১১-১৫. ভিকি টেলিফোনে প্রায় কেঁদে ফেলল

১১.

ভিকি টেলিফোনে প্রায় কেঁদে ফেলল। হ্যালো এতরা, হ্যালো।

শুনছি।

কই ওরা তো আমার অ্যানিকে ছাড়ছে না!

এত অস্থির হচ্ছ কেন?

অস্থির হব না, কী বলছ তুমি!

শোনো ভিকি, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে এখন। সমস্ত ব্যাপারটাই জট পাকিয়ে গেছে, বুঝতে পারছ না?

-আমি বুঝতে পারছি না।

ঠিক আছে, তুমি ক্যাফে ইনে চলে আস। টেলিফোনে সব বলা যায় না।

 অ্যানি বেঁচে আছে তো?

আরে তুমি বলছ কী এসব

ভিকি এবার গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল।

হ্যালো ভিকি, তুমি চলে আসো কাফে ইনে। আমি থাকব সেখানে। ভালো কথা, রুন কেমন আছে? সে নিশ্চয়ই খুব বিচলিত?

ওকে ট্রাংকুলাইজার দিয়ে রাখা হয়েছে।

ঠিক আছে, তুমি চলে এসো।

ক্যাফে ইন বেন্টিলা পোর্ট-লাগোয়া ছোট্ট একটি কফি শপ। সারাদিন কফি এবং পটেটো চিপস বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পর দু-তিন ঘণ্টার জন্যে ফ্রায়েড লবস্টার পাওয়া যায়। ভিড় হয় সন্ধ্যার পর। বসার জায়গা পাওয়া যায় না।

ভিকি এসে দেখল, এতরা একটা ছোট্ট কামরা রিজার্ভ করে তার জন্য বসে আছে। এতরার মুখ চিন্তাক্লিষ্ট। ভিকি এসে বসল, কিন্তু দীর্ঘ সময় কোনো কথা বলতে পারল না। এতরা বলল, কিছু খাবে হট সস দিয়ে লবস্টার চলবে? মেক্সিকান রেসিপি। চমৎকার!

ভিকি ঠাণ্ডা গলায় বলল, আমার মেয়ে কোথায়?

তুমি এমনভাবে জিজ্ঞেস করছ যাতে মনে হয় তোমার মেয়েকে আমি লুকিয়ে রেখেছি।

তুমি জান না সে কোথায় আছে?

আমি কী করে জানব?

 সে কোথায় আছে তার কিছুই জান না?

না। তবে তোমাকে বলেছি ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।

ভিকি ক্লান্তস্বরে বলল, আমি সমস্ত ব্যাপারটা পুলিশকে জানাতে চাই।

সেটা তোমার ইচ্ছা। একটা কথা আমার মনে হয় তুমি ভুলে যাচ্ছ, মূল পরিকল্পনাতে তুমিও আছ। পুলিশ তা ঠিক পছন্দ করবে না। এবং সবচেয়ে অপছন্দ করবে তোমার স্ত্রী রুন।

এতরা একটি সিগারেট ধরাল। আড়চোখে ভিকির দিকে তাকিয়ে বলল, ধরো এখন যদি তোমার মেয়ের কিছু হয় পুলিশ সবার আগে ধরবে তোমাকে।

আমার মেয়ের কিছু হয় মানে?

কথার কথা বলছি। কিছুই হবে না, মেয়ে ঘরে ফিরে আসবে। তুমি বৃথাই এতটা ভেঙে পড়ছ।

ভিকি চুপচাপ তাকিয়ে রইল।

এতরা বলল, মনে হচ্ছে মূল পরিকল্পনার একটু অদলবদল হয়েছে। ওদের তিনটা লোক মারা গেছে। বাছা-বাছা লোক। এটা তো মূল পরিকল্পনায় ছিল না। ওদের দিকটা তো তোমাকে দেখতে হবে। সমস্ত ব্যাপারটা জট পাকিয়ে গেছে।

ভিকির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।

জিনিসটা যে এরকম দাঁড়াবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। তোমার ঐ বেকুব বডিগার্ড যেভাবে গুলি ছুঁড়ছিল তাতে অ্যানির মারা পড়ার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভাগ্যক্রমে গুলি লাগেনি।

ভিকি উঠে দাঁড়াল।

কী ব্যাপার, যাচ্ছ নাকি?

হুঁ

বসো আরো খানিকক্ষণ।

না।

পুলিশের কাছে সব খুলে বলবে বলে ঠিক করেছ নাকি?

আমি কিছুই ঠিক করিনি।

ভিকি বাড়ি ফিরে গেল না। একা একা ঘুরে বেড়াল দীর্ঘ সময়। তারপর হঠাৎ কী মনে করে চলে গেল হাসপাতালে। অসময়ে তাকে হাসপাতালে ঢুকতে দেবার কথা নয়, কিন্তু আশ্চর্য, সে জামশেদের সঙ্গে দেখা করতে চায় শুনেই তাকে ঢুকবার পাশ দেয়া হল।

লবিতে যে-পুলিশ অফিসার বসে ছিল সে এগিয়ে এল, আপনি নিশ্চয়ই ভিকি?

হ্যাঁ।

জামশেদের সঙ্গে দেখা করবার জন্যে এসেছেন?

হ্যাঁ।

তার আগে কি আমি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?

আমি খুব ক্লান্ত। আমি কোনো আলোচনায় এই মুহূর্তে যেতে চাই না।

ঠিক আছে, ঠিক আছে। পরে কথা বলব। আমি অ্যানি অপহরণের তদন্তকারী দলের একজন সদস্য।

যান, আপনি ভেতরে চলে যান। জামশেদ সতেরো নম্বর কেবিনে আছে। ভালোই আছে।

ধন্যবাদ।

ভিকি মৃদুস্বরে বলল, এখন কি শরীর ভালো?

 জামশেদ মাথা নাড়ল। ভালো।

আমি আগেও একবার এসেছিলাম। তোমার তখন জ্ঞান ছিল না।

আমি জানি। আমি খবর পেয়েছি।

হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পাবে?

আরো সপ্তাহখানেক লাগবে।

তারপর কী করবে কিছু ঠিক করেছ?

ভিকি চুপচাপ হয়ে গেল।

জামশেদ তাকে নীরবে লক্ষ করতে লাগল। ভিকি একসময় বলল, তোমার এখানে সিগারেট খাওয়া যেতে পারে? কেউ কোনো আপত্তি করবে না তো?

নাহ।

ভিকি সিগারেট ধরাল। টানতে লাগল অপ্রকৃতিস্থর মত।

 জামশেদ বলল, তুমি মনে হচ্ছে এখনও কোনো খবর পাওনি।

কিসের খবর?

তুমি বাড়ি ফিরে যাও।

কী হয়েছে?

জামশেদ বলল, একটা খারাপ সংবাদ আছে তোমার জন্যে

অ্যানি কি মারা গেছে?

হ্যাঁ।

কখন খবর পাওয়া গেল?

আধ ঘণ্টা আগে।

ভিকি উঠে দাঁড়াল।

 জামশেদ বলল, অ্যানির ডেডবডি পাওয়া গেছে একটি গাড়ির লাগেজ কেবিনে।

ভিকি, আমি একটি কথা তোমাকে বলতে চাই।

বলো।

তোমার সঙ্গে কিছুদিন হয়তো আমার দেখা হবে না। আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শরীর সারাবার জন্যে অনেক দূরে কোথাও যাব। তারপর আবার ফিরে আসব।

ও।

ফিরে আসব প্রতিশোধ নেবার জন্যে। আবার আমাদের দেখা হবে।

ভিকির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। জামশেদ তাকিয়ে রইল। তার চোখ পাথরের চোখের মতো। সে-চোখে ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা এইজাতীয় অনভূতির কোনো ছায়া পড়ে না। সে মৃদুস্বরে দ্বিতীয়বার বলল, আমি আবার ফিরে আসব।

১২.

রাত প্রায় দুটোর দিকে এতরার শোবার ঘরের টেলিফোন বেজে উঠল। এত রাতে অকাজে কেউ ফোন করে না, নিশ্চয়ই জরুরি কিছু। এতরা বিছানা ছেড়ে উঠে এল। সে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। টেলিফোনের শব্দে জেগেছে।

হ্যালো, আমি এতরা, কাকে চান?

আপনাকেই চাই।

আপনি কে বলছেন?

ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল না। কিন্তু গলার আওয়াজ শুনে মনে হয় বিদেশী কেউ। ভাঙা-ভাঙা ইতালিয়ান বলছে।

হ্যালো, কে আপনি?

আমি কে সেটা জানা কি খুব প্রয়োজন তারচে বরং কীজন্যে টেলিফোন করেছি সেটা বলে ফেলি।

আমাকে কিছু বলতে হলে আগে আপনার পরিচয় দিতে হবে। রাতদুপুরে এভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায় না। কে আপনি?

ওপাশের লোকটি সে-প্রশ্নের জবাব দিল না। অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, বারো বছরের অ্যানি নামের কোনো মেয়েকে চেনেন?

আপনি কে?

বারো বছরের ঐ মেয়েটির খুব রহস্যময়ভাবে মৃত্যু হয়েছে।

কে আপনি?

আমি ঐ মেয়েটির একজন বন্ধু। আমার নাম জামশেদ। চিনতে পারছেন?

এতরা একবার ভাবল টেলিফোন নামিয়ে রাখে। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? লোকটি আবার টেলিফোন করবে।

রহস্যময় কিছু তো আমি জানি না। মেয়েটি মারা পড়েছে কিডন্যাপারদের হাতে। এবং আমি যতদূর জানি ওর মৃত্যুর জন্যে তুমি বহুলাংশে দায়ী। তুমি ছিলে মেয়েটার দেহরক্ষী। তুমি তাকে রক্ষা করতে পারনি। ঠিক না?

ঠিক।

আজ তার মৃত্যুর পর বন্ধু সেজেছ এবং রাতদুপুরে টেলিফোন করে আমাকে বিরক্ত করছ?

তা অবিশ্যি করছি। এবং করার একটি কারণ আছে।

কী কারণ?

কারণ হচ্ছে–আমার ধারণা মেয়েটির মৃত্যুর সঙ্গে তোমার যোগ আছে। হ্যালো, টেলিফোন রেখে দিচ্ছ নাকি?

না।

আমি তোমাকে এর জন্যে খানিকটা শাস্তি দিতে চাই।

তুমি কোত্থেকে টেলিফোন করছ?

কেন, পুলিশে খবর দিতে চাও? সেটা মনে হয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শোনো এতরা–।

এতরা টেলিফোন নামিয়ে রাখল। লোকটা নিশ্চয়ই আবার টেলিফোন করবে। পুলিশকে বলা দরকার যাতে পুলিশ কলটি কোত্থেকে করা হচ্ছে তা ধরতে পারে। পাবলিক বুথ থেকে করা হলে ধরা যাবে না। তবে জানা যাবে কলটি কোন এরিয়া থেকে আসছে।

এতরা নাম্বার ডায়াল করল তবে পুলিশের কাছে নয়। হাসপাতালে। সিটি হসপিটাল।

রিসিপশান, আমি একজন রুগি সম্পর্কে জানতে চাই। আমি খুবই উদ্বিগ্ন।

এক্ষুনি জেনে দিচ্ছি।

ওর নাম জামশেদ। বিদেশী।

বেড নাম্বার এবং কেবিন নাম্বার?

 সেটি ঠিক বলতে পারছি না।

ঠিক আছে, ধরে রাখুন। ডিউটি রেজিস্টার দেখে বলছি।

এতরা টেলিফোন কাঁধে নিয়েই নিজের জন্যে একটি মার্টিনি বানাল। ওদের নাম খুঁজে বের করতে সময় লাগবে।

হ্যালো!

বলুন শুনছি।

আপনি যে-রুগির কথা জানতে চেয়েছেন সে তো ডিসচার্জ নিয়ে চলে গেছে।

ও, তা-ই বুঝি? কবে?

আজ সকালেই।

ধন্যবাদ। যাবার সময় কোনো ফরওয়ার্ডিং অ্যাড্রেস রেখে গেছে কি? চিঠিপত্র এলে যাতে ঐ ঠিকানায় পাঠানো যায়?

না, এরকম কিছু নেই।

আচ্ছা, ঠিক আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।

এতরা টেলিফোন রেখে দিল। ব্যাপারটা ক্যানটারেলাকে জানানো উচিত। ক্যানটারেলা মাঝারি ধরনের বস। মাঝারি ধরনের হলেও তার যোগাযোগ ভালো।

বিশেষ করে কিছুদিন ধরেই ভিকামডিয়ার সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে। প্ৰথম দিকে এটাকে সবাই গুজব বলেই মনে করত কারণ ভিকানডিয়া মাঝারি ধরনের কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে না। কিন্তু এটা গুজব নয়–সত্যি।

এতরা ঘড়ি দেখল। দুটো ত্রিশ। রাত অনেক হয়েছে। তবু ক্যানটারেলাকে পাওয়া যাবে। রাত দুটো পর্যন্ত সে থাকে জুয়ার আড্ডায়। বাড়ি ফেরে তিনটায়, ঘুমুতে যায় চারটায়। ঘড়ি-ধরা কাজ। খানিক ইতস্তত করে টেলিফোন ডায়াল করল।

হ্যালো, কে?

