১১. রাত এগারোটার সময় নবী এসে উপস্থিত

রাত এগারোটার সময় নবী এসে উপস্থিত। তার চোখ রক্তবর্ণ। কথাবার্তা অসংলগ্ন। ঠিকমত

দাঁড়াতেও পারছে না। জীতু মিয়া বলল, সায়েব ঘুমাইতেছে। নবী ধমকে উঠল।

ডেকে তোল। বল গিয়ে নবী এসেছে। জীতু মিয়া ডেকে বলবে সে রকম ভরসা বোধ হয় তার হল না। নবী গলা উঁচিয়ে ডাকল,–ওসমান।

ওসমান সাহেব বাতিটাতি নিভিয়ে সত্যি সত্যি শুয়ে পড়েছিলেন। হাকডাকে বেরিয়ে এলেন।

ওসমান, হাউ আর ইউ?

ভাল। আপনার অবস্থা?

অবস্থা তো দেখতেই পারছেন। খুব ভাল না। বসতে পারি?

হ্যাঁ পারেন।

বেশিক্ষণ বিরক্ত করব না। ঘুমুচ্ছিলেন শুনলাম। কোনো লেখক রাত এগারোটায় ঘুমোয় বলে জানতাম না। রাত হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটির সময়। রাতে ঘুমুবে নানক্রিয়েটিভ লোক।

নবী সোফায় বসল। পরীক্ষণেই সোফা বদলে বেতের চেয়ারে বসল। সেটিও পছন্দ হচ্ছিল না। বোধ হয়। বিরক্ত ভঙ্গিতে শরীর নাড়াচ্ছে। ওসমান সাহেব বললেন, চায়ের কথা বলব? কিংবা কোন খাবার-দাবার?

না। কফি থাকলে দিতে পারেন। নেশােটা কমানো দরকার। সুস্থ মাথায় আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আপনি বসুন।

ওসমান সাহেব বসলেন। ঘরে কফি নেই। কফির কথা বলা হল না। নবী ঠিক কী বলতে এসেছে বুঝতে পারছেন না। অনুমান করতেও চেষ্টা করলেন না। নবীর ব্যাপারে আগেভাগে কিছু অনুমান করা মুশকিল।

নবী সিগারেট ধরাল। গম্ভীর হয়ে বলল, একটা সায়েন্স ফিকশন লেখার কথা ভাবছি। আইডিয়াটা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ করতে এসেছি।

সায়েন্স ফিকশনের আইডিয়া নিয়ে আলাপ করবার জন্যে কেউ দুপুর রাতে অন্যের বাড়ি যায় না। ওসমান সাহেবের মনে হল এটা হচ্ছে প্রস্তাবনা। এরপরে আসল কথা আসবে।

আইডিয়াটা এ রকম-একটি গ্রহের কথা আমি বলবি। সেই গ্রহে প্ৰাণের বিকাশ হয়েছে অদ্ভুতভাবে। সেখানে পুরুষ এবং নারী বলে কিছুই নেই। যৌনতার ব্যাপারটি নেই। সবাই জীবনের এক পর্যায়ে গৰ্ভধারণ করে। ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র এদের মৃত্যু হয়। কাজেই সে গ্রহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনো ব্যাপার নেই।

গৰ্ভধারণের ব্যাপারটিই হয় কিভাবে?

সেটা নিয়ে এখনও ভাবিনি। তবে যৌন মিলনের কোনো ব্যাপার নেই। আইডিয়া হিসেবে আপনার কাছে কেমন লাগছে?

ভালই।

শুধু ভালই বলাটা ঠিক হল না। এই গল্পে নতুন ধরনের জীবনযাত্রা, নতুন ধরনের সমাজ ব্যবস্থা আমি আনব। এ ধরনের একটি আইডিয়াকে শুধু ভালই বলে চালানো ঠিক নয়। আপনি বলুন–খুব চমৎকার আইডিয়া।

খুব চমৎকার আইডিয়া।

নবী উঠে দাঁড়াল, আপনার বাথরুমটা ব্যবহার করতে চাই।

আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি।

হুইস্কি আমার সহ্য হয় না। বমি করতে হবে। দামী একটা নেশা বমি করে নষ্ট করাটা ক্রাইম। কিন্তু উপায় নেই।

নবী বাথরুম থেকে বের হতে অনেক দেরি করল। ওসমান সাহেব আকবরের মাকে দিয়ে লেবু চা বানালেন। নেশা, উগরে দেওয়ার পর চা খেতে হয় তো ভাল লাগবে। নবী চা খেল না। কোট কাঁধে ফেলে বলল, আমি এখন যাব।

চা খাবেন না?

