১১. সুন্দর লাগছে ছাদটা

আনিস বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে। সুন্দর লাগছে ছাদটা। টবের ফলগাছগুলোতে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। ছাদে আলো-ছায়ার নকশা। হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ছে, নকশাগুলোও বদলে যাচ্ছে। আনিস ভারী গলায় বলল,

আলোটুকু তোমায় দিলাম।

ছায়া থাক আমার কাছে।

আনিসের কথা শেষ হল না তার আগেই নারী কণ্ঠের তীক্ষ্ণ আওয়াজ পাওয়া গেলা— কে আপনি? আপনি কে?

আনিস হকচকিয়ে গেল। দেয়ালে ঠেস দিয়ে লম্বামত একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর চাদর দিয়ে ঢাকা। মুখ দেখা যাচ্ছে না। নারী কণ্ঠ আবারো তীক্ষ্ণ গলায় বললে–আপনি কে?

আমার নাম আনিস। আমি এ বাড়ির ভাড়াটে। আপনি কি ভয় পেয়েছেন?

হ্যাঁ।

ভয়ের কিছু নেই। আমি মানুষ। ভূত কখনো কবিতা বলে না। তাছাড়া ভূতের ছায়া পড়ে না। এই দেখুন। আমার ছায়া পড়েছে।

নারীমূর্তি কিছু বলল না। গায়ের চাদর টেনে দিল। তাতে তার মুখ আরো ঢাকা পড়ে গেল।

আনিস বলল, আপনি কে জানতে পারি কি?

আমার নাম বিলু। আমি এ বাড়ির বড় মেয়ে।

ছাদে কি করছেন?

কিছু করছি না। টবের গাছগুলো দেখতে এসেছিলাম। মাঝখানে আপনি ভয় দেখিয়ে দিলেন।

সত্যি ভয় পেয়েছেন?

হ্যাঁ।

কেন বলুনতো?

বিলু সহজ গলায় বলল, রহিমার মার ধারণা এ বাড়ির ছাদে না-কি ভূত আছে। সে প্রায়ই দেখে। আপনাকে হঠাৎ দেখে… আচ্ছা যাই।

বিলু সিঁড়ির দিকে রওনা হল। আনিস বলল, আপনার টবের গাছ দেখা হয়ে গেল?

হ্যাঁ।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে। আপনার আরো কিছুক্ষণ ছাদে থাকার ইচ্ছা! ছিল, আমার কারণে চলে যাচ্ছেন।

আপনার ধারণা ঠিক না। আমার শীত শীত লাগছে। তাছাড়া অনেকক্ষণ ছাদে ছিলাম।

আনিস সহজ গলায় বলল, আপনাকে ভয় দেখানোর জন্যে দুঃখিত।

বিলু হেসে ফেলল। বেশ শব্দ করে হাসল। আনিস হাসি শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। এই হাসি তার পরিচিত। এ জীবনে অনেকবার শুনেছে। রেশমা এম্‌নি করেই হাসত, কিশোরীদের ঝনঝনে গলা, যে গলায় একই সঙ্গে আনন্দ এবং বিষাদ মাখানে।

বিলু বলল, যাই কেমন?

আনিস দ্বিতীয়বার চমকাল। রেশমাও কোথাও যাবার আগে মাথা কাত করে বলত, যাই কেমন? যেন অনুমতি প্রার্থনা করছে। যদি অনুমতি পাওয়া না যায় তাহলে যাবে না। বিলু। তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে। সিঁড়ির মাথায় মূর্তির মত আনিস দাঁড়িয়ে। সে ফিসফিস করে বলল, আলোটুকু তোমায় দিলাম। ছায়া থাক আমার কাছে।

তার ভাল লাগছে না। কোথাও কিছু একটা ঘটে গেছে। অনেক অনেক দূরের দেশ থেকে যেমন হঠাৎ রেশমা উঠে এল। এ কেমন করে হয়? যে চলে গেছে সে আর আসে না। মানুষের কোন বিকল্প হয় না। কি যেন কথাগুলো? এ পৃথিবী একবার পায় তারে কোন দিন পায় নাকো আর, লাইনগুলো কি ঠিক আছে না ভুল-টুল কিছু হল?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *