১১. ষড়যন্ত্র

১১. ষড়যন্ত্র

বাসায় ঢুকে চাচা এবং চাচি যখন দেখলেন মন্তাজ ওস্তাদ এবং তার দুই সাগরেদকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা আছে, ওস্তাদের উপরের পাটির সামনের একটা দাঁত নেই, দবির মিয়ার কপালটা উঁচু হয়ে ফুলে আছে এবং কালাচানের নাকে রক্ত শুকিয়ে আছে তখন তাদের চোয়াল ঝুলে পড়ল। চাচা এবং চাচি দুজনেই কথা বলতে চেষ্টা করলেন কিন্তু কেউই কথা বলতে পারলেন না। চাচার মুখ বেশ কয়েকবার নড়ল এবং শেষ পর্যন্ত রিকশার টায়ার থেকে বাতাস ছেড়ে দেয়ার মতো একটা শব্দ বের হল।

তপু রিভলবারটা নাচিয়ে বলল, “আব্ব সব কয়টাকে ধরে ফেলেছি।”

তার কথায় তোতলামোর চিহ্ন নেই কিন্তু সেটা চাচা এবং চাচি খেয়ালও। করলেন না, চাচা জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন করে ধরেছিস?”

“নানি ঘুসি মেরে সবগুলোকে ফেলে দিয়েছে।”

তপুর উত্তর শুনে চাচি একটা চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নেন–চাচা সাবধানে একটা চেয়ারে বসলেন। খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বললেন, “ঘুসি মেরে?”

“জি।”

“তোর নানি?”

“জি।”

চাচা মেঝেতে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “সত্যি?”

মন্তাজ ওস্তাদ এবং অন্য দুইজন পুতুলের মতো মাথা নেড়ে ব্যাপারটা স্বীকার করল। চাচা আবার রিকশার চাকা থেকে বাতাস বের করে দেয়ার মতো শব্দ করলেন। চাচি ভয়ে ভয়ে নানির দিকে তাকালেন, নানি হাত ঝেড়ে বললেন, “এইবার ছেড়ে দিয়েছি। পরের বার কিন্তু ছাড়ব না–একেবারে খুন করে ফেলব।”

টুশি বলল, “চাচা, এরা কী-একটা কাগজে সাইন করাতে এসেছিল–”

কাগজে সাইন করানোর কথা শুনে চাচা হঠাৎ কথা ঘুরানোর জন্যে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, “ও, আচ্ছা ঠিক আছে-”তোমরা কেউ কোনো ব্যথা পাও নাই তো?”

টুশি বলল, “না, চাচা। কিন্তু এই যে কাগজটা দেখেন”।

চাচা ছোঁ মেরে কাগজটা নিয়ে দেখার ভান করে তাড়াতাড়ি ভাঁজ করে পকেটে রেখে বললেন, “ইয়ে তার মানে মনে হয় ঠিকই কিন্তু যা বলছিলাম”।

কথাটার কী মানে টুশি কিছুই বুঝতে পারল না, সে আবার বলল, “নানির কী একটা বাড়ি নিয়ে সমস্যা–”

এবারে চাচি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলেন, নানির দিকে তাকিয়ে বললেন, “মা, তোমার ব্লাডপ্রেশার বাড়ে নাই তো?”

নানি বললেন, “আর ব্লাডপ্রেশার! এই বয়সে মারপিট করতে হলে ব্লাডপ্রেশার ঠিক থাকে কেমন করে?”

টুশি বলল, “এদেরকে পুলিশে দিতে হবে না?”

 চাচা আবার মাছের মতো খাবি খেলেন, বললেন, “পু-পুলিশ?”

“হ্যাঁ।”

“আমি ফোন করব?”

চাচা এবারে লাফ দিয়ে উঠে একেবারে হা হা করে উঠলেন, “না-না–তোমার করতে হবে না। তোমার করতে হবে না। আমি করব। আমি করব।”

“ঠিক করে বাঁধতে পারি নাই। যদি পালিয়ে যায়?”

“কী দিয়ে বেঁধেছ?”

“চাচির একটা শাড়ি দিয়ে।”

চাচি এবারে প্রথমবার তাঁর শাড়িটা দেখে আঁতকে উঠে কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন, “আমার সবচেয়ে ফেবারিট সিল্কের শাড়ি!”

নানি মুখ ভেংচে বললেন, “রাখ তোর শাড়ি! বাঁধা যে হয়েছে এই বেশি!”

পুলিশের কথাটা আসার পর থেকে চাচা কেমন ছটফট করতে শুরু করলেন। চাচির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন, “এদেরকে পুলিশে দিতে হবে, তা ই না?”

চাচিকেও কেমন যেন বিভ্রান্ত দেখা গেল, বললেন, “মনে হয়।”

 চাচা বললেন, “আমি নিয়ে যাই পুলিশের কাছে। কী বল?”

চাচি বললেন, “হা হা, সেটাই ভালো। পুলিশ বাসায় আসলে আবার হাজার ঝামেলা।”

টুশি ঠিক বুঝতে পারল না, তার কাছে মনে হল পুলিশকে ফোন করে বলে দেওয়াটাই সবচেয়ে সহজ, কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চাচা-চাচি সেটা করতে চাচ্ছেন না। পুরো ব্যাপারটার মাঝেই কেমন জানি একটা রহস্যের গন্ধ, কিন্তু রহস্যটা কোথায় টুশি ঠিক বুঝতে পারল না।

পুরো সময়টুকু কাবিল কোহকাফী সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আলাপ শুনছিল এবং মাঝে মাঝে গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত যখন তিন মূর্তিকে লাইন ধরিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হল কাবিল কোহকাফী বলল, “বুঝেছ সোনার চাঁদেরা–এইবারে তো ডাইনি বুড়ির হয়ে একটু কেচে দিয়েছি। পরের বার নিজের হয়ে হালুয়া করে ছেড়ে দেব।”

তার কথা টুশি এবং তপু ছাড়া আর কেউ শুনতে পেল না।

.

মাইক্রোবাসটা ছাড়তেই চাচা দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, “মন্তাজ, এরকম সহজ একটা কাজ করতে গিয়ে একদম গুবলেট করলে?”

মন্তাজ ওস্তাদ শীতল গলায় বলল, “আগে হাতের বাঁধনটা খুলেন। ব্লাড সার্কুলেশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”

দবির মিয়া বলল, “এইটুকু মেয়ের জোর কম না–এমন করে বেঁধেছে যে হাত কেটে বসে যাচ্ছে।”

দেখা গেল বাঁধনটা খোলা সহজ না, টুশি এমন করে গিঁট মেরেছে, যে ভোলার কোনো উপায়ই নেই। চাচির সবচেয়ে ফেবারিট সিল্কের শাড়ি জানার পরও চাচা। সেটা কেটে ওস্তাদ এবং তার দুই সাগরেদের হাতগুলো মুক্ত করলেন।

মন্তাজ ওস্তাদ তার হাতের কবজিতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “ইমতিয়াজ সাহেব, আমি আজ বারো বছর এই লাইনে, আমি কাঁচা কাজ করি না। কিন্তু আজকের ব্যাপার অন্যরকম–”

চাচা রেগে উঠে বললেন, “মন্তাজ, তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বল, সত্ত্বর বছরের থুরথুরে বুড়ি তোমাদের মতো এইরকম তিনজন প্রফেশনাল মানুষকে পিটিয়ে ফ্ল্যাট করে দিয়েছে?”

কালাচান তার মিহি গলায় কিছু-একটা বলতে যাচ্ছিল, ওস্তাদ বাধা দিয়ে বলল, “ইমতিয়াজ সাহেব, আপনি কী বিশ্বাস করতে চান আর কী চান না সেইটা আপনার ইচ্ছা। আমি বলছি আমি যেটা দেখেছি। নিজের চোখে দেখেছি”

“কী দেখেছ?”

ওস্তাদ দাঁতের পাটি বের করে তার ফোকলা দাঁত দেখিয়ে বলল, “একটা দাঁত নাই। গত বারো বছরে দাঁত দূরে থাকুক একটা নখ কেউ ধরতে পারে নাই।”

“তুমি এই সামান্য কাজটা করতে পার না?” চাচা রেগেমেগে বললেন, “আমি এত টাকা দিয়ে বায়না করলাম”

“আপনার বায়নার টাকা আমি ফিরিয়ে দেব।” ওস্তাদ গম্ভীর গলায় বলল, “আমি এই কেস নিতে পারব না।”

কালাচান এবং দবির মিয়া ওস্তাদের সাথে তাল মিলিয়ে মাথা নেড়ে বলল, “অসম্ভব।”

চাচা বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “এ কী বিপদে পড়লাম? প্রথমে বুড়ি ছিল শুধু একগুঁয়ে। এখন বুড়ি হয়ে গেছে বক্সার মোহাম্মদ আলি! এখন কী দশা হবে?”

