিছিয়ে যান!
দমবার পাত্র নয় বিবিসির রিপোর্টাররা।
ভাবল ল্যাঙডন, আর সেকেন্ড ছয়েকের মধ্যে সারা দুনিয়ার তাবৎ সংবাদ সংস্থা এই লাইভ টেলিকাস্টে শামিল হলে। সব মিডিয়াভ্যানের ক্যামেরা নেমে গেল। তারা এরই মধ্যে পেয়ে গেছে বিবিসির ফুটেজ।
কাজটা ভাল হল না। ভাল হচ্ছে না!
ভাবল ল্যাঙডন। তার দৌড়ে গিয়ে রিপোর্টারদের বাধা দিতে ইচ্ছা হল। কিন্তু করার কোন উপায় নেই। আর তাতে লাভের লাভ কিছু হবে না।
হঠাৎ উঠে বসল ক্যামারলেনগো। তার চোখ খুলে গিয়েছিল। তারপর, কেউ টের পাবার আগেই নিচু হয়ে গেল টেবিলের সামনের দিক।
পড়ে গেল ক্যামারলেনগো। অবাক হলেও সত্যি, দাঁড়াতে পারল কোনক্রমে সে। পড়ল না। কেউ ধরার আগেই টলতে টলতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। এগিয়ে গেল ম্যাক্রির দিকে।
না? চিৎকার করল ল্যাঙডন।
চার্ট্রান্ড চেষ্টা করল তার পিছু ধাওয়া করার। সাথে সাথে তাকাল ক্যামারলেনগো রক্তলাল চোখে, লিভ মি!
পিছিয়ে এল চার্লাভ বাধ্য ছেলের মত।
এশিয়ে গেল ক্যামারলেনগো। তার বুকের দিকে ছেঁড়া রোব। পিছলে পড়ে গেল সেটা। এখনো টলতে টলতে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যামারলেনগো। তার বুক থেকে সরে গেছে আকরণ নগ্ন বুকে ঝলসে আছে একটা প্রতীক।
সারা দুনিয়া হামলে পড়ল টিভি স্ক্রিনের সামনে। চোখ ধাঁধিয়ে দিল দৃশ্যটা।
ইলুমিনেটির চূড়ান্ত বিজয়…
এবার স্ক্রিনগুলোয় ফুটে উঠল একটা, মাত্র একটা দৃশ্য। এতোক্ষণ যে প্রতীকের কোন মানে ছিল না, সেটাই বিমূর্ত হল চোখের সামনে। মানে আছে এর। খুব ভাল মানেই আছে।
সত্যিটা একটা ট্রেনের মত আঘাত করল ল্যাঙডনের বুকে।
আরন ব্র্যান্ডের আসল অর্থই ধরতে পারেনি সে! সিম্বলজির প্রথম শর্তটাই ভুলে গেছে। যে কোন স্ট্যাম্পে লেখাটা কীভাবে থাকে! থাকে উল্টো। নেগেটিভ। কারণ এর ম্যাপ পড়বে সোজা। যদি সোজা লেখা থাকে, ছাপ পড়বে উল্টো।
বেড়ে গেল আওয়াজ। বেড়ে গেল উত্তেজনা। মুহূর্মুহু রব উঠল চারধার থেকে।
এর নতুন অর্থ দিবালোকের মত স্পষ্ট প্রতিভাত হল সবার সামনেঃ এক অকল্পনীয় ডায়মন্ড! প্রাচীণ পদার্থগুলোর মাধ্যমে এমনভাবে ফুটে উঠবে যে তাকিয়ে খুকিকে সবাই সেই অবিশ্বাস্য সমতা আর সৌন্দর্যের দিকে।
এক মুহূর্তে জেনে গেল ল্যাঙডন, পুরাণগুলো ভুল নয়।
আর্থ, এয়ার, ফায়ার, ওয়াটার।
দ্য ইলুমিনেটি ডায়মন্ড!
১১৭.
রবার্ট ল্যাঙডন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল সামনে। জোয়ার উঠল চারধার থেকে। বাঁধভাঙা জোয়ার। দুহাজার বছরের মধ্যে এমন নাটকীয়তা আর হয়নি। যেমনটা–হচ্ছে এখন, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে।
কোন যুদ্ধ নয়, নয় কুসিফিক্স করার চেষ্টা, তীর্থযাত্রিদের ভ্রমণ নয়…
ব্র্যান্ডেড ক্যামারলেনগো… যাচ্ছে এগিয়ে সারা পৃথিবীকে সত্য দেখাতে…
ইলুমিনেটি ডায়মন্ড উন্মোচিত হয়েছে… উন্মোচিত হয়েছে এর অসম্ভব মেধার ফুরন নিয়ে…
ভ্যাটিকান সিটির অন্তিম বিশ মিনিট ঘোষণা করছে কাউন্ট ডাউনের আওয়াজ…
নাটকটা, আসলে, শুরু হল মাত্র।
যেন কোমা থেকে মাত্র উঠল ব্র্যান্ডেড ক্যামারলেনগো। এক তরুণ যাজক, যে তার জীবনটাকে পবিত্র রেখেছে ঈশ্বরের জন্য, মানুষের জন্য, খ্রিস্টবাদের জন্য… টলতে টলতে, বিড়বিড় করে কোন এক অদৃশ্য অস্তিত্বের সাথে কথা বলতে বলতে, হাত উপরে উঠিয়ে, চোখ আকাশের কালো বুকে বিঁধিয়ে দিয়ে, এগিয়ে যাচ্ছে সামনে।
বল! বলল ক্যামারলেনগো, উপরের দিকে তাকিয়ে, হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি আমি তোমাকে!
সাথে সাথে বুঝতে পারল ল্যাঙডন। গভীর অচৈতন্যে পড়ে গেছে ক্যামারলেনগো।
ভয়ানক এই অবস্থা।
সে নিজেও জানে না কতটা অচেতন সে এ মুহূর্তে। কোথায় আছে তাও জানে না। জানে না কী করছে। দেখছে না কিছু।
সাদা, ফ্যাকাসে হয়ে গেল ভিট্টোরিয়ার চেহারা। সে-ও বুঝতে পারছে এখন ব্যাপারটা। শক পেয়েছে সে! হ্যালুসিলেশনে পড়ে গেছে! মনে করছে সে কথা বলছে ঈশ্বরের সাথে।
কারো এটা থামাতে হবে! ভাবল ল্যাঙডন, লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এরপর। হাসপাতালে নিতে হবে তাকে।
সরাসরি ভিডিও করছে চিনিতা ম্যাক্রি। পজিশন নিয়ে নিয়েছে। সবার আগে তাদের ভ্যানে দেখা গেল দৃশ্যটা। তারপর বাকিগুলোয়।
ছেঁড়া কাপড়, প্রশস্ত বুক, বুকে সুবিশাল পোড়া দাগ, নিস্পাপ মুখাবয়ব, হেলেদুলে এগোনো, হাত উপরে উঠিয়ে রাখা, বিড়বিড় করা, চোখ আধবোজা, মাথা উপরে তাক করা–সব যেন এক অনির্বচনীয় দৃশ্য তুলে দিল সবার সামনে। থমকে গেল পুরো পৃথিবী। অনেক অনেক কষ্টের পর কোন তুখোড় খেলুড়ে জিতে গেছে শেষ দান। তার প্রাণের বিনিময়ে।
টি সেন্টো ডিয়ো! আই হিয়ার ইউ, গড!
চেহারায় একটা অস্বস্তি নিয়ে পিছিয়ে এল চার্ট্রান্ড।
সারা পৃথিবী থেমে গেছে। আটকে গেছে সবার হৃদস্পন্দন। একদৃষ্টে চেয়ে আছে টিভি স্ক্রিনের দিকে।
থমকে গেল ক্যামারলেনগো। তাকাল বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে। উদাস ভঙ্গি তার। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না। খালি পা। তার ভিতর দিয়ে যিশু খ্রিস্টকে দেখতে পেল সবাই।
আবার হাত তুলল সে আরো উপরে, আরো উপরে, ফিসফিস করে বলল, গ্রাজি! গ্রাজি, ডিও!
পুরো চত্বরে মানুষ থমকে আছে। কথা ফুটছে না কারো কণ্ঠে।
গ্রজি! ডিও! চিৎকার বের হল ক্যামারলেনগোর বুক চিরে, অপার্থিব সুরে, অনির্বচনীয় লহরীতে, যেন আকাশ থেকে ঝড় নামবে এখনি; তার সারা মুখে ছড়িয়ে আছে অপার স্নিগ্ধতা, গ্রাজি, ডিও!
থ্যাঙ্ক ইউ, গভ? অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে ল্যাঙডন।
উপরের দিকে তাকিয়ে আছে সে এখনো। আরো আরো জোরে মাথা নাড়ছে। যেন শুনছে কথা, অপার্থিব কণ্ঠ থেকে।
আপন দিস রক, আই উইল বিল্ট মাই চার্চ!
একথা অপরিচিত নয় কারো কাছে। ল্যাঙডনের কাছেও অপরিচিত নয়।
তাকাল ক্যামারলেনগো তার ঘোর লাগা চোখে সামনের সম্মিলিত মানুষের দিকে।
আপন দিস রক, আই উইল বিল্ট মাই চার্চ!।
আবার তাকাল সে চারদিকে। তারপর তুলে দিল একটু নামানো হাত। হাসতে হাসতে।
গ্রাজি, ডিও! গ্রাজি!
মানুষটা একেবারে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে।
আর সারা পৃথিবী দেখছে অবাক বিস্ময়ে।
ফিরে তাকাল সে। তারপর ফিরে চলল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার দিকে।
১১৮.
রাত এগারোটা বেয়াল্লিশ।
এক মুহূর্ত পরে ব্যাপারটা টের পেল ল্যাঙডন।
সে এখানেই মারা যাবে। যাবে না কোথাও।
চিৎকার করল এবার ল্যাঙডন, ক্যামারলেনগো! স্টপ!
দৌড়ে গেল সে। সামনে কালিগোলা অন্ধকার। সেখানে ঢুকল সে বিনা দ্বিধায়। তারপর দেখতে পেল না কিছুই। আলো থেকে হঠাৎ অন্ধকারে আসায় তার চোখ সয়ে যেতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিবে। মূল্যবান কয়েক সেকেন্ড। সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু শোনা যাচ্ছে একজনের পদশব্দ।
সাথে সাথেই চলে এল ভিট্টোরিয়া আর গার্ডরা। জ্বালল সব ফ্লাশলাইট। কিন্তু কোথাও দেখা গেল না ক্যামারলেনগোর চিহ্ন।
ক্যামারলেনগো! চিৎকার করল, নাকি কাঁদল বলতে পারবে না চার্ট্রান্ড, থামুন, সিনর!
সামনের অন্ধকারে এগিয়ে গেল তারা। এগিয়ে গেল তার সন্ধানে। কিন্তু ফেউ পিছু ছাড়ছে না। এগিয়ে এল ম্যাক্রি আর গ্লিক।
হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে গ্লিক ম্যাক্ৰিকে আস্তে যেতে বলছে আর মাক্রির ক্যামেরার লাল বাতি দেখাচ্ছে যে ট্রান্সমিশন চলছে এখনো।
থামাতে হবে এই দুজনকে।
আউট! সত্যি সত্যি কাদছে চট্ৰাড, মোদের চোখের জন্য নয়।
তোয়াক্কা না করে এগিয়ে আসছে ম্যাক্রি আর গ্লিক।
চিনিতা! অবশেষে কথা বলল প্লিক, দিস ইজ সুইসাইড! আর আসছি না আমি!
তার কথাও কানে তুলল না ম্যাক্রি। সাথে সাথে সে একটা সুইচ টিপে দিল। সবাইকে অন্ধ করে দিয়ে এল আলো।
চোখ বন্ধ করল ল্যাঙডন। ড্যাম ইট!
যখন সে চোখ খুলল, দেখতে পেল, সামনের ত্রিশ গজ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এক মুহূর্ত পরে, দূরে কোথাও থেকে ক্যামারলেনগোর কণ্ঠ প্রতিধবন্ধিত হয়ে এগিয়ে এল, আপন দিস রক, আই উইল বিল্ড মাই চার্চ
সাথে সাথে ঘোরাল ম্যাক্রি ভার ক্যামেরা। এবং দেখা গেল, দূরে, ছায়ার মত একটা অবয়ব এগিয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে ছুটে। ব্যাসিলিকার মূল পথ ধরে।
এক মুহূর্ত বাই ইতস্তত করল, তারপর, বিনা দ্বিধায় ছুটে গেল চার্ট্রান্ড ॥ জুটে গেল লাঙডন, তারপর ভিট্টোরিয়া, সবশেষে গার্ডরা।
পুরো দুনিয়ার কাছে এই পিছুধাওয়া পৌঁছে দিচ্ছে ম্যাক্রি। তার পিচ্ছনে পিছনে অনিচ্ছায় এগিয়ে যাচ্ছে গ্লিক, আস্তে করে একটা গাল ঝেড়ে, তারপর মন্তব্য করতে করতে।
পোপের অফিসে পাওয়া আঘাতে ক্যামারলেগো যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ছুটছে তার পিছনে চার্ট্রান্ড। সে জানত, ব্যাসিলিকার মূল পাখের দৈর্ঘ একটা ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়। কিন্তু এখন ছুটতে গিয়ে তার মনে হচ্ছে দূরত্বটা দ্বিগুণ।
বিবিসির স্পটলাইটের বাইরে কোখাও এখনো বেরিয়ে আসছে আওয়াজ, আপন দিস রক, আই উইল বিল্ড মাই চার্চ!
