কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ূনের শোচনীয় পরাজয় হলো। চৌসার যুদ্ধে তিনি যেসব ভুল করেছিলেন এই যুদ্ধেও সেইসব ভুল করলেন। কামানচির দল কামানের একটি গোলাও ছুঁড়তে পারল না।
হুমায়ূনের ছত্রভঙ্গ বাহিনীর একটা বড় অংশ গঙ্গার পানিতে ড়ুবে মরল। যারা বেঁচে রইল তাদের তাড়া করল শের শাহ’র বড় পুত্র জালাল খাঁ।
চৌসার যুদ্ধে হুমায়ূন গঙ্গার পানিতে পড়েছিলেন। এবারও তাই হলো। তিনি হাতি নিয়ে গঙ্গায় পড়লেন। হাতি তাঁকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। শের শাহ’র তীরন্দাজ বাহিনী ধনুক উঁচিয়ে আছে। ইচ্ছা করলেই তীর ছুড়ে তারা সম্রাটকে মারতে পারে। তারা এই কাজটি করছে না। কারণ শের শাহ’র কঠিন নির্দেশ-হুমায়ূনকে হত্যা বা আহত করা যাবে না। তাকে বন্দি করাও যাবে না। তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
জালাল খাঁ পরাজিত সৈন্যদের ধাওয়া করে দিল্লী পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। পনেরই জুলাই ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে শের শাহ দিল্লীর সিংহাসন দখল করে বসলেন।
ওই দিন প্রবল বর্ষণ হলো। দীর্ঘদিন দাবাদাহে অতিষ্ঠ দিল্লীবাসীদের আনন্দের সীমা রইল না। তারা বৃষ্টিতে ভেজার জন্যে পথে নেমে পড়ল। তারা লক্ষ্য করল, অতি সাধারণ চেহারার এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে দিল্লীর পথে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে। এই ব্যক্তি দিল্লীর সিংহাসন দখল করে নিয়েছে। জনতার কেউ তা বুঝতে পারল না।
হুমায়ূন লাহোর থেকে শের শাহকে একটি কবিতা লিখে পাঠালেন। কবিতাটি হলো–
দর আইনা গরচে খুদ নুমাই বাশদ
পৈবস্তা জ খেশতান জুদাই বাশদ।
খুদ রা বা মিশলে গোর দীদন অজব অস্ত;
ঈ বুলি অজবো কারে খুদাই বাশদ। (গুলবদন, হুমায়ূননামা।)
[যদিও আয়নায় নিজ চেহারা দেখা যায় তারপরেও তা আলাদা থাকে। নিজেকে অন্যরূপে দেখা বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার। এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ।]
শের শাহ চিঠির জবাবে লিখলেন, আমি মূর্খ বিশেষ। আপনার কবিতার অর্থ বোঝা আমার জ্ঞানের অতীত। আমি লাহোর দখল করতে রওনা হব। আপনার জন্যে লাহোর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মঙ্গল হবে।