১২. একটা দল চাই
ট্রেনিং ক্লাসে ভর্তি হয়ে অনেক সহজে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা অর্জন করা, বাড়ানো, উন্নত করা এবং কাজে লাগানো শেখা যায়। এই বই পড়েও শিখতে পারবেন আপনি, কিন্তু, বই পড়ে শিখতে স্বভাবতই একটু বেশি কষ্ট স্বীকার করতে হবে। ধীরে-সুস্থে শিখুন, কিন্তু মাঝখানে বিরতি দেবেন না, কেননা ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে যতোটুকু শিখেছেন। তার ধার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা দীর্ঘ কাল চর্চা করে আয়ত্ত করার বিষয়, কাজেই প্রথম দিকে কোনো ফল না পেলেও নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন না। কাজ হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে চর্চা করতে থাকুন।
এ পর্যন্ত যে সব অনুশীলন দেয়া হয়েছে তা মূলত আপনার একার চর্চা করার জন্যে। এক কি দু’মাস পর, যখন আপনি দক্ষ হয়ে উঠবেন, কেস নিয়ে কাজ করার জন্যে যোগ্যতা এসে যাবে আপনার। কেস বা সাবজেক্ট নিয়ে কিভাবে কাজ করতে হয়, এর আগের পরিচ্ছেদে বিশদ ভাবে জানানো হয়েছে। ওই পর্যায়ে পৌঁছে, অন্যান্যদের সাহায্য দরকার হবে আপনার। কিন্তু সাহায্য নেবার আগে অনেকগুলো দিক বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে।
এমনকি এই বইয়ের প্রথম অনুশীলন চর্চা শুরু করার আগেই যোগ্য জনা কয়েক বন্ধুকে নিয়ে একটা দল তৈরি করতে পারলে ভালো হয়, যারা আপনার মতোই অনুশীলনগুলো চর্চা করা শিখবে। চর্চার কাজ এগিয়ে চলবে, সেই সাথে যোগাযোগও থাকবে আপনাদের মধ্যে, তারপর সবাই যখন তৈরি হবেন, যখন সত্যি সত্যি সবগুলো অনুশীলনে দক্ষতা এসে যাবে আপনাদের, শুধু তখনই কেস নিয়ে কাজ করার জন্যে জড়ো হবেন এক জায়গায়।
প্রথম অধিবেশনের জন্যে অন্তত পক্ষে একটা পুরো দিন বরাদ্দ করুন।
চারটে কিংবা আরো বেশি ফাইল কার্ড আনতে হবে প্রত্যেককে। প্রতিটি কার্ডের এক দিকে লেখা থাকবে গুরুতর অসুস্থ কোনো লোকের নাম, বয়স, ঠিকানা ইত্যাদি, আরেক দিকে লেখা থাকবে অসুস্থতার বিবরণ। খুঁটিনাটি সহ সব কিছু লিখুন, মিলিয়ে দেখার সময় ওগুলো কাজে লাগবে।
শুরু করবেন ধাতুর ভেতর নিজেকে মানসিকভাবে প্রবেশ করাবার মধ্যে দিয়ে। সাধারণত ধাতব সিলিণ্ডার বা কিউব ব্যবহার করা হয়। রূপো অথবা তামার তৈরি কোনো জিনিস হলেও চলে, তা নয়তো এক টুকরো সোনার পাত সংগ্রহ করুন। সোনার পাতের চেয়ে আঙটি যোগাড় করা সহজ, তাই করুন। আর লোহার জন্যে যোগাড় করুন। এক টুকরো চুম্বক। এগুলো প্রত্যেকটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে নেবেন। আগে, তারপর তিন–এক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে চলে যাবেন নিজের লেভেলে। লেভেলে চলে গিয়ে একেকবারে একটা করে জিনিস কল্পনা করুন, নিজের কয়েক ফিট সামনে ওটার ছবি দেখুন, সোজাসুজি সামনের দিকে তাকালে যেখানে দৃষ্টি পড়ে তার চেয়ে একটু ওপরে দেখুন ওটাকে। কল্পনার সাহায্যে জিনিসটাকে আকারে বড় করতে থাকুন, যতোক্ষণ না ওটা প্রায় কামরার আকার পায়। এরপর ওটার ভেতর ঢুকে পরীক্ষা শুরু করুন।
এই একই পদ্ধতিতে কাজ করুন তরি-তরকারি, ফলমূল এবং সবশেষে একটা পোষা প্রাণীর ওপর। হয়তো দেখা যাবে একটা জিনিস পরীক্ষা করে যে ধরনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি হলো অন্য একটা জিনিস পরীক্ষা করে সম্পূর্ণ নতুন আরেক ধরনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি হলো, দুটোর মধ্যে কোনো মিলই নেই। এটা আপনাদের সবার বেলাই ঘটতে পারে। যদি ঘটে, ব্যাপারটাকে আপনারা সাফল্য বলেই বিবেচনা করতে পারেন। প্রতিটি টেস্টের ফলাফল পরিষ্কার এবং বিশদ হবার দরকার নেই, দরকার হলো একটা জিনিসের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা অন্যান্য জিনিসের অভিজ্ঞতা থেকে আলাদা হওয়া। আপনার অভিজ্ঞতার সাথে আরেকজনের অভিজ্ঞতা হয়তো একেবারেই মিলবে না। এসবে কিছু এসে যায় না, আসল কথা হলো, কি কি আপনি খুঁজে পেলেন। ওগুলোই আপনার রেফারেন্স পয়েন্ট।
আগের পরিচ্ছেদে বর্ণনা করা পদ্ধতির সাহায্যে আপনারা প্রত্যেকেই পরামর্শ দাতাদের ডেকে আনতে সফল হতে পারেন। যদি হন, খুব ভালো কথা। কিন্তু এ-কথা ঠিক যে ওদেরকে ছাড়াও আপনার কাজ চলবে, আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন–একটু হয়তো আস্তে –ধীরে, এই যা।
কেস নিয়ে কাজ করার সময় দু’জন করে জোট বাঁধুন। কেস পরিবেশন করার সময় ওরিয়েন্টোলজিস্ট সাইকিক অপারেটরকে কি বলবে, আগের পরিচ্ছেদে তা দেয়া হয়েছে।
বলেছিলাম, শুরু করার আগে অনেকগুলো দিক বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। সেগুলো কি কি, নিচে দেয়া হলো।
১। শান্ত নিরিবিলি একটা জায়গা বেছে নিন, যেখানে কেউ আপনাদেরকে বাধা। দেবে না বা বিরক্ত করবে না।
২। ভালো করে জেনে নিন, দলের সবাই এই বইয়ের সব ক’ টা অনুশীলন চর্চা করেছে কিনা, যথাযথ নিয়ম মোতাবেক, এবং সাফল্যের সাথে।
৩। আলোচনা করে আগেভাগেই একমত হয়ে নিন যে রেজাল্ট খারাপ ভালো যাই হোক না কেন, কেউ নিজের সাফল্য নিয়ে গর্ব কেউ কারো সাফল্য দেখে ঈর্ষা করতে পারবে না। দলের একজন সম্ভবত আর সবার চেয়ে দর্শনীয় সাফল্য অর্জন করবে –প্রথম দিকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে-ই সবার চেয়ে ভালো বা তারই অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সবার চেয়ে বেশি। আসল ব্যাপার, প্রথমবারে সে ভালো করেছে। দ্বিতীয়বার, তারপর তৃতীয়বারও সে ভালো করবে, এমন নাও হতে পারে। সাধারণত দেখা যায়, অনেকেই পাঁচ কিংবা ছয়বারের আগে রেজাল্ট ভালো করতে পারে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যে সবচেয়ে ধীরগতি, পরে দেখা যায় সে-ই সবচেয়ে বেশি সাইকিক পাওয়ারের অধিকারী হতে পারে।
৪। আপনি নিজে যখন সাইকিক অপারেটরের ভূমিকায় থাকছেন, মনের সমস্ত সন্দেহ আর সংশয় একপাশে সরিয়ে রেখে সোজা ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আপনার কল্পনার লাগাম ছেড়ে দিন, মনকে অনুমতি দিন যা খুশি তাই অনুমান করার। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, অতীন্দ্রিয় জগতে বিচরণের সময় যাই পান, যাই দেখেন, যাই করেন, কোনো কিছুকেই যুক্তি দিয়ে বিচার করতে যাবেন না। কার্যকারণ খোঁজার কোনো দরকার নেই। দূর, এ সম্ভব নয়। এ ধরনের কথা যেন ভুলেও মুখ থেকে না বেরোয়। প্রথম যে চিন্তা বা অনুমান মাথায় আসবে সেটাকেই সত্যি এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মেনে নেবেন, দ্বিতীয় চিন্তাটাকে পাত্তা দেবেন না। কারণ দেখা গেছে, প্রথম চিন্তাটাই বেশিরভাগ সময় সঠিক হয়।
মুখ চালু রাখুন। নিচে থেকে ওপর পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করুন শরীরটা। যা দেখতে পান, গড় গড় করে সব বলে যান।
৫। আপনি যখন ওরিয়েন্টোলজিস্টের ভূমিকায় থাকবেন, সাইকিককে কোনো ইঙ্গিত বা আভাস দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন না। আপনি চান আপনার সাইকিক অপারেটর সফল হোক। আবার বুকে ফিরে যাও। ভালো করে দেখো, ওখানে কোনো ত্রুটি নেই তো? –এই ধরনের কথা বললে তাকে সাহায্য করা হবে না।
সাইকিককে কখনো বলবেন না যে তোমার ভুল হচ্ছে বা তুমি ভুল করছে। একেবারে শুরুর দিকে, যখন ভুরি ভুরি ভুল-ভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা থাকে, প্রায়ই একটা ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তা হলো, যাকে নিয়ে কাজ করার কথা তাকে না নিয়ে ভুল করে অন্য কাউকে নিয়ে কাজ শুরু করে দেয় সাইকিক। এ-ধরনের ভুল খুব স্বাভাবিক, এবং এটা বড় ধরনের ভুলও নয়, একটু চর্চা করলেই এর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। উৎসাহ না দিয়ে ওরিয়েন্টোলজিষ্ট যদি উল্টোটা করে, কাজের অগ্রগতি থেমে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। সাইকিক ভুল করলে তাকে শুধু বলুন, ‘এ-ব্যাপারে আমার কাছে তথ্য নেই।
৬। সবাই যখন কেস নিয়ে কাজ করে নিয়মিত সফল হতে শুরু করেন, দলটাকে ভেঙে যেতে না দিয়ে এক রাখতে চেষ্টা করুন। গোটা দল নিয়ে ঘন ঘন সভা করা দরকার। কেস নিয়ে একসাথে কাজ করা দরকার। এভাবে কাজ করতে করতেই একদিন আপনি একটা কেস নিয়ে একা কাজ করার যোগ্য হয়ে উঠবেন। হয়ে উঠবেন। প্রচণ্ড অনুভূতিপ্রবণ, এবং তখন শুধু গুরুতর অসুস্থতার খবরই নয়, দৈনন্দিন জীবনের অনেক সূক্ষ্ম খবরও অনায়াসে পেতে শুরু করবেন।
৭। উপস্থিত কাউকে কেস হিসেবে গ্রহণ করবেন না। এটা করা আর দূরের কাউকে নিয়ে কাজ করার মধ্যে আইনগত পার্থক্য আছে। প্রথমটাকে বলা যায় প্রত্যক্ষভাবে রোগ নির্ণয়, যা কিনা আইনত শুধু পাস করা ডাক্তারদেরই করার অধিকার রয়েছে। দ্বিতীয়টাকে বলা যায়, সাইকিক ডিটেকশন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা ব্যবহার করে, দূর থেকে ভালো-মন্দ লক্ষ্য করা। এটা করায় আইনগত কোনো বাধা নেই।
৮। যাকে নিয়ে কাজ করছেন, তার শরীরে কোথাও কোনো অস্বাভাবিক কিছু যদি দেখেন, দুঃসংবাদটা তাকে দেবার জন্যে ছুটবেন না। দায়িত্বটা আপনার নয়, তার ডাক্তারের। আপনার দায়িত্ব হলো নিজের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়া, যাতে লোকটাকে এবং অন্যান্যদের এই পন্থায় এবং আইনসঙ্গতভাবে সাহায্য করতে পারেন। আপনার মনের চোখে যে-সব ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়বে সেগুলো আপনি নিজের মন দিয়েই সারাবার চেষ্টা করবেন।