ক্যামারলেনগো পাগল হয়ে গেছে কি আসলেই? ভাবে চট্ৰান্ড। মনে হয় না।
নিচে অব প্যালিয়ামসে দেখা গেল এক অকল্পনীয় অবয়ব, আরো একটু পরে। কোন সন্দেহ নেই, ক্যামারলেনগো। তার গা কালো, আর চারপাশ দিয়ে ঠিকরে বের হচ্ছে তিমির বিনাশী আভা।
এক মুহূর্তের জন্য সবাই তাকায় সেই গডনের দিকে। আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসে সেটা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না তারা।
গডনটাকে ল্যাঙডনও দেখেছে। এ এক অদৃষ্টপূর্ব অনুভূতি। তারপর যখন এগিয়ে গেল তারা, ভাঙল ভুল। এ জায়গার নাম নিচে অব প্যালিয়ামস। এখানে একটা ডুবে চেম্বারের ভিতরে নিরানব্বইটা আলোকিত বাতি জ্বলে। সেখান থেকে ঠিকরে আসছিল আলোর আভা। কোমল আভা। সেটার সামনে দাঁড়ানোয় ক্যামারলেনগোকে ভৌতিক দেখাচ্ছিল।
বিখ্যাত গোল্ডেন বক্স আছে যে চেম্বারটায়, সেটার কাছে এগিয়ে গেছে ক্যামারলেনগো। তাকিয়ে আছে সামনের দরজার দিকে। কাচের দরজার অন্য পাশেই সেই সোনালি বাক্স।
কী করছে সে! ভেবে পায় না ল্যাঙডন। নিশ্চই সে ভাবছে না যে সেই গোল্ডেন বক্সে–
কিন্তু না, থামল না ক্যামারলেনগো। এগিয়ে চলল সামনে। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা একটা লোহার ঢাকনা খুলল।
টের পেল অবশেষে ল্যাঙডন, কী করতে যাচ্ছে ক্যামারলেনগো।
গুড গড! না!
ফাদার, ডোন্ট!
পিছন থেকে ক্যামারলেনগোর নগ্ন কাঁধ ধরল সে এগিয়ে গিয়ে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। কাঁধটা ঘামে ভেজা। কিন্তু ধরে রাখতে পারল সে। নেমে যাচ্ছিল ক্যামারলেনগো নিচে, অজানা সুড়ঙ্গে।
বিরক্ত হয়ে তাকাল ক্যামারলেনগো, কী করছেন আপনি?
চোখে চোখ মিলে যাবার সাথে সাথে অবাক হয়ে গেল ল্যাঙডন। অস্থির মানুষের কোন ছাপ নেই তার চোখে। চোখ একেবারে সুস্থির, সেখানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
ফাদার, আপনি সেখানে নামতে পারবেন না। আমাদের জরুরি কাজ বাকি পড়ে আছে। বেরুতে হবে সবাইকে।
মাই সন, আমি এইমাত্র একটা মেসেজ পেয়েছি। আমি জানি–
ক্যামারলেনগো! ছুটতে ছুটতে চিৎকার করল চার্ট্রান্ড আর বাকিরা। পিছনে পিছনে ঠিক ঠিক আসছে ম্যাক্রি।
থমকে গেল চাট্রান্ত। তাকাল ফ্লোরের দিকে। ক্রস করল নিজেকে। তারপর ধন্যবাদের দৃষ্টি দিল ল্যাঙডনের দিকে। এ দরজার নিচে কী আছে তা ল্যাঙডনও জানে। এটা খ্রিস্টবাদের সবচে জটিল অংশের একটা।
টেরা সান্তা। পবিত্র ভূমি।
কেউ কেউ একে ন্যাক্রোপোলিস বলে। কেউ বলে ক্যাটাকম্বস। গত কয়েক দশকে যারা ন্যাক্রোপোলিসে গিয়েছে তাদের কথায় জানা যায়, এ এমন এক জায়গা যেখানে কোন লোক একবার দিক হারিয়ে ফেললে কখনো আর ফিরে আসতে পারবে না।
এমন জায়গায় ক্যামারলেনগোর পিছুধাওয়া করতে চাইবে না কেউই।
সিনর! অবশেষে পেয়ে বসল চার্ট্রান্ড, আপনি আঘাত পেয়েছেন। প্রচন্ড আঘাত। এ জায়গা ছেড়ে যেতে হবে আমাদের। নিছে যেতে পারেন না আপনি। এটা নির্জলা আত্মহত্যা।
চাট্রান্ডের কাধে হাত রাখল ক্যামারলেনগো, তোমার উদ্বেগ আর সেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বলে বোঝাতে পারব না তোমাকে বোঝাতে পারব না কীভাবে বুঝছি আমি। কিন্তু একটা সূত্র পেয়েছি, সেটা নিয়েই হাঁটতে চাই। আমি জানি কোথায় আছে। এন্টিম্যাটারটা।
প্রত্যেকে স্থির হয়ে গেল।
তাকাল সবার দিকে সে, বলল, আপন দিস রক, আই উইল বিল্ড মাই চার্চ… এই ছিল ম্যাসেজ। এর অর্থ একেবারে স্পষ্ট।
আপন দিস রক, আই উইল বিল্ড মাই চার্চ!
জিসাস যখন প্রথম পিটারকে তার শিষ্য হিসাবে নির্বাচিত করেন তখন এই কথা উঠেছিল। এর সাথে বর্তমানের মিল কোথায়?