ওস্তাদ তার ফোকলা দাঁতটায় হাত বুলিয়ে গভীর দুঃখের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আপনাকে একটা উপদেশ দেই ইমতিয়াজ সাহেব?”

“কী উপদেশ?”

“এই বুড়ির বাড়িতে আপনি হাত দিবেন না। বুড়ি যেটা করতে চায় সেটা করতে দেন।”

চাচা চোখ কপালে তুলে বললেন, “সেটা করতে দেব?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

 “কারণ এই বুড়ি খুব ডেঞ্জারাস। তার সাথে তেড়িবেড়ি করলে সে আপনারেও ফিনিশ করে দেবে।”

চাচা কোনো কথা না বলে অবাক হয়ে ফোকলা দাঁতের ওস্তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

.

মন্তাজ ওস্তাদ বলল, “কালাচান দরজা বন্ধ কর।”

কালাচান দরজা বন্ধ করে ওস্তাদের কাছে ফিরে এল। ওস্তাদ তার নিজের এপার্টমেন্টে একটা চেয়ারে বসে আছে, হাতে একটা ছোট আয়না, সে এই আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে। তার উপরের পাটির একটি দাঁত উধাও হয়ে যাওয়ার পর চেহারার কী পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে সেটাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছে।

দবির মিয়া তার কপালের ফোলা অংশে হাত বুলিয়ে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আজকে কী-একটা ঘটনা ঘটল! তিনজন কী-একটা মার খেলাম!”

কালাচান মিহি গলায় বলল, “সতুর বছরের এক বুড়ির কাছ থেকে এইরকম ধোলাই খেয়েছি–খবরটা ছড়িয়ে গেলে কি আমাদের বিজনেস থাকবে?”

দবির মিয়া বলল, “যদি ইমতিয়াজ সাহেব সময়মতো না আসতেন তা হলে সেই ডেঞ্জারাস মেয়েটা নিশ্চয়ই পুলিশকে খবর দিত!”

কালাচান মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, পুলিশ একবার ধরলে আর উপায় আছে?” দবির মিয়া শিউরে উঠে বলল, “এইরকম কুফা আমাদের জীবনে আর লাগে নাই!”

কালাচান মিহি গলায় বলল, “জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের দিন।”

মন্তাজ ওস্তাদ এতক্ষণ কোনো কথা না বলে গভীর মনোযোগ দিয়ে দুইজনের কথা শুনছিল, এইবারে সে মুখ খুলল, বলল, “আসলে বলা যায় আজকের দিনটা হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের দিন।”

কালাচান এবং দবির মিয়া একসাথে চমকে উঠল, মন্তাজ ওস্তাদ কী বলছে বুঝতে না পেরে দুজনেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। ওস্তাদ পড়ে-যাওয়া দাঁতের ফাঁক দিয়ে পিচকি করে থুতু ফেলে বলল, “বলা যায় আজকের দিনটা আমাদের সবচেয়ে আনন্দের দিন।”

কালাচান কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, “কী বলছেন মন্তাজ ওস্তাদ? আনন্দের দিন? একটা বাচ্চা ছেলে আর মেয়ের সামনে একটা বুড়ি এইভাবে পিটিয়ে আমাদের বেইজ্জতি করল আর সেইটা আমাদের আনন্দের দিন?”

মন্তাজ ওস্তাদ মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”

দবির মিয়া ঢোক গিলে বলল, “সহজ একটা অপারেশন করতে গিয়ে মাখিয়ে ফেললাম–বায়নার টাকা পর্যন্ত ফিরিয়ে দিতে হবে। সেইটা আনন্দের দিন?”

“হ্যাঁ।” মন্তাজ ওস্তাদ চোখ ছোট ছোট করে বলল, “হ্যাঁ–সেইটা আনন্দের দিন। সেইটা সৌভাগ্যের দিন।”

কালাচান বলল, “আপনি কী বলছেন আমি তো তার কিছুই বুঝতে পারছি না মন্তাজ ওস্তাদ।”

মন্তাজ ওস্তাদ আয়নায় শেষবার তার দাঁতের গর্তটা লক্ষ করে আয়নাটা সরিয়ে বলল, “তোরা যদি সব জিনিস বুঝতে পারতিস তা হলে তোরা একদিন আমার মতো ওস্তাদ হতে পারতি। কিন্তু তোরা বুঝিস না। তোরা সারাজীবন কালাচান আর দবির মিয়া থেকেয়াবি। চোখ থেকেও তোরা অন্ধ। কান থেকেও তোরা কালা।”

কালাচান এবং দবির মিয়া, তাদের মাথা নেড়ে উৎসুক হয়ে মন্তাজ ওস্তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। মন্তাজ ওস্তাদ দুই পাটি দাঁত বের করে দুইজনকে দেখিয়ে বলল, “আমার কোন দাঁতটা পড়েছে?”

কালাচান কিছু না বুঝে বলল, “উপরের পাটির মাঝখানের দাঁতটা।”

 “ভেরি গুড। এখন বল বুড়ি ঘুসি মেরেছে কোনখানে?”

কালাচান এবং দবির মিয়া দুজনেই মাথা চুলকাল। দবির মিয়া বলল, “তা তো খেয়াল নাই।”

“সে আমার কোন দিকে ছিল?”

 “ডানদিকে।”

“ডানদিক থেকে একজন থুরথুরে বুড়ি একটা ঘুসি মারল আর সামনের একটা দাঁত পড়ে গেল–ব্যাপারটা কী?”

কালাচান আর দবির মিয়া একজন আরেকজনের দিকে তাকায়, কিছু বলতে পারে না। মন্তাজ ওস্তাদ এবারে কালাচানের দিকে তাকিয়ে বলল, “এইবারে কালাচান তুই বল। বুড়ি তোর কোনখানে ঘুসি মেরেছে?”

“ইয়ে মনে হয়–পেটে।”

“আর তুই ব্যথা পেয়েছিস কোনখানে?”

কালাচান কপালে হাত দিয়ে বলল, “মাথায়।

“ভেরি গুড।” মন্তাজ ওস্তাদ এবারে দবির মিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “এইবারে দবির মিয়া তুই বল। তোর নাকের এই অবস্থা কেন?”

দবির মিয়া ইতস্তত করে বলল, “পড়ে গিয়েছিলাম।”

“কেমন করে পড়লি?”

“ইয়ে–তা তো জানি না। কোথায় জানি পা বেঁধে পড়ে গেলাম।”

“তার অর্থ খালি ময়দানে তুই পা বেঁধে পড়ে গেলি।” মন্তাজ ওস্তাদ তার দাঁতের ফাঁক দিয়ে আবার পিচিক করে থুতু ফেলে বলল, “এখন আমাকে শেষ প্রশ্নটার উত্তর দে। ভেবেচিন্তে উত্তর দিবি–বেকুবের মতো উত্তর দিবি না।”

“জে ওস্তাদ। বলেন–”

“থুরথুরে একটা বুড়ি–যেই বুড়ি ঠিক করে হাঁটতে পারে না, থাবা দিয়ে একটা মশা পর্যন্ত মারতে পারে না, সেই বুড়ি ঘুসি মেরে আমার একটা দাঁত ফেলে দিল সেইটা কেমন করে সম্ভব?”

কালাচান বলল, “সেইটা তো আমারও প্রশ্ন। কী তেলেসমাতি কাণ্ড! কী আচানক ব্যাপার!”

মন্তাজ ওস্তাদ ধমক দিয়ে বলল, “আচানক ব্যাপার বলে শেষ? ব্যাপারটা কী বলবি না?”

দবির মিয়া মাথা চুলকে বলল, “কীভাবে বলব? নিজের চোখে দেখলাম অবিশ্বাস করি কেমন করে?”

মন্তাজ ওস্তাদ একটা রহস্যের ভান করে বলল, “নিজের চোখে দেখলেও অবিশ্বাস করতে হয়। এই চারটা অবিশ্বাসের জিনিস ঘটেছে তার কারণটা কী জানিস?”

“কী ওস্তাদ?”

“তার কারণ হচ্ছে সেই বাসায় আরও একজন ছিল!”

কালাচান আর দবির মিয়া একসাথে চিৎকার করে বলল, “আরও একজন ছিল?”

“হ্যাঁ।”

“কোথায়? আমরা তো দেখলাম না!”

“দেখলে না তার কারণ হচ্ছে তারে চোখে দেখা যায় না।”

দবির মিয়া বুকে হাত দিয়ে বলল, “ইয়া মাবুদ! কী বলেন আপনি ওস্তাদ?”

“আমি ভুল বলি না। আমি ঠিক কথা বলি।”

“একজন মানুষ–তারে চোখে দেখা যায় না–সেইটা কি ভূত? নাকি জিন?”

“সেটা আমি জানি না।” মন্তাজ ওস্তাদ গম্ভীর গলায় বলল, “কিন্তু আমি জানি সেই ছেলে আর মেয়েটা তারে চিনে। তাদের সাথে খাতিরও আছে। তারা মনে হয় দেখতেও পায়”

কালাচান জিজ্ঞেস করল, “দেখতে পায়?”

 “হ্যাঁ। মনে নাই মাঝখানে হঠাৎ কে দরজা ধাক্কা দিল–”

“জে ওস্তাদ মনে আছে।”

“দরজা খুলে দেখা গেল কেউ নাই?”

 “জে ওস্তাদ।”

“আসলে তখন সেই অদৃশ্য মানুষ এসেছিল। সে এসে ঢোকার পরেই সেই ছেমড়ির সাহস বেড়ে গেল! মনে আছে?

কালাচান এবং দবির মিয়া একসাথে মাথা নাড়ল, “মনে আছে।”

 “এখন বুঝতে পেরেছ কেন আজকে আমাদের সৌভাগ্যের দিন? আনন্দের দিন?”

কালাচান মাথা চুলকে বলল, “জে না ওস্তাদ।”

মন্তাজ ওস্তাদ রেগে বলল, “আরে বেকুব, এই সহজ জিনিসটাও বুঝিস না! এই অদৃশ্য মানুষের কথা জানে খালি সেই ছেমড়া আর ছেমড়ি! তাদের দুইজনরে ধোকা দিয়ে আমরা অদৃশ্য মানুষরে ধরে আনব!”

“কী বলেন ওস্তাদ?”

“হ্যাঁ। তারপরে বিজনেস। একটা অদৃশ্য মানুষ কত টাকায় বিক্রি হবে জানিস? বিক্রি করার আগে শো করা হবে। সার্কাসে সার্কাসে দেখানো হবে। দশ লাখ মানুষ দুইশ টাকা টিকিট দিয়ে দেখতে আসবে–”

দবির মিয়া মাথা চুলকে বলল, “যারে দেখা যায় না তারে কেমন করে দেখবে?”

“আরে গাধা যেটা দেখা যায় সেইটা কি পয়সা দিয়ে কেউ দেখতে আসে? যেটা দেখা যায় না মানুষ সেইটাই পয়সা দিয়ে দেখে।” মন্তাজ ওস্তাদ তার দাঁতের ব্যথা ভুলে গিয়ে দুলে দুলে হাসতে লাগল।

কালাচান জিজ্ঞেস করল, “অদৃশ্য মানুষরে কেমন করে ধরবে ওস্তাদ?”

মন্তাজ ওস্তাদ মাথায় টোকা দিয়ে বলল, “চিন্তাভাবনা করে। এইবারে কোনো ভুল যেন না হয়।”

“হবে না ওস্তাদ।”

“কাজ শুরু করার আগে দরকার খোঁজখবর। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে বাসার সামনে রেখে সেখান থেকে এই বাসার উপরে খোঁজখবর রাখতে হবে। বাসার ভিতরে গোপন মাইক্রোফোন রেখে কথাবার্তা শুনতে হবে”।

দবির মিয়া দাঁত বের করে হেসে বলল, “একেবারে হলিউডের সিনেমার মতন!” মন্তাজ ওস্তাদ দাঁতের ফাঁক দিয়ে পিচিক করে থুতু ফেলে বলল, “হলিউডের সিনেমাও এইবারে ফেইল মারবে। আমরা হব হলিউডের সিনেমার বাপ!”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *