লয়েড কম্পানি একটি ব্যাঙ্ক স্থাপন করেছে পাটনা শহরে। এই নতুন ব্যাঙ্কের হিসাব রক্ষা পদ্ধতি ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেবার জন্য ওই কম্পানির কটক শাখা থেকে ভরতকে বদলি করা হয়েছে কিছুদিনের জন্য। পাটনা শহর ভরতের একেবারে অচেনা নয়, এখানে সে একবার থেকে গেছে কয়েকদিন, পথ ঘাট মোটামুটি চেনা।
গোলঘরের কাছে সে একটি বাড়ি ভাড়া করেছে, সেখানেই কেটে গেল মাস তিনেক। একটা নিজস্ব টাঙ্গা রয়েছে তার, সেই গাড়িতে করে সে চক অঞ্চলে ব্যাঙ্কে যায় প্রতিদিন, প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে, তার পরেও সে সরাসরি বাড়ি ফেরে না, কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়। বাড়িতে যদিও তার রান্নার বন্দোবস্ত আছে, তবু সহকর্মীরা তাকে আমন্ত্রণ জানায় প্রায়ই।
পটিনা শহরটিতে বেশ একটি ঐতিহাসিক গন্ধ আছে। এককালের পাটলিপুত্র, হিন্দু আমলের সেই গৌরবচিহ্ন অবশ্য এখন আর বিশেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবু এখানেই ছিল সেলুকাস-বিজয়ী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজধানী, সম্রাট অশোক এখান থেকেই রাজত্ব পরিচালনা করেছিলেন, এ কথা ভাবলেই ভরতের রোমাঞ্চ হয়। ইতিহাস তার প্রিয় বিষয়। বর্তমানে পাঠান ও মোগল আমলের চিহই চতুর্দিকে ছড়ানো। শের শাহের দুর্গ, শের শা স্থাপিত শাহী মসজিদ, আবার মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পুত্র পারভেঞ্জও এখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বুদ্ধদের এখানে পদার্পণ করেছিলেন, আবার শিখদের শেষ গুরু গুরুগোবিন্দ সিং জন্মগ্রহণ করেছিলেন এখানেই। পথ দিয়ে যেতে যেতে শোনা যায় মসজিদের আজান, গুরুদোয়ারার সঙ্গীতময় প্রার্থনা, মন্দিরের কীর্তন।
ইংরেজ শাসকদের উপস্থিতিও টের পাওয়া যায় ভালভাবেই। সন্ধের সময় গঙ্গার ধারে গোরাদের ব্যান্ড বাজে। বাংলার শেষ নবাব মীরকাশিমকে এই পাটনার কাছেই চরমভাবে পরাজিত করার পর ইংরেজরা এখানে বড় রকমের ঘাঁটি গেড়েছে। ভরতের বাড়ির কাছে যে গোলঘর, সেটি আসলে একটি বিশাল শস্যগোলা, শতাধিক বৎসর আগে এই অঞ্চলে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল, তারপর ইংরেজরাই এই শস্যভাণ্ডারটি নির্মাণ করে। এই শস্যাগারের ওপরের দিকটা গম্বুজের মতন, সিঁড়ি দিয়ে চূড়ায় ওঠা যায়, সেখান থেকে নিশ্চয়ই গঙ্গা নদী ও শহরাঞ্চলের অনেকখানি দেখা যেতে পারে, ভরত মাঝে-মাঝেই কিছু ইংরেজ নারী-পুরুষকে সেই ওপরে উঠে হাওয়া খেতে দেখে। সে নিজেও ওখানে একবার যাওয়ার চেষ্টা করে প্রতিহত হয়েছে, শুধু সাহেব-মেমদেরই অধিকার আছে ওপরে ওঠার, নেটিভদের জন্য নিষিদ্ধ।
ভরতের ব্যাঙ্কে এজেন্ট ও ম্যানেজার এই দুজনই ইংরেজ, বাকি পাঁচজন স্থানীয় কর্মচারী। চিফ ক্যাশিয়ার বিষ্ণুকান্ত সহায় নামে এক ব্যক্তি, তিনি দেড় লক্ষ টাকা জমা রেখে এই পদটি পেয়েছেন। বিষ্ণুকান্তজি ইয়েস, নো, ভেরি গুড ছাড়া আর একটিও ইংরিজি শব্দ জানেন না। অন্য কর্মচারীরাও ইংরিজিতে তেমন সঙগড় নয়। ভরতই আপাতত মালিকপক্ষ ও কর্মচারীদের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী। ভরত হিন্দি-উর্দুও কিছুটা শিখে নিয়েছে। পাটনার হিন্দুরা অনেকেই উর্দু জানে, বৃদ্ধরা এখনও ফার্সি বলে ও আওড়ায়।