না, আগেই তো বলেছি খাব না।

ওসমান সাহেব নবীকে এগিয়ে দেবার জন্যে রাস্তা পর্যন্ত এলেন। নবীর লাল রঙের ওপেল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। যে ঠিকমত পা ফেলতে পারছে না। সে গাড়ি চালিয়ে যাবে ভাবতেই অস্বস্তি বোধ হয়।

নবী ড্রাইভিং সিটে বসে সে হঠাৎ বলল, মনিকার সঙ্গে কী আজ সারাদিনে আপনার কোনো যোগাযোগ হয়েছে?

না। টেলিফোনেও কোন কথা হয়নি?

না। কেন?

নবী গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। নিচু গলায় বলল, মনিকার স্বামী মারা গেছে। আমার ধারণা ছিল সে আপনাকে জানিয়েছে।

কবে মারা গেছে?

কবে মারা গেছে জানি না। মনিকা খবর পেয়েছে আজ ভোরে। আমি দেখতে গিয়েছিলাম। খুব কান্নাকাটি করছিল।

ওসমান সাহেব কিছু বললেন না। মনিকা খুব কান্নাকাটি করছে এই দৃশ্যটি তিনি কল্পনা করতে চেষ্টা করলেন। সে চেঁচিয়ে নিশ্চয়ই কাব্দবে না, কিংবা কে জানে হয়ত চেঁচিয়েই কাদবে। একটি অত্যন্ত রূপসী মেয়ে কাঁদছে। দৃশ্যটি কল্পনায় চমৎকার কিন্তু বাস্তবে কুৎসিত। বেশ কিছু সুন্দরী মেয়েকে তিনি কাঁদতে দেখেছেন। তার কাছে কখনও ভাল লাগেনি।

নবী বলল, আমি ঠিক স্টেডি ফিল করছি না। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আজ রাতটা আপনার ঘরে কাটিয়ে দেয়া যাবে?

যাবে। আসুন।

নবী গাড়ি লক করে দোতলায্য উঠে এল খুব সহজভাবেই বলল, কাউকে বলুন গরম পানি করে দিতে, আমি একটা হট সাওয়ার নেব। একটা স্যান্ডউইচ বা এই জাতীয় কিছু দিতে বলুন। ভাল কথা, আমার শোবার ঘরে কিছু কাগজ রাখবেন। মাঝেমধ্যে শেষ রাতের দিকে আমার লিখতে ইচ্ছা করে।

ওসমান সাহেব মৃদু হাসলেন। উপহাসের হাসি কিনা ঠিক ধরা গেল না।

ওসমান সাহেব।

বলুন।

আসুন। একটা কাজ কবা যাক ২ সায়েন্স ফিকশনের যে আইডিয়ােটা আপনাকে বললাম তার ওপর আপনি একটি লেখা তৈরি করুন। আমিও একটি করি।

কেন?

কে আইডিয়া কেমন খেলাতে পারে। তাই দেখা, এর বেশি কিছু নয়। আপনি যা ভাবছেন তা না।

আমি কী ভাবছি?

আপনি ভাবছেন এটা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপার। তা নয়। এ দেশে আমি কাউকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না।

ওসমান সাহেব মৃদু স্বরে বললেন, আপনার বিছানা তৈরি আছে, আসুন ঘর দেখিয়ে দিই। নবী রুক্ষ স্বরে বলল আপনি কী আমার ওপর বিরক্ত?

না, আমি সহজে বিরক্ত হই না।

তাহলে আমার আইডিয়া নিয়ে আপনি লিখতে চান না?