ম্যাক্রি এগিয়ে এল আরো। গ্লিকের সারা শরীরে ভর করেছে স্থবিরতা।
কথা বলছে ক্যামারলেনগো, ইলুমিনেটি তাদের ধ্বংসের বীজ বুনে দিয়েছে এই সিটির একেবারে ভিত্তিমূলে। সেই পাথরের উপর, যেখানে শুরু এ চার্চের। আর আমি জানি কোথায় সেটা।
কথাটা একটা রূপক, ফাদার। কোন পাথর নেই এখানে।
একটা পাথর আছে, মাই সন! পিয়েত্রো ইলা পিয়েত্রা!
থমকে গেল ল্যাঙডন। এক মুহূর্তে সব স্পষ্ট হয়ে গেল চোখের সামনে।
এখানে, নিচে কোথাও সত্যি সত্যি একটা পাথর লুকানো আছে। কোথায়, কে জানে, কিন্তু এখানেই কোথাও। নিশ্চিত। এও নিশ্চিত, পাথর কথাটা একটা রূপক। আর সেই রূপক যে এত শক্তিশালী সেটা তার চিন্তাতেও আসেনি।
পিয়েত্রো ইলা পিয়েত্রা।
পিটারই সেই প্রস্তর।
ঈশ্বরের উপর পিটারের বিশ্বাস এত বেশি ছিল যে যিশু পিটারকে পাথর হিসাবে অভিহিত করতেন।
সেই পিটারের উপর বিশ্বাস ছিল অতুল, সবার। তিনি ছিলেন এ মহানগরীর ভিত্তিমূল। এখানে, এই ভ্যাটিকান হিলে, পিটারকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। তারপর কবর দেয়া হয়। এখানটাতেই।
তার কবরের উপর একটা ছোট সমাধি মন্দির গড়ে নেয় প্রথম দিকের ক্রিশ্চিয়ানরা।
খ্রিস্টবাদ যত ছড়াতে থাকে, ততই বড় হতে থাকে সেই সমাধিমন্দির। একের উপর এক স্তর পড়তে থাকে। বড় হতে থাকে প্রতিষ্ঠান। দু হাজার বছর ধরে। আস্তে আস্তে পরিণত হয় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়। পরিণত হয় ভ্যাটিকান সিটিতে। সিটি অব গড-এ।
পুরো ক্যাথলিক বিশ্বাসের ভিত্তিমূল সেন্ট পিটার।
দ্য রক।
এন্টিম্যাটারটা সেন্ট পিটারের সমাধির উপরে। বলল ক্যামারলেনগো।
ইলুমিনেটি যে এখানেই এন্টিম্যাটারটা স্থাপন করবে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই। খ্রিস্টবাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করবে, সেটা শুধু রূপক কথা নয়, বাস্তবও।
আর আপনারা যদি প্রমাণ চান, বলছে ক্যামারলেনগো, আমি এর দরজাটার তালা খোলা অবস্থায় পেয়েছি। কেউ সম্প্রতি, অতি সম্প্রতি, সেখানে ঢুকেছিল।
গর্তের দিকে তাকিয়ে থাকল প্রত্যেকে!
এক মুহূর্ত স্থির থেকে ক্যামারলেনগো ঘুরে দাঁড়াল। হাতে তুলে নিল একটা তেলের বাতি। তারপর নেমে যেতে শুরু করল ভিতরদিকে।
১১৯.
এক অন্ধকার পথে ডুবে গেছে ধাপগুলো।
একে একে অন্য সবাই এগুনো শুরু করল। চেপে ধরল ল্যাঙডনকে চার্ট্রান্ড। এই কমবয়েসি গার্ড কী করে যেন বিশ্বাস করে বসেছে ক্যামারলেনগোকে।
পিছু ছাড়েনি বিবিসির ছারপোকারা। তারাও আসতে শুরু করেছে খুঁড়ি মেরে। সারা পৃথিবী এখন দেখছে তাদের, বিশ্বাস হয় না।
মরার ক্যামেরাটা বন্ধ কর?
একই সাথে আরো একটা ব্যাপার মনে পড়ল ভিট্টোরিয়ার, এই আলোটা অনেক সহায়তা করবে।
কী করবে ক্যামারলেনগো? যদি এন্টিম্যাটারটা পায়, তাতে কাজের কাজ কি কিছু হবে? হবে না। সময় নেই।
তিনতলা মাটির নিচে বসানো অনেক বিজ্ঞোচিত। উপরে বসানো থাকলে সেটা চারপাশে ছড়িয়ে দিত অনেক টুকরা, বিদ্ধস্ত করে দিতে আশপাশকে। ক্ষতি করত রোমের। কিন্তু এখন, তিনতলা মাটির নিচে গেঁথে দেয়ায় পুরো ভূমি কেঁপে উঠবে, তৈরি হবে একটা বিশাল গর্ত, উড়ে যাবে ব্যাসিলিকা, ধ্বংস হয়ে যাবে পুরো ভ্যাটিকান, কিন্তু আশপাশের কারো তেমন ক্ষতি হবে না।
কোহলার এত চিন্তা করে কি কাজটা করেছে? সে কি চায়নি মানুষের কোন ক্ষতি হোক? ধর্মের প্রতি অগাধ ঘৃণা থাকতে পারে তার ভিতরে, তাই বলে কি সে তার বাবাকে মারার প্ল্যান করবে? খুন করবে পোপ, চার কার্ডিনালকে? অসম্ভব নয়, যে ক্যামারলেনগোর বুকে চিহ্নটা একে দেয়ার জন্য প্রাণ দিতে পারে তার পক্ষে সব সম্ভব।
রোচার ছিল তার ভিতরের সঙ্গি। তার কাছে সব জায়গার চাবি ছিল। সব জায়গায় ছিল নির্দোষ বিচরণ। প্রথমে এন্টিম্যাটারকে এই অচিন্তনীয় জায়গায় বসিয়ে দিয়ে তারপর লোকজনকে বলেছে যেন সার্চ করে পাবলিক প্লেসগুলো।
ঠিক ঠিক জানত সে, কেউ খুঁজে পাবে না।
কিন্তু রোচার কখনো ক্যামারলেনগোর উপর থেকে পাওয়া ইশারার কথা জানত না।
এই ম্যাসেজটা আবার ভিট্টোরিয়াকে ধর্মের পথে ফিরিয়ে আনতে চায়। অস্বীকার করেনি সে কখনো। কিন্তু ঈশ্বর কি সত্যি সত্যি তাকে খবর পাঠিয়েছে?
অসম্ভব নয়। প্রকৃতিবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা এখন আর অস্বীকার করে না। করতে পারে না। দুটা কাছিমের ডিম হাজার হাজার মাইল দূরে একই মুহূর্তে ফুটছে… একরের পর একর জুড়ে জেলিফিস এমন ছন্দে দোলে, যেন তারা এক মনের অধিকারী।
চারপাশে যোগাযোগের অচিন্তনীয় পথ খোলা!
তাই বলে মানুষ আর ঈশ্বরের মধ্যে?
ভিট্টোরিয়ার মনে পড়ে যায় বাবার কথা, তিনি থাকলে বিশ্বাসের একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়াতেন।
বাবা, সব সময়, বিজ্ঞানের রসে বিশ্বাসকে জারিত করে তার সামনে উপস্থাপন করতেন।
বাবা, তুমি কেন শুধু শুধু প্রার্থনা কর? ঈশ্বর তোমার কোন কথারই জবাব দিবেন না।
আমার সন্দেহপ্রবণ মেয়ে, তার মানে তোমার মনে হয় ঈশ্বর মানুষের সাথে কথা বলেন না? তোমার ভাষায় ব্যাপারটা বলতে দাও। তুমি ভাল করেই জান ভিট্টোরিয়া, মানুষ তার ব্রেনের খুব কম অংশই ব্যবহার করে। ব্রেনের ক্ষমতার কিয়দংশও ব্যবহার করে কিনা সন্দেহ। তুমি যদি সেগুলোকে আবেগিকভাবে তাড়িত কর–শারীরিক ট্রমার মত, অকল্পনীয় আনন্দ বা কষ্টের সময়টায় কিম্বা গভীর ধ্যানের মুহূর্তে–এক মুহূর্তে তাদের সমস্ত নিউরন এক তালে বেজে ওঠে।
তো? এ কথার সাথে–
আহা! মনের এমন মুহূর্তগুলোয় অচিন্তনীয় সব ব্যাপার ঘটে। এটাকেই গুরুরা হায়ার কনশাসনেস বলে। অতি সচেতনতা। আর খ্রিস্টানরা বলে, জবাব পাওয়া। প্রার্থনা। হাসে ট্রো, নির্মল হাসি, মাঝে মাঝে এর অন্য একটা মানে আসে। তোমার মনকে সেভাবে প্রস্তুত করা যা এরই মধ্যে তোমার হৃদয় জানে।
এখন তার মনে হয় বাবার কথাই ঠিক।
ক্যামারলেনগোর ট্রমা এত উত্তেজিত করেছে তার মনকে যে সে এক মুহূর্তে বুঝে উঠেছে কোথায় এন্টিম্যাটারটা থাকার কথা।
অসম্ভব কিছু নয়।
আমাদের সবাই এক একজন ঈশ্বর… বলেছিলেন বুদ্ধ, আমাদের সবার সব জানা। শুধু প্রয়োজন আমাদের মনকে খুলে দেয়ার। সেখানে আমাদের নিজেদের জ্ঞান দেখে হতবাক হয়ে যাবার কথা।
এ কি তেমন কোন মুহূর্ত?
এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারল সে, বাধা দিতে হবে।
ক্যামারলেনগো, না! আপনি যদি এন্টিম্যাটারটা উপরে তুলে আনেন তাহলে সবাই মারা পড়বে।
এবার এগিয়ে গেল ল্যাঙডনও, ক্যামারলেনগো, আপনাকে এখানেই রেখে দিতে হবে এন্টিম্যাটারটাকে। আর কোন উপায় নেই।
এখন বাইরের মানুষকে বাঁচাতে হলে এন্টিম্যাটারটাকে ভিতরেই বিদ্ধস্ত করতে হবে। ধ্বংস করতে হবে পৃথিবীর সবচে ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠানকে।
চার্চ বাচবে, নয়ত মানুষ।
ভিতরে কোথাও ন্যাক্রোপোলিস আছে। সেন্ট পিটার সহ প্রাচীণকালের অনেক অকে খ্রিস্টানের কবর।
হঠাৎ করে থেমে গেল ক্যামারলেগো। তার সাথে সাথে আমল বাকিরাও।
বুট আয়রনের একটা দরজা আছে সেখানে। খুলল বিনা দ্বিধায় ক্যামারলেনগো।
পিছনে এগিয়ে আসছে সবাই। ভীতি তাদের মনোভাবে।
বিবিসির ক্যামেরার আলোয় আরো ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে সবাইকে। বিশেষ করে খ্রিক প্রতি পদক্ষেপে আরো আরো মিইয়ে পড়ছে।
খপ করে লাঙডনের হাত ধরল চার্ট্রান্ড। ক্যামারলেনগোকে যেতে দিন!
না! চিৎকার করে উঠল ভিট্টোরিয়া, আমাদের এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে হবে। এখান থেকে প্রতিবটা বের করে নিতে পারি না। সুদি তা করি, বাইরের সবাই মারা পড়বে।
শুনুন সবাই… আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। হাতে সময় খুব কম।
কছেন না আপনি,বলছে ভিট্টোরিয়া, নিচে, এখানে বিফোরুণ হলে যতটা ক্ষতি হবে অরচে হাজার গুণ বেশি হবে উপরে।
চোখ তুলেতাকাল ক্যামারলেনগো, তার সবুজ চোখে সেই আগের দীপ্তি, কে কাল যে গাউন্ড লেভেলে বিস্ফোরণ হবে।
তাকিয়ে থাকল ভিট্টোরিয়া, আপনি এটাকে এখানে ফেলে যাবেন?
আজ রাতে আর কোন প্রাণ যাবে না।
ফাদার, কিন্তু–
প্লিজ… একটু বিশাস! আমার সাথে যোগ দিতে বলব না কাউকে। আপনারা সবাই চলে যেতে পারেন। আমি শুধু একটা কথা বলব, তার উপরে যেন কোন কথা
তোলেন আপনারা। তাই করতে দিন আমাকে, যেজন্য প্রেরিত হয়েছি। আমাকে এ চার্চ রক্ষা করতে হবে। আর আমি তাই করব, বিশ্বাস করুন।
বজ্রাহতের মত কাল তার কথাগুলো।
১২০.
এগারোটা একান্ন।
ন্যাক্রোপোলিস শব্দটার মানে মৃতদের নগরী।
একটা ছোট গুহার ভিতরে খুপরি থাকলে ব্যাপারটা যেমন দেখায়, তেমনি দেখতে। সরু পায়চলা পথ। বিছানো আছে কিছু জিনিস, তার বেশিরভাগই মার্বেলের মোড়ক দেয় ভাঙা ইট। আকাশের গায়ে পৌঁছে গেছে অনেকগুলো পিলার।
সিটি অব ডেড, আমি কি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম। যেতে যেতে বল ল্যাঙডন।
ক্যামারলেনগোর জাদুতে পড়ে গেছে চার্লাভ। ভিট্টোরিয়াও তেমন ভীত নয়। ভয় কাছে ল্যাঙডনের। কাবু হয়ে গেছে ঠিক। ম্যাক্রির চোখেমুখে ভয়ের লেশমাত্র নেই।
একটা কথা ভাবছে এবার ল্যাওডন। তাকাল সে অন্যদের দিকেও। তারাও কি ই ভাবছে
ভ্যাটিকান সিটি থেকে বেরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে যাবার জন্য ন মিনিট কোন সময় নয়!
ভ্যাটিকানের স্কলাররা মাঝে মাঝে দাবি করত, ভ্যাটিকানের পাহাড়টা এখনো আছে। আর সেটার ঠিক চূড়ায় অবস্থিত সেন্ট পিটারের কবরখানা।
কীভাবে জানত তার?
জানত। এখন জানতে পারছে ল্যাঙডনও।
প্রথমে একটা ছোট ক্রুশ বিদ্ধ করে মারা হয়েছিল তাকে। তারপর একেবারে সাধারণ কবর দেয়া হয়। পরে গড়ে ওঠে সমাধি। সময় যায়। সেখানে আরো পরত পড়ে। গড়ে ওঠে মাইকেলেঞ্জেলোর গম্বুজ। সেটার ঠিক নিচে, এক ইঞ্চিও এদিক সেদিকে নয়, শুয়ে আছেন সেন্ট পিটার।
সাবধান! বলল গ্লিক, নিচে সাপের গর্ত আছে।
তাকাল ল্যাঙডন, সারি সারি ছোট গর্ত। লাফ দিল ল্যাঙডন। পায়ের শব্দের কম্পনে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা সাপগুলোকে।
লাফ দিল ভিট্টোরিয়াও, আতঙ্কে। সাপের গর্ত?
স্ন্যাক হোল, স্নেক হোল নয়। বলল ল্যাঙডন অবশেষে। মনে পড়েছে তার।
আগেরদিনের খ্রিস্টানরা মনে করত তাদের মৃত প্রিয়জন আবার জীবিত হবে ভিতরে। তখন যেন খাবার কোন সমস্যা না হয় সেজন্য দুধ আর মধু ঢালার পথ খোেলা রেখেছিল।
দুর্বল লাগছে ক্যামারলেনগোর।
অনেকটা অবসন্ন লাগছে। না, বেশি সময় হাতে নেই। সামনেই মূল্যবান মুহূর্ত।
আমি আপনাদের চার্চ রক্ষা করব, বিশ্বাস করুন।
বিবিসির আলো থাকা সত্বেও মাথার উপর বাতিটা তুলল ক্যামারলেনগো। আর তারপরই মনে হল, তেল পড়ে ঝলসে যেতে পারে শরীর। এক সন্ধ্যায় দুবার এই যন্ত্রণা সহ্য করার কোন মানে হয় না।
সামনে এগিয়ে গেল তারা। দেখতে পেল মাটির দেয়াল। সেখানেই একটা লেখা দেখা গেল।
মৌসোলিয়াম এস
লা দুম্বা ডি সেন পিয়েত্রো।
থামল কামারলেনগে। হাঁটু গেড়ে বসল। প্রার্থনায়।
ধন্যবাদ, ঈশ্বর, কাজটা শেষ প্রায়।
মর্টাটি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর সব কার্ডিনালের সাথে। তাকিয়ে আছে টিভি স্ক্রিনের দিকে। তারা যা শুনেছে তাই কি শুনতে পেয়েছে পুরো দুনিয়া? সত্যি সত্যি
ক্যামারলেনগো তাই শুনেছে ঈশ্বরের কাছ থেকে?
তাকাল তারা সবাই। তাকাল ক্যামারলেনগোর দিকে। সে প্রার্থনায় রত। প্রার্থনা করছে খ্রিস্টবাদের সবচে গোপনীয় এক এলাকায়।
জীবনে একবার মাটি গেছে সেখানে। তবু, চিনতে ভুল হল না।
স্যান পিয়েত্রো!
চারপাশে যে শব্দ উঠছে, উঠছে যে রোল, সেটা আর কিছুর নয়। খ্রিস্টবাদের সবচে গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থান দেখতে পেয়েছে জনতা। দেখতে পেয়েছে সারা পৃথিবী।
টম্বের উপরে একটা জিনিস আছে।
এন্টিম্যাটার ক্যানিস্টার! এটা সেখানে লুকানো ক্যামারলেনগোর কথাই সত্যি।
আর পাঁচ মিনিট। সারা দুনিয়া দেখছে, কমে আসছে লেডের সময়। ফুরিয়ে আসছে ভ্যাটিকানের প্রাণ। একটা বিন্দু ঝুলছে ক্যানিস্টারের ভিতরে।
সুইস গার্ডের ক্যামেরাটাও আছে সেখানে।
ক্রস করল মাটি নিজেকে।
তাকাল ক্যামারলেনগো সবার দিকে, ক্যামারলেনগোর হাতে ক্যানিস্টার। নেমে আসতে শুরু করুল তারা ভ্যাটিকান হিল থেকে।
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ভিট্টোরিয়ার চেহারা, কোথায় যাচ্ছেন আপনি ক্যামারলেনগো? আপনি না বললেন
বিশ্বাস রাখুন। দৌড়াতে দৌড়াতে বলল ক্যামারলেনগো।
ল্যাঙডনের দিকে তাকাল ভিট্টোরিয়া, কী করব আমরা?
থামানোর চেষ্টা করেও পারল না তারা কিছু করতে।
এখন বিবিসির ক্যামেরা যেন কোন রোলার কোস্টারে চড়ে গেল। হেলছে, দুলছে।
চিৎকার করল ম্যাক্রি। কোথায় যাচ্ছে লোকটা?
আজ রাতে আর কোন প্রাণ যাবে না!
কী ভুল ছিল কথাটায়!