বাবু বিষ্ণুকান্ত সহায় এক হৃষ্টপুষ্ট চেহারার প্রৌঢ়, অবস্থাও বেশ সচ্ছল। তিন পুরুষ ধরে তাঁদের মহাজনি কারবার, তাঁর পিতা সিপাহি বিদ্রোহের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির ফৌজকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে বিশেষ সাহায্য করেছিলেন এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। বিষ্ণুকান্তজি হেড ক্যাশিয়ারের চাকরি নিয়েছেন শুধু সামাজিক প্রতিপত্তির জন্য। প্রথম দিন থেকেই তিনি পছন্দ করে ফেলেছেন ভরতকে, প্রায়ই নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাইয়ে পাইয়ে আপ্যায়ন করেন। অন্য কর্মচারীরা আড়ালে কৌতুক করে বলে, ভরত সিংহের আর কটক ফেরা হবে না, কোষাধ্যক্ষ মশাই তাকে দামাদ করে রেখে দেবেন।
বিষ্ণুকান্ত সহাযের নটি কন্যা ও দুটি পুত্র। এদের মধ্যে তিনটি কন্যার বিবাহ এখনও বাকি আছে। বিষ্ণুকান্তজির বাড়ি গঙ্গার কিনারে। অন্তঃপুরের মেয়েরা কঠোর ভাবে পর্দানশীন, তাদের কারুর কণ্ঠস্বর কিংবা অলংকারের রিনিঝিনি পর্যন্ত শোনা যায় না। বিষ্ণুকান্তজি বাঙালিদের বিশেষ পছন্দ করেন না, তাঁর একটি মাত্র কন্যার বিয়ে হয়েছে এক বাঙালি কেরানির সঙ্গে, সেই জামাইটি উদ্ধত ধরনের, শ্বশুরালয়ের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখেনি। ভরত অবশ্য নিজেকে বাঙালি বলে না, তার ত্রিপুরার পরিচয়ও সে মুছে ফেলেছে, সবাইকে সে বলে তার জন্ম আসামে। সিংহ পদবি উত্তর ভারতের সর্বত্র প্রচলিত। বিষ্ণুকান্তজি বিশ্বাস করেন, ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারটি আসলে সংঘটিত হয় দুই পক্ষের বাবাদের মধ্যে, অনুষ্ঠানটি নিছক সামাজিকতা। ভরতের বাবা-মা কেউ নেই শুনে তিনি খানিকটা খটকার মধ্যে আছেন।
নিছক খাওয়া দাওয়ার লোভেই ভরত এ বাড়িতে আসে না। সন্ধের দিকে প্রায়ই এখানে একটা আড্ডা বসে এবং নানা রকম তর্ক বিতর্ক হয়। নিজের বাড়িতে একা একা সময় কাটাবার বদলে এই আড্ডায় যোগ দিতে ভরতের ভাল লাগে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলীর ব্যাপারে সে উৎসাহী, কলকাতার অধিবেশনে একবার সে যোগ দিয়েছিল।
বিষ্ণুকান্তজির জ্যেষ্ঠ পুত্র শিউপজন কংগ্রেসের একজন উৎসাহী সদস্য। দ্বারভাঙ্গার মহারাজার দলবলের সঙ্গে বোম্বাই কংগ্রেসে যোগ দিতে গিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা সে সবাইকে শোনায়। বোম্বাই কত দূর, সেখানকার মানুষজন, তাদের খাদ্য, পোশাক, ভাষা সম্পর্কে এখানকার অনেকেই কিছু জানে না।
এই শিউপুজন কয়েকদিন ধরে হঠাৎ অন্য প্রসঙ্গে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। গোরক্ষা। বালিয়া জেলার নাগরার রাজপূত জমিদার জগদেও বাহাদুর গোরক্ষার একজন প্রধান প্রবক্তা, সম্প্রতি লোকজন এসে পাটনায় সভা করে বলে গেছে, যেমনভাবেই হোক গোহত্যা বন্ধ করতেই হবে। জগদেও বাহাদুর মুসলমান কশাইদের কাছ থেকে গোরু কেড়ে নেবার জন্যও ডাক দিয়েছেন।
শিউপুজনের উত্তেজনা দেখে ভরত অবাক হয়। কয়েক বছর ধরেই গোহত্যা বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম আন্দোলন চলছে। পত্র-পত্রিকা খুললেই এ প্রসঙ্গ চোখে পড়ে। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস তো প্রথম থেকেই এ আন্দোলন থেকে বিযুক্ত রয়েছে। কংগ্রেসের সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক সমস্যা এখানে আলোচিত হবে না, এটাই কংগ্রেসের নীতি। সামাজিক সমস্যা নিয়ে জড়িয়ে পড়লেই তো দলাদলি শুরু হবে।
মুসলমানরা গোড়া থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে সন্দিহান। আলিগড় থেকে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে যে, মুসলমানরা যেন কংগ্রেসে যোগ না দেয়, এটা হিন্দু আর পার্শিদের প্রতিষ্ঠান। কংগ্রেস গরিষ্ঠ সংখাক হিন্দুদেরই স্বার্থ দেখবে। সৈয়দ আহমদ খান বলেছেন, ভারতীয় মুসলমানদের পৃথক অস্তিত্ব রক্ষা করতেই হবে। অবশ্য বদরুদ্দিন তায়েবজীর মতন শিক্ষিত মুসলমান এর বিরোধিতা করেছেন, দেওবন্ধের মওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গোহি ফতোয়া দিয়েছেন যে, সৈয়দ আহমদের কথা মানবার কোনও দরকার নেই, ইসলামের মূল নীতি বিঘ্নিত না করে হিন্দুদের সঙ্গে জাগতিক ব্যাপারে সহযোগিতা করা যায়।
কিন্তু গোহত্যা নিষিদ্ধ করলে তো সমগ্র মুসলমান সমাজই ক্রুদ্ধ হবে এবং তাতে সৈয়দ আহমেদের হাতই শক্ত হবে।
ভরত জিজ্ঞেস করল, শিউলূজন ভাই, আপনি কংগ্রেস নেতা হয়ে এর মধ্যে নিজেকে জড়াচ্ছেন কেন?
শিউপূজন বলল, কংগ্রেস তো হয় বছরে একবার, তিন দিনের জন্য। সারা বছর আমাদের মন পরিচয় নেই? আমরা আমাদের পুজা-পার্বণ করব না, ধর্ম রক্ষা হবে না? মুসলমানরা সারা বছরই মুসলমান থাকে, আমরা কংগ্রেসি হয়েছি বলে কি জাত খোয়াব? তুমি জানো, আজকাল তারা গোহত্যা করে রাস্তা দিয়ে তা দেখাতে দেখাতে নিয়ে যায়। গোরুর রক্ত দেখলে হিন্দুদের ধর্মনাশ হয়, তারা ইচ্ছে করে এ রকম করে!
ভরত বলল, আমার অনেক মুসলমান বন্ধু আছে। তারা তো এ রকম করে না।
শিউপূজন বলল, তুমি থাকো তোমার বন্ধুদের নিয়ে! কশাইরা বোজ কত গোরু জবাই কবে, তা জানো? দুধের অভাবে সারা দেশ দুবলা হয়ে যাচ্ছে। দয়ানন্দ স্বামী বলেছেন, একটা গোরু মারলে কতজন মুসলমান তার গোস্ত খায়? বড় জোর কুড়িজন। আর একটা গোরুকে যদি বাঁচিয়ে রাখো, তার অন্তত ছটা বাছুর হবে, এদের সারা জীবনে যত দুধ-ঘি-মাখন হবে, তাতে কয়েক হাজার হিন্দু-মুসলমান খেয়ে গত সঞ্চয় করতে পারে।
এই আড্ডায় প্রতিদিনই একজন লোক উপস্থিত থাকেন, তাঁকে সবাই পণ্ডিতজি বলে ডাকে। পণ্ডিতজি এক কোণে বসে আলবোলার নল মুখে দিয়ে ফুরুক ফুরুক করে টানেন আর মাঝে মাঝে দু’একটা মন্তব্য করেন। তাঁর সেই সব মন্তব্য শুনে বোঝা যায়, লোকটির নানা বিষয়ে জ্ঞান আছে।
পণ্ডিতজি বললেন, আরে শিউপুজন বেটা, তুই খালি মুসলমান মুসলমান করছিস কেন? গো-হত্যা বন্ধ করতে হবে কাদের জন্য জানিস? ইংরেজদের জন্য! গো-মাংস কারা বেশি খায়? ইংরেজরা! মুসলমানরা অন্য মাংস খায়, বকরির মাংস খেতে পারে, কিন্তু ইংরেজরা বকরির মাংস পছন্দ করে না, গো-মাংসই তাদের চাই। তোরা কংগ্রেসিরা মুসলমান ভাই-বেরাদরদের বোঝা যে ইংরেজদের জব্দ করার জন্যই হিন্দু মুসলমানের মিলিতভাবে গো-হত্যা বন্ধ করা উচিত।
ভরত কৌতূহলীভাবে লোকটির দিকে তাকাল। এ রকম কথা তো সে আগে কখনও শোনেনি, কোথাও পড়েনি। হিন্দু-মুসলমান একত্রিত হয়ে গো-হত্যা বন্ধ আন্দোলন করবে? ইংরেজরা মাংস খেতে না পেয়ে আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে। বেশ মজা তো।
অন্য একজন বলল, আরে পতিক্সি, তুমি কী পাগলের মতন কথা বলছ। মুসলমানরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যাবে কেন? তা ছাড়া বকরীদের সময় গোরু কোরবানি দেওয়া তারা পণ্য কাজ মনে করে। তারা এমনি এমনি সে অধিকার হাড়বে? জোর করে পবিত্র গো-মাতার হত্যা বন্ধ করতে হবে।
পণ্ডিতজি বললেন, গোরুই যে কোরবানি দিতে হবে এমন কথা ইসলামে কোথাও নেই। আরবি বকর শব্দ থেকেই এসেছে বকরী আর বরত মানে হচ্ছে গোরু। সুতরাং বকরীদে ছাগল বলি দিলেও চলে। ইসলামি আইনে এমন কথাও আছে, একটা উট বা একটা গোরু বা একটা উইসের বদলে সাতটা ছাগল বা ভেড়া বলি দেওয়া যেতে পারে।
শিউজান বলল, সাতটা ছাগলেব যা দাম, তার চেয়ে একটা গোরু অনেক শস্তা। সেইজন্যই ওরা গোরু বলি দেয়।
ভরত আরবি শব্দের সূক্ষ্ম প্রভেদ কিংবা এই সব নিয়মের কথাও জানে না। সে চুপ করে রইল।
পণ্ডিতজা আবও বললেন, মুসলমানদের ঠিক করে বুঝাও। এই হিন্দুস্থানে এক সময় গোহত বন্ধ করেছে তো মুসলমানরাই। সম্রাট আকবর গোহত্যা নিষিদ্ধ করেননি। তাঁর আদেশ না মেনে কেউ গোহত্যা কবলৈ তাকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দিতেন। অত দূরেও যেতে হবে না, এই তো সেদিন, সিপাহি যুদ্ধের সময় জাহাপনা বাহাদুর শাহ দিল্লিতে শুধু গোবধ নিষিদ্ধ করেননি, কশাইখানা থেকে সব গরু বায়োপ্ত করার হুকুম জারি করেছিলেন। দিল্লির লড়াইয়ের সময় বকরীদের সময় যারা গোৰু কোরবানি করেছিল, তাদের ধরে ধরে কামানের মুখে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যেখানেই হিন্দু-মুসলমান হাত মিলিয়ে ইংরেজের সঙ্গে লড়েছে, সেখানেই গোহত্যা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এই পাট শহরেও কেউ তখন গোরু কোরবানি করেনি! এখন কি আবার হিন্দু-মুসলমানে হাত মিলিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সময় আসেনি?
শিউপূজন বল, পাশার দান উল্টে গেছে পণ্ডিত! এখন মুসলমানরা ইংরেজদের পক্ষে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হবার জন্য তারা এখন ইংরেজদের সাহায্য চায়। আলিগড়ের ওই সৈয়দ আহমদ খান তো ইংরেজদের বুদ্ধিতেই চলে! ইংরেজও মওকা বুঝে ভেদ নীতি চালাচ্ছে।
পবপর কয়েকদিন এই আলোচনাই চলল। শুনতে শুনতে ভরত অস্বস্তি বোধ করে। কিন্তু এই আন্দোলনের পরিণতি যে হঠাৎ এত মারাত্মক হবে, তা সে কল্পনাও করেনি।
এক বাতে সে একা নিজের টাঙ্গায় ফিরছে। কথায় কথায় যে অনেক রাত হয়ে গেছে তা সে খেয়াল করেনি। টাঙ্গা চালক মকবুল ঝিমোতে ঝিমোত গাড়ি চালায়। ভরতেরও ঝিমুনি এসে গেছে। হঠাৎ এক জায়গায় বহু লোকের কোলাহল শুনে তার চটকা ভেঙে গেল। কারা যেন মশাল নিয়ে ছুটে আসছে এদিকে। শহিদ কা মকববার পাশ দিয়ে এই রাস্তা, কাছাকাছি বাড়িগুলিতে বাতি নিবে গেছে, শহব এখন প্রায় ঘুমন্ত, এই সময় এত লোক ছুটে আসছে কেন?