না।

ওসমান সাহেব ঘুমুতে গেলেন অনেক রাতে। নবী প্রচুর ঝামেলা করল। গরম পানি দিয়ে গোসল করল। চা খেল। খবরের কাগজ পড়তে পড়তে হো হো করে হাসল নিজউ কিভাবে দেয় দেখেছেন? চাচার হাতে ভাতিজা খুন। চাচার হাতে খুন লিখলেই তো বুঝা যায় ভাতিজা খুন। হয়েছে। কী দরকার ভাতিজা খুন লেখা।

খবরের কাগজ পড়া শেষ হবার পর সে টেলিফোন নিয়ে বসল। রাত তখন দেড়টা। এই গভীর রাতে কাকে যেন ঘুম থেকে তুলে ধমকাতে শুরু করল। পরীক্ষণেই অন্য কাউকে টেলিফোন করে মজার মজার সব কথা বলে খুব হাসতে লাগল।

ওসমান সাহেব জেগে রইলেন অনেক রাত পর্যন্ত। ঘুমের অনিয়ম হয়েছে। সারারাত হয়ত জেগে থাকতে হবে। একা একা জেগে থাকা একটা যন্ত্রণার ব্যাপার। পাশের কামরায় নবী অবশ্যি এখনও জেগে। কী সব খুটিখাট করছে তবু একা একাই লাগছে নিজেকে।

তিনি মশারির ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেট নিলেন। মশারির ভেতর সিগারেট খাওয়া রানু খুব অপছন্দ করত। কিন্তু এর মধ্যে একটি মজার ব্যাপার আছে ধোঁয়া আটকে থাকে মশারির ভেতর। যেন সাদা মেঘ চারপাশে জমতে শুরু করেছে। বিশাল মেঘের টুকরো নয় ছোট্ট একটি নিজস্ব মেঘ। এবং এটিকে তৈরি করেছেন নিজেই।

ওসমান সাহেব সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করলেন ঠিক এই মুহূর্তে এ শহরে কতজন মানুষ জেগে আছে। জেগে আছে না বলে বলা য়াক ঘুমুতে পারছে না। চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। একদল জেগে আছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়। অন্য আরেক দল রোগ যন্ত্রণায়। বাকিরা সবাই সৌখিন নিশি যাপনকারী। তিনি, নবী সাহেব এবং মনিকা।

মনিকা নিশ্চয়ই জেগে আছে। এবং নবীর কথা অনুযায়ী ধরে নিতে হয় খুব কান্নাকাটি করছে। এখনও কী কাঁদছে? মেয়েদের কান্নার ব্যাপারে তার একটা মজার অবজারভেশন আছে। কিশোরীরা কাঁদে লুকিয়ে। যুবতীরা কাঁদে প্রকাশ্যে। প্রৌঢ় এবং বৃদ্ধর আশপাশে বেশ কিছু মানুষজন না থাকলে কাঁদতেই পারে না।

রানু তাঁর এ কথায় খুব রেগে গিয়েছিল। থমথমে মুখে বলেছিল, কী ভাব তুমি মেয়েদের মেয়েদের ছোট করে দেখবার একটা প্রবণতা আছে তোমার মধ্যে। এর মধ্যে ছোট করে দেখবার কী আছে তিনি বুঝতে পারেননি। রানুর হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে দুঃখিত ও লজ্জিত হয়েছেন।

রানু কখন থেকে তাকে অপছন্দ করতে শুরু করেছে? বিয়ের পর পরই কী? দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকলে দুজনের ভেতরে ক্রমে ক্রমে ভালবাসা জনাতে থাকে। তাদের মধ্যে সে রকম হয়নি। রানু তাঁর প্রতিটি ব্যাপারে বিরক্ত হতে শুরু করল গোড়া থেকেই।

মশারির ভেতরে মেঘ তৈরি করছ? এই সব হালকা ধরনের কথা বলে আমাকে ভুলাতে চাও কেন? বল, তোমার আলসী লাগছে।

ওসমান সাহেব বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। রাত প্ৰায় শেষ হয়ে আসছে, চারটা দশ বাজে। কিছুক্ষণের ভেতর আকাশ ফর্সা হতে শুরু করবে। তিনি বসার ঘরে এলন। নবীর দরজা হাট খরে খোলা। সে এই শীতেও খালি গায়ে চেয়ারে বসে দ্রুত লিখছে। চমৎকার একটি দৃশ্য। তিনি দীর্ঘদিন কিছু লিখতে পারছেন না।

নবী চোখ তুলে একবার দেখল। অত্যন্ত সহজ গলায় বলল, সায়েন্স ফিকশনটা নামিয়ে দিচ্ছি।

ভাল।

আজ সারাদিন চালাব। ননস্টপ, ফ্লো এসে গেছে। কাইন্ডলি কফির ব্যবস্থা করুন।

কফি নেই। চা খেতে পারেন।

হোক। চা-ই হোক।

তিনি নিজেই চা বানাতে গেলেন। হাতের কাছে কিছুই পাওয়া গেল না, চিনির পট, দুধের কৌটা। কিছুই নেই। সংসার অগোছালো হয়ে গেছে। অগোছালো এবং অপরিচ্ছন্ন। রান্না ঘরের বেসিনের উপর রাতের থালাবাটি পড়ে আছে। টক টক একটা গন্ধ ছাড়ছে। আকবরের মাকে আজ কিছু কড়া কড়া কথা বলতে হবে।

কী ওসমান সাহেব। আপনার চা কোথায়?

একটু দেরি হবে। আকবরের মা উঠুক। ঘুম থেকে।

ডেকে তুলুন না। ডেকে তুললেই হয়।

নবী উঠে এসে উঁচু গলায় ডাকতে লাগল, এ্যাই এ্যাই।

আকবরের মা ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

জলদি চা বানাও। তুরন্ত। চা বানানো হয়ে গেলে গরম পানি করবে। আই উইল টেক এনাদার হট বাথ।

ওসমান সাহেব দেখলেন নবীর চোখ মুখ উচ্ছল। লেখার কাজ নিশ্চয়ই ভাল হচ্ছে। নবী বলল,

প্রথম কয়েক পাতা শুনবেন নাকি? পড়ে শুনাতে পারি।

আপনি শেষ করুন। তারপর শুনব।

সন্ধ্যা নাগাদ শেষ হবে। আমি কী সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারি? এখন জায়গা বদল করতে চাই না।

নিশ্চয়ই থাকতে পারেন।

আপনি কফির ব্যবস্থা করবেন?

হ্যাঁ করব।

সকাল আটটার দিকে ওসমান সাহেব বের হলেন। নবীকে কিছু বলে গেলেন না। কোথায় যাবেন কিছু ঠিক নেই। একবার কলেজে যাওয়ার দরকার। শারীরিক কারণে তিন মাসের ছুটি নেয়া আছে। সেই ছুটি বাড়িয়ে ছ’মাস করতে চান।

রাস্তায় নেমেই ভাবলেন চাকরিটা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? মন বসছে না। একদল ছাত্র তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তিনি কথা বলবেন। তারা নোট নেবে। হাই তুলবে। তাদের চোখেমুখে থাকবে অপরিসীম ক্লান্তি। ভাল লাগে না। এতটুকুও ভাল লাগে না।

রাস্তায় একটা মিছিল বের হয়েছে। নিৰ্জিব মিছিল। একদল রোগা ও ক্লান্ত মানুষ চিকন গলায় চেঁচাচ্ছে, দিতে হবে দিতে হবে। ঢাকা শহরের মিছিলগুলি সহজেই জমে যায়। ছোট একটি মিছিল দেখতে দেখতে ফুলেফেপে ওঠে। সমুদ্র গর্জনের মত শব্দ উঠতে থাকে। কিন্তু এই মিছিলটি ক্রমেই যেন প্ৰাণ হারিয়ে ফেলছে। প্রথম দিকের একজন নেতা গোছের কেউ মিছিল ভেঙে পানি কিনতে এল।

ওসমান সাহেব মিছিলের পেছনে হাটতে লাগলেন। রোদ ভালই লাগছে। শীতের সকালের রোদের মতো ভাল জিনিস আর কী হতে পারে? তার প্রথমদিকের একটি উপন্যাসে শীতের রোদকে তুলনা করেছিলেন শিশুর আলিঙ্গনের সঙ্গে। শিশুর দেহের ওম ওম ভাবটি আসে শীতের রোদ থেকে। অতি বাজে ধরনের তুলনা।

আরে আপনি এখানে?

তিনি তাকিয়ে দেখলেন চশমা পরা একটি রোগা ছেলে। মাথা ভর্তি লম্বা চুল। কোন তরুণ কবি বা গল্পকার হবে।

আমাকে চিনতে পারছেন তো?

তিনি একটি পরিচিতের হাসি দিলেন।

আপনি এখানে কী করছেন?

এই হাঁটছি। আর কী?

