আওরংজীবের রাজত্বের হিন্দু ঐতিহাসিক
সম্রাট আওরংজীবের রাজত্বকালে (১৬৫৭ খ্রি.-১৭৭০ খ্রি.) ঠিক সেই সময়ে হিন্দুদের লেখা, দুইখানি ফার্সী ইতিহাস পাওয়া গিয়াছে। ইতিহাস হিসাবে গ্রন্থদুখানি বহুমূল্যবান। একখানির নাম নুস্থা-ই-দিশা, অপরখানির নাম ফতুহাৎ-ই-আলমগিরি। প্রথম খানির লেখকের নাম ভীম সেন। ইনি জাতিতে সাক্সেনা শ্ৰেণীস্থ কায়স্থ; জন্মস্থান বুরহানপুর। দ্বিতীয় খানির রচয়িতা ঈশ্বরদাস ঈশ্বরদাসের পুঁথির একটি মাত্র প্রতিলিপি (কপি) এ পর্যন্ত পাওয়া গিয়াছে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ফার্সী হস্তলিখিত পুঁথির তালিকার অতিরিক্ত সংখ্যক ২৩,৮৮৪ পুঁথি এইখানি। প্রতি পৃষ্ঠায় ১১টি করিয়া লাইন আছে; ৩২৯ পৃষ্ঠায় গ্রন্থ সমাপ্ত। রইদুখানি ঐতিহাসিকের চক্ষে এইজন্য মহামূল্যবান যে, গ্রন্থকারদ্বয় সম্রাট দরবারের কোনও মোসাহেব ছিলেন না, অথচ সেই সময়কার বড় বড় রাজকর্মচারীদের সঙ্গে পরিচয় থাকায় অনেক ঘটনার সঠিক সংবাদ পাইতেন।
ঈশ্বরদাস জাতিতে নাগর ব্রাহ্মণ, সুবা গুজরাটের পট্টন (অর্থাৎ বিখ্যাত প্রাচীন হিন্দু রাজধানী অহিওয়ারা পট্টন) নগরের অধিবাসী। এই নগর বর্তমানে গায়কোয়ারের রাজত্বে। যৌবনকাল হইতে ৩০শ বৎসর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখ-উল্-ইস্লামের অধীনে চাকরী করিতেন। সেখ-উল্-ইস্লাম ছিলেন সাম্রাজ্যের সর্বপ্রধান কাজী। সৰ্ব্বদা তিনি সম্রাট আওরংজীবের সঙ্গে সঙ্গে থাকিতেন। ঈশ্বরদাসকেও প্রভুর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিতে হইত। এইরূপে বড় বড় রাজকর্মচারীদের এবং তাদের অনুচরদিগের নিকট হইতে তিনি সঠিক খবর পাইতেন; আওরংজীবের রাজত্বের সরকারী ইতিহাস মাসির্-ই-আলমগীরি হইতে জানা যায় যে, সেখ-উল্-ইস্লাম তাঁহার পিতা আব্দুল ওহাব এর মৃত্যুর পর পিতার সর্বপ্রধান কাজীত্ব প্রাপ্ত হন। ইনি ১৬৭৫ খ্রি. ডিসেম্বর মাস হইতে ১৬৮৩ খ্রি. নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই সর্ব্বপ্রধান কাজীর আসন অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন। তিনি কাজীত্ব স্বইচ্ছায় ত্যাগ করেন, কারণ সম্রাট তাঁহার নিষেধ না শুনিয়া স্বধৰ্ম্মী বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার মুসলমান সুলতানের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন। কোর-আনের মতে মুসলমানের সহিত মুসলমানের যুদ্ধ করা পাপ। ১৬৮৪ খ্রি. ডিসেম্বর মাসে সেখ্ মক্কায় হজ্ করিতে যান। এইসময় ঈশ্বরদাস সেখের কাজ ছাড়িয়া গুজরাটের শাসনকর্তা শুজায়েত খাঁর (শাসনকাল ১৬৮৪ খ্রি.-১৭০১ খ্রি.) অধীনে চাকরী লন। ঈশ্বরদাসের বয়স তখন ৩০ বৎসর। সুতরাং, তিনি ১৬৫৫ খ্রি. জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ১৭৩১ খ্রি. তিনি বই লেখা শেষ করেন; তখন তাঁহার বয়স ৭৬ বৎসর। খাফি খাঁর সুবিখ্যাত মুঘল রাজত্বের ইতিহাস ইহার চারি বৎসর পরে সমাপ্ত হয়।
শুজায়েৎ খাঁ ঈশ্বরদাসকে যোধপুর পরগণার কতকগুলি মহলের আমীন ও শিকদার নিযুক্ত করেন। ১৬৭৮ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে যশোবন্ত সিংহের মৃত্যুর পর আওরংজীব এই যোধপুর পরগণা অধিকার করেন। এই কাজের জন্য ঈশ্বরদাসকে রাঠোরদের সহিত বিশেষভাবে সংসৃষ্ট হইতে হইল; ফলে তাহাদের বন্ধুত্বও বেশ জমিয়া উঠিল। এই কাজের পুরস্কার স্বরূপ অবশেষে তিনি মনসবদারের পদে উন্নীত হইবার সুযোগ পান।
আওরংজীবের চতুর্থ পুত্র মুহম্মদ আকবর ১৬৮১ খ্রি. পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হন। কিন্তু পরাজিত হইয়া প্রথম তিনি মারাঠাদের আশ্রয় লন, অবশেষে পারস্যে পলায়ন করেন। পলায়নকালে শিশুপুত্র বুলন্দ আর ও কন্যা সফিয়ৎ-উন্-নিসাকে রাজপুতদের হস্তে ফেলিয়া যাইতে বাধ্য হন। রাঠোর দুর্গাদাস গোপনে ইহাদের মানুষ করিয়া তোলেন। দুর্গাদাস ছিলেন যশোবন্ত সিংহের পুত্র নাবালক অজিত সিংহের অভিভাবক ও রক্ষক। বংশের সম্মান রক্ষার জন্য আওরংজীব পৌত্র ও পৌত্রীর উদ্ধারে একান্ত উদ্বিগ্ন ও সর্ব্ববিধ চেষ্টা করিতে ব্যগ্র হইয়া পড়েন। দুর্গাদাসও এই সময় মুঘলদের সহিত যুদ্ধে শান্ত ও বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। উভয় পক্ষ যখন এই অবস্থায় তখন একটা মিটমাট সহজ হইল। ইহার বিবরণ দিতে গিয়া ঈশ্বরদাস বলিতেছেন-
“দুর্গাদাসের কষ্টের দিন শেষ হইয়া আসিয়াছিল। ১৬৯৮ খ্রি. দুর্গাদাস গ্রন্থকারকে লিখিয়া পাঠান যে,… সম্রাটের কাছে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনার দরখাস্তের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শুজায়েৎ খাঁ যদি তাঁকে নিরাপদে যাইতে দেন এবং তাঁর বাড়ীঘর নষ্ট করিবেন না বলিয়া প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তিনি সফিয়ৎ-উন্ নিসাকে সম্রাট দরবারে পাঠাইয়া দিবেন। দুর্গাদাসের এই প্রস্তাবে সম্রাট তৎক্ষণাৎ রাজী হইলেন। সম্রাটের নিকট হইতে উত্তর আসামাত্র খাঁ সাহেব ঈশ্বরদাসকে দুর্গাদাসের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। দুর্গাদাস এইসময় একটি দুরধিগম্য স্থানে বাস করিতেন। ঈশ্বরদাস অতিকষ্টে সেখানে উপস্থিত হইয়া দুর্গাদাসকে অনেক উপদেশ দিয়া বুঝাইলেন যাহাতে তাঁহার মতের আর কোনও পরিবর্তন না হয়। তারপর গ্রন্থকার ফিরিয়া আসিয়া যানবাহনাদি সংগ্রহ করিয়া বেগমকে আনিতে গেলেন। বেগম দুর্গাদাসের ব্যবহারে অতিমাত্ৰ প্ৰীত ছিলেন। তিনি আসিবার সময় দুর্গাদাসকে তাঁর সঙ্গে যাইতে অনুরোধ করিলেন। সম্রাট সমীপে উপস্থিত হইয়া বেগম সম্রাটকে জানাইলেন যে দুর্গাদাস তাঁহাকে যথেষ্ট যত্ন করিয়াছেন; এমনকী আজমীর হইতে একজন মুসলমান শিক্ষয়িত্রী আনাইয়া তাঁহার ধর্ম্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করাইয়াছিলেন। তিনি কোর্-আন পড়িয়া ফেলিয়াছেন, এমন কি মুখস্থ পর্যন্ত হইয়া গিয়াছে। সম্রাট ইহাতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া দুর্গাদাসের সমস্ত পূর্ব্বাপরাধ ক্ষমা করিলেন। এবং বেগমকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দুর্গাদাস কি পাইলে সন্তুষ্ট হয়?” বেগম বলিলেন, “ঈশ্বরদাস তাহা জানে” শুজায়েৎ খাঁর বন্ধু কাজী আবদুল্লার উপর তখনই সম্রাট আদেশ দেন যে, আমাকে বাদশাহ দরবারে উপস্থিত হইতে হইবে। পরদিন আমাকে সম্রাট সমীপে লইয়া যাওয়া হইল। আমি দুর্গাদাসের মাসোহারার ও মনসবদারীর প্রার্থনা নিবেদন করিলাম। সম্রাট এই প্রার্থনা মঞ্জুর করিলেন এবং এই অধম ধূলিকণা (অর্থাৎ ঈশ্বরদাস) ও ২০০ শত অশ্বারোহীর পদ ও খিলাৎ পাইল। আমার উপর আরও হুকুম হইল যে, দুর্গাদাস ও বুলন্দ আস্তরকে সম্রাটসমীপে উপস্থিত করিতে হইবে। তাহার পর আমি আহমদাবাদে ফিরিলে শুজায়েৎ খাঁও আমাকে যথেষ্ট পুরষ্কৃত করিলেন।
দুর্গাদাসের সহিত অনেকবার দেখা করিয়া খাঁ সাহেবের অভয় দানের প্রতিশ্রুতি দিলাম। দুর্গাদাস জায়গীর প্রাপ্তির পরোয়াণা পাইয়া এবং পরোয়াণা অনুযায়ী মহালের দখল পাইয়া প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করিলেন ও আহমদাবাদে আমার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শাহাজাদা অর্থাৎ বুলন্দ আর ও দুর্গাদাসকে সঙ্গে করিয়া সুরাটে উপস্থিত হইলাম। সম্রাট প্রেরিত কয়েকজন কর্মচারী এখানে শাহাজাদার অপেক্ষা করিতেছিল। শাহাজাদাকে অভ্যর্থনা করিয়া লইতে এবং সম্রাট দরবারের আদব কায়দা শিখাইতে তাঁহারা আসিয়াছিলেন। কিন্তু শাহাজাদা জড়বুদ্ধি গণ্ডগ্রামবাসীর মত ব্যবহারে এ পর্যন্ত অভ্যস্ত ছিলেন। সম্রাট প্রেরিত হাকিমেরা ইহার কোনই প্রতিকার করিতে পারিলেন না।
দুর্গাদাস যখন দেওয়ান-ই-আমের বারান্দায় উপস্থিত হইলেন, সম্রাট তাঁহাকে অস্ত্রহীন করিয়া দরবারে আনিতে আদেশ দিলেন, যেমন বন্দী বা সন্দেহজনক ব্যক্তিকে করা হয়। দুর্গাদাস ক্ষণমাত্র দ্বিধা বা বিলম্ব না করিয়া তরবারি খুলিয়া ফেলিলেন। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া সম্রাট পুনরায় আদেশ দিলেন, আচ্ছা অস্ত্র লইয়াই দুর্গাদাসকে আসিতে দেওয়া হৌক।
শিবিরে প্রবেশ করিলে অর্থসচিব রুহল্লার খাঁকে দুর্গাদাসকে সম্রাট-সকাশে উপস্থিত করিতে বলা হইল। খাঁ সাহেব দুর্গাদাসের হাত রুমাল বাঁধিয়া সম্রাট সকাশে উপস্থিত করিলেন। তখন অপরাধীকে ঠিক যুদ্ধ-বন্দীর মত এইরূপ কৃত্রিম সাজে সম্রাটের কাছে ক্ষমা চাহিতে হইত। তৃতীয় এডওয়ার্ডের কাছেও পরাজিত ক্যালে (Calais) নগরের ফরাসী অধিবাসীবর্গের প্রতিনিধিদিগকে গলায় ফাঁস পরিয়া উপস্থিত হইতে হইয়াছিল। মুঘল দরবারে ইহা কেবল বাহ্যিক অভিনয় ছাড়া কিছুই ছিল না। এইরূপে সম্রাটকে মান্য দেখাইয়া সন্তুষ্ট করা হইত।
সম্রাট সন্তুষ্ট হইয়া দুর্গাদাসকে অস্ত্রে সজ্জিত করিতে আদেশ দিলেন এবং তাঁহাকে ৩০০০ হাজার সৈন্যের মনসবদার পদে উন্নীত করিলেন। একখানা রত্নখচিত ছোরা, একটী সোনার পদক, মুক্তার মালা উপহার দেওয়া হইল ও খাজাঞ্জীখানার উপর নগদ একলক্ষ টাকা দিতে হুকুম হইল ৷
গ্রন্থকারও বাদ গেলেন না। তিনিও যথেষ্ট পুরস্কৃত হইলেন। তাঁহার পদবৃদ্ধি করিয়া আরও ৫০শ জন অশ্বারোহীর নেতা করা হইল; এবং খিলাৎ ও মারবাড়ে আজমীড়ের পশ্চিমে জায়গীর দেওয়া হইল।
নিজ মন্ত্রণা-কৌশলের সাফল্যের জন্য ঈশ্বরদাস ২৫০ শত অশ্বারোহীর মনসবদারের পদ পাইলেন। ঈশ্বরদাসের নিজের সম্বন্ধের এই বিবৃতি অপর এক ফার্সী ইতিহাস (মিরাট-ই-আহমদী, ৩৫০-৩৫১ পৃ.) সমর্থন করিয়াছেন। ঈশ্বরদাস সম্বন্ধে আর বিশেষ কিছু জানা যায় না। পুঁথির শেষ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, তিনি ২১শে রবিউল-আৰ্ব্বলে মুহম্মদ সাহেব রাজত্বের দ্বাদশবর্ষে ১১৪৩ হিজরীতে (১৭০১ খ্রি.) বইখানি শেষ করেন। তিনি এই লিখিয়া শেষ করেন যে, “নাগর-জাতীয় ঈশ্বরদাস কর্তৃক তার স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ এবং লালা-খুশ-হালের জ্ঞাতার্থ এই বইখানি লিখিত হইল ৷” এই লালা-খুশ হাল কে?
দস্তুর-উল্ আলমশাহানশাহী নামক একখানি ফার্সী গ্রন্থে লালাসাহেব বলিয়া এক ব্যক্তির উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। এই লালাসাহেব ঈশ্বরদাসের পুত্র ব্রজরায়ের পুত্র। যদি লালাসাহেবই লালা-খুশ-হাল হন, তাহা হইলে মনে হয় যে, বৃদ্ধ বয়সে ঈশ্বরদাস পৌত্রের অনুরোধে আওরংজীবের সমসাময়িক স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। এই হস্তলিখিত পুঁথির সূচি এইরূপ:-
ঈশ্বর ও সম্রাটের বন্দনা।
গ্রন্থকারের নিজের চাকরীর খতিয়ান ও সমসাময়িক ইতিহাস সম্বন্ধে আলোচনা।
শাহাজাহানের অসুস্থতা ও শুজার প্রথম পরাজয়।
যশোবন্ত ও দারার পরাজয় ও সাজাহান বন্দী।
মুরাদ বন্দী এবং দারা ও শুজার পতন।
মীরজুমলাকে বাঙ্গলার সুবেদার নিযুক্ত করিয়া ফর্মান প্রদান।
শিবাজীর প্রথম কাৰ্য্যাবলী।
আওরংজীবের মন্দির ধ্বংস; মথুরার নিকট জাঠদের বিদ্রোহ; জাঞ্জিরার সিদ্দিদের সহিত শিবাজীর যুদ্ধ, জয়সিংহের নিকট শিবাজীর পরাজয়; শিবাজীর সম্রাটের সহিত সাক্ষাৎ ও পলায়ন।
দাক্ষিণাত্যের সুবেদার শাহাজাদা শাহআলমকে দিলির খাঁর অমান্য।
সালের দুর্গের নিকট শিবাজীর সহিত মুঘলদের যুদ্ধ।
সৎনামী জাতির বিদ্রোহ।
আফগানীস্থানে সম্রাট-সৈন্যের ধ্বংস।
যশোবন্ত সিংহের মৃত্যু; যশোবন্তের পুত্রকন্যার পলায়ন, জিজিয়া কর-স্থাপন; রাজপুতদের সহিত যুদ্ধ; আকবরের বিদ্রোহ।
রাঠোরদের সহিত যুদ্ধের বিবরণ।
বিজাপুরের বিরুদ্ধে যুবরাজ আজমের অভিযানে, এবং কঙ্কণে শাহ আলমের প্রবেশ।
গোলকুণ্ডা অধিকার।
শিরোঞ্জে পাহাড়সিং গৌড়ের বিদ্রোহ।
বিজাপুর অধিকার।
শাহাজাদা আকবর ও শম্ভুজীর কার্যাবলী।
শাহাজাদা শাহ আলম বন্দী।
রামসিজ ও সালের অধিকার। বুন্দেলখণ্ডে বিদ্রোহ।
দাক্ষিণাত্যে শৃঙ্খলাহীন যুদ্ধ।
আকবরের পারস্যে পলায়ন।
দুৰ্জ্জনসিংহ হাড়ার বিদ্রোহ ও রাজপুতনায় গণ্ডগোল।
আদুনী অধিকার।
ব্যাঙ্গালোর অধিকার।
আগ্রার নিকট রাজারাম জাঠের বিদ্রোহ।
গোয়ালিয়রের নিকট গোপাল সিংহ গৌড়ের বিদ্রোহ।
সনসানীতে চূড়ামন জাঠের বিদ্রোহ।
শান্তা খোরপাড়ী কর্তৃক রুস্তম খাঁ বন্দী।
রূপা ভোঁসলা কর্তৃক সিদ্দি আব্দুল কাদিরের শিবির লুট।
বিশ্বাসঘাতক সম্রাটের হাকিম কর্তৃক গাজী উদ্দীন খাঁ বাহাদুর ফিরোজজঙ্গের চক্ষু উৎপাটন। শম্ভুজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
শম্ভুজীর বন্দীত্ব ও মৃত্যুদণ্ড।
বহু মারাঠাদুর্গ অধিকার।
শম্ভুজীর ভ্রাতা রাজারামের পলায়ন।
আগ্রার নিকটে আঘর খাঁর হত্যা।
দুর্গাদাসের পরাভব; ঈশ্বরদাসের সম্রাট সাক্ষাৎ ও পুরস্কার প্রাপ্তি।
মুঘলদরবারের অন্যান্য ইতিহাসের মত ইহা সম্রাটের আদেশে কিংবা তাঁহার মুখ চাহিয়া রচিত হয় নাই, অনেক ঘটনা গ্রন্থকার স্বচক্ষে দেখিয়াছিলেন, এবং অন্যান্য ঘটনার সত্য বিবরণ জানিবার তাঁর যথেষ্ট সুযোগ ছিল, জাতিতেও তিনি মুসলমান ছিলেন না, এই সব কারণে ইতিহাসখানি পক্ষপাতদুষ্ট হয় নাই ও কোথাও সত্যের অপলাপ করিতে হয় নাই। সত্য রক্ষাই ঐতিহাসিকের কর্তব্য। গ্রন্থকার সত্য রক্ষা করিতে পারিয়াছেন বলিয়াই ঐতিহাসিকদের চক্ষে বইখানি মহামূল্যবান।
[প্রভাতী, শীত-সংখ্যা, ১৩২৮। ভারতী, ফাল্গুন ১৩২৮-তে পুনঃমুদ্রিত।]