ভরত বেশি চিন্তার সময় পেল না। সেই ক্রুদ্ধ জনতার কণ্ঠে রক্তপিপাসু জিগির। তারা পথ আটকে টাঙ্গাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল, তোর সওয়ারি হিন্দু না মুসলমান?
টাঙ্গাওয়ালা কোনও জবাব না দিয়ে এক লাফ দিয়ে পালাল।
ভরত দেখল, এই জনতার অধিকাংশ লোকের মুখে দাড়ি, মাথায় ফেজ, হাতে তলোয়ার বা বশী। তারা ভরতকে দেখে হিন্দু হিন্দু বলে চিৎকার করে টেনে নামাল।
কী করে তারা ভরতকে হিন্দু বলে চিনল? ভরতের মাথায় টিকি বা কপালে চন্দন চর্চার মতন কোনও হিন্দুত্বেব চিহ্ন নেই। শিক্ষিত হিন্দু ও মুসলমানের পোশাকও একই রকম, পাজামা ও শেরওয়ানি। মুখের আকৃতি ও গায়ের রঙেরই বা মুসলমান-হিন্দুতে তফাত কোথায়?
তবু কেমনভাবে যেন চেনা যায়! সেই জনতা ভরতকে কোনও কথা বলারই সুযোগ দিল না। আল্লা হো আকবর ধ্বনি দিতে দিতে ভরতকে মারতে শুরু করল।
দু’একটা চড় চাপড় খেয়েই ভরত শুরু করল দৌড়। তার ছিপছিপে মেদহীন শরীর, সে বরাবরই খুব জোরে দৌড়োতে পারে, প্রাণভয়ে গতি আরও বেড়ে যায়। কিন্তু দৌড়ে পালাতে পারবে না ভরত। এই জনতার মধ্যে তার মতন চেহাবার যুবক অনেক আছে, তা ছাড়া তারা বড় বড় পাথরের টুকরো ছুঁড়ে মারছে তার দিকে।
একটা পাথর লাগল ভবতের মাথার পেছনে, ভরত তাল সামলাতে পারল না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে। খুব জোরে লেগেছে, রক্ত বেরুচ্ছে গলগল করে, তবু ভরত হাঁচোর-প্যাঁচোর করে একটা বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছবার চেষ্টা করল। তাতেও কোনও লাভ হল না, লোহার বল্ট বসানো সেই বিশাল দরজা একেবারে পাষাণের মতন বন্ধ, এখন কে সে-দ্বার খুলবে।
ভরত ফিরে তাকিয়ে দেখল, জনতা থেকে অনেকখানি এগিয়ে এসেছে জনাতিনেক লোক, তাদের হাতে উদ্যত তলোয়ার, আর কিছু মুহূর্তের মধ্যেই তারা ভারতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ভরত ভয়ে চোখ বুজে ফেলল, মৃত্যু বারবার তাকেই তাড়া করে আসে কেন? জীবন তাকে কেন আশ্রয় দিতে চায় না। জন্ম থেকেই যেন সে অভিশপ্ত। তা হলে সে জল কেন? এ জন্মের কোনও সার্থকতা রইল না, রাস্তার মধ্যে কিছু উম্মত্ত মানুষের হাতে তার প্রাণ যাবে, কেন প্রাণ দিতে হচ্ছে সেটাও সে জানতে পারবে না।
উঠে আবার পালাবার চেষ্টা করার মতন ক্ষমতা নেই ভরতের। জলে ডােবা মানুষের মতন অসহায়ভাবে কুঁকড়ে মুকুড়ে গিয়ে পাগলের মতন বলতে লাগল, হে ভগবান, বাঁচাও, আমি কোনও দোষ করিনি, আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও!
পরপর দুবার বন্দুকের গুলির শব্দ হল সেই বাড়িটির এক জানলা থেকে। তাতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল জনতা। ওপর থেকে কেউ একজন জলদগম্ভীর স্বরে বলল, হঠে যা, সব হঠে যা। আগে ফাঁকা আওয়াজ করেছি, এবার সত্যিই গুলি মারব।
জনতা তবু চিৎকার করে উঠল এবং সত্যিই আরও দু’বার গুলির আওয়াজ হল।
এরপর জনতার ছত্রভঙ্গ হতে আর দেরি লাগল না। সাধারণ কোনও ভারতীয়ের বাড়িতে বন্দুক-পিস্তল থাকে না, সরকারি আইনে নিষিদ্ধ। জনতার কাছেও কোনও আগ্নেয়াস্ত্র নেই, সুতরাং এ বাড়িকে ভয় পেতেই হবে।
সেই কঠিন দরজা যখন খুলে গেল, তখনও ভরত মাটিতে শুয়ে থরথর করে কাঁপছে। সে বীরপুরুষ নয়, আসন্ন মৃত্যুর সামনে সে শান্তভাবে দাঁড়াতে পারে না, সে যে বাঁচতে চায়, সে ভীষণভাবে বাঁচতে চায়।
দরজা খুলে যাবার পরেও ভরত যে এ যাত্রা বেঁচে গেল, তাও সে বুঝতে পারছে না। সে হে ভগবান, হে ভগবান করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় সে নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকেছিল, কিন্তু চরম বিপদের সময় সে মনের জোর থাকে না। তখন ঈশ্বর ছাড়া আর কারুর কাছে সাহায্য চাইবার কথা মনে পড়ে না।
দুজন ভূত্য শ্রেণীর লোক ভরতকে তুলে নিয়ে ভিতরের এক উঠোনে শুইয়ে দিল। ভরত জ্ঞান হারায়নি, সে দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন বন্দুকধারী বলশালী পুরুষ, মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি, মাথায় একটা শোলার টুপি। তিনি উর্দুতে জিজ্ঞেস করলেন, কী নাম তোমার? কোন মহল্লায় বাড়ি?
ভরত কী নাম বলবে? এ বাড়ি হিন্দুর না মুসলমানের? শুধুমাত্র নাম শুনেই তাকে আবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে কি? মিথ্যে মাম বলেও কি পার পাওয়া যাবে?
ভরত নিজের নামটাই বলল। লোকটি বলল, তুমি বেওকুফের মতন এত রাত্রে পথে বেরিয়েছ কেন? জান না শহরে দাঙ্গা লেগে গেছে? হিন্দুরা মুসলমান বস্তিতে আগুন লাগিয়েছে, মসজিদের সামনে শুয়োর মেরেছে, মুসলমান মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট করেছে, তাই মুসলমানরাও ক্ষেপে গিয়ে বদলা নিতে শুরু করেছে।
ভরত কম্পিতভাবে হাত জোড় করে বলল, আমি জানি না, আমি কিছু টের পাইনি, আমায় মাফ করুন, আমি কোনও দোষ করিনি।
এ বাড়ির অধিপতির নাম মির্জা খোদাবক্স, তিনি পাটনার পুলিশ বিভাগের ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্ট। রাত্রির দিকে তিনি নিয়মিত সয়াব পান করেন, তাই চক্ষু লাল, কিন্তু তেমন নেশাগ্রস্ত নন। ভরত কী কাক্স করে, কোথায় থাকে সব জেনে তিনি ভরতের মাথার কত পরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, আজ রাতে তোমার আর ঘরে ফেরা হবে না, আজ এখানেই শুয়ে থাকো।
ভরত তার ভগবানের কাছে বাঁচার জন্য ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করেছিল, সেই মতোই তার ভগবান যেন পাঠিয়ে দিলেন ত্রাতা হিসেবে এক পলিশ অফিসারকে।
সে রাত্তিরে তো বটেই। তার পরের দুদিনও ভরতের বাড়ি ফেরা হল না। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুনোখুনি চলছে চতুর্দিকে। গোহত্যা বন্ধের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মানুষ হত্যা চলছে নির্বিকারে। ক্রমশ জানা গেল, শুধু পাটনায় নয়, এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের নানা প্রান্তে, গয়া, আজমগঞ্জ, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, মহারাষ্ট্রে। উড়িষ্যা বাংলা-আসাম-ত্রিপুরায় অবশ্য কিছু ঘটেনি।
এর আগেও যে হিন্দু-মুসলমানে মারামারি হয়নি তা নয়। প্রতিবেশীর কলহ কিংবা স্থানীয় সমস্যা নিয়ে সংঘর্ষ অনেক সময় দাঙ্গর আকার নিয়েছে, কিন্তু তা এক স্থানেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, এরকমভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে আগুন ছড়ায়নি। যেখানে যেখানে গোরক্ষণী সভা স্থাপিত হয়েছে, জোর প্রচার চলেছে, সেইসব জায়গাতেই শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। বিহারের দ্বারভাঙ্গার মহারাজা, দুমরাঁও-এর মহারাজা এবং আরও অনেক হিন্দু জমিদার গোরক্ষার সমর্থনে প্রচুর চাঁদা দিয়েছেন। একদল উগ্র হিন্দু, সন্ন্যাসীদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র থাকে, তারা এই সুযোগে যবন-নিধনে মেতেছে। সম্রাট আকববের আমলে হিন্দু সাধু দেখলেই ফকিররা তাদের খুন করত, সেই জন্য আকবরের পারিষদ বীরবল সম্রাটকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে হিন্দু সাধুদের রক্ষা করার জন্য একদল অব্রাহ্মণ সাধুদের হাতে অস্ত্র দিতে বাজি করিয়েছিলেন, এতদিন পর সেই সব সাধুরাই যেন প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হয়েছে।
দাঙ্গার সময় অনেক অনেক গুজব, অনেক অলীক, অতিরঞ্জিত কাহিনী ছড়ায়। কে আগে শুরু করেছে তা নিয়ে দুই সম্প্রদায়ই পরস্পরের ওপর দোষারোপ করে। নারী নিগ্রহের কোনও ঘটনা না ঘটলেও কিছু বিকৃত রুচির মানুষ সেরকম গল্প বানাতে ভালবাসে। যত এরকম গল্প প্রচারিত হয়, ততই নিরীহ মানুষের রক্ত গড়ায় পথে পথে।
ভরতের মাথা থেকে প্রচুর রক্তপাত হলেও ক্ষতটি মারাত্মক হয়নি। কিন্তু তার বিষম মন খারাপ। কংগ্রেসে যোগ দিতে মুসলমানরা এমনিতেই দ্বিধান্বিত, এই সব ঘটনা ঘটলে তারা আরও পিছিয়ে যাবে। তার বন্ধু ইরফানের কথা মনে পড়ে। সে আছে মুর্শিদাবাদে। ইরফানই তাকে কংগ্রেসের দিকে আকৃষ্ট করেছিল, এখন কি ইরফানও সন্দিহান হয়ে উঠবে!!
মির্জা খোদাবক্সের বাড়িতে তার যত্নের ক্রটি নেই। সেলিনা নামে একটি পরিচারিকা তার দেখাশুনো করে, মাঝবয়েসী আঁটসাঁট চেহারার এই রমণীটির জিভে বেশ ধার আছে, কিন্তু অন্তরটি কোমল। প্রথম দিনই সে ঝংকার তুলে জিজ্ঞেস করেছিল, কী গো, তুমি তো হিন্দু, তার ওপর আবার ব্রাম্ভন নাকি? তা হলে তো আমাদের হাতের ছোঁওয়া খাবে না, নিজের রুটি নিজে পাকিয়ে নিতে হবে। তোমরা হিন্দুরা কি কাঁচা সবজি খাও?
ভরত এ সব কথা কখনও চিন্তাই করেনি। সে বলেছিল, আমি ব্রাহ্মণ নই। আপনারা যা খান, আমি সবই খেতে পারি। গোস্ত-এও আপত্তি নেই।
সেলিনা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলেছিল, বড় গোস্ত এ বাড়িতে ঢোকে না। খোদ মালিকের বারণ। থালা ভর্তি খাবার সাজিয়ে এনে সে বলে, হিন্দুরা মোছলমানদের ধরে ধবে মারছে, আর এ বাড়িতে আমরা একটা হিন্দুকে খাইয়ে দাইয়ে পুষছি। মালিকের যে কী মর্জি। আমার ইচ্ছে করে তোমার খাবার মধ্যে জহর মিশিয়ে দিই।
ভরত এক টুকরো রুটি মুখে তুলতে গিয়েও বলে, সত্যি মিশিয়ে দিয়েছেন নাকি?
সেলিনা তখন হেসে কুটিকুটি হয়। তারপর হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলে, আহা রে, যে-সব মানুষগুলো মরে, তাদের মায়েদের কত কষ্ট। তোমাকে মারলে তোমার মা কেঁদে কেঁদে কত ডাকবে তোমাকে! তোমার জরু-বাচ্চারা কোথায়?
ভরতের সেরকম কেউ নেই শুনে সে থুতনিতে আঙুল দিয়ে বলে, ও মা, এত বয়েসেও শাদি করেনি? তোমার মায়েব তো তা হলে কষ্টের শেষ নেই!
ভরতের কল্পিত মায়ের কথা চিন্তা করে সেলিনার চোখ ছলছলিয়ে আসে।
ভরত ভাবে, সেলিনার মতন মেয়ে তো সব জাতেই আছে, তবু ধর্মের এত তফাত কেন?
ইংরেজ সরকার পুলিশ নামিয়ে তিনদিনের মধ্যে ঠাণ্ডা করে দিল দাঙ্গা। উপদ্রুত এলাকায় বসানো হল পিটুনি কর। কলকাতার ইংরিজি কাগজগুলো বিদ্রুপ করে লিখল, হিন্দু ও মুসলমানরা বর্বরের মতন নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। ইংরেজ শাসন এ দেশের পক্ষে যে কতখানি প্রয়োজনীয় তা আর একবার প্রমাণিত হল।
মির্জা খোদাবক্স বস্তি ছিলেন, তিনি একবার করে শুধু উঁকি দিয়ে ভরতের খবর নিয়ে গেছেন। তাঁর সঙ্গে ভারতের বিশেষ কথা হয়নি। তবে, ভরত বিদায় নেবার সময় তিনি যে কথাগুলো বললেন, তা দাগ কেটে গেল ভরতের মনে।
তিনি বললেন, এ দাঙ্গায় মুসলমান মরেছে, হিন্দুও মরেছে। কিন্তু দাঙ্গা বাধাবার জন্য হিন্দুরাই দায়ী। আমি গো-মাংস খাই না, আমার পরিবারের কেউ খায় না। কিন্তু গোরু-কারবানি নিষিদ্ধ করার জন্য হিন্দুদের যে উৎসাহ, তা এ দেশের সর্বনাশ ডেকে আনবে! এ আঘাত প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আঘাত। কংগ্রেস থেকে সরকারের সব কাজে এ দেশের লোকদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করা হচ্ছে। আইন সভায়, বিভিন্ন মিউনিসিপ্যালিটিতে প্রতিনিধিত্ব পেতেও শুরু করেছে, কিন্তু তারা কাবা? হিন্দুরাই শিক্ষাদীক্ষায় বেশি অগ্রসর, তারাই বেশি সুযোগ পাচ্ছে। এতকাল হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা ছিল না, এখন ক্ষমতা পেয়েই যদি তারা মুসলমানদের অধিকার খর্ব করতে শুরু করে, তা হলে মুসলমানরা তা মানবে কেন? গোরক্ষা হল মুসলমানদের ওপর সেই জুলুমের প্রথম চিহ্ন।
বিষ্ণুকান্ত সহায়ের বাড়িতে পণ্ডিতজির মুখে ভরত যেকথা শুনেছিল, সেটা তার বলার ইচ্ছে হয়েছিল একবার। হিন্দু আর মুসলমান হাতে হাত মিলিয়ে কিছুদিনের জন্য অন্তত গোরু-কাটা বন্ধ করে ইংরেজদের জব্দ করতে পারে না? তারপরেই তার মনে পড়ল, মির্জা খোদাবক্স ইংরেজ সরকারের পুলিশ, তাঁর কাছে ইংরেজ-বিরোধী কোনও কথা বলা সঙ্গত হবে না।
মিজা বক্স সাহেব এর পরে আর একটি মোক্ষম কথা বললেন। তিনি বললেন, হিন্দুদের আর কোনও দেশ নেই, মুসলমান আছে সারা দুনিয়ায়। মুসলমান কখনও শুধু ভারতীয় হবে না, সে অন্য দেশের মুসলমানের সঙ্গে ভাই-বেরাদরি ছাড়বে না কিছুতেই। হিন্দুরা সারা ভারতকে এখন এককাট্টা করতে চায়, তাতে তাদের লাভ আছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারবে। মুসলমান তা মানবে কেন? সারা ভারত যত এক হতে চাইবে, তত বিচ্ছিন্নতা বাড়বে, দুই সম্প্রদায় তত দূরে সরে যাবে, এই আমি বলে রাখলাম!