কিসের মিছিল এটা জানেন?

না। কিসের?

ট্রাক ড্রাইভার এসোসিয়েশনের। এক ট্রাক ড্রাইভার একটি ছেলেকে চাপ দিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। পুলিশ হেভি পিটন দিয়েছে। পারলিকও দিয়েছে। তার প্রতিবাদে মিছিল। চলে আসেন।

ওসমান সাহেব চলে এলেন না। হাঁটতে লাগলেন নিজের মনে। ছেলেটি বলল, লেখালেখি কেমন হচ্ছে স্যার?

হচ্ছে না।

কিছু মনে করবেন না। স্যার। আপনার ইদানীংকালের লেখাগুলি আগেরগুলির মত হচ্ছে না।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। ইদানীংকালের লেখাগুলি মনে হয় পপুলার ডিমান্ডে লেখা। তেমন ডেপথ নেই।

তুমি কী আমার ইদানীংকালের লেখাগুলি পড়েছ?

কিছু কিছু পড়েছি।

দু’একটার নাম বলতে পারবে?

ছেলেটি চুপ করে গেল। ছেলেটি তাঁর নতুন লেখাগুলি পড়েনি। আগের গুলিও হয়ত পড়েনি। ওসমান সাহেব মৃদু হেসে বললেন, না পড়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক না। তুমি কী সিগারেট খাবে? ভাল সিগারেট আছে খাওয়াতে পারি।

জি না। আমার একটা কাজ আছে? আমি মতিঝিল যাব।

ঠিক আছে দেখা হবে পরে।

তিনি উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে লাগলেন। মিছিল গুলিস্তানের কাছে এসে ভেঙে গেল। ক্লান্তি লাগছিল। তিনি একটা রিকশা নিলেন। কোথায় যাওয়া যায়? মনিকার কাছে যাবেন কী? তার মনে হল মনিকার কাছে যাবার ইচ্ছাই এতক্ষণ পুষে রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি ওর কাছে যাবেন না। শোকের ব্যাপারগুলি থেকে তিনি দূরে থাকতে চান। এখন মনিকাকে ঘিরে অনেকেই বসে আছে। এ সময় উপস্থিত হবার কোনো মানে হয় না। কিন্তু তবু মনিকার বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নামলেন।

অনেকগুলি গাড়ি পার্ক করা। তাঁর চোখের সামনেই বিরাট একটা নীল রঙের গাড়ি থামল। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে গেছে এমন একজন মহিলা নামলেন। মহিলাটির পরনে ধবধবে সাদা সিন্ধের শাড়ি। কাশ্মিরী একটি শাল কাধে। শালটির রঙ টকটকে লাল। সাদার সঙ্গে লালের কম্বিনেশন কী চমৎকার লাগছে।

ওসমান সাহেব বাড়িতে ঢুকলেন না। কিন্তু এখন কোথায় যাওয়া যায়? তার যাবার জায়গা দ্রুত কমে আসছে। হয়ত এমন একটি সময় আসবে যখন কোথাও যাবার জায়গা থাকবে না। নিজের ঘরেই থাকবে দিন-রাত। কিছুক্ষণের জন্য রাস্তায় হাঁটবেন তারপর আবার ফিরে যাবেন নিজের জায়গায়।

রানুদের বাসায় গেলে কেমন হয়? আজ বুধবার না। তাতে কী? দেখা যাক না হঠাৎ উপস্থিত হলে কী হয়। টগর নিশ্চয়ই খুব অবাক হবে।

রানুরা বাসায় ছিল না। দরজা তালা বন্ধ। কয়েকটা দিন খুব খারাপভাবে শুরু হয়। আজও কী সে রকম একটি দিন? মিলিদের বাসায় গেলে কেমন হয়? মিলি কী আছে? না সেও ঘরে তালা দিয়ে উধাও হয়ে গেছে কোথাও।

অবশ্যি মিলিদের বাসা কোথায় তার পরিষ্কার ধারণা নেই; ইচ্ছা থাকলেও যাওয়া যাবে না। তিনি বাড়ি ফিরে এসে শুনলেন তার বাবার আরেকটি স্ট্রোক হয়েছে। ওসমান সাহেবের ক্লান্তি লাগছিল। বাবার কাছে যেতে ইচ্ছা করছিল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *