সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার দিন থেকে পনের দিন—
১৫ আগস্ট – বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত। খন্দকার মোশতাক আহমেদের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগ্রহণ। দেশে সামরিক আইন জারি। বিগত সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১০ জন মন্ত্রী ও ৬ জন প্রতিমন্ত্রী পুনর্বহাল। বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন। (মনে হয় পাকিস্তান তৈরি হয়েই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে স্বীকৃতি।)
১৬ আগস্ট – বাংলাদেশের নতুন সরকারকে সৌদি আরবের স্বীকৃতি। (সৌদি সরকারও তৈরি, কত তাড়াতাড়ি স্বীকৃতি দেওয়া যায়। টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের দাফন সম্পন্ন। (পুরো একদিন বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ পড়ে রইল। কেউ জানে না, মৃতদেহ কী করা হবে।)
২৩ আগস্ট – সামরিক আইনের অধীনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম. মনসুর আলি, তাজউদ্দিন আহমদসহ ২০ জন গ্রেফতার।
২৪ আগস্ট – মেজর জেনারেল শফিউল্লার জায়গায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নতুন সামরিক বাহিনী প্রধান।
২৭ আগস্ট – ভারতের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দান। (ভারতের ওপর অনেক ভরসা ছিল। বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে পঁচিশ বছরের মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ। তারাও যেন পাগল হয়ে গেল কত দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া যায়।)
৩১ আগস্ট – মহাচীনের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান। (স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে গণচীনের অনেক দিন লেগেছিল। এইবার আর লাগল না।)
সেলুকাস। কী বিচিত্র এই দেশ! এমন এক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কেউ নেই।
ভুল বললাম, শফিকের মতো অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিবাদ করেছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেলেন। মুজিববিহীন বাংলাদেশে তিনি বাস করবেন না। ভারতে তিনি কাদেরিয়া বাহিনী তৈরি করে সীমান্তে বাংলাদেশের থানা আক্রমণ করে নিরীহ পুলিশ মারতে লাগলেন। পুলিশ বেচারারা কোনো অর্থেই বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত না, বরং সবার আগে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্যে তারা প্রাণ দিয়েছে।
শেখ হাসিনার গৃহশিক্ষক অভিনেতা আবুল খায়ের দেশ ছেড়ে আমেরিকা চলে গেলেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণের মাথা খারাপ হয়ে গেল। তিনি বারহাট্টায় নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেন। তখন তার মনে হতো বঙ্গবন্ধুর আত্মা তার ভেতর ঢুকে গেছে। এই খবর সবাই পেয়ে গেছে। সবাই হন্যে হয়ে কবিকে হত্যা করার জন্যে খুঁজছে। কবিকে হত্যা করলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা কব্জা করা যাবে।
নির্মলেন্দু গুণ সেই দুঃসহ সময়ের বর্ণনা দিয়ে সুন্দর একটি গ্রন্থ (রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫, বিভাস প্রকাশনা) রচনা করেছেন। কৌতুহলী পাঠক বইটি পড়ে দেখতে পারেন।