আমি এতরা।

এতরা? এত রাতে কী ব্যাপার?

একটা সমস্যা হয়েছে আমার।

সমস্যা? কী সমস্যা?

 জামশেদ নামের ঐ লোকটি আমাকে টেলিফোনে ভয় দেখিয়েছে।

একটা মেয়েকে তুমি রেপ করে মেরে ফেলবে আর কেউ তোমাকে ভয়ও দেখাতে পারবে না?

এতরা শুকনো গলায় বলল, ব্যাপারটা সেরকম না।

সেরকম না মানে?

এটা একটা অ্যাকসিডেন্ট।

তা-ই বুঝি?

ক্যানটারেলা উচ্চস্বরে হাসল। মদ খেয়ে টং হয়ে আছে নিশ্চয়ই। এতরা নিচুস্বরে বলল, ভিকানডিয়া বলেছেন তিনি ব্যাপারটা সামলে দেবেন।

সামলানো তো হয়েছে। হয়নি? কোনো পুলিশ রিপোর্ট হয়নি। কেউ গ্রেফতার হয়নি। তোমার নাম পর্যন্ত কেউ জানে না। ঠিক কি না?

হুঁ

তা হলে চিন্তা করছ কেন?

ঐ টেলিফোনটার জন্যে চিন্তা করছি।

শোনো, এখন থেকে চলাফেরা করবার সময় বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করবে, ব্যস। দু-তিনজন লোক সাথে থাকলেই নিশ্চিন্ত।

আচ্ছা, তা-ই করব।

এতরা, একটা কথা।

বলুন।

বারো বছরের মেয়েটির সঙ্গে ঐ কর্ম করবার সময় তোমার কেমন লেগেছিল? অভিজ্ঞতাটা কি আনন্দদায়ক ছিল?

ক্যানটারেলা টেলিফোন ফাটিয়ে হাসতে লাগল যেন খুব একটা মজার কথা। এতরার ইচ্ছা করছিল টেলিফোন নামিয়ে রাখতে, কিন্তু তা করা যাবে না। এমন কিছুই করা যাবে না যা ক্যানটারেলাকে রাগিয়ে দিতে পারে।

হ্যালো, এতরা।

বলুন।

আমরা খারাপ লোক সবাই জানে। কিন্তু তুমি একটা নিম্নশ্রেণীর অপরাধী। কেঁচোজাতীয়। বুঝতে পারছ?

পারছি।

একজন অপরাধী অন্য অপরাধীকে বাঁচিয়ে রাখে। এইজন্যই তোমাকে প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে।

এইসব কথা কি টেলিফোনে বলা ঠিক হচ্ছে?

 কেন, পুলিশ শুনে ফেলবে? টেলিফোন কানে নিয়ে বসে থাকা পুলিশের কাজ নয়। আর তা ছাড়া পুলিশের বড়কর্তা এবং ছোটকর্তাকে কী পরিমাণ টাকা আমরা দিই সে সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে?

না।

না থাকাই ভালো।

ক্যানটারেলা টেলিফোন নামিয়ে রাখল খট করে। বাকি রাতটা এতরার কাটল না ঘুমিয়ে। পরপর চার গ্লাস রাম খেল এবং ভোরের দিকে বাথরুম বমি করে ভাসিয়ে দিল। দিনটি শুরু হচ্ছে খারাপভাবে।

.

মঙ্গলবার হচ্ছে এতরার মাদারস ডে। প্রতি মঙ্গলবার মায়ের কাছে তাকে ঘণ্টা তিনেক কাটাতে হয়। দুপুরের লাঞ্চ খেতে হয়। হাসিমুখে কথা বলতে হয়। এবং মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করতে হয় এর পরের রোববার থেকে সে নিয়মিত চার্চে যাবে।

এই মঙ্গলবারেও বুড়িকে দেখা গেল বাড়ির সামনে, বারান্দায় ছেলের জন্যে অপেক্ষা করছে। বুড়ির মুখ অত্যন্ত গম্ভীর।

এতরা, এত দেরি কেন আজকে?

বেশি দেরি তো নয় মা। আধঘন্টা।

আধঘন্টাও অনেক সময়। এগারোটার আগেই তোমার আসার কথা। এখন বাজে এগারোটা চল্লিশ।

মা, আমি খুব দুঃখিত। আর দেরি হবে না।

কফি বানিয়ে রেখেছিলাম। জুড়িয়ে পানি হয়ে গেছে বোধ করি। কফি খাব না মা। কেন? কফি খাবে না কেন? শরীর খারাপ নাকি? না, শরীর ঠিক নেই। কেমন শুকনো দেখাচ্ছে। দেখি, গায়ের টেম্পারেচার দেখি! এই তো জ্বরজ্বর মনে হচ্ছে।

জ্বর নয়। রোদের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে এসেছি তাই গা-গরম লাগছে।

এতরা, তুমি মিথ্যা কথা বলে আমিকে ভোলাতে চেষ্টা করছ। এটা ঠিক না। চাদর দিচ্ছি শুয়ে পড়ো।

মা, তুমি শুধুশুধু ব্যস্ত হচ্ছ!

আমি মোটেই শুধুশুধু ব্যস্ত হচ্ছি না। তোমাকে যা করতে বলছি, করো। আমাকে রাগিও না।

এতরাকে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়তে হল। বুড়ি বড় এক পেয়ালা কফি হাতে নিয়ে তার সামনে চেয়ার টেনে বসল।

তুমি চার্চে যাওয়া শুরু করেছ?

 এতরা জবাব দিল না!

এখনও শুরু করনি। ইদানীং তোমাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আমার মনে হয় তোমার চার্চে যাওয়া শুরু করা উচিত।

কী দুঃস্বপ্ন দেখেছ?

 দেখলাম তুমি রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছ। তোমার গায়ে কোনো কাপড় নেই। তোমাকে তাড়া করছে একজন মানুষ। ওর হাতে প্রকাণ্ড একটা ভোজালি।

যে তাড়া করছে সে কেমন লোক?

স্বপ্নের ভেতর সবকিছু এত স্পষ্ট দেখা যায় না। আমি শুধু ভোজালিটা দেখলাম।

লোকটা কি বিদেশী? গায়ের রং কেমন?

বুড়ি ঠাণ্ডাস্বরে বলল, এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? তোমার কি কোনো বিদেশীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে?

না, ঝামেলা হবে কেন? কফি দাও।

বুড়ি কফি পারকুলেটর চালু করে তার ছেলেকে তীক্ষ্ণচোখে দেখতে লাগল। এতরা ঘামছে। চোখের দৃষ্টি অন্যরকম। নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলায় জড়িয়েছে।

১৩.

এঞ্জেল ফসিলো লোকটি খর্বাকৃতির। চোখের মণি ঈষৎ সবুজ। দলের কাছে সে বিড়াল ফসিলো নামে পরিচিত। বিড়ালের একটি গুণ তার আছে, সে অসম্ভব ধূর্ত! মাফিয়াদের মধ্যে নিম্নশ্রেণীর বুদ্ধিবৃত্তির লোকজনই বেশি। এরকম ধুর্তের সংখ্যা কম। বস ভিকানডিয়া তাকে একটু বিশেষ স্নেহের চোখে দেখেন এই একটিমাত্র কারণেই। ধূর্ত মানুষ সাধারণত সাহসী হয় না। ফসিলোও সাহসী নয়। তবে তার সাহসের একটা ভান আছে। অকারণে মা’রপিট শুরু করে। কথা বলে অত্যন্ত উদ্ধত ভঙ্গিতে। যে-কোনো বিপজ্জনক কাজে আগ বাড়িয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেখায়। সাহসের অভাব গোপন রাখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

আজ এঞ্জেল ফসিলোকে খুব খুশি-খুশি দেখাচ্ছে। খুশির কারণ রহস্যাবৃত। বস। ভিকামডিয়ার সঙ্গে আজ বিকেলে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। টেলিফোনে নয়, মুখোমুখি। এটি ফসিলোর খুশির কারণ হতে পারে। কারণ ভিকনিন্দ্রিয়া তার ভিলায় কাউকে ঢুকতে দেন না এবং মুখোমুখি কারো সঙ্গে কথা বলেন না। বসদের নানানরকম সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। নিজের লোকদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখতে হয়। ভাগ্যবান কয়েকজনই শুধু অল্প সময়ের জন্যে তার দেখা পায়। ফসিলো সম্ভবত ভাগ্যবানদের দলে পড়তে শুরু করেছে। এটা খুশি হবার মতোই ঘটনা।

এঞ্জেল ফসিলো শিস দিতে দিতে গাড়ি থেকে নামল। তার গাড়িটা ছোট। কালো রঙের টু-সিটার। অন্য সবার মতো দরজা লক করল না। কারণ গাড়িচুরির মতো অপরাধ যারা করে তারা সবাই ফসিলোর টু-সিটারটা ভালোভাবে চেনে। এতে তারা হাত দেবে না।

ফসিলো গম্ভীর ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল। এটি একটি নতুন নাইট ক্লাব। মেক্সিকান এক ব্যবসায়ী এ-মাসেই চালু করেছেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই জমিয়ে ফেলেছেন। প্রচুর ভিড় হচ্ছে। এত অল্প সময়ে নাইট ক্লাবটি জমে যাওয়ার মূলে আছে দুটি মেক্সিকান যুবতী। এতরা প্রত্যেকেই অসম্ভব রূপসী। প্রতি রাতেই তিনটে শো করে। নাচের শো। নাচের পোশকি বিচিত্র। সমস্ত গা ঢাকা থাকে কিন্তু সবার ব্য-সুনটি থাকে নগ্ন। এই বিচিত্র পোশাক সবার কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

ফসিলোকে ঢুকতে দেখেই নাইট ক্লাবের মানেজার হাসিমুখে এগিয়ে এল।

 সিনোর ফসিলো যে! কী সৌভাগ্য! আসুন আসুন।

ফসিলো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। স্টেজ অন্ধকার হয়ে আসছে। নাচ শুরু হবে এখনই ৷ ফসিলো মৃদুস্বরে বলল, এক লুক দেখিয়েই শুনলাম পুরুষদের পাগল করে দেয়া হচ্ছে।

হ্যাঁ হ্যাঁ সিনোর, দুটো খুলে দিলে কি আর রহস্য থাকে? সব রহস্যই হচ্ছে অর্ধেকে। এখন বলেন, কী দিয়ে আপনার সেবা করতে পারি।

আমি কোথায় থাকি জানেন?

জানি না, কী বলেন! ফমি ভিলায়। ঠিক বলেছি তো?

ঠিক। ঐখানে আপনাদের নাচের মেয়েদের একজনকে আজ রাতে পাঠাবেন।

কিন্তু সিনোর, ওরা ঠিক ঐ ধরণের কাজ করে না। ওরা আসলে নাচতেই এসেছে। ভদ্র পরিবারের মেয়ে, সিনোর।

আপনার শো শেষ হয় কটায়?

 এই ধরেন দু’টায়, কোনো কোনো রাতে তিনটে বেজে যায়।

ঠিক আছে, তিনটের পরই পাঠাবেন।

ফসিলো তার সবুজ চোখ দিয়ে অন্যরকম ভঙ্গিতে তাকাল ম্যানেজারের দিকে। ম্যানেজার সঙ্গে সঙ্গে বলল–ঠিক আছে, ঠিক আছে। নিয়ম থাকেই ভাঙার জন্য। এখন বলুন কোনটিকে পাঠাব। ভালোমতো দেখেশুনে বলুন।

দেখার সময় নেই আমার। যেটা সবচে রোগা সেটাকে পাঠাবেন। রোগা মেয়েই আমার পছন্দ।

কিছু পান করবেন না? খুব ভালো শেরি আছে।

নাহ।

লক্ষ রাখবেন আমাদের দিকে, সিনোর, আপনাদের ভরসাতেই বিজনেস চালু করা। হে হে হে।

ফসিলো বেরিয়ে এল। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। বাড়ি ফেরার আগে ঘণ্টা দুই জুয়া খেলা যেতে পারে। ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে কি না তা জুয়ার টেবিলে না-বসা পর্যন্ত বলা যাবে না। মিরান্ডায় একটি ভালো জুয়ার আসর বসে।

ফসিলো শাড়ির দরজা বন্ধ করে চাবির জন্যে পকেটে হাত দিতেই অনুভব করল, তার ঘাড়ের কাছে ধাতব কিছু-একটা লেগে আছে। কাঠ হয়ে বসে রইল ফসিলো।

পেছন থেকে ভারী গলায় কেউ-একজন বলল, যেভাবে বসে আছ ঠিক সেভাবেই বসে থাকো। এক চুলও নড়বে না।

ফসিলো নড়ল না। ঘাড়ের পেছনে রিভলভারের নল লেগে থাকলে এমনিতেই নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।

আমি যা বলব ঠিক তা-ই করবে। গাড়ি স্টার্ট দাও। ফসিলো গাড়ি স্টার্ট দিল।

মিলানের বুলেভার দিকে এগিয়ে যাও। রোড নাম্বার ১২ দিয়ে এক্সিট নেবে। তোমার পেছনে যেটা ধরে আছি তার নাম বেরেটা থার্টি টু।

দেখতে দেখতে গাড়ি বারো নম্বর রোড়ে গিয়ে হাইওয়েতে এক্সিট নিল। ফসিলো মৃদুস্বরে বলল, তুমি যা করছ তার ফলাফল সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই সম্ভব। তুমি

বোধহয় জান না আমি কে?

তুমি এঞ্জেল ফসিলো। বন্ধুরা তোমাকে বিড়াল-ফসিলো বলে।

ফসিলোর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। হাত-পা কেমন যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ফসিলো বুঝতে পারছে না লোকটি কী চায়। উদ্দেশ কী? সে বসেছে এমনভাবে যে রিয়ার ভিউ মিররে তাকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না। গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে বিদেশী। একটু টেনে কথা বলছে।

সেন্ট জেনিংসে এক্সিট নেবে।

ফসিলো সেন্ট জেনিংসে এক্সিট নিল। শেষ পর্যন্ত গাড়ি থামল পুরানো ধরনের একটি একতলা বাড়ির সামনে। কোথায় এসেছে ফসিলো মনে রাখতে চেষ্টা করছে। বাড়িটি হালকা হলুদ রঙের, টালির ছাদ। অনেকখানি জায়গা আছে সামনে। এসব খুঁটিনাটি লক্ষ করে লাভ কী? ফসিলোর মনে হল এ-বাড়ি থেকে সে আর ফিরে যেতে পারবে না। নাইট ক্লাবের মেয়েটা হয়তো তার বাড়িতে গিয়ে বসে থাকবে। রোগা একটি মেয়ে যার বয়স খুবই কম। হয়তো ষোলো-সতেরো। ফসিলো বলল, তুমি কী চাও?

লোকটি শীতল স্বরে বলল, বিশেষ কিছু না। কয়েকটা প্রশ্ন করব।

এঞ্জেল কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না।

 সেটা দেখা স্বাবে।

শুয়োরের বাচ্চাদের কী করে শায়েস্তা করতে হয় তাও আমরা জানি।

জানলে ভালোই।

কথা শেষ হবার আগেই ফসিলোর মাথায় প্রচ শব্দে রিভলভারের হাতল দিয়ে আঘাত করা হল। ব্যথা বোধ হবার আগেই ফসিলোর কাছে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল।

জ্ঞান হল অল্পক্ষণের মধ্যেই। চোখ মেলেই দেখল নাইলন কার্ড দিয়ে তাকে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে চেয়ারের সঙ্গে। সামনেই একটি কাঠের টেবিল। টেবিলের উপর দুটি পেতলের আট ইঞ্চি সাইজ পেরেক এবং একটা হাতুড়ি। চেয়ারের উলটোদিকে যে বসে আছে ফসিলো তাকে চিনতে পারল। এই লোকটাকে সে আগে দেখেছে। বারো বছরের সেই মেয়েটির বডিগার্ড ছিল।

ফসিলো, আমাকে চিনতে পারছ?

ফসিলো জবাব দিল না।

নিশ্চয়ই আশা করনি তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে?

কী চাও তুমি?

বলেছি তো কয়েকটি প্রশ্ন করব।

প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ নেই। এঞ্জেল ফসিলোর মুখ থেকে কেউ কিছু বার করতে পারে না।

চেষ্টা করতে দোষ নেই, কী বল?

ফসিলো জবাব দিল না। সে দ্রুত নিজের অবস্থা বুঝে নিতে চেষ্টা করছে। সামনে বসে থাকা লোকটা কথাবার্তা বলছে নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে। এমন একটা ব্যাপার ঘটছে কিন্তু তার মধ্যে কোনোরকম উত্তেজনা নেই।

ফসিলো, এই পেতলের পেরেকটি দেখতে পাচ্ছ? এই পেরেকটি এখন আমি তোমার হাতের তালুতে ঢুকিয়ে দেব। তারপর প্রশ্ন শুরু করব। একেকটা প্রশ্ন করবার পর দশ সেকেন্ড সময় দেব। দশ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর না পাওয়া গেলে একেকটি করে আঙুল কেটে ফেলব।

ফসিলো নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। এইসব কি সত্যি সত্যি ঘটছে? নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন? ফসিলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা তার বাঁ হাত টেবিলের ওপর টেনে এনে মুহূর্তের মধ্যে পেরেক বসিয়ে দিল। হাত গেঁথে গেল টেবিলের সঙ্গে। ফসিলো শুধু দেখল একটি হাতুড়ি দ্রুত নেমে আসছে। পরক্ষণেই অকল্পনীয় ব্যখা। যেন কেউ হ্যাঁচকা টান দিয়ে হাত ছিঁড়ে নিয়েছে। ফসিলো জ্ঞান হারাল।

ফসিলোর জ্ঞান ফিরতে সময় লাগল। তার অবস্থা ঘোর-লাগা মানুষের মতো। এসব কি সত্যি সত্যি ঘটছে? হাত কি সত্যি সত্যি পেরেক দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে টেবিলে? ফুলে-ওঠা হাত, উপরে জমে থাকা চাপ-চাপ রক্ত দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। শুধু যখন একটু নড়াচড়াতেই অকল্পনীয় একটা ব্যথা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তখনই মনে হয় এটি সত্যি সত্যি ঘটছে।

সামনের টেবিলে বসে-থাকা লোকটা নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট টানছে যেন কিছুই হয়নি। লোকটির হাতে নোটবই আর কলম।

ফসিলো, তোমাকে এখন প্রশ্ন করতে শুরু করব। মনে রাখবে প্রশ্ন করার ঠিক দশ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর চাই। প্রথম প্রশ্ন, অ্যানিকে কিডন্যাপ করবার জন্যে কে পাঠিয়েছিল তোমাদের?

বস ভিকানডিয়া।

তোমরা কজন ছিলে?

পাঁচজন। দুজনকে তুমি মেরে ফেলেছিলে।

যে-তিনজন বেঁচে আছে তাদের একজন তুমি। বাকি দুজন কে?

 উইয়ি ও নিওরো।

ওদেরকে কোথায় গেলে পাওয়া যাবে?

ফসিলো চারটি ঠিকানা বলল। কখন গেলে ওদের পাওয়া যাবে তা বলল। ওদের সঙ্গে কীসব অস্ত্রশস্ত্র থাকে তাও বলল।

ঐ মেয়েটিকে তুমি রেপ করেছিলে?

ফসিলা হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল।

কবার?

ফসিলো উত্তর দিল না।

বলো কবার?

বেশ কয়েকবার।

তোমার সঙ্গীরাও?

হ্যাঁ।

এরকম করার নির্দেশ ছিল তোমাদের ওপর

না। আসলে সমস্ত ব্যাপারটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। র‍্যানসমের টাকার ব্যাপারে কীসব ঝামেলা হয়েছে। মেয়েটাকে বেশ কিছুদিন রাখতে হল। এর মধ্যে একদিন এতরা ওকে রেপ করল। আমরা ভাবলাম একবার যখন হয়েই গেছে…তার ওপর মেয়েটি ছিল অসম্ভব রূপসী।

মেয়েটির মৃত্যুর পর বস ভিকানডিয়া কী করল?

বস খুব রাগলেন।

শুধুই রাগলেন?

আমাদের প্রত্যেকের ত্রিশ হাজার লিরা করে পাওয়ার কথা। আমরা ওটা পাইনি।

বলো, এখন তোমার বসের কথা বলো।

 কী জানতে চাও?

তুমি যা জান সব বলো। ভিকানডিয়াই কি এখন সবচে শক্তিশালী?

হা।

কারা কারা ওর ডানহাত?

ফসিলোর কথা জড়িয়ে যেতে শুরু করছে। হাতের ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। ফসিলো বলল, তুমি আমাকে নিয়ে কী করবে?

মেরে ফেলব।

কীভাবে মারবে?

তুমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছ কাজেই তোমাকে সামান্য করুণা করব। কীভাবে তুমি মরতে চাও সেটা বলো। সেইভাবে ব্যবস্থা করব।

ফসিলো কিছু বলতে পারল না। তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরুতে লাগল। আরো কিছুক্ষণ পর বেরটা থার্টি টু থেকে একটি বুলেট ফসিলোর মাথার একটি বড় অংশ উড়িয়ে দিল।

.

হ্যালো, তুমি কে?

চিনতে পারছ না? আমার নাম জামশেদ।

কী চাও তুমি?

তোমাকে একটা খবর দিতে চাই। এঞ্জেল ফসিলোকে চেন?

এতরা জবাব দিল না।

ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।

আমাকে এসব শোনাচ্ছ কেন?

ভাবলাম তোমার কাছে খবরটা ইন্টারেস্টিং মনে হতে পারে। তা ছাড়াও আমি আরেকটা জিনিস জানতে চাই। অ্যানির কিডন্যাপিং পরিকল্পনাটি কি তোমার?

এতরা টেলিফোন নামিয়ে রাখল। সে ভেবেছিল আবার রিং হবে। কিন্তু কেউ রিং করল না। শুধু দুপুরবেলা মায়ের টেলিফোন এল–এতরা, ঐ স্বপ্নটী আমি আবার দেখেছি।

কী স্বপ্ন?

ঐ যে তুমি একটা রাস্তা দিয়ে উলঙ্গ হয়ে দৌড়াচ্ছ। আর তোমার পেছনে পেছনে একজন লোক ভোজালি নিয়ে ছুটি আসছে।

ও।

তুমি কি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছ?

না।

 চার্চে যাবার কথা মনে আছে?

আছে, আছে।

এতরা টেলিফোন নামিয়ে রাখল।

১৪.

রিনালো পুলিশের হমিসাইডের লোক। অনেক ধরনের বিকৃত মৃতদেহ দেখে তার অভ্যৈস আছে। তবুও ফসিলার লাশের সামনে সে ভ্রু কুঁচকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইল। খুনটা করা হয়েছে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়। হাতের তালুতে পেরেক বসিয়ে দেবার ব্যাপারটি তাঁকে ভাবাচ্ছে। মাফিয়াদের দলগত বিরোধ শুরু হল? হলে মন্দ হয় না। নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করে মরুক। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নাও হতে পারে। ফসিলোর হাতে বসানো পেরেক দেখে মনে হয় কেউ তার কাছ থেকে কথা আদায় করতে চেয়েছে। কিন্তু ফসিলো এমন কোনো ব্যক্তি নয় যায় কাছে মূল্যবান খবর আছে। সে ভিকানডিয়ার একজন অনুগত্য ভৃত্য মাত্র।

 রিনালো নোটবই খুলে দুটো পয়েন্ট লিখে রাখল। এক, পেট্রোল পুলিশকে সতর্ক করে দিতে হবে। যদি এই খুনটা মাফিয়াদের দলগত বিরোধ থেকে হয়ে থাকে তা হলে অল্প সময়ের মধ্যে বেশকিছু খুনোখুনি হবে। দুই, ভিকানডিয়ার কাছে যত টেলিফোন এখন থেকে যাবে ও আসবে সবগুলি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এটা খুব জরুরি। দলের কেউ মারা পড়লে বসদের টেলিফোনের সংখ্যা খুব বেড়ে যায়। অধিকাংশ কলই হয় অর্থহীন ধরনের। তবু তার মধ্যেও অনেক খবরাখবর থাকে।

রিনালো সন্ধ্যার দিকে ভিকানডিয়ার ভিলায় টেলিফোন কল। রিনালোকে জানানো ইল ভিকানডিয়া ঘরে নেই। কোথায় আছে তাও জানা নেই। রিনালো বলল, আমি হমিসাইডের একজন ইন্সপেক্টর, আমার নাম রিনালো।

ও। আপনি ধরুন, দেখি উনি আছেন কি না।

ভিকনিডিয়ার মধুর গলা পাওয়া গেল সঙ্গে সঙ্গে। কে বলছেন?

আমি রিনালো, হমিমাইড ইন্সপেক্টর।

বড় আনন্দিত হলাম। কিন্তু কী করতে পারি আপনার জন্যে?

ফসিলো মারা গেছে শুনেছেন?

কোন ফসিলো?

এঞ্জেল ফসিলো।

মারা গেছে? আহা! মৃত বড় কুৎসিত জিনিস, মিস্টার রিনালো।

তা ঠিক। খবরটা কি আপনি আমার কাছ থেকেই প্রথম শুনলেন, না আগেই শুনেছেন?

আগেই শুনেছি।

ভিকানডিয়া, আপনি কি এই ধরনের আরো মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন?

মৃত্যু একটি বাজে ব্যাপার, মিস্টার রিনালো। কিন্তু আমরা সবাই মারা যাই। তা-ই নয় কি?

আপনি আমার কথায় জবাব দেননি। এই ধরনের আরো মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন কি?

আশা ও আশঙ্কা এই দুটো জিনিস নিয়েই তো আমরা সবাই বাঁচি।

রিনালো টেলিফোন নামিয়ে রাখল। এই ধরনের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া মুশকিল। এদিক দিয়ে ক্যানটারেলার কথাবার্তা সহজ স্বাভাবিক। বাড়তি দার্শনিকতা নেই। প্রশ্নের জবাব দিতে কোনোরকম দ্বিধা নেই।

ক্যানটারেলা, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড কি আরো হবে?

মনে হয় না, মিঃ রিনালো। এটা দলগত কোনো বিরোধ নয়।

আপনি কি এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত?

মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। বস ভিকামডিয়ার বয়স হয়েছে। তিনি এখন সবরকম বিরোধ এড়িয়ে চলেন।

কারো সঙ্গেই তার কোনো বিরোধ নেই বলতে চান?

বিরোধ নেই তা নয়, তবে যে-কটা বড় ফ্যামিলি এখন আছে তাদের সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো।

তা হলে আপনার ধারণা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বড় ফ্যামিলির স্বার্থ জড়িত নয়?

 সেরকমই ধারণা। অবিশ্যি আমার ধারণা ভুলও হতে পারে।

আচ্ছা ঠিক আছে।

আরকিছু জিজ্ঞেস করবার নেই আপনার?

আপাতত না।

ভালো কথা, মেয়েমানুষের ব্যাপারে আপনার উৎসাহ আছে? আমার জানামতে কয়েকটি মেয়ে আছে, সঙ্গিনী হিসেবে ওদের তুলনা নেই। ভারতীয় মেয়ে। জানেন তো ভারতীয় মেয়েরা কেমন মধুর স্বভাবের হয়।

এইসব বিষয়ে আমার তেমন কোনো উৎসাহ নেই।

বলেন কী! পুলিশে চাকরি করলেই একেবারে শুষ্কং কাষ্ঠং হতে হবে এমন তো কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া যেসব মেয়ের কথা বলছি ওর লাইসেন্সড গার্লস। বেআইনি কোনো ব্যাপার নেই।

রিনালো টেলিফোন নামিয়ে রাখল। একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে এইজাতীয় কথাবার্তা বলার ব্যাপারে ওদের কোনো দ্বিধাসংকোচ নেই এটাই আশ্চর্য। তার চেয়েও বড় আশ্চর্য এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দাঁড় করানো যায় না। কেউ ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। প্রমাণ জোগাড় করা যাবে না। এরা আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়ে পড়েছে।

রিনালো ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলল।

১৫.

মেয়েটির নাম নিমো। বয়স সতেরো-তেরো হবে কিন্তু দেখায় আরো কম। রাত দশটার মতো বাজে। এমন কিছু রাত নয়, কিন্তু চারদিক চুপচাপ হয়ে গেছে। অঞ্চলটি শহরের উপকণ্ঠে। লোকচলাচল কম। বাংলা প্যাটার্নের এই বাড়িটির চারদিকে উঁচু দেয়াল। দুজন রক্ষী পাহারা দেয় পালা করে। এই বাড়িটির সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ নেই বললেই হয়। কিন্তু নিমোকে সে ব্যাপারে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হয় না। এরকম বন্দিজীবন মনে হয় তার ভালোই লাগছে।

খুটখুট করে টোকা পড়ল দরজায়।

নিমো বলল, কে? কোনো জবাব পাওয়া গেল না। উইয়ি এসে গেছে নাকি? উইয়ি সাধারণত রাত এগারোটার দিকে এসে বাকি রাতটা কাটায়। আজ একটু সকাল সকাল এসে পড়ল নাকি? নিমো আবার বলল, কে, উইয়? খুট খুট করে দুবার শব্দ হল কিন্তু কেউ জবাব দিল না। রক্ষীদের কেউ এসেছে কি? কিন্তু ওদের কি এত সাহস হবে? উইয়ির কঠিন আদেশ আছে যেন এতরা বাড়ির কম্পাউন্ডের ভেতর না ঢোকে। সে আদেশ অমান্য করবার সাহস ওদের হবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে সবারই কি একটু আধটুআদেশ অমান্য করতে ইচ্ছে করে না? নিমোর তো সবসময়ই ইচ্ছে করে। আচ্ছা, রক্ষীদের কেউ যদি হয় তা হলে দরজা খোলামাত্র ভয়ানক অবাক হবে। ওরা নিশ্চয়ই স্বপ্নেও ভাবেনি সম্পূর্ণ নগ্নদেহের একটি মেয়ে দরজা খুলে দেবে। এরকম দৃশ্য শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়। বাস্তবে দেখা যায় না। নিমো হাসিমুখে দরজা খুলে দিল।

দরজার ওপাশে অপরিচিত একজন লোক রিভলভার উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নগ্নদেহের নিমোকে দেখে তার কোনো ভাবান্তর হল না। ভারী গলায় বলল, অসময়ে তোমাকে বিরক্ত করছি। খুবই লজ্জিত। কোনোরকম চেঁচামেচি করবে না।

নিমো কোনো শব্দ করল না। লোকটা ঘরে ঢুকে পড়ল। নিমো মৃদুম্বরে বলল, তোমার নাম কী?

জামস। জামশেদ।

তুমি কী চাও? আমার সঙ্গে কোনো টাকাপয়সা নেই।

আমি টাকাপয়সার জন্যে আসিনি।

তা হলে কীজন্যে এসেছ? আমার সঙ্গে বিছানায় যাবার জন্যে?

না।

নিমো দেখল লোকটা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

তুমি ঢুকলে কীভাবে?

ঢুকতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি।

নিমো দেখল লোকটার মুখে ছোট্ট একটা হাসি। এর মধ্যে হাসির কী আছে?

কী চাও তুমি?

তোমার কাছে উইয়ি নামের যে-লোকটি আসবে ওর মাথায় আমি বেরেটা থার্টি টুর তিনটি বুলেট ঢুকিয়ে দেব। সেজন্যেই এসেছি।

উইয়ি যে এখানে আসে তা তো তোমার জানার কথা নয়।

নিমো আবার লক্ষ করল, লোকটির মুখে হালকা একটু হাসি।

 উইয়িকে মারতে চাও কেন?

ও বারো বছরের একটি মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেরেছে। মেয়েটার নাম অ্যানি।

নিমোর মুখ সাদা হলে গেল। কী বলছে এই লোক? নিমো চাপাস্বরে বলল, উইয়ি এরকম হতেই পারে না।

তুমি কি উইয়ির স্ত্রী?

না। তবে আমরা শিগগিরই বিয়ে করব। তুমি হাসছ কেন? এর মধ্যে হাসির কী আছে

তোমার মতো বেশ কয়েকটা মেয়ে আছে উইয়ির। ওদের সবাই হয়তো জানে উইয়ির সঙ্গে তাদের বিয়ে হবে।

নিমো জবাব দিল না। লোকটি একটা সিগারেট ধরাল, আর ঠিক তখনই বাড়ির সামনে থামল বড় একটি গাড়ি। সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিল লোকটি। 

এই মেয়ে, শোনো। তুমি সবসময় যেভাবে দরজা খোলো ঠিক সেইভাবেই খুলবে। খোলামাত্রই চেষ্টা করবে প্রথম সুযোগেই দূরে সরে যেতে।

আর যদি দূরে না সরি? যদি উইয়িকে জড়িয়ে ধরে থাকি?

তা হলে তোমাদের দুজনকে গুলি করব।

কী ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর! কোনো সন্দেহ নেই এই লোক দুজনকে মারতে তিলমাত্র দ্বিধা করবে না। নিমো দেখল লোকটা দরজা বন্ধ করে বাঁদিকের ড্রেসিংটেবিলের কাছে সরে গেছে। উইয়ির ভারী পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নিমোর ইচ্ছা হল প্রাণপণে চেঁচিয়ে উইয়িকে সাবধান করে। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বেরুল না। উইয়ি যখন দরজায় টোকা দিয়ে বলল, কোথায় আমার ময়না পাখি, দেখন হাসি। তখন সে অন্যদিনের মতোই দরজা খুলে দিল। উইয়ি ঘরে ঢুকল নিমোকে জড়িয়ে ধরে। আর সেই সময় একটা ভারী গলার স্বর শোনা গেল, ভালো আছ, উইয়ি? আমাকে চিনতে পারছ আশা করি?

উইয়ি নিমোকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত হাত ঢোকাল প্যান্টের পকেটে আর তখনই পরপর তিনবার গুলি হল।

নিমো কিছু বুঝতে পারছে না। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সে দেখছে। উইয়ির প্রকাণ্ড দেহটা খাটের পাশে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে। বিদেশী লোকটা কী যেন বলছে তাকে। কী বলছে? সবকিছু অস্পষ্ট ধোয়াটে।

এই মেয়ে তুমি কাপড় পরে নাও। পুলিশ আসবে এক্ষুনি। ওদের সামনে এরকম ন্যাংটো অবস্থায় বের হওয়া ঠিক হবে না।

লোকটা বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে বের হয়ে গেল। খুব ছুটাছুটি হচ্ছে বাইরে। রক্ষী দুজন দৌড়ে আসছে সম্ভবত। উইয়ির গাড়িতেও যে একজন দেহরক্ষী সবসময় থাকে সেও ছুটে আসছে। নিমোর মনে হল সে এখন প্রচুর গোলাগুলি শুনবে। কিন্তু সেরকম কিছুই শুনল না। সে কি জ্ঞান হারাচ্ছে? উইয়ির পড়ে-থাকা বিরাট শরীরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভরতি করে বমি করল। গা গুলাচ্ছে। ঘরবাড়ি কেমন যেন দুলছে। নিমো দ্বিতীয়বার বমি করল।

.

রিনালোর অফিসঘরটি ঠাণ্ডা। এয়ারকুলার আছে। তার ওপর একটি ফ্যান ঘুরছে। তবু নিমো ঘামতে লাগল।

 পুলিশি ব্যাপারে নিমোর কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই। ভাসাভাসা একটি ধারণা যে পুলিশ অফিসাররা নির্দয় প্রকতির হয় এবং উলটোপালটা প্রশ্ন করে সহজেই ফাঁদে ফেলে দেয়। কিন্তু এই অফিসারের বয়স অল্প এবং সে প্রশ্ন করছে খুবই আন্তরিক ভঙ্গিতে। কফি খেতে দিয়েছে। কথা বলছে নরম গলায়, যদিও কথাগুলো শুনতে তার মোটেও ভালো লাগছে না।

তুমি কি একজন প্রোসটিটিউট?

জি না।

না বলছ কেন? তুমি তো থাকছিলে রক্ষিতার মতো। উইয়ির হাতে পড়বার আগেও অনেক পুরুষের সঙ্গে থেকেছ। থাকনি?

নিমো চুপ করে রইল।

 তুমি কি জানতে উইয়ি পতিতাবৃত্তির একটা বড় অংশ পরিচালনা করে?

না।

উইয়ির সঙ্গে যেসব মেয়ে থাকে তারা পরে বিভিন্নরকম পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে বা পড়তে বাধ্য হয় এটা তুমি জানতে না?

জি না। উইয়ি আমাকে বিয়ে করবে বলেছিল।

তা কি তুমি এখনও বিশ্বাস কর?

আমার বিশ্বাস অবিশ্বাস উইয়ি বেঁচে থাকলে প্রমাণ হত। সেটা তো এখন প্রমাণ করবার কোনো পথ নেই।

যে-লোকটা উইয়িকে মা’রল সে একজন বিদেশী?

হ্যাঁ।

কী করে বুঝলে? টেনে টেনে কথা বলছিল। তার চেহারাও বিদেশীদের মতো। নামটাও সেরকম।

সে তোমাকে তার নাম বলেছে? হ্যাঁ।

কী নাম?

আমার মনে নেই।

সে বলেছে অ্যানির মৃত্যুর জন্য সে শাস্তি দিচ্ছে?

হ্যাঁ।

 আচ্ছা, সে কি তার নাম জামশেদ বলেছে?

আমার মনে পড়ছে না।

লোকটার কোনো বৈশিষ্ট্য তোমার মনে পড়ে?

লোকটি খুবই ঠাণ্ডা মাথায় সমস্ত ব্যাপারটা ঘটাল। সে এতটুকুও উত্তেজিত ছিল না।

গুলি করার আগে লোকটি কোনো কথাবার্তা বলেছে?

বলেছে, কিন্তু আমার মনে নেই।

এইজাতীয় হত্যাকাণ্ড সে আরো করবে কি না তা বলেছে?

আমার মনে পড়ছে না।

কফি খাও। কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

নিমো কফিতে চুমুক না দিয়ে তার কপালের ঘাম মুছল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *